ব্যবসায়ের মৌলিক ধারণা

একাদশ- দ্বাদশ শ্রেণি - ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা - ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা ১ম পত্র | | NCTB BOOK

প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ নিজ প্রয়োজন মেটানোর প্রচেষ্টায় সচেষ্ট ছিল। মৎস আহরণ, কৃষিকাজ, পশু শিকার, পণ্য বিনিময়, উৎপাদন প্রচেষ্টা প্রভৃতি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত ছিল। এর মূলে যে জিনিস কাজ করে তাহলো মানুষের অভাববোধ। অভাব পূরণের লক্ষ্যে তারা বিভিন্ন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে এবং অর্থ উপার্জনের প্রচেষ্টা চালায় । মূলত অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ও লেনদেনকে ঘিরেই উদ্ভব হয় ব্যবসায়ের।

এ অধ্যায় পাঠ শেষে আমরা জানতে পারব—

  • ব্যবসায়ের ধারণা ।
  • ব্যবসায়ের আওতা । (শিল্পের বৈশিষ্ট্য ও প্রকারভেদ; বাণিজ্যের বৈশিষ্ট্য ও প্রকারভেদ; প্রত্যক্ষ সেবার বৈশিষ্ট্য ও প্রকারভেদ।)
  • শিল্প, বাণিজ্য ও প্রত্যক্ষ সেবার মধ্যে পার্থক্য ।
  • বাংলাদেশের ব্যবসায়ের আওতা হিসেবে শিল্প, বাণিজ্য ও প্রত্যক্ষ সেবার সমস্যা ও সম্ভাবনা।
  • সামাজিক ব্যবসায় ধারণা।
  • ব্যবসায়ের কার্যাবলি ।
  • ব্যবসায়ের গুরুত্ব ।
  • অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যবসায়ের অবদান ।
  • জীবিকা অর্জনের উপায় হিসেবে ব্যবসায় ।

সূত্র: ক্যামব্রিয়ান পাবলিকেশন্স

Content added By
Content updated By

# বহুনির্বাচনী প্রশ্ন

নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নের উত্তর দাও :

মি. নাহিদ গ্রামের মহিলাদের সহায়তায় বাঁশ, মাটি, শোলা ও পাটের সাহায্যে বিভিন্ন খেলনা ও গৃহস্থালি সামগ্রী তৈরি করে বাজারে বিক্রি করে বেশ টাকা-পয়সার মালিক হয়েছেন।

নিচের অনুচ্ছেদটি পড়ে প্রশ্নের উত্তর দাও:

চান মিয়া গ্রামে বাস করে। তার নিজস্ব অল্প জমি আছে। সে জমি চাষাবাদ করে। ধান, পাট, পেঁয়াজ ইত্যাদি শস্য ফলায়। শুধু তার জমিতে ফসল ফলিয়ে তার সংসার চলে না। তাই সে অন্যের জমিও চাষাবাদ করে।

চাষাবাদ করে না তাই
অল্প জমি আছে বলে
চাষাবাদের জমি নেই
কিছুই করে না

ব্যবসায়ের ধারণা

সাধারণভাবে কোনো কিছু কেনা-বেচার কার্যক্রমকে আমরা ব্যবসায় হিসাবে জানি। কিন্তু শুধুমাত্র কেনা-বেচার সাথে ব্যবসায় সম্পৃক্ত নয়। ব্যবসায় হলো উৎপাদন, বণ্টন এবং উৎপাদন ও বণ্টনের সহায়ক কার্যাবলি। আমরা ব্যবসায়কে একটি ছকের মাধ্যমে উপস্থাপন করতে পারি-

মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে পরিচালিত অর্থনৈতিক কর্মকান্ডকে ব্যবসায় বলে। পরিবারের সদস্যদের জন্য খাদ্য উৎপাদন করা, হাঁস-মুরগি পালন করা, সবজি চাষ করাকে ব্যবসায় বলা যায় না। কিন্তু যখন কোনো কৃষক মুনাফার আশায় ধান চাষ করে বা সবজি ফলায় তা ব্যবসায় বলে গণ্য হবে। তবে মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে পরিচালিত সকল অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ব্যবসা বলে গণ্য হবে যদি সেগুলো দেশের আইনে বৈধ ও সঠিক উপায়ে পরিচালিত হয়। মানুষ তার অভাব পূরণের লক্ষ্যে বিভিন্ন পণ্য বা সেবা উৎপাদন, বণ্টন, উৎপাদন ও বণ্টনের সহায়ক কার্যক্রমে নিজেকে সম্পৃক্ত করে এবং মুনাফা অর্জন করে। এ মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে সম্পাদিত অর্থনৈতিক কার্যক্রমকেই ব্যবসায় বলে ।

ব্যবসায়ের বৈশিষ্ট্য (Characteristics of Business )

 সমাজ বিজ্ঞানের শাখা হিসেবে ব্যবসায় পণ্য ও সেবা উৎপাদন ও বণ্টন কার্যাবলির সাথে সংশ্লিষ্ট। মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে পরিচালিত এরূপ কার্যাবলির কতকগুলো স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়। যা নিে উপস্থাপিত হলো—

  • ব্যবসায়ের প্রথম ও প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো মুনাফা অর্জন। কারণ ব্যবসায়ের ধরন যা-ই হোক না কেন, মালিকগণ মুনাফা অর্জনকেই প্রধান উদ্দেশ্য হিসেবে গণ্য করে ব্যবসায় গঠন ও পরিচালনা করে থাকেন।
  • ব্যবসায়ের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে লাভ-লোকসানের ঝুঁকি গ্রহণ । প্রত্যেক ব্যবসায়ী তার সাফল্য সম্পর্কে সম্পূর্ণ অনিশ্চিত। সুতরাং ব্যবসায়ের অস্তিত্বের সাথে লাভ-লোকসানের অনিশ্চয়তার ঝুঁকি জড়িত। 
  • মূলধন ব্যবসায়ের মূল চালিকাশক্তি। সঠিক সময়ে ব্যবসায়ের সুষ্ঠু গঠন ও পরিচালনার নিমিত্তে সঠিক পরিমাণে মূলধন প্রয়োজন । মালিক বা উদোক্তাগণ এ মূলধন নিজেদের তহবিল থেকে বা অন্য কোনো উৎস থেকে ঋণ হিসেবে গ্রহণ করতে পারেন ।
  • ক্রেতাগণ তাদের প্রয়োজনীয় পণ্যাদি চূড়ান্ত ভোগের উপযোগী করে পেতে চায়। এজন্যেই ব্যবসায় আহরিত প্রাকৃতিক সম্পদের মাঝে উপযোগিতা সৃষ্টি করে এবং ক্রেতাদের ভোগের উপযোগী করে তা বাজারজাত করে।
  • ব্যবসায়িক লেনদেনের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ক্রেতা-বিক্রেতা। অর্থ প্রদান ও অর্থ গ্রহণ-এ দুটির অস্তিত্ব ব্যবসায়িক লেনদেনে অপরিহার্য। 
  • ব্যবসায়িক লেনদেন নিয়মিত ও পৌনঃপুনিকভাবে হতে হয় । আকস্মিক কোনোরূপ লেনদেনকে ব্যবসায় বলা যায় না । 
  • ব্যবসায়কে অবশ্যই আইনানুগ ও বৈধ হতে হবে।
  • ব্যবসায় সবসময় একটা স্বাধীন পেশা হিসেবে গণ্য হয় ।
Content added || updated By

ব্যবসায়ের আওতা বা পরিধি

অভাব পূরণের প্রয়োজনীয় পণ্য ও সেবার উৎপাদন ও বণ্টন এবং এর সহায়ক যাবতীয় কার্যাবলি ব্যবসায়ের আওতাভুক্ত। অর্থাৎ উৎপাদনের প্রয়োজনীয় কাঁচামাল সংগ্রহ হতে আরম্ভ করে তৈরি পণ্য বা সেবা ভোক্তার হাতে পৌছানো পর্যন্ত সকল কার্যাবলিই ব্যবসায়ের আওতা বা পরিধির অন্তর্ভুক্ত। 

শিল্প (Industry)

শিল্প উৎপাদনের বাহন। যে কর্ম প্রচেষ্টা বা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ এবং এর উপযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে মানুষের ব্যবহার উপযোগী পণ্য প্রস্তুত করা হয় তাকে শিল্প বলে। শিল্পের বৈশিষ্ট্য সমূহ—

  1. শিল্প পণ্যদ্রব্য প্রক্রিয়াজাতকরণের সাথে সম্পৃক্ত;
  2. সম্পদ বা মূল্য উৎপাদনই শিল্পের মূল লক্ষ্য ;
  3. শিল্প পণ্যের আকারগত উপযোগ সৃষ্টি করে; 
  4. শিল্পে উৎপাদিত পণ্যসামগ্রী মানুষের অভাব মোচনের কাজে নিয়োজিত;
  5. অর্ধ প্রস্তুত পণ্যকে চূড়ান্ত পণ্যে রূপান্তরিত করে।

শিল্পকে নিম্নোক্ত বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা—

ছক: ব্যবসায়ের আওতা।

ক. প্রাথমিক শিল্প (Primary Industry)

প্রাথমিক শিল্পে কোনো রূপগত পরিবর্তন ঘটে না । প্রাথমিক শিল্পকে তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে ।

  • প্রজনন শিল্প (Genetic Industry): যে শিল্পে উৎপাদিত পণ্য সামগ্রি পুনঃবার সৃষ্টি বা উৎপাদনের কাজে ব্যবহৃত হয় তাকে প্রজনন শিল্প বলে। উদাহরণ স্বরূপ মৎস চাষ, নার্সারি, হাঁসমুরগি, ফলমূল ও গবাদি পশুর খামার।
  • নিষ্কাশন শিল্প (Extractive Industry): ভূ-গর্ভ, নদী, সাগর বা ভূমি থেকে প্রকৃতি প্রদত্ত সম্পদ আহরণ, উপযুক্ত কাজের পরিবেশ, উন্নতমানের পণ্য ও সেবা পরিবেশন ইত্যাদির মাধ্যমে আহরণের কাজে যে শিল্প সম্পর্কযুক্ত তাকে নিষ্কাশন শিল্প বলে ।  উদাহরণস্বরূপ সমুদ্র হইতে মৎস শিকার ও জলজ সম্পদ সংগ্রহ, বন হতে কাঠ বা অন্যান্য বনজ সম্পদ সংগ্রহ, নদী হইতে বালু ও ভূ-গর্ভ হতে খনিজ পদার্থ উত্তোলন ইত্যাদি ।
  • কৃষিজ শিল্প (Agricultural Industry): যে প্রক্রিয়ায় কৃষিজ পণ্য উৎপাদন ও আহরণ করা হয় তাকে কৃষিজ শিল্প বলে । উদাহরণস্বরূপ ধান ও পাটের কথা বলা যায় ।

খ. গৌণ শিল্প (Secondary Industry) 

যে প্রক্রিয়ায় সম্পদের রূপের পরিবর্তন ঘটে তাকে গৌণ শিল্প বলে । নিম্নে গৌণ শিল্পের সম্ভাব্য আওতাগুলো তুলে ধরা হলো—

  • উৎপাদন বা প্রস্তুত শিল্প (Productive Industry): শ্রম ও যন্ত্রের সাহায্যে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় কাঁচামাল বা অর্ধ প্রস্তুত দ্রব্যকে মানুষের ব্যবহার উপযোগী পণ্যে প্রস্তুত করার প্রচেষ্টাকে উৎপাদন শিল্প বলে। অর্থাৎ পণ্য উৎপাদনের জন্য পণ্যের যে রূপগত পরিবর্তন সাধিত হয় সেই প্রক্রিয়াই হলো উৎপাদন শিল্প । যেমন- গাছ কেটে আসবাবপত্র তৈরি, বয়ন শিল্প, ইস্পাত শিল্প ইত্যাদি ।
  • বিশ্লেষণমূলক শিল্প (Analytical Industry): এ জাতীয় শিল্পে কোনো দ্রব্যকে বিশ্লেষণ করে নানা রকম দ্রব্য তৈরি করা হয়। যেমন-অশোধিত খনিজ তৈল থেকে ডিজেল, পেট্রোল, গ্যাসোলিন, কেরোসিন, খনিজ কয়লা হতে কোক কয়লা,, ন্যাপথালিন, আলকাতরা ইত্যাদি তৈরি করার কাজ ।
  • প্রক্রিয়াভিত্তিক শিল্প ( Processing Industry): এ জাতীয় শিল্পে বিভিন্ন প্রক্রিয়া অবলম্বন করে পণ্য উৎপাদন করা হয়। অর্থাৎ প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে পণ্য উৎপাদন করার শিল্পই হলো প্রক্রিয়াভিত্তিক শিল্প। যেমন-তুলা হতে বস্ত্র, আখ হতে চিনি ইত্যাদি ।
  • যৌগিক শিল্প (Synthetic Industry): এ শিল্পে একাধিক মৌলিক দ্রব্যের সমন্বয়ে একটি নতুন দ্রব্য তৈরি হয়। যেমন-সার শিল্প এটি কয়েকটি মৌলিক উপকরণের মধ্য দিয়ে সারে পরিণত হয়েছে। সাবান, সিমেন্ট ইত্যাদি যৌগিক শিল্পের উদাহরণ।

গ. সংযোজন শিল্প (Assembling Industry)

এ প্রক্রিয়ায় একাধিক যন্ত্র বা যন্ত্রাংশ সংযোজন করে নতুন পণ্য তৈরি করা হয়। যেমন-মোটর শিল্প, রেল ইঞ্জিন।

  • সংযুক্ত শিল্প (Integrated Industry): যে শিল্প ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের শিল্প প্রক্রিয়ার একই সাথে সমন্বয় ঘটে তাকে সংযুক্ত শিল্প বলে । যেমন-লৌহ ও ইস্পাত শিল্প ।
  • নির্মাণ শিল্প (Constructive Industry): যে প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন ধরনের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়ে থাকে তাকে নির্মাণ শিল্প বলে। যেমন-রাস্তা ঘাট, দালানকোঠা, বাঁধ, সেতু ইত্যাদি নির্মাণ ।
  • সেবা পরিবেশক শিল্প ( Service Industry): যে শিল্প জনকল্যাণমূলক কাজে নিয়োজিত হয়ে থাকে তাকে সেবা পরিবেশক শিল্প বলে। যেমন-পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস, টেলিফোন ইত্যাদি সরবরাহ এ শিল্পের আওতাভুক্ত ।

বাণিজ্য (Commerce)

শিল্পে উৎপাদিত পণ্য প্রকৃত ভোগকারীর নিকট অথবা কাঁচামাল ও অর্ধ প্রস্তুত পণ্য পরবর্তী ভোগকারী বা উৎপাদকের নিকট পৌঁছানোর ক্ষেত্রে সম্ভাব্য সকল প্রতিবন্ধকতাকে দূরীকরণের জন্য গৃহীত যাবতীয় কাজের সমষ্টিকে বাণিজ্য বলে ।

বাণিজ্যের বৈশিষ্ট্যসমূহ (Features of Commerce):

১. পণ্য সংগ্রহ ও বণ্টন: পণ্য উৎপাদন হয় এক স্থানে এবং ভোগ হয় বিভিন্ন স্থানে । বাণিজ্য ব্যবসায়, পরিবহণ, গুদামজাতকরণ, বীমা, ব্যাংকিং ও প্রচার ব্যবস্থার মাধ্যমে ঐ সমস্ত পণ্য সংগ্রহ করে বণ্টন করে ।
২. উৎপাদন ও বণ্টনের মধ্যে সমন্বয়: বাজারজাতকরণ প্রক্রিয়ায় উৎপাদন ও বণ্টনের মধ্যে সমন্বয়সাধন করে বাণিজ্য বাজার স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করে ।
৩. ব্যবসায়ের প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণ: বাণিজ্য ব্যবসায়, পরিবহণ, গুদামজাতকরণ, ব্যাংক, বীমা ও প্রচারের দ্বারা যথাক্রমে ব্যবসায়ের ব্যক্তিগত, স্থানগত, কালগত, অর্থ সংক্রান্ত, ঝুঁকিগত বাধা বা প্রতিবন্ধকতাসমূহ দূর করে সুষ্ঠুভাবে ব্যবসায়কে চলতে সাহায্য করে ।
৪. পণ্যের মান ও গুণ উন্নতকরণ ও সংরক্ষনঃ পণ্যের মান ও গুণ উন্নতকরণ এবং সংরক্ষণের লক্ষ্যে
বাণিজ্য প্রমিতকরণ, পর্যায়িতকরণ, চিহ্নিতকরণ, মোড়কিকরণ পদক্ষেপ গ্রহণ করে ।
৫. বৃহদায়তন উৎপাদনে সাহায্য: বাণিজ্যিক প্রক্রিয়ায় পণ্যের বাজারজাতকরণ নিশ্চিত হয় বলে উৎপাদক অবিরত উৎপাদন কার্যে নিয়োজিত থেকে বাজারের চাহিদানুযায়ী ব্যাপক আকারে উৎপাদন করতে পারে ।

বাণিজ্যের প্রকারভেদ নিম্নরূপ—

বিনিময় (Trade): পণ্য দ্রব্য বা সেবা সামগ্রির স্বত্ব হস্তান্তরের কাজকে পণ্য বিনিময় বলে। বিনিময়ের মাধ্যমে স্বত্ব হস্তান্তরের ক্ষেত্রে বিদ্যমান ব্যক্তিগত বাধা অপসারিত হয়। পণ্য বা সেবা বিনিময়কে নিম্নোক্ত কয়েকটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায় ।

১. অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য (Home Trade): একটি দেশের ভৌগোলিক সীমানার মধ্যে যে ক্রয় - বিক্রয় কার্য সম্পাদিত হয়, তাকে অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য বলে । অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যকে প্রকৃতি অনুযায়ী আবার দুভাগে ভাগ করা হয়েছে।
i. পাইকারী ব্যবসায় (Whole sale trade): যে ব্যবসায় পাইকারি ব্যবসায়ী উৎপাদকের নিকট হতে অধিক পরিমাণে পণ্য দ্রব্য ক্রয় করে সেগুলো ছোট ছোট লটে খুচরা ব্যবসায়ীদের নিকট বিক্রি করে তাকে পাইকারি ব্যবসায় বলে ।
ii. খুচরা ব্যবসায় (Retail trade): খুচরা ব্যবসায়ী পাইকারদের নিকট থেকে পণ্য দ্রব্য সংগ্রহ করে সেগুলো ভোক্তাদের নিকট বিক্রি করে । এরূপ ব্যবসায়কে খুচরা ব্যবসায় বলে ।
২. আন্তর্জাতিক/বৈদেশিক বাণিজ্য (Foreign trade): এক দেশের সাথে অন্য দেশের বাণিজ্য হলে তাকে বৈদেশিক বাণিজ্য বলে। এ ব্যবস্থায় এক দেশের ক্রেতা অন্য দেশের বিক্রেতার সাথে বাণিজ্য করে থাকে । বৈদেশিক বাণিজ্য তিনটি উপায়ে হয়ে থাকে—
i. আমদানি (Import): অন্য দেশ থেকে পণ্য কিনে নিজ দেশে নিয়ে আসার কাজকে বলে আমদানি । 

ii. রপ্তানি (Export): রপ্তানি বাণিজ্যের ক্ষেত্রে পণ্য দ্রব্য বা সেবা স্বদেশ থেকে বিদেশে প্রেরণ করা হয় ।
iii. পুনঃরপ্তানি (Re-export): এক দেশ থেকে আমদানিকৃত পণ্য তৃতীয় দেশে বিক্রি করা হলে তাকে পুনঃরপ্তানি বাণিজ্য বলে ।

চিত্র: পুনঃরপ্তানি ।

সহায়ক কার্যাবলি (Auxilaries to trade):

মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে শিল্প ও বাণিজ্যে সহায়তা দানের লক্ষ্যে যেসব কার্য সম্পাদিত হয় সেগুলোও ব্যবসায়ের আওতাধীন ।

সহায়ক কার্যাবলি নিম্নরূপ—

i. ব্যাংকিং (Banking): ব্যাংকিং ব্যবস্থা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে ঋণ সরবরাহ করে ব্যবসায়ের অর্থ সংস্থানজনিত প্রতিবন্ধকতা দূর করে ।

ii. বিমা (Insurance): ব্যবসায়ের সাথে জড়িত ঝুঁকি সংক্রান্ত প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণে সহায়তা করে বিমা ।

iii. পরিবহন (Transportation): পরিবহন পণ্য স্থানান্তরের ক্ষেত্রে স্থানগত প্রতিবন্ধকতা দূরীভূত করে থাকে। পরিবহন তিন উপায়ে হয়ে থাকে-স্থল পথে, জল পথে, বিমান পথে ।

iv. গুদামজাতকরণ (Warehousing): এ প্রক্রিয়ায় পণ্য কিছু সময়ের জন্যে মজুত রেখে সময়গত উপযোগ সৃষ্টি করা হয়।

v. প্যাকিং (Packing): পণ্য বাজারজাতকরণের আগে পণ্যের দাম, গুণ, তারিখ ইত্যাদি সংবলিত একটি আকর্ষণীয় মোড়কে পণ্যকে সাজানো হলে একে প্যাকিং বলে।

vi. বাজারজাতকরণ প্রসার (Promotion): পণ্যের সঠিক মূল্যায়ন হওয়ার জন্য, যে উদ্দেশ্যে পণ্য তৈরি করা হয়েছে এবং মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে পণ্যকে বাজারজাতকরণ করা হয়। বাজারজাতকরণের গুরুত্বপূর্ণ তিনটি বিষয় হলো-পণ্য গবেষণা, বাজার গবেষণা, বিক্ৰয়িকতা।

প্রত্যক্ষ সেবা (Direct Services)

অর্থোপার্জনের উদ্দেশ্যে যেসব কার্য সরাসরি সম্পাদিত হয় কিংবা দৈহিক বা মানসিক শ্রমের বিনিময় করা হয় তাকে প্রত্যক্ষ সেবা বলে।

চিত্র: প্রত্যক্ষ সেবা

প্রত্যক্ষ সেবার বৈশিষ্ট্য:
১. অর্থ উপার্জনের উদ্দেশ্য স্বাধীন পেশায় নিয়োজিত থাকে,
২. পণ্য ছাড়া সরাসরি সেবা প্রদান,
৩. সেবাদাতা ও সেবা গ্রহীতার উপস্থিতি থাকতে হয় ।

প্রত্যক্ষ সেবার আওতা বা প্রকারভেদ

যেসব কর্মকাণ্ড প্রত্যক্ষ সেবার মধ্যে পড়ে সেগুলো হলো-চিকিৎসা বৃত্তি, আইন বৃত্তি, হিসাব বৃত্তি, প্রকৌশলী বৃত্তি, পরামর্শ বৃত্তি, হোটেল, সেলুন, নাট্যশালা, সিনেমা হল, অভিনেতা, অভিনেত্রীদের অভিনয়, ডাক্তাররা মিলে ক্লিনিক ব্যবসা বা কয়েকজন উকিল মিলে এটর্নি ফার্ম বা প্রকৌশলীরা মিলে ইঞ্জিনিয়ারিং ফার্ম গঠন করতে পারেন; যা প্রত্যক্ষ সেবা বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে সঙ্গত কারণে ব্যবসায়ের আওতায় আসে । পরিশেষে বলা যায় যে, ব্যবসায়ের আওতা অত্যন্ত ব্যাপক। বর্তমান বিশ্বে ব্যবসায় একটি ব্যাপক আওতাবিশিষ্ট অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সমষ্টি। মানুষের অফুরন্ত অভাব পূরণের জন্য বস্তুগত ও অবস্তুগত সেবা ও শ্রমের যথেষ্ট প্রয়োজন রয়েছে। কাজেই মানুষের এসব চাহিদা পূরণের জন্য অর্থোপার্জনের লক্ষ্যে সম্পাদিত যাবতীয় কার্যই ব্যবসায়ের আওতাভুক্ত ।

Content added || updated By

বাংলাদেশে ব্যবসায়ের আওতা হিসাবে শিল্প, বাণিজ্য ও প্রত্যক্ষ সেবার সমস্যা ও সম্ভাবনা

বাংলাদেশ শিল্পে অনগ্রসর একটা দেশ। প্রাচীন কাল থেকেই কৃষি খাত এ দেশে মুখ্য হলেও বর্তমানে শিল্পোন্নয়নের কোনো বিকল্প নেই। জাতীয় সম্পদ ও গৃহীত বৈদেশিক ঋণের বড় পরিমাণ অর্থ শিল্পোন্নয়নের স্বার্থে ব্যবহৃত হয়েছে কিন্তু প্রত্যাশিত অগ্রগতি নানান কারণেই এখনও অর্জিত হয়নি। 

বাংলাদেশে শিল্পের সমস্যা (Problems of Industry in Bangladesh):

বাংলাদেশে শিল্পখাতে দূর্বলতার পিছনে বিভিন্ন কারণ বিদ্যমান। নিম্নে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো- 

১। সৎ ও যোগ্য উদ্যোক্তার অভাব: আমাদের দেশের সকল পর্যায়েই দক্ষ ও যোগ্য উদ্যোক্তা বা সংগঠকের অভাব লক্ষনীয়। অথচ উদ্যোক্তা হলো ব্যবসায়ের নেতা। যোগ্য উদ্যোক্তা শ্রেণী গড়ে না উঠার কারণে এ দেশের শিল্প ক্ষেত্রে যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও সে সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো যাচ্ছে
না । 

২। ব্যবস্থাপনার অদক্ষতাঃ শিল্প নিজে চলতে পারে না। ব্যবস্থাপনার উপর তাকে নির্ভর করতে হয় । শিল্প সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য এর ব্যবস্থাপকদের যেরূপ দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা থাকা প্রয়োজন আমাদের দেশে তার বড়ই অভাব পরিলক্ষিত হয় ।

৩। মূলধনের অভাব: শিল্প ছোট বড় যে ধরনেরই হোক না কেন তাতে যদি কাম্য পরিমাণের মূলধন সংস্থান করা না যায় তবে তা হতে কাঙ্খিত ফল লাভ করা যায় না ।

৪। সরকারি সুষ্ঠু নীতিমালার অভাবঃ শিল্পকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য সরকারের যে সুষ্ঠু নীতি-পরিকল্পনা ও তদনুযায়ী উদ্যোগ এবং সহযোগিতা থাকা প্রয়োজন তারও মারাত্মক অভাব এ দেশে লক্ষণীয়।

৫। উন্নত প্রযুক্তি ও কারিগরি দক্ষতার অভাব: আমাদের দেশের শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই পুরাতন যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তির ব্যবহার করে। ফলে বিদেশি প্রতিযোগীদের ন্যায় মানসম্মত পণ্য উৎপাদন তাদের পক্ষে সম্ভব হয় না। এ ছাড়া ব্যবসায় পরিচালনা ও উৎপাদনে যে ধরনের কলাকৌশল ও পদ্ধতি এখানে ব্যবহৃত হয় তাও উন্নত নয়। ফলে ব্যবসায় সংগঠনগুলোর দক্ষতার মান উন্নত হওয়ার সুযোগ কম ।

বাংলাদেশে শিল্পের সম্ভাবনা (Prospects of Industry in Bangladesh )

দেশের ক্রমবর্ধমান জনশক্তির কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা এবং দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে শিল্পায়নের কোনো বিকল্প নেই । প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যাপক ব্যবহার, অভ্যন্তরীণ বাজার, বিদেশী বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বৃদ্ধি, উন্নতমানের কয়লা খনির সন্ধান লাভ, রপ্তানিযোগ্য পণ্য উৎপাদন বৃদ্ধি, বেসরকারি উদ্যোগ সম্প্রসারন, সুশাসন প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বারোপ, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জনের প্রয়াস, বিশ্বায়নের প্রভাব ইত্যাদি সবকিছুই এদেশে শিল্পখাতের অগ্রগতির ইঙ্গিত দেয় । দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনে শিল্পখাতের উন্নয়নের আবশ্যকতা ও করণীয় সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট সকল মহলের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ও মনোভাব যত দ্রুত সৃষ্টি হয় ততই তা মঙ্গলজনক। সর্বোপরি দেশীয় উদ্যোগ ও বিনিয়োগ আকর্ষণের পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জন ও পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারলে সকল বাধা-বিপত্তি দূর করে সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো যাবে।

বাংলাদেশে ব্যবসায়ের আওতা হিসেবে বাণিজ্যের সমস্যা (Problems of Commerce in Bangladesh)

বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক বাণিজ্যে বিভিন্ন সমস্যা বিদ্যমান। যে কারণে যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকার পরও এদেশে বাণিজ্যের কাঙ্ক্ষিত সম্প্রসারণ সম্ভব হচ্ছে না। নিম্নে এরুপ সমস্যাসমূহ উল্লেখ করা হলো—

ক. অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যে সমস্যা: (Problems of home trade)

  • দক্ষ উদ্যোক্তা ও ব্যবস্থাপকের অভাব
  • মূলধনের সীমাবদ্ধতা
  • পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা
  • রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা
  • সরকারি বিভিন্ন সংস্থার সহযোগিতার অভাব
  • মধ্যস্থ ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য
  • পণ্য ও সেবার নিম্নমান

খ. বৈদেশিক বাণিজ্যে সমস্যা: (Problems of foreign trade )

  • রপ্তানিমুখী শিল্পের অভাব 
  • দক্ষ রপ্তানিকারকের অভাব
  • রপ্তানি পণ্যের সীমাবদ্ধতা বা পোশাক শিল্পের উপর অতিনির্ভরতা
  • রপ্তানি বাজার সম্প্রসারণে উন্নত কৌশল ও প্রযুক্তি ব্যবহারের অভাব
  • দ্রুত শিপমেন্ট সমস্যা
  • আঞ্চলিক সহায়তার অভাব
  • রপ্তানি সম্প্রসারণে ব্যাকওয়ার্ড ও ফরোয়ার্ড লিংকেজ শিল্পের অভাব

বাংলাদেশে বাণিজ্যের সম্ভাবনা (Prospects of commerce in Bangladesh): 

বাংলাদেশে বাণিজ্যোর সম্ভাবনা যথেষ্ট তা বলার অপেক্ষা রাখে না। পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে ব্র্যান্ডের পণ্যের সম্প্রসারণ, খুচরা বিক্রয়মূল্য নির্ধারণ, মোড়কীকরণ ব্যবস্থার উন্নয়ন, প্ৰত্যক্ষ বাজারজাতকরণ ব্যবস্থা প্রসার ইত্যাদি পদক্ষেপ গ্রামীণ বাজার পর্যন্ত বিস্তৃত হচ্ছে বিধায় লেনদেন অনেক সহজ হয়েছে। মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পাওয়ায় মানুষের ভোগের প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। মানুষের রুচি ও চাহিদার সাথে তাল মিলিয়ে নতুন ডিজাইন ও মানের পণ্য বাজারে আসছে। রাজধানি থেকে শুরু করে ছোট শহর পর্যন্ত বিপনি বিতান গড়ে উঠায় বাণিজ্যিক কর্মকান্ডের বিস্তৃতি ঘটছে। রপ্তানি বাণিজ্যে বিদ্যমান সমস্যা মাথায় রেখে আমদানিকারকদের মনে আস্থা সৃষ্টির উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। রপ্তানিমুখি প্রতিষ্ঠানগুলোর দক্ষতা বৃদ্ধি ও বিদেশি বাণিজ্যিক মিশনগুলোকে সক্রিয় করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরিন ও বৈদেশিক বাণিজ্য ভবিষ্যতে আরও সমৃদ্ধ হবে।

Content added By

# বহুনির্বাচনী প্রশ্ন

এক দেশ থেকে আরেক দেশে পন্য রপ্তানি করা
এক দেশ কর্তৃক অন্য দেশ থেকে পন্য আমদানি করা
এক দেশ অন্য দেশ থেকে পন্য আমদানী করার পর আবার অন্য একটি দেশে সে পন্যটি রপ্তানি করা
অন্য দেশে বিনিয়োগ করা

সামাজিক ব্যবসায়ের ধারণা

প্রচলিত ব্যবসায় আমাদের শিক্ষা দেয় কীভাবে অধিক মুনাফা অর্জন করা যায়। অর্থাৎ প্রচলিত ব্যবসায় আমাদেরকে স্বার্থপর করে তোলে। অপরদিকে সামাজিক ব্যবসায় আমাদেরকে শিক্ষা দেয় কীভাবে ব্যবসায়ের মাধ্যমে স্বল্প মুনাফায় সমাজের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করা যায়। মুনাফা অর্জনের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য, ব্যবসায় সম্প্রসারণ এবং সামাজিক সমস্যা সমাধানে উল্লেখযোগ্য ভুমিকা রাখায় বর্তমান বিশ্বে সামাজিক ব্যবসায় ধারণাটি ব্যপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। এ ধারনাটি প্রথমে উপস্থাপন ও উন্নয়ন করেন বাংলাদেশের নোবেল বিজয়ী ডঃ মোঃ ইউনুস। তিনি ২০০৮ সালে তার প্রকাশিত বই “Creating a world without poverty social business and the future of capitalism” সর্বপ্রথম এ ধারনাটি দেন। পরবর্তিতে ২০১০ সালে তার প্রকাশিত “Building Social Business: The new kind of Capitalism that serve humanity's most pressing needs” এ এই মডেলটির বিস্তারিত আলোচনা করেন।

চিত্র: সামাজিক ব্যবসায়

সামাজিক ব্যবসায় হচ্ছে একটি কারণ ধাবিত (Cause-driven) ব্যবসায়। সামাজিক ব্যবসায় বিনিয়োগকারী ধীরে ধীরে তার বিনিয়োগকৃত মূলধন তুলে নিতে পারে। কিন্তু এর বাইরে কোনো লভ্যাংশ সে ভোগ করতে পারে না। এ ব্যবসায়ের উদ্দেশ্য হচ্ছে ব্যবসায় পরিচালনার মাধ্যমে সমাজের এক বা একাধিক সামাজিক উদ্দেশ্য অর্জন করা; এখানে বিনিয়োগকারীর কোনো ব্যক্তিগত উদ্দেশ্য থাকে না। এ ব্যবসায়ের মুনাফা ব্যবহার করা হয় সামাজিক ব্যবসায় সম্প্রসারণ বা পণ্য উন্নয়নে। এ কারণেই বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান থেকে কোনো মুনাফা উত্তোলন করে না ।

পণ্যের খরচ তুলে মুনাফা অর্জনের পাশাপাশি এ ব্যবসায় এক বা একাধিক সামাজিক উদ্দেশ্য যেমন—গরীবদের স্বাস্থ্যসেবা, আবাসন ব্যবস্থা, আর্থিক সেবা প্রদান, অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের পুষ্টির ব্যবস্থা করা, নিরাপদ খাবার পানি সরবরাহ, নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবস্থা ইত্যাদি অর্জন করতে সহায়তা করবে।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস সামাজিক ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করেছেন— ইত্যাদি।

  • সামাজিক উদ্দেশ্য থাকতে হবে। যেমন: স্বাস্থ্য, শিক্ষা, দরিদ্রতা, পরিবেশ, জলবায়ু ইত্যাদি।
  • লভ্যাংশ হিসেবে বিনিয়োগকারী কোনো মুনাফা গ্রহণ করতে পারবে না ।
  • একটি ব্যবসায়কে সামাজিক ব্যবসায় হিসেবে বিবেচনা করা যাবে যদি এটির মালিকানা দরিদ্র শ্রেণির জন্য হয় এবং এটি সমাজের কোনো বিশেষ উদ্দেশ্য অর্জনে নিয়োজিত থাকে ।
     

সামাজিক ব্যবসায়ের প্রকারভেদ (Types of Social Business): সামাজিক ব্যবসায় দুপ্রকার। যথা—
১. টাইপ-I: সামাজিক ব্যবসায়
২. টাইপ-II: সামাজিক ব্যবসায় ।

১. টাইপ-I: এ ধরনের সামাজিক ব্যবসায় কোনো নির্দিষ্ট সামাজিক, নৈতিক অথবা পরিবেশগত লক্ষ্য অর্জনের জন্য কোনো পণ্য সরবরাহের উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়। যেমন-গ্রামীণ ডানোন (Grameen Danone), গ্রামীণ শক্তি (Grameen Sokti)।

২. টাইপ-II: এ ধরনের সামাজিক ব্যবসায় মুনাফানির্ভর ব্যবসায় যেটির মালিক হবেন গরিব বা সমাজের নিম্নবিত্তরা যারা সরাসরি লভ্যাংশ ভোগ করতে পারে বা পরোক্ষভাবে সুবিধা গ্রহণ করতে পারে। যেমন: গ্রামীণ ব্যাংক সামাজিক ব্যবসায় অব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান এবং ব্যবসায়িক সামাজিক দায়িত্ব থেকে ভিন্ন । 

সামাজিক ব্যবসায়ের নীতিমালা (Principles of Social Business)

ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং হ্যানস রেইটজ ( Hans Reitz), সামাজিক ব্যবসায়ের ৭টি নীতিমালার কথা উল্লেখ করেছেন । সেগুলো হলো—

  • সামাজিক ব্যবসায়ের উদ্দেশ্য হবে দারিদ্রতা দূর করা, অথবা সমাজের এক বা একাধিক সমস্যা সমাধান করা । 
  • আর্থিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধন
  • বিনিয়োগকারীরা শুধুমাত্র তাদের প্রাথমিক বিনিয়োগের অর্থ তুলে নিতে পারবে। বিনিয়োগের অতিরিক্ত লভ্যাংশ ভোগ করতে পারবে না ।
  • যখন কোম্পানির বিনিয়োগকৃত অর্থ ফেরত দেয়া হবে তখন কোম্পানির যত মুনাফা হবে তা কোম্পানির উন্নয়ন ও সম্প্রসারণে ব্যবহার করা হবে।
  • পরিবেশগত সচেতনতা । 
  • কর্মীরা ভালো পরিবেশে কাজের পাশাপাশি ন্যায্য মজুরি পায় ।
  • কাজ আনন্দের সাথে করা ।

 

Content added By

ব্যবসায়ের কার্যাবলি

পণ্য বা সেবা উৎপাদন এবং উৎপাদিত পণ্য বা সেবা সামগ্রী ভোক্তার কাছে পৌঁছানো পর্যন্ত যাবতীয় কার্যাবলি ব্যবসায়ের অন্তর্ভুক্ত । ভোক্তা বা ক্রেতার সন্তুষ্টি অর্জনই ব্যবসায়ের মূল উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য ।

নিম্নে ব্যবসায়ের গুরুত্বপূর্ণ কার্যাবলিসমূহ বর্ণনা করা হলো—

  • উৎপাদন ( production): প্রাকৃতিক সম্পদ সংগ্রহ বা উত্তোলন করে ভোক্তাদের অভাব পূরণের উদ্দেশ্যে এগুলোকে ব্যবহারোপযোগী করার জন্য ব্যবসায় উৎপাদনকার্য পরিচালনা করে থাকে। এ কাজকে রূপান্তর উপযোগিতা সৃষ্টিও বলা হয়ে থাকে। উৎপাদন ব্যবসায়ের মূখ্য কাজ ।
  • পরিবহন (Transportation): সাধারণত পণ্যসামগ্রী দেশের বিশেষ এলাকায় উৎপাদিত হয় এবং তা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ভাগ করা হয়। এমতাবস্থায় উৎপাদিত পণ্য পরিবহনের মাধ্যমে উৎপাদন কেন্দ্র হতে দেশের বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে গিয়ে ভোক্তাদের কাছাকাছি মজুদ করা হয়। এ কাজকে পণ্যের স্থানগত উপযোগিতা সৃষ্টি বলা হয় । পণ্যসামগ্রিকে স্থানান্তরে পরিবাহিত করা হলেই তা ভোগে লাগানো সম্ভব হয়।
  • ক্রয়-বিক্রয় (Buying and selling): ব্যবসায়ের অন্যতম প্রধান কাজ হলো পণ্য ও সেবা ক্রয়- বিক্রয় করা। সত্যিকার অর্থে, পণ্য ও সেবার ক্রয়-বিক্রয় ব্যবসায়ের প্রাণস্বরূপ। 
  • অর্থ সরবরাহ (Supply of money) : ব্যবসায়ের প্রয়োজন অনুসারে ব্যাংকিং-এ নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানগুলো অর্থ সরবরাহের মাধ্যমে ব্যবসায়-বাণিজ্যকে গতিশীল করে তোলে ।
  • ঝুঁকি হস্তান্তর (Transfering risk): ব্যবসায়ের মাধ্যমে ব্যবসায়-সংক্রান্ত বহুবিধ ঝুঁকিও হস্তান্তরিত হয়। পণ্য বহনকালে কিংবা ব্যবসায় পরিচালনাকালে অগ্নিকাণ্ড, বন্যা, ভূমিকম্প, চুরি-ডাকাতি ইত্যাদি কারণে যেসব ঝুঁকির সৃষ্টি হয় বিমা কোম্পানি সেসব ঝুঁকির দায়িত্ব গ্রহণ করে।
  • হিসাবরক্ষণ (Accounting): ব্যবসায় হিসাব রক্ষা একটি গুরুত্বপূর্ণ কার্য। ব্যবসায়ী লেনদেন হিসাবভুক্ত করাই এ কার্যের অন্তর্ভুক্ত । হিসাবরক্ষণের মাধ্যম কারবারের আয়-ব্যয়, লাভ-ক্ষতি এবং উহার আর্থিক অবস্থা জানা যায় । এর দ্বারা যেমন বর্তমান অবস্থা বুঝতে পারা যায় তেমনি ভবিষ্যৎ পন্থা স্থির করা হয় ।
  • বিজ্ঞাপন ও প্রচার (Advertisement and publicity): প্রত্যেক ব্যবসায়ী সংস্থা পণ্য-বার্তা সম্ভাব্য ক্রেতাদের দৃষ্টিগোচর করার উদ্দেশ্যে বিজ্ঞাপন ও প্রচারকার্য সম্পাদন করে থাকে। ক্রেতা সৃষ্টি করা এবং জনসাধারণকে পণ্যটির খরিদ্দারে পরিণত করার জন্য বিজ্ঞাপন ও প্রচার প্রয়োজন।
চিত্র: বিজ্ঞাপন ও প্রচার
  • মোড়কীকরণ (Packing): পণ্য বিক্রয় ও বহনের সুবিধার্থে বিভিন্ন পরিমাণে পণ্যকে আগেই মোড়কীকরণ করা প্রয়োজন। উন্নত ও আকর্ষনীয় প্যাকেট, বোতল বা টিনে পণ্য মোড়কীকরণ করা হলে তা ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষনে ও এর যথাযথ সংরক্ষনে সহায়তা হয় ।
  • মজুতকরণ (Storing): উৎপাদিত বা ক্রয়কৃত পণ্য বিক্রয় হতে কিছুটা সময় নেয়। মৌসুমী দ্ৰব্য উৎপাদন ও সংগ্রহের পর অনেকদিন মজুত করে রাখার প্রয়োজন পড়ে। তাই এরূপ সংরক্ষণের জন্য ব্যবসায়কে প্রয়োজন অনুযায়ী গুদামজাতকরণ সুবিধা গড়ে তুলতে দেখা যায় ।
  • প্রমিতকরণ ও পর্যায়িত করণ (Standardising and grading):

প্রমিতকরণ হলো মৌলিক মান নির্ধারণ এবং পর্যায়িতকরণ হলো উক্ত প্রতিষ্ঠিত মান অনুযায়ী পণ্য দ্রব্য ভাগ বা শ্রেণিবদ্ধ করা । ব্যবসায়ে পণ্য-দ্রব্য উৎপাদন ও বন্টনের ক্ষেত্রে প্রমিতকরণ ও পর্যায়িতকরণে প্রয়োজন পড়ে।

  • বাজার সংক্রান্ত গবেষণা ও উৎকর্ষ সাধন (Market research and development) : পণ্য বিক্রয়ের কাজ ক্ষমতার সাথে সুসম্পন্ন করার জন্য বাজার সংক্রান্ত গবেষণা ব্যবসায়ের একটি প্রয়োজনীয় কাজ। প্রত্যেক ব্যবসায়ী সংস্থা বিক্রয়ের জন্যই পণ্য বা সেবা উৎপাদন অথবা ক্রয় করে থাকে। কিন্তু বিক্রয়ের বাজার ব্যাপক ও অনিশ্চিত। বিক্রয়ের সাফল্যের জন্য বাজার পরিধি নির্ধারণ করা এবং খরিদ্দারের চাহিদা সম্পর্কে সুনিশ্চিত থাকা একান্ত দরকার। খরিদ্দারের রুচি, চাহিদার বর্তমান ও ভবিষ্যৎ গতি-প্রকৃতি, বাজারের বিস্তৃতি, ক্রয়ক্ষমতা ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে অনুসন্ধান করা এ কার্যের অন্তর্ভুক্ত।

পরিশেষে বলা যায়, মানুষের অভাব পূরণের উদ্দেশ্যে যাবতীয় বৈধ অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপই হলো ব্যবসায় আর ব্যবসায়ের সাথে সম্পর্কিত কর্মকাণ্ডই হলো ব্যবসায়ের কার্যাবলি। সম্পাদিত কার্যাবলির মধ্যে যেসব কাজ মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে করা হয়, সেগুলো ব্যবসায়িক কার্যকলাপের আওতায় পড়ে। প্রকৃতপক্ষে মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে একজন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যা করে তাই ব্যবসায়ীক কার্যকলাপ ।

Content added By

ব্যবসায়ের গুরুত্ব

বর্তমান উন্নয়নশীল বিশ্বে দ্রুত অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন ও পরিবর্তনের জন্য ব্যবসায়ের গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তা বাড়িয়ে বলার অপেক্ষা রাখে না। দেশের কৃষি, শিল্প, বাণিজ্য যোগাযোগ, পরিবহন প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উন্নয়নের সাথে ব্যবসায় ওতপ্রোতভাবে জড়িত। নিম্নে ব্যবসায়ের গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তা বর্ণনা করা হলো— 

ক. অর্থনৈতিক গুরুত্ব (Economic Importance):

  • অর্থনৈতিক উন্নয়ন (Economic development): প্রকৃতি প্রদত্ত বিভিন্ন সম্পদ আহরণ করে ব্যবসায় শিল্পের মাধ্যমে নতুন নতুন উপযোগ সৃষ্টি করে। দেশের প্রাকৃতিক সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করে ব্যবসায় অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • শ্রমবিভাগের সুফল (Merits of division of labour): ব্যবসায়িক তৎপরতা বৃদ্ধি পাওয়ার দরুন উৎপাদন ও অন্যান্য ব্যবসায়িক কর্যক্রমে শ্রমবিভাগ এবং বিশেষীকরণের উদ্ভব হয়েছে। এর ফলে শ্রম দক্ষতা বৃদ্ধি পায় এবং পণ্যের মূল্য কম পড়ে। তাই ভোক্তারা স্বল্প ব্যয়ে পণ্য ক্রয় করে তা ভোগ করতে সক্ষম হয়।
  • পুঁজি গঠন (Formation of capital): দেশে পুঁজিগঠনের হার যত বেশি হয়, অর্থনৈতিক উন্নয়নের হারও তত বেড়ে যায়। ব্যবসায় ব্যাংকিং ব্যবস্থা, বিমা ব্যবস্থা ইত্যাদির মাধ্যমে দেশের ভেতরকার বিক্ষিপ্ত সঞ্চয় একত্রিত করে পুঁজি গঠনে সহায়তা করে এবং এ পুঁজি ব্যবসা-বাণিজ্যে ব্যবহার করে জাতীয় উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করে। ফলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয় ।
  • প্রযুক্তির ব্যবহার ও অর্থনৈতিক কল্যাণ (Use of technology and economic welfare): ব্যবসায় উন্নত ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে নিত্য নতুন পণ্য উৎপাদন করে মানুষের অতৃপ্ত চাহিদাপূরণ করার প্রয়াস পায়। প্রযুক্তির উপযুক্ত ব্যবহার সমাজে মানুষের কল্যাণ বয়ে আনে এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রত্যক্ষভাবে সহায়তা করে।
  • সরকারি আয় বৃদ্ধি (Increase of government income): ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোর নিকট থেকে বিভিন্ন প্রকার কর ও শুল্ক বাবদ সরকার প্রচুর রাজস্ব আয় করে। এ অর্থ সরকার জনহিতকরকার্যে ব্যয় করে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিকে চাঙ্গা করে তোলে ।
  • সম্পদের ব্যবহার (Use of resources): ব্যবসায়ী কার্যকলাপের মাধ্যমে দেশের ভেতরে প্রাপ্ত প্রাকৃতিক সম্পদের উপযুক্ত ব্যবহার সম্ভবপর হয়। খনি থেকে সম্পদ উত্তোলন, সমুদ্র থেকে মৎস সম্পদ আহরণ, বন-জঙ্গল থেকে বনজ সম্পদ সংগ্রহ ইত্যাদি সবই ব্যবসায়ের ফলশ্রুতি।

খ. সামাজিক গুরুত্ব (Social Importance):

  • মূল্যের স্থিতিশীলতা রক্ষা (Keeping price stability): দ্রব্যমূল্য বেশি উঠানামা করলে মানুষের জীবনযাত্রা অসহনীয় হয়ে উঠে। তাই ব্যবসায় পণ্যমূল্য স্থিতিশীল রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে । 
  • কর্মসংস্থান (Employment): একটি দেশে অসংখ্য ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে অবদান রাখে। এসব প্রতিষ্ঠানে শত শত লোকের কর্মসংস্থান হয়। সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, ব্যবসায় কর্মসংস্থানের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নতির যাত্রাপথকে নির্বিঘ্ন করার প্রয়াস চালায় ।
  • পণ্য সরবরাহ (Product supply): সমাজে বসবাসরত মানুষের দৈনন্দিন চাহিদা পূরণের জন্য প্রয়োজনীয় মানসম্মত পণ্যদ্রব্য ও সেবা সরবরাহ নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে ব্যবসায় কার্যক্রম পরিচালিত হয় ।
  • পণ্যের মান উন্নয়ন ( Improvement of the quality of products): ব্যবসায়ের আধুনিকায়নের সাথে সাথে উৎপাদিত পণ্যের মান বৃদ্ধির প্রচেষ্টা চালানো হয়। নির্ধারিত পণ্য গুণে-মানে উত্তম হলে ভোগকারীরা যথেষ্ট উপকৃত হয়। ভোগকারীদের উপকার সামাজিক কল্যাণেরই নামান্তর ।
  • জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন (Improvement of standard of living): ব্যবসায় একদিকে প্রচুর পণ্যদ্রব্য যেমন উৎপাদন করে এবং অন্যদিকে এসব সামগ্রি ব্যবহারকারীর দ্বারপ্রান্তে এনে হাজির করে। এভাবে ব্যবসায় সামগ্রিকভাবে জনগণের সুখ-সমৃদ্ধি বয়ে আনে এবং এর ফলে জনগণের জীবনযাত্রার মানের উন্নয়ন ঘটে।
  • আন্তর্জাতিক সম্পর্ক (International relation): ব্যবসায় দিক-দিগন্তে এর বাহু প্রসারিত করে বিভিন্ন জাতির মধ্যে সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্ব সৃষ্টি করে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ব্যবসায়ের একটি অঙ্গ হিসেবে বিভিন্ন দেশের মধ্যে পণ্যের লেনদেন ঘটিয়ে প্রত্যেক দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়ক করে ।

পরিশেষে বলা যায় যে, আধুনিক বিশ্বে মানব গোষ্ঠীর সর্বাঙ্গীণ কল্যাণ ও সভ্যতার ক্রমোন্নতিতে ব্যবসায়ের গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। ব্যক্তি, সমাজ ও জাতীয় জীবনে প্রয়োজনীয় পণ্য বা সেবা আহরণ, উৎপাদন ও বিতরণ সংক্রান্ত কার্যক্রমে ব্যবসায়ের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।

Content added By

অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যবসায়ের অবদান

যে কোন দেশের জন্য ব্যবসায় হচ্ছে অর্থনীতির মূখ্য চালিকা শক্তি। বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ। উন্নত দেশের পর্যায়ে পৌছাতে হলে অর্থনৈতিক উন্নয়নের কোন বিকল্প নেই। কৃষিনির্ভর দেশ হলেও এ দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যবসায়ের অবদান দিন দিন বৃদ্ধি পেয়েছে। ব্যবসায় সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করা, , ব্যক্তিগত ও জাতীয় আয় বৃদ্ধি, সঞ্চয়ে উৎসাহ প্রদান, মূলধন গঠনে সহায়তা, সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধি, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, মানবসম্পদের উন্নয়ন, অবকাঠামোগত উন্নয়ন ইত্যাদি কার্যের মাধ্যমে আমাদের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। তাই বলা যায়, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যবসায়ের অবদান ব্যাপক ও অনস্বীকার্য।

 

Content added || updated By

জীবিকা অর্জনের উপায় হিসাবে ব্যবসায়

কোনো বিশেষ বিদ্যায় বৃত্তিমূলক জ্ঞান আহরণ করে পারদর্শিতা ও দক্ষতা অর্জনের পর বাস্তব জীবনে তার প্রয়োগ ও ব্যবহারের দ্বারা জীবিকা নির্বাহের প্রচেষ্টাকে পেশা বলে । কোনো মানুষ তার জীবনকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য কোনো কাজকে অবলম্বন করলে সেটা পেশা হিসেবে গণ্য হয়। এ দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যবসায়কে পেশা বা জীবিকা অর্জনের উপায় বলতে পারি । কারণ একজন ব্যক্তি ব্যবসায় করে তার ব্যক্তিগত বা পারিবারিক অভাবসমূহ পূরণ করছে। ব্যবসায় মানুষের জীবিকা অর্জনের অন্যতম প্রধান উপায়। যেকোনো ব্যক্তি তার স্বল্প বা বেশি মূলধন নিয়ে সহজেই ব্যবসায় করতে পারে । তাই অনেকে ব্যবসায়কে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেছে।

ব্যবসায়ের মাধ্যমে মানুষ তার জীবনকে উন্নতির দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। কেউ যদি চাকরি করে তবে সে নির্দিষ্ট বেতন পায়। সেক্ষেত্রে তার চাহিদা বা আকাঙ্ক্ষা সীমিত হয়ে থাকে। কিন্তু কেউ যদি ব্যবসায় সঠিকভাবে করতে পারে তবে সে চাকরির চেয়ে অনেক বেশি উপার্জন করতে পারবে। এখানে তার উপার্জন সীমিত থাকে না। ব্যবসায় কর্মসংস্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। একটি দেশে যত বেশি ব্যবসায়ের সম্প্রসারণ ঘটবে তত বেশি মানুষের কর্মের সংস্থান হবে।

ব্যবসায় হলো স্বাধীন পেশা বা বৃত্তি। একজন ব্যবসায়ী বৈধভাবে যেকোনো ব্যবসায়ে পুঁজি বিনিয়োগ করতে পারে, সেখান থেকে মুনাফা অর্জন করতে পারে, এজন্য কোনো জবাবদিহি কারও নিকট করতে হয় না । তাই স্বাধীন পেশা হিসেবে ব্যবসায়কে সবাই পছন্দ করে।

Content added By

বহুনির্বাচনী প্রশ্ন

Please, contribute by adding content to বহুনির্বাচনী প্রশ্ন.
Content

সৃজনশীল প্রশ্ন

Please, contribute by adding content to সৃজনশীল প্রশ্ন.
Content
Promotion