ক্যাপাসিটর (Capacitor)
দু'টি সমান্তরাল পরিবাহী পরস্পরের মধ্যে অন্তরক পদার্থ দিয়ে আলাদা করলে যদি বৈদ্যুতিক চার্জ ধরে রাখতে পারে তাকে ক্যাপাসিটর বলে। এই ক্যাপাসিটরের মধ্যে দুইটি ধাতব পাতকে অপরিবাহী পদার্থ দিয়ে পৃথক করে খালি জায়গায় বায়ু বা অপরিবাহী পদার্থ দিয়ে ভরাট করে ফেলা হয়। এ অপরিবাহী বন্ধুকে ভাই-ইলেকট্রিক বলে, যা ইন্সুলেশন হিসেবে কাজ করে। ক্যাপাসিটরকে দিয়ে চিহ্নিত করা হয়। এর একক ফ্যারাড । এ ফ্যারাডকে F বা f দিয়ে চিহ্নিত করা হয় ।
ক্যাপাসিট্যান্স (Capacitance)
প্রত্যেক বস্তুর চার্জ বা বিদ্যুৎ ধারন করার নির্দিষ্ট ক্ষমতা আছে। অতএব ইলেকট্রিক চার্জ ধারন করার ক্ষমতাকেই ক্যাপাসিট্যান্স বলে। কোন বন্ধুতে চার্জ বৃদ্ধি করলে ভোল্টেজ বৃদ্ধি পাবে। কাজেই চার্জ এবং ভোল্টেজ পরস্পর সমানুপাতিক।
ক্যাপাসিট্যান্সের একক এবং এককের রূপান্তর-
এস.আই. (SI) এককঃ ক্যাপাসিটরের স্থির বিদ্যুৎ একক ছোট এবং চুম্বকীয় একক বড় হওয়ার ব্যবহারিক কাজের সুবিধার জন্য বিজ্ঞানী মাইকেল ফ্যারাড, ক্যাপাসিট্যান্সের একক প্রচলন করেন। তাঁর নামানুসারে ক্যাপাসিটরের একক ফ্যারাড হয়। কোন ক্যাপাসিটরের ভোল্টেজ ১ ভোস্ট বৃদ্ধি করতে যদি ১ কুলম্ব চার্জের প্রয়োজন হয় তবে তাকে ১ ফ্যারাড বলে। একে সংক্ষেপে F বা f দিয়ে চিহ্নিত করা হয়। ফ্যারাড বড় একক হওয়ার ব্যবহারিক ক্ষেত্রে সাধারণত মাইক্রোফ্যারাডকেই (f) একক হিসেবে ধরা হয়।
ক্যাপাসিট্যান্সের ছোট এককে রূপান্তর-
১ ফ্যারাড = ১০৬ মাইক্রোফ্যারাড
১ ফ্যারাড = ১০১২ পিকোক্যারাড
ক্যাপাসিট্যান্সের বড় এককে রূপান্তর-
১০৬ মাইক্রোফ্যারাড = ১ ফ্যারাড
১ মাইক্রোফ্যারাড = ১০-৬ ফ্যারাড
১ পিকো-ফ্যারাড = ১০-১২ ফ্যারাড
ক্যাপাসিটরের প্রকারভেদ (Classification of Capacitor)
ক্যাপাসিটর প্রধানত দুই প্রকার -
আবার ফিক্সড ক্যাপাসিটর নিম্ন লিখিত ভাগে ভাগ করা যায়-
(ক) গ্লাস ক্যাপাসিটর (Glass Capacitor)
(খ) মাইকা ক্যাপাসিটর (Mica Capacitor)
(গ) পেপার ক্যাপাসিটর (Paper Capacitor)
(ঘ) বায়ু ক্যাপাসিটর ( Air Capacitor)
(ঙ) পলিটার ক্যাপাসিটর (Polyster Capacitor)
(চ) সিরামিক ক্যাপাসিটর (Ceramic Capacitor)
(ছ) ভৈল টাইপ ক্যাপাসিটর (Oil Capacitor)
(জ) ইলেকট্রোলাইটিক ক্যাপাসিটর (Electrolytic Capacitor )
ফিক্সড ক্যাপাসিটর (Fixed Capacitor)
মাইকা ক্যাপাসিটরঃ মাইকা এবং ধাতুর পাতলা পাত পর্যায়ক্রমে সাজিয়ে মাইকা ক্যাপাসিটর তৈরি করা হয়। এ ধরণের ক্যাপাসিটরের ভোল্টেজ রেটিং অনেক বেশি। এই ক্যাপাসিটরের দাম বেশি বিধায় বেশি মানের হয় না।
ইলেট্রোলাইটিক ক্যাপাসিটর (Electrolytic Capacitor)
যে ক্যাপাসিটর ইলেকট্রোলাইট নামক রাসায়নিক বন্ধু দিয়ে তৈরি করা হয় তাকে ইলেকট্রোলাইটিক ক্যাপাসিটর বলে। এ্যামোনিয়া, বরিক এসিড এবং পানির সংমিশ্রনে ইলেকট্রোলাইটিক তৈরি করা হয়। ইলেকট্রোলাইটিক ক্যাপাসিটর বিভিন্ন ধরণের হয়ে থাকে -
(ক) অভ্যন্তরীণ ইলেকট্রোড ক্যাপাসিটর
(খ) কাট্রিজের মধ্যে ফয়েল রোড ক্যাপাসিটর
(গ) বিভিন্ন সেকশনের টিন ক্যান ক্যাপাসিটর
ভেরিয়্যাবল ক্যাপাসিটর (Variable Capacitor)
যে ক্যাপাসিটরের মান নির্দিষ্ট থাকে না এবং নিম্নতম মান থেকে সর্বোচ্চ মান পর্যন্ত পরিবর্তন করা যায় তাকে পরিবর্তনশীল বা ভেরিয়্যাবল ক্যাপাসিটর বলে।
ভেরিয়্যাবল ক্যাপাসিটর দুই প্রকার -
ক) গ্যাং ক্যাপাসিটর
খ)ট্রিমার ক্যাপাসিটর
ট্রিমার ক্যাপাসিটর আবার তিন প্রকার
ক) পিটন ট্রিমার ক্যাপাসিটর
খ) চিহ্ন ট্রিমার ক্যাপাসিটর
গ) মিনিয়েচার ক্যাপাসিটর
গ্যাং ক্যাপাসিটর (Gang Capacitor)
গ্যাং ক্যাপাসিটরের দুই সেট প্যারালাল প্লেট থাকে, সেট B স্থির থাকে এবং অন্য সেট C যুক্ত ভাবে ঘুড়ানো যায় । B সেটটি ইন্সুলেটেড করা থাকে এবং C সেটটি সবের সাহায্যে ঘুড়ানো হয়। ফাঁকা জায়গাটার বায়ু ডাই ইলেকট্রিক হিসেবে কাজ করে। যখন দুই সেট সামনা সামনি হয় তখন ক্যাপাসিট্যান্সের মান বাড়ে, আবার যখন এক সেট থেকে অন্য সেটে বের হরে আসে তখন ক্যাপাসিট্যান্সের মান কম হয় অথবা সর্ব নিম্ন হয়।
ট্রিমার (Trimmer) ক্যাপাসিটর
ট্রিমার ক্যাপাসিটর কানেকশন দেয়ার জন্য দু'টি পয়েন্ট থাকে। ট্রিমার ক্যাপাসিটরের একটি ক্রু থাকে তা দিয়ে মুড়িয়ে ক্যাপাসিটরের মান বাড়ানো এবং কমানো যায়। বিভিন্ন ধরনের ট্রিমার ক্যাপাসিটর হয়ে থাকে। সাধারণত 8 pF হতে ৭০ pF পর্যন্ত হয়ে থাকে।
ফিক্সড এবং ডেরিহ্যাবল ক্যাপাসিটরের ব্যবহার (Use of Capacitor)
ফিক্সড ক্যাপাসিটরের (Fixed Capacitor) ব্যবহার -
১। উচ্চ ইলেকট্রিক ফিল্ড উৎপন্নের ক্ষেত্রে।
২। বৈদ্যুতিক সার্কিটে স্পার্কিং মুক্ত করার ক্ষেত্রে।
৩। ভি.সি. বিদ্যুৎ প্রবাহে বাধা প্রদান এবং এসি বিদ্যুৎ প্রবাহিত করতে সাহায্য করে।
৪। বিদ্যুৎ শক্তি সঞ্চিত করতে ব্যবহার করা হয়।
পরিবর্তনশীল ক্যাপাসিটরের ব্যবহার -
ক) গ্যাং ক্যাপাসিটর লোকাল ফ্রিকোয়েন্সী উৎপন্ন করতে ব্যবহার করা হয়।
খ) ট্রিমার আর.এফ স্টেজের ফাইন টিউনিং এর জন্য ট্রিমার ব্যবহার করা হয় ।
ক্যাপাসিটর পরীক্ষা (Capacitor Test)
ক্যাপাসিটর পরীক্ষা ওহম মিটারের সাহায্যে করা হয়। ক্যাপাসিটর কম মানের হলে ওহমস মিটারের সিলেক্টর নবটি উচ্চ রেঞ্জে সেট করতে হবে। আর যদি ক্যাপাসিটর উচ্চ মানের হয়, তাহলে ওহমস মিটারের নবটি কম রেঞ্জে সেট করতে হবে। ক্যাপাসিটর উচ্চ মানের হলে ডিফ্লেকশন কাঁটা বেশি ডিফ্লেকশন দেখাবে। আর যদি নিম্ন মানের হয়, তাহলে ডিফ্লেকশন কাঁটা কম দেখাবে। ওহম মিটার কাটা দ্রুত ডিফ্লেকশন দেয়ার পর যদি আস্তে করে অসীম স্থানে আসে, তাহলে ক্যাপাসিটর ভাল আছে। আর যদি অল্প আসে তাহলে লিকেজ আছে। আর যদি একেবারে না আসে তাহলে শর্ট সার্কিট বোঝাৰে। এইভাবে ক্যাপাসিটর টেস্ট করা হয়ে থাকে। নিম্ন মানের ক্যাপাসিটরের মান ওহমস মিটারে ডিফ্লেকশন নাও দিতে পারে, অর্থাৎ মান নাও দেখাতে পারে। তবে বর্তমানে ডিজিটাল মিটার দিয়ে সরাসরি ক্যাপাসিটরের মান পরিমাপ করা যায়।
আরও দেখুন...