নীরব ভাষায় বৃক্ষ আমাদের সার্থকতার গান গেয়ে শোনায়। অনুভূতির কান দিয়ে সে গান শুনতে হবে । তাহলে বুঝতে পারা যাবে জীবনের মানে বৃদ্ধি, ধর্মের মানেও তাই। প্রকৃতির যে ধর্ম মানুষের সে ধর্ম; পার্থক্য কেবল তরুলতা ও জীবজন্তুর বৃদ্ধির ওপর তাদের নিজেদের কোন হাত নেই, মানুষের বৃদ্ধির ওপর তার নিজের হাত রয়েছে। আর এখানেই মানুষের মর্যাদা। মানুষের বৃদ্ধি কেবল দৈহিক নয়, আত্মিকও । মানুষকে আত্মা সৃষ্টি করে নিতে হয়, তা তৈরি পাওয়া যায় না ।
ওই যে দাঁড়ায়ে নতশির
মূক সবে, ম্লান মুখে লেখা শুধু শত শতাব্দীর
বেদনার করুণ কাহিনী; স্কন্ধে যত চাপে ভার
বহি চলে মন্দগতি যতক্ষণ থাকে প্রাণ তার-
তার পরে সন্তানেরে দিয়ে যায় বংশ বংশ ধরি,
নাহি ভর্ৎসে অদৃষ্টেরে, নাহি নিন্দে দেবতারে, স্মরি,
মানবেরে নাহি দেয় দোষ, নাহি জানে অভিমান,
শুধু দুটি অন্নখুঁটি কোনমতে কষ্টক্লিষ্ট প্রাণ
রেখে দেয় বাঁচাইয়া ।
হে দেশ আমার, বন্যার মতো
সমস্ত পলিমাটির অভিজ্ঞতাকে গড়িয়ে এনে একটি চেতনাকে
উর্বর করেছি;
এখানে আমাদের মৃত্যু ও জীবনের সন্ধি,
সমুদ্র সৈকতে দুঃসাহসী নাবিকের করোটির ভেতর যেমন
দূরদিগন্তের হাওয়া হাহাকার করে
তেমনি এখানে রয়েছে একটি কোমল নারীর আশাহত সখিনা হৃদয়
এখানে রয়েছে মা আর পিতা,
ভাই আর বোন, স্বজন বিধুর পরিজন
আর তুমি আমি, দেশ আমার।
সুখে থাকিয়া এবং পেট ভরিয়া খাইয়া কিছুদিনের মধ্যে ভিখুর দেহে পূর্বের স্বাস্থ্য ফিরিয়া আসিল। তাহার ছাতি ফুলিয়া উঠিল, প্রত্যেকটি অঙ্গ সঞ্চালনে হাতের ও পিঠের মাংসপেশি নাচিয়া উঠিতে লাগিল। অবরুদ্ধ শক্তির উত্তেজনায় ক্রমে ক্রমে তাহার মেজাজও উদ্ধত অসহিষ্ণু হইয়া পড়িল। অভ্যস্ত বুলি আওড়াইয়া কাতরভাবে সে এখন ভিক্ষা চায়। কিন্তু ভিক্ষা না পাইলে তাহার ক্রোধের সীমা থাকে না। লোকজন না থাকিলে তাহার প্রতি উদাসীন পথিককে অশ্লীল গাল দিয়া বসে। এক পয়সার জিনিস কিনিয়া ফাউ না পাইলে দোকানিকে মারিতে ওঠে। নদীর ঘাটে মেয়েরা স্নান করিতে নামিলে ভিক্ষা চাহিবার ছলে জলের ধারে গিয়া দাঁড়ায়
শনির হাওরের পারে গোটা কয়েক বাড়ি নিয়ে গিয়াসের গ্রাম । ঘর হতে দু'পা ফেলতেই হাওরের শুরু, শেষটা চোখে আন্দাজ করা যায় না। ধান আর মাছ নিয়ে তাদের জীবন। বানের পানিতে ধান তলিয়ে গেলে তারা চোখে অন্ধকার দেখে। অসুখ-বিসুখে ওপাড়ার পিরের পানি আর তেল পড়াই তাদের ভরসা। গত বছর গিয়াস তার নিঃসন্তান স্ত্রীকে নিয়ে শহরে ডাক্তার দেখাতে গিয়েছিল। বেপর্দাভাবে স্ত্রীকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়ায় পিরের বাড়িতে ডাক পড়ল গিয়াসের। তখন আতরের সুবাস আর আগরের ধোঁয়ায় পির সাহেবের মুখ দেখাই যাচ্ছিল না। যেনো অদৃশ্য কণ্ঠের ঘোষণা হলো গিয়াসকে গ্রাম ছাড়তে হবে। পিরের ঘোষণাপত্র তার সাগরেদরা তা বাস্তবায়ন করল।