যাদের বুদ্ধি বয়স অনুযায়ী স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে কম থাকে, যার ফলে শিশু তার সমবয়সিদের মতো আচরণ করতে পারে না। শিশুর বয়স বাড়ার সাথে সাথে এই সমস্যা ধরা পড়ে। বুদ্ধি প্রতিবন্ধিতারও বিভিন্ন মাত্রা থাকে। যেমন- মৃদু, মধ্যম, গুরুতর।
মৃদু বুদ্ধি প্রতিবন্ধিতা - এদের বুদ্ধি ৮ থেকে ১১ বছরের শিশুর মতো হয়। তাই প্রাপ্তবয়সে ১১ বছরের স্বাভাবিক ছেলেমেয়েরা যেসব লেখাপড়া বা কাজ করার বুদ্ধি রাখে, ততটুকু পর্যন্ত মৃদু বুদ্ধি প্রতিবন্ধী শিশুটি লেখাপড়া বা আচরণ করতে পারে। এদেরকে বিশেষ শিক্ষা দিয়ে আত্মনির্ভর করা সম্ভব।
মধ্যম বুদ্ধি প্রতিবন্ধিতা- এদের বুদ্ধি ৬ থেকে ৮ বছরের শিশুর মতো হয়। তাই ১৮ বা তদূর্ধ্ব বয়সে মধ্যম মাত্রার বুদ্ধি প্রতিবন্ধী শিশুরা ৬ থেকে ৮ বছরের শিশুর মতো আচরণ করে। এদের বাচন ত্রুটি ও নানারকম শারীরিক সমস্যা থাকতে পারে। যেমন- ত্রুটিপূর্ণ উচ্চারণ, শিশুসুলভ ভাষা ইত্যাদি। এদের প্রশিক্ষণ দিলে কিছু শিখতে পারে। এই প্রশিক্ষণের প্রধান উদ্দেশ্যই থাকে এদের পরনির্ভরশীলতা হ্রাস করা। এদেরকে কায়িক শ্রমভিত্তিক কাজ শেখানো যায়। যেমন-প্যাকেট করা, সিল মারা, বেকারির কাজ ইত্যাদি।
গুরুতর বুদ্ধি প্রতিবন্ধিতা- এদের বুদ্ধির মাত্রা এত কম থাকে যে ৫ বছরের কম বয়সি শিশুদের মতো হয়। তারা খাওয়া, পরিচ্ছন্নতা, টয়লেট কাজ সম্পন্ন করতে অন্যের উপর নির্ভরশীল থাকে। এদের অনেক ধরনের আচরণের সমস্যা দেখা যায়। অন্যের তত্ত্বাবধানে এদের জীবন ধারণ করতে হয়। বিশেষ যত্ন ও প্রশিক্ষণে তাদের দৈনন্দিন কাজের অভ্যাস তৈরি করা যায়।
আমাদের সমাজে বুদ্ধি প্রতিবন্ধীদের অনেক সময় পাগল বলে মনে করা হয়। প্রকৃতপক্ষে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধিতা কোনো মানসিক রোগ নয়। এটি এক ধরনের মানসিক অবস্থা বা অক্ষমতা। এই অক্ষমতা চিকিৎসা দিয়ে সারানো যায় না। তবে যে যতটুকু মাত্রায় প্রতিবন্ধী, সে বিশেষ যত্ন পেলে তার ক্ষমতা অনুযায়ী আচরণ করতে পারে। আবার বিশেষ যত্নের অভাবে তার ক্ষমতার পূর্ণ বিকাশ হয় না। তার আচরণের অবনতি ঘটে।
এছাড়া একই সাথে একাধিক প্রতিবন্ধিতা থাকলে তারা বহুবিধ প্রতিবন্ধী। যেমন-শারীরিক ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধী, শ্রবণ ও বাক্, বুদ্ধি ও দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ইত্যাদি।
প্রতিবন্ধিতার মাত্রা গুরুতর হলে তা সহজেই শনাক্ত করা যায়। এ ধরনের প্রতিবন্ধীরা খাবার ও টয়লেটের কাজের জন্য প্রায় অন্যের উপর নির্ভরশীল থাকে বা বিশেষ সরঞ্জাম ছাড়া তারা চলাফেরা করতে পারে না। মৃদু ও মাঝারি মাত্রার প্রতিবন্ধিতা শনাক্ত করা কিছুটা কঠিন হয়। একটি শিশুর স্বাভাবিক বিকাশ সম্পর্কে জানা থাকলে অতি সহজেই শিশুটি প্রতিবন্ধী কি না তা বোঝা যায়। স্বাভাবিক শিশুর মতো প্রতিবন্ধীদেরও মৌলিক চাহিদা রয়েছে। তাদের জন্য প্রয়োজন ভালোবাসা, উপযুক্ত খাবার, বিশেষ যত্ন ও প্রারম্ভিক উদ্দীপনার।
তোমাদের মনে নিশ্চয়ই প্রশ্ন জেগেছে, প্রারম্ভিক উদ্দীপনার অর্থ কী? উদ্দীপনা বলতে বোঝায় একটি শিশুকে তার চারপাশের বিভিন্ন জিনিস সম্পর্কে জানা ও দেখার সুযোগ করে দেওয়া আর সেগুলো নিয়ে খেলা করার পরিবেশ সৃষ্টি করা। যেমন-শিশুকে সময় দেওয়া, শিশুর সাথে কথা বলা, গান করা, খেলাধুলা করা, কাজ করা, তাকে ভালোবাসা ইত্যাদি। অতি শৈশব থেকে এই উদ্দীপনার সুযোগ সৃষ্টি করাই হলো প্রারম্ভিক উদ্দীপনা।
প্রতিটি শিশুর দেহ ও মন সুন্দরভাবে বেড়ে উঠার জন্য প্রারম্ভিক উদ্দীপনা দরকার। স্বাভাবিক শিশুরা সহজেই মেলামেশার মাধ্যমে তার চারপাশের পরিবেশ থেকে এই উদ্দীপনা পায়। কিন্তু প্রতিরুদ্ধ শিশুদের পক্ষে তার চারপাশের জগৎকে জানা ও বোঝা বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। তাই এদের জন্য প্রয়োজন হয় বাড়তি যত্ন, বিশেষ শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ। আমাদের প্রচলিত সাধারণ শিক্ষাব্যবস্থা স্বাভাবিক শিশুর উপযোগী করে তৈরি করা হয়। প্রতিবন্ধী শিশুরা সাধারণ বিদ্যালয়ে ভর্তি হলেও পরবর্তী সময়ে এই শিক্ষা গ্রহণে সক্ষম হয় না। তার জন্য দরকার প্রয়োজন অনুযায়ী বিশেষ শিক্ষা। শিশু যত ছোট অবস্থায় এই উদ্দীপনা বা বিশেষ শিক্ষা পায়, তত তাড়াতাড়ি তার আচরণের উন্নয়ন ঘটে এবং সক্ষমতা বাড়ে।
বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধিতা | বাড়তি যত্ন প্রারম্ভিক উদ্দীপনা | বিশেষ শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ | বর্তমান অবস্থার উন্নতি, সক্ষমতা বৃদ্ধি |
কাজ ১- তোমার পরিচিত কোনো প্রতিবন্ধী শিশুর ধরন সম্পর্কে লেখো। কাজ ২- কী ধরনের প্রারম্ভিক উদ্দীপনা দেওয়া হয় তা লেখো এবং ক্লাসে পড়ে শোনাও। |
Read more