দ্বিতীয় অধ্যায়
বন্দনা
বুদ্ধ, ধর্ম এবং সঙ্ঘকে ত্রিরত্ন বলা হয়। বৌদ্ধরা বন্দনার মাধ্যমে ত্রিরত্নের গুণরাশি স্মরণ করে এবং তাদের প্রতি শ্রদ্ধা ভক্তি নিবেদন করে। এ অধ্যায়ে আমরা বুদ্ধের নয়গুণ, ধর্মের ছয়গুণ এবং সরে নয়গুণ সমন্বিত ত্রিরত্ন বন্দনাটি পড়ব। এ বন্দনাটি খুবই সুপরিচিত। বৌদ্ধরা সাধারণত সকাল-বিকাল দুবেলা গৃহে বুদ্ধাসনের সামনে বা বিহারে গিয়ে এবং বিভিন্ন ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান ও উৎসবে ত্রিরত্ন বন্দনাটি আবৃত্তি করে।
ত্রিরত্ন বন্দনারত উপাসক-উপাসিকা
এ অধ্যায় শেষে আমরা-
* ত্রিরত্ন বন্দনার গুরুত্ব মূল্যায়ন করতে পারব।
* ত্রিরত্ন বন্দনা বাংলা অর্থসহ পালি ভাষায় বলতে পারব।
* ত্রিরত্ন বন্দনার সুফল ব্যাখ্যা করতে পারব
কদনা
পাঠ : ১ ত্রিরত্ন বন্দনা ও নিয়মাবলি
বুদ্ধ, ধর্ম এবং সঙ্ঘের গুণরাশি স্মরণ করে যে বন্দনা করা হয় তাকে ত্রিরত্ন বন্দনা বলে। বিভিন্নভাবে ত্রিরত্নের গুণরাশি বর্ণনা করে ত্রিরত্ন বন্দনা করা হয়। ফলে বিভিন্ন রকম ত্রিরত্ন বন্দনা পাওয়া যায়। কোনো ত্রিরত্ন বন্দনা ছোট, কোনটি মধ্যম সারির, আবার কোনোটি বড়। এসব বন্দনায় ত্রিরত্নের অসীম গুণের পরিচয় পাওয়া যায়। ত্রিরত্নের এসব মহৎ গুণাবলি স্বীয় জীবনে প্রতিফলিত করাই ত্রিরত্ন বন্দনার মূল উদ্দেশ্য।
বিভিন্ন নিয়মাবলি অনুসরণ করে ত্রিরত্ন বন্দনা করতে হয়। নিচে ত্রিরত্ন বন্দনার নিয়মাবলিসমূহ তুলে ধরা হলো:
১. ভালো করে মুখ-হাত ধুয়ে নিতে হয়। প্রয়োজনবোধে স্নানও করা যায় ।
২. পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কাপড় পরিধান করতে হয় ।
৩. মনকে সমাহিত ও লোভ-দ্বেষ-মোহ মুক্ত রাখতে হয়।
৪. হাঁটু ভেঙে করজোড়ে বসে বন্দনা করতে হয় ।
অনুশীলনমূলক কাজ
ত্রিরত্ন বন্দনার নিয়মাবলি অনুসরণ পূর্বক ত্রিরত্ন বর্ণনা কর। (শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে)
পাঠ ত্রিরত্নের গুণাবলি
ত্রিরত্নের গুণাবলি অপরিসীম। কিন্তু এ অধ্যায়ে বর্ণিত ত্রিরত্ন বন্দনায় বুদ্ধের নয়গুণ, ধর্মের ছয়গুণ এবং সঙ্ঘের নয়গুণের কথা বলা হয়েছে। এসব গুণ রত্নের চেয়েও অধিক মূল্যবান। নিচে এসব গুণ বর্ণনা করা হলো :
বুদ্ধগুণ:
বুদ্ধের নয়গুণ। যথা
১. তিনি অর্থৎ । ‘অরি' শব্দের অর্থ শত্রু । লোভ, দ্বেষ, মোহ, অজ্ঞানতা, অহঙ্কার, মিথ্যাদৃষ্টি, সন্দেহ, আলস্য, মনের অস্থিরতা, লজ্জাহীনতা ও পাপভয়হীনতা প্রভৃতি অরিকে হত বা বিনাশ করেছেন বলে তিনি অর্থৎ। পুনর্জন্মের কারণ ধ্বংস করেছেন বিধায় আর জন্মগ্রহণ করে দুঃখ ভোগ করবেন না। এ কারণে তিনি অর্থৎ ।
বৌদ্ধধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা
তিনি সম্যক সম্বুদ্ধ। কারণ তিনি স্বয়ং সকল ধর্ম ও সকল বিষয় সম্যকরূপে জেনেছেন এবং সম্যকরূপে দেশনাও করেছেন।
৩. তিনি বিদ্যাচরণসম্পন্ন। কারণ তিনি অষ্টবিদ্যা এবং পনের প্রকার আচরণ সম্পন্ন । অষ্টবিদ্যা হচ্ছে: বিদর্শন জ্ঞান, মনোময় ঋদ্ধি, ঋদ্ধিশক্তি, দিব্যশ্রোত জ্ঞান, পরের চিত্ত সম্পর্কে জ্ঞাত হওয়া, পূর্বজন্ম বা নিবাস স্মরণ করার জ্ঞান, চ্যুতি-উৎপত্তি জ্ঞান এবং কাম তৃষ্ণাক্ষয় জ্ঞান । পনের প্রকার আচরণ হচ্ছে : শীল, ইন্দ্রিয় সংযম, আহারের মাত্রা জ্ঞান, সর্বদা সজাগ থেকে আত্মরক্ষা, শ্রদ্ধা, লজ্জা, পাপভয়, শ্রুতি বা পাণ্ডিত্য, উৎসাহ, স্মৃতি, প্রজ্ঞা, প্রথম ধ্যান, দ্বিতীয় ধ্যান, তৃতীয় ধ্যান এবং চতুর্থ ধ্যান প্রভৃতি আচরণ সম্পন্ন ।
৪. তিনি সুগত। তিনি পরম শান্তিময় নির্বাণে গত বা উপনীত হয়েছেন বলে সুগত।
৫. তিনি লোকজ্ঞ। সমস্ত লোকের (স্বর্গ, মর্ত্য এবং পাতাল) বিষয় বিদিত জ্ঞাত বলে তিনি
লোকবিদূ বা লোকজ্ঞ । ৬. তিনি অনুত্তর। কারণ নির্বাণ ধর্মে তিনি ব্যতীত অন্য কোনো শিক্ষক নেই। শীল, সমাধি, প্রজ্ঞা ও বিমুক্তি জ্ঞান দর্শন গুণে তাঁর থেকে শ্রেষ্ঠ কেউ ছিলেন না বা তাঁর সমানও কেউ
ছিলেন না বলে তিনি অনুত্তর গুণ সম্পন্ন
৭. পুরুষদম্য সারথী। সারথী যেমন অদম্য অশ্বকে দমন করে তেমনি বুদ্ধ অদম্য, দুর্বিনীত, কাম- ক্রোধাদি বশত উগ্রস্বভাব বিশিষ্ট ব্যক্তিগণকে দমনপূর্বক শীল, সমাধি ও প্রজ্ঞায় প্রতিষ্ঠিত এবং নির্বাণ লাভ করাতে সক্ষম বা পারঙ্গম বলে তিনি পুরুষদম্য সারথী ।
৮. তিনি দেব ও মনুষ্যগণের শাস্তা। কারণ তিনি পরম সত্য দ্বারা অনুশাসন করেন এবং দেবতা ও মনুষ্যদের ধর্মোপদেশ দিয়ে নির্বাণ লাভ করান।
তিনি বুদ্ধ ভগবান। জানার যত বিষয় আছে তা অবগত হয়েছেন এবং অবগত হয়ে অন্যকে দেশনা করেছেন বলে তিনি বুদ্ধ। অগ্নিসদৃশ রাগ-দ্বেষ, মোহ ধ্বংস করে ভবসমূহে আগমন-নির্গমনের পথ রুদ্ধ করেছেন বলে তিনি ভগবান ।
ধর্মগুণ :
ধর্মের ছয়গুণ। যথা :
১. এই ধর্ম সুব্যাখ্যাত বা সুপ্রকাশিত।
২. এই ধর্ম স্বয়ং দ্রষ্টব্য বা নিজে নিজে দেখার যোগ্য ।
রুপনা
১৩
৩. এই ধর্ম কালাকাল বিহীন। যখনই এ ধর্ম পালন করা হয় তখনই ফল পাওয়া যায়।
৪. এই ধর্ম এসে দেখা বা নিজের বিচারবুদ্ধি দিয়ে বিবেচনার যোগ্য।
৫. এ ধর্ম নির্বাণ প্রাপক অর্থাৎ নির্বাণে উপনীত করে।
৬. এই ধর্ম বিজ্ঞগণ কর্তৃক প্রত্যক্ষ ও জ্ঞাতব্য ।
সঙ্ঘের নয়গুণ। যথা:
১. বুদ্ধের শ্রাবকসা সুপ্রতিপন্ন অর্থাৎ সত্যপথের অনুসারী। তাঁরা এ পথ অবলম্বন করে নির্বাণাভিমুখে গমন করছেন। তাই ভিক্ষুসংঘ সুপ্রতিপন্ন।
২. বুদ্ধের শ্রাবকসঙ্গ ঋজু প্রতিপন্ন। আর্য অষ্টাঙ্গিক মার্গ নির্বাণ লাভের সোজা বা ঋজুপথ । বুদ্ধের শ্রাবকসঙ্ঘ এ পথে চলেছেন। তাই তাঁরা ঋজু প্রতিপন্ন।
৩. বুদ্ধের শ্রাবকসঙ্গ ন্যায় প্রতিপন্ন। বুদ্ধ নির্দেশিত অষ্টাঙ্গিক মার্গ নির্বাণ লাভের সঠিক বা যথার্থ পথ। বুদ্ধশিষ্যগণ এই পথ অনুসরণ করেন বলে তাঁরা ন্যায় প্রতিপন্ন ।
৪. বুদ্ধের শ্রাবকসা সমীচীন বা উত্তমভাবে প্রতিপন্ন। আর্য অষ্টাঙ্গিক মার্গ নির্বাণ লাভের উপযুক্ত বা উত্তম পথ। বুদ্ধের শ্রাবকসঙ্ঘ এ পথে পরিচালিত বলে তা সমীচীনভাবে প্রতিপন্ন।
৫. বুদ্ধের শ্রাবকসঙ্ঘ আহ্বানের যোগ্য। চারিপ্রত্যয় অর্থাৎ চীবর, পিণ্ড, শয়নাসন ও ঔষধ পথ্যাদি দান দেয়ার উপযুক্ত পাত্র। এঁদের দান দিলে মহাফল লাভ হয়।
৬. বুদ্ধের শ্রাবকসঙ্গ পাছনেয়া। 'পাহুন' শব্দের অর্থ দূরদেশ হতে আগত জ্ঞাতি মিত্রগণের
সৎকারের জন্য সংগৃহীত বস্তু। বুদ্ধের শ্রাবকসঙ্গ এরূপ বস্তু দান ও গ্রহণের উপযুক্ত পাত্র ।
৭. বুদ্ধের শ্রাবকসঙ্ঘ দক্ষিণা বা দানের যোগ্য।
৮. বুদ্ধের শ্রাবকসঙ্ঘ অগুলিবদ্ধ হয়ে অভিবাদনযোগ্য।
৯. বুদ্ধের শ্রাবকসঙ্ঘ অনুত্তর বা শ্রেষ্ঠ পুণ্যক্ষেত্র। উর্বর ভূমিতে যেমন শস্য ভালো হয়, তেমনি উপযুক্ত পাত্রে দান দিলে অধিক পুণ্য অর্জন করা যায়। বুদ্ধের শ্রাবক শিষ্যকে দান দিলে। অধিক পুণ্য অর্জন হয়। কারণ তাঁরা লোভ-দ্বেষ-মোহ বিহীন এবং সর্ব আসক্তি মুক্ত।
বৌদ্ধধর্ম ও নৈতিক শিক্ষ
কি বন্দনারত উপাসক-উপাসিকা
অনুশীলনমূলক কাজ
বুদ্ধকে কেন অর্থৎ বলা হয়?
তাকে পুরুষ দম্য সারণী বলার কারণ কী? পান শব্দের অর্থ কী? বুদ্ধের শ্রাবকসঙ্ঘকে অনুত্তর পুণ্যক্ষেত্র বলা হয় কেন?
পাঠ : ৩
ত্রিরত্ন বন্দনা (পালি ও বাংলা )
বুদ্ধের নয় গুণ বন্দনা (পালি)
ইডিপি সো ভৰা অৱহং, সম্মাসমুদ্ধো, বিজ্ঞাচরণ সম্পন্নো, সুগতো, লোকবিদু, অনুত্তরো পুরি সদ্য সারথি, সখা দেবমনুসানং বুদ্ধো তপৰাতি ।
বুদ্ধং জীবিতং পরিযন্তং সরণং গচ্ছামি।
যে চ বুদ্ধা অতীতা চ যে চ বুদ্ধা অনাগতা, পান্না চ যে বুদ্ধা অহং দামি সাদা ।
১৬
বৌদ্ধধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা
বাংলা অনুবাদ :
ভগবানের ধর্ম উত্তমরূপে ব্যাখ্যাত, নিজে দেখার যোগ্য, কালাকালবিহীন, এসে দেখার যোগ্য, নির্বাণ প্রাপক এবং বিজ্ঞগণ কর্তৃক জ্ঞাতব্য ।
আমি সারাজীবন ধর্মের শরণ গ্রহণ করছি।
অতীত, অনাগত এবং বর্তমান ধর্মসমূহকে আমি সর্বদা বন্দনা করি ।
ধর্মের শরণ ব্যতিত আমার আর অন্য কোনো শরণ নেই। এ সত্য বাক্য দ্বারা আমার জয় হোক এবং মঙ্গল হোক
আমি উত্তম অঙ্গ দ্বারা ত্রিবিধ শ্রেষ্ঠ ধর্মকে (মার্গ, ফল এবং নির্বাণ) অবনত মস্তকে বন্দনা করছি। আমি যদি না বুঝে কোনো দোষ করে থাকি, হে ধর্ম আমায় ক্ষমা করুন ।
শব্দার্থ
স্বাক্ষাতো উত্তমরূপে ব্যাখ্যাত, সন্দিঠিকো স্বয়ং দ্রষ্টব্য বা নিজে নিজে দেখার যোগ্য, অকালিকো - কালাকালবিহীন, এহিপসিকো এসে দেখার যোগা, ওপনথিকো - নির্বাণ প্রাপক, পচং - প্রত্যক্ষ, বেদিতব্বো জ্ঞাতব্য, বিঞগৃহীতি - বিজ্ঞজন কর্তৃক । -
সঙ্ঘের নয় গুণ বন্দনা (পালি)
সুপটি পন্নো ভগবতো সাবকসঙ্ঘো, উজুপটি পরো ভগবতো সাবকসঙ্ঙ্খো, জ্ঞায়পটিপত্রো ভগবতো সাবকসঙ্ঘো, সমীচিপটিপন্নো ভগবতো সাবকসঙ্ঘো, যদিদং চত্তারি পুরিসযুগানি অষ্ঠপুরিসপুরলা এস ভগবতো সাবকসঙ্ঙ্খো, আছনেয্যো, পাহুনেয্যো দক্ষিণেয্যো অঞ্জলিকরণীয্যো, অনুত্তরং পুঞঞখেবং লোকস্সা তি ।
সঙ্ঘং জীবিতং পরিযন্তং সরণং গচ্ছামি।
যে চ সঙ্ঘা অতীতা চ যেচ সঙ্ঘা অনাগতা, পচ্চুপ্পন্না চ যে সঙ্ঘা অহং বন্দামি সব্বদা । নথি যে সরণং অঞঞং সঙ্ঘো মে সরণং বরং, সঙ্ঘে যো থলিতো দোসো সঙ্ঘো খমতু তং মম
এতেন সচবজ্জেন হোতু মে জ্যমঙ্গলং । উত্তমঙ্গেন বন্দেহং সঙ্ঘঞ্চ দুবিধুত্তমং,
বাংলা অনুবাদ :
ভগবানের শ্রাবকসঙ্গ সুপ্রতিপন্ন, সহজ-সরল পথ প্রতিপন্ন, ন্যায় পথ প্রতিপন্ন, সমীচীন পথ প্রতিপন্ন (উত্তম পথ কিংবা উপযুক্ত পথ)। ভগবানের শ্রাবক চার যুগল (স্রোতাপত্তি, সকৃদাগামি, অনাগামি এবং অর্থৎ) এবং পুদ্গল হিসেবে দুপ্রকার পুদ্গল (মার্গ ও ফল ভেদে) এ আট প্রকার পুদ্গল । ভগবানের শ্রাবকসঙ্ঘ আহ্বান যোগ্য, সৎকার যোগ্য, উত্তম খাদ্য ভোজ্য দ্বারা পূজার যোগ্য, অঞ্জলিবন্ধ হয়ে করজোড়ে বন্দনার যোগ্য এবং জগতের দেব-নরের সর্বশ্রেষ্ঠ পুণ্যক্ষেত্র ।
বন্দনা
১৭
আমি সারা জীবন সঙ্ঘের শরণ গ্রহণ করছি।
অতীত, অনাগত এবং বর্তমান সংঘকে আমি সর্বদা বন্দনা করি
সঙ্ঘের শরণ ব্যতিত আমার আর অন্যকোনো শরণ নেই। এ সত্য বাক্য দ্বারা আমার জয় হোক এবং মঙ্গল হোক । আমি উত্তম অঙ্গ দ্বারা দ্বিবিধ (সম্মতি ও পরমার্থ) শ্রেষ্ঠ সংঘকে বন্দনা করছি। যদি না বুঝে কোনো
রকম দোষ করে থাকি, হে সংঘ আমায় ক্ষমা করুন ।
শব্দার্থ
সুপটিপন্নো সুপথের অনুগামী, সাবকসঙ্গো শ্রাবকসংঘ, উজুপটিপন্নো - সহজ-সরল বা ঋজু - পথ প্রতিপন্ন, ঞায়পটিপন্নো ন্যায় বা নির্বাণ পথ প্রতিপন্ন, সমীচিপটিপত্রো - সমীচীন, উত্তম পথ বা উপযুক্ত পথে প্রতিপন্ন, চত্তারি চার, অট্ঠপুরিসা - আট প্রকার পুরুষ, আহুনেয্যো- আহবান যোগ্য, পাহুনেয্যো - সৎকার যোগ্য, দক্ষিণেয্যো দক্ষিণার যোগ্য, অঞ্চলিকরণীয্যো- অঞ্জলিবন্ধ হয়ে করজোড়ে বন্দনার যোগ, অনুত্তরং - অনুত্তর, পুঞ্ঞখেত্তং- পুণ্যক্ষত্র
পাঠ : 8
ত্রিরত্ন বন্দনার সুফল
মহাজ্ঞানী বুদ্ধ, তাঁর প্রচারিত ধর্ম এবং প্রতিষ্ঠিত সঙ্ঘ অসীম গুণের অধিকারী। ত্রিরত্নের গুণ মহিমা পৃথিবীর যে কোনো রত্নের চেয়েও অধিক মূল্যবান। ত্রিরত্ন বন্দনার মাধ্যমে এসব গুণাবলি স্মরণ এবং অর্জনের চেষ্টা করা হয়। তাই ত্রিরত্ন বন্দনার সুফল অনেক। নিচে কতিপয় সুফল তুলে ধরা হলো: ১. স্বভাবত মানুষের চিত্ত বা মন সতত লোভ-দ্বেষ-মোহরূপী কালিমায় আচ্ছন্ন থাকে। ত্রিরত্নের গুণরাশি স্মরণ করলে মনের কালিমাসমূহ দূরীভূত হয়।
২. চিত্ত বা মন সদা চঞ্চল, দুর্বার, দুর্দমনীয় এবং সর্বত্র বিচরণশীল। লাভ-অলাভ, ন্যায়-অন্যায় প্রভৃতি বিচার না করে যত্রতত্র বিচরণপূর্বক দুঃখ প্রদান করে। ত্রিরত্ন বন্দনার ফলে চিত্ত সমাহিত বা একাগ্র হয়। সমাহিত চিত্ত মানুষকে সৎপথে পরিচালিত করে। এ প্রসঙ্গে বুদ্ধ বলেছেন মাতা-পিতা যত না উপকার সাধন করতে পারেন, সমাহিত চিত্ত তার চেয়ে অধিক উপকার সাধন করতে পারে।
৩. চিত্ত সমাহিত হলে কায়-বাক্যও সংযত হয়। ফলে মানুষ নৈতিক জীবনযাপন করতে সক্ষম হয়। ৪. ধর্ম সাধনায় নৈতিক জীবন অপরিহার্য। কারণ অনৈতিক জীবন অকুশল মনোবৃত্তি সৃষ্টি করে । অকুশল মনোবৃত্তি মানুষের হিতাহিত জ্ঞান নষ্ট করে তৃষ্ণার বশবর্তী করে তোলে । তৃষ্ণায় বশীভূত মানুষ সর্বদা পাপকর্মে লিপ্ত থাকে। ত্রিরত্ন বন্দনা অকুশল মনোবৃত্তি দূর করে চিত্তে কুশল সংস্কার উৎপন্ন করে।
৫. চিত্তে কুশল সংস্কার উৎপন্ন হলে ব্যক্তি কুশলকর্ম সম্পাদনে উৎসাহী হয়। কুশলকর্ম সম্পাদনের মাধ্যমে পুণ্য অর্জন হয়।
৬. পুণ্য অর্জনের ফলে মৃত্যুর পর সদগতি প্রাপ্ত হয় ।
৭. নিয়মিত ত্রিরত্ন বন্দনার ফলে ধর্মতত্ত্ব জানতে আগ্রহ সৃষ্টি হয়। ফলে অপ্রমত্তভাবে ধর্মাচরণে সচেষ্ট থাকে।
৮. ত্রিরত্ন বন্দনা অহংবোধ এবং সকল প্রকার জাগতিক ভয়-ভীতি দূর করে মানুষকে পরম শান্তি নির্বাণের পথে পরিচালিত হতে উদ্বুদ্ধ করে ।
অনুশীলনমূলক কাজ
চিত্তের স্বভাব কীরূপ? বুদ্ধ সমাহিত চিত্ত সম্পর্কে কী বলেছেন?
আরও দেখুন...