বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের মহাবিপদ মানবতার জন্য এক কঠিন চ্যালেঞ্জ। যেমন- ঢাকার রিজেন্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মতো অর্থলোভীরা করোনা পরীক্ষা না করে ভুয়া রিপোর্ট দিয়ে অসুস্থ মানুষের জীবন ঝুঁকিপূর্ণ করেছে। অন্যদিকে বগুড়ার দরিদ্র নাজিম উদ্দিন তার ঘর বানানোর জন্য জমানো টাকা করোনায় কর্মহীন, দরিদ্র, ক্ষুধার্ত, অসহায় মানুষের মাঝে চাল, ডাল, আলু বিতরণে ব্যয় করে মানবতার নজির দেখিয়েছেন।
ভূমিহীন মোবারক আলীর সরকারি 'আশ্রয়ণ' প্রকল্পে মাথা গোঁজার ঠাঁই হলেও, রিক্সা চালানোর আয় দিয়ে তার ৭ জনের সংসার চালানো কষ্টকর। এর মাঝে মহামারি করোনার প্রভাবে একদিকে আয় কমেছে, অন্যদিকে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির কারণে প্রয়োজনীয় খাবারের অভাবে পরিবারের সদস্যরা অপুষ্টিতে ভুগছে। রোগব্যাধি ছাড়ছেই না, পুরাতন কাপড়েই চলতে হচ্ছে, আর সন্তানদের লেখাপড়াতো চিন্তারই বাইরে।
জ্বর-কাশি, শ্বাসকষ্টের জটিলতায় দরিদ্র রাজিয়াকে ময়মনসিংহ মেডিকেলে আনার পর হাসপাতালের বিশেষ শাখার সমাজকর্মী তার ভর্তি, পরীক্ষা-নিরীক্ষা, ঔষধ, অক্সিজেনসহ প্রয়োজনীয় সহায়তা দেন। তিনি রোগীর ভয় উৎকণ্ঠা দূর করতে মানসিক সমর্থন প্রদান করেন; এমনকি চিকিৎসা পরবর্তী সুস্থতায় স্বাস্থ্যবিধি পালনে খোঁজখবর রাখেন ।
বাবা-মায়ের উদাসীনতার সুযোগে দুষ্ট বন্ধুদের প্ররোচণায় কৌতূহলী হয়ে যুবক রবিন প্রথমত সিগারেট, পরে গাঁজা, ফেন্সিডিল, এক পর্যায়ে ইয়াবা সেবনে আসক্ত হয়ে বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। এর ভয়াবহতা ক্রমেই বাড়ছে এবং আরো উদ্বেগের কারণ হলো ১৫- ৪০ বছর বয়সীরা বেশি হারে আসক্ত হচ্ছে, ফলে সৃজনশীল যুব সমাজ ধ্বংসের দিকে পা বাড়াচ্ছে।
ছেলেবেলায় বাবা মারা যাওয়ার পর চাচার সহযোগিতায় অনেক কষ্টের মধ্য দিয়ে লেখাপড়া শেষ করে রাইসুল ইসলাম প্রথম শ্রেণির চাকরিতে কর্মরত। মায়ের ইচ্ছায় পারিবারিক সম্মতিতে সমাজস্বীকৃত পন্থায় ও ধর্মীয় বিধি অনুসারে নাফিসাকে তিনি জীবনসঙ্গী হিসেবে গ্রহণ করেন । এখন তিনি মা, দুই সন্তানসহ সবাইকে নিয়ে ভাল আছেন ।
১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে বিপর্যস্তদের মানবিক ও ত্রাণ সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে সংস্থাটি "Alleviation of Poverty and Empowerment of Poor"- স্লোগানকে ধারণ করে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি, দারিদ্র্য বিমোচন ও স্বাবলম্বিতা অর্জনে ক্ষুদ্র ঋণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনার মাধ্যমে দেশের সর্ববৃহৎ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।
সরকারি উদ্যোগে ও জাতিসংঘের সহযোগিতায় প্রথমে ঢাকা শহরে কর্মসূচিটি চালু হয় । পরবর্তীতে সরকারের একটি জাতীয় কর্মসূচি হিসেবে শহরাঞ্চলের পিছিয়ে পড়া বেকার, দরিদ্র, বস্তিবাসী ও স্বল্প আয়ের মানুষদের কারিগরি প্রশিক্ষণ, সুদমুক্ত ও ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে কর্মসংস্থান, আয় বৃদ্ধি তথা শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পুষ্টি, পরিবেশ উন্নয়নমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
দেশের বিভিন্ন শিল্প কারখানার বর্জ্যে নদী-নালার পানি দুর্গন্ধযুক্ত, মাছশূন্য হওয়ার পাশাপাশি ধোঁয়ার বাতাস দূষিত ও স্বাস্থ্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এছাড়া সবুজ বনাঞ্চল ধ্বংস ও বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে ঘন ঘন বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, সাইক্লোনের মতো দুর্যোগ প্রায়শই ঘটছে । তবে বৃক্ষ নিধন রোধ করে 'গাছ লাগাও, পরিবেশ রক্ষা করো'— এই স্লোগানের সঠিক বাস্তবায়ন ঝুঁকি কমানোর সহায়ক।