আল্লাহ তায়ালা তাঁর ইবাদত করার জন্যই আমাদের সৃষ্টি করেছেন। ইবাদত অর্থ আনুগত্য করা। আল্লাহ তায়ালার নিকট বান্দার আনুগত্য প্রকাশের যত মাধ্যম বা পন্থা আছে তার মধ্যে সালাত হলো সর্বশ্রেষ্ঠ। সালাতের মাধ্যমেই আল্লাহর প্রতি বান্দার চরম আনুগত্য প্রকাশ পায় ।
সালাত শব্দের অর্থ নত হওয়া, বিনয়-বিনম্র হওয়া, দোয়া করা, ক্ষমা প্রার্থনা করা, দরূদ পড়া। ইসলামের পরিভাষায় আহকাম, আরকানসহ বিশেষ নিয়মে আল্লাহর ইবাদত করাকে সালাত বলে। সালাতকে নামাজও বলে।
ইসলাম পাঁচটি রুকনের ওপর প্রতিষ্ঠিত। রুকন মানে খুঁটি। পাঁচটি রুকন হলো:
১. ইমান, ২. সালাত, ৩. সাওম, ৪. হজ, ও ৫. যাকাত।
ইমানের পরেই সালাতের স্থান। সালাত সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। রাসুল (স) বলেছেন,
অর্থ : “সালাত দীন ইসলামের খুঁটি। (বায়হাকী)
যে সালাত কায়েম করলো, সে দীনরূপ ইমারতটি কায়েম রাখল। আর যে সালাত ত্যাগ করল, সে দীনরূপ ইমারতটি ধ্বংস করল। কুরআন মজিদে বার বার সালাত কায়েমের হুকুম দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে:
অর্থ : “সালাত কায়েম করো”। (সূরা বনি ইসরাইল, আয়াত : ৭৮)
দিন-রাত পাঁচ ওয়াক্ত সালাত জীবনের প্রতি মুহূর্তে আল্লাহ তায়ালার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। বান্দার মনে আল্লাহর বিধানমতো চলার অনুপ্রেরণা জোগায়। সালাতের মাধ্যমে বান্দা আল্লাহ তায়ালার বেশি নৈকট্য লাভ করতে পারে।
সালাতের মাধ্যমে মানুষ নিষ্পাপ হয়ে যায়। রাসুল (স) একদিন সাহাবিদের বললেন, “তোমাদের বাড়ির সামনে যদি একটি নদী থাকে, আর কোনো ব্যক্তি যদি ঐ নদীতে দৈনিক পাঁচবার গোসল করে, তবে কি তার শরীরে কোনো ময়লা থাকতে পারে? সাহাবিরা বললেন, না। কোনো ময়লা থাকতে পারে না। তখন রাসুল (স) বললেন, ঠিক তেমনি কোনো বান্দা যদি প্রতিদিন পাঁচবার সালাত আদায় করে তার আর কোনো গুনাহ থাকতে পারে না।”- বুখারি ও মুসলিম ।
রাসুল (স) আরও বলেছেন, কোনো বান্দা জামাআতের সাথে সালাত আদায় করলে আল্লাহ তায়ালা তাকে পাঁচটি পুরস্কার দিবেন।
১. তার জীবিকার অভাব দূর করবেন।
২. কবরের আজাব থেকে মুক্তি দেবেন।
৩. হাশরে আমলনামা ডান হাতে দেবেন।
8. পুলসিরাত বিভাগীর মতো দ্রুত পার করবেন।
৫. তাকে বিনা হিসাবে জান্নাত দান করবেন।
জান্নাত লাভ করতে হলে নিয়মিত সালাত আদায় করতে হবে। মহানবি (স) বলেছেন,
অর্থ : “সালাত জান্নাতের চাবি"। (তিরমিজি, ইবনেমাচ্ছা, আবুদাউদ)।
রাসুল্লাহ (স) আরও বলেছেন, 'কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম সালাতের হিসাব নেওয়া হবে। যার সালাতের হিসাব সঠিক হবে তার অন্য সব হিসাবও ঠিক হবে। আর যার সালাতের হিসাব গরমিল হবে, তার অন্যসব হিসাবও গরমিল হবে।” (তাবারানি)
একাকী সালাত আদায়ের চেয়ে সকলে মিলে জামাআতের সাথে সালাত আদায় করলে বেশি সওয়াব পাওয়া যায়। এর মাধ্যমে মুসলিমগণ দৈনিক পাঁচবার মিলিত হওয়ার সুযোগ পায়, পরস্পরের খোঁজখবর নিতে পারে। একতা, ভ্রাতৃত্ব সৃষ্টি হয়। পরস্পরে সম্প্রীতি সৃষ্টি হয়। সুখে-দুঃখে একে অন্যের সাহায্য করতে পারে। সালাত মানুষের চরিত্র সংশোধনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। সালাত মানুষকে সব রকম অশ্লীল ও অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখে।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, 'নিশ্চয়ই সালাত অশ্লীলতা ও খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখে।” (সূরা আনকাবুত, আয়াত : ৪৫)
পরিকল্পিত কাজ: শিক্ষার্থীরা পাঁচটি মৌলিক ইবাদতের নাম খাতায় লিখবে।
আরও দেখুন...