ব্যক্তিগত ক্রীড়া নৈপুণ্য প্রদর্শনের মাধ্যম হচ্ছে অ্যাথলেটিকস ও সাঁতার। অ্যাথলেটিকসের মধ্যে রয়েছে দৌড়, লাফ ও নিক্ষেপ জাতীয় ইভেন্টসমূহ। আদিম যুগে মানুষ বাঁচার তাগিদে দৌড়, লাফ ও নিক্ষেপের আশ্রয় গ্রহণ করত। মানব সভ্যতার ক্রমবিবর্তনে এই দৌড়, লাফ, নিক্ষেপই চিত্তবিনোদন ও ব্যক্তিগত ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। আগের যুগে সাঁতারের কলাকৌশল ও আইন- কানুনের তেমন প্রয়োজন ছিল না। পরবর্তীকালে সুস্বাস্থ্য গঠন, চিন্ত-বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম হলো সাঁতার। অ্যাথলেটিকস ও সাঁতার শিক্ষার্থীদের সুস্বাস্থ্য গঠন, ব্যক্তিগত নৈপুণ্যের পারদর্শিতা অর্জন, শৃঙ্খলা ও আনুগত্য বৃদ্ধির মাধ্যমে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে সাহায্য করে।
এ অধ্যায় শেষে আমরা-
: পৃথিবীতে যত প্রকার খেলাধুলা চালু আছে তার মধ্যে দৌড়, লাফ ও নিক্ষেপই সবচেয়ে প্রাচীন। একটি মানবশিশু জন্মের পর তার বেড়ে উঠার বিভিন্ন পর্যায়ে দৌড়, লাফ ও নিক্ষেপের মধ্য দিয়ে এগোতে হয়। আদিম যুগে মানুষ প্রাণ ধারণের জন্য শিকার ও প্রাণরক্ষা করতে গিয়ে দৌড় ও লাফ দিতে হতো। আবার শিকার বা শত্রুকে ঘায়েল করতে নিক্ষেপের সাহায্যে নিতে হতো। এই দৌড়, লাফ ও নিক্ষেপ তাদের জীবনযাপনের কাজে ব্যবহৃত হতো। পরবর্তীকালে মানব সভ্যতার ক্রম বিবর্তনে এই দৌড়, লাফ ও নিক্ষেপই ব্যক্তিগত পারদর্শিতা ও চিত্তবিনোদনের ক্রীড়াতে রূপান্তরিত হয়েছে।
উল্লেখ্য যে ৫০০০মিটার, ১০,০০০ মিটার দৌড়, ৪x৪০০ মি. রিলে দৌড়, হার্ডেল দৌড়, ৩০০০ মি স্টিপল চেজ, হাঁটার ইভেন্টস ও হ্যামার নিক্ষেপ আন্তঃস্কুল ও মাদ্রাসা ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অনুষ্ঠিত হয় না। দৌড় প্রতিযোগিতার সাধারণ নিয়মাবলি
১. দৌড় প্রতিযোগিতার জন্য ৪০০ মিটার ট্র্যাক আইনসম্মত ট্র্যাক।
২. দৌড়ের সময় অ্যাথলেটগণ বামপাশ ১ম লেনের দিকে রেখে দৌড়াবে।
৩. স্প্রিন্ট অর্থাৎ ১০০ মি, ২০০ মি, ৪০০ মি, হার্ডল দৌড়, ১০০ x ৪ মি দৌঁড়-এর সময় লেন পরিবর্তন করা যাবে না। যার যার নির্দিষ্ট লেনে দৌড়াতে হবে।
৪. ৮০০ মি, ১৫০০ মি ও ৪x৪০০ মি রিলে দৌড়ের সময় লেন পরিবর্তন করা যাবে। কখন কীভাবে লেন পরিবর্তন করতে হবে তা দৌড় শুরু হওয়ার আগেই ভালোভাবে বুঝে নিতে হবে।
৫. স্প্রিন্ট-এর জন্য স্টার্টিং ব্লক ব্যবহার করতে হবে। তবে অন্যান্য দৌড়ের ক্ষেত্রে স্টার্টিং ব্লক ব্যবহার
বাধ্যতামূলক নয়।
৬. দৌড়ের শেষ মাথায় দুইটি ফিনিশিং স্ট্যান্ড থাকবে ।
৭. ফিনিশিং ফিতায় 'টর্সো' আগে স্পর্শ করাতে হবে।
৮. দৌড়ের আরম্ভ ও শেষ রেখা সাদা রং দ্বারা চিহ্নিত করতে হবে।
৯. সব দৌড়ের আরম্ভ এক জায়গা থেকে হয় না, কিন্তু শেষ হয় একই স্থানে।
১০. আরম্ভকারীর পিস্তলের আওয়াজে সব দৌড় শুরু হবে।
১১. স্প্রিন্ট দৌড় আরম্ভের সময় আরম্ভকারী তিনটি শব্দ ব্যবহার করবে।
ক. On your mark অর্থাৎ আরম্ভ স্থানে যাও
খ. Set অর্থাৎ দৌড় শুরুর চূড়ান্ত অবস্থান।
গ. Fire বা পিস্তলের আওয়াজ।
১২. একবার ফলস স্টার্ট হলে সে প্রতিযোগিতা থেকে বাদ যাবে।
১৩. দূরপাল্লার দৌড়ের আরম্ভের সময় Set ব্যবহার করতে হয় না শুধু On your mark বলার পরেই বন্দুকের আওয়াজ হয়।
স্প্রিন্ট দৌড়ের কৌশল : সর্বোচ্চ গতিবেগ সম্পন্ন দৌড়কে স্প্রিন্ট বলে। ১০০ থেকে ৪০০ মিটার পর্যন্ত সব রকম দৌড় স্প্রিন্ট দৌড়ের অন্তর্ভুক্ত। স্প্রিন্ট দৌড়ের স্টার্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সঠিক স্টার্ট হলে বাড়তি সুবিধা পাওয়া যায় । তিনভাবে স্প্রিন্ট দৌড়ের স্টার্ট নেওয়া যায়—
১. বাঞ্চ স্টার্ট (Bunch Start)
২. মিডিয়াম স্টার্ট (Medium Start)
৩. অ্যালোংগেটেড স্টার্ট (Elongated Start)
১. বাঞ্চ স্টার্ট : সামনের পা আরম্ভ রেখা থেকে এক পা পিছনে এবং পিছনের পায়ের টিপ সামনের পায়ের
হিলের সাথে এক লাইনে থাকবে।
২. মিডিয়াম স্টার্ট : সামনের পা আরম্ভ রেখা থেকে দুই পা পিছনে এবং পিছনের পায়ের হাঁটু ও সামনের
পায়ের বল এক লাইনে থাকবে।
৩. অ্যালোংগেটেড স্টার্ট : সামনের পা আরম্ভ রেখা থেকে তিন পা পিছনে এবং পিছনের পায়ের হাঁটু ও সামনের পায়ের হিল এক লাইনে থাকবে।
স্প্রিন্ট দৌড়ের চারটি পর্যায় (Phase) আছে।
১. আরম্ভ রেখার অবস্থান (On your mark)
২. দৌড় শুরুর পূর্ব মুহূর্তের অবস্থান (Set)
৩. ব্লক থেকে উঠা (Drive)
৪. গতিবেগ বৃদ্ধি করা (Acceleration)
১. আরম্ভ রেখার অবস্থান : আরম্ভকারী On your mark কলার সাথে সাথে অ্যাথলেটগণ আরম্ভ রেখার পিছনে ২০-২৫ সে:মি: দূরে পা রেখে এবং আরম্ভ রেখা বরাবর দুইহাতের আঙ্গুল মাটিতে রাখতে হবে। স্টার্টিং ব্লকে পা রাখলে তা নির্দিষ্ট জায়গায় আগেই রাখতে হবে। দৃষ্টি সামনের দিকে থাকবে। হাঁটু ভেঙ্গে হাতের তালুতে ভর দিয়ে বসতে হবে ।
২. দৌড় শুরুর পূর্ব মুহূর্তের অবস্থান : আরম্ভকারী সেট বলার সাথে সাথে পিছনের পা'কে সোজা করে সামনের দিকে ঝুঁকে পড়তে হবে। কোমর উপরে উঠবে। শরীরের সম্পূর্ণ ভর থাকবে হাতের উপর। এ সময় স্থির হয়ে থাকতে হবে এবং ২-৩ সেকেন্ডের মধ্যে বন্দুকের আওয়াজ শোনা যাবে ৷
৩. ব্লক থেকে ওঠা : বন্দুক/পিস্তলের আওয়াজ শোনার সাথে সাথে উঠে না দাঁড়িয়ে সামনের দিকে ঝুঁকে
যেতে হবে।
৪. গতিবেগ বৃদ্ধি করা : এরপরই গতিবেগ বৃদ্ধি করে দৌড়াতে হবে।
দাঁড়িয়ে আরম্ভ : মধ্যম ও দীর্ঘ দূরত্বের দৌড় দাঁড়িয়ে আরম্ভ নিতে হয়। আরম্ভকারী On your mark বলার সাথে সাথে আরম্ভ রেখায় এসে দাঁড়াবে। তারপর বন্দুকের আওয়াজ শুনে দৌড় শুরু করবে।
দৌড় সমাপ্ত : সমস্ত দৌড় একই জায়গায় শেষ হবে। শরীরের মাথা থেকে পা পর্যন্ত যখন একই রেখায় সমাপ্তি রেখায় আসবে তখন দৌড় সমাপ্ত হয়েছে বলে ধরা হবে।
রিলে দৌড় : একটি নির্দিষ্ট দূরত্বে ৪ জন প্রতিযোগী সমান দূরত্বে ব্যাটন/কাঠি নিয়ে দৌড়ায় তখন তাকে রিলে দৌড় বলে।
১. হাতে ব্যাটন নিয়ে দৌড়াতে হবে।
২. ব্যাটন বদলের জায়গায় ব্যাটন পরিবর্তন করতে হবে।
৩. ব্যাটন বদলের জায়গা ২০ মিটার।
৪. ব্যাটনের দৈর্ঘ্য ২৮-৩০ সেমি, পরিধি ৩৮ মি মি ।
৫. ব্যাটন কাঠ, ধাতু বা ঐ জাতীয় বস্তু দ্বারা তৈরি হবে।
৬. ব্যাটন বদলের পর যার যার নির্দিষ্ট জায়গায় থাকতে হবে যতক্ষণ না অন্যান্য প্রতিযোগী তাকে অতিক্রম করে।
বাটন বদলের কৌশল : ব্যাটন বদলের সময় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো দৌড়ের গতিবেগ যেন না কমে সেজন্য ব্যাটন বদলের কৌশলের অনুশীলন বারবার করতে হয়। ব্যাটন বদলের কৌশল দু'রকমের (১) দেখে বদল (২) না দেখে বদল।
১. দেখে বদল : যখন ব্যাটন বদলের সময় পিছনের দিকে দেখে ব্যাটনটি বদল করে তখন তাকে দেখে বদ বলে।
২. না দেখে বদল: বদলের সময় পিছন থেকে স্পিডে দৌড়ে এসে না দেখে হাত থেকে ব্যাটনটি গ্রহণ করে তাকে না দেখে বদল বলে।
বাটন পাসের নিয়ম : ব্যাটন পাসের কৌশল দু'রকমের :
১. উপরের দিকে ধরে পাস ( Upward pass )
২. নিচের দিকে ধরে পাস (Downward pass)
১. উপরের দিক পাস : ব্যাটনটি হস্তান্তর করার সময় যদি ব্যাটনটির মাথা উপরের দিকে ধরে পাস করা হয়
তাকে আপওয়ার্ড পাস বলে।
২. নিচের দিকে ধরে পাস : ব্যাটনটি হস্তান্তর করার সময় ব্যাটনটির মাথা যদি নিচের দিকে ধরে পাস করা হয় তাহলে তাকে ডাউনওয়ার্ড পাস বলে। যেভাবেই পাস করা হোক না কেন এটা নির্ভর করে অনুশীলনের উপর।
লাফ বিভাগের অন্তর্ভুক্ত ক. লংজাম্প, খ. হাইজাম্প, গ. হপস্টেপ এন্ড জাম্প, ঘ. পোলভল্ট।
ক. লংজাম্প বা দীর্ঘলাফ-এর সাধারণ নিয়মাবলিঃ
১. অ্যাপ্রোচ রান : রানওয়ের ভিতর দিয়ে দৌড়ে আসতে হবে।
২. রানওয়ের দৈর্ঘ্য কমপক্ষে ৪০ মিটার, প্রস্থ ১.২২-১.২৫ মি:, উভয় পার্শ্ব সাদা রং দ্বারা চিহ্নিত করতে হবে।
৩. টেক অফ বোর্ডের থেকে জাম্প পিট এর দৈর্ঘ্য ১.২১-১.২২ মিটার, চওড়া ১৯.৮ – ২০.২ সেমি এবং উচ্চতা ১০০ সেমি ।
৪. টেক অফ বোর্ড থেকে জাম্পপিট ১-৩ মি: দূরে থাকবে।
৫. জাম্প পিটের মাপ-দৈর্ঘ্য ১০ মি:, প্রস্থ ২.৭৫-৩ মি: ।
৬. টেক অফ বোর্ডের রং হবে সাদা।
৭. জাম্পপিট বালি দ্বারা ভরা থাকবে, তবে তা টেক অফ বোর্ডের উপরে উঠবে না।
৮. শরীরের যে অংশ সবচেয়ে বেশি বালি স্পর্শ করবে সেখান থেকে মাপ নিতে হবে।
৯. একজন প্রতিযোগী অযোগ্য হবে –
ক. নাম ডাকার ৬০ সেকেন্ডের ভিতর লাফ দিতে ব্যর্থ হলে।
খ. টেক অফ বোর্ডের বাইরে দিয়ে লাফ দিলে।
গ. ল্যান্ডিং-এর পূর্বে ল্যান্ডিং এরিয়ার বাইরের মাটি স্পর্শ করলে।
ঘ. লাফ শেষ করে পিছনের দিকে হেঁটে এলে।
ঙ. দু'পায়ে টেক অফ নিলে।
চ. টেক অফ বোর্ডের সামনের মাটি স্পর্শ করলে।
দীর্ঘ লাফের কৌশল : যারা ভালো স্প্রিন্টার তারা দীর্ঘলাফে ভালো করে। একজন ভালো লং জাম্পার হতে হলে তার শক্তি ও গতি প্রয়োজন যা স্প্রিন্টারের মধ্যে আছে। দীর্ঘলাফের কৌশলকে চারভাগে ভাগ করা হয়েছে—
১. অ্যাপ্রোচ রান (দৌড়ে আসা), ২. টেক অফ (মাটিতে ভর দিয়ে উপরে উঠা), ৩. ফ্লাইট (শূন্যে ভাসা), ৪. ল্যান্ডিং (মাটিতে অবতরণ
১. অ্যাপ্রোচ রান : লাফ দেওয়ার জন্য ৫০ থেকে ৮০ ফুট দূর থেকে তীব্র গতিতে দৌড়ে আসাকে অ্যাপ্রোচ রান বলে। শেষের পদক্ষেপগুলো খুব দ্রুত হবে। টেক অফ বোর্ডে ঠিকমতো পা পড়ার জন্য ১৫-২৫ ফুট দূরে একটি টেকঅফের জন্য চিহ্ন দিতে হয়। একে চেক মার্ক বলে। এই চেক মার্কে ঠিকমতো পা পড়লে মনে করতে হবে টেক অফ বোর্ডে ঠিক মতো পা পড়বে। টেক অফ বোর্ডে ঠিকমতো পা পড়ার জন্য একজন অ্যাথলেটকে বার বার অনুশীলন করতে হয় ।
২. টেক অফ : দীর্ঘ লাফে মাটি ছেড়ে উপরে উঠার জন্য কাঠের তৈরি একটি টেক অফ বোর্ড থাকে। এই বোর্ডটি ৪ ফুট লম্বা, ৮ ইঞ্চি চওড়া হয়। উপরিভাগে সাদা রং দিতে হয়। এই বোর্ডের উপর পা দিয়ে শূন্যে লাফিয়ে উঠাকে টেক অফ বলে। যার টেক অফ ভালো হবে সে দূরত্ব অতিক্রম করতে পারবে বেশি।
৩. ফ্লাইট : টেক অফ বোর্ডে পা দিয়ে উপরে উঠার পর থেকে মাটিতে নামার আগ পর্যন্ত সময় হচ্ছে ফ্লাইট বা শূন্যে ভাসা। শূন্যে বায়ুর মধ্যে হাঁটা, হাঁটু গুটিয়ে নেওয়া, ঝাঁকুনি দিয়ে খুব জোরে পা ছোড়া হিচকি (Hitch Kick) এগুলো হলো শূন্যে ভাসার পদ্ধতি। শূন্যে যার পায়ের মুভমেন্ট ভালো হবে সে বেশি দূরত্ব অতিক্রম করতে পারবে।
৪. ল্যান্ডিং : মাটিতে অবতরণের সময় পা মাটিকে স্পর্শ করার পূর্ব মুহূর্তে পা দুটোকে সামনের দিকে সম্পূর্ণ সোজা করে নিতে হবে যাতে বেশি দূরত্বে যাওয়া যায়। গোড়ালি দুটো ল্যান্ডিং পিটের প্রথম বালি স্পর্শ করবে এবং সাথে সাথে দু’হাঁটু ভেঙ্গে গোড়ালি থেকে পায়ের পাতায় শরীরের ভর নিয়ে আসতে হবে। তারপর সামনে গড়িয়ে পড়তে হবে।
উচ্চলাফের নিয়মাবলি
১. উচ্চলাফ শুরুর পূর্বে প্রতিযোগীদের লাফের উচ্চতা সম্পর্কে অবহিত করতে হবে এবং প্রতি রাউন্ড উচ্চতা কী পরিমাণ বাড়াতে হবে তা ঘোষণা করতে হবে।
২. রাউন্ড শেষে কমপক্ষে ২ সেন্টিমিটার উঠাতে হবে।
৩. রানওয়ের দৈর্ঘ্য কমপক্ষে ১৫ মিটার হবে।
৪. একজন প্রতিযোগী তার সুবিধার জন্য রানআপ ও টেক অফ মিলানোর জন্য একাধিক মার্কার ব্যবহার করতে পারবে।
৫. দুই খুঁটির মধ্যে দূরত্ব থাকবে ৩.৬৪ মি. থেকে ৪ মিটার।
৬. ক্রসবার ধাতু, কাঠ বা ঐ জাতীয় কোনো বস্তু দ্বারা তৈরি হবে।
৭. উচ্চলাফের ল্যান্ডিং এরিয়ার মাপ ৫ × ৪ মিটার।
৮. একজন প্রতিযোগী কখন একটি সুযোগ হারায়—
ক) নাম ডাকার ৬০ সেকেন্ডের মধ্যে লাফ দিতে না পারলে।
খ) লাফ দেওয়ার সময় ক্রসবারের লাইন অতিক্রম করলে।
গ) দু'পায়ে টেক অফ নিলে।
ঘ) লাফ দেওয়ার সময় ক্রসবার পড়ে গেলে।
উচ্চলাফের কৌশল : যে কৌশলেই লাফ দেওয়া হোক না কেন, লাফ দেওয়ার সময় চারটি পর্যায় অতিক্রম করতে হয়।
১. অ্যাপ্রোচ রান, ২. টেক অফ, ৩. ক্রসবার অতিক্রম করা, ৪. ল্যান্ডিং
১. দৌড়িয়ে আসাকে এ্যাপ্রোচ রান বলে।
২. দৌড়িয়ে এক পায়ে ভর দিয়ে উঠাকে টেক অফ বলে।
৩. যে কোনো পদ্ধতিতে ক্রসবারটি অতিক্রম করতে হবে। ৪. ক্রসবার অতিক্রমের পর মাটিতে পড়াকে ল্যান্ডিং বলে।
উচ্চ লাফ দেওয়ার পদ্ধতি তিন প্রকার—
ওয়েস্টার্ন রোল ২. বেলি রোল ৩. ফসবেরি ফ্লপ
১. ওয়েস্টার্ন রোল : এ পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য হলো যে পায়ে টেক অফ নেবে, দু'হাত ও সেই পায়ের উপরই ল্যান্ডিং হবে। বাম পায়ের উপর টেক অফ নিলে ক্রসবার অতিক্রম করার পর বাম পায়ের উপরই ল্যান্ডিং হবে।
ক. সাধারণত সাত পদক্ষেপ দৌড়ে এসে লাফ দেওয়া হয়। উচ্চতা কম হলে পাঁচটি পদক্ষেপই যথেষ্ট।
খ. লাফানোর জন্য দৌড় শুরু করার সময় ক্রসবারের সাথে ৪৫° থেকে ৬০° কোণ সৃষ্টি করে দাঁড়াতে হবে।
গ. মাটি ছেড়ে উঠার সময় শেষের তিনটা পদক্ষেপ দ্রুত এবং অপেক্ষাকৃত লম্বা হবে।
ঘ. পিছনের পাকে খুব জোরে উপরের দিকে ছুড়ে দিয়ে যে পায়ের উপর ভর দিয়ে মাটি ছাড়তে হবে সেই পায়ের গোড়ালি থেকে পাতার উপর সম্পূর্ণ শরীরটাকে গড়িয়ে এনে পাকে সোজা করে মাটি ছেড়ে উপরে উঠাতে হবে।
ঙ. যে পা দিয়ে মাটি ছাড়া হবে, পরে সেই পায়ের হাঁটু ভেঙ্গে উপরে তুলতে হবে। চ. ক্রসবারের উপর সম্পূর্ণ শরীরটাকে ঘুরিয়ে দিয়ে সে দিকের কাঁধকে ক্রসবারের উপর খাড়াভাবে রেখে ক্রসবার অতিক্রম করবে।
ছ. যে পায়ে ল্যান্ডিং সেই পা ও দু'হাতের উপর ভর করে ল্যান্ডিং করতে হবে।
২. বেলি রোল : এই পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য হলো যে পায়ে টেক অফ নিবে তার বিপরীত পা ও দু'হাতের উপর ভর করে ল্যান্ডিং করতে হবে। ফোমের উপর হলে নিজের সুবিধে মতো পিঠের উপরও ল্যান্ডিং করা যেতে পারে । এই পদ্ধতিতে মনে রাখতে হবে-
ক. দৌড়ে আসার কোণ ক্রসবারের সাথে ২৫° - ৪০° হবে।
খ. টেক অফ এর সময় শেষের পদক্ষেপগুলো দ্রুত ও লম্বা হবে। তবে মাটি ছাড়ার পর বিপরীত পা ও সে দিকের হাতকে ক্রসবারের উপর প্রথমে নিয়ে যেতে হবে।
গ. ক্রসবারের উপরে এলে শরীরের উপরের অংশটাকে নিচের দিকে ঝুঁকিয়ে দিতে হয়। তাতে পেটের দিকটাকে ক্রসবারের কাছাকাছি রাখা যায় ।
ঘ. যে হাত ও পা প্রথমে নামছে সে দিকের দেহের উপরের অংশ (কাঁধ থেকে কোমর পর্যন্ত) মাটিতে নামিয়ে হাতকে দেহের ভিতরের দিকে ঠেলে দিয়ে গড়িয়ে দিতে হবে।
৩. ফসবেরি ফ্লপ : ১৯৬৮ সালে মেক্সিকো অলিম্পিকে আমেরিকার ডিক ফসবেরি এক নতুন পদ্ধতিতে উচ্চ লাফ দিয়ে সোনার মেডেল পান তখন থেকে তার নামানুসারে এই ফসবেরি ফ্লপের প্রচলন হয়। এটা বর্তমানে সর্বজনীন পদ্ধতি। তবে মনে রাখতে হবে ফোমের ম্যাট ছাড়া এ পদ্ধতিতে লাফ দেওয়া সম্ভব নয় ।
ক. ক্রসবারের সাথে ৯০° কোণ করে দাঁড়িয়ে দৌড় শুরু করতে হয় এবং অর্ধবৃত্তাকারে ক্রসবারের কাছে আসতে হয় ৷
খ. শরীরের মাঝখানটাকে পিছন দিকে ঝুঁকিয়ে দিয়ে টেক অফ পা দেহের ভর কেন্দ্রের সামনে রাখতে হবে। এরপর দ্রুত জোরের সাথে উপরের দিকে উঠতে হবে। একই সাথে অপর পাটাকে দুলিয়ে উপরে ডান কাঁধের লাইনে নিয়ে যেতে হবে। তার ফলে পিঠ ক্রসবারের দিকে চলে আসবে।
গ. দেহ মাটি ছেড়ে যখনই উপরে উঠবে, সাথে সাথে হাত দুটো পাশে দেহের সমান্তরালে এনে মাথা মধ্য শরীর ও কোমরের নিচের অংশ ক্রসবারের উপর দিয়ে পার করতে হবে। হাত ও পা দুটো উপরের দিকে থাকবে এবং পিঠের উপর অবতরণ করবে।
অ্যাথলেটিকসের টাই : টাই (Tie) অর্থ সমতা। যখন দুজনের ফলাফল সমান হয় তখন তাকে টাই বলে। টাই দুই রকমের—
১. উচ্চতার টাই ২. দূরত্বের টাই ।
১. উচ্চতার টাই : পোলভল্ট ও হাইজাম্পে টাই হলে তাকে উচ্চতার টাই বলে। কারণ এদের টাই হয় উচ্চতায় ৷
২. দূরত্বের টাই : দীর্ঘলাফ হপস্টেপ এন্ড জাম্প, চাকতি নিক্ষেপ গোলক নিক্ষেপ, বর্শা নিক্ষেপ, হাতুড়ি নিক্ষেপ এসব ইভেন্টের প্রতিযোগীদের মধ্যে টাই হলে তাকে দূরত্বের টাই বলে। শুধু ১ম স্থানের জন্য টাই ভাঙ্গতে হয়। ২য় ও ৩য় স্থানের জন্য টাই হলে যুগ্মভাবে ফলাফল ঘোষণা করতে হয়।
১. উচ্চতায় টাই হলে টাই ভাঙ্গার নিয়ম-
ক) যে উচ্চতায় টাই হয়েছে সে উচ্চতায় যে কম চেষ্টায় অতিক্রম করেছে সে প্রথম হবে।
খ) উপরের নিয়মে টাই না ভাঙ্গলে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত যার ব্যর্থতার সংখ্যা কম সে প্রথম হবে।
গ) এর পরেও যদি টাই না ভাঙ্গে তাহলে উচ্চতা বাড়িয়ে বা কমিয়ে লাফ দেওয়াতে হবে যে অতিক্রম করবে সে বিজয়ী হবে। এখানে প্রতিযোগীগণ ১টি করে লাফের সুযোগ পাবে।
দূরত্বের টাই হলে টাই ভাঙ্গার নিয়ম
ক. মোট নিক্ষেপ বা লাফের ভিতর ২য় সর্বোচ্চ দূরত্ব দেখতে হবে।
খ. এ নিয়মে টাই না ভাঙলে ৩য় সর্বোচ্চ দেখতে হবে। এভাবে ক্রমান্বয়ে যাবে। দীর্ঘলাফ, হপস্টেপ এন্ড জাম্প, শটপুট, চাকতি, হ্যামার ও বর্শা নিক্ষেপের টাই হলে যব টাই ভাঙ্গার নিয়ম একই ৷
১. ট্রিপল জাম্প : হপস্টেপ এন্ড জাম্প বা লাফ ঝাঁপ ধাপ অর্থাৎ এই তিনের সমন্বয়ে যে লাফ দেওয়া হয় তাকে ট্রিপল জাম্প বলে। যে পায়ে টেক অফ সে পায়ে প্রথমে হপ, বিপরীত পায়ে স্টেপ ও তার পরে লাফ দিতে হয়। এই ইভেন্টে তিনটি লাফই সমান গুরুত্ব বহন করে। এই তিনটি জাম্পের মধ্যে অনুপাত হিসেব করে লাফ দিলে অনেক বেশি দূরত্ব অতিক্রম করা যায়। সাধারণত ৬ : ৫ : ৬ অনুপাত নতুন অ্যাথলেটদের জন্য সুবিধাজনক। প্রথম হপ ৬⁄ হলে স্টেপ নিতে হবে ৫⁄ এবং শেষে লাফ দিতে হবে ৬⁄ । প্রথমে বাম পায়ে টেক অফ নিলে সেই পায়ে হপ দিয়ে ডান পায়ে স্টেপ নিয়ে তারপর জাম্প দিতে হবে।
অ্যাপ্রোচ রান : দীর্ঘলাফের মতো দৌড়িয়ে আসতে হয়। দৌড়ের গতি এমনভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে যেন মাটি ছাড়ার সময় দৌড়ের গতি বেশি থাকে ।
টেক অফ : দীর্ঘলাফ ও ট্রিপল জাম্প এর টেক অফ এক নয়। ট্রিপল জাম্পের মাটি ছাড়ার সময় চেষ্টা থাকে যে, কীভাবে সামনের দিকের গতি বজায় রাখা যায়। প্রথম হপ খুব উঁচু করে নেওয়া ঠিক নয়। স্বাভাবিক হপ নিয়ে ক্রমান্বয়ে উঁচুতে উঠলে লাফটি ভালো হয়। হপ দিতে যে উচ্চতা নিতে হবে স্টেপ তা থেকে বেশি উচ্চতায় নিতে হবে। তা থেকেও বেশি উচ্চতায় লাফ দিতে হবে।
মাটির উপরে শূন্যে ভাসা : দীর্ঘলাফের সময় শূন্যে যেভাবে পায়ের নড়াচড়া করতে হয় এখানেও সেভাবে পায়ের নড়াচড়া করতে হবে তাহলে বেশি দূরত্ব অতিক্রম করা যাবে।
ল্যান্ডিং : দীর্ঘলাফের ল্যান্ডিং-এর কৌশল ও ট্রিপল জাম্পের ল্যান্ডিং-এর কৌশল একই ।
নিয়মাবলি
১. যদি ৮ এর অধিক প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করে সেক্ষেত্রে ৩টি লাফের পর ৮ জনকে বাছাই করে ঐ আটজন আরও তিনটি করে লাফ দিবে। এই ছয় লাফের ভিতর যার দূরত্ব বেশি হবে সে বিজয়ী হবে।
২. লাফ দেওয়ার সময় টেকঅফ বোর্ডের সামনের যে বালির দেয়াল দেওয়া আছে তা ভেঙ্গে ফেললে ঐ লাফটি বাতিল হবে।
৩. অ্যাপ্রোচ রানের সময় দৌড় পথে কোনো চিহ্ন দেওয়া যাবে না।
৪. হাতে, পায়ে, কোনো ওজন বা গ্রিপ নিয়ে লাফ দেওয়া যাবে না ।
৫. লাফ দেওয়ার সময় অপর পা মাটিতে স্পর্শ করলে ঐ লাফটি বাতিল হবে।
২. পোলভন্ট বা দণ্ড লাফ : পোল-এর উপর ভর দিয়ে যে লাফ দেওয়া হয় তাকে পোলভল্ট বা দন্ডলাফ বলে।
প্রতিযোগিতার নিয়ম
১. প্রতিযোগিতা শুরু করার আগে উচ্চতা সম্পর্কে প্রতিযোগীদের অবহিত করবেন এবং প্রতি রাউন্ড শেষে কতটুকু উচ্চতা বাড়ানো হবে তাও বলে দেবেন
২. প্রতি রাউন্ড শেষে ক্রসবার কমপক্ষে ৫ সেমি উপরে উঠবে।
৩. লাফ দেওয়ার সুবিধার জন্য প্রতিযোগীগণ বক্সের ভিতরের ধার থেকে রানওয়ের দিকে ০.৪ মিটার ও পিটের দিকে ০.৮ মিটার পর্যন্ত পোস্টদ্বয় সরাতে পারবেন।
৪. প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেলে অনুশীলনের জন্য লাফের স্থান ব্যবহার করা হয় না।
৫. একজন প্রতিযোগীর লাফ কখন ব্যর্থ হবে-
ক. দু'পা শূন্যে উঠে গেলে ৷
খ. যদি লাফের পর ক্রসবার পড়ে যায়।
গ. যদি ক্রসবারের সামনের ভূমি স্পর্শ করে।
ঘ. যদি লাফ না দিয়ে দণ্ড দিয়ে ক্রসবার ফেলে দেয়।
ঙ. যদি লাফের সময় দণ্ড ধরা অবস্থায় নিচের হাত উপরের হাতের উপরে নেয় বা দুই হাত পরিবর্তন করে বেয়ে বেয়ে উপরে উঠার চেষ্টা করে।
৬. একজন প্রতিযোগী এক উচ্চতায় তিনটি করে লাফ দেওয়ার সুযোগ পাবে।
৭. পোল ভালো করে ধরার জন্য হাতে যে কোনো ধরনের পদার্থ লাগাতে পারবে।
৮. লাফ দেওয়ার সময় দণ্ডটি ভেঙ্গে গেলে পুনরায় লাফ দেওয়ার সুযোগ পাবে।
৯. টাই হলে উচ্চতার টাই ভাঙ্গার নিয়ম অনুসারে টাই ভাঙতে হবে।
১০. রানওয়ের দৈর্ঘ্য হবে ৪০ মি প্রস্থ হবে ১.২২ মিটার।
১১. ল্যান্ডিং-এর মাপ হবে দৈর্ঘ্য ৫ মি, প্রস্থ ৫ মিটার ।
১২. প্রত্যেক প্রতিযোগী নিজ নিজ দণ্ড ব্যবহার করবে।
কৌশল
পোল তিনভাবে ধরা যায়-
১. উঁচু করে বহন করা, ২. মধ্যমভাবে বহন করা, ৩. নিচুভাবে বহন করা ।
কোনো প্রতিযোগী কীভাবে দণ্ড ধরবে তা তাদের উচ্চতা ও অনুশীলনের উপর নির্ভর করে। যে যেভাবেই ধরুক বক্সে দন্ডের গোড়া ঢুকিয়ে লাফ দিতে হবে।
লাফ দেওয়ার ৬টি ধাপ-
১. রানওয়ে দিয়ে দৌড়ে আসা
২. পোল ঠিকমতো বক্সে প্রেস করা
৩. ঠিকমতো টেক অফ নেওয়া
৪. পোলে ভর দিয়ে উপরে উঠা
৫. বারের উপর শরীর দোল খাওয়ানো
৬. পোল ছাড়া ও শরীর ঘুরিয়ে ল্যান্ডিং করা
আন্তঃস্কুল ও মাদ্রাসা ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় নিক্ষেপ বিভাগে গোলক, বর্শা ও চাকতি এই তিনটি প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এই তিনটি ইভেন্টের নিয়মাবলি ও কলাকৌশল বর্ণনা করা হলো-
১. গোলক নিক্ষেপ : গোলকটি লোহা, পিতল বা ঐ জাতীয় কোনো বস্তু দ্বারা তৈরি হবে। আকৃতি গোলাকার এবং মসৃণ হবে । গোলকের ওজন পুরুষদের জন্য ৭.২৬০ কেজি। মহিলাদের জন্য ৪ কেজি। শট পুট সার্কেলের ব্যাস হবে ২.১৩৫ মি। সেক্টরের কোণ হবে ৩৪.৯২°। একটি বাঁকানো কাঠের তৈরি স্টপ বোর্ড বৃত্তের সামনের দাগের উপর বসাতে হবে। স্টপ বোর্ডটি সাদা রঙের হবে এবং মাটিতে দৃঢ়ভাবে লাগানো থাকবে। পায়ের ধাক্কা লেগে যেন সরে না যায়।
গোলক নিক্ষেপের কৌশল : গোলকটি হাতের তালুতে না ধরে আঙ্গুলের গোড়াসহ সম্পূর্ণ আঙ্গুলের মধ্যে থাকবে। বুড়ো আঙ্গুল ও কনিষ্ঠ আঙ্গুল গোলকের দুইদিকে একটু ছড়িয়ে থাকবে যাতে পড়ে না যায়। এরপর গোলকটি গলা ও কাঁধের মাঝখানে রাখতে হবে এবং হাতের কনুই কিছুটা উঁচুতে থাকবে। যে দিকে গোলকটি ছোড়া হবে তার বিপরীত দিকে মুখ করে দাঁড়াতে হবে। ডান পা সামনে ও বাম পায়ের পাতাকে পিছনে নিয়ে ডান পায়ের গোড়ালির কাছে রাখতে হবে। এরপর পাসহ শরীরকে পিছনে টেনে এনে শরীর পাশে ঘুরে আসবে।
নিয়মাবলি
১. গোলকটি সেক্টরের মধ্যে নিক্ষেপ করতে হবে।
২. আটজন প্রতিযোগী হলে সবাই ৬টি করে নিক্ষেপ করার সুযোগ পাবে।
৩. আটের অধিক হলে প্রথমে ৩টি করে নিক্ষেপ করে বাছাই করতে হবে। বাছাইকৃত প্রতিযোগীগণ আরও তিনটি করে নিক্ষেপ করার সুযোগ পাবে।
৪. নিক্ষেপ শেষে বৃত্তের উপরে স্পর্শ করা যাবে না।
৫. গোলকটি মাটিতে না পড়া পর্যন্ত বৃত্ত থেকে বের হওয়া যাবে না ।
৬. নাম ডাকার ৬০ সেকেন্ডের ভিতর নিক্ষেপ করতে হবে।
২. বর্শা নিক্ষেপ : বর্শা নিক্ষেপের ইংরেজি হলো জ্যাভেলিন থ্রো। বর্শার দৈর্ঘ্য পুরুষের জন্য ২.৬০ - ২.৭০ মিটার এবং মহিলাদের জন্য ২.২০ - ২.৩০ মিটার। বর্ণার ওজন পুরুষদের ৮০০ গ্রাম, মহিলাদের ৬০০ গ্রাম । রানওয়ে কমপক্ষে ৩৩.৫ মিঃ হবে। ৮ মি : লম্বা ও ৪ মি চওড়া একটি বৃত্তচাপ অঙ্কন করতে হবে। আর্কটি একটি কাঠ ধাতুর তৈরি বস্তু দ্বারা মাটির সমান্তরালে স্থাপন করতে হবে। দুপাশে ৭৫ মি বাড়ানো থাকবে।
বর্গা নিক্ষেপের কৌশল : প্রথমে জ্যাভেলিন ধরা শিখতে হবে। কারণ ধরা ভালো হলে ছোড়াও ভালো হবে। ধরা তিন প্রকার-
ক. সামনের আঙ্গুল দিয়ে ধরা (Fore finger grip) : বর্শাটি সামনের আঙ্গুল দিয়ে চেপে ধরতে হয় ।
খ. মধ্যম আঙ্গুল দিয়ে ধরা (Middle finger grip) : মাঝের আঙ্গুল দিয়ে চেপে ধরা । গ. মধ্যম ও সামনের আঙ্গুলের মাঝখান দিয়ে ধরা (In between fore and middle finger ) : সামনের আঙ্গুল ও মাঝের আঙ্গুলের মাঝখানে দিয়ে ধরা।
বহন করা : রানওয়ে দিয়ে দৌড়ে আসার সময় তিনভাবে জ্যাভেলিন বহন করা যায় ১. কাঁধের নিচ দিয়ে, ২. কাঁধের উপর দিয়ে, ৩. মাথা বরাবর। যার যেভাবে সুবিধা মনে হবে সে সেভাবে জ্যাভেলিন বহন করতে পারে। তবে উঁচু করে বহন করলে সুবিধা হয়।
বর্শা নিক্ষেপ : বর্শা নিক্ষেপের সময় ৪টি ধাপ (Phase) অতিক্রম করতে হয়।
১. দৌড়ে আসা, ২. পাঁচ স্টেপের রিদম, ৩. নিক্ষেপ, ৪. পূর্বের অবস্থায় ফেরা
১. দৌঁড়ে আসা : বর্শা ধরে ছোড়ার জন্য রানওয়ে দিয়ে দৌঁড়ে আসা।
২. পাঁচ স্টেপের রিদম : ছোড়ার আগে রিদমের সাথে পাঁচটি পদক্ষেপ নিয়ে বর্ণাটি নিক্ষেপ করতে হয়।
৩. নিক্ষেপ : ৫টি পদক্ষেপ নিয়ে বর্শা ছুড়ে ভারসাম্য রক্ষা করতে হয়।
৪. পূর্বের অবস্থায় ফেরা (Recovery) : ভারসাম্য রক্ষার পর পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসতে হয়।
বর্শা নিক্ষেপের নিয়মাবলি
১. বর্ণাটি সেক্টরের মধ্যে পড়তে হবে এবং মাথা প্রথমে মাটি স্পর্শ করবে।
২. বর্শা মার্কার স্পর্শ করে বা সামনের দাগ স্পর্শ করে নিক্ষেপ করা যাবে না ।
৩. নিক্ষেপের পর পাশের বাড়ানো রেখা অতিক্রম করা যাবে না।
৪. নাম ডাকার ৬০ সেকেন্ডের ভিতর নিক্ষেপ করতে হবে।
৫. টেপ দ্বারা দুই আঙ্গুলে পেঁচানো যাবে না ৷
৬. হাতে দস্তানা বা গ্লাভস ব্যবহার করা যাবে না।
৭. শক্ত করে ধরার জন্য হাতে পাউডার জাতীয় পদার্থ ব্যবহার করা যাবে ।
৩. চাকতি নিক্ষেপ : চাকতি নিক্ষেপ একটি জনপ্রিয় ফিল্ড ইভেন্ট। ডিসকাস বা চাকতি হলো গোলাকার একটি চাকতি। পুরুষদের জন্য চাকতির ওজন ২ কেজি এবং মহিলাদের জন্য এর ওজন ১ কেজি। চাকতি নিক্ষেপের সার্কেলের ব্যাস ২.৫ মিটার। বৃত্তের চারদিকে লোহার রিং মাটিতে বসানো থাকবে। বৃত্তটি কংক্রিটের ও খসখসে হবে।
চাকতি নিক্ষেপের কৌশল
ক. চাকতি ধরা
১. প্রথমে বিপরীত হাতে চাকতিটি রাখতে হবে।
২. মসৃণ পিঠ উপরে থাকবে।
৩. যে হাতে নিক্ষেপ করা হবে সে হাতের মধ্যের তিন আঙ্গুনের প্রথম ভাঁজে ডিসকাসকে আঁকড়িয়ে ধরতে হবে।
৪. বৃদ্ধ ও কনিষ্ঠ আঙ্গুলের সাহায্যে সাপোর্ট নিতে হবে।
৫. আঙ্গুলগুলো ফাঁকা করে রাখতে হবে।
চাকতি নিক্ষেপের ধাপসমূহ
চাকতি নিক্ষেপের ধাপ তিনটি। ১. সুইং, ২. টার্ন, ৩. নিক্ষেপ
চাকতির সার্কেল ও সেক্টর
১. সুইং : বৃত্তের ভিতর দাঁড়িয়ে চাকতিটি শক্তভাবে ধরে নিক্ষেপকারীর সুবিধা মতো সুইং দিবে।
২. টার্ন : ছোড়ার পূর্ব মুহূর্তে ১.১/২ পাক ঘুরে চাকতিটি ছুড়বে।
৩. নিক্ষেপ : ঘোরার সাথে সাথে পায়ের উপর ভর করে নিক্ষেপ করতে হয়। নিক্ষেপের পর এক পায়ের উপর শরীরের ভারসাম্য রাখতে হয়।
নিয়মাবলি
১. নাম ডাকার ৬০ সেকেন্ডের ভিতর নিক্ষেপ করতে হবে।
২. বৃত্তের মধ্যে থেকে চাকতি নিক্ষেপ করতে হবে। ৩. নিক্ষেপের পর পিছনের অংশ দিয়ে বের হতে হবে।
৪. চাকতিটি সেক্টরের মধ্যে পড়তে হবে।
৫. চাকতিটি শূন্যে থাকা অবস্থায় বৃত্ত থেকে বের হওয়া যাবে না।
৬. সার্কেলের চতুর্দিকের লোহার রিং এর উপরে স্পর্শ করা যাবে না।
৭. নিক্ষেপের সময় বৃত্তের বাইরের ভূমি স্পর্শ করা যাবে না।
সাঁতার একটি অতি প্রাচীন ক্রীড়া। প্রাচীন যুগে মানুষ বাঁচার জন্য সাঁতার শিখেছে। এজন্য কোনো নিয়মকানুন কলাকৌশলের প্রয়োজন ছিল না। পরবর্তীকালে সুস্বাস্থ্য গঠন ও নির্মল চিত্ত বিনোদনের জন্য সাঁতার প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মানুষেকে আনন্দ দিয়ে আসছে। বর্তমানে যে ধরনের সাঁতার আমরা দেখতে পাই সে সাঁতার প্রথমে ইংরেজরা শুরু করেন। ইংরেজরা প্রথমে ব্রেস্ট স্ট্রোক ও সাইড স্ট্রোক দিয়ে সাঁতার শুরু করেন। ১৮৭৩ সালে ইংল্যান্ডে প্রথম প্রতিযোগিতামূলক সাঁতার অনুষ্ঠিত হয়। আস্তে আস্তে সারা বিশ্বে এর প্রসার ঘটতে থাকে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ অ্যামেচার সুইমিং ফেডারেশন গঠিত হয়। তখন থেকে এই ফেডারেশন বাংলাদেশে সাঁতারের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।
সাঁতারের কলাকৌশল : প্রতিযোগিতামূলক সাঁতার চার রকমের।
১. ফ্রি স্টাইল (Free style), ২. ব্যাক স্ট্রোক বা চিৎ সাঁতার (Back stroke), ৩. ব্রেস্ট স্ট্রোক বা বুক সাঁতার (Breast stroke), ৪. বাটার ফ্লাই বা প্রজাপতি সাঁতার (Butterfly)।
ক. ফ্রি স্টাইল বা মুক্ত সাঁতার : এই সাঁতারে একজন প্রতিযোগী যে কোনো স্টাইলে সাঁতার কাটতে পারে। তবে কীভাবে সাঁতার কাটলে দ্রুত যাওয়া যায় তা সাঁতারু বার বার অনুশীলন করে আয়ত্তে আনতে পারে। এজন্য দেহের অবস্থান, পা ও হাতের কাজ, শ্বাস-প্রশ্বাস- এইসব প্রক্রিয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
১. দেহের অবস্থান : দেহটাকে উপুড় করে পানির সমান্তরালে রাখতে হবে। মাথা পানির সামান্য উপরে থাকবে। তবে পানির মধ্যে মাথার অবস্থান কখনো পানির উপর তুলে, আবার কখনো ঘাড় কাত করে মাঝে মাঝে পরিবর্তন করতে হয়।
২. পায়ের কাজ : পায়ের কাজ কোমর থেকে শুরু হয় এবং সামনে এগোনোর জন্য ডান ও বাম পা একের পর এক উঠা-নামা করে। হাঁটুর কাছে পা সামান্য ভাঁজ করা অবস্থায় থাকে এবং পায়ের পাতা সোজা থাকে। বাম পায়ের গোড়ালি পানির উপর উঠে না। পায়ের পাতা দিয়ে যখন পানিতে চাপ দেওয়া হয় তখন পায়ের পাতা ১২-১৮ ইঞ্চি পরিমাণ পানির নিচে যেতে পারে। পানির মধ্যে দু'হাত একবার ঘুরে আসার সময় দুই পা পানির মধ্যে ৬ বার উঠা-নামা করবে। পায়ের কাজকে দু'ভাগে ভাগ করা যায়- ক. উপরে কিক, খ. নিচে বিট।
৩. হাতের কাজ : পানিতে দুই হাত একের পর এক মাথার সামনে ফেলতে হবে। এক হাত পানি কেটে শরীরের পাশ দিয়ে কোমরের কাছে যাবে, ঐ সময় কনুই সামান্য ভাঁজ হবে। হাতটি পানির উপর উঠা মাত্র অপর হাত মাথার সামনে পানিতে গিয়ে পড়বে। পানিতে হাত পড়ার সাথে হাত দিয়ে পানি কেটে শরীরকে সামনে নিতে হবে। হাত ও পায়ের সমন্বিত কাজের ফলে সাঁতারুর গতি বৃদ্ধি পায়।
৪. শ্বাস প্রশ্বাস : সাঁতার কাটার সময় মাথাটাকে ঘুরিয়ে পানির উপর মুখ দিয়ে শ্বাস নেওয়া ও নিঃশ্বাস ছাড়া হয়। যে হাত পানির উপরে থাকবে সেদিকে মাথা ঘুরিয়ে মুখ দিয়ে শ্বাস- প্রশ্বাস ক্রিয়া চালাতে হবে। তবে নিঃশ্বাস ছাড়তে হবে মুখ পানির মধ্যে ঘুরে যাওয়ার সময় ।
খ. ব্যাক স্ট্রোক বা চিৎ সাঁতার : পানির উপর পিঠ রেখে চিৎ হয়ে পিছনের দিকে সাঁতার কাটতে হয় বলে একে চিৎ সাঁতার বলে।
১. দেহের অবস্থান : পানিতে শরীরকে চিৎ করে রাখতে হবে। সাধারণত মাথাটাকে পানির ভিতর রাখতে হয়। এর ফলে শরীর পানির উপর সমান্তরাল অবস্থায় থাকে। নাক পানির মধ্যে না ডুবে পানির উপরে থাকবে এবং দৃষ্টি থাকবে পায়ের গোড়ালির দিকে।
২. গায়ের কাজ : মুক্ত সাঁতার বা ফ্রি স্টাইলের মতো চিৎ সাঁতারে পায়ের কাজ করা হয়। মুক্ত সাঁতারে পানির উপর উপুড় হয়ে দু'পা পানির মধ্যে থেকে একের পর এক উঠানামা করে। ঠিক তেমনি চিৎ সাঁভারে পানিতে চিৎ হয়ে থেকে দু'পা পানির মধ্যে উঠা নামা করবে। এ সময় পায়ের পাতা সোজা থাকবে ।
৩. হাতের কাজ : এক হাত কানের পাশ দিয়ে সোজা পিছনে নেওয়ার পর হাতের তালু ও আঙ্গুল দিয়ে পানি কেটে শরীরের পাশে নিয়ে আসবে তখন অপর হাত একইভাবে পিছনে গিয়ে পড়বে। এভাবে একের পর এক হাত পিছনে ও পাশে আসবে এবং এর সাথে পায়ের কাজ সমন্বিত হবে।
৪. শ্বাস-প্রশ্বাস : যেহেতু পানির উপর চিৎ হয়ে থাকার জন্য মুখ উপরের দিকে থাকবে তাই শ্বাস-প্ৰশ্বাস স্বাভাবিকভাবে নিতে হবে।
গ. ব্রেস্ট স্ট্রোক বা বুক সাঁতার : পানিতে বুকের উপর ভর করে এই সাঁতার কাটতে হয় বলে একে বুক সাঁতার বলে।
১. দেহের অবস্থান : দেহ থাকবে পানির উপরিভাগ সমান্তরালে। দেহের পিছনের অংশ কিছুটা পানির মধ্যে থাকে। মাথা থাকবে পানির উপরে। হাতের ও পায়ের কাজের শেষে শরীর যখন সামনে এগোবে তখন নাক ও মুখ পানির কিছুটা নিচে যাবে।
২. পায়ের কাজ : দুই পা কে এক সাথে রাখতে হবে। দুই হাত মাথার সামনে লম্বা করে ফেলে দুই হাত দিয়ে শরীরের দুইপাশে পানি কেটে টেনে আনতে হবে। এ সময় দুই হাঁটু ভাঁজ করে পানির নিচে যাবে, আর দু' গোড়ালি এক সাথে কোমরের কাছাকাছি এসে সজোরে পানিতে ধাক্কা দেবে।
৩. হাতের কাজ : দুই হাত এক সাথে সামনে প্রসারিত করতে হবে। দুই হাত এক সাথে পানি কেটে শরীরের দু'দিকে আসার সময় কনুই সামান্য ভাঁজ হবে। পানি কেটে আসার পর আবার মুখের সামনে দুই হাত একত্রিত হয়ে সামনে চলে যাবে। এ সময় নাক, মুখ ও কপালের কিছুটা পানির মধ্যে থাকবে।
৪. শ্বাস প্রশ্বাস : মুখের সামনে দুই হাত প্রসারিত করার পর যখন শরীরের দু'পাশে পানি কেটে আসবে তখন মুখ পানি থেকে উপরে উঠিয়ে শ্বাস নেবে এবং পানির মধ্যে নিঃশ্বাস ছাড়বে।
ঘ. বাটার ফ্লাই স্ট্রোক বা প্রজাপতি সাঁতার : চার প্রকার সাঁতারের মধ্যে বাটার ফ্লাই স্ট্রোকের সাঁতার সবচেয়ে কঠিন। এতে সাঁতারুকে অনেক পরিশ্রম করতে হয়। এর কলাকৌশল আয়ত্ত করতে সাঁতারুকে অনেক অনুশীলন করতে হয়।
১. দেহের অবস্থান : অন্য সকল স্ট্রোকের মতো দেহ যথাসম্ভব পানির উপর সমান্তরাল অবস্থানে থাকবে। যেহেতু শরীরকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে হয় এবং মাথা উঠিয়ে শ্বাস নিতে হয় তাই শরীরের পিছনের অংশটুকু একটু পানির নিচে থাকে।
২. পায়ের কাজ : দুই হাত জোড়া অবস্থায় থাকবে। কোমর থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত যত বেশি নমনীয় হবে, তত জোরে পানিতে জোড় পায়ে আঘাত করা যাবে। দুপায়ের হাঁটু একটু ভেঙ্গে নিচে ও পিছনে পানিতে ধাক্কা দিতে হবে। ডলফিন মাছ যেভাবে লেজের সাহায্যে পানিতে ধাক্কা দিয়ে চলে সেভাবে পায়ের এই ধাক্কাকে ডলফিন কিক বলে।
৩. হাতের কাজ : দুই হাত একসাথে মাথার সামনে নিক্ষেপ করতে হয়। দুই হাত এক সাথে মাথার সামনে চাপ দিয়ে শরীরকে সামনে এগিয়ে নিতে হয়। এর সাথে পায়ের ডলফিন কিকের সমন্বয় ঘটবে। পানির ভিতর থেকে দুই হাত উঠিয়ে যখন সামনে ফেলা হয় তখন খানিকটা প্রজাপতির পাখার মতো দেখতে মনে হবে। তাই একে বাটারফ্লাই স্ট্রোক নাম দেওয়া হয়েছে ।
৪. শ্বাস-প্রশ্বাস : একবার হাতের কাজ সম্পন্ন হলে দুইবার পায়ের ডলফিন কিক সম্পন্ন হয়। হাতের সঞ্চালনের কাজ এবং দ্বিতীয় বার পায়ের কিকের সময় মুখ দিয়ে শ্বাস গ্রহণের কাজ সম্পন্ন হয়। তখন মাথা থাকে পানির উপরে ।
ঘূর্ণন (Turning) :
ঘূর্ণন সাঁতারের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ঘুরতে দেরি হলে সময় বেশি লাগে। ঘূর্ণনের সময় সাঁতারের গতি কমানো যাবে না। একজন সাঁতারুকে ঘূর্ণনের সময় পর্যায়ক্রমে নিচের কাজগুলো করতে হয়-
১. দেয়ালের কাছে গিয়ে ঘূর্ণনের জন্য প্রস্তুত হতে হবে।
২. ঘূর্ণনের কৌশল মোতাবেক শরীরকে ঘোরাতে হবে।
৩. হাঁটু বাঁকা করে পদদ্বয় দেয়ালের কাছে স্থাপন করতে হবে।
৪. পায়ের পাতা স্থাপন ঠিকমতো হলেই শরীরকে ঘোরাতে হবে।
৫. দেয়ালের সাথে পা ধাক্কা দিয়ে বেরিয়ে আসতে হবে। ৬. গ্লাইডের সময় শরীরকে সোজা রেখে অগ্রসর হতে হবে।
৭. পায়ের ও হাতের কাজ শুরু করতে হবে।
সাঁতারের নিয়মাবলি
১. সুইমিং পুলের দৈর্ঘ্য ৫০ মিটার ও প্রস্থ ২১ মিটার হবে।
২. সুইমিং পুলে লেন থাকে ৮টি, লেনের প্রস্থ ২.৫০ মিটার, পানির গভীরতা ১.৮ মিটার। ৩. আরম্ভ স্থান অপিচ্ছিল হবে এবং পানি থেকে ০.৫০ -০.৭৫ মিটার উপরে থাকবে।
৪. আরম্ভকারী আরম্ভের সময় নিচের শব্দগুলো উচ্চারণ করবেন টেক ইউর মার্ক, সেট, পিস্তলের আওয়াজ।
৫. চিৎ সাঁতার বাদে অন্য সাঁতারগুলো ডাইভ দিয়ে শুরু করতে হবে। ৬. হিটে যে ১ম ও ২য় হবে তাদেরকে ৪ ও ৫ নং লেন দিতে হবে।
৭. ফ্রি স্টাইল ও চিৎ সাঁতারে এক হাত দিয়ে স্পর্শ করে সাঁতার শেষ করা যায় কিন্তু বুক ও প্রজাপতি সাঁতারে দু'হাত দিয়ে ফিনিশিং দেয়াল স্পর্শ করতে হয়।
৮. যদি কোনো সাঁতারু নির্দিষ্ট স্টাইলে না সাঁতরিয়ে অন্য স্টাইলে সাঁতরায় তাহলে সে অযোগ্য হবে।
৯. ব্যাক স্ট্রোক সাঁতারের সময় দেয়ালের সাথে যে হাতল আছে তা ধরে পা দ্বারা পুশ করে চিৎ হয়ে আরম্ভ করতে হবে।
১০. একজন সাঁতারু লেন পরিবর্তন করতে পারবে না বা অন্য সাঁতারুকে বাধা প্রদান করতে পারবে না।
রিলে :
রিলে দুই প্রকার। ক. মিডলে রিলে খ. ব্যক্তিগত মিডলে রিলে ।
মিডলে রিলে : চারজন সাঁতারু যখন চারটি স্টাইলে একই দূরত্বে সাঁতার দেয় তাকে মিডলে রিলে বলে। মিডলে রিলের ক্রম- ১. চিৎ সাঁতার, ২. বুক সাঁতার, ৩. প্রজাপতি সাঁতার, ৪. মুক্ত সাঁতার।
ব্যক্তিগত মিডলে : একজন সাঁতারু যখন একাই ৪টি স্টাইলে সাঁতার দেয় তাকে ব্যক্তিগত মিডলে রিলে বলে। এ রিলের ক্রম হলো- ১. প্রজাপতি সাঁতার, ২. চিৎ সাঁতার, ৩. বুক সাঁতার, ৪. মুক্ত সাঁতার।
ইভেন্ট অনুযায়ী যোগ্যতার ভিন্নতা রয়েছে। সব ইভেন্টের জন্য একই ধরনের যোগ্যতা প্রয়োজন হয় না। একেক ইভেন্টের জন্য একেক ধরনের শারীরিক যোগ্যতা ও অন্যান্য যোগ্যতার প্রয়োজন হয়। যেমন একজন নিক্ষেপকারীর জন্য যে ধরনের শারীরিক যোগ্যতার প্রয়োজন হয় একজন দূরপাল্লার দৌড়বিদের জন্য তার প্রয়োজন হয় না। অ্যাথলেটিকস ও সাঁতার প্রতিযোগিতা ইভেন্ট ভিত্তিক ফলে ব্যক্তিগত কলা কৌশলের উপর প্রতিযোগীর সফলতা নির্ভর করে। অ্যাথলেটিকস ও সাঁতার প্রতিযোগিতায় প্রতিযোগীদের যোগ্যতা নিচে তুলে ধরা হলো-
১. শারীরিক যোগ্যতা : শারীরিক যোগ্যতা সব খেলার জন্যই প্রয়োজন। কোনো খেলায় শক্তি, কোনো খেলায় দম, কোনো খেলায় গতির প্রয়োজন হয় বেশি। তবে মনে রাখতে হবে শারীরিক যোগ্যতার ইভেন্ট অনুযায়ী পার্থক্য আছে ।
ক. স্বল্প দূরত্বের দৌড়বিদ (স্প্রিন্টার) : এ সমস্ত ইভেন্টের দৌড়বিদের জন্য শারীরিক সক্ষমতার ভিতর শক্তি সবচেয়ে প্রয়োজন। বিশেষ করে পায়ের মাংসপেশির উন্নতি অপরিহার্য। এর সাথে প্রয়োজন গতির ।
খ. দূরপাল্লার দৌড়বিদ : এ দৌড়ের জন্য শারীরিক যোগ্যতার মধ্যে দমের প্রয়োজন হয় বেশি। যাদের দম বেশি তারা এ ইভেন্টগুলোতে ভালো করে। এর সাথে শরীরের অন্যান্য যোগ্যতারও প্রয়োজন রয়েছে।
গ. স্বল্প দূরত্বের সাঁতারু : শারীরিক যোগ্যতার মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হাতের শক্তি, শরীরের নমনীয়তা, বাকিগুলোরও প্রয়োজন তবে এ দুটোর মতো নয়। এর সাথে আরও অন্যান্য যোগ্যতারও দরকার আছে।
ঘ. দূরপাল্লার সাঁতারু : এসব ইভেন্টের প্রথম যোগ্যতা হলো দম। পানির উপর ভেসে থাকার দক্ষতা ইত্যাদি। এছাড়া হাত ও কাঁধের মুভমেন্টের দক্ষতারও প্রয়োজন ৷
২. কলাকৌশলের পারদর্শিতা অর্জনের দক্ষতা : যেহেতু এ দুটি প্রতিযোগিতা ব্যক্তি পারদর্শিতার উপর নির্ভর করে তাই-
ক. রি-অ্যাকশন টাইম : দৌড় ও সাঁতারের ইভেন্টগুলো পিস্তলের আওয়াজের সাথে সাথে শুরু করতে হয় সেজন্য রি-অ্যাকশন টাইম বা প্রতিক্রিয়া ভালো হতে হবে। স্বল্প দূরত্বের দৌড় ও স্বল্প দূরত্বের সাঁতারের জন্য আরম্ভ গুরুত্বপূর্ণ
খ. সমাপ্তি রেখা স্পর্শ করার যোগ্যতা : সমাপ্তি রেখা স্পর্শ করার দক্ষতাও অত্যন্ত জরুরি। সাঁতারই হোক বা অ্যাথলেটিকস হোক দুটো প্রতিযোগিতাই নিয়মমাফিক স্পর্শ করার দক্ষতা থাকতে হবে।
গ. যারা নিক্ষেপকারী তাদের ঘোরা, নিক্ষেপ করা ও ফলো-থ্রু করা, ফলো-প্রু সঠিক করার দক্ষতা থাকতে হবে।
ঘ. সংশ্লিষ্ট ইভেন্টের নিয়মকানুন জানা : সংশ্লিষ্ট ইভেন্টের নিয়ম-কানুন সম্বন্ধে সম্যক ধারণা থাকতে হবে।
ঙ. আত্মবিশ্বাস : প্রতিযোগীদের আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে। মনোবল দৃঢ় না হলে ভালো ফলাফল আশা করা যায় না ।
চ. শৃঙ্খলা ও আনুগত্যবোধ : প্রত্যেক প্রতিযোগীর শৃঙ্খলার মাধ্যমে অনুশীলন, সঠিক বিশ্রাম করতে হবে। শিক্ষক/প্রশিক্ষকের নির্দেশ মতো কাজ করতে হবে।