রাষ্ট্র ও সরকার ব্যবস্থা

নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - পৌরনীতি ও নাগরিকতা - NCTB BOOK

রাষ্ট্র একটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান । আর সরকার রাষ্ট্র গঠনের অন্যতম প্রধান উপাদান। সরকার মূলত রাষ্ট্রের মুখপাত্র হিসেবে দেশ পরিচালনা করে। রাষ্ট্র ও সরকার বিভিন্ন রকম হতে পারে। রাষ্ট্রের সামাজিক ও রাজনৈতিক চাহিদার বিভিন্নতার কারণে বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রে বিভিন্ন ধরনের সরকারব্যবস্থা গড়ে উঠেছে । এ অধ্যায়ে আমরা বিভিন্ন ধরনের রাষ্ট্র ও সরকারপদ্ধতি সম্পর্কে জানব ।
এ অধ্যায় পড়া শেষে আমরা -
• বিভিন্ন ধরনের রাষ্ট্র ও সরকারব্যবস্থা বর্ণনা করতে পারব
• বিভিন্ন সরকার ও রাষ্ট্র ব্যবস্থায় নাগরিকের অবস্থান ও সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক ব্যাখ্যা করতে পারব
• গণতন্ত্র ও একনায়কতন্ত্রের পার্থক্য নির্ণয় করতে পারব • গণতান্ত্রিক আচরণ শিখব ও তা প্রয়োগ করতে উদ্বুদ্ধ হব ।

‘রাষ্ট্র' ও 'সরকার' এ দুটি অনেক সময় সমার্থক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু এ দুটির মধ্যে মৌলিক পার্থক্য আছে । রাষ্ট্র একটি পূর্ণাঙ্গ ও স্থায়ী প্রতিষ্ঠান । এটি সার্বভৌম বা সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী । আর সরকার রাষ্ট্র গঠনের চারটি উপাদানের (জনসংখ্যা, ভূখণ্ড, সরকার ও সার্বভৌমত্ব) মধ্যে একটি উপাদান মাত্র । পৃথিবীর সব রাষ্ট্র একই উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত হলেও সব রাষ্ট্র ও সরকার ব্যবস্থা এক ধরনের নয়। আবার সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে যেকোনো দেশে রাষ্ট্র ও সরকারের স্বরূপ পরিবর্তিত হতে পারে ।

বিশ্বে বিভিন্ন ধরনের রাষ্ট্র ব্যবস্থা লক্ষ করা যায় । নিম্নে রাষ্ট্রের বিভিন্ন ধরন লক্ষ করি ।

অর্থনীতির ভিত্তিতে রাষ্ট্র
সম্পত্তি বা অর্থনৈতিক ব্যবস্থার উপর নিয়ন্ত্রণ থাকা না-থাকার ভিত্তিতে রাষ্ট্র দুই ধরনের হয়, যেমন- পুঁজিবাদী রাষ্ট্র ও সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র। 

পুঁজিবাদী রাষ্ট্র
পুঁজিবাদী রাষ্ট্র বলতে সেই রাষ্ট্রকে বোঝায়, যেখানে সম্পত্তির উপর নাগরিকদের ব্যক্তিগত মালিকানা স্বীকার করা হয় । এ সরকারব্যবস্থায় উৎপাদনের উপাদানসমূহ (ভূমি, শ্রম, মূলধন ও ব্যবস্থাপনা) ব্যক্তিগত মালিকানায় থাকে । এর উপর সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকে না। অবাধ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থা পরিচালিত হয়। এ ধরনের রাষ্ট্রে নাগরিকগণ সম্পদের মালিকানা ও ভোগের ক্ষেত্রে স্বাধীন । বর্তমান বিশ্বের অধিকাংশ রাষ্ট্রই পুঁজিবাদী ।
 

সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র
সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র বলতে সেই ধরনের রাষ্ট্রকে বোঝায়, যা ব্যক্তিমালিকানা স্বীকার করে না। এতে উৎপাদনের উপকরণগুলো রাষ্ট্রীয় মালিকানায় থাকে। রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণে উৎপাদন ও বণ্টনের ব্যবস্থা পরিচালিত হয়। এটি পুঁজিবাদী রাষ্ট্রের বিপরীত। সমাজতন্ত্রে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যকে স্বীকার করা হয় না। এ ধরনের রাষ্ট্রে একটিমাত্র রাজনৈতিক দল থাকে। গণমাধ্যম রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণে থাকে । বিরোধী মত প্রচারের সুযোগ থাকে না । যেমন- চীন ও কিউবা সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র ।

ক্ষমতার উৎসের ভিত্তিতে রাষ্ট্র
ক্ষমতার উৎসের ভিত্তিতে রাষ্ট্রকে দুভাগে ভাগ করা যায় । যথা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও একনায়কতান্ত্রিক রাষ্ট্র ।
 

গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র
যে শাসন ব্যবস্থায় রাষ্ট্রের শাসনক্ষমতা জনগণের হাতে ন্যস্ত থাকে, তাকে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বলে । এটি এমন একটি শাসন ব্যবস্থা যেখানে শাসনকার্যে জনগণের সকলে অংশগ্রহণ করতে পারে এবং সকলে মিলে সরকার গঠন করে । এটি জনগণের অংশগ্রহণে, জনগণের দ্বারা এবং জনগণের কল্যাণার্থে পরিচালিত একটি শাসন ব্যবস্থা। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে জনগণের মতপ্রকাশ ও সরকারের সমালোচনা করার সুযোগ থাকে । এতে নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় অর্থাৎ নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তিত হয়। একাধিক রাজনৈতিক দল থাকে, সকলের স্বার্থরক্ষার সুযোগ থাকে এবং নাগরিকের অধিকার ও আইনের শাসনের স্বীকৃতি দেওয়া হয়। বাংলাদেশ, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ইত্যাদিসহ পৃথিবীর অধিকাংশ দেশে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা রয়েছে ।

গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার গুণ

গণতন্ত্রের অনেক ভালো দিক রয়েছে । নিচে গণতন্ত্রের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য গুণ আলোচনা করা হলো ।
১. ব্যক্তিস্বাধীনতার রক্ষাকবচ : গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে জনগণ স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করতে পারে। সরকারের সমালোচনা করতে পারে । প্রতিনিধি নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার পরিচালনায় অংশগ্রহণ করতে পারে । ফলে ব্যক্তিস্বাধীনতার বিকাশ ঘটে এবং নাগরিকের অধিকার রক্ষা হয় ।
২. দায়িত্বশীল শাসন : এ ব্যবস্থায় শাসকগণ জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে জনগণের নিকট দায়ী থাকে । তারা পরবর্তী নির্বাচনে জয়ী হওয়ার জন্য জনস্বার্থমূলক কাজ করার চেষ্টা করে। ফলে দেশে দায়িত্বশীল শাসন প্রতিষ্ঠিত হয় ।
৩. সরকারের দক্ষতা বৃদ্ধি : গণতন্ত্রে জনগণের আস্থার উপর সরকারের স্থায়িত্ব নির্ভর করে। ফলে জনগণের আস্থা লাভের জন্য সরকার সততার সাথে দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করে। এর ফলে সরকারের দক্ষতা বৃদ্ধি পায় ।
8. সাম্য ও সমঅধিকারের প্রতীক : গণতন্ত্রে সবাই সমান। এতে জাতি, ধর্ম, বর্ণ ইত্যাদি নির্বিশেষে সবাই সমান সুযোগ বা অধিকার ভোগ করে এবং সবাই সমানভাবে রাষ্ট্রের কাজে অংশগ্রহণ করতে পারে।
৫. নাগরিকের মর্যাদা বৃদ্ধি : গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিরাই রাষ্ট্র পরিচালনা করে ।
নির্বাচনের মাধ্যমে সব নাগরিকের রাষ্ট্রের কাজে অংশগ্রহণের সুযোগ থাকায় তারা নিজেদের গুরুত্ব
উপলব্ধি করতে পারে । এতে তাদের মধ্যে দেশাত্মবোধ সৃষ্টি হয় এবং ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটে ও মর্যাদা
বৃদ্ধি পায় ।
৬. যুক্তি ও সম্মতির উপর প্রতিষ্ঠিত : গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা জনগণের সম্মতির উপর প্রতিষ্ঠিত। কাজেই গণতন্ত্রে শক্তি প্রয়োগ বা জোর করে কিছু করার সুযোগ নেই বরং জনগণের ইচ্ছা এবং যুক্তি প্রাধান্য পায় ।
৭. রাজনৈতিক শিক্ষা লাভ : গণতন্ত্রে রাষ্ট্রের শাসনকার্যে অংশগ্রহণের সুযোগ থাকায় নাগরিকগণ জটিল রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে চিন্তা করার সুযোগ পায়। নির্বাচনে অংশগ্রহণ ও রাজনৈতিক দলগুলোর বক্তব্য শুনে তাদের রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি পায় ।
৮. বিপ্লবের সম্ভাবনা কম : গণতন্ত্র নমনীয় শাসনব্যবস্থা। জনগণ ইচ্ছে করলে শান্তিপূর্ণ উপায়ে নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সরকার পরিবর্তন করতে পারে । ফলে এখানে বিপ্লবের সম্ভাবনা কম থাকে ।

গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার ত্রুটি

অনেক গুণ থাকা সত্ত্বেও গণতন্ত্রের কিছু ত্রুটি আছে । নিচে এগুলো আলোচনা করা হলো ।
১ . গুণ বা যোগ্যতার চেয়ে সংখ্যার উপর গুরুত্ব প্রদান : গণতন্ত্রে নির্বাচনের মাধ্যমে জয়-পরাজয় নির্ধারণ করা হয় বলে এখানে গুণ বা যোগ্যতার চেয়ে সংখ্যার ওপর গুরুত্ব বেশি দেওয়া হয়। অর্থাৎ এতে মাথা গণনা করা হয়, মেধার বিচার করা হয় না ।

২. দলীয় শাসন ব্যবস্থা : এ ব্যবস্থায় নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনকারী দল সরকার গঠন করে। নির্বাচিত দল শাসন কার্য পরিচালনায় দলীয় আদর্শ ও কর্মসূচীকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে। ফলে অন্যান্য দলের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিতে পারে।


৩. ব্যয়বহুল ও অর্থের অপচয় হয় : গণতন্ত্রে নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠন হয়। নির্বাচন পরিচালনায় প্রচুর অর্থের প্রয়োজন হয়। এছাড়া নির্বাচনের সময় প্রার্থীরা নির্বাচনি প্রচারের জন্য প্রচুর অর্থ ব্যয় করে । নির্বাচনে জনগণের সমর্থন আদায়ের জন্য প্রতিটি দল লিফলেট, পোস্টার, জনসভা ইত্যাদি করে প্রচুর অর্থ ব্যয় করে । এতে সময়, সম্পদ ও অর্থের অপচয় হয় ।


৪. ঘন ঘন নীতির পরিবর্তন : গণতন্ত্রে ঘন ঘন সরকার পরিবর্তন হয় । গণতন্ত্রে নির্বাচিত দল নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সরকার গঠন করে এবং প্রতিটি দল তাদের নীতির ভিত্তিতে কর্মসূচি প্রণয়ন করে । কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরকারের কর্মসূচি পুরোপুরি বাস্তবায়িত হওয়ার আগেই তাদের মেয়াদ শেষ হয়ে যায় । সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথে সরকারের নীতিও পরিবর্তন হয়। ফলে কখনো কখনো রাষ্ট্রের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয় ।

গণতন্ত্র সফল করার উপায় ও গণতান্ত্রিক আচরণ

গণতন্ত্র বর্তমান যুগে প্রচলিত শাসন ব্যবস্থাগুলোর মধ্যে সর্বোৎকৃষ্ট এবং সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য শাসনব্যবস্থা । কিন্তু এর চর্চা বা বাস্তবায়নের পথে অনেক প্রতিবন্ধকতা আছে। এসব প্রতিবন্ধকতা দূর করে গণতন্ত্রের সাফল্যের জন্য প্রয়োজন শিক্ষিত ও সচেতন জনগোষ্ঠী, অর্থনৈতিক সাম্য ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজব্যবস্থা, দক্ষ প্রশাসন এবং উপযুক্ত নেতৃত্ব। এ ছাড়া আরও প্রয়োজন পরমতসহিষ্ণুতা, আইনের শাসন, মুক্ত ও স্বাধীন প্রচারযন্ত্র, একাধিক রাজনৈতিক দল ও রাজনৈতিক সহনশীলতা। তবে সবচেয়ে বেশি যেটি প্রয়োজন তা হলো, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের নাগরিকদের গণতান্ত্রিক মনোভাবাপন্ন হওয়া। তাদেরকে ব্যক্তিগত, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনের সকল ক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক আচরণ করতে হবে । এজন্য যা করা প্রয়োজন তা হলো-


• নাগরিকদের পরমতসহিষ্ণু হতে হবে । সবাইকে মত প্রকাশের সুযোগ দিতে হবে। অন্যের মতকে শ্রদ্ধা করতে হবে এবং অধিকাংশের মতামতকে সবার মতামত হিসেবে মেনে নেওয়ার মানসিকতা থাকতে হবে । নিজের বা নিজ দলীয় মতামত জোর করে অন্যদের উপর চাপিয়ে দেওয়া যাবে না ।


• ব্যক্তিগত ও দলীয় স্বার্থপরতা পরিহার করতে হবে । এটি সকল নাগরিক ও রাজনৈতিক দলের জন্য প্রযোজ্য । কেবল বিরোধিতার জন্য বিরোধিতা করলে হবে না। দেশের মঙ্গলকে প্রাধান্য দিয়ে কাজ করতে হবে ।


• নিজের অধিকার আদায়ের পাশাপাশি অন্যের অধিকারকে সম্মান করতে হবে। নিজের অধিকার আদায় যেন অন্যের অধিকার ভঙ্গের কারণ না হয়, সে বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে ।


• বিভিন্ন সম্প্রদায় এবং দলের মধ্যে সম্প্রীতি, সহযোগিতা ও সহনশীলতা বজায় রাখতে হবে ।


• ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যকে শ্রদ্ধা করতে হবে । সেই সাথে নাগরিকদের সুনাগরিকের গুণাবলি অর্জন করতে হবে । নাগরিকদের হতে হবে বুদ্ধিমান, আত্মসংযমী ও বিবেকবান। 

• গণতন্ত্রের বাহন হচ্ছে নির্বাচন । নির্বাচন যেন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়, সেজন্য নাগরিকদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিতে হবে। অযোগ্য লোক যেন নির্বাচিত হতে না পারে, সেজন্য নাগরিকদের সচেতনভাবে ভোট দিয়ে উপযুক্ত লোককে নির্বাচন করতে হবে। এতে গণতন্ত্র শক্তিশালী হবে ।

• আইনের শাসন হলো গণতন্ত্রের প্রাণ। এজন্য সবাইকে আইন মানতে হবে। আইনের চোখে সবাই সমান । অতএব, সকলের প্রতি সমান আচরণ করতে হবে। অর্থাৎ সমান অধিকার ও সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে । এসব গণতান্ত্রিক আচরণ শেখা ও তা প্রয়োগের মাধ্যমে গণতন্ত্রকে সফল করার জন্য প্রতিটি নাগরিককে যত্নবান হতে হবে ।

একনায়কতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা

একনায়কতন্ত্র এক ধরনের স্বেচ্ছাচারী শাসন ব্যবস্থা। এতে রাষ্ট্রের শাসন ক্ষমতা জনগণের হাতে ন্যস্ত না থেকে একজন স্বেচ্ছাচারী শাসক বা দল বা শ্রেণির হাতে ন্যস্ত থাকে। এতে নেতাই দলের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী । তাকে বলা হয় একনায়ক বা ডিকটেটর । একনায়কতান্ত্রিক শাসককে সহায়তা করার জন্য মন্ত্রী বা উপদেষ্টা পরিষদ থাকে। কিন্তু তারা শাসকের আদেশ ও নির্দেশ মেনে চলে । একনায়কের আদেশই আইন । এ ব্যবস্থায় শাসকের কারও কাছে জবাবদিহিতা থাকে না। এতে একটিমাত্র রাজনৈতিক দল থাকে । এই দলের নেতাই সরকারপ্রধান। তার ইচ্ছা অনুযায়ী দল পরিচালিত হয় এবং তার অন্ধ অনুসারীদের নিয়ে দল গঠিত হয় । একনায়কতন্ত্রে গণমাধ্যমগুলো (রেডিও, টেলিভিশন, সংবাদপত্র ইত্যাদি) নেতা ও তার দলের নিয়ন্ত্রণে থাকে । এগুলো নিরপেক্ষভাবে ব্যবহারের সুযোগ দেওয়া হয় না। বরং সরকারি দলের গুণকীর্তনে ব্যবহৃত হয় । এ সরকার ব্যবস্থায় আইন ও বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে না । একনায়কের ইচ্ছা অনুযায়ী আইন প্রণয়ন ও বিচারকাজ সম্পন্ন করা হয়। এক জাতি, এক দেশ, এক নেতা একনায়কতন্ত্রের আদর্শ । এতে মনে করা হয়, সবকিছু রাষ্ট্রের জন্য, এর বাইরে বা বিরুদ্ধে কিছু নয় ।

একনায়কতান্ত্রিক রাষ্ট্রের দোষ

একনায়কতন্ত্র চরম স্বেচ্ছাচারী ব্যবস্থা। এর দোষগুলো নিম্নরূপ ।

১. গণতন্ত্রবিরোধী : একনায়কতন্ত্র গণতন্ত্র বিরোধী । এটি ব্যক্তি-স্বাধীনতাকে স্বীকার করে না, যা গণতন্ত্রের মূল কথা । এটি নাগরিকের মৌলিক অধিকার খর্ব করে । ফলে ব্যক্তিত্বের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয় ৷

২. স্বৈরাচারী শাসন : একনায়কতন্ত্র স্বৈরাচারী শাসন প্রতিষ্ঠা করে । কারণ একনায়ককে কারও নিকট জবাবদিহি করতে হয় না । তার কথাই আইন। এতে ব্যক্তির স্বাধীন চিন্তা ও মুক্ত বুদ্ধি চর্চার সুযোগ নেই । একনায়কতন্ত্র বস্তুত একটি স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থা ।

৩. নেতৃত্ব ও রাজনৈতিক চেতনা সৃষ্টির অন্তরায় : এ শাসন ব্যবস্থা একক নেতার নেতৃত্বে চলে বলে বিকল্প নেতৃত্ব গড়ে উঠার সুযোগ থাকে না । আবার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জনগণের অংশগ্রহণের সুযোগ না থাকায় রাজনৈতিক সচেতনতাও তৈরি হয় না ।


8. বিপ্লবের সম্ভাবনা : এ শাসন ব্যবস্থায় জনগণের অংশগ্রহণ নেই বলে সর্বদা বিপ্লবের ভয় থাকে। অভ্যন্তরীণ বিরোধিতা ও গণ-অসন্তোষের কারণে একনায়কতন্ত্র বেশি দিন টিকতে পারে না ।


৫. বিশ্বশান্তির বিরোধী : একনায়কতন্ত্রে উগ্র জাতীয়তাবোধ ধারণ ও লালন করা হয় । ক্ষমতার লোভ একনায়কের মধ্যে যুদ্ধংদেহী মনোভাব সৃষ্টি করে। হিটলার এ ধরনের মনোভাব পোষণ করে সারা পৃথিবীতে ধ্বংস ডেকে এনেছিলেন। এ ধরনের মনোভাব আন্তর্জাতিক শান্তির পরিপন্থী ।
একনায়কতান্ত্রিক ব্যবস্থা ব্যক্তিকে রাষ্ট্রের বেদীমূলে উৎসর্গ করে । এখানে ব্যক্তি রাষ্ট্রের জন্য, রাষ্ট্র ব্যক্তির
জন্য নয় । তাই বর্তমান বিশ্বে কোনো রাষ্ট্র একনায়ককে সমর্থন করে না ।

ক্ষমতা বণ্টনের নীতির ভিত্তিতে রাষ্ট্র

রাষ্ট্রের বিভিন্ন অংশের মধ্যে ক্ষমতা বণ্টনের নীতির ভিত্তিতে রাষ্ট্র দুই ধরনের হয়। যথা- এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র ও যুক্তরাষ্ট্র ।

এককেন্দ্রিক ব্যবস্থা: 

এককেন্দ্রিক রাষ্ট্রে সংবিধানের মাধ্যমে রাষ্ট্রের সকল শাসনতান্ত্রিক ক্ষমতা কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে ন্যস্ত করা হয় । ফলে কেন্দ্র থেকে দেশ পরিচালনা করা হয় । শাসনকার্যের সুবিধার জন্য দেশকে বিভিন্ন প্রদেশে বা অঞ্চলে ভাগ করে কিছু ক্ষমতা তাদের হাতে অর্পণ করা হয়। তবে প্রয়োজনবোধে কেন্দ্রীয় সরকার সে ক্ষমতা ফিরিয়ে নিতে পারে। এ ধরনের সরকার ব্যবস্থায় প্রাদেশিক বা আঞ্চলিক সরকারগুলো কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণে থেকে কেন্দ্রের এজেন্ট হিসেবে কাজ করে । বাংলাদেশ, যুক্তরাজ্য প্রভৃতি এককেন্দ্রিক রাষ্ট্রের উদাহরণ ।

 

যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা:

যে রাষ্ট্র ব্যবস্থায় একাধিক অঞ্চল বা প্রদেশ মিলিত হয়ে একটি রাষ্ট্র গঠন করে, তাকে যুক্তরাষ্ট্র বলে । এ ব্যবস্থায় কেন্দ্রীয় সরকারের শাসনকার্যের সুবিধার জন্য সংবিধানের মাধ্যমে কেন্দ্র ও প্রদেশ বা অঞ্চলের মধ্যে ক্ষমতা বণ্টন করা হয় । যুক্তরাষ্ট্রে পাশাপাশি অবস্থিত কতগুলো ক্ষুদ্র অঞ্চল বা প্রদেশ একত্রিত হয়ে একটি বড় রাষ্ট্র গঠন করে বলে রাষ্ট্রটি শক্তিশালী হয় । এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার রাষ্ট্রের বিভিন্ন এলাকার সম্পদ আহরণ করে একটি বৃহৎ অর্থনীতি গঠনপূর্বক রাষ্ট্রকে উন্নতির দিকে নিয়ে যেতে পারে । তাই বিশ্বের সকল যুক্তরাষ্ট্রই কম-বেশি উন্নত। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত একটি যুক্তরাষ্ট্র ।

উত্তরাধিকার সুত্রের ভিত্তিতে রাষ্ট্র

বিশ্বের কোনো কোনো রাষ্ট্রে রাষ্ট্রপ্রধানগণ উত্তরাধিকার সূত্রে রাষ্ট্রের শাসনক্ষমতা লাভ করে । এ ধরনের রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে বলা হয় রাজতন্ত্র । রাজতন্ত্রে রাজার ছেলে বা মেয়ে উত্তরাধিকার সূত্রে রাষ্ট্রের রাজা বা রানী হয়ে থাকে । রাজতন্ত্র দুই ধরনের, যথা- নিরঙ্কুশ রাজতন্ত্র ও নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্র ।

নিরঙ্কুশ রাজতন্ত্র : এ ধরনের রাষ্ট্রে রাজা বা রানী রাষ্ট্রের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। এতে শাসন ব্যবস্থায় জনগণের অংশগ্রহণের সুযোগ নেই। বর্তমান বিশ্বে এ ধরনের রাষ্ট্রের সংখ্যা নগণ্য। সৌদি আরবে নিরঙ্কুশ রাজতন্ত্র বিদ্যমান রয়েছে।

নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্র : এ ধরনের রাষ্ট্র ব্যবস্থায় রাষ্ট্রের রাজা বা রানী উত্তরাধিকার সূত্রে বা নিয়মতান্ত্রিকভাবে রাষ্ট্রপ্রধান হন। কিন্তু তিনি সীমিত ক্ষমতা ভোগ করেন। রাষ্ট্রের প্রকৃত শাসন ক্ষমতা থাকে জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে। যুক্তরাজ্যে (গ্রেট ব্রিটেন) নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্র প্রচলিত রয়েছে। জোড়ায় কাজ : নিরঙ্কুশ ও নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্রের মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ কর ।

উদ্দেশ্যের ভিত্তিতে রাষ্ট্র

কল্যাণমূলক রাষ্ট্রঃ

যে রাষ্ট্র জনগণের দৈনন্দিন ন্যূনতম চাহিদা পূরণের জন্য কল্যাণমূলক কাজ করে, তাকে বলা হয় কল্যাণমূলক রাষ্ট্র । এ ধরনের রাষ্ট্র জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য কর্মের সুযোগ সৃষ্টি করে, বেকার ভাতা প্রদান করে, বিনা খরচে শিক্ষা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করে। কানাডা, যুক্তরাজ্য, সুইডেন, নরওয়ে ইত্যাদি কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের উদাহরণ । এ ধরনের রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্য হলো-

• রাষ্ট্র সমাজের মঙ্গলের জন্য সামাজিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা জোরদার করে। খাদ্য, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা ও বাসস্থানের ব্যবস্থা করে। রাস্তাঘাট, এতিমখানা, সরাইখানা, খাদ্য ভর্তুকি প্রদান ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে । বেকার ভাতা, অবসরকালীন ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা ইত্যাদি প্রদান করে ।

• সচ্ছলদের উপর উচ্চহারে কর ধার্য করে ও কম সচ্ছলদের উপর কম কর ধার্য করে দরিদ্র ও দুস্থদের সাহায্য ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে ।

• কৃষক, শ্রমিক ও মজুরদের স্বার্থরক্ষার জন্য ন্যূনতম মজুরির ব্যবস্থা করে তাদের জীবনযাত্রার মান নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করে ।

• সমবায় সমিতি গঠন ও শ্রমিক কল্যাণ সমিতি গঠন করে কৃষক, শ্রমিক ও মজুরদের স্বার্থ সংরক্ষণের ব্যবস্থা করে।

সরকারের শ্রেণিবিভাগ

সরকারের ধারণার উৎপত্তির সময়কাল থেকে বিভিন্ন দার্শনিক সরকারকে বিভিন্নভাবে ভাগ করেছেন । আধুনিককালে সরকারের ধরন নিম্নরূপ :

ক. ক্ষমতা বণ্টনের নীতির ভিত্তিতে  এবং খ. আইন ও শাসন বিভাগের সম্পর্কের ভিত্তিতে

ক. ক্ষমতা বণ্টনের নীতির ভিত্তিতে সরকারের শ্রেণিবিভাগঃ  কেন্দ্র ও প্রদেশের মধ্যে ক্ষমতা বণ্টনের নীতির ভিত্তিতে সরকার দুই ধরনের হতে পারে। যথা - এককেন্দ্রিক সরকার ও যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার ।

খ. আইন ও শাসন বিভাগের সম্পর্কের ভিত্তিতেঃ  আইন ও শাসন বিভাগ সরকারের দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ। এ দুটি বিভাগের মধ্যে সম্পর্ক বা জবাবদিহিতা নীতির ভিত্তিতে সরকারের দুটি রুপ রয়েছে। যথা- সংসদীয় সরকার ও রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার

এককেন্দ্রিক সরকার

যে শাসন ব্যবস্থায় সরকারের সকল ক্ষমতা কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে ন্যস্ত থাকে এবং কেন্দ্র থেকে দেশের শাসন পরিচালিত হয়, তাকে এককেন্দ্রিক সরকার বলে। এতে কেন্দ্র ও প্রদেশের মধ্যে ক্ষমতার বণ্টন করা হয় না । এ সরকার ব্যবস্থায় আঞ্চলিক সরকারের কোনো স্বতন্ত্র অস্তিত্ব নেই । রাষ্ট্রে বিভিন্ন প্রদেশ বা প্রশাসনিক অঞ্চল থাকতে পারে। তবে তারা কেন্দ্রের প্রতিনিধি বা সহায়ক হিসেবে কাজ করে। বাংলাদেশ, জাপান, যুক্তরাজ্য প্রভৃতি দেশে এককেন্দ্রিক সরকার প্রচলিত আছে ।
জোড়ায় কাজ : এককেন্দ্রিক রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্যগুলো দিয়ে একটি ধারণা মানচিত্র/চার্ট তৈরি কর ।


এককেন্দ্রিক সরকারের গুণঃ
এককেন্দ্রিক সরকারের বিশেষ কতগুলো গুণ আছে । যেমন-
১. সহজ সাংগঠনিক ব্যবস্থা: এককেন্দ্রিক সরকারের সংগঠন সরল প্রকৃতির । এতে কেন্দ্রের হাতে সব ক্ষমতা ন্যস্ত থাকে । কেন্দ্র ও প্রদেশের মধ্যে ক্ষমতা বণ্টনের কোনো ঝামেলা নেই । কেন্দ্রে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলে সহজেই তা সমগ্র দেশে বাস্তবায়ন করা যায়। এ ছাড়া সারা দেশে অভিন্ন আইন, নীতি ও পরিকল্পনা বলবৎ করা হয় । ফলে সাংগঠনিক সামঞ্জস্য থাকে ।

২. জাতীয় ঐক্যের প্রতীক: এই সরকার ব্যবস্থায় রাষ্ট্রের ভিতরে বিভিন্ন প্রদেশ বা অঞ্চল থাকলেও তাদের কোনো স্বায়ত্তশাসন নেই । ফলে সারা দেশের জন্য একই প্রশাসনিক নীতি ও আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা হয়,যা জাতীয় সংহতি ও অখণ্ডতা বজায় রাখতে সহায়তা করে ।

৩. মিতব্যয়িতা: এককেন্দ্রিক সরকারে প্রশাসনিক ব্যয় কম । কারণ এতে কেবল কেন্দ্রে সরকার গঠন করা হয় । এখানে কেন্দ্রীয় সরকার সকল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে এবং তা ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন হয়। স্তরে স্তরে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার প্রয়োজন হয় না বলে এতে খরচ কমে।

৪. দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ: কোনো আঞ্চলিক সরকারের সাথে পরামর্শ বা আঞ্চলিক স্বার্থ বিবেচনার দরকার হয় না বলে এককেন্দ্রিক সরকারের পক্ষে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যায় । সিদ্ধান্ত গ্রহণে কোনো জটিলতা তৈরি হয় না ।


৫. ছোট রাষ্ট্রের উপযোগী: এককেন্দ্রিক সরকার ভৌগোলিক দিক দিয়ে অপেক্ষাকৃত ছোট ও অভিন্ন কৃষ্টিসম্পন্ন রাষ্ট্রের জন্য বেশি উপযোগী । যেমন- বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা ।

 

এককেন্দ্রিক সরকারের ত্রুটিঃ
এককেন্দ্রিক সরকারে সুবিধা যেমন রয়েছে, তেমনি কতগুলো ত্রুটিও রয়েছে। যেমন-
১. কাজের চাপ: এককেন্দ্রিক সরকারে কেন্দ্রের হাতে সকল ক্ষমতা ন্যস্ত থাকায় কেন্দ্রীয় সরকারের উপর কাজের বেশি চাপ থাকে। সরকারের সব কাজ কেন্দ্রীয় সরকারকে করতে হয় বলে প্রশাসকগণ রুটিন কাজের চাপে জনহিতকর কাজের প্রতি প্রয়োজনীয় সময় দিতে পারে না ।

২. স্থানীয় নেতৃত্ব বিকাশের অনুকূল নয়: এ ব্যবস্থায় কেন্দ্রীয়ভাবে ক্ষমতার চর্চা ও সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় । প্রাদেশিক বা আঞ্চলিক পর্যায়ে জনগণের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের সুযোগ থাকে না। ফলে স্থানীয় নেতৃত্ব গড়ে উঠার সুযাগ থাকে না ।

৩. স্থানীয় উন্নয়ন ও সমস্যার প্রতি অবহেলা: এককেন্দ্রিক সরকারে সারা দেশের জন্য অভিন্ন পরিকল্পনা ও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় । কিন্তু বিভিন্ন এলাকায় ভিন্ন ভিন্ন সমস্যা থাকতে পারে, যার প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে নজর দেওয়া সম্ভব হয় না। আবার অঞ্চলগুলো দূরে থাকার কারণে কেন্দ্রীয় সরকার স্থানীয় সমস্যাগুলো ঠিকভাবে বুঝতে ও সমাধান করতে পারে না ।


৪. বড় রাষ্ট্রের জন্য অনুপযোগী: বড় রাষ্ট্রের জন্য এককেন্দ্রিক সরকার সুবিধাজনক নয়। বড় রাষ্ট্রে এক অঞ্চলের সঙ্গে আরেক অঞ্চলের ভাষা, সংস্কৃতি, কৃষ্টি ইত্যাদি ক্ষেত্রে কম-বেশি পার্থক্য পরিলক্ষিত হয় । এই পার্থক্যগুলো একত্রিত করে সবকিছু কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে একা সামাল দেওয়া সম্ভব নয় । ফলে রাষ্ট্র পরিচালনায় সরকারকে নানামুখী সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। সরকারের প্রতি সন্দেহ ও অবিশ্বাস বাড়ে। এ কারণে অঞ্চলগুলোর বিচ্ছিন্ন হওয়ার প্রবণতা দেখা দিতে পারে ।


৫. কেন্দ্রের স্বেচ্ছাচারিতা : এককেন্দ্রিক সরকার ব্যবস্থায় কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে সমস্ত ক্ষমতা কেন্দ্ৰীভূত হওয়ার ফলে কেন্দ্রের স্বেচ্ছাচারিতার সম্ভাবনা থাকে ।

যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার

যুক্তরাষ্ট্র বলতে সেই ধরনের সরকারকে বোঝায়, যেখানে একাধিক অঞ্চল বা প্রদেশ মিলে একটি সরকার গঠন করে । এ ধরনের সরকার ক্ষমতা বণ্টনের নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত। এতে সাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রের কর্তৃত্ব ও ক্ষমতার কিছু অংশ প্রদেশ বা আঞ্চলিক সরকারের এবং জাতীয় বিষয়গুলো কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে থাকে। ফলে প্রাদেশিক ও কেন্দ্রীয় উভয় সরকারই মৌলিক ক্ষমতার অধিকারী হয় এবং স্ব স্ব ক্ষেত্রে স্বাধীন ও স্বতন্ত্র থেকে দেশ পরিচালনা করে । অর্থাৎ এতে দ্বৈত সরকারব্যবস্থা থাকে। ভারত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা প্রভৃতি দেশে যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার পদ্ধতি রয়েছে ।
জোড়ায় কাজ : যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের বৈশিষ্ট্যের তালিকা তৈরি কর ।


যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের গুণঃ
যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের বেশ কিছু গুণ আছে । যথা :
১. জাতীয় ঐক্য ও আঞ্চলিক স্বাতন্ত্র্যের সমন্বয় ঘটায় : এ ধরনের সরকার আঞ্চলিক স্বাতন্ত্র্য ও ভিন্নতা বজায় রেখে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলে। এতে আঞ্চলিক বৈশিষ্ট্য ও ভিন্নতাকে স্বীকৃতি দিয়ে সেগুলোকে লালন করা হয় । ফলে এ ব্যবস্থায় বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য গড়ে উঠে ।

২. কেন্দ্রীয় সরকারের কাজের চাপ কমায়: এ সরকার ব্যবস্থায় সংবিধানের মাধ্যমে কেন্দ্র ও প্রদেশের মধ্যে ক্ষমতা ভাগ করে দেওয়া হয় । ফলে কেন্দ্রের কাজের চাপ কমে যায় এবং কেন্দ্রের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন সহজ হয় ।

৩. আঞ্চলিক সমস্যা সমাধানের উপযোগী: যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় আঞ্চলিক সরকার সহজেই অঞ্চলের সমস্যাগুলো বুঝতে এবং তা চিহ্নিত করে সমাধান করতে পারে।

৪. রাজনৈতিক চেতনা বৃদ্ধি ও স্থানীয় নেতৃত্বের বিকাশে সহায়ক: যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় জনগণ দুটি সরকারের প্রতি আনুগত্য দেখায় এবং দুই প্রকার আইন ও আদেশ মেনে চলে। ফলে জনগণ রাজনৈতিকভাবে অধিকতর সচেতন হয়ে উঠে। এ ধরনের ব্যবস্থা স্থানীয় নেতৃত্ব বিকাশে খুবই সহায়ক।

৫. কেন্দ্রের স্বেচ্ছাচারিতা লোপ পায়: কেন্দ্র ও প্রদেশের মধ্যে ক্ষমতা বণ্টনের ফলে কেন্দ্র নিরঙ্কুশ ক্ষমতার অধিকারী হতে পারে না । ফলে কেন্দ্রের স্বেচ্ছাচারী হওয়ার আশঙ্কা থাকে না ।


যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের ত্রুটিঃ
যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারে নিম্নোক্ত ত্রুটি দেখা দিতে পারে :

১. জটিল প্রকৃতির শাসন: যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের গঠনপ্রণালি জটিল প্রকৃতির । এ যেন সরকারের ভিতর সরকার । ফলে কেন্দ্র ও প্রদেশের মধ্যে সম্পর্ক নির্ধারণ, ক্ষমতা বণ্টন, আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ প্রভৃতি বিষয়ে জটিলতা দেখা দেয় ।


২. ক্ষমতার দ্বন্দ্ব: এতে ক্ষমতার এখতিয়ার নিয়ে কেন্দ্র, প্রদেশ এমনকি বিভিন্ন প্রদেশের মধ্যে দ্বন্দ্ব- সংঘাত সৃষ্টি হতে দেখা যায় ।

৩. দুর্বল সরকার: ক্ষমতা বণ্টনের ফলে জাতীয় ও আঞ্চলিক সরকার উভয়েই দুর্বল অবস্থায় থাকে । জরুরি অবস্থায় অনেক সময় দ্রুত ও বলিষ্ঠ সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না । আঞ্চলিক সরকারের মতামতের প্রয়োজন হলে সিদ্ধান্ত গ্রহণে দেরি হয় ।

৪. বিচ্ছিন্ন হওয়ার আশঙ্কা: যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের প্রদেশগুলো স্বতন্ত্র ও স্বায়ত্তশাসিত । এ কারণে সুযোগ বুঝে প্রয়োজনে কোনো অঞ্চল বা প্রদেশ বিচ্ছিন্ন হওয়ার চেষ্টা করতে পারে ।


৫. ব্যয়বহুল: এতে দ্বৈত সরকার কাঠামো থাকায় প্রশাসনের ব্যয় বৃদ্ধি পায় ।

আইন ও শাসন বিভাগের সম্পর্কের ভিত্তিতে সরকারের শ্রেণিবিভাগ

আইন ও শাসন বিভাগ সরকারের দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ। এ দুটি বিভাগের মধ্যে সম্পর্ক বা জবাবদিহিতা নীতির ভিত্তিতে সরকারের দুটি রূপ রয়েছে । যথা- সংসদীয় সরকার ও রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ।

সংসদীয় সরকার

যে সরকার ব্যবস্থায় শাসন বিভাগ ও আইন বিভাগের মধ্যে সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ এবং শাসন বিভাগের স্থায়িত্ব ও কার্যকারিতা আইন বিভাগের উপর নির্ভরশীল তাকে মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকার বা সংসদীয় পদ্ধতির সরকার বলে। এতে মন্ত্রিসভার হাতে দেশের শাসন ক্ষমতা থাকে। সাধারণ নির্বাচনে সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে বিজয়ী দল মন্ত্রিসভা গঠন করেন । দলের আস্থাভাজন ব্যক্তি হন প্রধানমন্ত্রী । তিনি দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্যদের মধ্য থেকে অন্যান্য মন্ত্রী নিয়োগ করেন ও তাঁদের মধ্যে দপ্তর বণ্টন করেন । মন্ত্রীগণ সাধারণত আইন পরিষদ বা সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকে মনোনীত হন। তাই এ সরকারকে বলা হয় সংসদীয় বা পার্লামেন্টারি পদ্ধতির সরকার। বাংলাদেশ, ভারত, যুক্তরাজ্য, কানাডা, সুইডেন, অস্ট্রেলিয়া প্রভৃতি দেশে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার রয়েছে । এ ধরনের সরকারে একজন নিয়মতান্ত্রিক রাষ্ট্রপ্রধান থাকেন। তবে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে মন্ত্রিসভা হয় প্রকৃত শাসন ক্ষমতার অধিকারী । এ ব্যবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ ছাড়া কার্যত কিছু করেন না । সংসদীয় সরকারে আইনসভা সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী। প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রিসভা তাদের কাজের জন্য আইন পরিষদের নিকট দায়ী থাকে । আইনসভার আস্থা হারালে মন্ত্রিসভার পতন ঘটে । এছাড়া মন্ত্রিসভার কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে সংসদ অনাস্থা আনলে তাকে পদত্যাগ করতে হয়। এ ব্যবস্থায় সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকে মন্ত্রী নিযুক্ত করায় একই ব্যক্তির হাতে আইন ও শাসন ক্ষমতা থাকে ।

 

সংসদীয় সরকারের গুণ:

সংসদীয় বা মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকারের যেসব গুণ রয়েছে তা নিম্নরূপ-

১ . দায়িত্বশীল শাসনব্যবস্থা:  সংসদীয় সরকার দায়িত্বশীল সরকার । এতে ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দল উভয়ই তাদের কাজের জন্য জনগণের নিকট দায়ী থাকে ।

 

২. আইন ও শাসন বিভাগের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক: শাসন বিভাগের সদস্যগণ আইনসভার সদস্য হওয়ায় এ সরকারে আইন ও শাসন বিভাগের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকে।


৩. বিরোধী দলের মর্যাদা: এ সরকার ব্যবস্থায় বিরোধী দলকে বিকল্প সরকার মনে করা হয়। ফলে জাতীয় সংকটে ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দল একসাথে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতে পারে । বিরোধী দল হচ্ছে সংসদীয় ব্যবস্থার অবিচ্ছেদ্য অংশ ।

 

8. সমালোচনার সুযোগ: এ সরকারে সংসদ সদস্যগণ বিশেষ করে বিরোধী দলের সদস্যগণ সংসদে বসে সরকারের কাজের সমালোচনা করার সুযোগ পায়। ফলে সরকার তার কাজে সংযত হয় ও ভালো কাজ করার চেষ্টা করে ।
 

৫. রাজনৈতিক শিক্ষা দেয়: সংসদীয় সরকার জনমতের দ্বারা পরিচালিত হয় । জনমতকে অনুকূলে রাখার জন্য তাই সরকারি ও বিরোধী দল সবসময় তৎপর থাকে । সংসদে বিতর্ক হয় । এতে জনগণ রাজনৈতিকভাবে সচেতন হয়।

 

সংসদীয় সরকারের ত্রুটিঃ
সংসদীয় পদ্ধতির সরকারের কিছু ত্রুটি রয়েছে । যথা-
 

১. স্থিতিশীলতার অভাব: সংসদীয় সরকার অস্থিতিশীল হতে পারে। মন্ত্রিসভা আইনসভার আস্থা হারালে অথবা সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতার হেরফের হলে সরকারের পতন ঘটে । এ ধরনের পরিস্থিতি দেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে ।


২. ক্ষমতার অবিভাজন: এ ধরনের সরকারে প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রিসভার প্রায় সকল সদস্য আইন সভারও সদস্য। ফলে শাসনকার্য পরিচালনার সাথে আইন প্রণয়নেও সরকার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শাসন ও আইন প্রণয়ন ক্ষমতা একই স্থানে তথা মন্ত্রিপরিষদের হাতে থাকে বলে মন্ত্রীগণ স্বৈরাচারী হয়ে উঠতে পারে । এ জন্য সংসদীয় সরকারকে সংখ্যাগরিষ্ঠের স্বৈরাচার বলে আখ্যায়িত করা যায় ।


৩. অতি দলীয় মনোভাব: সংসদীয় সরকার মূলত দলীয় সরকার। এতে দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতার উপর সরকারের গঠন ও স্থায়িত্ব নির্ভর করে । ফলে দলকে অত্যধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়। ক্ষমতাসীন ও বিরোধী উভয় দলই চরম দলীয় মনোভাব নিয়ে কাজ করে। এছাড়া দলীয় সরকার হওয়ায় দলের সদস্যদের সন্তুষ্ট করার জন্য মেধা ও যোগ্যতা বিবেচনা না করে অনেককে মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করা হয় । ফলে জাতীয় স্বার্থ ব্যাহত হয় ।


৪. সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিলম্ব: এখানে যেকোনো বিষয়ে বহু আলোচনা ও পরামর্শের পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় । ফলে সিদ্ধান্ত গ্রহণে দেরি হয় । অনেক কাজই সময়মত করা সম্ভব হয় না ।

রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার

রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার:

রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার বলতে সেই সরকারকে বোঝায় যেখানে শাসন বিভাগ তার কাজের জন্য আইন বিভাগের নিকট দায়ী থাকে না । রাষ্ট্রপতি তার পছন্দের ব্যক্তিদের নিয়ে মন্ত্রিসভা গঠন করেন । রাষ্ট্রপতি ও মন্ত্রিসভার সদস্যগণ আইনসভার সদস্য নন। মন্ত্রীগণ তাদের কাজের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে দায়ী থাকেন । রাষ্ট্রপতির সন্তুষ্টির উপর মন্ত্রীদের কার্যকাল নির্ভর করে। রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারে রাষ্ট্রপতি সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী । তিনিই প্রকৃত শাসক ও সরকারপ্রধান। তিনি কোনো কাজে মন্ত্রীদের পরামর্শ গ্রহণ করতেও পারেন আবার নাও করতে পারেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার প্রচলিত রয়েছে।

 

রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারের গুণ:

রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারের গুণাবলি নিম্নরূপ :

১. স্থিতিশীল শাসন: রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারে রাষ্ট্রপতি একটি নির্ধারিত মেয়াদের জন্য নির্বাচিত হন। এ সময় একমাত্র অভিশংসন (কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগের প্রেক্ষিতে আইন সভার দুই তৃতীয়াংশ সদস্যের অনুমোদন সাপেক্ষে অপসারণ করা) ছাড়া তাকে অপসারণ করা যায় না । ফলে শাসন ব্যবস্থা স্থিতিশীল থাকে ।

২. দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ: এ ব্যবস্থায় আইন বিভাগের সাথে পরামর্শ না করে রাষ্ট্রপতি দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারেন । ফলে যুদ্ধ, জরুরি অবস্থা ও অন্য কোনো সংকটকালে সিদ্ধান্ত গ্রহণে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার পারদর্শিতার পরিচয় দেয়।

 

৩. দক্ষ শাসনব্যবস্থা: এতে রাষ্ট্রপতি ও মন্ত্রীগণকে আইন প্রণয়ন নিয়ে বেশি মাথা ঘামাতে হয় না এবং তারা আইন পরিষদের কাছে দায়ী নন। ফলে তারা প্রশাসনিক বিষয়ে বেশি সময় দিতে পারেন, যা প্রশাসনকে দক্ষ করে তোলে ।

 

৪. ক্ষমতার স্বাতন্ত্রীকরণ: এই শাসন ব্যবস্থায় সরকারের তিনটি বিভাগ (শাসন, আইন ও বিচার বিভাগ) পৃথকভাবে কাজ করে, আবার অন্যদিকে একটি অন্যটির সাথে সম্পর্ক বজায় রাখে । ফলে এতে ক্ষমতার পৃথকীকরণ ও ভারসাম্য বজায় থাকে ।

 

৫. দলীয় মনোভাবের কম প্রতিফলন : আইন সভায় বিল পাসের ক্ষেত্রে সংসদ সদস্যদের মধ্যে ভোটাভুটি সরকারের স্থায়িত্বের উপর প্রভাব ফেলে না । ফলে এ ব্যবস্থায় দলীয় মনোভাব কম প্রদর্শিত হয় । রাষ্ট্রপতি দলের চেয়ে জাতীয় স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করাকে অধিকতর গুরুত্ব দেন ।

 

রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারের ত্রুটি:

রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারের ত্রুটি নিম্নরূপ :

১. স্বেচ্ছাচারী শাসন : রাষ্ট্রপতির হাতে সর্বময় কর্তৃত্ব থাকায় এবং শাসন বিভাগ তার কাজের জন্য আইন বিভাগের নিকট দায়ী না থাকায় রাষ্ট্রপতি স্বেচ্ছাচারী শাসকে পরিণত হতে পারেন। যেহেতু তিনি কারও সাথে পরামর্শ করতে বাধ্য নন, সেহেতু খামখেয়ালী ও দায়িত্বহীন শাসনের আশঙ্কা এতে বেশি থাকে ।

২. বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে সুসম্পর্কের অভাব: শাসন, আইন ও বিচার বিভাগের গঠন ও ক্ষমতা আলাদা হওয়ায় পরস্পরের মধ্যে সহযোগিতার অভাব ও বৈরিতা দেখা দেয়। এ ধরনের পরিস্থিতি সরকারকে নাজুক অবস্থায় ফেলতে পারে ।

৩. অনমনীয় শাসন: রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারে সহজে সংবিধান সংশোধন করা যায় না। ফলে শাসনব্যবস্থা অনমনীয় প্রকৃতির হয়। কোথাও কোনো পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলে তা সহজে করা যায় না । আবার রাষ্ট্রপতিকে সহজে পদচ্যুত করা যায় না। ফলে সহজে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন ঘটানো যায় না ।

অতএব, আমরা রাষ্ট্র ও সরকার ব্যবস্থার বিভিন্ন ধরন ও এদের দোষ ও গুণ সম্পর্কে জানলাম । পৃথিবীর কোনো রাষ্ট্রের সরকার ব্যবস্থা কেবল একটি পদ্ধতিকে ধারণ করে না। বরং একাধিক পদ্ধতির সংমিশ্রণে বিভিন্ন রাষ্ট্র ও সরকার ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে । যেমন- আমেরিকা একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র । এখানে রয়েছে রাষ্ট্রপতি শাসিত ও যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার ব্যবস্থা। যুক্তরাজ্যে রয়েছে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার এবং নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্র । রাষ্ট্রের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা, জনগণের প্রত্যাশা, বাস্তব পরিস্থিতি ইত্যাদি বিভিন্ন কারণেই এই বিভিন্নতা গড়ে উঠে

Promotion