আমরা জানি যে বিভিন্ন ধরনের বয়ন তত্ত্ব থেকে সুতা উৎপাদনের পর উক্ত সুতা দিয়ে বত্র তৈরি করা হয়। আবার অনেক সময় সরাসরি তত্ত্ব থেকেও বস্ত্র তৈরি করা হয়ে থাকে। বস্ত্র যে প্রক্রিয়ায়ই তৈরি করা হোক না কেন তা সব সময় সরাসরি বাজারে ছাড়া হয় না। অনেক সময় বস্ত্রকে আকর্ষণীয় করে বাজারে ছাড়া হয়। বত্র কতভাবে অলংকরণ করা যায় সে সম্পর্কে আমাদের ধারণা আছে কি? প্রকৃতপক্ষে বত্র নানাভাবে অলংকরণ করা যায়। বস্ত্রের বৈচিত্র্য আনয়ন কিংবা আকর্ষণ বৃদ্ধি করার জন্যই বস্ত্র অলংকরণ করা হয়।
বিভিন্ন ধরনের তন্তু থেকে সুতা ও বস্ত্র উৎপাদন করা হয়। একটু লক্ষ করলে দেখা যাবে যে, আমরা যে পোশাক ব্যবহার করি তার মধ্যে কিছু আছে সাধারণ বসূত্র দিয়ে তৈরি, আবার কিছু বস্ত্র আছে ডিজাইন সমৃদ্ধ। এই সাধারণ বস্ত্রের নকশাকে গঠনমূলক এবং ডিজাইন সমৃদ্ধ বস্ত্রের নকশাকে বলে সজ্জামূলক নকশা। অন্যভাবে বলা যায় যে বস্ত্রের মূল কাঠামো দেওয়ার জন্য যে নকশা করা হয় তাকে গঠনমূলক নকশা বলে এবং বস্ত্রকে আকর্ষণীয় করার জন্য যে নকশা করা হয়, তাকে সজ্জামূলক নকশা বলে।
ওভেন ফেব্রিকের ক্ষেত্রে অর্থাৎ তাঁতে যে বস্ত্র উৎপাদন করা হয় তার গঠনমূলক নকশা তৈরির জন্য দুই সেট সুতার প্রয়োজন হয়। এক সেট সুতা তাঁতে লম্বালম্বিভাবে সাজানো থাকে, আর এক সেট সুতা লম্বালম্বি সুতার ভেতর দিয়ে আড়াআড়িভাবে চালনা করে বস্ত্র উৎপাদন করা হয়। এক্ষেত্রে শুধু বস্ত্রের গঠন প্রদানের জন্য সহজ পদ্ধতিতে গঠনমূলক নকশার বত্র উৎপাদন করা হয়, যেমন- এক রঙের সুতির লংক্লথ, ভয়েল, জিন্স ইত্যাদি বসত্র। অন্যদিকে বত্র উৎপাদনের ক্ষেত্রে অনেক সময় বিভিন্ন রঙের ও বিভিন্ন ডিজাইনের সুতা ব্যবহার করে জটিল প্রক্রিয়ায় সজ্জামূলক নকশার বস্ত্র উৎপাদন করা হয়, যেমন- জামদানি বত্র।
গঠনমূলক নকশার বস্ত্র সজ্জামূলক নকশার বত্র
ওপরের আলোচনা থেকে বোঝা যাচ্ছে যে বস্ত্র উৎপাদনের সময়ই গঠনমূলক ও সজ্জামূলক নকশা সৃষ্টি করা হয়। তবে গঠনমূলক নকশার বস্ত্র উৎপাদনের পরও আমরা বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় বত্র অলংকৃত করে বস্ত্রকে সজ্জামূলক বস্ত্রে পরিণত করতে পারব। যেমন- এক রঙের কাপড়ের উপর প্রিন্টিং, পেইন্টিং, এমব্রয়ডারি বা অন্য কোনো প্রক্রিয়ায় বস্ত্রকে সজ্জামূলক করা যায়। এক্ষেত্রে গঠনমূলক নকশার বস্ত্র উৎপাদনের সময় খেয়াল রাখতে হবে যাতে করে পরবর্তী সময়ে তা সজ্জামূলক বসেত্র পরিণত করা যায়। আবার সজ্জামূলক বস্ত্রের ক্ষেত্রেও গঠনমূলক নকশার বস্ত্রের রং, জমিন ইত্যাদির দিকে খেয়াল রাখতে হবে। যেমন- সুতি বস্ত্রে উলের সুতা ব্যবহার না করাই ভালো।
গঠনমূলক নকশার বস্ত্রকে সজ্জামূলক নকশার বস্ত্রে
পরিণতকরণ
কাজ- ১ গঠনমূলক এবং সজ্জামূলক নকশার বস্ত্র ক্লাসে উপস্থাপন করো। |
প্রিন্টিং, পেইন্টিং, এমব্রয়ডারি বা অন্য কোনো প্রক্রিয়ায় যখন শুধু কোনো কিছুর কাঠামো প্রদান করা হয় তখন তা গঠনমূলক নকশা হবে। অন্যদিকে সজ্জামূলক নকশায় নকশাটিকে আকর্ষণীয় ও কারুকার্যময় করা হবে। এক্ষেত্রে সজ্জামূলক নকশার বসত্রটি যেন অনেক জটিল না হয় এবং যুগোপযোগী হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
বস্ত্রের ওপর গঠনমূলক নকশা বস্ত্রের ওপর সজ্জামূলক নকশা
কাজ ১- কী কী উপায়ে গঠনমূলক নকশা ও সজ্জামূলক নকশা সৃষ্টি করা যায়, ছকের মাধ্যমে উল্লেখ করো। |
বস্ত্র উৎপাদনের সময় কীভাবে এবং কতভাবে বত্র অলংকরণ করা যায় সে সম্পর্কে আমরা পূর্ববর্তী পাঠে জেনেছি। আমরা কি বলতে পারি কী কী পদ্ধতিতে বসত্র তৈরির পর অলংকরণ করা যায়? রঙের সাহায্যে ডাইং, প্রিন্টিং করে আমরা একটি সাধারণ বস্ত্রকে অসাধারণ করে তুলতে পারি। এ সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো।
ডাইং- ডাইং বলতে রং প্রয়োগ করাকে বোঝায়। এই রং তত্ত্ব, সুতা, বস্ত্র বা পোশাকে প্রয়োগ করে বাইরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা যায়। ডাইং-এর মাধ্যমে বস্ত্রের উভয় পিঠেই রং লাগে। টাই-ডাই পদ্ধতিতে অনেক সময় বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে কাপড়কে বেঁধে, তরল রঙে কাপড় ডুবিয়েও বস্ত্রের উভয় দিকে নকশা ফুটিয়ে তোলা যায়। সরাসরি বত্র রং না করে কাপড় বেঁধে রং করা হয় বলে এই পদ্ধতিকে টাই-ডাই বলা হয়। এক্ষেত্রে যেসব সরঞ্জাম ও উপকরণ লাগবে তা হচ্ছে: পাতলা কাপড়, সুতা, বোতাম, ছোট ছোট পাথর, ডাল, ছোলা, রং, কস্টিক সোডা, খাওয়ার সোডা, লবণ, কাঁচি, আঠা, স্কেল, প্লাস্টিকের গামলা ইত্যাদি।
ডাই করার পদ্ধতি- নতুন কাপড়ে মাড় থাকলে রং ভালোভাবে ধরে না। তাই প্রথমেই মাড় দূর করে, শুকিয়ে, ইস্ত্রি করে নিতে হবে। তারপর কাপড়টিকে বিভিন্নভাবে ভাঁজ দিয়ে, সেলাই করে অথবা পাথরের টুকরা, ডাল ইত্যাদি কাপড়ের ভেতর রেখে সুতা দিয়ে বেঁধে রঙে কাপড়টি ডোবাতে হবে। এতে করে বাঁধা অংশে রং ঢুকতে পারে না। ফলে শুকানোর পর যখন সুতা খোলা হবে তখন সুন্দর একটি ডিজাইন সৃষ্টি হবে। রং করার জন্য কাপড়ের ওজনের ১০ গুণ পানিতে হবে। ১ গজ কাপড় রং করার জন্য একটি স্টিল বা অ্যালুমিনিয়ামের পাত্রে ১ লিটার পানি ফুটন্ত গরম করে নিতে হবে। এখন তিনটি ছোট পাত্রে ১ গজ কাপড়ের জন্য। 을 গ্রাম ভ্যাট,২ গ্রাম কষ্টিক সোডা, ২ গ্রাম হাইড্রোসালফাইড গরম পানিতে গুলে পর্যায়ক্রমে ফুটন্ত পানিতে ছেঁকে দিতে হবে। এরপর রঙের পাত্রে কাপড় দিয়ে ভালোভাবে নাড়াচাড়া করতে হবে। ১৫ মিনিট পর ঠান্ডা পানি দিয়ে কাপড় ধুয়ে, শুকিয়ে, বাঁধন খুলে ইস্ত্রি করে নিতে হবে।
কাজ ১- প্রত্যেকে ১২/১২ এক টুকরা কাপড়কে বিভিন্ন পদ্ধতিতে বাঁধো এবং বাঁধা কাপড়টি রং করে, ধুয়ে, শুকিয়ে ডিজাইনটি তুলে ধরো আর পরবর্তী ক্লাসে দেখাও। |
প্রিন্টিং- প্রিন্টিং মানেই হচ্ছে বসেত্র রং ও নকশার একত্রে প্রয়োগ। প্রিন্টিং বা ছাপার মাধ্যমে রঙয়ের সাহায্যে নকশা সৃষ্টি করে বত্র বা পোশাককে আকর্ষণীয় করে তোলা যায়। আমরা ঘরে বসেই এ কাজ করতে পারব।
প্রিন্টিং-এর কাজ তন্তু বা সুতায় করা যায় না। বস্ত্র বা পোশাকের নির্ধারিত নকশায় বিভিন্ন রঙের ছাপ দেওয়া হয়। ছাপার কাজে বস্ত্রের এক পিঠে রং করা হয়।
নানা ধরনের প্রিন্টিং-এর মাধ্যমে আমরা বসত্র অলংকরণ করতে পারি। যেমন- ব্লক প্রিন্টিং, বাটিক প্রিন্টিং, স্ক্রিন প্রিন্টিং ইত্যাদি। এর মধ্যে ব্লক প্রিন্টিং এর কাজটিই সবচেয়ে সহজ।
উপকরণ ও সরঞ্জাম- ব্লক প্রিন্টিং-এর জন্য আমাদের যেসব উপকরণ ও সরঞ্জাম প্রয়োজন হবে সেগুলো হচ্ছে কাঠের টেবিল, রঙের ট্রে, রং, বিভিন্ন ধরনের ব্লক, পুরোনো কম্বল, তুলি, মার্কিন কাপড় ইত্যাদি।
ব্লক তৈরি- কাঠ, রাবার, স্পঞ্জ, সাবান, লিনোলিয়াম ইত্যাদি দিয়ে আমরা ব্লক তৈরি করতে পারব। বাজারে ব্লক কিনতে পাওয়া যায় এবং কেনা ব্লক অনেকদিন সংরক্ষণও করা যায়। তবে ঘরে আলুর উপর সুন্দর ডিজাইন করেও আমরা ব্লক তৈরি করতে পারি। এছাড়া ঢেঁড়শ, শাপলা ইত্যাদিরও নিজস্ব ডিজাইন রয়েছে। তাই এদের ওপর ডিজাইন আকার প্রয়োজন হয় না, কেটে নিলেই ডিজাইন দেখতে পাওয়া যায়।
ছাপা পদ্ধতি-প্রিন্টিং-এর আগে কাপড় ভালোভাবে ধুয়ে, ইস্ত্রি করে এবং কোন কোন অংশে ছাপ দেওয়া হবে তা ঠিক করে নিতে হবে। তারপর কাঠের টেবিলের উপর পুরোনো চাদর ও খবরের কাগজ বিছিয়ে তার উপর কাপড়টি বিছিয়ে নিতে হবে। বাজারে বিভিন্ন ধরনের প্রস্তুত রং কিনতে পাওয়া যায়। ব্লকে ভালোভাবে ঐ রং লাগিয়ে কাপড়ের উপর চাপ দিলেই প্রিন্টিং হয়ে যায়। ছাপা হয়ে গেলে ছায়াযুক্ত স্থানে বা বাতাসে শুকিয়ে ইস্ত্রি করে নিতে হয়।
কাজ ১- প্রাকৃতিক বিভিন্ন উপাদান বা রাবার-এর উপর ব্লক তৈরি করে শ্রেণিকক্ষে একটি কাপড় প্রিন্ট করো। |
রঙের সাহায্যে পেইন্টিং করে কিংবা সুচ সুতার সাহায্যে এমব্রয়ডারি করেও আমরা একটি সাধারণ বস্ত্রকে অসাধারণ করে তুলতে পারি। এক্ষেত্রে কোন কাজের জন্য কী ধরনের সরঞ্জাম লাগবে এবং কীভাবে বস্ত্র অলংকৃত করা যাবে সে সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
পেইন্টিং- এ পদ্ধতিতে আমাদের যেসব জিনিস প্রয়োজন হবে, সেগুলো হচ্ছে-বিভিন্ন সাইজের তুলি, রং, মিডিয়াম, টেবিল, মোটা কম্বল, কাপড়, ইত্রি ইত্যাদি। পেইন্টিং পদ্ধতির অন্যতম সুবিধা হচ্ছে এই পদ্ধতিতে সূক্ষ্ম ডিজাইনের মাধ্যমে বস্ত্র অলংকরণ করতে পারা যায়।
পেইন্টিং-এর সাহায্যে বস্ত্র অলংকরণ
পদ্ধতি- প্রথমে কাপড় ধুয়ে মাড় দূর করে ইস্ত্রি করে নিতে হবে। তারপর কাপড়ে ডিজাইন এঁকে টেবিলের ওপর কম্বল বিছিয়ে, তার ওপর কাপড়টি রেখে তুলি দিয়ে নির্ধারিত জায়গায় রং প্রয়োগ করতে হবে। রং বেশি ঘন হলে কয়েক ফোঁটা মিডিয়াম দিয়ে পাতলা করে নিতে হবে। তবে বেশি পাতলা যেন না হয় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। রং করা হয়ে গেলে ছায়ায় শুকিয়ে ইস্ত্রি করে নিতে হবে। ইস্ত্রি করার সময় রং করা অংশের উপর একটি আলগা পরিষ্কার কাপড় দিয়ে নিতে হবে। পেইন্টিং-এর মাধ্যমে বিভিন্ন পোশাক, দেয়াল সজ্জা বা গৃহসজ্জার সামগ্রী আকর্ষণীয় করে তোলা যায়।
কাজ ১- নকশা একে একটি কাপড়ে পেইন্টিং করো। |
এমব্রয়ডারি বস্ত্র অলংকরণে এমব্রয়ডারি বিশেষ অবদান রাখে। আমরা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছি যে এমব্রয়ডারি কী? সুচ সুতার সাহায্যে বিভিন্ন রকম ফোঁড় ব্যবহার করে বস্ত্রের ওপর যে নকশা ফুটিয়ে তোলা হয় তাকেই বলা হয় সুচি নকশা বা এমব্রয়ডারি। বস্ত্রে এমব্রয়ডারির প্রচলন অনেক আগে থেকেই হয়ে আসছে। তবে আগে এমব্রয়ডারির কাঁচামাল ছিল খাঁটি রেশম সুতা, সোনা বা রুপার তৈরি সুতা, দামি মুক্তা বা অন্যান্য মূল্যবান সামগ্রী। বর্তমানকালে আমরা কাঁচামাল হিসেবে বেশ সাধারণ উপকরণ দিয়েই একাজ করতে পারি। যেমন বিভিন্ন রঙের সুতা, চুমকি, আয়না, পুঁতি ইত্যাদি। এছাড়া এ কাজের জন্য প্রয়োজন হবে বিভিন্ন ধরনের সুচ, ফ্রেম, কাগজ, কার্বন পেপার, পেন্সিল, স্কেল, রাবার, কাঁচি, কাপড় ইত্যাদি।
হ্যান্ড এমব্রয়ডারির প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম
পদ্ধতি- এ কাজে কাপড় ধোয়ার প্রয়োজন নেই। তবে কাজ করার সময় পরিচ্ছন্নতার দিকে খেয়াল রাখতে হবে। প্রথমে কাপড়ের পর হালকা করে ডিজাইন একে নিতে হবে। এরপর ফ্রেমে কাপড় আটকিয়ে সুচ সুতার সাহায্যে বিভিন্ন রকম ফোঁড় ব্যবহার করে কাজ শেষ করতে হবে। এক্ষেত্রে ফোঁড়গুলো অতিরিক্ত ঢিলা বা টাইট হওয়া যাবে না। সবশেষে উল্টো দিকে ইস্ত্রি করে নিলে সেলাই সুন্দর ও মসৃণভাবে কাপড়ের উপর বসে যায়।
এমব্রয়ডারি করার জন্য বিভিন্ন ফোঁড় সম্পর্কে আমাদের সঠিক ধারণা থাকতে হবে এবং প্রকৃত কাজ করার আগে চর্চার মাধ্যমে এ কাজে দক্ষতা আনতে হবে। এক্ষেত্রে লক্ষ রাখতে হবে যে, নকশার বিভিন্ন অংশে যেন সঠিক ফোঁড় ব্যবহার করা হয়। রং নির্বাচনেও সতর্ক থাকতে হবে। যেমন- ফুলের জন্য লাল, গোলাপি, হলুদ ইত্যাদি আবার পাতার জন্য সবুজ রং বাছাই করা যেতে পারে। আমরা ইতোমধ্যে ষষ্ঠ শ্রেণিতে বিভিন্ন স্টিচ সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করেছি। এ পাঠে আরও কিছু ফোঁড় উল্লেখ করা হলো-
ব্রুস ফোঁড়- চটজাতীয় কাপড়ের উপর এই ফোঁড় প্রয়োগ করে সুন্দর ডিজাইন সৃষ্টি করা যায়। এই সেলাইয়ের জন্য চিত্রের মতো এক সারি ফোঁড় তেরছা অথচ সমান্তরালভাবে করে যেতে হবে। তারপর আগের ফোঁড়কে ভিত্তি করে চিত্রের মতো ক্রসভাবে ফোঁড় তুলতে হবে।
ব্লাংকেট ফোঁড়- ব্লাংকেট ফোঁড় তৈরি করার সময় সেলাই বাম দিক থেকে ডান দিকে সরে যায়। নকশা বরাবর ওপর হতে সুচ ফুটিয়ে মাথা নিচের দিকে বের করে সুতা সুচের ওপর রেখে সুচ টেনে বের করতে হয়। কম্বলের খোলা ধার, রুমালের কিনারা, বোতাম ঘর, হাতার কিনারা ইত্যাদিতে এই ফোঁড় প্রয়োগ করা হয়।
কাজ ১- ক্রস ফোঁড়ের সাহায্যে একটি ডিজাইন তৈরি করে কিনারায় ব্লাংকেট ফোঁড় ব্যবহার করো। |
হেরিং বোন ফোঁড়
আমরা একটু খেয়াল করলে দেখতে পাব যে এই সেলাই দেখতে অনেকটা হেরিং মাছের কাটার মতো। তাই একে হেরিং বোন সেলাই বলে। এটা অনেকটা ক্রস ফোঁড়ের মতো। চিত্র অনুসরণ করে সেলাই করলেই ডিজাইন ফুটে উঠবে।
পালক ফোঁড়- পাখির পালকের মতো দেখতে হওয়ায় এ ফোঁড়কে পালক ফোঁড় বলা হয়। ডানদিকে বাঁকাভাবে ব্লাংকেট ফোঁড় দিয়ে পালক ফোঁড় সেলাই করা যায়। এছাড়া একই দিকে ৩/৪টি বোতামঘর ফোঁড় দিয়েও পালক ফোঁড় সেলাই করা যায়। ছোটদের জামার কলার, হাতার কিনারা, ট্রে ক্লথ, চাদরের কিনারা প্রভৃতি স্থানে এই ফোঁড় দেওয়া হয়।
কাজ ১- নেপকিনের কিনারায় হেরিং বোন ও পালক ফোঁড় প্রয়োগ করো। |
স্যাটিন ফোঁড় ফুল, লতা পাতা ইত্যাদির ভেতরের অংশ ভরাট করতে এ সেলাই প্রয়োজন। সাধারণত নকশা ভরাট করার কাজে এ সেলাই ব্যবহার করা হয়। এ সেলাই সোজা ও উল্টো-দিকে একই রকম হয়। অনেক সময় প্রথমে নকশার বাইরের স্থানটিতে রান ফোঁড় দিয়ে নিয়ে মাঝের অংশে ঘনঘন লম্বা ফোঁড় দিয়ে সেলাই করা হয়।
কাজ ১- তোমার পছন্দমতো একটি নকশা এঁকে স্যাটিন ফোড়ের সাহায্যে ভরাট করো। |
পিকিনিজ ফোঁড়- এই সেলাইয়ের জন্য প্রথমে এক লাইনে সমান মাপের বখেয়া ফোঁড় দিয়ে যাবে। এরপর দ্বিতীয় সেলাই শুরু করতে হবে। এক্ষেত্রে সুচটি প্রথমে চিত্রের মতো নিচ থেকে ওপরে তুলতে হবে। তারপর দ্বিতীয় ফোঁড়ের নিচ দিয়ে সুচটি ওপরে তুলে প্রথম ফোঁড়ের নিচ দিয়ে আনতে হবে। আবার তৃতীয় ফোঁড়ের নিচ দিয়ে সুচটি ওপরে তুলে দ্বিতীয় ফোঁড়ের নিচ দিয়ে আনতে হবে। বখেয়া সেলাইকে ঘিরে এই ফাঁসগুলো ক্রমান্বয়ে বাম দিক থেকে ডান দিকে করে গেলে সুন্দর একটি ডিজাইন ফুটে ওঠে।
পিকিনিজ ফোঁড়
কাজ ১- একটি কাপড়ে বখেয়া ফোঁড় প্রয়োগ করে ভিন্ন রঙের সুতার সাহায্যে পিকিনিজ ফোঁড়ের চর্চা করো। |
ফ্রেঞ্চ নট- ফ্রেঞ্চ নটের জন্য প্রথমে কাপড়ের সোজা দিকে সুচের কিছু অংশ তুলে অগ্রভাগে সুতার কয়েকটি পাক দিতে হবে। তারপর বাম হাতের বুড়ো আঙুল দিয়ে প্যাঁচানো অংশ চাপ দিয়ে ধরে সুচ ওপরে টেনে বের করে প্রথমে যেখানে সুচটি ওঠানো হয়েছিল ঠিক সেই জায়গায় আবার বসিয়ে দিতে হবে। এভাবে দুই-তিনবার করলেই ছোট ফুলের মতো দেখাবে।
কাজ ১- একটি কাপড়ে ডিজাইন এঁকে ফ্রেঞ্চ নটের সাহায্যে ফুল তৈরি করো। |
বহুনির্বাচনি প্রশ্ন :
১. এমব্রয়ডারির জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান-
ক. সুতা, চুমকি, পুঁতি
খ. রং, তুলি, মিডিয়াম
গ. কস্টিক সোডা, লবণ, আঠা
ঘ. তুলি, রঙের ট্রে, ব্লক
২. সাধারণত চটজাতীয় কাপড়ের ওপর কোন ফোঁড় দিয়ে সহজে নকশা তৈরি করা যায়?
ক. পিকিনিজ ফোঁড়
খ. স্যার্টিন ফোঁড়
গ. ব্লাংকেট ফোঁড়
ঘ. ব্রুস ফোঁড়
নিচের অনুচ্ছেদটি পড়ো এবং ৩ ও ৪ নং প্রশ্নের উত্তর দাও :
নীলা তাঁর মেয়ে রোদেলার জন্য বাজার থেকে একটি সাদামাটা জামা কিনে এনে জামাটিতে কিছু চুমকি আয়না ও পুঁতি লাগিয়ে দিলেন।
৩. রোদেলার জামাটি কোন পদ্ধতিতে অলংকৃত করা হয়েছে ?
ক. প্রিন্টিং
খ. পেইন্টিং
গ. ডাইং
ঘ. এমব্রয়ডারি
৪. অলংকরণের ফলে রোদেলার জামাটি হবে-
i. আকর্ষণীয়
ii. কারুকার্যময়
iii. বৈচিত্র্যময়
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii
খ. i ও iii
গ. ii ও iii
ঘ. i, ii ও iii
সৃজনশীল প্রশ্ন :
১.
ক. এমব্রয়ডারি কী?
খ. একটি সাধারণ বস্ত্রকে কীভাবে অসাধারণ করা যায়? বর্ণনা করো।
গ. ১ নং চিত্রের বস্ত্রটি কোন কোন পদ্ধতিতে অলংকৃত করা যায়- ব্যাখ্যা করো।
ঘ. কাপড়ের বৈচিত্র্য আনয়নে ২ নং চিত্রের ভূমিকাই বেশি- তুমি কি একমত? সপক্ষে যুক্তি দাও।