সাধারণত ত্যাগ বলতে কোনো কিছু বর্জন বা পরিহার করা বোঝায়। কিন্তু বিশেষভাবে ত্যাগ বলতে বোঝায় নিজের স্বার্থকে বিসর্জন দেওয়া। নিজের সুখ বা লাভের চিন্তা থেকে নিজেকে বিরত রাখা। ভোগ বা সুখের ইচ্ছা পরিহার করাকেই ত্যাগ বলে। ত্যাগ মানবচরিত্রের একটি বিশেষ নৈতিক গুণ। ত্যাগ ধর্মেরও অঙ্গ। ত্যাগী ব্যক্তি সমাজে আদরণীয় হয়। তাঁকে সকলে শ্রদ্ধা করে। ত্যাগ ছাড়া ধর্ম হয় না। ভোগের কোনো শেষ নেই। যতই ভোগ করা যায়, ভোগের লালসা ততই বেড়ে যায়। ভোগের ইচ্ছাই মানুষকে লোভী করে তোলে। আর এই লোভ মানুষকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেয়। সমাজে ডেকে আনে হানাহানি, হিংসা ও বিদ্বেষ। ত্যাগ মানুষকে করে মহান, সমাজে এনে দেয় শান্তি। হিন্দুধর্মের গ্রন্থসমূহে তত্ত্ব, তথ্য ও উপাখ্যানে ত্যাগের মহিমা কীর্তন করা হয়েছে।
তিতিক্ষাও ত্যাগের মতো আরেকটি বিশেষ গুণ। তিতিক্ষা বলতে বোঝায় সহিষ্ণুতা। তিতিক্ষাও ধর্মের অঙ্গ। নৈতিকতা গঠনে তিতিক্ষার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তিতিক্ষা সমাজে শান্তি আনয়ন করে। ব্যক্তিতে-ব্যক্তিতে গড়ে তোলে সৌহার্দ্যের মনোভাব। তিতিক্ষা না থাকলে ব্যক্তিতে ব্যক্তিতে সংঘাত অনিবার্য। সকলে মিলে, পরস্পর পরস্পরের মতের ও চিন্তার প্রতি সহিষ্ণু হয়েই মানুষ সমাজ গঠন করেছে। সহিষ্ণু না হলে সুষ্ঠুভাবে সামাজিক কাজকর্ম করা অসম্ভব। তাই কষ্ট সহ্য করার ক্ষমতা না থাকলে ব্যক্তিজীবনেও উন্নতি করা যায় না। জীবনে সহিষ্ণুতার গুরুত্ব অপরিসীম। তাই ত্যাগের পাশাপাশি সহিষ্ণুতা বা তিতিক্ষার কথা একই সাথে উচ্চারিত হয়ে থাকে। প্রকৃতপক্ষে ত্যাগ ও তিতিক্ষা অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। তিতিক্ষা না থাকলে ত্যাগের ফলও বিনষ্ট হতে পারে।
হিন্দু ধর্মগ্রন্থে তিতিক্ষার অনেক কাহিনী বর্ণিত হয়েছে। শ্রীরামচন্দ্রের ত্যাগ-তিতিক্ষার কাহিনী একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
Read more