রসায়নে মূলত দুই ধরনের বিশ্লেষণ পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করা হয়, যা পুণগত বিশ্লেষণ এবং পরিমাণগত বিশ্লেষণ। কোনো পদার্থকে এবং তার বিভিন্ন ধর্মকে শনান্ত করার পদ্ধতির নাম গুণগত বিশ্লেষণ এবং কোনো পদার্থের পরিমাণ নির্ণয়ের পদ্ধতির নাম পরিমাণগত বিশ্লেষণ। পরিমাণগত বিশ্লেষণ পদ্ধতিতে বিভিন্ন হিসাব-নিকাশ করা হয়। এসব হিসাব-নিকাশকে একত্রে রাসায়নিক গণনা বলা হয়। রাসায়নিক গণনায় কোনো পদার্থ এর পরিমাণ অনেক সময়েই মোল এককে প্রকাশ করা হয়। এই অধ্যায়ে তোমরা মোল কী, মোল দিয়ে হিসাব-নিকাশ কীভাবে করা হয়, মোলের হিসাব-নিকাশ থেকে কীভাবে ঘনমাত্রার হিসাব করা হয়। এই বিষয়গুলো জানতে পারবে।
এ অধ্যায় পাঠ শেষে আমরা
• মোলের ধারণা ব্যবহার করে সরল গাণিতিক হিসাব করতে পারব ।
• নির্দিষ্ট ঘনমাত্রার প্রবণ প্রস্তুত করতে পারব।
• প্রদত্ত তথ্য ও উপাত্ত ব্যবহার করে যৌগে উপস্থিত মৌলের শতকরা সংযুক্তি নির্ণয় করতে পারব।
• শতকরা সংযুক্তি ব্যবহার করে স্থূল সংকেত ও আণবিক সংকেত নির্ণয় করতে পারব।
• মৌল ও যৌগমূলকের প্রতীক সংকেত ও যোজনী ব্যবহার করে রাসায়নিক সমীকরণ লিখতে এবং সমতা বিধান করতে পারব।
• রাসায়নিক সমীকরণের মাত্রিক তাৎপর্য থেকে বিক্রিয়ক ও উৎপাদের ভরভিত্তিক গাণিতিক
° সমস্যা সমাধান করতে পারব।
• তুঁতের কেলাস পানির শতকরা পরিমাণ নির্ণয় করতে পারব।
• নিত্তি ব্যবহার করে রাসায়নিক দ্রব্য পরিমাপ করতে সক্ষম হব।
মোল হলো রাসায়নিক পদার্থ পরিমাপের একক। মনে করো,
12টি O2 = 1 ডজন 02
100টি O2 = 1 শতক O2
1000টি O2 = 1 হাজার O2
তেমনি 6.02 × 1023 টি O2 = 1 মোল O2
1 মোল পরমাণুতে 6.023 × 1023 টি পরমাণু থাকে ।
1 মোল অণুতে 6.023 × 1023 টি অণু থাকে । 1 মোল আয়নে 6.023 × 1023 টি আয়ন থাকে।
অতএব, 6.023 × 1023 সংখ্যাটি পরমাণু, অণু, আয়ন ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রেই ব্যবহার করা হয়। এই
সংখ্যাটিকে অ্যাভোগেড্রোর সংখ্যা বলা হয় । কোনো পদার্থ এর যে পরিমাণের মধ্যে 6.023 × 1023 টি পরমাণু, অণু বা আয়ন থাকে সেই পরিমাণকে ঐ পদার্থের মোল বলা হয়। যেমন: 12 গ্রাম C এর মধ্যে 6.023 × 1023 টি C পরমাণু থাকে।
রাসায়নিক পদার্থের (পরমাণুর ক্ষেত্রে) পারমাণবিক ভর অথবা (অণুর ক্ষেত্রে) আণবিক ভরকে গ্রাম এককে প্রকাশ করলে যে পরিমাণ পাওয়া যায় তাকে ঐ পদার্থের এক মোল বলা হয়।
অতএব 12 গ্রাম C = 1 মোল C পরমাণু ।
আবার, 18 গ্রাম H2O এর মধ্যে 6.023 x 10টি H2O অণু থাকে
অতএব 18 গ্রাম H2O = 1 মোল H2O
অণুর আণবিক ভর বের করার পদ্ধতি
কোনো অণুতে বিদ্যমান সকল পরমাণুর পারমাণবিক ভর যোগ করলে ঐ অণুর আণবিক ভর পাওয়া যায়।
যেমন: Cl2 অণুতে Cl পরমাণু আছে 2টি।
অতএব, Cl 2 এর আণবিক ভর = 2 × Cl এর পারমাণবিক ভর = 2 × 35.5 = 71 এক মোল Cl2 = 71 g Cl2
NaCl অণুতে Na পরমাণু আছে 1টি এবং Cl পরমাণু আছে 1টি ।
অতএব, NaCl এর আণবিক ভর - Na এর পারমাণবিক ভর + Cl এর পারমাণবিক ভর
- 23+ 35.5 = 58.5
এক মোল NaCl - 58.5 g NaCl
CuSO4.5H2O তে Cu আছে 1টি, S আছে এটি 0 আছে এটি এবং H আছে 10টি
অতএব CuSO4.5H2O এর আণবিক ভর = 1 x Cu এর পারমাণবিক ভর + 1 × S এর পারমাণবিক ভর + 9x 0 এর পারমাণবিক ভর + 10x H এর পারমাণবিক ভর
= 1 x 63.5+ 1 x 32+ 9 x 16 + 10 x 1 - 249.5
এক মোল CuSO4.5H2O = 249.5 g CuSO4.5H2O
1 মোল গ্যাসীয় পদার্থ যে আয়তন দখল করে তাকে ঐ গ্যাসের মোলার আয়তন বলে। ০° সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা এবং 1 বায়ুমণ্ডল চাপকে একত্রে প্রমাণ তাপমাত্রা ও চাপ বা আদর্শ তাপমাত্রা ও চাপ বা সংক্ষেপে আদর্শ বা প্রমাণ অবস্থা বলা হয়। প্রমাণ অবস্থায় 1 মোল গ্যাসের আয়তন হয় 22.4 লিটার।
যদি 1 - মোল সংখ্যা,
W- গ্রাম এককে ভর,
v - লিটার এককে আয়তন,
N- অণুর সংখ্যা এবং
M - আণবিক ভর হয় তাহলে আমরা লিখতে পারি:
n=W/M
কিংবা
n= v/22.4
কিংবা
n= N/ 6.023×1023
মোল এবং আণবিক সংকেতের মধ্যে একটি সম্পর্ক রয়েছে। কোনো পদার্থের আণবিক সংকেত থেকে প্রাপ্ত আণবিক ভরকে গ্রামে প্রকাশিত করলে যে পরিমাণ পাওয়া যায় সেই পরিমাণকে ঐ পদার্থের 1 মোল বলা হয়। যেমন: পানির আণবিক সংকেত H2O। পানির আণবিক ভর 18। অতএব, 18 গ্রামকে 1 গ্রাম আণবিক ভর পানি বা 1 মোল পানি বলা হয়। এখানে দেখা যাচ্ছে মোলকে গ্রাম আণবিক ভরও বলা হয়।
আণবিক সংকেত থেকে আরও অনেক তথ্য পাওয়া যায়।
H2O আণবিক সংকেত থেকে যে যে তথ্য পাওয়া যায় তা নিচে উল্লেখ করা হলো।
1. H2O এর নাম পানি
2. 1 অণু পানি এর সংকেত H2O
3. 1 মোল পানি এর সংকেত H2O
4. 1 অণু H2O এ 2টি হাইড্রোজেন পরমাণু এবং 1টি অক্সিজেন পরমাণু আছে।
5. 1 মোল H2O অণুতে 2 মোল H পরমাণু আছে ও 1 মোল O পরমাণু আছে।
ধরা যাক কোনো দ্রাবকে একটি দ্রব দ্রবীভূত আছে। একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রার 1 লিটার দ্রবণের মধ্যে যদি এক মোল দ্রব দ্রবীভূত থাকে তবে ঐ দ্রবণকে মোলার দ্রবণ বলে বা এক মোলার প্রবণ বলা হয়। 1 লিটার প্রবলে যদি 2 মোল দ্রব দ্রবীভূত থাকে তবে ঐ প্রবণকে 2 মোলার প্রবণ বলা হয়।
শ্রাবক, দ্রব ও প্রবণ বলতে কী বোঝায় সেটি বোঝানোর জন্য একটি উদাহরণ দেওয়া যাক। একটি গ্লাসে প্রায় অর্ধেক পানি নাও। সেই পানিতে সামান্য পরিমাণ খাবার লবণ নিয়ে একটি চামচ দিয়ে মেশাও। দেখা গেল পানিতে লবণ মিশে গেছে বা পানিতে আর লবণ দেখা যাচ্ছে না। এই লবণ পানির মিশ্রণ একটি প্রবণ। এই মিশ্রণে পানিকে বলা হয় শ্রাবক এবং লবণকে বলা হয় প্ৰব। প্ৰবণ প্রস্তুত করার সময় পানি, এসিড, অ্যালকোহল ইত্যাদি নানা রকম তরল ব্যবহার করা যায়। এই অধ্যায়ে আমরা মূলত পানিকে দ্রাবক হিসেবে ব্যবহার করব। পানিকে দ্রাবক হিসাবে ব্যবহার করলে যে প্রবণ তৈরি হয় তাকে জলীয় দ্রবণ বলে।
দ্রবণ = দ্রব + দ্রাবক
তোমরা মাঝে মাঝেই লঘু দ্রবণ এবং গাঢ় জল কথাগুলো শুনবে। তুমি যদি একটি গ্লাসে 250 মিলিলিটার পানির মধ্যে 10 গ্রাম খাবার লবণ মিশাও তাহলে একটি প্রবণ তৈরি হবে। তুমি যদি আরেকটি গ্লাসে 250 মিলিলিটার পানির মধ্যে 15 গ্রাম খাবার লবণ মিশাও তাহলেও একটি দ্রবণ তৈরি হবে। এই দুটি দ্রবণের মধ্যে একটি লঘু প্রবণ এবং অন্যটি গাঢ় প্রবণ। যে দ্রবণে খাবার লবণ কম সেই দ্রবণটি লঘু প্রবণ আর যে দ্রবণে খাবার লবণ বেশি সেই দ্রবণটি গাঢ় দ্রবণ। আবার একটি গ্লাসে 250ml পানি এবং অপর একটি গ্লাসে 200 ml পানি নেওয়া হলো। এবারে দুটি গ্লাসেই 10g লবণ মেশানো হয়েছে। এখন বলতে পারবে কোন পাত্রের দ্রবণটি লঘু এবং কোন পাত্রের দ্রবণ পাঢ়? যে পাত্রে পানির পরিমাণ বেশি সেটি লঘু প্রবণ আর যে পাত্রে পানির পরিমাণ কম সেটি গাঢ় প্রবণ। ল্যাবরেটরিতে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ দ্রাবকের মধ্যে কম পরিমাণ দ্রব মিশ্রিত করলে তাকে লঘু দ্রবণ বলে এবং একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ দ্রাবকের মধ্যে বেশি পরিমাণ দ্রব মিশ্রিত করলে তাকে গাঢ় দ্রবণ বলে। আসলে দ্রাবকের মধ্যে কতোটুকু পদার্থ যোগ করলে সেই দ্রবণ লঘু হবে আর কতোটুকু পদার্থ যোগ করলে দ্রবণ গাঢ় হবে তার কোনো নিয়ম নেই। অর্থাৎ দ্রাবকের মধ্যে তুলনামূলক কম পরিমাণ দ্রব থাকলে তাহলে সেটা লঘু দ্রবণ এবং দ্রাবকের মধ্যে তুলনামূলকভাবে বেশি পরিমাণে দ্রব থাকলে সেটা গাঢ় দ্রবণ।
একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় 1 লিটার দ্রবণের মধ্যে যত মোল দ্রব দ্রবীভূত থাকে তাকে ঐ দ্রবণের মোলারিটি বলা হয়। একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় 1 লিটার দ্রবণের মধ্যে যদি দুই মোল দ্রব দ্রবীভূত থাকে তবে ঐ দ্রবণের মোলারিটি দুই। যদি 1 লিটার দ্রবণের মধ্যে 0.5 মোল দ্রব দ্রবীভূত থাকে তাহলে ঐ দ্রবণকে সেমিমোলার দ্রবণ বলে এবং 1 লিটার দ্রবণের মধ্যে যদি 0.1 মোল দ্রব দ্রবীভূত থাকে তবে ঐ দ্রবণকে ডেসিমোলার দ্রবণ বলে এবং ডেসিমোলার দ্রবণের মোলারিটি = 0.1। সেমিমোলার দ্রবণের মোলারিটি হবে 0.5 ।
বিভিন্ন মোলারিটির দ্রবণ প্রস্তুতকরণ
ল্যাবরেটরিতে মোলার দ্রবণ, ডেসিমোলার দ্রবণ, সেমিমোলার দ্রবণ ইত্যাদি প্রস্তুত করার প্রয়োজন হয় । বিভিন্ন মোলারিটির দ্রবণ প্রস্তুত করা অত্যন্ত সহজ। এক্ষেত্রে তোমাকে কতোগুলো কাজ ধাপে ধাপে করতে হবে। প্রথমত তোমাকে একটি নির্দিষ্ট আয়তনের আয়তনিক ফ্লাস্ক বাছাই করতে হবে। দ্বিতীয়ত যে পদার্থের দ্রবণ তৈরি করতে হবে সেই পদার্থের নির্দিষ্ট পরিমাণ ওজন করে নিয়ে আয়তনিক ফ্লাস্কে ঢেলে নিতে হবে। তৃতীয়ত আয়তনিক ফ্লাস্কের মধ্যে খানিকটা পানি যোগ করে ঝাঁকিয়ে পদার্থটির দ্রবণ তৈরি করতে হবে। তারপর সাবধানে আয়তনিক ফ্লাস্ক এর নির্দিষ্ট দাগ পর্যন্ত পানি দ্বারা পূর্ণ করতে হবে। দ্রবণের মোলারিটি, দ্রবণের আয়তন, দ্রবের ভর এবং দ্রবের আণবিক ভরের মধ্যে একটি সম্পর্ক আছে।
গ্রাম এককে দ্রবের ভর = দ্রবণের মোলারিটি x মিলিলিটার এককে দ্রবণের আয়তন x দ্রবের আণবিক ভর / 1000
এখানে গ্রাম এককে দ্রবের ভর = w
দ্রবণের মোলারিটি = s
মিলিলিটার এককে দ্রবণের আয়তন = V
এবং দ্রবের আণবিক ভর = M ধরে নিলে
W = SVM / 1000
মোলারিটি বা ঘনমাত্রা সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানের জন্য এই সূত্রটি ব্যবহার করা যেতে পারে।
কোনো যৌগের 100 গ্রামের মধ্যে কোনো মৌল যত গ্রাম থাকে তাকে ঐ মৌলের শতকরা সংযুক্তি বলে। যৌগের আণবিক সংকেত থেকে ঐ যৌগে বিদ্যমান মৌলসমূহের শতকরা সংযুতি বের করা যায়। অর্থাৎঃ
কোনো যৌগে একটি মৌলের শতকরা সংযুক্তি = মৌলের পারমাণবিক ভর x পরমাণুর সংখ্যা x 100 / যৌগের আণবিক কর %
উদাহরণ: HCl যৌগে H ও Cl এর শতকরা সংযুক্তি হিসাব দেখানো হলো HCl এর আণবিক ভর = 1+35.5 = 36.5
এখানে 36.5 গ্রাম HCl এর মধ্যে H আছে = 1 গ্রাম
1 অতএব, 1 গ্রাম HCl এর মধ্যে H আছে = 1/36.5গ্রাম
1x100 অতএব, 100 গ্রাম HCl এর মধ্যে H আছে = 1×100/36.5 গ্রাম = 2.74 গ্রাম
অতএব, H এর শতকরা সংযুতি - 2.74%
আবার, 36.5 গ্রাম HCl এর মধ্যে Cl আছে = 35.5 গ্রাম
অতএব, 1 গ্রাম HCl এর মধ্যে Cl আছে =35.5/36.5 গ্রাম
অতএব, 100 গ্রামের মধ্যে Cl আছে = 35.5x100 /36.5 গ্রাম = 97.26 গ্রাম
অতএব, Cl এর শতকরা সংযুক্তি = 97.26%
কিংবা অন্যভাবে বের করতে পারি: Cl এর শতকরা সংযুক্তি = (100 - 2.74% = 97.26%)
আমরা আণবিক সংকেতের ধারপাটির সাথে ভালোভাবে পরিচিত হয়েছি, অনেকবার ব্যবহার করেছি এবং আমরা জানি আণবিক সংকেত দেখে আমরা একটি অণুতে কোন পরমাণু কতগুলো আছে বের করতে পারি। একটি অণুতে বিভিন্ন পরমাণুর সংখ্যার অনুপাত বোঝানোর জন্য “স্থূল সংকেত” এর ধারণাটি প্রবর্তন করা হয়েছে। যেমন হাইড্রোজেন পার অক্সাইডের অণুতে (H2O2) দুটি হাইড্রোজেন এবং দুটি অক্সিজেন পরমাণু রয়েছে। তোমরা দেখতে পাচ্ছ H2O2 এ হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনের পরমাণুর সংখ্যা যথাক্রমে 2 এবং 2, কাজেই তাদের অনুপাত 1:1 অর্থাৎ H2O2 এর স্থূল সংকেত HO | অর্থাৎ যে সংকেত দিয়ে অণুতে বিদ্যমান পরমাণুগুলোর অনুপাত প্রকাশ করে তাকে স্থূল সংকেত বলে ।
কাজেই তোমরা বুঝতে পারছো আমরা যদি কোনো যৌগের ভেতরকার মৌলগুলোর শতকরা সংযুতি এবং আপেক্ষিক পারমাণবিক ভর বা পারমাণবিক ভর জানি তাহলে খুব সহজেই যৌগটির স্থূল সংকেত বের করতে পারব।
শতকরা সংযুক্তি থেকে স্থূল সংকেত নির্ণয় শতকরা সংযুতি থেকে স্থূল সংকেত বের করার কতকগুলো ধাপ রয়েছে যা নিম্নে দেওয়া হলো
ধাপ 1: মৌলসমূহের শতকরা সংযুতিকে এর পারমাণবিক ভর যারা ভাগ করতে হবে।
ধাপ 2: ভাগফলগুলোর মধ্য থেকে যে সংখ্যাটি ক্ষুদ্রতম সেই সংখ্যা দিয়ে ভাগফলগুলোকে ভাগ করতে হবে এবং ভাগফলগুলোকে নিকটতম পূর্ণসংখ্যায় পরিণত করার জন্য প্রয়োজনে যেকোনো সংখ্যা দিয়ে সবগুলোকে পূর্ণ করতে হবে।
ধাপ 3: মৌলসমূহের প্রতীকের নিচে ডান পাশে ঐ পূর্ণসংখ্যাগুলো বসিয়ে দিলেই স্থূল সংকেত তৈরি হয়ে যাবে
ধাপ 4: মৌলগুলোর প্রতীকের নিচে ডান পাশে 1 থাকলে সেটি লেখার প্রয়োজন নেই। ধরা যাক কোনো যৌগ কার্বনের সংযুতি 92.31% এবং হাইড্রোজেনের সংস্কৃতি 7.69%, যৌগটির স্কুল সংকেত বের করতে হবে।
প্রথমে মৌলগুলোর শতকরা সংযুদ্ধিকে তার পারমাণবিক ভর দিয়ে ভাগ করি
C= 92.31/12 7.69
H = 7.69/1 = 7.69
ভাগফলগুলোর মধ্য থেকে যে সংখ্যাটি ক্ষুদ্রতম সেই সংখ্যা দিয়ে ভাগফলগুলোকে ভাগ করি
C = 7.69/ 7.69 = 1 ।
H = 7.69/7.69 = 1
এই মানগুলো এবং মৌলের প্রতীক দিয়ে সংকেত আকারে লিখলেই স্থূল সংকেত পাওয়া যাবে। অতএব, যৌগটির স্থূল সংকেত: C3H3 = CH
কোনো যৌগের আণবিক সংকেত বের করার জন্য যৌগের শতকরা সংযুতি থেকে প্রথমে স্থূল সংকেত বের করতে হবে। কোনো যৌগের স্থূল সংকেতের ভর যদি ঐ যৌগের আণবিক ভরের সমান হয় তাহলে যৌগের স্থূল সংকেতই যৌগের আণবিক সংকেত হবে। কিন্তু যদি কোনো যৌগের স্থূল সংকেতের ভর ঐ যৌগের আণবিক ভরের সমান না হয় তাহলে স্থূল সংকেতের ভর থেকে আণবিক ভর কত গুণ বেশি সেটি বের করতে হবে।
যদি স্থূল সংকেতের ভর থেকে আণবিক ভর n গুণ বেশি হয় তাহলে
আণবিক সংকেত = (স্থূল সংকেত) n
এখানে, n = যৌগের আণবিক ভর/ স্থূল সংকেতের ভর
ধরা যাক, কোনো যৌগের C = 92.31%, H = 7.69% দেওয়া আছে। ঐ যৌগের আণবিক ভর = 78
যৌগটির আণবিক সংকেত বের করতে হবে।
মৌলগুলোর শতকরা সংযুতিকে তাদের পারমাণবিক ভর দিয়ে ভাগ করি
C = 92.31/12 = 7.69
H = 7.69/ 1 = 7.69
ভাগফলগুলোর মধ্য থেকে যে সংখ্যাটি ক্ষুদ্রতম সেই সংখ্যা দিয়ে ভাগফলগুলোকে ভাগ করি
C =7.69/ 1= 1
H = 7.69/ 7.69 =1
এই মানগুলো এবং মৌলের প্রতীক দিয়ে সংকেত আকারে লিখলেই স্থূল সংকেত পাওয়া যাবে।
অতএব, যৌগটির স্থূল সংকেত = C1H1 = CH
যৌগের স্থূল সংকেত CH হলে এর আণবিক সংকেত হবে: (CH)n = CnHn
স্থূল সংকেত CH এর ভর = 12×1 + 1×1 = 13 এবং আণবিক ভর = 78
যৌগের আণবিক ভর স্থূল সংকেতের ভর অতএব, n 78 (12+1) = = 6
কাজেই যৌগটির আণবিক সংকেত =C6H6
আণবিক সংকেত থেকে স্থূল সংকেত নির্ণয়
কোনো যৌগের আণবিক সংকেত থেকে স্থূল সংকেত নির্ণয় করা যায়। ধরা যাক গ্লুকোজ (C6H12O6) এর স্থূল সংকেত বের করতে হবে।
গ্লুকোজ (C6H12O6) এর একটি অণুতে 6টি C পরমাণু, 12টি H পরমাণু এবং 6টি O পরমাণু আছে। অতএব, পরমাণুসমূহের অনুপাত C:H:O = 6:12:6 = 1:2:1
সুতরাং স্থূল সংকেত C1H2O1 = CH2O
কখনো কখনো স্থূল সংকেত এবং আণবিক সংকেত একই হয়।
যেমন পানির আণবিক সংকেত H2O এর স্থূল সংকেত H2O। সালফিউরিক এসিড এর আণবিক সংকেত H2SO4 এবং এর স্থূল সংকেত H2SO4
কিন্তু যে সকল যৌগের সকল পরমাণুর সংখ্যাকে কোনো নির্দিষ্ট সংখ্যা দিয়ে ভাগ করা যায় তাদের স্থূল সংকেত এবং আণবিক সংকেত ভিন্ন হবে। বেনজিনের আণবিক সংকেত C6H6। বেনজিনের কার্বন এবং হাইড্রোজেনের পরমাণু সংখ্যাকে 6 দ্বারা ভাগ করা যায় অতএব, এর স্থূল সংকেত C1H1, বা CH
একইভাবে ইথিনের আণবিক সংকেত C2H4, অতএব, এর স্থূল সংকেত C2H2 বা CH2
রাসায়নিক বিক্রিয়া
যদি কোনো পরিবর্তনের ফলে কোনো পদার্থ তার নিজের ধর্ম ও বৈশিষ্ট্য হারিয়ে নতুন ধর্ম লাভ করে সেই পরিবর্তনকে রাসায়নিক পরিবর্তন বলে। যে প্রক্রিয়ায় রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে সেই প্রক্রিয়াকে রাসায়নিক বিক্রিয়া বলে। রাসায়নিক বিক্রিয়াকে সংক্ষেপে উপস্থাপন করার জন্য যে সমীকরণ ব্যবহার করা হয় সেই সমীকরণকে রাসায়নিক সমীকরণ বলা হয়।
রাসায়নিক সমীকরণকে প্রকাশ করার জন্য প্রতীক, সংকেত এবং নানা রকম চিহ্ন ব্যবহার করা হয়।
যে সকল পদার্থ নিয়ে রাসায়নিক বিক্রিয়া শুরু করা হয় সেই সকল পদার্থকে বলা হয় বিক্রিয়ক। বিক্রিয়ার ফলে নতুন ধর্ম বিশিষ্ট যে সকল পদার্থ উৎপন্ন হয় সেই সকল পদার্থকে উৎপাদ বলা হয়।
রাসায়নিক বিক্রিয়াকে রাসায়নিক সমীকরণ আকারে লেখার জন্য কতোগুলো নিয়ম মানা হয় সেগুলো হচ্ছে:
1. গণিতে যেমন সমীকরণের মাঝে একটি সমান চিহ্ন (=) ব্যবহার করা হয় তেমনি কোনো বিক্রিয়ার বিক্রিয়ক বাম পাশে এবং উৎপাদ ডান পাশে লিখে তাদের মাঝে একটি সমান চিহ্ন (=) বা তীর চিহ্ন (→) বসাতে হয়।
2. বিক্রিয়কসমূহ এবং উৎপাদসমূহকে রাসায়নিক প্রতীক বা সংকেতের মাধমে লেখা হয়। বিক্রিয়ায় একাধিক বিক্রিয়ক থাকলে বিক্রিয়কসমূহের মাঝে যোগ চিহ্ন দিতে হয়। এবং একাধিক উৎপাদ থাকলে উৎপাদসমূহের মাঝে যোগ চিহ্ন দিতে হয়।
3. যে প্রক্রিয়ায় সমীকরণের বাম পাশের বিভিন্ন মৌলের পরমাণুর সংখ্যা এবং ডান পাশের ঐ একই মৌলের পরস্পর সংখ্যা সমান করা হয়। সেই প্রক্রিয়াকে রাসায়নিক সমীকরণের সমতা বলা হয়।
2H2 + O2→ 2H2O
2H2 + O2 = 2H2O
4. কখনো কখনো বিক্রিয়ার সমতা না করেও বিক্রিয়া দেখানো হয়, তখন সমান চিহ্ন (=) না দিয়ে তীর চিহ্ন (→) ব্যবহার করতে হয়।
H2 + O2 → H₂O
5. অনেক সময় বিক্রিয়ক এবং উৎপাদের ভৌত অবস্থা উল্লেখ করেও রাসায়নিক সমীকরণ লেখা হয়। বিক্রিয়ক এবং উৎপাদের ভৌত অবস্থা পদার্থের ডান পাশে প্রথম বন্ধনীর মধ্যে প্রকাশ করা হয় । এক্ষেত্রে কোনো পদার্থ কঠিন হলে তার ইংরেজি নাম (Solid) এর প্রথম বর্ণ (s) লিখতে হয়, কোনো পদার্থ তরল (liquid) হলে তার ইংরেজি নামের প্রথম বর্ণ (1) লিখতে হয়, কোনো পদার্থ গ্যাসীয় তার ইংরেজি নাম (gas) এর প্রথম বর্ণ (g) লিখতে হয়। কোনো পদার্থ পানিতে দ্রবীভূত হলে সেই দ্রবণকে বলা হয় জলীয় দ্রবণ। জলীয় দ্রবণের ইংরেজি নাম (aquas solution ) এর প্রথম 2টি বর্ণ (aq) লিখতে হয়। উপরের বিক্রিয়ায় হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন গ্যাস এবং উৎপন্ন পদার্থ পানি তরল তাই তাকে লিখতে হবে।
2H2(g) + O2(g) → 2H2O(1)
রাসায়নিক সমীকরণ এর উদ্দেশ্য হচ্ছে কোন কোন পদার্থ বিক্রিয়া করে কোন কোন পদার্থ হয়েছে সেটি দেখানো। অনেক সময় সমতা না করেও সেটি দেখানো যেতে পারে।
6. তবে যদি কোনো বিক্রিয়ায় কতটুকু তাপ উৎপন্ন হয় বা কতটুকু তাপ শোষিত হয় তা সমীকরণে দেখাতে হয় তবে সেক্ষেত্রে রাসায়নিক বিক্রিয়ার সমতা করতে হবে এবং বিক্রিয়ক এবং উৎপাদের ভৌত অবস্থা (যেমন কঠিন, তরল, গ্যাসীয় অবস্থা, জলীয় অবস্থা ইত্যাদি) লিখতে হবে।
রাসায়নিক বিক্রিয়াকে সংক্ষিপ্তরুপে রাসায়নিক সমীকরণের সাহায্যে প্রকাশ করা হয়। যেহেতু রাসায়নিক বিক্রিয়াতে বিক্রিয়ক এবং উৎপাদ ভরের সংরক্ষণসূত্র মেনে চলে তাই বিক্রিয়ার সমীকরণে বিক্রিয়ক পদার্থের বিভিন্ন মৌলের পরমাণুর সংখ্যা উৎপাদ পদার্থের বিভিন্ন মৌলের পরমাণুর সংখ্যার সমান থাকে । রাসায়নিক সমীকরণের তীর চিহ্ন বা সমান চিহ্নের বাম পাশে কোনো মৌলের যে কয়টি পরমাণু থাকে তীর চিহ্ন বা সমান চিহ্নের ডান পাশে মৌলের সেই কয়টি পরমাণু থাকলে আমরা ঐ রাসায়নিক সমীকরণ সমতাকরণ হয়েছে বলে বুঝে থাকি।
নিচের উদাহরণটি লক্ষ করো:
Mg + HCl MgCl2 + H2
ম্যাগনেসিয়াম ও হাইড্রোক্লোরিক এসিডকে বিক্রিয়ক হিসেবে ব্যবহার করলে আমরা ম্যাগনেসিয়াম ক্লোরাইড ও হাইড্রোজেন পাই এটি সত্যি, কাজেই বিক্রিয়াটি সঠিক। কিন্তু দুইপাশে হাইড্রোজেন ও ক্লোরিন পরমাণুর সংখ্যা সমান নয়, তাই এই সমীকরণটির সমতাকরণ হয়নি।
বিক্রিয়া সমতাকরণের পদ্ধতি
বিভিন্ন মৌলের পরমাণুর সংখ্যা সমান করার জন্য বিক্রিয়ক এবং উৎপাদের সংকেতের সামনে প্রয়োজনীয় সংখ্যা (1, 2, 3, 4 ...) দিয়ে গুণ করতে হয় এবং পরমাণুর সংখ্যা সমান করার জন্য চেষ্টা করে যেতে হয়। সমীকরণের সমতা করার জন্য কোনো সুনির্দিষ্ট নিয়ম নেই কিন্তু কিছু কৌশল অবলম্বন করা হয়। সেগুলো এ রকম:
1. প্রথমে বিক্রিয়ক এবং উৎপাদের সঠিক সংকেত লিখে বিক্রিয়ার সমীকরণ লেখা হয়।
2. সমীকরণে সমতা না থাকলে বিভিন্ন বিক্রিয়ক এবং উৎপাদকে বিভিন্ন সংখ্যা দিয়ে গুণ করে দুই পাশে মৌলের পরমাণুর সংখ্যা সমান করার চেষ্টা করা হয়।
3. প্রথমে যৌগিক অণুতে বিদ্যমান মৌলের পরমাণু সংখ্যার সমান করা হয় পরে মৌলিক অণুতে বিদ্যমান মৌলের পরমাণু সংখ্যার সমান করা হয়।
4. সমীকরণের তীর চিহ্ন এবং সমান চিহ্নের বাম পাশের সকল মৌলের পরমাণুর সংখ্যা এবং সমীকরণের তীর চিহ্ন এবং সমান চিহ্নের ডান পাশের সকল মৌলের পরমাণুর সংখ্যা সমান করতে হবে।
5. সমীকরণের উভয় পাশে প্রত্যেকটি মৌলের পরমাণু সংখ্যা সমান বা সমতা হলেই ঐ সমীকরণের সমতা হয়েছে বলে বিবেচিত হবে।
আমরা কয়েকটি উদাহরণ দিয়ে সমতাকরণের প্রক্রিয়াটি বোঝানোর চেষ্টা করি।
উদাহরণ 1:
Mg + HCl MgCl2 + H2
উপরের বিক্রিয়ায় যৌগিক অণু HCl এর মধ্যে Cl পরমাণু আছে 1টি কিন্তু ডান পাশে যৌগিক অণু MgCl2 এর মধ্যে Cl পরমাণু আছে ২টি। কাজেই উভয় পাশে Cl পরমাণুর সংখ্যা সমান হয় নাই। আবার উপরের বিক্রিয়ায় বাম পাশে H পরমাণু আছে 1টি কিন্তু ডান পাশে H পরমাণু আছে ২টি। কাজেই উভয় পাশে H পরমাণুর সংখ্যা সমান হয়নি। আবার উপরের বিক্রিয়ায় বাম পাশে Mg পরমাণু আছে 1টি কিন্তু ডান পাশে Mg পরমাণু আছে 1টি কাজেই উভয় পাশে Mg পরমাণুর সংখ্যা সমান হয়েছে।
প্রথমে সমীকরণের উভয় পাশে Cl পরমাণুর সংখ্যা সমান করার চেষ্টা করি এক্ষেত্রে বাম পাশের HCl কে 2 দিয়ে গুণ করি
Mg + 2HC1 MgCl2 + H2
উপরের বিক্রিয়ার বাম দিকের প্রতিটি পরমাণুর সংখ্যা এবং ডান দিকের প্রতিটি পরমাণুর সংখ্যা সমান হয়েছে। অতএব, রাসায়নিক বিক্রিয়ার বা রাসায়নিক সমীকরণের সমতা হয়েছে।
সমীকরণের সমতা হয়ে গেলে তাকে সমান চিহ্ন দ্বারাও লেখা যায়।
Mg + 2HCl = MgCl2 + H2
উদাহরণ 2:
Na2CO3 + HCl → NaCl + H2O + CO2
এই সমীকরণে সমতা নেই। কারণ বাম পাশে Na দুটি ডান পাশে Na একটি অতএব, ডান পাশে NaCl কে 2 দ্বারা গুণ করি
Na2CO3 + HCl 2NaCl + H2O + CO2
এখনো সমতা হয়নি। ডান পাশে Cl দুটি বাম পাশে Cl একটি। বাম পাশের HCl কে 2 দ্বারা গুণ করি Na2CO3 + 2HCl → 2NaCl + H2O + CO2
এখন উপরের বিক্রিয়ার বাম দিকের প্রতিটি পরমাণুর সংখ্যা এবং ডান দিকের প্রতিটি পরমাণুর সংখ্যা সমান হয়েছে। অতএব, রাসায়নিক বিক্রিয়ার বা রাসায়নিক সমীকরণের সমতা হয়েছে। সমীকরণের সমতা হয়ে গেলে তাকে সমান চিহ্ন দ্বারাও লেখা যায়।
Na2CO3 + 2HCl = 2NaCl + H2O + CO2
উদাহরণ 3:
অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড হাইড্রোক্লোরিক এসিডের সাথে বিক্রিয়া করে অ্যালুমিনিয়াম ক্লোরাইড ও পানি উৎপন্ন হয়।
Al2O3 + HCl → AlCl3 + H2O
এই সমীকরণে সমতা নেই। Al কে সমান করার জন্য ডান পাশে AlCl3 কে 2 দিয়ে গুণ করো।
Al2O3 + HCl → 2AlCl3 + H2O
এখনো সমতা হয়নি। Cl এর সমতাকরণের জন্য বাম পাশে HCl কে 6 দিয়ে গুণ দাও ।
Al2O3 + 6HC1 → 2AlCl3 + H2O
এখনো সমতা হয়নি। বাম পাশে অক্সিজেন (O) আছে তিনটি। ডান পাশে অক্সিজেন (O) আছে 1টি। বাম পাশে H আছে ছয়টি। ডান পাশে H আছে দুটি। সমতাকরণের জন্য ডান পাশের H2O কে ও দিয়ে গুণ দাও ।
Al2O3 + 6HC1 → 2AlCl3 + 3H2O
এবারে সমতা হয়ে গেছে।
Al2O3 + 6HCl = 2AlCl3 + 3H2O
নির্দিষ্ট পরিমাণ একটি বিক্রিয়ক অপর একটি বিক্রিয়কের নির্দিষ্ট পরিমাণের সাথে বিক্রিয়া করে নির্দিষ্ট পরিমাণ উৎপাদ উৎপন্ন করে। রসায়নের যে শাখায় বিক্রিয়কের পরিমাণ থেকে উৎপাদের পরিমাণ এবং উৎপাদের পরিমাণ থেকে বিক্রিয়কের পরিমাণের হিসাব করা হয় তাকে স্টয়কিওমিতি (Stoichiometry) বলে। রাসায়নিক সমীকরণ থেকে মোলের হিসাব সংক্রান্ত যে তথ্যসমূহ লেখা যায় তা ঐ বিক্রিয়ার স্টয়কিওমিতি।
বিক্রিয়ার স্টয়কিওমিতি অনুযায়ী আমরা হিসাব করে বলতে পারি কতোটি বিক্রিয়ক বিক্রিয়া করে কতোটি উৎপাদ উৎপন্ন করেছে, কতো মোল বিক্রিয়ক বিক্রিয়া করে কতো মোল উৎপাদ উৎপন্ন করেছে, কতো গ্রাম বিক্রিয়ক বিক্রিয়া করে কতো গ্রাম উৎপাদ উৎপন্ন করেছে।
2Mg(s)ম্যাগনেসিয়াম + O2(g) অক্সিজেন 2MgO (s) ম্যাগনেসিয়াম অক্সাইড
রাসায়নিক বিক্রিয়ায় যে সকল পদার্থ অংশগ্রহণ করে তাদেরকে বিক্রিয়ক বলে এবং যে সকল পদার্থ উৎপন্ন হয় তাদেরকে উৎপাদ বলে। রাসায়নিক বিক্রিয়ায় একাধিক বিক্রিয়ক থাকলে বিক্রিয়া সংঘটনের জন্য সবগুলো বিক্রিয়ক নিখুঁতভাবে সরবরাহ করা যায় না। ফলে দেখা যায় কোনো একটি বিক্রিয়ক বিক্রিয়া করে শেষ হয়ে যায় এবং অন্য একটি বিক্রিয়ক বিক্রিয়া শেষে কিছু পরিমাণ উদ্বৃত্ত রয়ে যায় বা অবশিষ্ট থেকে যায়। রাসায়নিক বিক্রিয়ায় যে বিক্রিয়ক বিক্রিয়া করে শেষ হয়ে যায় সেই বিক্রিয়ককে লিমিটিং বিক্রিয়ক বলে। রাসায়নিক বিক্রিয়ায় কোন বিক্রিয়কটি লিমিটিং বিক্রিয়ক হবে তা বিক্রিয়কের পরিমাণের উপর নির্ভর করে। কোন বিক্রিয়ক কতটুকু বিক্রিয়া করবে, কতটুকু অবশিষ্ট থাকবে এবং কোন উৎপাদ কতটুকু উৎপন্ন হবে ইত্যাদি বিষয় লিমিটিং বিক্রিয়কের পরিমাণ থেকে হিসাব করে বের করা হয়।
রাসায়নিক বিক্রিয়ায় ব্যবহৃত বিক্রিয়কগুলো সব সময় 100% বিশুদ্ধ হয় না। যে বিক্রিয়ক সবচেয়ে বেশি বিশুদ্ধ তাকে অ্যানালার বা অ্যানালার প্রেড পদার্থ বলে।
যদি কোনো পদার্থকে 99% বিশুদ্ধ করা যায় এবং এর চেয়ে আর বেশি বিশুদ্ধ করা সম্ভব হয় না তখন এই 99% বিশুদ্ধ পদার্থকেই অ্যানালার বলে। কোনো অবিশুদ্ধ পদার্থকে বিশুদ্ধ করার জন্য কেলাসন, পাতন, আংশিক পাতন, ক্রোমাটোগ্রাফি ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়। এই বিশুদ্ধকরণ পদ্ধতি তোমরা পরবর্তী শ্রেণিতে শিখতে পারবে।
এক বা একাধিক বিশুদ্ধকরণ পদ্ধতি প্রয়োগ করেও অনেক পদার্থকে 100% বিশুদ্ধ করা যায় না। বিক্রিয়ক 100% বিশুদ্ধ না হলে লিমিটিং বিক্রিয়ক থেকে হিসাব করে যে পরিমাণ উৎপাদ হবার কথা রাসায়নিক বিক্রিয়ায় তার চেয়ে কম পরিমাণে উৎপাদ তৈরি হয়।
কোনো বিক্রিয়ার উৎপাদের শতকরা পরিমাপকে নিচের সমীকরণের সাহায্যে বের করা যায়
উৎপাদের শতকরা পরিমাণ = বিক্রিয়া হওয়ার পরে প্রাপ্ত প্রকৃত উৎপাদের পরিমাণ 100 / রাসায়নিক বিক্রিয়ায় সমীকরণ থেকে হিসাবকৃত উৎপাদের পরিমাণ
80 গ্রাম CaCO, কে তাপ দিয়ে 39 গ্রাম Cao পাওয়া যায়। উৎপাদের শতকরা পরিমাণ বের করো৷ Ca এর পারমাণবিক ভর 40, C এর পারমাণবিক ভর 12, 0 এর পারমাণবিক ভর 16 । |
আরও দেখুন...