২৫ মার্চ রাতে গোলাগুলি শুরু হলে ভাগ্যক্রমে বেঁচে যায় সাজিদ। দুদিন পরে গ্রামে চলে আসে । গ্রামের অবস্থা দেখে সে বিহ্বল হয়ে পড়ে। অনেক বাড়ি পুড়ে গেছে। মানুষও খুব একটা চোখে পড়েছে না। সে বুঝতে পারে মিলিটারির তাণ্ডব থেকে গ্রামও রক্ষা পায়নি তার মনে পড়ে ৭ মার্চের ভাষণের কথা। সেও মনে মনে যুদ্ধে যাবার সিদ্ধান্ত নেয়। এদিকে তার বাবা মতিন সাহেব শান্তি কমিটি গঠন করে মিলিটারিদের সহায়তা করছে। সাজিদের খুব খারাপ লাগে। সাজিদ বাবাকে বুঝানোর অনেক চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। শেষ পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেওয়ার জন্য সে বাড়ি ছেড়ে চলে যায়।
চকচকে রোদ। সড়কের উত্তরে কিশোর রেজাউল লাঙ্গল-জোয়াল কাঁধে, দুটো গরু খেদিয়ে মাঠ থেকে বাড়ি ফিরছে। "মুক্তি। মুক্তি!" একজন মিলিটারি চিৎকার করে ওঠে। শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান আয়নাল বলে, "যুক্তি নেহি ক্যাপ্টেন সাব, উয়ো কৃষক হ্যায়, মেরা চেনা-জানা হ্যায়।” বেঁচে যায় রেজাউল। বাবার মৃত্যুর পর অল্প বয়সেই তাকে সংসারের হাল ধরতে হয়েছে। ভীষণ সাহসী ছেলে। গ্রাম ছেড়ে সবাই পালালেও সে গ্রামেই আছে। আয়নালকে সে চাচা বলে ডাকলেও মিলিটারিদের সহায়তা করে বলে মন থেকে ঘৃণা করে। এ গ্রামের আসাদ তার কাছে সবচেয়ে প্রিয়। আসাদ শিক্ষিত ছেলে। সে গ্রামের যুবকদের রাইফেল চালানো শিখিয়েছে। আয়নালের সাথে মিলিটারিদের গোপন আলাপের কিছু জানলে রেজাউল গোপনে আসাদকে বলে দেয়।
গৃহস্থবাড়ির বড় বউ রূপভান। রান্নার জন্য লাকড়ির ঘর থেকে লাকড়ি নিতে গেলে তার হাতে গোখরো সাপে দংশন করে। বাড়ির লোকেরা সাথে সাথে তার হাত শক্ত করে বেঁধে ওঝাকে খবর দেয়। ওঝার দল এসে ক্ষত পরীক্ষা করে মন্ত্র পাঠ করতে শুরু করে। প্রতিবেশী রুস্তম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। সে হতবাক হয়ে ঘটনা দেখছিল। এবার সে প্রতিবাদ করে বলে “গত বছর হারুনকে সাপে কাটলে এই ওঝারাই ঝাড়-ফুঁক করেছিল। কিন্তু হারুন বাঁচেনি।” ওঝা ক্ষেপে গিয়ে রুস্তমের গায়ে বিষ পার করে দেওয়ার ভয় দেখায়। রুস্তম কারও কোনো কথা না শুনে রূপভানকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। প্রাণে বেঁচে যায় রূপভান।
এবারের এসএসসি পরীক্ষায় দোডাঙ্গী গ্রামের হাকিমের মেয়ে ফাতেমা ও আলতাফের মেয়ে শাপলা জিপিএ-৫ পেয়েছে। তাদের বাড়িতে আনন্দের বন্যা বইল। সাথে সাথে ঘটকের আনাগোনা গেল বেড়ে। অবস্থাপন্ন এক ব্যবসায়ীর সাথে ফাতেমার বিয়ে দিল হাকিম। কিন্তু আলতাফ তার মেয়েকে কলেজে ভর্তি করে দেয়। কিছুদিন পর অভাব- অনটনের কারণে সেও শাপলাকে বিয়ে দেওয়ার কথা ভাবে। কিন্তু শাপলা বাবাকে বুঝিয়ে অতি কষ্টে পড়ালেখা চালিয়ে নেয়। এম.এ. পাস করে এখন সে স্কুলশিক্ষক হয়েছে। শিক্ষার্থীরা তাকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়।