সমাজপতিদের চাপে পড়ে শেষ পর্যন্ত সৌদামিনী প্রকাশ করতে বাধ্য হয় যে, তার পালিতপুত্র হরিদাস নমশূদ্র নয়, সে মুসলমানের ঔরসজাত। হরিদাসও নিশ্চিত হয় সৌদামিনী মালো তার মা নয়। আর এ কথা জেনেই সে নিরুদ্দিষ্ট হয়। ফলে অচিরেই তার মস্তিষ্ক বিকৃতি ঘটে। সমাজের চাপে সৌদামিনীর মাতৃহৃদয়ের বলি ঘটে বটে, তবে তার হৃদয়ের হাহাকার আকাশে বাতাসে ধ্বনিত হতে থাকে। তার দীর্ঘশ্বাসে উচ্চকিত হয়— মাতৃহৃদয়ের কাছে ধর্ম, অর্থ সকলই তুচ্ছ। এভাবেই জয় হয় মানবিক সম্পর্কের।
পদ্মরাগ' উপন্যাসের প্রধান চরিত্র সিদ্দিকা। ব্যারিস্টার লতিফ আলমাসের সঙ্গে তার বিয়ের কথা পাকা হয়। লফিতের চাচার ছিল সম্পদের লোভ কিন্তু সিদ্দিকার বড় ভাই সোলেমান তার বোনকে সম্পত্তি লিখে দিতে অপারগতা প্রকাশ করে। তাই চাচা লতিফ আলমাসকে অন্য এক বিত্তশালী বিধবার কন্যার সঙ্গে বিয়ে দেন। অনেক ঘটনা-দুর্ঘটনার পর সিদ্দিকার সঙ্গে লতিফের যখন দেখা হয় তখন বিপত্নীক লতিফ সিদ্দিকাকে পুনরায় বিয়ের প্রস্তাব দেয়। সিদ্দিকা সবকিছু জানার পর লতিফকে ক্ষমা করে কিন্তু সংসার করার প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয়। কারণ ততদিনে সে নারী মুক্তির লক্ষ্যে বিভিন্ন কার্যক্রমে জড়িত হয়ে জীবনের উদ্দেশ্যকে বদলে ফেলেছে।
অপুর কেমন মনে হয় নিশ্চিন্দিপুরের সেই অপূর্ব মায়ারূপ এখানকার কিছুতেই নাই। কোথায় সে নিবিড় পুষ্পিত ছাতিম বন, ডালে ডালে সোনার সিঁদুর ছড়ানো সন্ধ্যা? আজ কতদিন সে নিশ্চিন্দিপুর দেখে নাই— তিন বৎসর! কত কাল! সে জানে নিশ্চিন্দিপুর তাহাকে দিনে-রাতে সবসময় ডাকে। বাঁশবনটা ডাক দেয়, দেবী বিশালাক্ষী ডাক দেন। এতদিনে তাহাদের সেখানে ইছামতিতে বর্ষার ঢল নামিয়াছে। ঝোপে ঝোপে নাটা কাঁটা, বনকলমীর ফুল ধরিয়াছে । বন অপরাজিতার নীল ফুলে বনের মাথা ছাওয়া ।
'নেলসন ম্যান্ডেলা তুমি' সংগ্রামী চেতনা উজ্জীবিত করার গানের একটি কলি। গানটির লক্ষ্য কিংবদন্তির নায়ক নেলসন ম্যান্ডেলা, যিনি দক্ষিণ আফ্রিকার কালো মানুষের মুক্তির প্রতীক। তিনি সাম্রাজ্যবাদ, বর্ণবাদ, বৈষম্য আর নিপীড়ন বিরোধী আন্দোলনের এক লড়াকু সৈনিক। দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গ শাসক সম্প্রদায় গণ মানুষের আন্দোলনকে নস্যাৎ করতে তাকে জেলে পাঠায় কিন্তু জনতার সংগ্রাম থেমে থাকেনি। কালোদের ‘স্বপ্ন চুরমার' ও অধিকার লুণ্ঠিত, হওয়ার রক্তাক্ত প্রতিবাদে তাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে কেবল ম্যান্ডেলার ছবি। সমগ্র বিশ্বের শান্তিকামী মানুষের চাপে এক সময়ে তিনি কারগার হতে মুক্তিলাভ করেন। আফ্রিকার মানুষের ভালবাসা আর মমত্ববোধে তিনি চির অমর হয়ে আছেন ।
রতনপুর গ্রামের তোতা মিয়া অনেকটা সহজ সরল প্রকৃতির। পিতার রেখে যাওয়া জমিজমা রক্ষা এবং সমাজের প্রথাগত মাতব্বরি করার দায়িত্ব তাকেই পালন করতে হয়। এ কাজে সে চতুর কোব্বাদ মেম্বারের সহযোগিতা নেয়। রতনপুর গ্রামের লোকেরা এখন মেম্বারকেই ভয় পায়। মাতব্বর বলতে তারা মেম্বারকেই বোঝে, প্রয়োজনে তারা মেম্বারের পরামর্শ গ্রহণ করে। এক সময় মেম্বারের কুপরামর্শে তোতা মিয়া তার অনেক প্রিয় বসতবাড়ি ও বাগানবাড়ি মেম্বারের নিকট বিক্রয় করে অসহায় হয়ে পড়ে।
অবস্থাপন্ন কৃষক জমির উদ্দিন তার ছেলেকে ডাক্তার বানানোর ইচ্ছায় শহরে পড়তে পাঠায়। শেষ পর্যন্ত তার ছেলে ফাহাদ ডাক্তারি পাস করে বাবার আশা পূরণ করে। ফাহাদের ইচ্ছা গ্রামের অসহায়, দুস্থ রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে সুস্থ করে তোলা এবং তাবিজ কবজ, ঝাড় ফুঁক প্রভৃতি অন্ধবিশ্বাস, কুসংস্কার হতে গ্রামবাসীকে মুক্ত করা। গ্রামের মসজিদের ইমাম ফতেহ আলী কিন্তু ব্যাপারটা ঠিক পছন্দ করেন না। ফাহাদের বাবাও চান না ছেলে গ্রামে বসবাস করুক। তবে ডাঃ ফাহাদ যে কোনো মূল্যে তার ইচ্ছা পূরণে দৃঢ় প্রত্যয়ী।
মধুমতি নদীতে জেগে উঠেছে চান্দের চর। পলিময় উর্বর সে ভূমি। দেখলে যে কারোরই চোখ টাটায়। মন্তু মিয়াও এর বাইরে নয়। কিন্তু এলাকার প্রবল প্রতাপশালী জমিদারের সঙ্গে লড়বে কে? মন্তু মিয়া তাই গোপনে হাত মেলায় জমিদারের জ্ঞাতি ভাই গজনবী চৌধুরীর সঙ্গে। তার সহায়তায় মত্ত্ব মিয়া এবং তার লাঠিয়াল বাহিনী চরটি দখল করে নেয়। এবার মন্তু মিয়ার নতুন চরের দায়িত্ব নেওয়ার পালা। সে গজনবী চৌধুরীর উপস্থিতি ও দোয়া ছাড়া চান্দের চরের দায়িত্ব গ্রহণ করতে অপারগতা প্রকাশ করে। এভাবেই নদীর বুকে জেগে ওঠা নতুন চর চিরকালের জন্য জমিদারের হাতছাড়া হয়ে যায় ।