শ্রীরামচন্দ্রের ত্যাগ-তিতিক্ষা (পাঠ ৬ ও ৭)

সপ্তম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - হিন্দুধর্ম শিক্ষা - ধর্মীয় উপাখ্যানে নৈতিক শিক্ষা | NCTB BOOK
101
Summary

শ্রীরামচন্দ্র রামায়ণের প্রধান চরিত্র। তিনি বিষ্ণুর অবতার। তিনি ত্রেতাযুগে মানুষরূপে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। মানুষ হয়েও চরিত্রগুণে দেবতার স্তরে উন্নীত হওয়া যায়। শ্রীরামচন্দ্র সেই দৃষ্টান্তও স্থাপন করেছেন। মহাবীর হয়েও তিনি ছিলেন ক্ষমাশীল। মহত্ত্ব, উদারতা, কর্তব্যনিষ্ঠা, ত্যাগ-তিতিক্ষা, প্রভৃতি ছিল তাঁর চরিত্রের বিশেষ গুণ।
অযোধ্যার রাজা দশরথ। তাঁর তিন রানি। বড় রানি কৌশল্যা, মেঝো রানি কৈকেয়ী, আর ছোট রানি সুমিত্রা। কৌশল্যার পুত্র রাম, কৈকেয়ীর পুত্র ভরত, আর সুমিত্রার দুই পুত্র লক্ষ্মণ ও শত্রুঘ্ন।

একক কাজ: তোমার জানা একজন ত্যাগী ব্যক্তির নাম এবং তাঁর ত্যাগের একটি দিক উল্লেখ কর।

নিয়মানুসারে পিতার অবর্তমানে বড় ছেলে যুবরাজ হতো। তারপর সে-ই লাভ করত রাজপদ ও ক্ষমতা। রামের ক্ষেত্রেও তাই হওয়াই স্বাভাবিক। রাম তখন পঁচিশ বছরের যুবক। রাজা দশরথ বৃদ্ধ হয়েছেন। রামকে যুবরাজ পদে অভিষিক্ত করবেন। অভিষেক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হলো। কিন্তু বাধা এল বিমাতা কৈকেয়ীর কাছ থেকে। রাজা দশরথ একবার অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। কৈকেয়ীর সেবাযত্নে তিনি সুস্থ হয়ে ওঠেন। রাজা দশরথ খুশি হয়ে তাকে দুটি বর দিতে চাইলেন। কিন্তু কৈকেয়ী বললেন, 'মহারাজ, আমি এখন কিছুই চাই না। আমি সময় মতো চেয়ে নেব।'

এখন যেন সেই সময় উপস্থিত হলো। কৈকেয়ী মন্থরার পরামর্শ মতো রাজা দশরথের নিকট এমন দু'টি বর প্রার্থনা করলেন, যা রাজা দশরথের জন্য হৃদয়বিদারক। কৈকেয়ী চাইলেন, এক বরে রাম চৌদ্দ বৎসরের জন্য বনে যাবে, আর এক বরে তার পুত্র ভরত রাজা হবে। রাজা দশরথের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল। কৈকেয়ীর কথায় তিনি বিমর্ষ হয়ে পড়ে রইলেন। রামকে আনা হলো দশরথের কাছে। দশরথ রামকে সব বৃত্তান্ত বললেন। তিনি পিতার সত্য রক্ষা করতে বনে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হলেন। তিনি রাজ্য ত্যাগ করে, রাজপোশাক পরিত্যাগ করে বল্কল পরিধান করলেন।

রাম সীতার সাথে দেখা করতে গেলেন। সীতা রামের সাথে বনে যেতে চাইলে সীতার কষ্ট হবে ভেবে তাঁকে সঙ্গে নিতে চাইলেন না। কিন্তু সীতা কোনো কথাই শুনলেন না। তিনি যাবেনই রামের সাথে। এদিকে লক্ষ্মণও কারো বাধা না মেনে রামের সাথে বনে যাওয়ার জন্য তৈরি হলেন। শেষে রামের সঙ্গে সীতা ও লক্ষ্মণ বনে রওনা হলেন। রাম বনে যাওয়ার প্রাক্কালে নিজের ধনরত্ন এমনকি নিজের হাতিটি পর্যন্ত দান করে দিলেন। বনে যাওয়ার সময় সকলে যখন ভেঙে পড়েছে, রাম তখন হাসিমুখে সমস্ত কষ্ট সহ্য করেছেন। তিনি পিতাকে বললেন, মাতার প্রতি দৃষ্টি রাখতে। নিজের শরীরের প্রতি যত্ন নিতে।

রাম, সীতা ও লক্ষ্মণ পায়ে হেঁটে চলতে চলতে অনেক পথ অতিক্রম করে চিত্রকূট পর্বতে এলেন। রাজার দুলাল সেখানে পর্ণকুটির নির্মাণ করে বাস করতে লাগলেন। এখানে রাজভোগ নেই, খাদ্য বনের ফলমূল আর বন্য মৃগ। ভরত শ্রীরামচন্দ্রকে ফিরিয়ে নিতে এসেছিল। কিন্তু ত্যাগী রাম ফিরে যাননি। শ্রীরামচন্দ্রের পুরো জীবনটাই ত্যাগ-তিতিক্ষার। শ্রীরামচন্দ্রের ত্যাগ-তিতিক্ষা অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত।

উপাখ্যানের শিক্ষা: মহাপুরুষদের ত্যাগ-তিতিক্ষার দৃষ্টান্তমূলক কাহিনী আমাদের ত্যাগ-তিতিক্ষায় উদ্বুদ্ধ করে। ত্যাগ-তিতিক্ষার গুণে মানুষ দেবতার স্তরে উন্নীত হতে পারে। যে সকল নৈতিক গুণ মানুষকে সমাজে আদর্শ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে সেগুলোর মধ্যে ত্যাগ-তিতিক্ষা অন্যতম। ত্যাগ-তিতিক্ষা মানুষকে নিয়ে যায় মর্যাদার পথে, গৌরবময় স্থানে। ত্যাগ-তিতিক্ষা মানবচরিত্রের অন্যতম মহৎ গুণ। ত্যাগী মানুষকে সকলেই ভালোবাসে, শ্রদ্ধা করে।

নতুন শব্দ: সদাচার, সত্যনিষ্ঠা, গুণান্বিত, উপায়ান্তর, মৃত্যুশয্যা, প্রজাবৎসল, তিতিক্ষা, মনোরঞ্জন, সহিষ্ণুতা, একাগ্রতা।

Content added By
Promotion
NEW SATT AI এখন আপনাকে সাহায্য করতে পারে।