মতলবপুর গ্রামে সুসজ্জিত স্কুল-কলেজ, হাসপাতাল, খেলার মাঠ, সোনাফলা ফসলি জমি-সবই আছে কিন্তু হাসপাতালের চিকিৎসা বা স্কুল-কলেজের শিক্ষা গ্রহণের জন্য যে আর্থিক সামর্থ্যের প্রয়োজন তা গ্রামের অধিকাংশ মানুষেরই নেই । ফসলি জমির ফসল ওঠে কয়েকটি ভূ-স্বামী পরিবারের গোলায়। তাই অর্ধাহারে, অশিক্ষায় আর চিকিৎসাহীনতায় মানবেতর জীবনযাপন করে মতলবপুর গ্রামের আশি ভাগ মানুষ। বাইরে থেকে দেখলে যে গ্রামকে আদর্শ মনে হয় নিবিড় পর্যবেক্ষণে ভেসে ওঠে সে গ্রামের বঞ্চিত গ্রামবাসীর অসহায় মুখচ্ছবি।
অফিস থেকে ফেরার পথে রাশেদ বাসে দীর্ঘদিন পর দেখতে পেল রাবেয়াকে। মনে পড়ল রাবেয়ার সাথে তার বিয়ে ঠিক হয়েছিল। সমস্ত আয়োজন সম্পন্ন হওয়ার পর হঠাৎ রাশেদের বাবা মোটা অংকের যৌতুক দাবি করে বসে মেয়ের বাবার কাছে। উচ্চশিক্ষিত সুদর্শন পুত্রের জন্য এটা নাকি তার ন্যায্য দাবি। রাবেয়ার বাবার যথেষ্ট সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও তিনি রাজি হলেন না যৌতুক দিতে। ক্ষোভে অপমানে তৎক্ষণাৎ ভেঙে দেন বিয়ে। ক্ষুব্ধ রাবেয়াও সমর্থন করে বাবাকে। বিয়ে ভেঙে গেলেও রাবেয়া থেমে থাকেনি। এক ব্যাংকারকে বিয়ে করে সংসারী হয়েছে। চাকরি করছে একটা কলেজে।
ব্রিটিশ শাসনামলে নীলকর সাহেবরা কৃষকদের অগ্রিম টাকা (দাদন) প্রদান, করে নীল চাষ করতে বাধ্য করত। নগদ টাকা পেয়ে কৃষকরা কিছুদিন আরাম আয়েশে কাটাত। উৎপাদিত নীল যখন ইংরেজরা অতি স্বল্প মূল্যে নিয়ে যেতো তখন খাদ্যাভাব প্রকট হয়ে উঠত। ক্ষুধায় কাতর মানুষগুলো আর দাদন নেবে না বলে প্রতিজ্ঞা করলেও নগদ টাকার লোভ সামলাতে পারত না। বাধ্য হয়ে তারা অল্প অল্প জমি বিক্রি করত। ক্রমশ জমি কমতে থাকায় অভাব আরও মাথাচাড়া দিয়ে উঠত। এভাবেই তারা অভাব-চক্রের মাঝে আবর্তিত হত ।
লোকায়ত বিশ্বাস এই— শুকদেবপুর গ্রামে দূর অতীতে এক মহাপুরুষের জন্ম হয়েছিল। সকল ধর্মের অনুসারীরাই তাঁর কাছ থেকে ইহলৌকিক ও পারলৌকিক মঙ্গল লাভের দিক নির্দেশনা পেতো। মানুষই সকল জ্ঞান আর প্রজ্ঞার আধার; প্রয়োজন কেবল সেই মানবাত্মার জাগরণ—এই ছিল মানবপ্রেমিক মহাপুরুষের সাধনার মূলকথা। তাঁর শিক্ষা ধারণ করে শুকদেবপুর গ্রাম সুখ-শান্তি-সমৃদ্ধির চরম শিখরে পৌঁছেছে। এখানে ভিন্ন ভিন্ন ধর্মের অনুসারীরা ধর্মভীরু হলেও তাদের মধ্যে নেই ধর্মীয় উন্মাদনা; ধর্ম তাদের কাছে শোষণহীন ন্যায় বিচারভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার অবলম্বন ।
প্রবল বন্যায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে পদ্মাতীরবর্তী সোনাখালী গ্রাম। খাদ্য সংকট, রোগ-ব্যাধি প্রতিরোধে কাজ করার চেষ্টা করছে কয়েকজন তরুণ। তাদের সকলেরই মনে পড়ে এলাকার প্রিয় মুখ প্রয়াত গফুর সাহেবের কথা। এলাকার মানুষের যে কোনো বিপদে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে সাহসিকতার সাথে বিপদ মোকাবিলায় গফুর সাহেবের তুলনা ছিল না। এখনো তাই প্রাকৃতিক বা মানবসৃষ্ট যে কোনো সমস্যা মোকাবিলায় গফুর সাহেব প্রেরণার উৎস হয়ে থাকেন ।
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পদ্মানদীর মাঝি' উপন্যাসে পদ্মাপাড়ের জেলে ও মাঝিদের জীবন সংগ্রামের চিত্র ফুটে উঠেছে। তাদের একমাত্র অবলম্বন, সুখ- দুঃখের সাথী পদ্মানদী। জীবন সংগ্রামী এসব জেলেদের মধ্যে কুবের ও তার সঙ্গীদের জীবনাচরণ নিয়ে আবর্তিত হয়েছে উপন্যাসের কাহিনী। বৈচিত্র্যহীন একঘেয়ে তাদের জীবন। ধনঞ্জয়ের নৌকায় মাছ ধরে, কুবের ও গণেশ। মালিক হিসেবে ধনঞ্জয় নেয় অর্ধেক আর কুবের ও গণেশ পায় বাকি অর্ধেক। এছাড়া মাছের সংখ্যা কম দেখিয়ে ধনঞ্জয় তাদের ঠকায়। সব বুঝেও তারা কোন প্রতিবাদ করতে পারে না। এই অবস্থা সর্বত্র, সব নৌকায়। শত শত নৌকায় শত শত কুবের ও গণেশ শ্রম দিয়ে মাছ ধরে। এক সময় কুবেরই কাহিনীর প্রাণকেন্দ্রে এসে দাঁড়ায় সে-ই পদ্মাপাড়ের সকল জেলে-মাঝিদের প্রতিনিধিত্ব করে। তাই “পদ্মানদীর মাঝি” নামকরণের মধ্য দিয়ে ঔপন্যাসিক তার জীবন-সত্যকেই প্রতিষ্ঠা দিয়েছে।
সন্তানতুল্য ছাগশিশুকে কালী দেবীর মন্দিরে বলি দেওয়ায় শোকার্ত অপর্ণা রাজার কাছে বিচারপ্রার্থী হয়। সন্তানহারা ভিখারিণীর দুঃখ রাজাকে মর্মাহত করে। তিনি রাজ্যে পশুবলি বন্ধ করে দেন। কিন্তু রাজার এ আদেশ মেনে নিতে পারে না রাজপুরোহিত রঘুপতি। পৌরহিত্যের দাম্ভিকতা নিয়ে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন তিনি। রাজার অনুজ নক্ষত্ররায়কে রাজ্যলোভে বশ করে রাজাকে হত্যা করতে রাজি করান। রাজা হবার স্বপ্নে বিভোর নক্ষত্ররায়ও রক্তসম্পর্ক ভ্রাতৃপ্রেম ভুলে গিয়ে রাজাকে হত্যার ষড়যন্ত্রে মেতে ওঠে।
ঢাকা জেলার নিচু এলাকার জলাভূমিগুলো ভূমিদস্যুদের কবলে পড়ে ক্রমাগত নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে। দিনের পর দিন মাটি ফেরে ভরাট করা হচ্ছে ঐসব জলাশয়। ফলে ঢাকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যেমন লুপ্ত হচ্ছে তেমনি নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য। সচেতন নাগরিক সমাজ জোরালো প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। মানববন্ধন, অবস্থান ধর্মঘটসহ নানা কর্মসূচি পালন করেছে তারা। কিন্তু ভূমিদস্যুদের তৎপরতা বন্ধ হয় না কিছুতেই।