সংখ্যার গল্প

ষষ্ঠ শ্রেণি (মাধ্যমিক) - গণিত - NCTB BOOK

বাস্তব জীবনে সকালে ঘুম হতে ওঠা থেকে শুরু করে রাতে ঘুমাতে যাওয়া পর্যন্ত আমরা প্রতিদিন বিভিন্ন
ধরনের সংখ্যা দেখতে পাই। চলো নিচের ছবিগুলো লক্ষ করি-

 

এই যে নানারকম সংখ্যা দেখতে পাচ্ছ, এগুলো কীভাবে মানুষ জানল? ভেবে দেখ তো? আজ থেকে অনেক
অনেক বছর আগে তারা কীভাবে সংখ্যা লিখত এবং গণনা করত?

এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে সংখ্যার গল্পে। চলো তাহলে সংখ্যাগুলো কীভাবে এলো সেই মজার কাহিনি শুনি।
কয়েক হাজার বছর আগে আমরা ফিরে যাই, যখন মানুষ খাদ্যের জন্য কেবল শিকার বা বনের ফলমূলের উপর নির্ভর করত- তখন সে সকালে ঘুম থেকে জেগে উঠত পাখির ডাকে। তারপর হয়ত নদীর জলে মুখ ধুয়ে খাদ্যের সন্ধানে বের হতো।

আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সাথে কয়েক হাজার বছর আগের মানুষের দৈনন্দিন জীবনে সংখ্যা গণনা ও ব্যবহারের পার্থক্য আছে কি?
চলো তাহলে প্রাচীনকালে মানুষ কীভাবে দাগ কেটে, দড়ির গিট দিয়ে বা পাথর ব্যবহার করে বিভিন্ন উপায়ে সংখ্যা গণনা করত তার কিছু নমুনা দেখে নেই।

 

দাগ কেটে গণনা

বিভিন্ন সময়ের মানুষ ৮ সংখ্যাটি উপরের ছবির মতো করে ভিন্ন ভিন্ন উপায়ে দাগ কেটে প্রকাশ করত।
৮ সংখ্যাটি প্রকাশ করার এরকম আরও কোনো উপায় কি তোমরা বলতে পারবে?

 

দড়ির গিট দিয়ে গণনা

তোমরা কি জানো ইনকা সভ্যতার মানুষেরা দড়ির গিট দিয়ে সংখ্যা প্রকাশ করত?
নিচের ছবি দেখে বোঝা যাচ্ছে কি?

 

 

ট্যালির মাধ্যমে গণনা

 

ঘড়িতে সময় দেখি

কোন ঘড়িতে সময় কত?

 

নিচের ছকটি পূরণ করো

সংখ্যাঘড়িতে কীভাবে লেখা
আছে
সংখ্যাঘড়িতে কীভাবে লেখা আছে
  
  
  
 ১০ 
 ১১ 
 ১২ 

📝 অনুশীলনী

এবার বলো তো ঘড়ির সংখ্যা লেখার পদ্ধতি অনুসারে ১৩, ২০, ৬৭ সংখ্যাগুলো কীভাবে লেখা হবে?

🧩 পাজল

মায়ানরা কীভাবে সংখ্যা লিখত জানো?
নিচের সারণিটি পূরণ করতে পারবে?

 

Content added By

দশমিক (Decimal) সংখ্যা পদ্ধতির গল্প

০, ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮, ৯ এই মোট দশটা চিহ্ন দিয়ে সংখ্যা তৈরি করার যে পদ্ধতিটা ভারতীয় উপমহাদেশের
গণিতবিদ আর্যভট্ট বের করেছিলেন সেটিকে আমরা দশমিক সংখ্যা পদ্ধতি বলি।

চলো এবারে গল্পের মতো করেই শুনি কীভাবে আর্যভট্ট এই পদ্ধতির চিন্তা করেছিলেন।
আর্যভট্ট ভাবলেন, ‘আমি যদি সংখ্যাকে প্রকাশ করতে চাই তাহলে নিচের মতো করে প্রকাশ করব।’
এরপর উনি লিখলেন:

0

এখন উনি ভাবলেন, ‘আমার কাছে যতগুলো চিহ্ন ছিল সব একবার করে লেখা শেষ। এখন যদি একটু খেয়াল
করি তাহলে দেখব রোমান পদ্ধতির মতো প্রত্যেকটা সংখ্যা এক এক করে বাড়তে থাকে। অর্থাৎ ১ এর সাথে ১
যোগ করলে ২ পাব আবার ২ এর সাথে ১ যোগ করলে ৩ পাব। এখন যদি আমি আবার লিখতে থাকি তাহলে
৯ এর পরে কী লিখব।

১ম বার লেখা শেষ:

0
০ ??         

 

‘কিন্তু আমি যে সবগুলোর চিহ্ন একবার ব্যবহার করেছি সেটা তো সংখ্যায় লিখতে হবে। সেটা আমি কোথায়
লিখব।’

0
১০         

সংখ্যাগুলো লিখা শেষ এটা বুঝাতে শুন্য লিখলাম এবং ১ লিখলাম প্রত্যেকটি সংখ্যার বাম পাশে কারণ
একবার করে লেখা শেষ হয়েছে। এরপর তিনি বললেন, ‘শুধু ১ এবং ১০ এ ০ এর বাম পাশের ১ কিন্তু একই
অর্থ প্রকাশ করে না। অর্থাৎ এদের মান কিন্তু এক নয়। কারণ ১০ এ ০ এর বাম পাশের ১ বলছে আমরা সবগুলো
সংখ্যা একবার লিখে ফেলেছি। এখন যদি আমি আবার একবারের পর এভাবে লিখতে থাকি তাহলে কী হবে?’

0
১০১১১২১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯

এখানে ২০ এর ২ আর ১২ এর ২ কিংবা শুধু ২ এর মান কিন্তু একই না। আমরা যখন রোমান সংখ্যায় XX
লিখি তাহলে ১০ আর ১০ যোগ করে ২০ বুঝাচ্ছি কিন্তু আমাদের এই নিয়মে ১০ লিখলে ১ আর ০ যোগ করে
কিন্তু ১ বুঝাচ্ছে না। তিনি কিন্তু তখনও এইসব সংখ্যার নাম দেননি। তিনি বুঝালেন যে আমি সবগুলো প্রতীক
কতবার লিখছি সেটা বুঝানোর জন্য সেই সংখ্যাটা বসাচ্ছি। এভাবে তিনি কত পর্যন্ত লিখতে পারবেন?

তাহলে যে ৯টি প্রতীক আছে সবগুলো দিয়ে দুইবার যদি নানাভাবে লিখি তাহলে আমরা ৯৯ পর্যন্ত লিখতে
পারবো। এরপর উনি আবার আটকে গেলেন যে এরপর কী করা যায়। এরপর তিনি চিন্তা করলেন এই পদ্ধতিতে
যে সংখ্যা পর্যন্ত লিখলাম তাকে আরেকবার লিখি। অর্থাৎ আরেকবার লিখতে হলে আমাদের আবার ০ থেকে
শুরু করতে হবে এবং সেটা আমাকে বলতে হবে। 

এরপর আমরা যদি খেয়াল করি উপরে লেখা বামের অঙ্কগুলোতে, তাহলে দেখব, সেখানেও আমরা একবার
করে ৯ বার সবগুলো প্রতীক লিখে ফেলেছি। অতএব আমাকে আরেকটা শুন্য বসাতে হবে।
এখন আর বাম পাশে যদি ১ লিখি তাহলে,

এই ১০০ এর বাম পাশের ১ কিন্তু দুই অঙ্কের সংখ্যার বামের সংখ্যাগুলো কয়বার লেখা হয়েছে তা প্রকাশ
করছে। কিন্তু দুই অঙ্কের সংখ্যার ডান পাশের সংখ্যাগুলো কী দিয়ে প্রকাশ করছে? এরপর একটি নাম দিলেন।
এরপর তিনি দুই অঙ্কের সংখ্যার বামের সংখ্যাটিকে দশক এবং তিন সংখ্যার বামের সংখ্যাটিকে শতক বলে
নাম দেন। অর্থাৎ আমরা যদি দেখি প্রথম ১ টার দশ গুণ হয়ে গেলো ১০ এবং ১০ এর দশ গুণ হয়ে গেলো ১০০।

এখান থেকে একটি চমৎকার জিনিস উনি খেয়াল করলেন যে, ‘আমি যদি সংখ্যাগুলোকে পাশাপাশি লিখতে
থাকি এবং আমি এক স্থান থেকে আরেক স্থানে আসি তবে সংখ্যাটা ১০ গুণ বাড়ে। এখন কিন্তু আমরা শিখে
ফেললাম এবং তিন সংখ্যায় আমি ৯৯৯ পর্যন্ত লিখতে পারবো এবং এর পর আরও আবার এক ঘর বামে
বাড়বে। এভাবে যতবার স্থানের পরিবর্তন হবে ততবার ১০ গুণ হয়ে বাড়তে থাকবে। এভাবে গণনার চিন্তা
থেকেই আসলে দশমিক পদ্ধতিটা আসলো। আমরা যদি এখন দেখি যে প্রত্যেক বার স্থান পরিবর্তনে ১০ গুণ
করে বেড়ে যাচ্ছে এবং সেইটাই সংখ্যা পদ্ধতি। আমাদের হাতের ১০টি আঙ্গুল দিয়ে ০ থেকে ৯ পযর্ন্ত এই
দশটা চিহ্ন বা প্রতীককে দেখানো বা প্রকাশ করা যায়।

তাহলে আমাদের সংখ্যা পদ্ধতিতে ১০ টা চিহ্ন বা প্রতীক রয়েছে যার বাংলায় একটা নাম দিলাম অঙ্ক আর ইংরেজিতে একটা নাম দিলাম ডিজিট (Digit)

 

আমরা এইযে ১ - ৯ পর্যন্ত সংখ্যা দেখছি ওরা নিজেরাই একটা কিছু প্রকাশ করে অর্থাৎ ওদের দাম আছে।
তবে এককভাবে ০ এর কোনো দাম বা মূল্য নেই,  তাই ০ কে অন্য কোনো সংখ্যার সঙ্গে থাকতে হয়। এজন্য
০ কে বলা হয় সহকারী বা ইংরেজিতে auxiliary ।  আর ১-৯ পর্যন্ত সংখ্যাগুলোকে বলা হয় সার্থক অঙ্ক বা
ইংরেজিতে significant number । আমরা এই অধ্যায়ের প্রথমদিকে রোমান সংখ্যার(XX বা XC) কথা বলেছি। 
এভাবে পাশপাশি সংখ্যা লেখাকে বলা হয় সংখ্যা পাতন বা notation । কোনো সংখ্যা যদি আমরা লিখতে চাই
তাহলে আমরা ০-৯ এই চিহ্নগুলোকে একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে লিখবো; যে পদ্ধতিতে প্রতিবার যখন সংখ্যাটা
বাম দিকে আসবে তখন সেটা তার থেকে ১০ গুণ বেড়ে যাবে।

তাহলে এখন আমরা দেখি,
একটি সংখ্যা ১২৩
এখানে তিনটি অঙ্ক আছে এবং তিনি ডান থেকে একক, দশক, শতক এভাবে প্রতিটির একটি করে নাম
দিয়েছেন।

শতকদশকএকক

এটা পড়ার সময় আমাদের পড়তে হবে:  ১ শতক ২ দশক ৩ একক।
সংখ্যাটার সত্যিকারের মান হবে:
একটা শতক (১০০) + দুইটা দশক(২০) + তিনটা একক(৩) = একশত তেইশ (১২৩)।
এভাবে আমরা সংখ্যাগুলো লিখতে শুরু করলাম এবং লেখার ফলে কিন্তু আমরা দশমিক পদ্ধতি পেয়ে গেলাম।

কাগজের ভাঁজে লুকানো স্থানীয় মান