সার প্রয়োগ

এসএসসি(ভোকেশনাল) - শ্রিম্প কালচার এন্ড ব্রিডিং-২ - প্রথম পত্র (নবম শ্রেণি) | | NCTB BOOK

উদ্ভিদের বৃদ্ধি ও মাছের খাদ্য তৈরিতে সহায়তা করার জন্য পুকুরে সার প্রয়োগ করা হয়। প্রাকৃতিক খাদ্য থেকে মাছ তাদের আমিষ চাহিদার ৪০-৭০% পূরণ করতে পারে। কার্প জাতীয় মাছের প্রধান প্রাকৃতিক খাদ্য হচ্ছে প্লাংকটন। প্লাংকটন ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া, পুকুরের তলার কীট প্রভৃতি মাছের প্রিয় খাদ্য। এসকল প্লাংকটন ও জীবের বেঁচে থাকা ও বৃদ্ধি সাধনের জন্য পুকুরে বিভিন্ন ধরণের পুষ্টিকারক উপাদান সরবরাহ করতে হয়।

পুষ্টিকারক উপাদানসমূহের মধ্যে কার্বন, অক্সিজেন, হাইড্রোজেন, নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম, সালফার, লৌহ, ম্যাগনেসিয়াম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এসব পদার্থ বাজারে সরাসরি পাওয়া যায় না। তবে বাণিজ্যিক ভাবে দু'ধরণের যৌগাকারে সার হিসেবে পাওয়া যায়। যেমন- জৈব সার ও অজৈব বা রাসায়নিক সার। জীবদেহ হতে প্রাপ্ত সারকে জৈব সার বলে। যেমন- গোবর, হাঁস-মুরগির বিষ্টা প্রভৃতি। সুনির্দিষ্ট উপাদান সমৃদ্ধ যেসব সার কৃত্রিম উপায়ে কারখানাতে প্রস্তুত করা হয়ে থাকে তাদেরকে অজৈব বা রাসায়নিক সার বলে। যেমন- ইউরিয়া, টিএসপি, পটাশ ইত্যাদি। পুকুরে সার প্রয়োগের মাত্রা নিম্ন লিখিত বিষয়ের ওপর নির্ভরশীলঃ

  • মাটির অবস্থা,
  • পানির মধ্যকার শেওলার পুষ্টি চাহিদা,
  • পরিবেশের ভারসাম্য,
  • সারের গুণাগুণ, এবং
  • মাছের ঘনত্ব।

সার প্রয়োগের উপকারীতা: পুকুরে সার প্রয়োগ করলে নিম্ন লিখিত উপকার পাওয়া যায়।

  • সার প্রয়োগের মাধ্যমে পুকুরের পানিতে পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করা হয়। এসব পুষ্টি উপাদানসমূহ মাছের প্রাকৃতিক খাদ্য উৎপাদনে সহায়তা করে,
  • পুকুরে নিয়মিত সার প্রয়োগ করলে মাছের প্রাকৃতিক খাদ্য তৈরি হয়,
  •  সম্পূরক খাদ্যের ওপর নির্ভরশীলতা কমে যায়,
  • জৈব সার বিশেষ করে গোবরে প্রচুর পরিমাণে আঁশ থাকে। পুকুরে ব্যবহার করলে এ আঁশ ব্যাকটেরিয়ার আশ্রয়স্থল হিসেবে কাজ করে। এ ছাড়া জৈবসার রুই ও তেলাপিয়া মাছ সরাসরি খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে থাকে, এবং
  •  পরিশেষে অল্প খরচে অধিক লাভবান হওয়া যায়।
Content added By

বিভিন্ন ধরণের সার

Please, contribute by adding content to বিভিন্ন ধরণের সার.
Content

জৈব সার

ক) কম্পোস্ট সার: মাটির গর্তে গোবর, হাঁস-মুরগির বিষ্ঠা প্রভৃতির সাথে কচুরিপানা, কলমিলতা, ঝাঝি জাতীয় উদ্ভিদ নানা ধরনের শেওলা রেখে দিলে পচন ক্রিয়ার ফলে যে মিশ্র সার তৈরি হয় তাকে কম্পাস্টে সার বলে। মাছ চাষে কম্পোস্ট সারের ব্যবহার করা যায়। তবে একসাথে বেশি পরিমাণ কম্পোস্ট সার পুকুরে ব্যবহার করা নিরাপদ নয়। কারণ এতে অক্সিজেন এর ঘাটতির আশঙ্কা থাকে।

খ) খৈলজাতীয় সার: সরিষার খৈল, বাদামের খৈল, তিসির খৈল, তিলের খৈল প্রভৃতি শস্যবীজের খৈল পুকুরে জৈব সার হিসেবে ব্যবহার করা যায়। বাংলাদেশে সাধারণত সরিষার খৈল জৈব সার হিসেবে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। সরিষার খৈলে সাধারণত ৪.৭% নাইট্রোজেন, ২.৫% ফসফরাস ও ১.০% পটাসিয়াম থাকে।

Content added By

অজৈব সার

কলকারখানায় কৃত্রিম উপায়ে যে সার তৈরি করা হয় তাকে অজৈব বা রাসায়নিক সার বলে। যথা- ইউরিয়া, টিএসপি, এমপি ইত্যাদি। এই রাসায়নিক সার প্রয়োগের ফলে অল্প সময়ের মধ্যেই পুকুরে নানা ধরনের উদ্ভিদ কণা বা ফাইটোপ্লাংকটন জন্মায় ও পুকুরের উর্বরতা বৃদ্ধি পায়।

ক) নাইট্রোজেনজাতীয় সার: নাইট্রোজেনজাতীয় সার বাজারে ইউরিয়া হিসেবে পাওয়া যায়। এই সার অল্প মাত্রায় প্রয়োগ করলে পুকুরে নাইট্রোজেনের ঘাটতি দূর হয় ও পুকুরের উৎপাদন শক্তি বৃদ্ধি পায়। এবং পানিতে দ্রবীভূত হতে সময় কম লাগে।

খ) ফসফেট জাতীয় সার: ফসফরাসজাতীয় সার বাজারে সিঙ্গেল সুপার ফসফেট (এসএসপি), ট্রিপল সুপার ফসফেট (টিএসপি), রক ফসফেট প্রভৃতি হিসেবে পাওয়া যায়। এই সার অল্প মাত্রায় প্রয়োগ করলে পুকুরে ফসফেটের ঘাটতি দূর হয় ও পুকুরের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পায়। এই সার দেখতে ছাই রঙের এবং পানিতে দ্রবীভূত হতে একটু সময় লাগে। এজন্য ফসফেট জাতীয় সার পানিতে গুলিয়ে তারপরে পুকুরে প্রয়োগ করতে হয়।

গ) পটাশ জাতীয় সার পটাশ জাতীয় সার হিসেবে পটাসিয়াম অক্সাইড, পটাসিয়াম সালফেট, পটাসিয়াম নাইট্রেট প্রভৃতি বাজারে পাওয়া যায়। এসব সারের মধ্যে পটাসিয়াম অক্সাইড বা মিউরেট অব পটাশ (এমপি) সার পুকুর প্রস্তুতকালে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয়। এই সার দেখতে দানাদার এবং লাল রঙের।

ঘ) অন্যান্য রাসায়নিক উপাদান : কিছু গুরুত্বপূর্ণ রাসায়নিক উপাদান যেমন-জিংক, ম্যাঙ্গানিজ, তামা, লোহা, বোরন, মলিবডেনাম, আয়োডিন প্রভৃতি মাটিতে খুব অল্প মাত্রায় থাকা প্রয়োজন। এদের যে কোনো একটির অভাব দেখা দিলে মাটি তথা পুকুরের উর্বরতা শক্তি কমে যায়। পুকুরে উদ্ভিদকণা ও প্রাণিকণা উৎপাদনে এসব ট্রেস উপাদান এর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

 

সার রোগের মাত্রাঃ স্বাভাবিক ব্যবস্থাপনায় মাছ চাষের ক্ষেত্রে পুকুর প্রতুতকালীন এবং মজুদ পরবর্তী প্রয়োগের মাত্রা নিয়ে উল্লেখ করা হল।

পুকুর প্রস্তুতকালীন সার প্রয়োগ মজুদ পরবর্তী সার প্রয়োগ 
সারের নামপরিমান পরিমান পরিমান
প্রতি শতাংশে শতাংশ/দিন শতাংশ/ সপ্তাহ 
কম্পোস্ট ১০ কেজি ২০০ গ্রাম ৭ কেজি 
ইউরিয়া ১৫০ গ্রাম ৫ গ্রাম ২০০ গ্রাম 
টিএনপি ৭৫ গ্রাম ৩ গ্রাম ১০০ গ্রাম 

চিত্র ২.১৪: বিভিন্ন প্রকারের সার

সার প্রয়োগে সতর্কত

  • পুকুরে আগাছা থাকলে সারের কার্যকারীতা কমে যায়,
  • পুকুরে পানির স্থায়িত্ব কম হলেও সারের কার্যকারীতা কমে যাবে,
  • মেঘলা দিনে অথবা বৃষ্টির মধ্যে সারের ব্যবহার খুব কার্যকর নয়, ও 
  •  চুন প্রয়োগের ৫-৭ দিন পর সার প্রয়োগ করা উচিত।
Content added || updated By
Promotion