মাতৃস্নেহের তুলনা নাই, কিন্তু অতিস্নেহ অনেক সময় অমজাল আনয়ন করে। যে স্নেহের উত্তাপে সন্তানের পরিপুষ্টি, তাহারই আধিক্যে সে অসহায় হইয়া পড়ে। মাতৃহৃদয়ে তার প্রাবল্য, মানুষ আপনাকে হারাইয়া আপন শক্তির মর্যাদা বুঝিতে পা অসহায় পক্ষী শাবকের মতো চিরদিন স্নেহাতিশায্যে আপনাকে সে একান্ত নির্ভরশীল মনে করে। ক্রমে জননীর পরম সম্পদ সন্তান অনন, দুর্বল ও পরনির্ভরশীল হইয়া মনুষ্যত্ব বিকাশের পথ হইতে পারে সারিয়া যায়। অনন্ত মাতৃস্নেহ সে কথা বুঝে না।
মিছিলটা তখন মেডিকেলের গেট পেরিয়ে কার্জন হলের কাছাকাছি এসে গেছে। তিনজন আমার পাশাপাশি হাঁটছিলাম। রাহাত স্লোগান দিচ্ছিলো। আর তপুর হাতে ছিলো একটা মস্ত প্ল্যাকার্ড। তার ওপর লালকালিতে লেখা ছিলো, রাষ্ট্রভাষা বংলা চাই। মিলিটা হাইকোর্টের মোড়ে পৌছুতে অকস্মাৎ আমাদের সামনের লোকগুলো চিত্কার করে পালাতে লাগলো চারপাশে। ব্যাপারটা কী বুঝবার আগেই চেয়ে দেখি, প্লাকার্ডসহ মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে তপু। কপালের ঠিক মাঝখানটায় গোল একটা গর্ত। আর সে গর্ত নিয়ে নির্বারের মতো রক্ত করছে তার।
চট্টগ্রামের এক জেলেপাড়ায় হরিশংকর জলদাস জন্মগ্রহণ করেন। দারিদ্র্যপীড়িত জেলে জীবনের সদস্য হলেও আপন প্রতিভাবলে বর্তমানে তিনি একজন প্রতিষ্ঠিত কথাসাহিত্যিক ও গবেষক। বাংলা সাহিত্যে অনাদৃত জেলে জীবন নিয়ে গল্প-উপন্যাস ও গবেষণা কর্মের জন্য একাধিক পুরস্কার পেয়েছেন। জেলেপাড়ার সুবিধা বঞ্চিত, অনাহারক্লিষ্ট মানুষের দুঃখ-কষ্টে জর্জরিত বিপন্নতার এক বৈচিত্র্যময় ভাষাচিত্র তিনি অংকন করেছেন তাঁর কথাসাহিত্যে। তাঁর লেখনী কৃত্রিমতার আবরণে ঢাকা নয়, গভীর মমতায় চিত্রায়িত নিম্নবর্ণের সমাজ জীবনের চালচিত্র বাংলা সাহিত্যের অমূল্য সম্পদে পরিণত হয়েছে।
মাভৈঃ! মাভৈঃ এতদিনে বুঝি জাগিল ভারতপ্রাণ,
সজীব হইয়া উঠিয়াছে আজ শ্মশান-গোরস্থান।
ছিল যারা চির মরণ আহত,
উঠিয়াছে জাগি ব্যথা জাগ্রত,
'খালেদ' আবার ধরিয়াছে অসি, 'অর্জুন' ছোঁড়ে বাণ ।
জেগেছে ভারত ধরিয়াছে লাঠি হিন্দু-মুসলমান
-----------------------------
-----------------------------
প্রভাতে হবে না ভায়ে ভায়ে রণ,
চিনিবে শত্রু, চিনিবে স্বজন ।
বর্ষায় বাংলার প্রকৃতি যেন ভিন্ন এক রূপের পসরা সাজায়। বিলের বুকে কলমিলতা, শাপলার অনাবিল সৌন্দর্য, পানকৌড়ির লুকোচুরি — কার না ভালো লাগে। কিন্তু শিল্পী নাজমা বিলের ধারে বেড়াতে এসেও যেন কেন আনমনা হয়ে আছেন। এমনি এক বর্ষায় নৌকাডুবিতে চিরতরে হারিয়ে যায় তার স্নেহের দুটি ভাই-বোন। শাপলা-শালুকভরা শাশ্বত বাংলার বর্ষা প্রকৃতি দেখেও আজ তাই কণ্ঠশিল্পী নাজমার কণ্ঠে ধ্বনিত হয় না কোনো গান। তার হৃদয় জুড়ে শুধুই বিষণ্ণতা।
উত্তরাঞ্চলকে অনেকেই বলেন, বাহেরমুল্লুক'। সেই 'বাহেরমুল্লুকের অনেক স্থানই ফি-বছর তিস্তা-ব্রহ্মপুত্রের ভয়াল ভাঙনের কবলে পড়ে। এই ভাঙন কবলিত গৃহহীন মনসুর মিয়া সপরিবারে চলে যান সুদূর দক্ষিণের দ্বীপাঞ্চলে। সেখানে ভেষজ চিকিৎসকের পেশায় তাঁর অল্পদিনেই সুনাম হয়। জটিল রোগীর আগমন ঘটলে সরাসরি হাসপাতালে গিয়ে উন্নত চিকিৎসা নেয়ার পরামর্শ দেন। উপার্জনের পয়সায় দ্বিপাঞ্চলে শিক্ষার আলো ছড়ানোর জন্য স্কুল প্রতিষ্ঠার কথাও ভাবেন
মধ্যযুগে বাংলার মুসলিম নারী সমাজ অনেকটাই পিছিয়ে ছিল। শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ তো তারা পেতই না বরং চার দেয়ালে বন্দি জীবন কাটাতে হতো। ধর্মের নামে অধর্মের বেসাতি চালানো হতো তাদের ওপর। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে সর্বদাই নারীরা ছিল অবহেলার পাত্র। নিতান্তই হুকুম পালন ও ঘরকন্না ছাড়া তাদের আর কোন অধিকার ছিল না।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ, পাকিস্তানি বাহিনী গণহত্যা শুরু করলে অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন । শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। তখন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ছিলেন মোনায়েম খাঁ। বাঙালি হয়েও তিনি স্বদেশ ও স্বজাতির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেন। তার সাথে নানা অপতৎপরতায় যুক্ত হয় এ দেশের কিছু দালাল-দোসর মোনায়েম খাঁ ও তার সহযোগী কুলাঙ্গারদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায় হানাদার বাহিনী লাখ লাখ দেশপ্রেমিক বাঙালিকে হত্যা করে ।