সূত্র ও নীতিগাথা

অষ্টম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - বৌদ্ধ ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা - | NCTB BOOK
1

পঞ্চম অধ্যায়

সূত্র ও নীতিগাথা

তথাগত বুদ্ধ বিভিন্ন সূত্র ও নীতিগাথা ভাষণের মাধ্যমে ধর্মোপদেশ দান করতেন। সূত্রপিটকের বিভিন্ন গ্রন্থে এসব সূত্র ও নীতিগাথা পাওয়া যায়। এসব সূত্র ও নীতিগাথা মানুষের নৈতিক ও মানবিক গুণাবলির বিকাশ সাধন করে এবং পরিবার ও সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এই অধ্যায়ে আমরা দুটি সূত্র পাঠ করব। সূত্র দুটি হলো পরাভব সূত্র ও কলহ বিবাদ সূত্র ।

এ অধ্যায় শেষে আমরা-

* পরাভব সূত্র এবং কলহ-বিবাদ সূত্রের পটভূমি বর্ণনা করতে পারব।

* মানব জীবনের পরাজয় ও কলহ বিবাদের কারণগুলো ব্যাখ্যা করতে পারব।

* পরাভব এবং কলহ বিবাদ সূত্র পাঠে কীভাবে নৈতিক জীবন গঠন করা যায় তা বিশ্লেষণ করতে পারব।

* পরাভব ও কলহ-বিবাদ হতে বিরত থাকার উপায়সমূহ বর্ণনা করতে পারব ।

পাঠ : ১

পরাভব সূত্রের পটভূমি

একবার দেবতাগণের অনুরোধে তথাগত বুদ্ধ মানুষ ও প্রাণীর কীসে মঙ্গল হয় তা বর্ণনা করে মঙ্গল সূত্র দেশনা করেন। দেবতারা মঙ্গলসূত্র শুনে সন্তুষ্ট হন। কিন্তু তাঁরা চিন্তা করলেন, আমরা কেবল মঙ্গল সম্পর্কেই জেনেছি। কেন মানুষের পরাভব বা অমঙ্গল হয় তা জানি না। অতঃপর তাঁরা সিদ্ধান্ত নিলেন, পুনরায় বুদ্ধের কাছে গিয়ে কেন মানুষের পরাভব হয় তা জানবেন । এরূপ ভেবে তাঁরা পুনরায় বুদ্ধের নিকট গেলেন। তখন তথাগত বুদ্ধ শ্রাবস্তীর অনাথপিত্তিকের জেতবন বিহারে বসবাস করছিলেন । তাঁরা বুদ্ধের নিকট উপস্থিত হয়ে অভিবাদনপূর্বক মানুষের পরাভবের কারণ জিজ্ঞাসা করলেন। ভগবান বুদ্ধ মানুষের পরাজয়ের সঠিক কারণগুলি যে সূত্রে উল্লেখ করেন তার নাম 'পরাভব সূত্র'। সূত্রটি 'খুদ্দক নিকায়'-এর অন্তর্গত সুত্তনিপাত গ্রন্থে বর্ণিত আছে।

অনুশীলনমূলক কাজ

পরাভব সূত্রটি বুদ্ধ কাদের উদ্দেশ্যে দেশনা করেছিলেন? পরাভব সূত্র কোন গ্রন্থে বর্ণিত আছে?

82

বৌদ্ধধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা

বাংলা অনুবাদ : জ্ঞানী ব্যক্তির জয় হয় এবং অজ্ঞানীর পরাজয় ঘটে, ধর্মানুরাগীর জয় হয় কিন্তু ধর্ম বিদ্বেষীর পরাজয় হয়।

২। অসন্তস পিযা হোন্তি, সন্তে ন কুরুতে পিযং,

অসতং ধম্মং রোচেতি, তং পরাভবতো মুখং।

বাংলা অনুবাদ : অসৎ যার প্রিয়, সৎ যার অপ্রিয়, এবং অধর্ম যার প্রিয় তার পরাজয় হয়ে থাকে ।

৩। নিন্দাসীলি সভাসীলি, অনুঠাতা চ যো নরো, অলসো কোধপঞঞানো, তং পরাভবতো মুখং।

বাংলা অনুবাদ যে খুব ঘুমায়, বন্ধুদের সংগে অনেকক্ষণ গল্প করে সময় কাটায়, অলস, উদ্যমহীন ও রাগী তার পরাজয় হয়ে থাকে।

৪। যো মাতরং বা পিতরং বা, জিন্নকং গতযোব্বনং,

পহুসন্তো ন ভরতি, তং পরাভবতো মুখং ।

বাংলা অনুবাদ যে নিজে সুখে থেকে বৃদ্ধ পিতামাতার ভরণ-পোষণ করে না তার পরাজয় হয়ে থাকে।

৫। যো ব্রাহ্মণ‍ বা সমণং বা, অঞঞং বাপি বনিব্বক, মুসাবাদেন বঞ্চেতি, তং পরাভবতো মুখং।

বাংলা অনুবাদ : যে ব্যক্তি ব্রাহ্মণ, শ্রমণ অথবা অন্য অসহায় লোককে মিথ্যা কথা বলে বঞ্চনা করে তার

পরাজয় ঘটে।

৬। পহুতবিত্তো পুরিসো সহির ঞো সভোজনো, একো ভুঞ্জতি সাদুনি- তং পরাভবতো মুখং ।

বাংলা অনুবাদ : যার অনেক ধনসম্পত্তি থাকতেও অন্যকে বিন্দুমাত্র দান করে না বা দেয় না, নিজেই একা ভোগ করে তার পরাজয় ঘটে থাকে।

৭। জাতিখণ্ডো ধনথন্ধো, গোত্তথন্ধো চ যো নরো,

সং জ্ঞাতিং অতিমঞ জ্ঞাতে, তং পরাভবতো মুখং ।

বাংলা অনুবাদ যে জাতিগর্বে, ধনগর্বে ও কুলগর্বে নিজের জ্ঞাতিদের অবজ্ঞা করে তার পরাজয় হয়ে থাকে।

সূত্র ও নীতিগাথা

80

৮। ইথিধুত্তো সুরধুত্তো, অধুত্তো চ যো নরো, লিঙ্কং লম্বং বিনাসেতি, তং পরাভবতো মুখং ।

বাংলা অনুবাদ : যে ব্যক্তি পরস্ত্রীতে আসক্ত হয়ে এবং মাদক ও জুয়া খেলায় মত্ত হয়ে যা রোজগার করে তা ব্যয় করে তার পরাজয় ঘটে।

৯। অতীত যোবনো পোসো, আনেতি ডিম্বরুখনিং, তসা ইসা ন সুপতি, তং পরাভবতো মুখং ।

বাংলা অনুবাদ : যে বৃদ্ধ তরুণী কন্যা বিবাহ করে এনে, ঈর্ষায় বিনিদ্রা রজনী যাপন করে পরাজয়ের কারণ হয়।

১০। ইথি সোণ্ডীং বিক্রিরণিং, পুরিসং বাপি তাদিসং ইসসরিযস্মিং ঠপেতি, তং পরাভবতো মুখং।

বাংলা অনুবাদ : মাদকসেবনকারী, অনর্থক অর্থ ব্যয়কারী স্ত্রী বা পুরুষকে সম্পত্তির উত্তরাধিকার নিযুক্ত করলে তা পরাজয়ের কারণ হয়।

১১ । অপপভোগো মহাতগৃহো, খণ্ডিযে জাযতে কুলে, সো চ রজ্জং পথযতি, তং পরাভবতো মুখং ।

বাংলা অনুবাদ : যে ক্ষত্রিয় কুলে জন্ম নিয়েও দরিদ্র ও হীনবল অথচ তার আকাঙ্ক্ষা খুব বেশি এবং এই আকাঙ্ক্ষার বশবর্তী হয়ে সে রাজ্য পাওয়ার ইচ্ছা করে তার পরাজয় ঘটে থাকে।

১২। এতে পরাভবে লোকে, পণ্ডিতো সমবেথি, অরিষদসন সম্পন্নো, সলোকং ভজতে সিবস্তি ।

বাংলা অনুবাদ: পরাজয়ের ঐসব কারণ বুঝে যিনি ঐ সকল কর্ম বর্জন করে কুশল কাজসমূহ সম্পাদন করেন তাঁর কখনো পরাজয় হয় না ।

অনুশীলনমূলক কাজ

পরাজয়ের কারণগুলি দলগত আলোচনার পরে উপস্থাপন করো

88

বৌদ্ধধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা

পাঠ : ৩

পরাভব সূত্রের তাৎপর্য

পরাভব বলতে এই সূত্রে পরাজয় বা পতন বোঝানো হয়েছে। নানা অকুশল কর্ম করার জন্য মানুষের পতন বা ক্ষতি হয়ে থাকে। ভ্রান্ত দৃষ্টি সম্পন্ন মানুষ সত্যিকারের পরাজয় বা পতন চিহ্নিত করতে পারে না। অজ্ঞতার কারণে অনেক সময় যাকে পরাজয় মনে করে তা আসলে পরাজয় নয়। অসৎ সঙ্গীর সঙ্গে মিশতে না দিলে অনেক সময় মনে রাগ হয়, নিজেকে অজ্ঞতাবশত পরাজিত মনে হয় কিন্তু অসৎ সঙ্গই পরাজয় ঘটায়। সৎসঙ্গ মানুষের প্রকৃত উপকার সাধন করে। অলস ব্যক্তির পরাজয় ঘটে। জীবনে সফলতা অর্জন করতে পারে না। জ্ঞানী ও ধার্মিক ব্যক্তির সর্বত্র জয় হয়, সাফল্য অর্জিত হয়। অকুশল বা অসৎভাবে অর্জিত সম্পদ মানুষের পরাজয় ঘটায়। মাদক সেবন করলে অর্থ, স্বাস্থ্য, সম্মান ও জীবন নাশ হয়। মাদকসেবীর পরাজয় বা পতন ঘটে। অন্যায় লোভ ও আকাঙ্ক্ষা পরাজয়ের কারণ । এভাবেই বুদ্ধ পরাজয়ের যথোপযুক্ত কারণসমূহ 'পরাভব সূত্রে ব্যাখ্যা করেছেন। জ্ঞানী ব্যক্তিরা পরাজয়ের ঐ সব কারণসমূহ বর্জন করে চলেন, ফলে তাঁদের সাফল্য বা জয় হয় । আমাদেরও উচিত এই সূত্রে বর্ণিত পরাজয়ের কারণসমূহ বর্জন করে কুশলকর্ম সম্পাদনপূর্বক সৎপথে জীবন পরিচালনা করা। এতে আমাদের জীবনে সাফল্য আসবে, জন্মান্তরেও এই কুশল কর্মের ফলে উন্নত জীবন লাভ করা যাবে। কুশলকর্মের ফল শুধু নিজেই নয়, তার উত্তরাধিকারীগণ এবং সমাজ ও সকল প্রাণী ভোগ করে। পরাভব সূত্রের উপদেশগুলো মানুষের নৈতিক জীবন গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই, পরাভব সূত্রের শিক্ষা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ।

অনুশীলনমূলক কাজ

পরাভব সূত্র কেন গুরুত্বপূর্ণ ।

পাঠ : ৪

কলহ-বিবাদ সূত্র

মানুষ যে সকল অকুশল বা মন্দ কাজ করে তার মধ্যে কলহ-বিবাদ অন্যতম। কীভাবে কলহ-বিবাদ বর্জন করে ভালো কাজ করা যায় তা জানার জন্য কলহ-বিবাদের কারণ জানা আবশ্যক। সেজন্য ভগবান বুদ্ধ দেবতাদের অনুরোধে কলহ-বিবাদ সূত্রটি দেশনা করেন । এখানে সূত্রটি পালি ও বাংলায় বর্ণিত হলো।

কলহ-বিবাদ সূত্র (পালি ও বাংলা)

১। কুতোপহুতা কলহা বিবাদা, পরিদেবসোকা সহ মচ্ছরা চ; মানাভিমানা সহপেসুণা চ, কুতোপহুতা তে তদিজা ৰুহি।

সূত্র ও নীতিগাথা

বাংলা অনুবাদ : কোথা হতে কলহ, বিবাদ, পরিদেবন, শোক, মাৎসর্য, গর্ব, আত্মপ্রশংসা, পৈশুন্য ইত্যাদির সৃষ্টি হয়- তা দয়া করে প্রকাশ করুন

২। পিযল্পহুতো কলহা বিবাদা, পরিদেবসোকা সহমচ্ছর চ মানাতিমানা সহপেসুণা চ মচ্ছেরযুক্তা কলহা বিবাদা, বিবাদা জাতেসু চ পেসুণানি

বাংলা অনুবাদ: প্রিয়বস্তু হতে কলহ, বিবাদ, শোক, মাৎসর্য, গর্ব, আত্মপ্রশংসা, পৈশুন্য ইত্যাদির

সৃষ্টি হয়, কলহ ও বিবাদ মাৎসর্যের সাথে যুক্ত, বিবাদ থেকে পৈশুন্যের জন্ম হয় ।

৩। পিয়া সু লোকস্মিং কুতোনিদানা, যে চাপি লোভা বিচরস্তি লোকে; আসা চ নিটাঠা চকুতোনিদানা, যে সম্পরাযায নরস হোস্তি।

বাংলা অনুবাদ : জগতে কীভাবে প্রিয়বস্তু সমূহের উৎপত্তি হয়? জগতে বিদ্যমান লোভ, বাসনা ও

পূর্ণতা, যা হতে মানুষের ভবিষ্যত জন্ম নির্ধারিত হয়, এসবের উৎপত্তি কীভাবে হয়?

৪। ছন্দানিদানানি পিখানি লোকে, যে চাপি লোভা বিচরস্তি লোকে; আসা চ নিষ্ঠা চকুতো নিদানা, যে সম্পরাযায় নরসূস হোস্তি।

বাংলা অনুবাদ : জগতে ছন্দ (ইচ্ছা) নিদান (কারণ) হতে প্রিয় বস্তুসমূহের সৃষ্টি হয়। সংসারে যার সাহায্যে মানুষের ভবিষ্যত নির্ধারিত হয়, সেই লোভ, বাসনা ও পূর্ণতা - এ সবই ছন্দ (ইচ্ছা) হতে সৃষ্টি হয়ে থাকে

৫। ছন্দো নু লোকস্মিং কুতোনিদানো, বিনিচ্ছা চাপিং কুতোপহুতা, কোধো মোসবজ্জঞ্চ কথংকতা চ, যে বাপি ধম্মা সমণেন বুত্তা।

বাংলা অনুবাদ: জগতের ছন্দ (ইচ্ছা) কোন কারণের দ্বারা উৎপন্ন হয়? বিনিশ্চয় কিরূপে উৎপন্ন হয়, ক্রোধ, মিথ্যাকথা, সন্দেহ এবং শ্রমণের সাহায্যে কথিত ধর্মসমূহের উৎপত্তি কোথা হতে হয়?

৬। সাতং অসাভস্তি যমাহু লোকে, তপনিসায় পহোতি ছন্দো; রূপেসু দিম্বা বিভবং ভবঞ্চ, বিনিচছয়ং কুব্বতি জন্তু লোকে ।

বাংলা অনুবাদ : জগতে যা আনন্দ (সাত) এবং অপ্রীতিকরতা (অসাত) বলা হয়, তার মাধ্যমেই বাসনার উৎপত্তি হয়; সমস্ত রূপসমূহের ক্ষয় ও সৃষ্টি দর্শন করে মানুষ সংসারে সংকল্প করে থাকে ।

৭। কোধো মোসবজ্জঞ্চ কথংকতা চ, এতেপি ধম্মা দ্বযমের সন্তে;

কথংকরী জ্ঞাণপথায় সিক্‌খে, এত্বা পত্তা সমণেন ধম্মা

বৌদ্ধধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা

বাংলা অনুবাদ ক্রোধ, মিথ্যাকথা এবং সন্দেহ এরাও দু'প্রকার ধর্ম (আনন্দ ও অপ্রীতিকরতা) হতে উৎপন্ন হয়, সংশয়াভিভূত জ্ঞানমার্গে শিক্ষিত হবেন, জ্ঞান দ্বারাই শ্রমণ কর্তৃক ধর্মসমূহ ঘোষিত হয়েছে।

৮। সাতং অসাতঞ্চ কুত্তোনিদানা, স কস্মিং অসন্তে ন ভবন্তি হেতে; বিভবং ভবঞ্চাপি যমেতমত্থং, এতং মে পরুহি যতোনিদানা ।

বাংলা অনুবাদ : আনন্দ ও অপ্রীতিকরতার উৎপত্তির কারণ কোথায়, কোন বস্তুর অভাব হলে এদের উৎপত্তি হয় না? ধ্বংস ও সৃষ্টি রূপ সংস্কার কোন কারণ হতে উৎপন্ন হয়, প্রকাশ করুন

৯। ফসনিদানং সাতং অসাতং, ফসে অসন্তে ন ভবস্তি হেতে বিভবং ভবঞ্চাপি যমেতমত্থং, এতং মে পরুহি কুত্তোনিদানং

বাংলা অনুবাদ : স্পর্শের কারণ হতে আনন্দ ও অপ্রীতিকরতার সৃষ্টি হয়; স্পর্শের অভাব হলে তাদের সৃষ্টি হয় না; ধ্বংস ও সৃষ্টি রূপ সংস্কারও তা থেকেই উৎপন্ন হয় ।

১০। ফসো নু লোকস্মিং কুতোনিদানো, পরিস্হা চাপি কুতোপহুতা

কিস্মিং অসন্তে ন মমত্তং নথি, কস্মিং বিভূতে ন ফুসন্তি ফসা

বাংলা অনুবাদ : জগতে স্পর্শের উৎপত্তি কোথায়, আসক্তি কী কারণে উৎপন্ন হয়, কোন বস্তুর অভাবে মমত্বের অস্তিত্ব নাই, কীসের নাশ হলে স্পর্শসমূহ স্পর্শে বিরত হয়?

১১। নামক রূপঞ্চ পটিচ্চ ফসো, ইচ্ছা নিদানানি পরিগৃগহানি;

ইচ্ছায় সন্ত্য ন মমত্তং অর্থি, রূপে বিভূতে ন ফুসপ্তি ফসা ।

বাংলা অনুবাদ: নাম রূপের কারণ হতে স্পর্শ সৃষ্টি হয়, ইচ্ছানিদানই আসক্তির উৎপত্তির কারণ; ইচ্ছা না থাকলে মমত্বের অস্তিত্ব থাকে না, রূপের নাশ হলে স্পর্শ সমূহ স্পর্শ করতে পারে না।

১২। কথং সমেত বিভোতি রূপং, সুখং দুখঞ্চাপি কথং বিভোতি;

এতং মে পকুহি যথা বিভোতি তং জানিয়ামাতি মে মনো অহু ।

বাংলা অনুবাদ : কী রকম অবস্থায় রূপের নাশ হয়, সুখ ও দুঃখের ধ্বংস কীসে হয়? এর ক্ষয় কী রূপে হয় তা প্রকাশ করুন, আমরা জেনে নেব, এই আমার মনস্কাম ।

১৩ । ন সঞঞসক্রী ন বিসঞস ঞঞী, নোপি অসী ন বিস্তৃতসঞ্জী; এবং সমেতস বিভোতি রূপং, সজ্ঞানিদানা হি পপঞ্চসঙ্গা ।

সূত্র ও নীতিগাথা

89

বাংলা অনুবাদ : ইন্দ্রিয়সমূহ সংজ্ঞাযুক্ত হবে না, মিথ্যা সংজ্ঞাযুক্তও হবে না, সংজ্ঞাহীনও হবে না, সংজ্ঞা পরিত্যক্তও হবে না, এভাবে অবস্থান করলে রূপের নাশ হয়, প্রপঞ্চসমূহ সংজ্ঞার কারণেই উৎপন্ন হয়ে থাকে ।

১৪ যং তং অপুচ্ছিম্হ তাকিওযী নো, অঞং তং পুচ্ছাম তদিঙ্খ ব্রুহি; এভাবতঙ্গং নু বদন্তি হেলোকে যচিত্তমম সুদ্ধিং ইধ পন্ডিতাসে;

উদাহু অঞঞম্পি বদস্তি এত্তো ।

বাংলা অনুবাদ : আপনাকে যা জিজ্ঞাসা করেছিলাম, তার উত্তর আপনি দিয়েছেন; আপনাকে এখন অন্য প্রশ্ন করব, তা প্রকাশ করুন; এই জগতে কোনো পন্ডিত চিত্ত শুদ্ধিকেই কি শ্রেষ্ঠ জিনিস বলেন না, অথবা তাঁরা কি অন্যরকম বলেন?

১৫। এত্তাবত'গম্পি বদন্তি হেলোকে, চিত্তস সুদ্ধিং ইধ পণ্ডিতাসে; তেসং পনেকে সময়ং বদন্তি, অনুপাদিসেসে কুসলা বদানা ।

বাংলা অনুবাদ: কোন কোন পণ্ডিতলোক চিত্তশুদ্ধিকেই শ্রেষ্ঠ জিনিস বলে থাকেন, কিন্তু তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ উচ্ছেদ হয়ে যাওয়াকে শ্রেষ্ঠ মনে করে থাকেন, জ্ঞানীগণ স্কন্ধসমূহের সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হওয়াকেই শ্রেষ্ঠ বলে থাকেন ।

১৬। এতে চ ঞত্ত্বা উপনিসিতাতি, আত্বা মুনী নিসসবে সো বিমংসী, ত্ত্বা বিমুত্তো ন বিবাদ 'মেতি, ভবাভবায় ন সমেতি ধীরোতি।

বাংলা অনুবাদ: এঁদের 'আশ্রয়াধীন' জেনে, আশ্রয়সমূহ পরিজ্ঞাত হয়ে, বিমুক্ত হয়ে, অন্বেষণকারী মুনি বিবাদে নিযুক্ত হন না, জ্ঞানীলোক বার বার জন্মগ্রহণ করেন না ।

পাঠ : ৫

কলহ-বিবাদ সূত্রের তাৎপর্য

কলহ-বিবাদ সূত্রে আমরা বুদ্ধের ধর্মের মূল দর্শন সম্পর্কে জানতে পারি। এই সূত্রে নিহিত আছে কলহের কারণ ও কলহ হতে মুক্তির উপায়। এই সূত্রটির যেমন আছে আধ্যাত্মিক তাৎপর্য তেমন আছে জাগতিক বিষয়ে দিক নির্দেশনা। প্রিয়বস্তু হতে কলহ, বিবাদ, শোক, মাৎসর্য, গর্ব, আত্মপ্রশংসা, পৈশুনা ইত্যাদির সৃষ্টি হয়। জগতে বিদ্যমান লোভ ও বাসনা থেকে প্রিয়বস্তু উৎপন্ন হয় ইচ্ছা থেকেই লোভ বাসনা উৎপন্ন হয়। আনন্দ (সাত) এবং অপ্রীতিকরতা থেকে ইচ্ছা উৎপন্ন হয়। স্পর্শের কারণে আনন্দ ও অপ্রীতিকরতার সৃষ্টি হয়। নাম রূপের কারণে স্পর্শ সৃষ্টি হয় ইচ্ছানিদানই আসক্তি উৎপত্তির কারণ। ইন্দ্রিয়সমূহ সংজ্ঞাযুক্ত হবে না, মিথ্যা সংজ্ঞাযুক্তও হবে না, সংজ্ঞাহীনও হবে না, সংজ্ঞা পরিত্যক্তও হবে না, এভাবে অবস্থান করলে রূপের নাশ হয় রূপের নাশ হলে স্কন্ধসমূহের বিনাশ ঘটে । ফলে কলহ-বিবাদ উৎপন্ন হয় না ।

জ্ঞানী ব্যক্তিরা বাসনা ক্ষয় করে নির্বাণের পথে এগিয়ে যান। ফলে জ্ঞানীরা নির্বাণ সাক্ষাৎ করতে সক্ষম হন এবং পুনরায় জন্মগ্রহণ করেন না। জন্ম নিরোধ হলে দুঃখের নিরোধ হয়। এই সূত্র আমাদের কলহের কারণ যেমন নির্দেশ করে তেমনিই কলহ হতে বিরত থাকার উপায়ও নির্দেশ করে। ফলে এ সূত্র অনুসরণ করে আমরা শান্তিপূর্ণ জীবনগঠনের শিক্ষা লাভ করতে পারি। তাই কলহ-বিবাদ সূত্রের শিক্ষা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ।

অনুশীলনীমূলক প্রশ্ন

প্রিয়বস্তু হতে কি কি উৎপন্ন হয় বলো ক্রোধ, মিথ্যাকথা এবং সন্দেহ কেন উৎপন্ন হয়?

Content added || updated By
Promotion