প্রেষণা চক্র (Motivation Cycle)
জন্মগতভাবে মানুষ অভাবজনিত প্রাণী হিসেবে চিহ্নিত। তার একটি অভাব বা চাহিদা পূরণ হওয়ার পর আরেকটি অভাব বা চাহিদা সামনে এসে উপস্থিত হয় এবং জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত এ প্রক্রিয়া চলতে থাকে । প্রেষণা চক্র হচ্ছে এমন একটি প্রক্রিয়া, যাতে কর্মীরা উৎসাহিত হয়ে কর্মসম্পাদনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জনে ব্রতী হয় এবং এর মাধ্যমে তারা তাদের প্রয়োজন মিটাতে পারে। চক্রের আকারে এ প্রক্রিয়া আবর্তিত হয় বলে একে প্রেষণা চক্র বলে । প্রেষণা তিনটি পর্যায়ে চক্রাকারে আবর্তিত হয় ।
যেমন- (১) অভাববোধ, (২) উদ্দেশ্যমূলক আচরণ, (৩) লক্ষ্যবস্তু অর্জন বা উদ্দেশ্য সাধন । প্রেষণা একটি বিরামহীন প্রক্রিয়া। মানুষের অভাববোধ কখনো শেষ হয় না। একটি অভাব পূরণ হলে আবার নতুন অভাবের সৃষ্টি হয় । আবার সে অভাবটি পূরণ হলে আর একটি অভাব সৃষ্টি হয় । এভাবে জীবনব্যাপি চক্র আবর্তিত হতে থাকে । আর প্রেষণা আছে বলেই মানুষের মধ্যে নতুন নতুন কর্মের প্রতি আকর্ষণ সৃষ্টি হয় এবং কর্ম প্রেষণায় উদ্বুদ্ধ হয় ।
চিত্রে প্রেষণা চক্রটি উপস্থাপন করা হলো-
উপরোক্ত প্রেষণার স্তরগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো
১। অভাব বোধ (Need): প্রেষণা জৈবিক ও সামাজিক দুই প্রকারের হয়ে থাকে । মানুষের জৈবিক তাড়নায় যেসব প্রেষণার উদ্ভব ঘটে তাকে জৈবিক প্রেষণা বলে। যেমন- ক্ষুধা, তৃষ্ণা, যৌনতা প্রভৃতি। সামাজিক প্রেষণা হচ্ছে কৃতিত্ব, প্রভাব-প্রতিপত্তি, খ্যাতি, মর্যাদা ইত্যাদি । মানুষের সমাজসভ্যতা, সাংস্কৃতিক জীবনের পরিপ্রেক্ষিতে একজন ব্যক্তির জীবনে এসব প্রেষণা সৃষ্টি হয় ।
২। উদ্দেশ্যমূলক আচরণ: অভাব বোধ দূরীকরণের জন্য মানুষ সক্রিয়ভাবে উদ্বুদ্ধ হয়ে ওঠে। প্রয়োজন মেটানোর জন্য কার্যে প্রবৃত্ত করে। এ প্রবৃত্তিকরণকেই উদ্দেশ্যমূলক আচরণ বলে । যেমন- মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য বাড়ি-ঘর তৈরি করে । শিশু ক্ষুধার্ত হলে খাবারের জন্য কান্নাকাটি করতে থাকে ।
৩। উদ্দেশ্য সাধন: মানুষ ক্ষুধার্ত হলে তা নিবৃত্ত করার জন্য কোনো লক্ষ্য নির্ধারণ করে এবং এ লক্ষ্য অর্জনের প্রচেষ্টা চালায় এবং শেষ পর্যন্ত উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কার্যটি সম্পাদিত করে। প্রেষণার জন্যই মানুষ নিজের শক্তিকে একটা নির্দিষ্ট লক্ষ্যের অভিমুখে চালনা করে থাকে ।
কৃতিত্বার্জন প্রেষণা তত্ত্ব (Achievement motivation theory)
শিল্পোদ্যোগ উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রেষণা তত্ত্বগুলোর মধ্যে কৃতিত্বার্জন প্রেষণা তত্ত্ব সবচেয়ে বেশি উল্লেখযোগ্য । প্রফেসর ম্যাকলিল্যান্ড ও তার সহযোগী অ্যাটকিনসন কৃতিত্বার্জন প্রেষণা তত্ত্বের জনক । কৃতিত্বার্জন প্রেষণা বলতে কোনো একটি কাজ উত্তমরূপে করার প্রবল ইচ্ছাকে বোঝায় ।
নিম্নে কৃতিত্বার্জন প্রেষণা তত্ত্বের উল্লেখযোগ্য সংজ্ঞা প্রদত্ত হলো :
১। ম্যাকলিল্যান্ডের মতে, 'কৃতিত্বার্জন প্রেষণা হচ্ছে একটি শিক্ষণীয় প্রেষণা যা ব্যক্তিকে উঁচুমানের কার্য- সম্পাদনে প্রেষিত করে।
২। অধ্যাপক ম্যানফোর্ড-এর মতে, 'কৃতিত্বার্জন প্রেষণা প্রাণীর সঞ্জীবনী শক্তি, যা তাকে কাজ-কর্মে উচ্চমানের পরিচয় দিতে তাগিদ দেয়'।
SWOT বিশ্লেষণ
১৯৬৯ সালে Business Policy - Tex and Cases বইটিতে প্রথম SWOT বিশ্লেষণের ধারণাটি উপস্থাপন করা হয় । ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে ব্যবসায় উদ্যোক্তা তার ব্যবসা সংশ্লিষ্ট শক্তি, দুর্বলতা, সুযোগ ও ঝুঁকি আগেই বিশ্লেষণ করে জেনে নিতে পারে। যে পদ্ধতির মাধ্যমে এসব বিষয়ের অনুসন্ধান করা হয় তাকে সামর্থ দুর্বলতা সুযোগ ঝুকি বিশ্লেষণ বলে ।
Pearce & Robinson-এর মতে, ‘SWOT' বিশ্লেষণ হলো প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ শক্তি ও দুর্বলতা এবং বাহ্যিক সুযোগ ও ঝুকি সমূহকে সঠিকভাবে চিহ্নিত করার এবং এগুলোর মধ্যে ভারসাম্য সৃষ্টির একটি কৌশল ।
SWOT মডেলে S মানে Strength, W মানে Weakness, O মানে Opportunity, T মানে Threat নিম্নে রেখাচিত্রের মাধ্যমে ‘SWOT' কে দেখানো হলো-
১। Strength (শক্তি বা ক্ষমতা): প্রতিটি ব্যবসায় এমন কিছু অভ্যন্তরীণ উপাদান রয়েছে যা ব্যবসায় কার্যক্রমের অনুকূলে কাজ করে সফলতা অর্জনে সহায়তা করে । এ উপাদানগুলোকে ব্যবসায়ের অভ্যন্তরীণ শক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয় । যেমন : দক্ষ শ্রমিকের নিশ্চয়তা, উদ্যোক্তার নিজস্ব অভিজ্ঞতা, আর্থিক সংগতি ইত্যাদি।
২। Weakness (দুর্বলতা): একজন ব্যবসায় উদ্যোক্তা সুষ্ঠুভাবে ব্যবসা চালানোর জন্য নানাবিধ প্রতিকূলতার সম্মুখীন হন। এ সকল উপাদানকে দুর্বলতা বলা হয়। প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য এ সকল দুর্বলতা অবশ্যই দূর করার চেষ্টা করতে হবে । যেমন-
(ক) উদ্যোক্তার অনভিজ্ঞতা মূলধনের সমস্যা অদক্ষ শ্রমিক ইত্যাদি
৩। Opportunity (সুযোগ): একজন ব্যবসা উদ্যোক্তা পরিবেশ থেকে যত বেশি সুযোগ কাজে লাগাতে পারবেন, তিনি তত বেশি সফলতার সাথে ব্যবসায় টিকে থাকতে পারবেন । যেমন -
(ক) নতুন পণ্যের উদ্ভাবন নতুন প্রযুক্তির সুযোগ সরকারী নীতি ইত্যাদি ।
৪ । Threat (হুমকি): ব্যবসায় এমন কিছু উপাদান রয়েছে যেগুলো ব্যবসা উদ্যোক্তার করার কিছুই নেই । যেমন- রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ইত্যাদি।
পরিশেষে বলা যায়, উপরোক্ত চারটি উপাদান বিশ্লেষণের মাধ্যমে একজন ব্যবসায় উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানের জন্য অধিক সুবিধাজনক কৌশলটি গ্রহণ করে থাকেন ।
আরও দেখুন...