আর্থিক ভাবনা

নবম শ্রেণি (মাধ্যমিক ২০২৪) - জীবন ও জীবিকা - Life and Livelihood - NCTB BOOK

আর্থিক ভাবনা

প্রয়োজন বুঝে করলে ব্যয়, বাড়বে তাতে সঞ্চয়।

সঞ্চয় থেকে আয় যদি হয়, থাকবে নাতো কোনো ভয়!

পৃথিবীতে একটিমাত্র জিনিস আছে যা অমূল্য, কিন্তু প্রায় সব মানুষ তা বিনামূল্যে পেয়ে যায়, সেটি হলো পরিবার। পরিবার হলো আমাদের সুখের ঠিকানা। সবাই বেঁচে থাকার প্রেরণা খোঁজে এই ঠিকানায়। আর এই পরিবার কিংবা পরিবারের বাইরে মানুষের বেঁচে থাকার জন্য যেসব মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে হয়, তার মধ্যে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা অন্যতম। এসব মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে আমাদের দরকার হয় অর্থের। এই অর্থ আমরা কোথায় পাই? তোমরা নিশ্চয়ই লক্ষ করেছ, পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন কাজে অংশগ্রহণ করে অর্থ উপার্জন করেন। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে বাবা, মা, ভাই, বোন কিংবা বয়োজ্যেষ্ঠ যে কেউ পরিবার পরিচালনার জন্য অর্থ উপার্জন করেন। সেখান থেকেই আমরা পরিবারের বিভিন্ন প্রয়োজনীয় ব্যয় নির্বাহ করে থাকি। একটি পরিবারের ব্যয় বিভিন্ন বিষয়ের ওপর নির্ভরশীল; যেমন: পরিবারের মোট সদস্য সংখ্যা যদি বেশি হয়, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই সেই পরিবারের সামগ্রিক ব্যয় বেশি হবে, এই ব্যয় পরিবারের বিভিন্ন বয়সের সদস্যদের চাহিদার ওপর নির্ভরশীল। সাধারণত শিশু কিংবা বয়স্ক সদস্য সংখ্যা বেশি হলে তাদের শিক্ষা ও চিকিৎসা খরচ বাবদ ব্যয় বেশি হতে পারে। আবার গ্রামের তুলনায় শহরে বসবাসের খরচ বেশি। তাই পরিবারের আয় যা-ই হোক না কেন, চাহিদা বিবেচনা করে উপযুক্ত পরিকল্পনার মাধ্যমে পারিবারিক ব্যয় ব্যবস্থাপনা খুবই জরুরি।

আমরা কেন ব্যয় করি

নিত্যদিনের প্রয়োজনে আমাদের কিছু না কিছু পণ্য বা সেবার প্রয়োজন হয়। যেমন: আমরা যে বাড়িতে থাকি, তার নির্মাণ কিংবা ভাড়া, ঘরে ব্যবহৃত আসবাবপত্র, প্রতিদিনের খাবার, নিত্যনতুন পোশাক, যানবাহনের ব্যবহার, চিকিৎসা, লেখাপড়ার সামগ্রী, পত্রিকা, টেলিভিশন কিংবা মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট ব্যবহার ইত্যাদি বাবদ খরচ। প্রতিটি ক্ষেত্রেই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আর্থিক ব্যয় রয়েছে। তোমরা কি কখনো ভেবে দেখেছ, একেক পরিবারের ব্যয় একেক রকম হয় কেন?

একটু লক্ষ করলে বুঝতে পারবে, আমরা সাধারণত বিভিন্ন পণ্য ও সেবার অভাব পূরণ করতে ব্যয় করি। পরিবারের সদস্যদের প্রাপ্ত মোট আয় দিয়ে একটি নির্দিষ্ট সময়ে সুযোগ-সুবিধা বা উপযোগ সর্বোচ্চ করাই আমাদের ব্যয়ের উদ্দেশ্য। ধরা যাক, পরিবারের কারো একটি পণ্যের প্রয়োজন বা আকাঙ্ক্ষা বা চাহিদা তৈরি হয়েছে। কোনো সম্পদ অথবা পণ্য/দ্রব্য ব্যবহারের ফলে যে সুবিধা পাওয়া যায়, তাকে উপযোগ বলে। কোনো নির্দিষ্ট পণ্য বা সেবা ভোগের উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে ক্রয় করা হলে, সেই পণ্য বা সেবার ওপর ভোক্তার একটি উপযোগ তৈরি হয়। বলা যায়, আমাদের বিভিন্ন অভাব বা উপযোগ মেটানোর জন্য আমরা ব্যয় করি। ব্যয় করতে প্রয়োজন হয় নির্দিষ্ট আয়ের। তাহলে পরিবারে আয়ের যে বিভিন্ন উৎস থাকে, সে সম্পর্কে জানা দরকার, যাতে আয়ের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করা যায়।

পারিবারিক আয় বুঝে নিই

সাধারণভাবে পরিবারের সদস্যদের মাধ্যমে উপার্জিত অর্থই হচ্ছে পারিবারিক আয়। এই আয় বিভিন্ন উৎস থেকে আসতে পারে; যেমন: চাকরিজীবীদের বেতন, ব্যবসায়ীদের ব্যবসায়ের মুনাফা বা লাভ; কিংবা বাড়ি, দোকান বা জমি থেকে ভাড়ার মাধ্যমে প্রাপ্ত আয়, কৃষকের কৃষিজমির ফসল থেকে আয়, শ্রমিকের দৈনিক মজুরি বা চুক্তিবদ্ধ হয়ে কাজ করার নির্দিষ্ট সময় শেষে প্রাপ্ত আয় ইত্যাদি। এছাড়াও বিভিন্ন মূলধন বিনিয়োগ করে লভ্যাংশ থেকে আয়, শেয়ার মার্কেট থেকে লভ্যাংশ, ব্যাংকের গচ্ছিত অর্থের বিনিময়ে মুনাফা, মূলধন বা সম্পদ বিক্রি, খণ্ডকালীন কাজ, ফ্রিলান্সিংসহ বিভিন্ন কাজে প্রত্যক্ষভাবে মানুষ আয় করে থাকে। অন্যদিকে, নিজ পরিবারের মধ্যে কারো ব্যক্তিগত দক্ষতা কাজে লাগিয়ে সবজি উৎপাদন করে নিজেরাই ভোগ করলে, তার বাজারমূল্য বা ব্যয় প্রত্যক্ষ আয় থেকে বেঁচে যায়। এভাবে পরিবারের কেউ নিজেদের কাপড় সেলাই করলে বাইরে দর্জির কাছ থেকে বানানোর খরচ বেঁচে যায়। এতে পরোক্ষভাবে পরিবারের আয় বৃদ্ধি পায়। এছাড়া কেউ যদি বিনা মূল্যে চিকিৎসাসেবা বা শিক্ষা বৃত্তির মাধ্যমে বিনা মূল্যে লেখাপড়া করার সুযোগ পায়, তাহলেও সেই খাতে পরিবারের খরচ বেঁচে যায়। ফলে পরোক্ষভাবে আয় বৃদ্ধি পায়। পরিবারে বাবা, মা, ভাই-বোন, আত্মীয়স্বজন সকলেই পরিবারের আয় বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখতে পারেন। আমরা একটু চেষ্টা করলেই আমাদের পরিবারের আয়ের খাতগুলো চিহ্নিত করতে পারব এবং পরিবারের আয়ে অবদান রাখতে সক্ষম হব।

পারিবারিক আয়ের যথাযথ ব্যবহার করি এবং ব্যয়ের পরিকল্পনা বানাই

আমাদের চাহিদা পূরণের জন্য পারিবারিক আয় থেকে আমরা বিভিন্ন জিনিস কেনার জন্য যে টাকা ব্যয় করি, তা-ই আমাদের পারিবারিক ব্যয়। পারিবারিক আর্থিক কার্যক্রমের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সামঞ্জস্য রাখা। পরিবারে আয়ের থেকে ব্যয় কম হলেই সঞ্চয় করা সম্ভব। অন্যথায় আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হলে ঋণ করতে হয় কিংবা সঞ্চয়ের অর্থ খরচ করে উপযোগ বা প্রয়োজন মেটাতে হয়। আবার আয়-ব্যয় সমান হলে শূন্য সঞ্চয় হয়। এক্ষেত্রে ভবিষ্যতের পারিবারিক ব্যয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হতে পারে। অর্থাৎ আয় এবং ব্যয়ের পরিমাণের ওপর ভিত্তি করে তিন ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে:

একটি পরিবারে বিভিন্ন ধরনের ব্যয় থাকে, যেমন: নিয়মিত ব্যয়, অনিয়মিত ব্যয়। নিয়মিত ব্যয়ে সেইসব ব্যয় অন্তর্ভুক্ত, যেগুলো একটি পরিবারে প্রায় প্রতিমাসেই দরকার হয়। যেমন: খাদ্যদ্রব্য, মুদিপণ্য, শিশু খাদ্য, পরিবহন খরচ, বিদ্যালয়ের খরচ, বাসা ভাড়া, ইউটিলিটি বিল (বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি, ইন্টারনেট), জ্বালানি, চিকিৎসা খরচ ইত্যাদি।

আবার, অনিয়মিত ব্যয় সাধারণত বাধ্যতামূলকভাবে প্রতিমাসে খরচ করতে হয় না। কিন্তু প্রয়োজন হলে করতে হয়; যেমন: বাড়ির এবং পরিবারের জিনিসপত্র রক্ষণাবেক্ষণ, বাইরে বেড়াতে যাওয়া, খাওয়া ও অন্যান্য বিনোদন, বিভিন্ন যন্ত্রপাতি মেরামত, পোশাক ক্রয়, স্টেশনারি, চিকিৎসা, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের ফি, জন্মদিন, বিয়ে এবং অন্যান্য উদ্যাপনের উপহার ক্রয়, বিভিন্ন ঋণ পরিশোধ, ব্যক্তিগত পরিচর্যা যেমন: চুল কাটা, পার্লারে যাওয়া, প্রসাধনী সামগ্রী কেনা ইত্যাদি। অনিয়মিত ব্যয়ের মধ্যে কিছু ব্যয় আছে, যেগুলো নিয়মিত বিরতিতে প্রয়োজন হয়, যেমন: প্রতিবছর উৎসব উদ্যাপন, বাড়ি নির্মাণ, জমি ক্রয়, অপারেশনে বড় ধরনের চিকিৎসা খরচ ইত্যাদি।

এছাড়া আয়ের যে অংশ ব্যয় না করে ভবিষ্যতে ব্যবহারের জন্য আলাদা করে রাখা হয়, তা হলো সঞ্চয়। সাধারণত ভবিষ্যতে যেকোনো সময় ব্যবহার করার জন্য সঞ্চয় করা হয়, যেমন: বিনিয়োগ, ছেলে-মেয়েদের বিয়ে বা উচ্চতর শিক্ষা, বার্ধক্য নিরাপত্তা, জরুরি চিকিৎসা, ঋণ প্রদান, জমি বা বাড়িঘর তৈরিতে কিংবা স্বাচ্ছন্দ্য আনয়নে বিলাসদ্রব্য কেনা ইত্যাদি প্রয়োজনে আমরা সঞ্চয় করে থাকি। তবে সঞ্চয়ের সবচেয়ে বড় উদ্দেশ্য থাকে ভবিষ্যতে পারিবারিক বিনিয়োগ। তাই পারিবারিক আর্থিক পরিকল্পনায় বিনিয়োগ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সঠিক বিনিয়োগ পরিকল্পনা করতে না পারলে সঞ্চিত ও কষ্টার্জিত অর্থের লোকসান বা ক্ষতির ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। সঠিক বিনিয়োগ পরিকল্পনা সম্পর্কে আমরা একটু পরে বিস্তারিত জানব এবং বিনিয়োগ পরিকল্পনাও তৈরি করব। তবে তার আগে আমরা পরিবারের জন্য একটি বাজেট তৈরি করব।

পারিবারিক বাজেট তৈরি করি

পরিবারের আর্থিক কার্যক্রম পরিচালনার অন্যতম গুরত্বপূর্ণ দিক হলো- আয়ের ওপর ভিত্তি করে সঠিক বাজেট তৈরি করা এবং বিভিন্ন ব্যয় পর্যবেক্ষণ করা। পরিবারের মোট আয় দৈনিক বা মাসিক যা-ই হোক, তার ওপর ভিত্তি করে ব্যয় বাজেট পরিকল্পনা থাকা উচিত। বাজেট পরিকল্পনা করার মূল উদ্দেশ্য পরিবারের সবার চাহিদা যথাযথভাবে পূরণ করা। আমরা হয়তো প্রয়োজন না বুঝেই অনেক সময় এমন কিছু ব্যয় করি, যা পরবর্তী সময়ে তেমন একটা কাজে আসে না। চাহিদা না থাকা সত্ত্বেও হয়তো বাজারে কিছু দেখেই কিনে ফেলি; কিন্তু তা আর তেমন একটা ব্যবহার করা হয় না। এমন অযাচিত ব্যয় করার অভ্যাস নিজের ও পরিবারের জন্য ক্ষতিকর। সুষ্ঠু পারিবারিক বাজেট পরিকল্পনা থাকলে এ ধরনের ব্যয় কমে যায়। তবে বাজেট পরিকল্পনার উদ্দেশ্য পারিবারিক কৃচ্ছতাসাধন নয় বরং পারিবারিক আয়ের সর্বোত্তম ব্যবহার।

একটি পরিবারের সুষ্ঠু বাজেট পরিকল্পনায় যেসব বিষয় লক্ষ রাখা প্রয়োজন, সেগুলো হলো:

ব্যয় পরিকল্পনা সাজাই

পারিবারিক খরচগুলো নির্দিষ্ট বাজেটের মধ্যে পরিচালনার জন্য একটি সুষ্ঠু ব্যয় পরিকল্পনা থাকা উচিত। একটি ব্যয় পরিকল্পনা নির্দিষ্ট আয়ের মধ্যে পরিবারের সকলের চাহিদা পূরণ করে ভবিষ্যতের প্রয়োজন এবং জরুরি অবস্থার জন্য অর্থ সঞ্চয় করতে সহযোগিতা করে। পরিবারের ব্যয় পরিকল্পনা মূলত একটি নির্দিষ্ট সময়ে পরিবারের সকল সদস্যের প্রয়োজনীয়তার একটি তালিকা। এই তালিকা প্রণয়ন করতে হলে প্রতিটি আইটেম (পদ)-এর জন্য বরাদ্দকৃত অর্থের পরিমাণ জানা আবশ্যক।

আমরা যদি খরচের পরিকল্পনা না করি, তাহলে আমাদের যা আছে, তার চেয়ে বেশি খরচ করার আশঙ্কা থাকে। ফলে ধার করে বা ঋণ নিয়ে ব্যয় নির্বাহ করতে হয়। তাই ঝামেলা এড়াতে এমনভাবে ব্যয় পরিকল্পনা করতে হবে, যাতে আয়ের চেয়ে ব্যয় কম থাকে এবং কিছু সঞ্চয়ও করা যায়।

নির্দিষ্ট সময়ে ব্যয় পরিকল্পনায় আরও কিছু বিষয় বিবেচনায় রাখতে হবে:

  • পরিবারের সকল সদস্যের প্রয়োজন অনুযায়ী পণ্য ও সেবা তালিকাভুক্ত করতে হবে। যেমন: শীতকালে হয়তো গরম কাপড়ের চাহিদা তৈরি হয়, আবার বর্ষাকালে প্রয়োজন হয় ছাতার।
  • অবশ্যই প্রয়োজন অর্থাৎ আবশ্যিক জিনিসগুলো অগ্রাধিকার দিতে হবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য, খাবার, ওষুধ, যাতায়াত খরচ ইত্যাদি।
  • নিজ পরিবারের মোট আয় ও সদস্য সংখ্যা লক্ষ রেখে বাজেট বরাদ্দ করতে হবে। সকল সদস্য যাতে তাদের চাহিদা অনুযায়ী সমান গুরুত্ব পায়, তা লক্ষ রাখা প্রয়োজন। আবার আয়ের অতিরিক্ত ব্যয় হলে তা পূরণ সম্ভব হয় না। পরিবারের সদস্যদের বয়স বিবেচনায় খরচের খাতে বৈচিত্র্য থাকে, যেমন: পরিবারে স্কুলগামী শিক্ষার্থী থাকলে শিক্ষা-সম্পর্কিত খরচ (স্কুল ইউনিফর্ম, স্টেশনারি ইত্যাদি) বেশি হবে। এক্ষেত্রে অভিভাবকের পছন্দ ও যুক্তিকে প্রাধান্য দেওয়া উচিত। নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে প্রত্যেকের মাসিক চাহিদার তালিকা তৈরি করতে হবে।
  • পরিবারের সদস্যদের বিভিন্ন দক্ষতা থাকতে পারে, যেমন: খাবার সংরক্ষণ করা, রান্না করা বা গৃহস্থালির কাজ, বিভিন্ন বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম মেরামত, ছুতারের কাজ, সেলাইয়ের কাজ বা কৃষিকাজ ইত্যাদি। তখন সেসব খাতে উক্ত দক্ষতা কাজে লাগানো হলে পরিবারের খরচ কমে যায়, অর্থাৎ সেসব খাতে উপার্জিত অর্থ বা আয় খরচ করতে হয় না।

পরিবারের এক মাসের ব্যয় পরিকল্পনা তৈরি করি

এখন আমরা একটি নির্দিষ্ট মাসের জন্য আমাদের পরিবারে যেসব ব্যয় হয়ে থাকে, সেই অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে একটি ব্যয়ের তালিকা তৈরি করব। ছক ১.২-এ পারিবারিক ব্যয়ের মূল খাতসমূহ উল্লেখ করা আছে, প্রয়োজনে ব্যয়ের কোনো অতিরিক্ত খাত বা উপখাত যুক্ত করা যাবে। নিজ নিজ পরিবারের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী উপখাত উল্লেখ করে সেসব উপখাতের জন্য আনুমানিক অর্থ বরাদ্দ করতে হবে। অর্থ বরাদ্দের সময় অবশ্যই নিজ পরিবারের অভিভাবক ও অন্য সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে নির্ধারণ করতে হবে। সকল খাতেই নিয়মিত এবং অনিয়মিত ব্যয় থাকে; প্রযোজ্য ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট মাসের ব্যয় উল্লেখ করতে হবে। নিজ নিজ খাতায় বা পোস্টারে নির্দেশনা অনুযায়ী তালিকাটি সম্পন্ন করে আমরা অভিভাবকের স্বাক্ষরসহ শিক্ষকের কাছে জমা দেবো।

ঝুঁকি ও সুযোগ বিশ্লেষণ করে পারিবারিক বিনিয়োগের সর্বোত্তম ব্যবস্থাপনা

আগের পাঠে আমরা জেনেছি, কীভাবে সঞ্চয় করা যায়। আমরা আমাদের সঞ্চিত অর্থকে বিনিয়োগের মাধ্যমে আয় করতে পারি। সঞ্চয়ের পাশাপাশি আমরা যদি অন্য কোনো উৎস থেকে অর্থ পাই, তা-ও বিনিয়োগ করতে পারি। বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করা যায়। একেক ধরনের বিনিয়োগে লাভ বা ক্ষতির পরিমাণ একেক রকম।

প্রায় সব ধরনের বিনিয়োগেই ঝুঁকি রয়েছে অর্থাৎ বিনিয়োগের মাধ্যমে যে সব সময় লাভ হবে তা নয়; বরং সুচিন্তিতভাবে বিনিয়োগ না করলে ক্ষতিও হতে পারে অর্থাৎ মূল অর্থ কমেও যেতে পারে।

দৃশ্যপট-১: বিনোয়োগ আগ্রহী রহমান সাহেব

রহমান সাহেব একটি প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার। কিছুদিন আগে তার প্রবাসী ছোটোভাই তাকে দুই লক্ষ টাকা পাঠিয়েছেন। রহমান সাহেব এই টাকা কোনো লাভজনক খাতে বিনিয়োগ করতে চান। তিনি তার কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে কথা বলেন, বন্ধুরা তাকে বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ প্রদান করেন। যেমন: তার পরিচিত কারো ব্যবসায় খাটানোর মাধ্যমে মুনাফা অর্জন করা, সরকারি সঞ্চয়পত্র কিনে তা হতে প্রতি মাসে বা নির্দিষ্ট সময় শেষে মুনাফা হিসেবে অর্থ আয় করা, নিজের উদ্যোগে ছোটোখাটো কোনো সরবরাহ বা উৎপাদন ব্যবসা শুরু করা, শেয়ার মার্কেটে টাকা খাটানো, জমি ক্রয় করে রাখা, বিভিন্ন ধরনের কৃষিপণ্যের ব্যবসা করা ইত্যাদি।

এসব প্রস্তাব নিয়ে বেশ কয়েক দিন চিন্তাভাবনা করে রহমান সাহেব তার ব্যাংকার বন্ধুর কাছে প্রস্তাবগুলোর সুবিধা বা অসুবিধার কথা জানতে চান, তার বন্ধু তাকে বলেন, 'তোমার পরিচিত অন্য কারো ব্যবসায় যদি টাকা খাটাও এবং তার ব্যবসাটি যদি লাভজনক হয়, তাহলে তোমারও লাভ হবে। কিন্তু তার ব্যবসার ঝুঁকিও তোমাকে নিতে হবে অর্থাৎ যদি ব্যবসায় লোকসান হয়, তাহলে তোমাকেও তা বহন করতে হবে। তুমি যদি সঞ্চয়পত্র বা মেয়াদি আমানত হিসেবে টাকা রাখো, তাহলে তুমি হয়তো তুলনামূলক কম মুনাফা পাবে। কিন্তু এর জন্য তোমাকে কোনো ঝুঁকি বহন করতে হবে না, অর্থাৎ লোকসান হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।'

তিনি আরও বলেন, 'তুমি যদি নিজে ব্যবসা শুরু করো, তাহলে তোমাকে তা পরিচালনা করতে নিজের বুদ্ধি, সময় ও ঝুঁকি বহন করতে হবে। ব্যবসায় লাভ-লোকসান দুটোই হতে পারে। যদি তুমি শেয়ার মার্কেটে টাকা খাটাতে চাও, তাহলে শেয়ার মার্কেট সম্পর্কে তোমার খুব ভালো ধারণা থাকতে হবে এবং খুব বুঝেশুনে বিনিয়োগ করতে হবে। তোমার যথাযথ সিদ্ধান্তের ওপর এই ব্যবসার লাভ-লোকসান নির্ভরশীল। যদি তোমার সিদ্ধান্ত সঠিক হয়, তাহলে তুমি তুলনামূলক অধিক মুনাফা পাবে। যদি তা ভুল হয়, তাহলে লোকসান হবে। আবার জমি কিনে রাখলে ঠিক কত সময় পর তার দাম বাড়বে তা নিশ্চিত নয়। তবে যথাযথভাবে দলিল পত্রাদি যাচাই-বাছাই করে নিষ্কণ্টক জমি কেনা হলে সাধারণত লোকসান হয় না। আবার, কৃষিপণ্যে ব্যবসা করেও লাভবান হওয়া যায়। তবে কৃষিপণ্য গুদামজাত করে রাখার সময় অনেক যত্ন নিতে হয়, তা না হলে পণ্য পচে যেতে পারে বা পণ্যের গুণগতমান নষ্ট হয়ে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে লাভের চেয়ে লোকসান হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। আবার, অসাধু উপায়ে কোনো পণ্য (যেমন: ক্ষতিকর রাসায়নিক মিশিয়ে) সংরক্ষণ করা হলে, সেটি জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হতে পারে। তাছাড়া রাষ্ট্রীয়ভাবেও এটি দণ্ডনীয় অপরাধ। এজন্যে বিনিয়োগ করার সময় তোমাকে সবদিক বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।'

নির্দিষ্ট পরিমাণ ঝুঁকি গ্রহণের মাধ্যমে মুনাফাপ্রাপ্তির উদ্দেশ্যে নিজ তত্ত্বাবধানে কিংবা অন্য কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ/সম্পদ কাজে লাগানোকে বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচনা করা যায়। অর্থাৎ লাভের আশায় সঞ্চয়ের টাকা কোথাও ব্যবহার/লগ্নি করাকে সাধারণভাবে বিনিয়োগ হিসেবে অভিহিত করা হয়।

  • বিনিয়োগের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন হয়;
  • অর্থের পাশাপাশি আমরা আমাদের শ্রম ও মেধাও বিনিয়োগ করতে পারি;
  • বিনিয়োগের মূল উদ্দেশ্য হলো, নির্দিষ্ট সময় শেষে সম্পদের বৃদ্ধি;
  • বিনিয়োগে বিভিন্ন মাত্রায় ঝুঁকি বিদ্যমান;
  • বিনিয়োগে বিদ্যমান ঝুঁকির সঙ্গে সম্পদ বৃদ্ধি বা মুনাফার সম্পর্ক রয়েছে। সাধারণত যে বিনিয়োগে ঝুঁকির পরিমাণ বেশি, সেই বিনিয়োগে লাভের পরিমাণও বেশি হয়ে থাকে;
  • বিনিয়োগের জন্য বিভিন্ন ধরনের উপায় রয়েছে
  • বিনিয়োগকৃত অর্থের ব্যবস্থাপনা নিজে যেমন করা যায়, তেমনি অন্যের ব্যবস্থাপনায়ও অর্থ বিনিয়োগ করা যায়।
  • ঝুঁকিহীন বিনিয়োগ সাধারণত সঞ্চয়মূলক বিনিয়োগ বা নিরাপদ বিনিয়োগ নামে পরিচিত।

আবার সময়গত বিবেচনাতেও বিনিয়োগ বিভিন্ন ধরনের হয়, যেমন: স্বল্পমেয়াদি (১ বছর) বিনিয়োগ, মধ্যমেয়াদি (১-৩ বছর) বিনিয়োগ, দীর্ঘমেয়াদি (৩ বছরের বেশি) বিনিয়োগ।

বিনিয়োগে ঝুঁকি বিবেচনা

সব ধরনের ব্যবসা বা বিনিয়োগে ঝুঁকির পরিমাণ সমান নয়। সাধারণভাবে, যে বিনিয়োগে ঝুঁকি যত বেশি, সেই বিনিয়োগে লাভও তত বেশি। ঝুঁকি গ্রহণের সামর্থ্যের ওপর ভিত্তি করে একজন বিনিয়োগকারীর বিনিয়োগ সক্ষমতা নির্ধারিত হয়ে থাকে। বিনিয়োগের মাধ্যমে সকলেই লাভবান হতে চায়, কিন্তু সবার ঝুঁকি গ্রহণের সামর্থ্য সমান নয়। যেমন:

  • কিছু বিনিয়োগকারী রয়েছেন, যারা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নিজের অর্থ/সম্পদকে কাঙ্ক্ষিত পরিমাণে বৃদ্ধি করতে বদ্ধপরিকর। এজন্য তারা যথেষ্ট ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও উক্ত বিনিয়োগে অংশগ্রহণ করেন। যদি এ কাজে তাদের মূল অর্থও লোকসান হয়ে যায়, তাহলেও তারা তা মেনে নিতে রাজি থাকেন। এ ধরনের মানুষদের ঝুঁকি গ্রহণ সামর্থ্য অনেক বেশি। সাধারণত আর্থিকভাবে সচ্ছল এবং বিনিয়োগকৃত অর্থের ওপর যেসব মানুষের নির্ভরশীলতা অপেক্ষাকৃত কম, তারা এ ধরনের ঝুঁকি গ্রহণ করেন।
  • আরেক দল বিনিয়োগকারী রয়েছেন, যারা তাদের বিনিয়োগকৃত অর্থ থেকে মোটামুটি যৌক্তিক মুনাফা চান এবং এর বিপরীতে নির্দিষ্ট পরিমাণ ঝুঁকি গ্রহণ করতে রাজি থাকেন। এ ধরনের বিনিয়োগকারীদের ঝুঁকি গ্রহণ ক্ষমতা সীমিত। তারা খুব ভালোভাবে মুনাফার সঙ্গে ঝুঁকির সম্পর্ক নির্ণয় করতে আগ্রহী থাকেন।
  • কেউ কেউ এমনভাবে গচ্ছিত/সঞ্চিত অর্থ বিনিয়োগ করতে চান, যেন নির্দিষ্ট সময় পরে প্রাথমিকভাবে বিনিয়োগকৃত অর্থের অতিরিক্ত কিছু অর্থ পাওয়া যায়; কিন্তু মূল টাকা যেন সংরক্ষিত থাকে। এ ধরনের বিনিয়োগকারীদের ঝুঁকি গ্রহণের ইচ্ছা বা সামর্থ্য প্রায় শূন্য।

সাধারণত কিছু বিষয়ের ওপর বিনিয়োগকারীদের ঝুঁকি গ্রহণ সক্ষমতা নির্ভর করে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো-

প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ বিনিয়োগ

প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ব্যবস্থাপনায় বিনিয়োগ করা যায়। প্রত্যক্ষ বিনিয়োগে ব্যক্তি নিজ দায়িত্বে বিনিয়োগ করেন। বিনিয়োগে অর্থের পাশাপাশি নিজের শ্রম, মেধা ও সময় কাজে লাগান এবং ঝুঁকি ও লাভের পুরোটাই নিজে বহন করেন। যেমন: নিজ ব্যবসা বা উদ্যোক্তামূলক কার্যাবলি, জমি বা অন্যান্য স্থাবর সম্পদে বিনিয়োগ। আবার পরোক্ষ বিনিয়োগে যিনি অর্থ বিনিয়োগ করেন, তিনি সরাসরি উক্ত অর্থের ব্যবহারের সঙ্গে জড়িত থাকেন না। অন্য কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান উক্ত অর্থের ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত থাকে এবং অর্জিত মুনাফার একটি অংশ বিনিয়োগকারী পেয়ে থাকেন। পরোক্ষভাবে বিনিয়োগে মূলত তিন ধরনের বিনিয়োগ পণ্য (ইনস্ট্রুমেন্ট) ব্যবহার করা হয়।

ঋণ পণ্য (debt instruments)

যখন কোনো প্রতিষ্ঠান এই শর্তে অর্থ গ্রহণ করে যে, নির্দিষ্ট সময় শেষে উক্ত অর্থের ওপর নির্ধারিত হারে মুনাফা প্রদান করবে এবং মেয়াদ শেষে মুনাফা ও আসল পরিশোধে আইনগত বাধ্যবাধকতা থাকবে, তখন তাকে ঋণ পণ্য (debt instruments) বলা হয়। এই ধরনের ইনস্ট্রুমেন্ট ক্রয়কারী কোনোরূপ ঝুঁকি বহন করেন না। সকল ঝুঁকি ইনস্ট্রুমেন্ট বিক্রেতা বা ইস্যুকারী প্রতিষ্ঠান বহন করে। ব্যাংকের মেয়াদি আমানত, সরকারি সঞ্চয়পত্র ইত্যাদি ঋণ পণ্য (debt instruments)-এর উদাহরণ।

মূলধনি পণ্য (equity instruments)

স্টক এক্সচেঞ্জ নিবন্ধিত কোনো কোম্পানির শেয়ার (মোট মূলধনের ক্ষুদ্র অংশ) হলো ইক্যুয়িটি ইনস্ট্রুমেন্ট। এ ধরনের বিনিয়োগে কোম্পানির লভ্যাংশ প্রাপ্তির পাশাপাশি ঝুঁকিও বহন করতে হয় এবং প্রতিবছর লভ্যাংশ প্রাপ্তি নিশ্চিত নয়। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সাধারণত ইক্যুয়িটি ইনস্ট্রুমেন্টের বাজারমূল্য পরিবর্তন হয়। যেমন: ধরা যাক, ২০১৯ সালে 'ক' কোম্পানির শেয়ার মূল্য ছিল ১৫ টাকা, যা ২০২৩ সালে ২৫ টাকায় দাঁড়িয়েছে। তাহলে এখানে ১৫ টাকা বিনিয়োগে ১০ টাকার সম্পদ বৃদ্ধি ঘটেছে, যা মূলধনি লাভ হিসেবে বিবেচিত। আবার এর বিপরীত পরিস্থিতিও হতে পারে। সঠিকভাবে শেয়ার নির্বাচন এবং বাজার পরিস্থিতির ওপর এই বিনিয়োগের সফলতা অনেকাংশে নির্ভরশীল।

ব্যক্তি মালিকানাধীন (private equity) ব্যবসায় মূলধনি বিনিয়োগ

যখন কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ব্যক্তিগত যোগাযোগ ও বিশ্বাসের ভিত্তিতে ব্যবসায় অর্থ লগ্নি বা বিনিয়োগ করা হয়, তখন তাকে প্রাইভেট ইক্যুয়িটি বিনিয়োগ বলা হয়। এ ধরনের বিনিয়োগের মুনাফা সম্পূর্ণভাবে বিনিয়োগ চুক্তির শর্ত দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় এবং একটি চুক্তির সঙ্গে আরেকটি চুক্তির মিল থাকে না। এ ধরনের বিনিয়োগ দ্বিপক্ষীয় হয়। ফলে বিদ্যমান ঝুঁকির পরিমাণ অনেক বেশি।

উপরের বিনিয়োগগুলো ছাড়াও আমাদের প্রত্যক্ষ ব্যবস্থাপনায় স্থাবর সম্পদে বিনিয়োগ (স্বর্ণ, জমি, ফ্ল্যাট, পণ্য ইত্যাদি) করতে পারি। এ ধরনের বিনিয়োগে সার্বিকভাবে নিজের অনুমান ও বুদ্ধিমত্তাকে ব্যবহার করতে হয় এবং বিভিন্ন তথ্য সম্পর্কে সজাগ থাকতে হয়। আবার এ ধরনের বিনিয়োগের আগে আসল-নকল, ভালো-মন্দ যাচাই করতে হয়। যেমন: স্বর্ণ বা মূল্যবান ধাতব যদি গুণগতমানের বিবেচনায় ভালো না হয়, কিংবা নকল হয়, তাহলে অনুমান অনুসারে ভবিষ্যতে এসব ধাতুর বাজার ভালো হলেও মানহীন বা নকল বস্তুর কোনো ক্রেতা পাওয়া যাবে না; ফলে বড় ধরনের লোকসান হতে পারে। একইভাবে মৌসুমভিত্তিক কোনো ফল যথাযথভাবে সংরক্ষণ করলে পরবর্তী সময়ে তার চাহিদা বৃদ্ধি পাবে, তা যদি পূর্বানুমান করা যায়, তাহলে পণ্যে বিনিয়োগ করা যায়। এ ধরনের বিনিয়োগ থেকে লাভবানও হওয়া যায়, কিন্তু পণ্য কেনার সময় অবশ্যই তার গুণগত মান নিশ্চিত হয়ে কিনতে হবে, তা না হলে নির্দিষ্ট সময়ের আগে তা বিনষ্ট হয়ে যাবে এবং লোকসান গুনতে হবে।

জমি বা ফ্ল্যাট-সংক্রান্ত কাগজপত্র বিভিন্ন দপ্তরের সঙ্গে পরিচয়

দলিল: যে কোনো প্রকার স্বত্ব বা মালিকানা হস্তান্তরের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ প্রমাণক, যা দলিল নামে পরিচিত। এই দলিলের মাধ্যমে কোনো একটি জমি বা ফ্ল্যাটের উপর কোনো ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের মালিকানা নিশ্চিত হয়। একটি দলিলে ধারাবাহিকভাবে ক্রম মালিকানার তথ্যাদি, বিক্রেতা ও ক্রেতা বা বর্তমান মালিকের নাম, ঠিকানা, ছবি, স্বাক্ষর, আঙুলের ছাপ, এনআইডি নম্বর, জমির অবস্থান হিসেবে জেলা, উপজেলা, মৌজা, জে এল নম্বর সাবেক ও বর্তমান খতিয়ান নম্বর, সাবেক ও বর্তমান দাগ নম্বরসমূহ, জমির শ্রেণি, পরিমাণ, সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসের নাম, সাব-রেজিষ্টারের স্বাক্ষর ও তারিখ, জমির দলিল নং ইত্যাদি তথ্যাদি সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকে। জমির মালিকানার দলিল সর্বদা সরকার মুদ্রিত জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পের উপর প্রস্তুত করা হয় এবং সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসে নির্দিষ্ট ফি জমা প্রদানের মাধ্যমে রেজিষ্ট্রি সম্পন্ন হয়। রেজিষ্ট্রিবিহীন মালিকানার দলিল আইনগতভাবে গ্রহণযোগ্য নয়।

সাব-রেজিস্ট্রি অফিস: প্রতিটি উপজেলায় জমি রেজিস্ট্রি বা নিবন্ধন এর জন্য নির্দিষ্ট সাব-রেজিস্ট্রি অফিস রয়েছে। এই অফিসের মাধ্যমে জমির মালিকানা বদল হয় বা জমির উপর আইনগত মালিকানা সৃষ্টি হয়। উক্ত অফিস ব্যতীত অন্য কোনো দপ্তরে জমির মালিকানার দলিল রেজিস্ট্রি করা যায় না। একজন সাব-রেজিস্ট্রার উক্ত সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।

বিভিন্ন প্রকার খতিয়ানসমূহ

জরিপ বিভাগ কর্তৃক সরেজমিন জমি বা ভূমিতে গিয়ে জমির মালিকানার বিবরণ ও নকশা তৈরি করে, যে রেকর্ড তৈরি ও প্রকাশ করে তা হলো খতিয়ান। খতিয়ানে জমির বিস্তারিত বিবরণ উল্লেখ থাকে। সময়কালের ব্যবধানে বাংলাদেশের জমির ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রকার খতিয়ান প্রচলিত রয়েছে। জমি ক্রয়ের সময় এ সকল খতিয়ান ভালোভাবে যাচাই করতে হয়। জমি ক্রয়ের জন্য প্রয়োজনীয় খতিয়ানসমূহ হলো-

সিএস (cadastral survey) খতিয়ান

ব্রিটিশ শাসনামলের ১৮৯০ থেকে ১৯৪০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে সিএস জরিপ কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এটি বাংলাদেশের প্রথম ভূমি জরিপ। সিএস জরিপে প্রস্তুতকৃত রেকর্ড বা খতিয়ানের ১ম পৃষ্ঠার উপরিভাগে  জমিদারগণের নাম এবং খতিয়ানের নিচে দখলদার রায়ত বা প্রজার নাম লেখা থাকে। দ্বিতীয় পৃষ্ঠায় জমির দাগ নম্বর, শ্রেণি, পরিমাণ ইত্যাদি তথ্য থাকে। 

এসএ (state acquisition) খতিয়ান

১৯৫৬ সাল থেকে ১৯৬২ সাল পর্যন্ত এই জরিপ পরিচালিত হয়। ১৯৫০ সালে জমিদারি প্রথার বিলোপ সাধিত হয়। জমিদারদের জমিদারিভুক্ত সম্পত্তি সরকার অধিগ্রহণ করে। উক্ত জমিদারদের জমির ক্ষতিপূরণ প্রদানের জন্য এবং ভূমি মালিকগণ রায়তদের সরকারের নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য জমিদারদের থেকে প্রাপ্ত তথ্যাদির ভিত্তিতে জমিদারদের পত্তন রেজিস্টার অনুযায়ী এই জরিপ বা খতিয়ান প্রণয়ন কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছিল। এসএ জরিপে ভূমি মালিকের নাম, জমির বিবরণ সংবলিত হাতে লেখা রেকর্ড/খতিয়ান প্রস্তুত করা হয়। এসএ খতিয়ানের ওপরে বাম দিকে সাবেক খতিয়ান (সিএস খতিয়ান) এবং হাল খতিয়ান (এসএ খতিয়ান) নম্বর উল্লেখ থাকে।

আরএস (revisional survey) খতিয়ান

আরএস খতিয়ান বা জরিপের উদ্দেশ্য ছিল এসএ খতিয়ানের ভুল সংশোধন। এসএ জরিপের সময় সরেজমিনে জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা হয়নি। জমিদারদের থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে এসএ জরিপ বা খতিয়ান প্রস্তুত করা হয়েছিল, যার কারণে অনেক ভুল থেকে যায়। এই ভুল দূর করা এবং ইতোমধ্যে দীর্ঘ সময়ে জমির মালিকানা ও প্রকৃতির অনেক পরিবর্তন হয়ে যাওয়ায় তা হালনাগাদকরণের লক্ষ্যে সরকার দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরেজমিনে এই ভূমি জরিপ পরিচালনা করে। আরএস জরিপে প্রস্তুতকৃত নকশা এবং রেকর্ড বা খতিয়ান নির্ভুল হিসাবে গ্রহণীয় ও নির্ভরযোগ্য।

বিএস (Bangladesh survey) খতিয়ান

বিএস খতিয়ান হলো বাংলাদেশ আমলে হওয়া সর্বশেষ সরেজমিন জরিপ। যা ১৯৯৮ সাল থেকে সারা দেশে শুরু হয়। যা বাংলাদেশ সার্ভে বা বাংলাদেশ জরিপ নামে পরিচিত। এই বাংলাদেশ জরিপ মূলে হওয়া খতিয়ানের নামই বিএস খতিয়ান।

ডিপি পর্চা/খতিয়ান: ভূমি জরিপের সময় রেকর্ড প্রস্তুতকালে কয়েকটি ধাপ যেমন: খানাপুরী, বুঝারত, তসদিক ইত্যাদি প্রক্রিয়া সম্পন্নের যে খতিয়ান প্রকাশ করা হয়ে থাকে, তাকে খসড়া খতিয়ান বা ডিপি খতিয়ান বলে। এই খসড়া খতিয়ানের নামের ভুল, দাগ সূচিতে ভুল, দাগের সাথে নকশায় ভুল ইত্যাদি হয়ে থাকলে তা সংশোধন করা যায়। এই পর্চায় বা ডিপি খতিয়ানে জরিপ বিভাগের সীল, স্বাক্ষর ও নম্বর দেয়া থাকে।

মাঠ পর্চা: জমি জরিপ করার সময় জমির মালিকদের একটি প্রাথমিকভাবে জমির তথ্য সম্বলিত খতিয়ান প্রদান করা হয়ে থাকে, সেখানে জমির প্রাথমিক পরিচিতির তথ্য থাকে, তাকে মাঠ পর্চা বলে। এই মাঠ পর্চায় কোন ভুল-ভ্রান্তি থাকলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্ধারিত প্রক্রিয়ায় সহজেই সংশোধন করে নেওয়া যায়। মাঠ পর্চার জরিপ বিভাগের সীল দেওয়া হয়ে থাকে।

এই খতিয়ানগুলো জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের জেলা রেকর্ড রুম শাখায় সংরক্ষিত থাকে। জনগণ তার প্রয়োজন অনুযায়ী সেখান থেকে এ সকল খতিয়ানের নকল কপি সংগ্রহ করে থাকে। জরিপকালে মাঠ পর্চা জরিপ বিভাগে সংরক্ষিত থাকে এবং এক কপি জমির মালিককে প্রদান করা হয়।

উপজেলা ভূমি অফিস: প্রতিটি উপজেলায় একটি করে উপজেলা ভূমি অফিস বিদ্যমান রয়েছে। যার অফিস প্রধান সহকারী কমিশনার (ভূমি); তিনিই কোনো জমির প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ আবেদনের প্রেক্ষিতে নতুন মালিকের নামে রেকর্ড করানোর জন্য অনুমোদন দিয়ে থাকেন, যাকে নামজারী বলা হয়। সংশ্লিষ্ট জমির উপজেলা ভূমি অফিস থেকেই নামজারী বা খতিয়ান সংশোধন করা হয়, অন্যত্র তা করা যায় না, নামজারী সম্পন্ন হওয়ার পর সরকার নির্ধারিত ফি প্রদানের দ্বারা নামজারী খতিয়ান এবং প্রদত্ত ফি এর জন্য ডুপ্লিকেট কার্বন রিসিট বা ডিসিআর কাগজপত্রসমূহ পাওয়া যায়।

ইউনিয়ন ভূমি অফিস: উপজেলা ভূমি অফিসের আওতায় ও নিয়ন্ত্রণে সমগ্র উপজেলার খাজনা আদায়সহ সরকারি সকল কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করা হয়ে থাকে ইউনিয়ন ভূমি অফিসে। সেখানে কোনো জমির নামজারির পর উক্ত জমির উপর ধার্যকৃত সরকারি খাজনা গ্রহণ করে ইউনিয়ন ভূমি অফিস হতে তার রসিদ প্রদান করা হয়।

নামজারি খতিয়ান মিউটেশন: খতিয়ান হলো জমি-জমার হিসাব। একটি মৌজায় কোনো মালিকের যত জমি থাকে, সেই সকল জমি একত্রিত করে কিংবা বিক্রয়কৃত জমি ক্রেতার নামে পৃথক করে পৃথক নম্বর দিয়ে যে বিবরণ লিপিবদ্ধ করা হয়, তাই নামজারি খতিয়ান। এই বিবরণের মধ্যে মালিকের নাম, পিতার নাম, ঠিকানা, মালিকানার অংশ, জমির শ্রেণি, জমির পরিমাণ, দাগ নম্বর, খাজনার হার ইত্যাদির উল্লেখ থাকে। এই নামজারি খতিয়ান সৃজনের কাজ উপজেলা ভূমি অফিসে সম্পন্ন হয়। অর্থাৎ কোনো ব্যক্তি ভূমির মালিকানা অর্জন করার পর নতুন ব্যক্তির নামে রেকর্ডভুক্ত করে রেকর্ড হালনাগাদ করণের আইনানুগ প্রক্রিয়া নামজারি বা মিউটেশন নামে পরিচিত।

মৌজা: সিএস জরিপের সময় প্রতিটি থানার অধীন, যে ভৌগোলিক এলাকা স্বতন্ত্রভাবে আলাদা পরিচিতি নম্বর দ্বারা পৃথক করা হয়, তা মৌজা নামে পরিচিত। জরিপ এবং ভূমি ব্যবস্থাপনার ইউনিট হলো মৌজা। গ্রাম, পাড়া ইত্যাদি মৌজাভুক্ত এলাকা।

জেএল নম্বর: থানা অথবা উপজেলাধীন মৌজাকে পর্যায়ক্রমিক নম্বর দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। কোনো মৌজার এই পরিচিতিমূলক ক্রমিক নম্বরকে জেএল নম্বর অথবা জুরিসডিকশন লিস্ট নম্বর বলা হয়।

দাগ নম্বর: সাধারণত নকশায় জমির সীমানা, মালিকানা শ্রেণিভিত্তিক আলাদাভাবে চিহ্নিত করা হয়। বিভিন্ন মালিকের জমি মাঠে একসঙ্গে শ্রেণিভুক্ত হলেও নকশায় আলাদা দাগ নম্বর দ্বারা তা চিহ্নিত করা হয়। আবার একই মালিকের বিভিন্ন শ্রেণির জমি পাশাপাশি হলেও আলাদা শ্রেণিভুক্ত হওয়ার কারণে আলাদা দাগ নম্বর দিয়ে চিহ্নিত করা হয়। বিভিন্ন মালিকের অথবা একই মালিকের বিভিন্ন শ্রেণিভুক্ত জমিকে নকশায় যে পৃথক পরিচিতি নম্বর দ্বারা চিহ্নিত করা হয়, তা দাগ নম্বর বা প্লট নম্বর নামে পরিচিত।

ডিসিআর: ভূমি উন্নয়ন কর বা খাজনা আদায় ব্যতীত অন্যান্য সরকারি সকল পাওনা আদায় করে যে নির্ধারিত ফরমে রসিদ দেওয়া হয়, তাকেই ডিসিআর বা ডুপ্লিকেট কার্বন রিসিট বলা হয়। যেমন: নামজারির পর খতিয়ান সংশোধন ফি এই রসিদ মূলে আদায় করা হয়।

খাজনা: জমির মালিক কর্তৃক জমির ভোগ দখল করার জন্য সরকারের প্রদত্ত বার্ষিক ভাড়া খাজনা নামে পরিচিত।

খাজনা রসিদ বা দাখিলা: ভূমি মালিকের নিকট হতে ভূমি উন্নয়ন কর আদায় করার পর, ভূমির মালিককে যে নির্দিষ্ট ফরমে রসিদ দেওয়া হয় তাকে খাজনা রসিদ বা দাখিলা বলে।

নকশা বা ম্যাপ: নকশা অর্থ প্রতিচ্ছবি। সরেজমিনে কোনো ভূমি জরিপের মাধ্যমে প্রত্যেক মৌজার ভূমির মালিকানা, শ্রেণিবিন্যাস অর্থাৎ জমির বর্তমান অবস্থা অনুযায়ী নকশা প্রস্তুত করা হয়, যা জমির প্রতিচ্ছবি নামে পরিচিত ।

জমি ক্রয়ের ক্ষেত্রে করণীয়

১. জরিপের মাধ্যমে প্রণীত রেকর্ড অর্থাৎ খতিয়ান ও নকশা যাচাই করা।

২. জমির মৌজা, জেএল নম্বর, খতিয়ান নম্বর, দাগ নম্বর ও উক্ত দাগে মোট জমির পরিমাণ যাচাই করা। 

৩. জমি ক্রয় করার আগে উক্ত জমির সিএস রেকর্ড, এসএ রেকর্ড, আরএস রেকর্ড অর্থাৎ সংশ্লিষ্ট সকল রেকর্ড এবং প্রয়োজনে মাঠ পর্চাগুলো ভালোভাবে যাচাই করা। 

৪. বিক্রেতা যদি জমিটির ক্রয়সূত্রে মালিক হয়ে থাকেন, তবে তার ক্রয়ের দলিল, রেকর্ডের সঙ্গে মিল করে বিক্রেতার মালিকানা যথাযথ আছে কি না, তা যাচাই করে নিশ্চিত হওয়া। 

৫. জমির বিক্রেতা উত্তরাধিকার সূত্রে জমিটি পেয়ে থাকলে সর্বশেষ জরিপের খতিয়ানে কিংবা নামজারি খতিয়ানে তার নাম আছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে হবে। যদি সর্বশেষ বা নামজারি খতিয়ানে তার নাম না থাকে, তাহলে উক্ত বিক্রেতা যার কাছ থেকে জমিটি উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছেন অর্থাৎ পিতা বা পরিবার থেকে পেলে পারিবারিক বণ্টননামা আছে কি না, কিংবা তা না থাকলে সেক্ষেত্রে মূল মালিকের সঙ্গে বিক্রেতার নামের যোগসূত্র বা রক্তের সম্পর্ক আছে কি না, এবং প্রাপ্য স্বত্বের অংশ নিশ্চিত হওয়া। 

৬. জমি বিক্রেতার কাছ থেকে বিক্রয় সংশ্লিষ্ট কাগজাদি যেমন: সকল প্রকার দলিল, খতিয়ান, খাজনার দাখিলা বা রশিদ, মাঠ পর্চা ইত্যাদির কপি সংগ্রহ করে দলিলগুলো জন্য সংশ্লিষ্ট সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে কিংবা প্রয়োজনে জেলা রেজিস্ট্রি অফিসে ও মাঠপর্চা, জরিপ খতিয়ানগুলো জরিপ অফিসে এবং নামজারি খতিয়ান, খাজনার দাখিলা সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন ভূমি অফিসে গিয়ে কাগজপত্রের সঠিকতা যাচাই করে নিতে হবে। 

৭. ইউনিয়ন ভূমি অফিসে জমির খাজনা বকেয়া আছে কি না, তা নিশ্চিত হতে হবে। বকেয়া থাকলে এবং বকেয়া খাজনাসহ জমি ক্রয় করলে বকেয়া খাজনা পরিশোধের দায়দায়িত্ব ক্রেতার ওপর বর্তাবে। একই সঙ্গে অধিক সময়ের খাজনা বকেয়া থাকলে ক্রয়কৃত সম্পত্তি খাজনা অনাদায়ে সরকারের খাস সম্পত্তিতে অন্তর্ভুক্ত হয়ে যেতে পারে। 

৮. উপজেলা ভূমি অফিস বা ইউনিয়ন ভূমি অফিস হতে জমি ক্রয় করার পূর্বে উক্ত জমি অর্পিত/পরিত্যক্ত/ দেবোত্তর/খাস/সরকারিভাবে বিক্রয় নিষিদ্ধ সম্পত্তির তালিকাভুক্ত কি না কিংবা উক্ত জমি অধিগ্রহণভুক্ত কি না বা অধিগ্রহণের আওতাধীন কি না, তা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ শাখা হতে জেনে নিতে হবে। 

৯. সাব-রেজিস্ট্রি অফিস কিংবা জেলা রেজিস্ট্রি অফিস থেকে সর্বশেষ জমি বেচা-কেনার তথ্য জেনে নিতে হবে। 

১০. যে জমিটি বিক্রি হতে যাচ্ছে, সেই জমিটি ঋণের দায়ে ব্যাংকে দায়বদ্ধ কি না, সেই বিষয়ে খোঁজ নিতে হবে।

জমি ক্রয়ের পর যা করণীয়

  • দলিল রেজিস্ট্রির পর কোনো আমিন/সার্ভেয়ার দ্বারা ক্রয়কৃত জমি মেপে সীমানা নির্ধারণ করে আগের মালিকের কাছ থেকে দখল বুঝে নিতে হবে।
  • জমিতে দখল প্রতিষ্ঠা/প্রমাণের জন্য জমির প্রকৃত ব্যবহার তথা চাষাবাদ, গাছ রোপণ, ঘরবাড়ি নির্মাণ ইত্যাদি করতে হবে এবং সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করতে হবে।
  • যেহেতু মূল দলিল প্রাপ্তি সময়সাপেক্ষ বিষয়, সেহেতু দলিল সম্পাদনের পর দলিলের নকল উত্তোলন করে দ্রুত সংশ্লিষ্ট সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবরে উপজেলা ভূমি অফিসে আবেদন জানাতে হবে এবং ক্রেতার নামে নামজারি/মিউটেশন করে নিতে হবে। কেননা, দখল ও নামজারি করতে দেরি করলে অসাধু বিক্রেতা ক্রেতার ক্রয়কৃত জমি অন্যত্র বিক্রি করে দিতে পারেন।
  • সহকারী কমিশনার (ভূমি)-এর কার্যালয়ে নামজারি হলে নামজারি খতিয়ান এবং ডিসিআর সংগ্রহ করতে হবে। নামজারি খতিয়ান মূলে নতুন হোল্ডিংয়ে ভূমি উন্নয়ন কর (খাজনা) পরিশোধ করে রসিদ নিতে হবে। আগে এই রসিদ ইউনিয়ন ভূমি অফিস থেকে সংগ্রহ করা যেত, তবে বর্তমানে অনলাইনেই খাজনা পরিশোধ করা যায়। উক্ত প্রদত্ত খাজনার রসিদ কপি সংগ্রহ করে সংরক্ষণ করতে হবে।
  • নিয়মিতভাবে প্রতিবছর ভূমি উন্নয়ন কর বা খাজনা পরিশোধ করতে হবে। তিন বছরের বেশি বকেয়া থাকলে সার্টিফিকেট মামলা হওয়াসহ জমি খাস হয়ে যেতে পারে।
  • সময়মতো রেজিস্ট্রি অফিস থেকে মূল দলিল সংগ্রহ করে সংরক্ষণ করতে হবে।

'নামজারি কিংবা খাজনা প্রদানের কাজ ভূমি মন্ত্রণালয় প্রদত্ত অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার

বর্তমানে নামজারি কিংবা খাজনা প্রদানের কাজে ভূমি মন্ত্রণালয়ের অনলাইন প্ল্যাটফরম ব্যবহার করা যায়। অনলাইনের মাধ্যমে নামজারি করা করা হলে, তাকে ই-নামজারি বলা হয়। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন জায়গায় সাধারণ নামজারির পরিবর্তে ই-নামজারি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ভবিষ্যতে এ দুটি কাজ অনলাইনের মাধ্যমেই করতে হবে। তাই এ বিষয়ে আমাদের ধারণা থাকা আবশ্যক।

অনলাইনে জমি খারিজ (নামজারি) করার জন্য যেসব কাগজপত্র লাগবে-

  • আবেদনকারীর ছবি
  • আবেদনকারীর স্বাক্ষর
  • জমি ক্রয় করার দলিল
  • ওয়ারিশ সনদ (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)
  • সর্বশেষ খতিয়ান (ক্রয়কৃত জমির খতিয়ান)
  • এনআইডি

অনলাইনে জমি খারিজ (নামজারি) করার নিয়ম ২০২৩

অনলাইনে জমি খারিজ/ই-নামজারি করার জন্য আমাদের প্রথমেই https://mutation.land.gov.bd/ এই লিংকে প্রবেশ করতে হবে। প্রবেশ করার পর আমরা নিচের ছবিটির মতো দেখতে পাব। এখান থেকে লাল কালি চিহ্নিত অপশনটিতে ক্লিক করতে হবে। 

নামজারি আবেদন' এই অপশনটিতে ক্লিক করার পর একটি ফরম প্রদর্শিত হবে। এখানে নিজের সঠিক তথ্য দিয়ে এই ফরমটি পূরণ করতে হবে। নিজের বিভাগ সিলেক্ট করে, নিজ জেলা সিলেক্ট করতে হবে। এরপর উপজেলা ও মৌজা সিলেক্ট করতে হবে। এছাড়া যেসব তথ্য চাওয়া হয়েছে এসব দিয়ে পরবর্তী পেজে যেতে হবে।

নামজারি আবেদন ফরমটি পূরণ করার পর আমাদের 'পরবর্তী' বাটনে ক্লিক করে পরবর্তী ধাপে যেতে হবে। পরবর্তী পেজে তফসিল ও গ্রহীতার তথ্য দিতে হবে। এরপর পরবর্তী পেজে দাতার তথ্য ও প্রয়োজনীয় তথ্য আপলোড করতে হবে। সবশেষে পেমেন্ট করতে হবে ও আবেদন সম্পন্ন করতে হবে।

অনলাইনে খারিজ (নামজারি) আবেদন করার পর বর্তমান অবস্থা জানার পদ্ধতি

অনলাইনের মাধ্যমে খারিজ আবেদন শেষ করার পর আমরা অনলাইনের মাধ্যমেই আবেদনের বর্তমান অবস্থা জানতে পারব। আমাদের আবেদন গৃহীত হয়েছে কি না এবং আবেদন বাতিল হলেও তা জানতে পারব। কী কারণে আবেদন বাতিল হয়েছে, এটিও জানতে পারব। খারিজ আবেদন অবস্থা জানতে আমাদের এই https:// mutation.land.gov.bd/search-application ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে হবে।

অনলাইনে খারিজ অনুমোদন হলে পরবর্তী করণীয়

অনলাইনের মাধ্যমে জমি খারিজ আবেদন করার পর আমাদের আবেদন অনুমোদিত হলে শুনানিতে অংশগ্রহণ করতে হবে। আমরা সশরীর উপস্থিত হয়ে শুনানিতে অংশ্রহণ করতে পারব। এছাড়া আমরা চাইলে অনলাইনের মাধ্যমে শুনানিতে অংশগ্রহণ করতে পারব।

অনলাইনে শুনানিতে অংশগ্রহণ করার পদ্ধতি

অনলাইনে জমির ই-নামজারি করার পর অনলাইনে শুনানিতে অংশগ্রহণ করতে http://oh.lams.gov.bd/ এই ওয়েবসাইটে আমাদের প্রবেশ করে শুনানিতে অংশগ্রহণ করতে হবে। ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে শুনানির জন্য অনুরোধ পাঠানো যায় এবং শুনানির তালিকাও দেখা যায়।

অনলাইনে জমি খারিজ করতে কত টাকা লাগে

অনলাইনে জমি খারিজ বা ই-নামজারির আবেদন করতে নির্দিষ্ট ফি দিতে হবে। প্রথমে আবেদন করার কোর্ট ফি বাবদ ২০ টাকা, নোটিশ জারি ফি বাবদ ৫০ টাকা মোট ৭০ টাকা পরিশোধ করতে হবে। আবেদন অনুমোদিত হওয়ার পর হালনাগাদ ফি বাবদ ১০০০ টাকা এবং প্রতি খতিয়ান সরবরাহ ফি বাবদ ১০০ টাকা অনলাইনে পরিশোধ করতে হবে। ফি পরিশোধ হয়ে গেলে অনলাইন থেকে কিউআর কোডযুক্ত অনলাইন ডিসিআর (ডুপ্লিকেট কার্বন রসিদ) সংগ্রহ করা যাবে।

বিভিন্ন বিনিয়োগের মুনাফা ও ঝুঁকি

বিনিয়োগের ক্ষেত্রে জমিজমা-সংক্রান্ত বেশ কিছু তথ্য সম্পর্কে আমরা জেনেছি। এবার আমরা কোথায় বিনিয়োগ করতে পারি সে সম্পর্কে জানার জন্য বিভিন্ন ধরনের বিনিয়োগ সংক্রান্ত তথ্য একটি ছকে একনজরে দেখে নিই:

বিনিয়োগ পরিস্থিতি-১

অর্পা বড়ুয়ার বয়স মাত্র ২৮ বছর। তিনি একটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানে ভালো বেতনে চাকরি করেন। প্রাপ্ত বেতন থেকে প্রতি মাসেই তিনি উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সঞ্চয় করতে পারেন। বর্তমানে তার সঞ্চিত অর্থের পরিমাণ পাঁচ লক্ষ টাকা। তিনি তার সঞ্চিত অর্থ একটি লাভজনক খাতে বিনিয়োগ করতে চান।

বিনিয়োগ পরিস্থিতি-২

হাবিব সাহেবের তিন সন্তান। তিনি তার পারিবারিক আয় থেকে প্রতিমাসেই কিছু টাকা সঞ্চয় করেন। কিছুদিন আগে তিনি তার অফিস থেকে দুই লক্ষ টাকা লভ্যাংশ প্রণোদনা বা প্রফিট বোনাস পেয়েছেন। তিনি জমানো চার লক্ষ টাকা এবং প্রফিট বোনাসের দুইলক্ষ টাকা একত্রিত করে বিনিয়োগকরতেচান; যা থেকে আগামী ছয়বছর পর তিন সন্তানের শিক্ষাখরচ অনায়েসে বহন করতে পারেন। এই টাকার ওপর তিনি নির্ভরশীল না হলেও টাকাটা তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ।

বিনিয়োগ পরিস্থিতি-৩

জনাব উপল তঞ্চঙ্গ্যা তার সঞ্চিত দুই লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করতে চান। তার জন্য তিনটি বিকল্প রয়েছে।

পারিবারিক বিনিয়োগ পরিকল্পনা তৈরির ধাপসমূহ

পারিবারিক বিনিয়োগ পরিকল্পনা তৈরির ক্ষেত্রে আমরা নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করতে পারি-

ধাপ-১: পরিবারের বর্তমান আর্থিক অবস্থা বিশ্লেষণ

বিনিয়োগ পরিকল্পনার এই ধাপে আমরা আমাদের পারিবারিক অবস্থা বিবেচনা করব অর্থাৎ আমাদের পরিবারের বর্তমান আয়, ব্যয় ও সঞ্চয় পরিস্থিতি কেমন তা পর্যবেক্ষণ করব। পরিবারিক স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ কত? পরিবারের বর্তমান সঞ্চয় কত? পরিবারের কোনো সম্পদ অব্যবহৃত অবস্থায় রয়েছে কি না? সার্বিক বিবেচনায় পরিবারের বিনিয়োগযোগ্য সম্পদ কত? বিনিয়োগযোগ্য অর্থের ওপর পরিবারের নির্ভরশীলতা কেমন? পরিবারের বর্তমান আর্থিক দায়-দেনা পরিস্থিতি কেমন? পারিবারিক আয়ের কী কী উৎস রয়েছে। কোন কোন উৎস থেকে নিয়মিত আয় হয়? কোন কোন উৎস থেকে মাঝে অর্থপ্রাপ্তি ঘটে ইত্যাদি বিষয় ভালোভাবে বিশ্লেষণ করতে হবে। আমরা এই কাজটি সহজে করার জন্য নিচের চেক লিস্টটি ব্যবহার করতে পারি।

ক্রম

প্রশ্ন

প্রাপ্ত তথ্য

মন্তব্য

১.

নিয়মিত উৎস থেকে পরিবারের বার্ষিক আয় কত?

 

 

২.

অনিয়মিত উৎস থেকে পরিবারের বার্ষিক অর্থপ্রাপ্তি কত?

 

 

৩.

পরিবারিক স্থাবর সম্পদের পরিমাণ কত? (যদি থাকে)

 

 

৪.

পরিবারিক অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ (ব্যাংকে জমা টাকা, অন্যের কাছে পাওনা ইত্যাদি) কত? (যদি থাকে)

 

 

৫.

বার্ষিক পারিবারিক ব্যয় কত (অবশ্যক: যা করতেই হবে)?

 

 

৬.

বার্ষিক পারিবারিক ব্যয় কত (আকস্মিক: মাঝে মাঝে করার প্রয়োজন হয়)?

 

 

৭.

বার্ষিক সঞ্চয়ের পরিমাণ কত?

 

 

৮.

বিনিয়োগযোগ্য অর্থের ওপর পরিবারের নির্ভরশীলতা কেমন?

 

 

৯.

বিনিয়োগের আয় থেকে পরিবারের ব্যয় নির্বাহ করা হবে কি না?

 

 

১০.

পরিবারের আর্থিক দায়ের পরিমাণ কত?

 

 

ধাপ-২: বিনিয়োগের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নির্ধারণ

এই ধাপে বিনিয়োগের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নির্ধারণ করতে হবে। অর্থাৎ বিনিয়োগের মাধ্যমে আমাদের পরিবার কোন চাহিদা পূরণ করতে চাচ্ছে, তা নির্ধারণ করতে হবে। যেমন: পরিবারের নিয়মিত আয়ের সঙ্গে অতিরিক্ত আয় যোগ করার মাধ্যমে পরিবারের ব্যয় স্বাচ্ছন্দ আনয়ন, পারিবারিক সম্পদের প্রবৃদ্ধি ঘটানো, ভবিষ্যৎ সময়ে কোনো একটি বিশেষ আর্থিক চাহিদা পূরণের বিষয়টি নিশ্চিত করা; পরিবারের দৈনন্দিন আবশ্যকীয় ব্যয় নির্বাহ ইত্যাদি। এক্ষেত্রে আমাদের অবশ্যই ধাপ-১ এ প্রাপ্ত ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। এক্ষেত্রে আমাদের সিদ্ধান্ত অবশ্যই যুক্তিসংগত হতে হবে।

ধাপ-৩: বিনিয়োগে গ্রহণযোগ্য ঝুঁকিমাত্রা নির্ধারণ এবং বিনিয়োগের সময়কাল নির্ধারণ

এখন আমরা ধাপ-১ ও ধাপ-২ এ প্রাপ্ত ফলাফল ও সিদ্ধান্ত বিবেচনা করব। একই সঙ্গে ইতিপূর্বে বর্ণিত ঝুঁকি গ্রহণ ক্ষমতার আলোকে পরিবারের সামগ্রিক সক্ষমতা বিবেচনা করে বিনিয়োগ ঝুঁকির মাত্রা নির্ধারণ করব। আমাদের পরিবার বিনিয়োগের যেটুকু ক্ষতি বহন করতে পারবে, ঠিক সেই পরিমাণ গ্রহণযোগ্য ঝুঁকিমাত্রা নির্ধারণ করতে হবে। যদি আমাদের পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো হয়, বিনিয়োগের মূল উদ্দেশ্য হয় সম্পদ বৃদ্ধি এবং পরিবারে অধিক মুনাফার প্রত্যাশা থাকে, তাহলে আমাদের পরিবারের গ্রহণযোগ্য ঝুঁকিমাত্রা বেশি হবে। কিন্তু যদি আমাদের পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো না হয়, বিনিয়োগকৃত সম্পদই আমাদের পরিবারের একমাত্র সম্বল হয়, তাহলে পরিবারের গ্রহণযোগ্য ঝুঁকিমাত্রা সর্বনিম্ন হবে। ঝুঁকিমাত্রা নির্ধারণের পাশাপাশি বিনিয়োগের সময়কাল নির্ধারণও গুরুত্বপূর্ণ। ঠিক কত সময়ের জন্য আমাদের পরিবার বিনিয়োগ করতে চাচ্ছে, তা ঠিক করতে হবে। যদি আমাদের পরিবারের আর্থিক চাহিদা অধিক থাকে, তাহলে স্বল্প মেয়াদে বিনিয়োগ করতে হবে। আবার যদি আমাদের পরিবারের আর্থিক চাহিদা কম থাকে, তাহলে দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগ করতে হবে। আবার যদি আমাদের পরিবার বিনিয়োগকৃত অর্থ থেকে নিয়মিত মুনাফা গ্রহণ করতে চায়, তাহলে মধ্যমেয়াদে বিনিয়োগ করতে হবে।

ধাপ-৪: বিনিয়োগের খাত নির্বাচন

এখন উপরের ধাপগুলোতে প্রাপ্ত ফলাফলের ভিত্তিতে এবং পূর্বে বর্ণিত বিভিন্ন ধরনের বিনিয়োগ সুযোগের তথ্য ছক বিশ্লেষণ করে, বিনিয়োগের উপযুক্ত খাত নির্বাচন করতে হবে। অর্থাৎ আমাদের পরিবারের জন্য কোন ধরনের বিনিয়োগ খাত/ইনস্ট্রুমেন্ট নির্বাচন করব, যেমন: ডেবট ইনস্ট্রুমেন্টস (ব্যাংকের মেয়াদি আমানত, সঞ্চয়পত্র ইত্যাদি), ইক্যুয়িটি ইনস্ট্রুমেন্টস (সাধারণ শেয়ার, অগ্রাধিকার শেয়ার ইত্যাদি), প্রাইভেট ইক্যুয়িটি (ব্যক্তি মালিকানাধীন ব্যবসায় মূলধনি বিনিয়োগ), স্থাবর সম্পদে বিনিয়োগ (স্বর্ণ, জমি, ফ্ল্যাট, পণ্য ইত্যাদি)।

ধাপ-৫: বিনিয়োগের ফলাফল মূল্যায়ন এবং বিনিয়োগ পুনর্বিন্যাস সিদ্ধান্ত গ্রহণ

এটা মূলত বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনা-সম্পর্কিত ধাপ। এই ধাপে আমাদের পরিবারের বিনিয়োগকৃত অর্থের প্রাপ্ত ফলাফল বিশ্লেষণ করতে হবে। অর্থাৎ আমরা যে প্রত্যাশা করে বিনিয়োগ করেছি, তা থেকে প্রত্যাশা অনুযায়ী ফল পাচ্ছি কি না, তা বিশ্লেষণ করতে হবে। যদি ফলাফল প্রত্যাশা অনুযায়ী পাওয়া যায়, তাহলে আমাদের বিনিয়োগ পরিকল্পনাকে সফল হিসেবে বিবেচনা করা যাবে। কিন্তু যদি প্রত্যাশা অনুযায়ী ফল না পাওয়া যায়, তাহলে আমাদের বিনিয়োগ পরিকল্পনা পুনর্বিশ্লেষণ করে নতুন খাত নির্বাচন করতে হবে, যাতে পরিবারের বিনিয়োগ প্রত্যাশা পূরণ করা যায়। এই কাজটি সহজে করার জন্য আমরা নিচের চেক লিস্টটি ব্যবহার করতে পারি:

আমরা ভালো থাকার প্রত্যাশায় অনেক শ্রম ও মেধা খরচ করে উপার্জন করি। কিন্তু আমাদের অসতর্কতা কিংবা অব্যবস্থাপনার কারণে হয়তো এই কষ্টার্জিত উপার্জন নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এজন্যেই আমাদের বিভিন্ন ধরনের বিনিয়োগ সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে, বুঝে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। নিজেদের পারিবারের জন্য কোন ধরনের বিনিয়োগ প্রযোজ্য, তা পর্যালোচনার মাধ্যমে নির্বাচন করতে হবে। কাজ করলে ঝুঁকি আসতে পারে, তবে ঝুঁকির ভয়ে বিনিয়োগ না করে অর্থ গচ্ছিত রেখে দেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ নয়। এতে বরং ঝুঁকির মাত্রা অনেক বেশি। সুতরাং সবদিক বিবেচনা করে অর্থ বিনিয়োগ করা হলে ব্যক্তিগতভাবে যেমন লাভবান হওয়া যায়, তেমনি এই অর্থ দেশের অর্থনীতিতেও অবদান রাখতে পারে। এর পাশাপাশি পরিবারের খরচ নিয়ে আমাদের দুঃশ্চিন্তার অবসান হবে। আমরা আমাদের সাধ্যমতো পরামর্শ দিয়ে অন্যদেরও আর্থিক ভাবনায় সহায়তা করতে পারি। তাতে সবার জন্যই আগামীর দিনগুলো ঝুঁকিমুক্ত ও নির্ভার হবে।

Content added || updated By

আরও দেখুন...

Promotion