রহমান সাহেব তার প্লাস্টিক বোতল তৈরি কারখানা সম্প্রসারণ করতে চান। আর পাঁচ ধরনের মেশিন বসাতে পারলেই এই কারখানায় তিনি বোতলের পাশাপাশি ছোট ছোট বাক্স তৈরি করতে পারবেন। এই বাক্সগুলো খাবার সংরক্ষণের জন্য ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয় বলে এর চাহিদা অনেক বেশি। অর্থ সংস্থানের জন্য ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে চাইলে ব্যাংক ঋণের নিরাপত্তা ব্যবস্থা হিসেবে তার কারখানাটি ব্যাংকের কাছে বন্ধক রাখতে বলে। এতে রহমান সাহেব চিন্তিত হয়ে পড়েন। নানা প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে যদি ঋণের অর্থ পরিশোধ করতে না পারেন। সেক্ষেত্রে যদি তার কারখানা বিক্রি করে ব্যাংক ঋণের অর্থ আদায় করে। তিনি আরও ভাবেন ব্যাংক যদি কারখানাটি ফেরত না দেয়। উক্ত ঘটনা থেকে ব্যাংক ঋণের নিরাপত্তায় গৃহীত ব্যবস্থাপনা হিসেবে বন্ধক বা জামানত সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায় । এ উপ-অধ্যায়ে আমরা ব্যাংক জামানতের ধারণা, ঋণের ঝুঁকি ও এর প্রকারভেদ, ঋণ গ্রহণের জন্য আবশ্যিক দলিল, ব্যাংক জামানতের প্রকারভেদ ও গুরুত্ব এবং ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্ক নিয়ে জ্ঞান অর্জন করতে পারব।
ব্যাংক অর্থ ও ঋণের ব্যবসায়ী। আমানত গ্রহণ ও ঋঋণদান এর প্রথম ও প্রধান কাজ। ঋণদানের সময় ব্যাংককে অর্থ ফেরত পাবার কথা চিন্তা করতে হয়। প্রদত্ত ঋণের অর্থ ফেরত না পেলে ব্যাংককে বিপুল ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। তাই ব্যাংক ঋণ বা অগ্রিমের নিরাপত্তা বিধানের লক্ষ্যে প্রদত্ত ঋণ বা অগ্রিমের বিপরীতে কোনো মূল্যবান সম্পদ বন্ধক রাখার বা ঋণগ্রহীতার ব্যক্তিগত বা কোনো তৃতীয়পক্ষের ব্যক্তিগত জামিনের যে বন্দোবস্ত করা হয় তাকে ঋণের জামানত বলে। জামানত যেকোনো স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি হতে পারে। আবার কোনো স্বনামধন্য নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি ব্যক্তিগত জামানত হতে পারে। ঋণগ্রহীতা নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে ঋণের অর্থ ফেরত না দিতে পারলে বা না দিতে চাইলে জামানতি সম্পদ বিক্রি করে ঋণের অর্থ সুদ-আসলে আদায় করে। ঋণের জামানত হিসেবে কোনো ব্যক্তি জামিনদার থাকলে ঋণের অর্থ জামিনদার ব্যাংককে পরিশোধ করে। সুতরাং, ঋণের ফেরত যোগ্যতার নিশ্চয়তা বা নিরাপত্তা বিধান করাই জামানতের মূল উদ্দেশ্য।
জামানত অবশ্যই আইনসম্মত হতে হবে। অর্থাৎ, বন্ধককৃত সম্পদের মালিকানা হস্তান্তর বা বিক্রয়ে কোনোরূপ আইনগত বিধিনিষেধ থাকবে না। জামানতি সম্পদের ওপর ঋণগ্রহীতার মালিকানা স্বত্ব থাকতে হবে। যেসব সম্পদ সহজে বিক্রয়যোগ্য সেগুলো ব্যাংকের নিকট উত্তম বলে বিবেচিত হয়। জামানতের মূল্য ঋণকৃত অর্থের চেয়ে বেশি বা সমান হতে হবে। ব্যক্তিগত জামানতে যিনি জামিনদার হবেন তাকে আর্থিকভাবে সচ্ছল হতে হবে। যেসব জামানতের মূল্য বার বার ওঠা-নামা করে কিংবা যে সম্পদ সহজেই নগদে রূপান্তর করা যায় না তা ব্যাংক জামানত হিসেবে গ্রহণ করে না। সর্বোপরি জামানত হবে হস্তান্তরযোগ্য, দায়মুক্ত এবং দখলমুক্ত।
“উত্তম জামানত ব্যাংক ঋণের রক্ষাকবচ” – ব্যাখ্যা করো।ঋণের নিরাপত্তা বিধানের উদ্দেশ্যে ঋণের বিপরীত ব্যাংক যে স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি কিংবা ব্যক্তিগত গ্যারান্টি সংরক্ষণ করে তাকে ঋণের জামানত বলে। ব্যাংকসমূহ প্রদত্ত ঋণের টাকা সঠিক সময় ফেরত পাওয়ার নিশ্চয়তার জন্য ঋণগ্রহীতার কাছ থেকে জামানত নেয়। পরবর্তী সময়ে ঋণগ্রহীতা ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে ব্যাংক জামানত বিক্রি করে ঋণের টাকা আদায় করে। তাই জামানত যত উত্তম হবে ব্যাংক প্রদত্ত ঋণের টাকা আদায় করা তত সহজ হবে। |
ব্যাংক যে ঋণ দেয় সুদসহ তার কিস্তি যথাসময়ে ফেরত আসবে, সেটাই সে প্রত্যাশা করে। যদি তা যথাসময়ে ফেরত পাওয়া না যায়, তাহলে যে ঝুঁকির সৃষ্টি হয় তাকে ঋণ ঝুঁকি বলে। শুধু ঋণ ফেরত পাওয়ার ক্ষেত্রেই নয়, ব্যাংক বিভিন্ন কোম্পানির সিকিউরিটিজ বিক্রয়ের দায় গ্রহণ করলে সেখান থেকেও ঋণ ঝুঁকির সৃষ্টি হতে পারে। যেমন: ব্যাংক কোনো কোম্পানির ১ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রয়ের দায় গ্রহণ করল। এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কোম্পানির মোট টাকা ব্যাংককে প্রদান করতে হবে। এতেও ঝুঁকির সৃষ্টি হতে পারে। এখন যদি উক্ত শেয়ারের মূল্য বিভিন্ন কিস্তিতে আদায় করতে হয় তবে সেক্ষেত্রে অনেক শেয়ারহোল্ডার তাদের কিস্তির অর্থ যথাসময়ে পরিশোধ নাও করতে পারে। সেক্ষেত্রেও ঋণ ঝুঁকির সৃষ্টি হয়। এরূপ ঝুঁকি দু'ধরনের হতে পারে
১.প্রতিষ্ঠানের নির্দিষ্ট ঋণ ঝুঁকি (Firm's specific credit risk) :
একই ধরনের প্রতিষ্ঠানে ঋণ দেওয়ার ফলে বা একই ধরনের সিকিউরিটিজের বিপক্ষে ঋণ দেওয়ায় যে ঝুঁকির সৃষ্টি হয় তাকে প্রতিষ্ঠানের নির্দিষ্ট ঋণ ঝুঁকি বলে। যদি কোনো ব্যাংক দেশের গার্মেন্টস শিল্প খাতে অধিক ঋণ দেয় তবে কোনো কারণে গার্মেন্টস শিল্প সংকটে পড়লে স্বাভাবিকভাবেই ব্যাংকের ঝুঁকি অত্যধিক বৃদ্ধি পায়। একই ধরনের কোম্পানির সিকিউরিটিজের বিপক্ষে ঋণ দিলেও এ ধরনের অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে।
২. প্রকৃতিগত ঋণ ঝুঁকি (Systematic credit risk) : ধনী-গরিব যেকোনো দেশেই অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এক ধরনের থাকে না। এরূপ ভালো-মন্দ ব্যাংকের জন্য ঝুঁকির সৃষ্টি করে। দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় বা সামষ্টিক অর্থনীতিতে বিরূপ অবস্থা সৃষ্টির ফলে ব্যাংক ঋণের অর্থ যথাসময়ে ফেরত পেতে যথেষ্ট সমস্যা হয়। এ ধরনের অনিশ্চয়তা থেকে সৃষ্ট ঝুঁকিকে প্রকৃতিগত ঋণ ঝুঁকি বলে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১৯২৯ সাল থেকে সৃষ্ট অর্থনৈতিক মহামন্দার কারণে সেখানকার হাজার হাজার ব্যাংক বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, যা প্রকৃতিগত ঋণ ঝুঁকির উদাহরণ। বর্তমানে শ্রীলংকার যে অর্থনৈতিক মহামন্দা চলছে তাতে ব্যাংক ঋণের অর্থ যথাসময়ে ফেরত পেতে যথেষ্ট সমস্যা হচ্ছে। এটিই মূলত প্রকৃতিগত ঋণ ঝুঁকি ।
বাণিজ্যিক ব্যাংক তার আমানতের একটি অংশ তারল্য হিসেবে রেখে বাকি টাকা বিনিয়োগকারীদের/ ব্যবসায়ীদের ঋণ হিসেবে প্রদান করে। বিনিময়ে একটি নির্দিষ্ট হারে সুদ আদায় করে। ব্যাংকের এই ঋণদান কার্যক্রম সফল করার জন্য ঋণগ্রহীতার নিকট থেকে কিছু ডকুমেন্টস সংগ্রহ করে তা যাচাই-বাছাই করে এবং ভবিষ্যতে যেকোনো প্রয়োজনের জন্য নিজেদের নিকট তা সংরক্ষণ করে। প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস ব্যাংকভেদে ভিন্ন ভিন্ন হলেও কিছু ডকুমেন্টস প্রায় সব ব্যাংকই সংগ্রহ করে। নিচে সেগুলোর বর্ণনা দেওয়া হলো-
১. জাতীয় পরিচয়পত্র (National identification card) :
প্রত্যেক ঋণগ্রহীতাকে আবেদনপত্রের সাথে তার জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান বাধ্যতামূলক। বাংলাদেশের ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে সকল নাগরিকের জাতীয় পরিচয়পত্র রয়েছে। এটিতে নাগরিকের বিস্তারিত তথ্য সন্নিবেশিত থাকে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো প্রথমেই নিশ্চিত হতে চায় ঋণগ্রহীতা এ দেশের নাগরিক কি না। অতঃপর স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা নিশ্চিত হয়ে ঋণ অনুমোদন প্রক্রিয়া শুরু করে।
২. ঋণগ্রহীতার/আবেদনকারীর ছবি (Photo of the applicant) :
ঋণের জন্য আবেদনকারীর পাসপোর্ট আকারের ছবি প্রদানও বাধ্যতামূলক। অনেক সময় জালিয়াতির আশ্রয় নেওয়ার জন্য অনেক আবেদনকারী নিজ আবেদনের সাথে অন্যের ছবি সংযুক্ত করে দেয়। তাই আবেদনকারীকে নিজ পাসপোর্ট আকারের ছবি প্রদান করতে হয়।
৩. ট্রেড লাইসেন্স/বেতন পত্র (Trade license / Salary certificate) :
একটি প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায় শুরুর জন্য যেমন ট্রেড লাইসেন্স বাধ্যতামূলক, তেমনি ঋণ আবেদনকারীর ঋণ পাওয়ার জন্য ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্স প্রদান বাধ্যতামূলক। আর ঋণ আবেদনকারী যদি ব্যক্তি হয়ে থাকে তবে তার Salary certificate / Salary statement প্রদান করতে হয়। অর্থাৎ ঋণ পরিশোধ করতে পারবে কিনা, সেটি নিশ্চিত হওয়ার জন্য এটি নেওয়া হয়। অনেক বাণিজ্যিক ব্যাংক এর পাশাপাশি ৬ মাস বা ১ বছরের Bank Statementও গ্রহণ করে থাকে, যেখানে বেতনের টাকা জমা হয়।
৪. টিআইএন (TIN) সার্টিফিকেট (Tax Identification Number certificate):
ঋণের আবেদনকারীদের TIN সার্টিফিকেট প্রদান করতে হয়। প্রতিষ্ঠান প্রতি বছর যে কর প্রদান করে সেটির সনদ প্রদান করতে হয়। তবে নতুন উদ্যোক্তাদের ব্যবসায় শুরু করতে ঋণ নেওয়ার জন্য TIN সার্টিফিকেট প্রদান করতে হয় না।
৫. মালিকানাসংক্রান্ত দলিল/কাগজপত্র (Ownership papers ) :
একমালিকানা ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে যেমন ট্রেড লাইসেন্স নেওয়া হয়, তদ্রুপ অংশীদারি ব্যবসায়, পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি ও প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির জন্যও তাদের স্ব স্ব গোত্রীয় রেজিস্ট্রেশন সনদ নেওয়া হয়। যেমন: রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানি হতে রেজিস্ট্রেশনের সনদ। অনেক বাণিজ্যিক ব্যাংক ব্যবসায়ের অংশীদারদের মালিকানার অংশ সম্বলিত চুক্তিপত্রের কপিও সংগ্রহ করে থাকে।
৬. গ্যারান্টর/জিম্মাদারের প্রত্যয়নপত্র (Guarantor certificate) : ঋঋণের আবেদনকারী ঋণ প্রদানে ব্যর্থ হলে ঋণের দায়িত্ব নিবে এমন একজন গ্যারান্টরের তথ্যসম্বলিত প্রত্যয়নপত্র বা সম্মতিপত্র নেওয়া হয়। প্রত্যয়নপত্রে গ্যারান্টর কর্তৃক স্বাক্ষরিত নিশ্চয়তার বিষয়টি উল্লেখ থাকে।
ওপরে বর্ণিত ডকুমেন্টগুলো প্রায় সব বাণিজ্যিক ব্যাংকে ঋণের জন্য আবেদন করলে জমা দিতে হয়। এছাড়া অনেক বাণিজ্যিক ব্যাংক তাদের নিজস্ব নীতিমালার আওতায় আরো কিছু ডকুমেন্ট সংগ্রহ করে থাকে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো তাদের ঋণ ফেরতের যেমন নিশ্চয়তা চায়, তেমনি গ্রাহকের স্বার্থের বিষয়টি বিবেচনায় রেখে সহযোগিতার হাতটি সর্বদা এগিয়ে দেয়।
রফিক সাহেব তার গাজীপুরের ১০ কাঠা জমি ব্যাংকে বন্ধক রেখে ঋণের টাকায় কারখানা নির্মাণ করছেন। ব্যাংক থেকে আরেকটি দীর্ঘমেয়াদি ঋণ নিয়ে তার মেশিনপত্র ক্রয় ও স্থাপন ব্যয় নির্বাহ করছেন। এই ঋণে ব্যাংকের কাছে তিনি ব্যক্তিগত জামানত হিসেবে তার দীর্ঘদিনের বন্ধু জনাব শওকতকে জামিনদার করেছেন। 46 1 2 উৎপাদিত পণ্য ব্যাংকে বন্ধক রেখে চলতি মূলধন সরবরাহ নিশ্চিত করছেন। এই ঘটনায় দেখা যায় যে, ব্যাংক বিভিন্ন রকমের জামানত সংরক্ষণ করে। ব্যাংক ঋণ প্রদানকালে ঋণ ফেরতের নিশ্চয়তা চায়। এক্ষেত্রে ঋণগ্রহীতা নিশ্চয়তাস্বরূপ যেসব স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি ব্যাংকের নিকট গচ্ছিত রাখে তাকে জামানত বলে। জামানত ঋণের সমমানের বা তার বেশি মূল্যমানের হয়। জামানত বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। এই ধরন নির্ভর করে ঋণের প্রকৃতি, ঋণগ্রহীতার সামর্থ্য ও ব্যাংকের শর্তাবলির ওপর। নিচে জামানতের প্রকারভেদ আলোচনা করা হলো—
১.ব্যক্তিগত জামানত (Personal security) :
যখন ব্যাংক ঋণগ্রহীতা ছাড়া অন্য কোনো তৃতীয় ব্যক্তির নিশ্চয়তাপত্রের বিপরীতে ঋণ প্রদান করে তখন তাকে ব্যক্তিগত জামানত বলে। যে ব্যক্তি এ নিশ্চয়তাপত্র প্রদান করে তাকে জামিনদার বলে। ব্যক্তিগত জামানতের ক্ষেত্রে জামিনদারের অর্থনৈতিক অবস্থা, চরিত্র, সুনাম ইত্যাদি বিচার-বিশ্লেষণ করতে হয়। জামিন প্রদানকারী তার নিশ্চয়তাপত্রে উল্লেখ করে যে, ঋণগ্রহীতা ঋণের অর্থ ফেরত দিতে না পারলে জামিন প্রদানকারী ঋণের অর্থ সুদসহ পরিশোধ করবে। ব্যক্তিগত জামানতে তিনটি পক্ষ থাকে। যথা— ক. ঋণদাতা (ব্যাংক) খ. ঋণগ্রহীতা গ. জামিনদার।
২.অব্যক্তিগত জামানত (Impersonal security) : ব্যাংক ঋণদানকালে যখন ঋণের জামানত হিসেবে ঋণগ্রহীতার কাছ থেকে স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি বন্ধক রেখে ঋণ দেয় তখন তাকে অব্যক্তিগত জামানত বলে। এ ধরনের জামানত গ্রহণের ক্ষেত্রে ব্যাংক জামানতি সম্পত্তির মালিকানা, হস্তান্তরযোগ্যতা, দায়মুক্ততা, মূল্য, গুণগত মান, তারল্য ইত্যাদি বিষয় বিবেচনা করে। এ ধরনের জামানত হতে পারে ভূমি, দালানকোঠা, যন্ত্রপাতি, পণ্যদ্রব্য, বিক্রয়যোগ্য শেয়ার, সিকিউরিটি ইত্যাদি। অব্যক্তিগত জামানত আবার চার ধরনের। যেমন-
• পূর্বস্বত্ব (Lien) : যে পদ্ধতিতে ব্যাংক ঋণ পরিশোধের পূর্ব পর্যন্ত ঋণগ্রহীতার সম্পদ আটক রাখার অধিকার রাখে তাকে পূর্বস্বত্ব বলে। পূর্বস্বত্বের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ঋণগ্রহীতা জামানতি সম্পত্তির প্রকৃত মালিক হলেও যতক্ষণ পর্যন্ত ঋণ পরিশোধ না হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত উক্ত সম্পদ বিক্রি বা হস্তান্তর করতে পারবে না। অপরদিকে, LOAN be applying for surance is selected, your III. TERMS OF LOAN Term (years) 30 No. Months 360 LIENS If you own payment is les ed to co ঋণগ্রহীতা ঋণ পরিশোধ করতে পারছে না ও ঋণ অনাদায়ী হয়েছে— এটি প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত ব্যাংকও উক্ত সম্পত্তি বিক্রি করতে পারে না। পূর্বস্বত্ব দুই ধরনের হয়— সাধারণ পূর্বস্বত্ব এবং বিশেষ পূর্বস্বত্ব।
• পণ্যদ্রব্য বন্ধক (Commodity mortgage ) : যে পদ্ধতিতে ঋণগ্রহীতা ঋণ চুক্তির শর্ত অনুযায়ী ব্যাংকের কাছে পণ্যদ্রব্যের দখলিস্বত্ব ছেড়ে দেয়, তখন তাকে পণ্যদ্রব্য বন্ধক বলে । এক্ষেত্রে পণ্যের মালিকানা দলিল বা গুদামের চাবি ঋণ পরিশোধের পূর্ব পর্যন্ত ব্যাংকের কাছে জমা থাকে। ঋণগ্রহীতা চাইলে পণ্য বিক্রি করতে পারে না।
• স্থায়ী সম্পদ বন্ধক (Fixed asset mortgage ) : যখন ঋণগ্রহীতা জামানতি স্থাবর সম্পদের আংশিক বা সম্পূর্ণ স্বত্ব বা অধিকার ব্যাংকের কাছে হস্তান্তর করে তখন তাকে স্থায়ী সম্পদ বন্ধক বলে। ঋণগ্রহীতা ঋণের অর্থ পরিশোধ করতে না পারলে ব্যাংক জামানত স্থাবর সম্পদের স্বত্বাধিকার লাভ করে এবং সম্পদ বিক্রি করে ঋণের অর্থ আদায় করতে পারে। এক্ষেত্রে ঋণগ্রহীতা ব্যাংকের নিকট সম্পত্তির দলিলপত্র হস্তান্তর করে মাত্র। কিন্তু সম্পত্তির ভোগদখল ঋণগ্রহীতার কাছেই থাকে। ঋণগ্রহীতা ঋণের অর্থ পরিশোধ করতে না পারলে বন্ধকী সম্পত্তি বিক্রয়ের জন্য ব্যাংক আদালতে আবেদন করবে। আদালত ন্যায়সঙ্গত মনে করলেই সম্পত্তি বিক্রির অনুমতি প্রদান করে ।
• দখলহীন বন্ধক বা হাইপোথিকেশন ( Unoccupied mortgage ) : যখন কোনো অস্থাবর সম্পত্তি জামানত হিসেবে ব্যাংকের কাছে রাখা হয়, কিন্তু পণ্যের দখল ও মালিকানা ঋণগ্রহীতার নিকটই থাকে তখন তাকে দখলহীন বন্ধক বলে। ঋণগ্রহীতা ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে ব্যাংক ঐ সম্পত্তি ক্রোক করে নিজের দখলে আনতে পারে। সাধারণত ব্যবসায়িক পণ্যের ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে দখলহীন বন্ধক ব্যবহৃত হয়। একে হাইপোথিকেশনও বলা হয়।
৩.অতিরিক্ত জামানত (Additional collateral) :
যখন ব্যাংক ঋণের অধিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য মূল জামানতের পাশাপাশি আরও কিছু জামানত গ্রহণ করে তখন তাকে অতিরিক্ত জামানত বলে। এ জামানত ব্যক্তিগত ও অব্যক্তিগত উভয়ই হতে পারে। যেমন— ব্যাংক ১ কোটি টাকা ঋণের বিপরীতে প্রথমে ৫ বিঘা জমি জামানত নেয়, পরে ২.৫ কাঠা জমির ওপর নির্মিত ১ তলা বাড়িটিও বন্ধক রাখে। এখানে ১ তলা বাড়িটি অতিরিক্ত জামানত। ব্যাংক ঋণের অর্থের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জামানত নেয়। এ জামানত ব্যাংক ও ঋণগ্রহীতার বিভিন্নমুখী চাহিদার কারণে বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে।
মনোয়ার সাহেব দীর্ঘ ২০ বছর পদ্মা ব্যাংকে কর্মরত আছেন। জুনিয়র অফিসার হিসেবে যোগ দিয়ে আজ তিনি নিজ যোগ্যতায় শাখা ব্যবস্থাপক হয়েছেন। সাতক্ষীরা তার নিজ এলাকা। সেখানে পাঁচ বছর আগে তিনি বদলি হয়ে এসেছেন। মনোয়ার সাহেবের বাবার পুরানো বন্ধু বাবর সাহেব যখন তার চিংড়িঘের উন্নয়ন ও চিংড়ি প্রক্রিয়াকরণ প্রকল্পের জন্য ব্যাংক ঋণের আবেদন করেন, তখন মনোয়ার সাহেব গভীর বিশ্বাস ও বাবর সাহেবের সুনাম বিবেচনা করে ৫০ লক্ষ টাকা ঋণ মঞ্জুর করেন জামানত ছাড়াই। বর্তমানে সুদ-আসলে এই অর্থ দাঁড়িয়েছে ৮৫ লক্ষ টাকায়, যা বাবর সাহেব পরিশোধ করতে পারছেন না। জামানত ছাড়া এ ধরনের ঋণ মঞ্জুর করায় ব্যাংক মনোয়ার সাহেবের বিরুদ্ধে মামলা করেছে এবং তাকে দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করে রেখেছে। ওপরের ঘটনা থেকে জামানতের গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায়। নিচে জামানতের গুরুত্ব আলোচনা করা হলো-
▪️ঋণ ফেরতের নিশ্চয়তা (Assurance of loan repayment) : ব্যাংকের অন্যতম কাজ হলো ঋণদানের মাধ্যমে তহবিলের কাম্য ব্যবহার (Optimum use of fund) নিশ্চিত করা। কিন্তু কোনো অবস্থাতেই প্রদত্ত ঋণের অর্থ ফেরতের নিশ্চয়তা ছাড়া ঋণ দেওয়া যুক্তিসংগত নয়। কারণ প্রদত্ত ঋণের অর্থ জনগণের আমানত থেকে সৃষ্ট। এই অর্থ যেকোনো সময় আমানতকারী উত্তোলন করে নিতে পারে। তাই ব্যাংক ঋণের অর্থ ফেরতের নিশ্চয়তা হিসেবে ঋণগ্রহীতার কাছ থেকে উপযুক্ত জামানত বন্ধক রাখে। ঋণ ফেরতের নিশ্চয়তার জন্য ব্যাংকের কাছে এই জামানত খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
▪️ব্যক্তিক ও অব্যক্তিক জামানত (Personal & Impersonal guarantee) : নতুন ব্যবসায় ও ব্যবসায়ীকে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাংক অনিশ্চয়তার দ্বিধাদ্বন্দ্বে থাকে ঋণের অর্থ ফেরত পাবে কি না। এই অনিশ্চয়তা দূর করে উপযুক্ত জামানত বন্ধক রেখে ব্যাংক আমানতি অর্থ দিয়ে ঋণের ব্যবসায় করে। তাই প্রদত্ত ঋণের অর্থ ফেরত পাওয়ার নিশ্চয়তা বিধান করা ব্যাংকের জন্য অপরিহার্য। ঋণ প্রদানের সময় গ্রহীতার কাছ থেকে ব্যক্তিগত ও অব্যক্তিগত জামানত গ্রহণ করে প্রদত্ত ঋণের ফেরত পাওয়ার নিশ্চয়তা বিধান করে। আর্থিক সামর্থ্যবান ও ব্যাংকের পরিচিত স্বনামধন্য ব্যক্তির জামানতেও ব্যাংক ঋণ দেয়। ঋণগ্রহীতা ঋণ ফেরতদানে অপারগতা প্রকাশ করলে জামিনদার উক্ত অর্থ ফেরত দেয়। যদি জামিনদার অর্থ দিতে আপত্তি করে তবে আইনের আশ্রয় নিয়ে ব্যাংক প্রদত্ত ঋণের অর্থ আদায় করতে পারে।
▪️ জামানতি সম্পদের মূল্য (The value of the security assets) : জামানতি সম্পদের মূল্য সাধারণত প্রদত্ত ঋণের চাইতে বেশি থাকে বলে ঋণগ্রহীতা সচেতন থাকে যত দ্রুত সম্ভব ঋণের অর্থ ফেরত দিতে। কারণ ব্যাংক জামানত সম্পদ বিক্রয় করে দিলে তার মূল্যবান সম্পদ সে তার নিজ মালিকানায় রাখতে পারবে না। ব্যাংক যখন জামানত রাখে তখন জামানতের মূল্য, বিক্রয়যোগ্যতা, তারল্য ক্ষমতা ইত্যাদি বিচার-বিশ্লেষণ করেই ঋণ মঞ্জুর করে থাকে।
▪️প্রতারণা হতে রক্ষা (Protection from fraud): জামানত রাখার আরেকটি বড় সুবিধা হলো অসাধু ঋণগ্রহীতার প্রতারণা থেকে আত্মরক্ষা করা। এভাবে আমানতকারীদের আমানতের নিরাপত্তা বিধান নিশ্চিত করা যায়।
▪️জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি (Increasing the quality of life) : জামানত রাখলে ব্যাংক অনাদায়ী ঋণের ফলে যে লোকসান হয় তা থেকে রক্ষা পায় এবং মুনাফা অর্জন অব্যাহত রাখতে পারে। জামানত ব্যবস্থা থাকায় ব্যাংক ঋণদানে উৎসাহিত হয়। কারণ জামানত থাকার ফলে ব্যাংক কর্তৃক প্রদত্ত ঋণ সহজেই ফেরত পাওয়া যায়। এছাড়া যথাসময়ে ঋণের অর্থ ফেরত পেয়ে ব্যাংক সেই ঋণ আবার অন্যকে দেয়, এভাবেই ঋণের গতিশীলতা বৃদ্ধি পায়। ফলে ব্যাংকের ঋণের ক্ষেত্র প্রসারিত হয় এবং বিভিন্ন বিনিয়োগ সহজ হয়। ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটে। ব্যবসায়ীরা ব্যাপক হারে ঋণ নেয়, বিনিয়োগ করে এবং কর্মসংস্থান ঘটে। ফলে মানুষের মাথাপিছু আয় বাড়ে ও জীবনযাত্রার মানও বৃদ্ধি পায়।
▪️রপ্তানি বৃদ্ধি এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন (Increasing exports and earning foreign currency) : ব্যাংক ঋণের অর্থ ফেরতের নিশ্চয়তা হিসেবে উপযুক্ত স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি জামানত হিসেবে বন্ধক রাখে। এসব সম্পদ জামানত রাখার ফলে ব্যাংক যথাসময়ে প্রদত্ত ঋণের অর্থ আদায় করতে পারে এবং পুনরায় কোনো লাভজনক খাতে বিনিয়োগ করতে পারে। এতে করে দেশের মোট উৎপাদনের পরিমাণ বেড়ে যায়। এর ফলে রপ্তানি বাণিজ্য বৃদ্ধি পায়। দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও বাড়ে।
▪️সচেতনতা সৃষ্টি (Creating awareness) : জামানত ঋণগ্রহীতাকে ঋণের উত্তম ব্যবহার সম্পর্কে সদা সতর্ক থাকতে সাহায্য করে। ঋণের শর্তাদি ও পরিশোধের দায়-দায়িত্ব সম্পর্কে ঋণগ্রহীতাকে সচেতন রাখে । এতে করে ব্যাংক ও ঋণগ্রহীতার সম্পর্ক ভালো থাকে।
অতএব, জামানত ব্যবস্থা ব্যাংকের প্রদত্ত ঋণের অর্থ ফেরত পাওয়ার নিশ্চয়তাকে অনেক গুণ বাড়িয়ে দেয়। এতে করে ব্যাংক আমানতকারীদের অর্থ ঠিকমতো ফেরত দেওয়ার পাশাপাশি নিজস্ব ঋণদান কর্মসূচি সচল রাখতে পারে। তাই ঋণের ক্ষেত্রে জামানতের গুরুত্ব অপরিসীম।
ব্যাংক ব্যবসায়ে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গকে ব্যাংকার বলে। আর ব্যাংকে হিসাব পরিচালনাকারীকে সাধারণ অর্থে গ্রাহক বলে। হিসাব পরিচালনাকারী আমানতকারী, ঋণগ্রহীতা, সেবাগ্রহীতা ইত্যাদি নামেও পরিচিত। ব্যাংকের পক্ষে যাবতীয় সেবা প্রদানকারী হলো ব্যাংকার। আমানতকারী তার নিজস্ব হিসাবে অর্থ জমা দেয়, উত্তোলন করে, প্রয়োজনে ঋণ গ্রহণ করে, এছাড়াও নানাবিধ সেবা ব্যাংকের মাধ্যমে গ্রহণ করে থাকে। আমানতকারী ব্যাংকে অর্থ জমা করে নিরাপত্তার পাশাপাশি সুদ পাওয়ার নিশ্চয়তা পায়। অন্যদিকে, ব্যাংক আমানতকারীর আমানতি অর্থের ওপর কম সুদ প্রদান করে অপেক্ষাকৃত বেশি সুদে অন্য কোনো ঋণগ্রহীতাকে ঋণ প্রদান করে। ব্যাংকের আমানতকারীদের এই কম সুদ প্রদান এবং ঋণ প্রদানে বেশি সুদ পাওয়ার পার্থক্যটি হলো ব্যাংকের আয় । এই আয় হতে ব্যাংক ঋণের ব্যবসায়ের তার ব্যয়ভার বহন করে এবং অবশিষ্ট অর্থ মুনাফা হিসেবে রেখে দেয়। সুতরাং, ব্যাংকের আমানতকারী না থাকলে যেমন ব্যাংক ঋণের ব্যবসায় থেকে আয় এবং মুনাফা লাভ করতে পারত না, অন্যদিকে ব্যাংকারদের ছাড়া আমানতকারী এবং ঋণগ্রহীতা ব্যাংকের নানাবিধ সুবিধা গ্রহণ করতে পারত না। তাই ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্ক ব্যবসায়িক এবং খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ব্যাংকার-গ্রাহকের সম্পর্ককে আমরা বলতে পারি -
▪️পাওনাদার-দেনাদার সম্পর্ক (Creditor-Debtor relationship) : গ্রাহক ব্যাংকের কাছে অর্থ জমা দিলে সেক্ষেত্রে ব্যাংকার দেনাদার এবং গ্রাহক পাওনাদার। আবার ব্যাংকার কোনো গ্রাহককে ঋণ দিলে তখন ব্যাংকার পাওনাদার এবং ঋণগ্রহীতা দেনাদারে পরিণত হন। এভাবে ব্যাংকার ও গ্রাহকের মধ্যে দেনাদার ও পাওনাদার সম্পর্ক সৃষ্টি হয়।
▪️ চুক্তিবদ্ধ সম্পর্ক (Contractual relationship) : গ্রাহক ব্যাংকে হিসাব খোলার মধ্য দিয়ে ব্যাংকের সাথে তার চুক্তিবদ্ধ সম্পর্ক স্থাপন করে। চুক্তিগত কারণে ব্যাংক আমানতকারীর অর্থ চাহিবামাত্র ফেরত দেয়ার অঙ্গীকারে আবদ্ধ।
▪️অছি (Trustee) : অনেক সময় ব্যাংকার মক্কেলের মূল্যবান স্বর্ণালঙ্কার, দলিলপত্রাদি সংরক্ষণ করে অছির ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়।
▪️ তত্ত্বাবধায়ক (Caretaker) : গ্রাহকের সঞ্চিত অর্থের নিরাপত্তা দিয়ে ব্যাংকার গ্রাহকের তত্ত্বাবধায়কের ভূমিকা পালন করে ।
▪️বন্ধক দাতা ও গ্রহীতা (Mortgage lender & recipient) : ব্যাংক গ্রাহককে বিভিন্ন প্রকার জামানতের বিপরীতে ঋণ মঞ্জুর করে। এর ফলে ব্যাংক ও গ্রাহকের মধ্যে বন্ধকদাতা ও গ্রহীতার সম্পর্ক সৃষ্টি হয়।
▪️ প্রতিনিধি (Representative) : ব্যাংক মক্কেলের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের লেনদেন নিষ্পত্তিতে প্রতিনিধিত্ব করে।
▪️পরিচয় দানকারী (Introducer) : মক্কেলের বাজার সুনাম, আর্থিক সচ্ছলতা ও ঋণ পাওয়ার যোগ্যতা সম্পর্কে ব্যাংক পরিচয় দানকারী হিসেবে কাজ করে।
▪️তথ্য সরবরাহক (Provide information) : ব্যাংক তার ব্যবসায়ী গ্রাহকদেরকে ব্যবসায়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন তথ্য সরবরাহ করে।
▪️ বিল স্বীকৃতিকারী (Bill acceptor) : মক্কেলের নির্দেশমতো ব্যাংক মক্কেলের বিলে স্বীকৃতি প্রদান করে ।
▪️ সম্পদের সংরক্ষক (Conservator of assets) : মক্কেল কর্তৃক গুদামঘরে সংরক্ষিত পণ্যের নিরাপত্তা ও সুষ্ঠু সংরক্ষণে ব্যাংক তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্ব পালন করে।
গ্রাহককে জানা (Knowing the customer) : ব্যাংকিং ব্যবসায়ে গ্রাহককে জানা বা তার সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গ্রাহকের পেশা, আয়ের উৎস, সুনাম-খ্যাতি ইত্যাদি বিষয়ে খোঁজ-খবর রাখা ব্যাংকারের উচিত। গ্রাহক মানিলন্ডারিং করছে কি না, অবৈধ লেনদেন করছে কি না, ঋণের অর্থ উপযুক্ত ক্ষেত্রে ব্যবহার করছে কি না ইত্যাদি তথ্য সংগ্রহ করা বা তত্ত্বাবধান করা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। এতে ব্যাংকের অর্থের জালিয়াতি হ্রাস পায়। ভুয়া নামে অন্য কেউ হিসাব পরিচালনা করছে কি না, ঋণের টাকা নিয়ে অন্য দেশে পাড়ি দিচ্ছে কি না ইত্যাদি তথ্য সংগ্রহ করে সতর্ক থাকতে হয়।
গারনিশি আদেশ (Garnishee order): Garnishee শব্দটি ল্যাটিন ‘Garnire' শব্দটি হতে এসেছে। গ্রাহকের কোনো হিসাব ক্লোক বা বন্ধ করার বা লেনদেন স্থগিত করার জন্য আদালত কর্তৃক ব্যাংকের ওপর কোনো আদেশ প্রদত্ত হলে তাকে গারনিশি আদেশ বলে। গারনিশি আদেশ দু'ধরনের হয়। যথা- (১) সীমাবদ্ধ আদেশ অর্থাৎ জমাকৃত নির্দিষ্ট পরিমাণ অঙ্কের ওপর লেনদেন বন্ধের নির্দেশ। এতে হিসাব চালু থাকে এবং অতিরিক্ত অর্থের ওপর লেনদেন করা যায়। (২) সীমাহীন আদেশ অর্থাৎ ঐ হিসাবে কোনো লেনদেন করা যায় না। প্রয়োজনে নতুন হিসাব খুলে আমানতকারী লেনদেন করতে পারে।