আত্মকর্মসংস্থানের ধারণা

নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - ব্যবসায় উদ্যোগ - আত্মকর্মসংস্থান | NCTB BOOK

এসএসসি পাস হাফিজুর রহমান ২০০০ সালে জাহাজে কাজ শুরু করেন। ছোট চাকরি, খাটুনি অনেক। কিন্তু বেতন অনেক কম। সংসার চলছিল না। বাধ্য হয়ে তাকে জাহাজের চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে গ্রাম ফিরে আসতে হয়। ঔষধ কোম্পানিতে চাকরি নেয়ার অনেক চেষ্টা করে তিনি ব্যর্থ হন। ডিগ্রি পাসের সনদ না থাকায় চাকরি মেলেনি। তবে পরিশ্রমী হাফিজুর দমে যাননি। বাড়ির আশপাশে পতিত জমি নিয়ে কিছু একটা করার কথা ভাবতে থাকেন। উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে শুরু করেন পতিত জমিতে করলা চাষ ৷ সপ্তাহে এখন তার ক্ষেতে ৭ মণ করলা ফলে। করলার আয় দিয়েই হাফিজুরের ছয় সদস্যের পরিবারের ভরণপোষণ চলছে স্বাচ্ছন্দ্যে। পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়ার মাটিভাঙ্গা গ্রামের শিক্ষিত চাষি হাফিজুর রহমান করলার পাশাপাশি নানা রকম সবজি আবাদ করে বেকারত্ব ঘুচিয়ে এখন স্বাবলম্বী, দারিদ্র্যকে করেছেন জয়।
হাফিজুর জানান, এবার তিনি ২ একর জমিতে নানা ধরনের সবজির আবাদ করেছেন। অর্ধেক জমিতে হাইব্রিড টিয়া প্রজাতির করলা চাষ করেছেন। অন্য জমিতে পুঁইশাক, বরবটি, কুমড়া, বেগুন, চিচিঙ্গা, ঢেঁড়সসহ নানা সবজির আবাদ করেছেন। প্রতি কেজি ৩০ টাকা দরে স্থানীয় পাইকারদের কাছে তিনি করলা বিক্রি করে আসছেন। পাইকারি ক্রেতারা তার ক্ষেতে এসে করলা কিনছেন। এ বছর করলা বিক্রি করে তিনি প্রায় ৩ লাখ টাকা আয় করবেন বলে আশাবাদী। তবে করলা আবাদে ৫৫ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। হাফিজুর একজন উদ্যমী কৃষক তাই সে সফল হয়েছে। এ ব্যাপারে কৃষি অফিসের নারায়ণ চন্দ্র মজুমদার বলেন, হাফিজুরের সাফল্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে অনেকেই সবজি আবাদে মনোনিবেশ করছেন। যে কোনো বেকার যুবকের জন্য বিষয়টি অনুকরণীয় ।
এই যে জনাব হাফিজুর রহমান নিজের দক্ষতা ও গুণাবলি দ্বারা নিজেই নিজের কর্মসংস্থান করেছেন এটাই আত্মকর্মসংস্থান। এখন আমরা বুঝতে পারছি যে, নিজস্ব পুঁজি অথবা ঋণ করা স্বল্প সম্পদ, নিজস্ব চিন্তা, জ্ঞান, বুদ্ধিমত্তা ও দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে ন্যূনতম ঝুঁকি নিয়ে আত্ম প্রচেষ্টায় জীবিকা অর্জনের ব্যবস্থাকে আত্মকর্মসংস্থান বলে। জীবিকা অর্জনের বিভিন্ন পেশার মধ্যে আত্মকর্মসংস্থান একটি জনপ্রিয় পেশা। বিভিন্ন খুচরা বিক্রয়, রেডিও ও টেলিভিশন মেরামত, হাঁস-মুরগি পালন, মৌমাছি চাষ ইত্যাদি আত্মকর্মসংস্থানের আওতাভুক্ত।

ব্যবসায় উদ্যোগের সাথে আত্মকর্মসংস্থানের সম্পর্ক খুব নিবিড়। আত্মকর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে একজন ব্যক্তি নিজের কর্মসংস্থানের চিন্তা করে কাজে হাত দেন। একজন আত্মকর্মসংস্থানকারী ব্যক্তি তখনই একজন উদ্যোক্তায় পরিণত হবেন, যখন তিনি নিজের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি সমাজের আরও কয়েকজনের কর্মসংস্থানের চিন্তা নিয়ে কাজ শুরু করেন, ঝুঁকি আছে জেনেও এগিয়ে যান এবং একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। সে ক্ষেত্রে সকল ব্যবসায় উদ্যোক্তাকে আত্মকর্মসংস্থানকারী বলা গেলেও সকল আত্মকর্মসংস্থানকারীকে ব্যবসায় উদ্যোক্তা বলা যায় না ।

Content added || updated By
Promotion