রমেশ যে দেশে বসবাস করত, সে দেশটি সামাজিক ক্ষেত্রে নানা বর্ণে ও শ্রেণিতে বিভক্ত ছিল। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে অনৈক্য ছিল। এ পরিস্থিতির সুযোগে পার্শ্ববর্তী রাজ্যের আরো প্রকট। এ সাম্রাজ্যবাদী শাসক তার একজন তরুণ সেনাপতির নেতৃত্বে অভিযান পরিচালনা করে দেশটি করায়ত্ত করেন। কিন্তু সেখানে বিজয়ী শক্তির দীর্ঘস্থায়ী শাসন ব্যবস্থা কায়েম করা সম্ভব হয়নি। তবে এ বিজয়ের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ফলাফল ছিল গভীর ও সুদূরপ্রসারী।
মি. আলেজ উত্তরাধিকারসূত্রে এক বিশাল সম্রাজ্যের অধিপতি হন। ক্ষমতা গ্রহণের পর তিনি লক্ষ করলেন অভ্যন্তরীণ ও বহিঃশত্রর আক্রমণে সাম্রাজ্যের অস্তিত্ব হুমকির সম্মুখীন তিনি নিজেকে "ঈশ্বরের প্রতিনিধি" বলে ঘোষণা করেন। সেনাবাহিনী পুনর্গঠন করেন। রাজতন্ত্রের মর্যাদা রক্ষার জন্য কঠোর নীতি অবলম্বন করেন। তাঁর এ পদক্ষেপ সাম্রাজ্যের সংহতির জন্য সহায়ক হয়। তিনি দীর্ঘদিন দাপটের সাথে শাসনকার্য পরিচালনায় সক্ষম হন।
জনাব আলিম এক সংকটাপন্ন অবস্থায় অনিচ্ছা সত্ত্বেও দেশের শাসন ক্ষমতা গ্রহণ করেন । তিনি কর আদায়ে উদারতা ও যুদ্ধ অপেক্ষা শান্তিতে বিশ্বাসী ছিলেন। তিনি কর্মসংস্থান এবং কন্যাদায়গ্রস্ত পিতাদের প্রতি সহায়তাদানসহ বহু জনহিতকর কাজ সম্পাদন করেন। এতে রাজকোষের ঘাটতি দেখা দিলেও একজন প্রজাহিতৈষী শাসক হিসেবে তিনি স্মরণীয় হয়ে আছেন।
ভাগ্য বিড়ম্বিত যুবক ইরফান পৈতৃকসূত্রে প্রাপ্ত একটি ক্ষুদ্র অঞ্চলের অধিপতি ছিলেন। কিন্তু নিকট আত্মীয়নের ষড়যন্ত্রের কারণে ঐ রাজ্য হাতছাড়া হয়ে যায়। এ অবস্থায় তিনি অভ্যন্তরীণ দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে পার্শ্ববর্তী রাজ্য আক্রমণ করেন। উন্নত রণনীতি ও সমরাস্ত্রের সাহায্যে প্রতিবেশীর বিশাল সৈন্যবাহিনীকে যুদ্ধে পরাজিত করেন। অতঃপর ঐ রাজ্যের ধ্বংসস্তূপের ওপার একটি নতুন সাম্রাজ্যের ভিত্তি স্থাপন করার গৌরব অর্জন করেন।
বিমাতার দূরভিসন্ধির ফলে পিতৃরাজ্য হারিয়ে হাদীদ ভাগ্যান্বেষণে বের হন। অনেক বন্ধুর পথ পেরিয়ে এক পর্যায়ে একটি প্রতিষ্ঠিত সাম্রাজ্যের শাসককে ক্ষমতাচ্যুত করে ঐ সাম্রাজ্যের অধিপতি হন। মাত্র কয়েক বছরের রাজত্বকালে তিনি রাজস্ব ব্যবস্থায় ও যোগাযোগ ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন সাধন করেন। তাঁর এসব কর্মকাণ্ড পরবর্তী শাসকদের জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে রয়েছে
ইনসান আলি বাল্যকাল থেকে সাহসী, মেধাবী ও ধর্মপরায়ণ ছিলেন। পরাধীন দেশে স্বজাতির নানা অসংগতি দেখে তিনি ব্যথিত হন। বিদেশি শাসকগোষ্ঠীর শোষণে ও অত্যাচারের তিনি প্রতিবাদী হয়ে ওঠেন। জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে তিনি বিদেশি শক্তির বিনাশে সশস্ত্র সংগ্রামে জড়িয়ে পড়েন। তিনি স্বদেশকে পরাধীনতার গ্লানি থেকে মুক্তির লক্ষ্যে দলবলসহ জীবনের শেষ রক্ত বিন্দু দিয়ে লড়াই চালিয়ে যান। তাঁর এ সংগ্রাম ব্যার্থ হলেও পরবর্তী প্রজন্মকে স্বাধীনতার চেতনায় উদ্দীপ্ত করে।
দেশটি দীর্ঘ ঔপনিবেশিক শাসনে নিপতিত হয়। উক্ত শাসন থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য দেশের বিভিন্ন অপালে বহু আন্দোলন সংঘটিত হয়। এক পর্যায়ে একই সময়ে সারাদেশব্যাপী ব্যাপক গণঅসন্তোষ দেখা দেয়। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বিচক্ষণতার অভাবে ও ঔপনিবেশিক শক্তির উন্নত অস্ত্র বলে এ আন্দোলন কঠোর হস্তে দমন করা হয়। উক্ত গণ-অসন্তোষ ব্যর্থ হলেও ঔপনিবেশিক শক্তির ক্ষমতার ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়ে। দেশের মানুষ রাজনৈতিকভাবে সচেতন হয়ে ওঠে। নতুন রাজনৈতিক শক্তির উন্মেষ ঘটে, যা ঔপনিবেশিক শাসন থেকে জনগণের মুক্তির পথ প্রশস্ত করে।
দেশটি বহু বর্ণে, ধর্মে ও জাতিতে বিভক্ত ছিল। ফলে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির পক্ষে ঐ দেশে শাসন-শোষণ খুবই সহজ ছিল। এক পর্যায়ে দেশের মানুষ ক্রমেই স্বাধীনতার জন্য উন্মুখ হয়ে পড়ে। একটি রাজনৈতিক দলের নেতা ধর্মের ওপর ভিত্তি করে এক ঐতিহাসিক প্রস্তাব উত্থাপন করেন। প্রস্তাবটি পরবর্তীতে কিছুটা সংশোধিত হয়ে প্রকাশিত হওয়ার পর সারা দেশব্যাপী ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। শেষ পর্যন্ত উত্ত প্রস্তাবের ভিত্তিতে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি বিদায় নেয়। দেশটি বিভক্ত হয়ে একাধিক স্বাধীন রাষ্ট্রে আত্মপ্রকাশ করে।
এশিয়া মহাদেশের দেশটি উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিণাঞল এ দু' অংশে বিভক্ত ছিল। উত্তরাঞ্চল ছিল প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু নেতৃত্বে ও কর্তৃত্বে এ অঞ্চলের প্রাধান্য ছিল। দক্ষিণাঞ্চল প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর থাকা সত্ত্বেও কেন্দ্রীয় শাসকগোষ্ঠীর অবহেলায় উন্নয়ন বঞ্চিত থেকে যায়। ফলে উভয় অংশে আঞ্চলিক বৈষম্য প্রকট হয়। এরূপ পরিস্থিতিতে দক্ষিণাঞ্চলে বেঞ্জামিন নামে এক জননেতার উত্থান হয়। তিনি আঞ্চলিক বৈষম্য নিরসনের জন্য ১০ দফা কর্মসূচিভিত্তিক আন্দোলনের ডাক দেন। তাঁর এ আন্দোলনে দক্ষিণপাগলের জনগণ ব্যাপক সমর্থন জানায়। শেষ পর্যानন ভ্যান থেকে সশস্ত্র স্বাধীন গ্রামের রূপ পরিগ্রহ করে।
১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দের ১৯ নভেম্বর। গেটিসবার্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম পিংকন দান প্রথা বিলোপ, নাগরিক অধিকার ও গণতন্ত্র প্রসঙ্গে এক ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। তাঁর এ ভাষণের দারিত্বকাল ছিল মাত্র তিন মিনিট। 'গেটিসবার্গ এড্রেস' নামে খ্যাত এ ভাষণ দুনিয়ার ইতিহাসে গণতন্ত্রের মহাজাগরণে এক অনন্য দলিল।
যুগোশ্লাভিয়ার বসনিয়া-হার্জেগোভিনা মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল। সংখ্যালঘিষ্ঠ সার্ব শাসকগোষ্ঠীর নিকট দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকেই শোষিত ও নিষ্পেষিত হয়ে আসছিল বসনীয় জনগোষ্ঠী। ফলে দীর্ঘদিনের বঞ্চনা তাদের বিক্ষুব্ধ করে তোলে এবং ঐক্যবদ্ধ হয়ে স্বাধীনতার ডাক দেয়। সার্ব-ক্রোট যৌথশক্তি এ আন্দোলন দমনে গণহত্যা, লুণ্ঠন, নারী ও শিশুদের প্রতি পাশবিক নির্যাতন চালায়। অবশেষে লক্ষ লোকের আত্মদান ও অসংখ্য নারীর সম্ভ্রমের বিনিময়ে বসনিয়া স্বাধীনতা অর্জন করে।