ব্যক্তিত্ব (পাঠ ১)

সপ্তম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - গার্হস্থ্যবিজ্ঞান বস্ত্র পরিচ্ছদ ও বয়ন তন্তু | - | NCTB BOOK
78
78

আমরা একটু লক্ষ করলে দেখতে পারব যে আমাদের ক্লাসের প্রত্যেকেরই বিশেষ কিছু গুণ রয়েছে। যার ফলে আমরা একজন অন্যজন থেকে আলাদা। ব্যক্তিবিশেষের এই নিজস্ব বৈশিষ্ট্যগুলোর সমষ্টি হচ্ছে ব্যক্তিত্ব। আমাদের শারীরিক গঠন, চালচলন, কণ্ঠস্বর, মেজাজ ও আবেগের মাধ্যমেই ব্যক্তিত্ব প্রকাশ পায়। উত্তম ব্যক্তিত্বের প্রভাবে একজন মানুষ অন্য মানুষকে আকর্ষণ করতে পারে, আবার দুর্বল ব্যক্তিত্বের কারণে মানুষ মানুষের কাছ থেকে দূরে সরে যায়।
আমরা একটু খেয়াল করলে দেখতে পারব যে, উত্তম ব্যক্তিত্বসম্পন্ন ব্যক্তির হাঁটাচলা, কথা বলার ভঙ্গিতে ফুটে ওঠে তার দেহের সৌন্দর্য, আত্মবিশ্বাস ও কাজের প্রতি আগ্রহ। পৃথিবীর প্রত্যেকের মতো আমরাও নিজস্ব বৈশিষ্ট্য নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছি। তবে বড় হওয়ার সাথে সাথে আমরা আত্মনির্ভরশীল হয়ে এবং পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে সুস্থ ও আর্কষণীয় ব্যক্তিত্ব গড়ে তুলতে পারব। উত্তম ব্যক্তিত্বসম্পন্ন ব্যক্তি সুস্থ দেহ ও সুন্দর মন নিয়ে জীবনের যেকোনো অবস্থা মোকাবেলা করতে পারে। রুগ্ন স্বাস্থ্য ব্যক্তিত্ব বিকাশে বাধা সৃষ্টি করে, কারণ স্বাস্থ্য ভালো না থাকলে তার প্রতিটি কাজে চেহারায় ক্লান্তির ছাপ ফুটে ওঠে। সুতরাং আমরা বুঝতে পারছি যে শরীর ও মনের পূর্ণ বিকাশের মাধ্যমেই আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব গঠন করা যায়।

ব্যক্তিত্বের সামাজিক মূল্য অনেক বেশি। আমরা জীবনের মান, সম্মান, সামাজিক মর্যাদা প্রভৃতি আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব দিয়ে অর্জন করতে পারি। কাজেই সফলতার পাশাপাশি সবার গ্রহণযোগ্যতা অর্জনের জন্য অবশ্যই আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বের অধিকারী হতে হবে। আমরা স্বাস্থ্যের যত্ন নিয়ে, নিয়ম অনুযায়ী কাজ করে, আত্মনির্ভরশীল হয়ে, পরিবেশ উপযোগী পারিপাট্য বজায় রেখে, বিভিন্ন পরিবেশে নিজেকে খাপ খাইয়ে সুস্থ ও আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব গড়ে তুলতে পারি।

আমরা কি বলতে পারব পারিপাট্য বলতে কী বোঝানো হয়েছে? ব্যক্তিত্বের সাথে এর সম্পর্কই-বা কী? স্কুলে আসার আগে আমরা নিশ্চয়ই পরিপাটি হয়ে এসেছি। পারিপাট্য বলতে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতাকেই বোঝানো হয়েছে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন দেহ, সময় উপযোগী রুচিশীল পোশাক এবং মার্জিত চলাফেরার মাধ্যমেই উত্তম ব্যক্তিত্ব প্রকাশ করা যায়। আর এরূপ ব্যক্তির চলাফেরা ও পরিপাটি বেশভূষা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রকেই সহজ করতে সাহায্য করে।

আমাদের মনে রাখতে হবে যে, অপরিষ্কার দেহ কিংবা অপরিচ্ছন্ন মূল্যবান পোশাকে পারিপাট্য আনা যায় না। সুবেশী হতে হলে ভালো স্বাস্থ্যের অধিকারী হওয়া দরকার। অন্যদিকে এলোমেলো চুল, অপরিষ্কার দাঁত, নখ, হাত-পা ইত্যাদি যেকোনো অবস্থাতেই বিরক্তির সৃষ্টি করে। তাই নিয়মিত গোসল করে হাত, পা, চুল, নখ ইত্যাদির যত্ন নেওয়া উচিত।

পারিপাট্য রক্ষায় নখ, হাত, চুল, পা ইত্যাদির যত্ন

পারিপাট্য রক্ষায় উপযুক্ত পোশাকের ভূমিকা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। তাই আমরা উপযুক্ত পরিবেশে দেশীয় কৃষ্টির সাথে মিল রেখে এবং ঋতু অনুযায়ী পোশাক নির্বাচন করব। যেমন- আমাদের দেশের মতো গ্রীষ্মপ্রধান দেশের জন্য এমন পোশাক নির্বাচন করব যা সহজে ঘাম শোষণ করে নেয়, ধোয়া যায় ও ইস্ত্রি করা যায়। এছাড়া দেহের আকৃতির সাথে মিল রেখে চুল বাঁধব। প্রসাধনসামগ্রী কখনো খুব বেশি ব্যবহার করব না। এতে ত্বকেরও ক্ষতি হয়। সব সময় ত্বকের রং, দেহের আকৃতি, উচ্চতা, ব্যক্তিত্ব, রুচি ও পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে পোশাক পরিধান করব, এতে করে মনে আত্মবিশ্বাস জন্মাবে, মন প্রফুল্ল থাকবে এবং কাজে উৎসাহ আসবে।

কাজ ১- ব্যক্তিত্ব বিকাশের জন্য কীভাবে পারিপাট্য রক্ষা করা যায়? দলীয়ভাবে উপস্থাপন করো।
Content added By
Promotion