ব্যবসায়ে বিমার প্রয়োজনীয়তা

একাদশ- দ্বাদশ শ্রেণি - ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা - ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা ১ম পত্র | NCTB BOOK

মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে উৎপাদন বন্টন ও এর সহায়ক যে কোনো বৈধ কাজকে ব্যবসায় বলে। ব্যবসায়ের একটা অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তা। ঝুঁকি বলতে আর্থিক ক্ষতির সম্ভাবনাকে বুঝায় । এই ক্ষতির বোঝা মাথায় নিয়েই একজন ব্যবসায়ীকে ব্যবসায় করতে হয়। কিন্তু সেই ক্ষতি যদি তার সারা জীবনের সাধনাকে নিমিষেই নিঃশেষ করে দেয়, অজানা আশঙ্কা যদি তাকে সবসময়ই তাড়া করে ফেরে তবে ব্যবসায়ীর পক্ষে স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যবসায় করা সম্ভব হয় না । এই সমস্যা ও প্রতিবন্ধকতা দূর করার জন্যই বিমা ভূমিকা রেখে চলেছে। নিম্নে ব্যবসায়ে বিমার প্রয়োজনীয়তা সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো :

  • ঝুঁকিগত প্রতিবন্ধকতা হ্রাস (Reducing the hindrances of risk): ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তা সবসময়ই ব্যবসায়ীদের তাড়া করে ফেরে । কারখানাতে আগুন লাগতে পারে, জাহাজ ডুবে যেতে পারে, যানবহন দুর্ঘটনায় পতিত হতে পারে, কাজ করতে যেয়ে শ্রমিক দুর্ঘটনার শিকার হতে পারে, পণ্যমূল্য কমে যেতে পারে- এভাবে নানান ঝুঁকির কারণে ব্যবসায়ীদের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া অসম্ভব নয় । এই সকল ঝুঁকিই ব্যবসায়ী প্রিমিয়াম দিয়ে তা বিমা কোম্পানির ওপর অর্পণ করতে পারে। যেখানে ঝুঁকির সৃষ্টি হলে বিমা কোম্পানি ক্ষতিপূরণে বাধ্য থাকে । তাই ব্যবসায়ের ঝুঁকিগত বাধা দূরীকরণে বিমার কোনো বিকল্প নেই।
  • বিনিয়োগে উৎসাহ সৃষ্টি (Encouraging investment) : বিনিয়োগের সাথে ঝুঁকি জড়িত । ঝুঁকি যত বেশি হয় লাভের সম্ভাবনাও তত বেশি থাকে। কিন্তু তাই বলে খুব বেশি ঝুঁকিপূর্ণ খাতে বিনিয়োগ ব্যবসায়ের অস্তিত্বকেই ঝুঁকির সম্মুখীন করতে পারে। ফলে যতটুকু ঝুঁকি বহনযোগ্য ব্যবসায়ীরা ততদূর বিনিয়োগে আগ্রহী হয় । এরূপ বিনিয়োগের ঝুঁকির মধ্যে কিছু বিষয় থাকে যা বিমাযোগ্য আবার কিছু বিষয় থাকে। যেখানে বিমা করা যায় না । কারখানায় আগুনের ঝুঁকি, জাহাজের সমুদ্র ডুবির ঝুঁকি ইত্যাদি বিমা করা যায় । ফলে বিমার কারণেই এ ধরনের ক্ষেত্রে বিনিয়োগে ব্যবসায়ীরা উৎসাহ বোধ করে। তবে নতুন প্রযুক্তি আসার ফলে পুরনো প্রযুক্তির ঝুঁকি, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে সৃষ্ট ঝুঁকি ইত্যাদি বিমা করা যায় না। বিমাযোগ্য ঝুঁকির আওতা যত বাড়ে ব্যবসায়ীরাও সে সকল খাতে বিনিয়োগে ততই এগিয়ে আসে। বিমা এ ধরনের সুযোগ না দিলে এত বেশি বিনিয়োগ ব্যবসায়ীদের পক্ষে সম্ভব হতো না ।
  • বৈদেশিক ব্যবসায়ের উন্নয়ন (Development of foreign trade): বৈদেশিক ব্যবসায়ে দু'টি দেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে লেনদেন হওয়ায় সেখানে ঝুঁকির মাত্রা স্বভাবতই বেশি থাকে। পণ্য পাঠাতে বা পা সংগ্রহে বিলম্ব, নৌ পথে পণ্য প্রেরণে নানান ধরনের ঝুঁকি, মূল্য প্রাপ্তিতে অনিশ্চয়তা, প্রেরিত পণ্য নিয়ে অভিযোগ ইত্যাদি নানান বিষয় এক্ষেত্রে ঝুঁকির সৃষ্টি করে। বিমা এ সকল ক্ষেত্রে রপ্তানি বিমা রপ্তানি ঋণ বিমা, রপ্তানি ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কীম, নৌ-বিমা ইত্যাদির ব্যবস্থা করে বৈদেশিক ব্যবসায়কে সহজ ও ঝুঁকিমুক্ত করতে সহায়তা করে। ফলে ব্যবসায়ীরা নির্দ্বিধায় বৈদেশিক ব্যবসায়ে অংশগ্রহণ করতে পারে। এতে দেশ ও ব্যবসা-বাণিজ্য উপকৃত হয়।
  • কর্মী মনোবল বৃদ্ধি (Encouraging the employee morale) : বিমা ঝুঁকি হ্রাস করেই শুধু ব্যবসায়ের উন্নয়নে সহযোগিতা করে না এর সংশ্লিষ্ট কর্মীদের মনোবল উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে । একটা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান যখন ঝুঁকির মাত্রা সীমিত রেখে ব্যবসায় পরিচালনা করে এগিয়ে যেতে পারে তখন স্বাভাবিকভাবেই ঐ ব্যবসায়ের স্থায়িত্ব এবং মালিক পক্ষের মনোবল বাড়ে। যা জনশক্তিকেও স্বভাবতই প্রভাবিত করে । সেইসাথে প্রতিষ্ঠান শ্রমিক-কর্মীদের জন্য যখন বিভিন্ন ধরনের বিমা পলিসি সংগ্রহ করে তখন কর্মীরা প্রত্যক্ষভাবে এর দ্বারা উপকৃত হয় । শ্রমিকদের ক্ষতিপুরণ বিমা, স্বাস্থ্য বিমা, গ্রুপ বিমা, ইত্যাদি করার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান কর্মীদের জীবনের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। এতে কর্মীরা প্রণোদিত হয় ও প্রতিষ্ঠানের উৎপাদনশীলতা বাড়ে।
Content added By
Promotion