আমার আত্মবিশ্বাস আমার পাথেয়

অষ্টম শ্রেণি (মাধ্যমিক ২০২৪) - স্বাস্থ্য সুরক্ষা - Wellbeing - NCTB BOOK

আমাদের জীবনে কত কত ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় আমাদের বিভিন্ন অভিজ্ঞতা হয়। কিছু ঘটনা আমাদের মনকে আনন্দে ভরিয়ে দেয়। যে ঘটনাগুলো আমাদের জীবনে আগেও ঘটেছে এবং আমরা তা থেকে ইতিবাচক অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি তা নিয়ে আমাদের কী কোনো ভয় থাকে? একেবারেই না। বরং তেমন কোনো ঘটনায় আমরা আত্মবিশ্বাস ও আনন্দের সাথে এগিয়ে যাই। এমনকি নিজেদের অভিজ্ঞতা দিয়ে অন্যদের সহযোগিতা করতেও উদ্যোগ নিয়ে থাকি। এভাবে আমরা নিজেদের কাজে সন্তুষ্ট এবং অনুপ্রাণিত হই।

 অনেক সময় আমরা তো অনেক চ্যালেঞ্জেরও সম্মুখীন হই। তখন কী একই রকম লাগে? একদমই তা নয়, চিন্তায় পড়ে যাই আমরা। আবার এই চ্যালেঞ্জের সাথে যদি আমাদের কোনো নেতিবাচক অভিজ্ঞতার মিল পাই তাহলে সময়টা ভালো কাটে না একেবারেই। এমন পরিস্থিতিতে মনে হয়, ইস এমন কেন হলো! কখনও তার জন্য দুঃখ হয়, কখনও রাগ হয়। আবার কখনও ভয় হয় এই পরিস্থিতিতে কী করব তা ভেবে।

আবার এটাও অনেকাংশে ঠিক যে অপ্রত্যাশিত কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমরা বেশ বিপর্যস্ত হয়ে পড়ি। এই বিপর্যস্ত পরিস্থিতিতে কী করা যেতে পারে তা বুঝতে না পেরে কখনও আমরা মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ি, কখনও নিজের জন্য ক্ষতিকর সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি। সে ক্ষেত্রে সচেতনতা, কিছু জীবন দক্ষতা ও জ্ঞান এই ধরনের বিপর্যস্ততার ব্যবস্থাপনা করে ভালো থাকতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। এ পর্যায়ে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে অপ্রত্যাশিত ফলাফল আমাদের বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রকে কীভাবে প্রভাবিত করতে পারে সে বিষয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন এবং নেতিবাচক প্রভাব থেকে নিজেকে রক্ষা করার উপায় জেনে তা ব্যবহার করার জন্য বেশ কিছু কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করব।

শুরুতেই শিক্ষক আমাদেরকে ৩টি বাক্য লিখে বা ছবি এঁকে নিজের পরিচয় প্রকাশ করতে বলেছেন। এবার 'আমার আমি' ছকে আমরা সেই কাজটি সম্পন্ন করি।'

আমার আমি

 

 

 

 

 

 

 

দলে ভাগ হয়ে আমরা নিজেদের জীবনে ঘটে যাওয়া অপ্রত্যাশিত ঘটনায় মানসিক চাপের পরিস্থিতি এবং সেই পরিস্থিতিতে নিজেদের অনুভূতি, চিন্তা, ইচ্ছা ও আচরণ নিয়ে আলোচনা ও উপস্থাপন করেছি।

আমাদের দলগত কাজ থেকে যে ধারণা পেলাম তা দিয়ে নিজেদের অভিজ্ঞতা থেকে নিচে 'যে সব কারণে সাধারণত মানসিক চাপ তৈরি হয়' বক্সটি পূরণ করি।

যে সব কারণে সাধারণত মানসিক চাপ তৈরি হয়

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

যে সব কারণে সাধারণত বিভিন্ন সময়ে আমাদের মধ্যে ইতিপূর্বে মানসিক চাপ তৈরি হয়েছে এবং সে পরিস্থিতিতে আমরা যে আচরণের মাধমে সাড়া দিয়েছি নিজের অভিজ্ঞতা থেকে এমন কয়েকটি পরিস্থিতি মনে করে অপর পৃষ্ঠার ছকটি পূরণ করি।

মানসিক চাপের ঘটনায় আমার সাড়া

ঘটনা

কী কী অনুভূতি 

অনুভব করি

কী কী চিন্তা হয়কী কী আচরণ করিফলাফল কেমন হয়

স্কুলের বার্ষিক 

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে 

আবৃত্তি করেছিলাম।

ভয় লজ্জা উদ্বিগ্নতাযদি হঠাৎ ভুলে যাই যদি আবৃত্তি ভালো না হয় যদি শিক্ষক কিছু বলেন

১. শিক্ষককে অনুরোধ করি নাম কেটে দিতে। 

২. শিক্ষককের পরামর্শে অনেকবার নিজে নিজে আয়নার সামনে দাড়িয়ে আবৃত্তি করি

সেই অনুষ্ঠানে আবৃত্তি করি। আমার অনেক ভালো লাগে, সাহস পাই। এখন আমি অন্য অনুষ্ঠানেও আবৃত্তি করি

 

 

    

 

 

    

 

 

    

মানসিক চাপের বিভিন্ন ঘটনায় আমরা যেভাবে সাড়া দিই প্রথমে নিজে ও পরে সহপাঠীদের সাথে তা বিশ্লেষণ করলাম। আমরা যে আচরণগুলো করি এবং তার ফলাফল নিয়েও আলোচনা করলাম।

মানসিক চাপের পরিস্থিতিতে সাধারণত অস্বস্তি, উদ্বিগ্নতা, ভয়, বিরক্তি, হতাশা, অসহায়বোধ, রাগ প্রভৃতি অনুভূতি হয়ে থাকে।

মানসিক চাপ সবসময় কি খারাপ?

আমরা কি খেয়াল করেছি সকালে যখন স্কুলে যাওয়ার সময় হয়, তখন খুব সচেতন থাকি? আগে আগে প্রস্তুতি নিই যেন দেরি না হয়ে যায়। তখন এক ধরনের মানসিক চাপ হয়। উদ্বিগ্ন বোধ করি এই ভেবে যে স্কুলে পৌঁছাতে যদি দেরি হয়ে যায় তাহলে সকালের সমাবেশে অংশগ্রহণ করতে পারব না। এ সময় আমাদের মানসিক চাপ হয় বলেই কিন্তু আমরা সময় হাতে নিয়ে এমনভাবে বের হই যেন দেরি না হয়। আবার কোনো বিষয় উপস্থাপন করার দায়িত্ব পেলেও কারও কারও মানসিক চাপ হয়। তাই আগে থেকে বিষয়টি সম্পর্কে ভালো করে ধারণা নিয়ে নিজেকে প্রস্তুত করি। কখনও প্রয়োজন হলে অন্যদের কাছ থেকে পরামর্শ নিই যাতে আমি প্রত্যাশা অনুযায়ী ভালো করতে পারি। এভাবে মানসিক চাপ কখনও কখনও কোনো কোনো পরিস্থিতিতে প্রত্যাশিত ফলাফল পেতে এবং এমন পরিস্থিতিতে আমাদের করণীয় সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করে।

তাহলে এবার আমরা একটু দেখে নিই 'মানসিক চাপের ঘটনায় আমার সাড়া' ছকের কোন কোন ক্ষেত্রে মানসিক চাপ হলে আমার উপরে তার কেমন প্রভাব পড়ছে। এরপর এই অভিজ্ঞতা দিয়ে অপর পৃষ্ঠার 'আমার মানসিক চাপের প্রভাব' ছকটি পূরণ করি ।

আমার মানসিক চাপের প্রভাব

পরিস্থিতিঅনুভূতিআচরণইতিবাচক প্রভাবনেতিবাচক প্রভাব

 

    

 

    

 

    

 

    

 

    

মানসিক চাপ হলো বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ বা ভীতিকর পরিস্থিতিতে আমাদের শারীরবৃত্তীয় সাড়া। আমরা প্রত্যেকেই জীবনের বিভিন্ন সময়ে চ্যালেঞ্জ বা ভীতিকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হই, ফলে কম-বেশি মানসিক চাপ হয়।

মানসিক চাপকে সাধারণত নেতিবাচকভাবে দেখলেও আজ কিন্তু আমরা এর ইতিবাচক দিকগুলোও আবিষ্কার করলাম। কোনো বিষয়কে আমি কোন দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে ব্যাখ্যা করছি এবং এ পরিস্থিতি কীভাবে মোকাবিলা করছি তা কিন্তু খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অতিরিক্ত মানসিক চাপ শরীর ও মনের উপর ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তার করে। এমন পরিস্থিতিতে আমরা বিপর্যস্ত বোধ করি। ইতিবাচক আচরণের মাধ্যমে মানসিক চাপ ব্যবস্থাপনার দক্ষতা শারীরিক ও মানসিকভাবে নিজেদেরকে ভালো রাখতে সাহায্য করে।

এসো এবার আমরা কয়েকটি ঘটনা পর্যালোচনা করি এবং এগুলো থেকে মানসিক চাপের ফলে অনুভূতি ও নেতিবাচক প্রভাবগুলো বোঝার চেষ্টা করি।

ঘটনা ১

 রাখী ১৪ বছরের একটি প্রাণবন্ত মেয়ে। সে সব সময় খুব হাসি খুশি থাকত ছিল। ইদানীং প্রায়শই কিছু বিষয়ে তার খুব বিরক্ত বোধ হয়। তার মনে হয় বাবা মা যেন তার প্রতি কোনো বিশেষ নজর রেখে চলেছে। সে কখন কোথায় কি করছে সব কিছুই খুব খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে জিজ্ঞাসা করছে। রাখীর গত বছরের প্রিয় জামাগুলো মা তাকে পড়তে নিষেধ করে দিয়েছে কিন্তু কারণ জানতে চাওয়াতে মা বলছে যে, সে এখন বড় হয়ে গেছে। একদিন স্কুল থেকে ফেরার পথে রাখী তার বন্ধুদের সাথে খেলার মাঠে কিছুটা দেরি হলো। মা সেটা নিয়ে রাখীকে খেলতেও নিষেধ করে দিল। বাবাকে বললে তিনিও বুঝিয়ে বললেন যে, এতে করে তার পড়াশুনার ক্ষতি হতে পারে, বাইরে না খেলাই ভালো। রাখী এসব যুক্তি মেনে নিতে পারে না। বন্ধুদের সামনে সে খুব অপমানিত বোধ করে। নতুন নিয়ম কানুনগুলো তার কাছে শাস্তিস্বরূপ মনে হয়। কারণ সে অনেকটাই বড় হয়েছে, তাই সে নিজের খেয়াল নিজে রাখতে পারে বলে মনে করে। বাবা মায়ের এমন আচরণে সে কষ্ট পায়। সে ধীরে ধীরে নিজেকে বাইরের পৃথিবী থেকে গুটিয়ে নিতে থাকল এবং বাসায় আত্মীয়স্বজন, এমন কি সমবয়সী চাচাতো, ফুফাতো ভাইবোনরা আসলেও সে বের হতো না। রাখী কোথাও মনোযোগ ধরে রাখতে পারছে না এবং একাকীত্ব বোধ করছে। সে ভাবতে লাগল, এই পরিস্থিতিতে সে কোন ভাবেই পড়াশুনায় মনোযোগ দিতে পারছে না; তাহলে কি হবে এখন?

ঘটনা ২ 

হাসান ও ফয়সাল দুই ভাই। হাসান অষ্টম ও ফয়সাল সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। হাসান পড়াশুনায় এবং ফয়সাল খেলাধুলায় আগ্রহী। তাদের মধ্যে ভালো সম্পর্ক। ফয়সালের মাঝে মাঝে মনে হয় মা-বাবা যেন হাসানকে সব সময় বেশি ভালোবাসে কারণ হাসান পড়াশুনায় ভালো। পরিবারের সবাই হাসানের ফলাফল নিয়ে খুব গর্বিত সেখানে তাকে নিয়ে কারো কোনো মতামত নেই। বাবা বাজার থেকে এসে হাসানকেই ডেকে নিয়ে হিসাবটা দেখে দিতে বলে, আর মা-তো বাসায় যেই আসে হাসানের ভালো ফলাফলের কথা খুব গর্ব করে বলেন। চারদিকে হাসান এর প্রশংসা। এবার বাবা জন্মদিনে হাসানকে ভালো ফলাফলের জন্য তার পছন্দের সাইকেল উপহার দিলেন। এদিকে ফয়সাল যে খেলাধুলায় এতো ভালো সেদিকে তাদের কোনো মনোযোগ নেই। সেও চেষ্টা করে পড়াশুনায় ভালো করতে, যাতে বাবা মা তাকে নিয়েও গর্ব বোধ করে, কিন্তু হাসানের মত ফলাফল করতে পারছে না। এই সব কিছুর জন্য ফয়সাল মনে মনে খুব চাপ বোধ করে ও নিজেকে ব্যর্থ মনে হয়।

ঘটনা ৩ 

আসিফ গতমাসে ১৬ তম বছরে পা দিল। কিছুদিন ধরে সে নিজের কিছু পরিবর্তন খেয়াল করছে। এসব নিয়ে সে খুবই অস্বস্তিতে আছে। আর এমন আরও অনেক পরিবর্তন সে অনুভব করছে যেগুলোর বিষয়ে তার কোনো ধারণাই নেই। সে আগে ভাবত যেসব ছেলে খারাপ চিন্তা করে তাদের সাথেই এমন হয়। সে ভাবছে সবাই তাহলে জেনে যাবে যে আসিফ একটা খারাপ ছেলে। সেই দুশ্চিন্তায় সে রাতে ভালো ভাবে ঘুমাতে পারছে না, পড়াশুনাও ব্যাহত হচ্ছে। আবার কাউকে যে বলবে সেই সাহসও হচ্ছিল না। এরই মধ্যে একদিন বাবা তার সাথে পড়াশুনা নিয়ে খুব রাগারাগি করল। সেই সাথে মা এবং বড় ভাইও যোগ দিল। কেউ তার কথা শুনতে চাইল না! সে বাসা থেকে বের হয়ে বাইরে এলো। সে দেখল পাড়ার কিছু ছেলে একত্রিত হয়ে এক জায়গায় বসে আছে। সেখানে গিয়ে সে দেখল তারা সবাই সিগারেট খাচ্ছে। ছেলেগুলো আসিফকেও বার বার জোর করতে লাগলো। খুব চাপ হচ্ছে মনে; এ অবস্থায় সে কী করবে বুঝতে পারছে না।

সহপাঠীদের সাথে আমরা ৩টি ঘটনা পর্যালোচনা করেছি। আমাদের পরিবার, প্রতিবেশী, আত্মীয় পরিজনের মধ্যেও মাঝে মাঝে এমন অনেক ঘটনা ঘটে থাকে। পত্রিকা, সংবাদমাধ্যমের মাধ্যমেও আমরা প্রায়ই বিভিন্ন কারণে মানসিক চাপের ঘটনায় ও তা ব্যবস্থাপনার দক্ষতার অভাবে অনেক নেতিবাচক অর্থাৎ ক্ষতিকর সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জেনে থাকি। আমাদের পরিবার ও প্রতিবেশীদের কাছ থেকে এবার তাদের নিজেদের জীবনের বা পরিচিত কারও কাছ থেকে মানসিক চাপের পরিস্থিতিতে নেতিবাচক অর্থাৎ ক্ষতিকর সিদ্ধান্ত নেওয়ার ঘটনা সম্পর্ক জেনে আসি। আমরা নিজেদের পরিবার ও প্রতিবেশিদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যগুলো সংবাদ সম্মেলনের মাধমে উপস্থাপন করেছি এবং অন্যদের কাছ থেকে জেনেছি। এবার এই অভিজ্ঞতা থেকে 'মানসিক চাপের কারণে আমাদের শরীর ও মনের উপর বিভিন্ন ধরনের নেতিবাচক প্রভাব' বক্সটি পূরণ করি।

মানসিক চাপের কারণে আমাদের শরীর ও মনের উপর বিভিন্ন ধরনের নেতিবাচক প্রভাব

 

 

 

 

 

ছকে উল্লেখিত সমস্যাগুলো হলেও অনেক সময় আমরা তার কারণ বুঝতে পারি না। এখন থেকে সচেতন হয়ে বোঝার চেষ্টা করব আমরা কোনো মানসিক চাপের পরিস্থিতিতে আছি কিনা।

মানসিক চাপ ব্যবস্থাপনার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ না করলে মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যা দেখা দিতে পারে যেমন অতিরিক্ত উদ্বিগ্নতা, প্যানিক ডিসঅর্ডার, বিষন্নতা ইত্যাদি। মানসিক চাপ ব্যবস্থাপনার কৌশল জেনে আমরা এ অবস্থা থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করতে পারি। পরিস্থিতির ধরন সম্পর্কে সচেতনতা, এ ধরনের পরিস্থিতিতে নিজেদের অনুভূতির ব্যবস্থাপনা ও খাপ খাওয়ানোর দক্ষতার উন্নয়ন করে আমরা নিজেদেরকে এ ধরনের প্রভাব থেকে মুক্ত রাখতে পারি।

এবার তাহলে দেখে নিই কোন কোন মানসিক চাপমূলক পরিস্থিতিতে আমরা বিপর্যস্ত বোধ করি। মানসিক চাপ হলে সাধারণত আমি কেমন অনুভব করি, কী কী চিন্তা আসে এবং কী কী ক্ষতিকর আচরণের মাধ্যমে আমি সাড়া দিই। কাজটি করার জন্য আমরা পুনরায় 'মানসিক চাপের ঘটনায় আমার সাড়া' এবং 'আমার মানসিক চাপের প্রভাব' ছকে মনোযোগ দেবো। এমন পরিস্থিতিতে আমাদের অনেক অনুভূতি, চিন্তা ও আচর- ণের পুনরাবৃত্তি হয়ে থাকে আবার সমস্যারও সমাধান করে না। আমার ক্ষেত্রে সেগুলো কি তা খুঁজে বের করি। এছাড়াও অন্য কোনো পরিস্থিতিতে যদি এ ধরনের আচরণ করে থাকি তাও 'মানসিক চাপের পরিস্থিতিতে আমার নেতিবাচক আচরণ' ছকে লিখি।

মানসিক চাপের পরিস্থিতিতে আমার নেতিবাচক আচরণ

অনুভূতিচিন্তাকী সমস্যা হয়?কী আচরণ করি?
    
    
    
    

মানসিক চাপ ব্যবস্থাপনা

আমরা জানি বিভিন্ন পরিস্থিতিতে আমরা সবাই কমবেশি মানসিক চাপ বোধ করি। আমাদের জন্য যা কিছু উপকারি এবং বিকাশের সহায়ক তাকে সচেতনভাবে গ্রহণ করা এবং যা ক্ষতিকর তা বর্জন করে প্রয়োজনীয় বিকল্প পন্থা খুঁজে বের করা ও অনুশীলন করাই মানসিক চাপ ব্যবস্থাপনা।

অনেক সময় অভ্যস্ততার কারণে অবচেতনভাবেই একই ধরনের আচরণের পুনরাবৃত্তি করতে থাকি। আমরা অনেকেই তখন পরিস্থিতিকে দোষারোপ করতে থাকি আবার কখনও নিজেকে বা অন্যদেরকে দোষারোপ করতে থাকি। এগুলো কোনোটাই আমাদের সমস্যা সমাধান তো করেই না বরং হতাশা বাড়িয়ে দেয়। তাই সচেতন হয়ে ঐ পরিস্থিতিতে আমার যে আচরণটি সমস্যার সমাধান করছে না তা খুঁজে বের করব। তার পরিবর্তে ইতিবাচক ও কার্যকর আচরণের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করব। নিজেরা না পারলে অভিজ্ঞ কারও সহযোগিতা চাইব।

এছাড়াও দৈনন্দিন জীবনে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য নিয়মিত কিছু অভ্যাস চর্চা করতে পারি। এতে আমরা বিভিন্ন পরিস্থিতিতে সচেতনভাবে চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার মানসিক ও শারীরিক শক্তি পাব। ফলে মানসিক চাপ কম হবে এবং তা ব্যবস্থাপনায় ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারব।

আমরা রাখী, হাসান, আসিফের ঘটনাগুলো পড়ে তারা কীভাবে মানসিক চাপ ব্যবস্থাপনা করেছে তার ফ্লো-চার্ট তৈরি করেছি এবং দলগত উপস্থাপন ও ফিডব্যাক দিয়েছি। এবার এর মধ্যে আমি যে কৌশলগুলো ব্যবহার করতে চাই তা নিচের 'আমার মানসিক চাপ ব্যবস্থাপনা কৌশল' বক্সে লিখে রাখি।

নিজেদের অনুভূতি যত্নের কৌশল ব্যবহার করেছি। প্রথমে চিহ্নিত করেছি এরপর তা শরীরে কোথায় অনুভব করেছি তা খুঁজে পেয়েছি। এরপর অনুভূতিকে গ্রহণ করেছি এবং স্বস্তির জন্য অনুভূতিকে উদ্দেশ্য করে নিজের সাথে কথা বলেছি।

নিজের অনুভূতিকে বুঝতে পারা, দোষারোপ না করে গ্রহণ করা ও নিজের প্রয়োজন বুঝে স্বস্তির জন্য কাজের মাধ্যমে আমরা নিজের প্রতি সহমর্মী হতে পারি। এটি মানসিক চাপ ব্যবস্থাপনারও একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল।

  • যে কোনো পরিস্থিতিতে নিজের প্রতি সহমর্মী হলে আমাদের মনে স্বস্তি আসে। আমরা রিল্যাক্স বোধ করি যা আমাদের ঐ পরিস্থিতিতে যৌক্তিকভাবে চিন্তা করতে সাহায্য করে। আমরা নিজের জন্য ইতিবাচক ও কার্যকর সিদ্ধান্ত নিতে পারি। নিজের অনুভূতির যত্ন ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে আমরা সপ্তম শ্রেণিতে শিখেছি।
  • নিজের অসম্মান ও ক্ষতি হয় এমন কাজ থেকে বিরত থাকা, প্রয়োজনে নির্ভরযোগ্য কারও কাছ থেকে সহযোগিতা চাওয়ার মাধ্যমে আমরা নিজেকে ভালোবাসতে পারি।

এতে আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকে। এতে শারীরিক স্বাস্থ্যও ভালো থাকে। স্বাস্থ্য ভালো রাখা মানসিক চাপ ব্যবস্থাপনার পূর্বশর্ত। স্বাস্থ্য ভালো না থাকলে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে মানসিক চাপ বেড়ে যায়।

এরপর 'আমার মানসিক চাপের প্রভাব' থেকে আমাদের নিজেদের নেতিবাচক প্রভাব তৈরি করে এমন আচরণ নিয়ে আলোচনা করে উপস্থাপন করেছি এবং যে কৌশলে আমি আমার মানসিক চাপ ব্যবস্থাপনায় ব্যবহার করতে চাই তা 'আমার মানসিক চাপ ব্যবস্থাপনা কৌশল' ঘরে সংযুক্ত করেছি।

এবার 'মানসিক চাপের ঘটনায় আমার সাড়া' ও 'আমার মানসিক চাপের প্রভাব' থেকে আমার যে আচরণ অন্যের জন্য কষ্টের বা ক্ষতির কারণ মনে করছি তার পরিবর্তে কী কী নতুন আচরণ করতে চাই তা 'আমার সংবেদনশীল আচরণ' ছকে লিখি।

 আমার সংবেদনশীল আচরণ

আগের আচরণনতুন আচরণ

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

এই অভিজ্ঞতার কাজগুলোর মধ্য দিয়ে মানসিক চাপের পরিস্থিতিতে আমাদের অনুভূতি বুঝতে পারা, তার ব্যবস্থাপনা করতে পারা এবং নিজের ও অন্যের প্রতি সহমর্মী ও সংবেদনশীল আচণের পরিকল্পনা করেছি। এখন চর্চা করার পালা। এই বছরের বাকি সময় জুড়ে নিজেকে ভালো রাখতে এই পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজগুলো করব।

শিক্ষকের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ বা চর্চাগুলো 'আমার ব্যক্তিগত চর্চা ও অভিজ্ঞতা' ছকে লিখে রাখব। নির্দিষ্ট সময় পরপর কাজের উপর প্রতিবেদন তৈরি করে শিক্ষককে দেখিয়ে নেবো। পাশাপাশি শিক্ষক নির্দিষ্ট সময় পর পর আমাদের সাথে শ্রেণিতে এই বিষয়ে আলোচনা করবেন। এভাবে চর্চা এবং মতবিনিময় সারা বছর ধরে চলবে।

ডায়েরি বা জার্নাল লেখার সময় নিচের প্রশ্নগুলোর আলোকে লিখব: 

  • গত এক মাসে কী কী পরিস্থিতিতে মানসিক চাপ বোধ করেছি? 
  • পরিকল্পনা অনুযায়ী কৌশল ব্যবহার করে তার ব্যবস্থাপনা করতে পেরেছি? 
  • কী কী করেছি? কাজগুলো করতে কেমন লেগেছে? 
  • এই কাজগুলো আমাকে ভালো থাকতে কীভাবে সাহায্য করছে? 
  • কোন পরিস্থিতিতে নিজের প্রতি সহমর্মী আচরণ করতে পেরেছি? 
  • কী কী করেছি? অন্যদের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে কোন কোন কাজগুলো সাহায্য করেছে? 
  • শিক্ষক বা পরিবারের কাছে কি আমার কোনো সাহায্য দরকার? সেগুলো কী?

আমার ব্যক্তিগত চর্চা ও অভিজ্ঞতা

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

আমার অগ্রগতি, আমার অর্জন

অপর পৃষ্ঠার ছকটি আমার অভিভাবক ও শিক্ষক পূরণ করবেন। আমি নিজেও পূরণ করব। এর মাধ্যমে আমি আমার অগ্রগতি সম্পর্কে জানব, কোথায় আরও ভালো করার সুযোগ আছে তা খুঁজে বের করব। দলগত কাজের অভিজ্ঞতা থেকে আমার অংশগ্রহণের বিষয়ে সহপাঠীদের মতামত জেনে নিয়ে আমি সংশ্লিষ্ট অংশে লিখে নেবো। আমার অভিভাবক বইয়ে সম্পাদিত কাজ দেখে মন্তব্য লিখবেন। সমস্ত কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে শিক্ষক আমাকে স্বীকৃতি দিবেন। কী ভালো করেছি, কীভাবে আরও ভালো করতে পারি, সে উপায় জানাবেন।

মূল্যায়ন ছক ১: আমার অংশগ্রহণ ও পাঠ্যপুস্তকে করা কাজ

 নিজের মন্তব্যসহপাঠীর মন্তব্য

অভিভাবকের 

মন্তব্য

শিক্ষকের মন্তব্য

স্বতঃস্ফূর্ত 

উদ্যোগ গ্রহণ

    

শ্রদ্ধাশীল আচরণ

 

    

সহযোগিতামূলক 

মনোভাব

    

পাঠ্যপুস্তকে 

সম্পাদিত 

কাজের মান

    

মূল্যায়ন ছক ২: মানসিক চাপ ব্যবস্থাপনা

শিক্ষার্থীর নাম:মানসিক চাপ ব্যবস্থাপনার কৌশল চর্চা সংক্রান্ত ব্যক্তিগত পরিকল্পনার যথার্থতাপরিকল্পনার আলোকে করা চর্চা সংক্রান্ত কাজগুলো জার্নালে লিপিবদ্ধ করাডায়েরি/খাতা/জার্নালে করা কাজগুলোতে মানসিক চাপ ব্যবস্থাপনার কৌশল চর্চার ধারণাগুলোর সঠিক প্রতিফলন

 

 

 

 

 

 

বর্ণনামূলক ফিডব্যাক

 

 

 

 

 

 

 

   

 

Content added By
Promotion