স্কুলে বা স্কুলের বাইরে তোমাদের তো অনেক বন্ধুবান্ধব। সবাই যে মানুষ, এমনও নয়। অনেকে বিড়াল বা কুকুর পোষে, তারাও আমাদের চারপেয়ে বন্ধু। কেমন হয় যদি কোনো একটা গাছের সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্ব হয়? অনেকে হয়তো ভ্রু কুঁচকে ভাবছ, গাছ তো কথাই বলতে পারে না, তার কোনো আবেগ অনুভূতিও নেই, সে আবার বন্ধু হবে কী করে? সত্যিই কি গাছের অনুভূতি নেই? চলো, একটু খুঁটিয়ে দেখি!
প্রথম সেশন
বাঙালি বিজ্ঞানীদের নাম বলতে গেলে প্রথমেই যার নাম চলে আসে তাকে তোমরা সবাই চেন- স্যার জগদীশচন্দ্র বসু। গাছের যে প্রাণ আছে, গাছ যে আমাদের মতোই জীবন্ত সত্তা, তা বহু আগ থেকেই অনেকে বিভিন্ন সময়ে ধারণা করেছেন। কিন্তু জগদীশচন্দ্র বসুই প্রথম একেবারে প্রমাণ করে দেখিয়েছিলেন যে, গাছের সংবেদনশীলতা আছে; বিভিন্ন উদ্দীপনায় সে সাড়া দেয়।
এখন তোমরা ভেবে থাকতে পারো, যে এই সাড়া দেয়ার মানে কী? গাছ ঠিক কতটা 'জীবন্ত'? তারা কি সত্যিই আমাদের বন্ধু হতে পারে?
এই অভিজ্ঞতায় গাছ নিয়ে তোমরা অনেক গভীরভাবে জানার সুযোগ পাবে। তবে তার আগে একটা লেখা পড়ে নাও। লেখক আর কেউ নয়, স্বয়ং জগদীশচন্দ্র বসু। পৃথিবীর অনেক বড়ো বড়ো বিজ্ঞানীর মতো তিনিও শুধু যে আজীবন গবেষণা করেছেন তাই না, বড়োদের জন্য তো বটেই এমনকি ছোটোদের জন্যেও অনেক সাহিত্য সৃষ্টি করে গিয়েছেন।
এবার একটু সময় নিয়ে নিচের লেখাটা পড়ে নাও।
গাছের কথা
জগদীশ্চন্দ্র বসু
গাছেরা কি কিছু বলে? অনেকে বলিবেন, এ আবার কেমন প্রশ্ন? গাছ কি কোন দিন কথা কহিয়া থাকে? মানুষেই কি সব কথা ফুটিয়া বলে? আর যাহা ফুটিয়া বলে না, তাহা কি কথা নয়? আমাদের একটি খোকা আছে, সে সব কথা ফুটিয়া বলিতে পারে না; আবার ফুটিয়া যে দু চারিটি কথা বলে, তাহাও এমন আধ- আধ ও ভাঙ্গা-ভাঙ্গা যে, অপরের সাধ্য নাই তাহার অর্থ বুঝিতে পারে। কিন্তু আমরা আমাদের থোকার সকল কথার অর্থ বুঝিতে পারি। কেবল তাহা নয়। আমাদের থোকা অনেক কথা ফুটিয়া বলে না; চক্ষু, মুখ ও হাত নাড়া, মাথা নাড়া প্রভৃতির দ্বারা আকার ইঙ্গিতে অনেক কথা বলে, আমরা তাহাও বুঝিতে পারি, অন্যে বুঝিতে পারে না। একদিন পার্শ্বের বাড়ী হইতে একটি পায়রা উড়িয়া আসিয়া আমাদের বাড়ীতে বসিল; বসিয়া গলা ফুলাইয়া উচ্চৈঃস্বরে ডাকিতে লাগিল। পায়রার সঙ্গে খোকার নূতন পরিচয়; খোকা তাহার অনুকরণে ডাকিতে আরম্ভ করিল। পায়রা কি-রকমভাবে ডাকে? বলিলেই ডাকিয়া দেখায়; তদ্ভিন্ন সুখে দুঃখে, চলিতে বসিতে, আপনার মনেও ডাকে। নূতন বিদ্যাটা শিখিয়া তাহার আনন্দের সীমা নাই।
একদিন বাড়ি আসিয়া দেখি, খোকার বড় জ্বর হইয়াছে; মাথার বেদনায় চক্ষু মুদিয়া বিছানায় পড়িয়া আছে। যে দুরন্ত শিশু সমস্ত দিন বাড়ি অস্থির করিয়া তুলিত, সে আজ একবার চক্ষু খুলিয়াও চাহিতেছে না। আমি তাহার বিছানার পাশে বসিয়া মাথায় হাত বুলাইতে লাগিলাম। আমার হাতের স্পর্শে খোকা আমাকে চিনিল এবং অতি কষ্টে চক্ষু খুলিয়া আমার দিকে খানিকক্ষণ চাহিয়া রহিল। তারপর পায়রার ডাক ডাকিল। ঐ ডাকের ভিতর আমি অনেক কথা শুনিলাম। আমি বুঝিতে পারিলাম, থোকা বলিতেছে, "খোকাকে দেখিতে আসিয়াছ? খোকা তোমাকে বড় ভালোবাসে।" আরও অনেক কথা বুঝিলাম, যাহা আমিও কোন কথার দ্বারা বুঝাইতে পারি না।
যদি বল, পায়রার ডাকের ভিতর এত কথা কি করিয়া শুনিলে? তাহার উত্তর এই- খোকাকে ভালবাসি বলিয়া। তোমরা দেখিয়াছ, ছেলের মুখ দেখিয়া মা বুঝিতে পারেন, ছেলে কি চায়। অনেক সময় কথারও আবশ্যক হয় না। ভালবাসিয়া দেখিলেই অনেক গুণ দেখিতে পাওয়া যায়, অনেক কথা শুনিতে পাওয়া যায়।
আগে যখন একা মাঠে কিংবা পাহাড়ে বেড়াইতে যাইতাম তখন সব খালি-খালি লাগিত। তার পর গাছ, পাখী, কীট পতঙ্গদিগকে ভালবাসিতে শিখিয়াছি। সে অবধি তাদের অনেক কথা বুঝিতে পারি, আগে যাহা পারিতাম না। এই যে গাছগুলি কোন কথা বলে না, ইহাদের যে আবার একটা জীবন আছে, আমাদের মতো আহার করে, দিন দিন বাড়ে, আগে এ সব কিছুই জানিতাম না: এখন বুঝিতে পারিতেছি। এখন ইহাদের মধ্যেও আমাদের মতো অভাব, দুঃখ-কষ্ট দেখিতে পাই। জীবনধারণ করিবার জন্য ইহাদিগকেও সর্ব্বদা ব্যস্ত থাকিতে হয়। কষ্টে পড়িয়া ইহাদের মধ্যেও কেহ কেহ চুরি ডাকাতি করে। মানুষের মধ্যে যেরূপ সদগুণ আছে, ইহাদের মধ্যেও তাহার কিছু কিছু দেখা যায়। বৃক্ষদের মধ্যে একে অন্যকে সাহায্য করিতে দেখা যায়, ইহাদের মধ্যে একে অপরের সহিত বন্ধুতা হয়। তারপর মানুষের সর্ব্বোচ্চ গুণ স্বার্থত্যাগ-গাছে তাহাও দেখা যায়। মা নিজের জীবন দিয়া সন্তানের জীবন রক্ষা করেন। সন্তানের জন্য নিজের জীবন-দান উদ্ভিদেও সচরাচর দেখা যায়। গাছের জীবন মানুষের জীবনের ছায়া মাত্র। ক্রমে এ সব কথা তোমাদিগকে বলিব।
তোমরা শুষ্ক গাছের ডাল সকলেই দেখিয়াছ। মনে করো, কোন গাছের তলাতে বসিয়াছ। ঘন সবুজ পাতায় গাছটি ঢাকা, ছায়াতে তুমি বসিয়াছ। গাছের নীচে এক পার্শ্বে একখানি শুষ্ক ডাল পড়িয়া আছে। এক সময় এই ডালে কত পাতা ছিল, এখন সব শুকাইয়া গিয়াছে, আর ডালের গোড়ায় উই ধরিয়াছে। আর কিছুকাল পরে ইহার চিহ্নও থাকিবে না। আচ্ছা, বল তো-এই গাছ আর এই মরা ডালে কি প্রভেদ? গাছটি বাড়িতেছে; আর মরা ডালটা ক্ষয় হইয়া যাইতেছে; একে জীবন আছে, আর অন্যটিতে জীবন নাই। যাহা জীবিত, তাহা ক্রমশঃ বাড়িতে থাকে। জীবিতের আর একটি লক্ষণ এই যে, তাহার গতি আছে, অর্থাৎ তাহারা নড়ে চড়ে। গাছের গতি হঠাৎ দেখা যায় না। লতা কেমন করিয়া ঘুরিয়া ঘুরিয়া গাছকে জড়াইয়া ধরে, দেখিয়াছ?
জীবিত বস্তুতে গতি দেখা যায়; জীবিত বস্তু বাড়িয়া থাকে। কেবল ডিমে জীবনের কোন চিহ্ন দেখা যায় না। ডিমে জীবন ঘুমাইয়া থাকে। উত্তাপ পাইলে ডিম হইতে পাখির ছানা জন্মলাভ করে। বীজগুলি যেন গাছের ডিম; বীজের মধ্যেও এরূপ গাছের শিশু ঘুমাইয়া থাকে। মাটির উত্তাপ ও জল পাইলে বীজ হইতে বৃক্ষশিশুর জন্ম হয়।
এবার একটু ভেবে দেখো, তোমাদের চারপাশে কত ধরনের গাছ, তাদের কথা কি তুমি শুনতে পাও? জগদীশচন্দ্র বসু লিখেছেন, গাছ আমাদের মতোই-ভালবেসে তাদেরকেও কাছে টানা যায়, তাদের কথা শুনতে না পেলেও মনের ভাব বুঝতে পারা যায়।
সমস্যাটা হচ্ছে, বিজ্ঞানের চোখ দিয়ে দেখলে তথ্য প্রমাণ ছাড়া কোনো কিছু মেনে নেয়ার উপায় নেই। জগদীশচন্দ্র বসু তাই নতুন যন্ত্র আবিষ্কার করেছিলেন গাছ কীভাবে উদ্দীপনায় সাড়া দেয় তা রেকর্ড করার জন্য। কিন্তু গাছ আদৌ কথা বলে কি না' বা অর্থবহ শব্দ উৎপন্ন করে কি না তা উনি ওই সময়ের প্রযুক্তি দিয়ে প্রমাণ করে যেতে পারেননি।
এখন একটা চমকপ্রদ খবর তোমাদের জানাই। বিশ্বের একেবারে প্রথম সারির বৈজ্ঞানিক জার্নাল 'সেল' এ খুব সম্প্রতি প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে গাছ সত্যি সত্যিই শব্দ উৎপন্ন করে। শুধু তাই নয়, সেই শব্দ রেকর্ড করে বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গাছ যখন সুস্থ থাকে, ভালো থাকে-মানে 'হাসিখুশি' অবস্থায় গাছ যে ধরনের শব্দ তৈরি করে তার চেয়ে কষ্টে থাকা, ক্ষুধার্থ বা তৃষ্ণার্ত গাছের শব্দ একেবারে আলাদা। পাশের ছবিতে খুব সরল করে বিষয়টা দেখানো হয়েছে খেয়াল করো। গাছকে যখন ঠিকমতো পানি দেয়া হচ্ছে না, তার ডাল কেটে ফেলা হচ্ছে, তখন সে বিভিন্ন রকম শব্দ তৈরি করছে। কিন্তু সুস্থ অবস্থায় একই গাছ যে শব্দ তৈরি করছে, বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে এই শব্দ থেকে সেগুলো একেবারে আলাদা! আরও অবাক করা বিষয় কি জানো? এই সূক্ষ্ম শব্দ আমাদের কান পর্যন্ত না পৌঁছুলেও অনেক ছোটো ছোটো প্রাণী যেমন ইঁদুর এই শব্দগুলো ঠিকই শুনতে পায়!
আমাদের চারপাশে যে শব্দের সমুদ্র, দুঃখের বিষয় হলো তার অনেক শব্দই আমরা কখনও শুনতে পাই না!
এই শিখন অভিজ্ঞতায় আমরা গাছকে আরেকটু আপনভাবে দেখার চেষ্টা করে দেখি চলো।
এই ক্লাসের সকল শিক্ষার্থী, এবং তোমাদের শিক্ষক সবাই এই শিখন অভিজ্ঞতায় একটি গাছের সঙ্গে বন্ধুত্ব করবে। সেই গাছটি কী গাছ হতে পারে তোমরাই ঠিক করে নাও। প্রত্যেকেই একটি গাছের চারা রোপণ করে তাকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করবে, তাকে ভালোভাবে বুঝতে, অনুভব করতে চেষ্টা করবে। কারো বাড়ির সামনে ফাঁকা জায়গায় গাছটি রোপণ করতে পারো, আবার কেউ চাইলে বারান্দার টবেও গাছটাকে বড়ো করতে পারো। তোমাদের শিক্ষকও একটি গাছ রোপণ করবেন, তার পরিচর্যা করবেন, সেই গাছটি স্কুলেই রাখা থাকবে, তোমরাও এই পরিচর্যায় শিক্ষককে সাহায্য করতে পারো।
তোমরা কে কোন গাছ রোপণ করতে চাও, সেই গাছের চারা কীভাবে জোগাড় করা যায় তা ছোটো ছোটো দলে ভাগ হয়ে আলোচনা করে নাও। শিক্ষকসহ বাকিদের সঙ্গে নিজেদের চিন্তা বিনিময় করো।
তুমি কোন গাছ রোপণ করবে সিদ্ধান্ত নিয়েছ? নিচে গাছটার নাম লিখে রাখো,
পরের সেশনে আসার আগে যার যার গাছের চারা জোগাড় করা চাই কিন্তু!
দ্বিতীয় সেশন
এই সেশনে আসার আগেই নিশ্চয়ই তোমরা যে যার গাছের চারা জোগাড় করতে পেরেছ? এবার এই গাছগুলো যত্ন করে বড়ো করার পালা। সেজন্য তোমাদের স্কুলে যিনি গাছের পরিচর্যা করেন তার সাহায্য নিতে পারো। কিংবা, তোমাদের স্কুলে এমন কেউ না থাকলে স্থানীয় নার্সারিতে কাজ করেন কিংবা এই কাজের অভিজ্ঞতা আছেন এমন অভিভাবক বা বড়ো ক্লাসের কারো সাহায্য নিতে পারো। সপ্তম শ্রেণিতে তোমাদের গাছের পরিচর্যা নিয়ে কিছুটা অভিজ্ঞতা তো হয়েছেই।
শিক্ষকের গাছটি রোপণ করতে সবাই সাহায্য করো, আর এর মাধ্যমে সবাই গাছ রোপণ করার প্রাথমিক ধারণা নিয়ে নাও। বাড়িতে গিয়ে সবাইকেই তো নিজের গাছটি রোপণ করতে হবে। তোমাদের এই নতুন সবুজ বন্ধুকে ভালো রাখতে কীভাবে পরিচর্যা করতে হবে তা অভিজ্ঞ পরিচর্যাকারীর কাছ থেকে জেনে নাও।
বাড়ির কাজ
আজ বাড়ি ফিরে গাছ রোপণ করতে গিয়ে তোমার কী অভিজ্ঞতা হলো তা নিচের ফাঁকা জায়গায় লিখে রাখো,
তৃতীয় ও চতুর্থ সেশন
তোমাদের সবুজ বন্ধু, প্রিয় গাছ এখন প্রতিদিন একটু একটু করে বেড়ে উঠবে; ঠিক যেভাবে তোমরাও জন্মের পর থেকে একটু একটু করে বেড়ে উঠছ। এক সময় তোমরাও শিশু ছিলে, সেখান থেকে এখন তোমরা কৈশোরে পৌঁছেছ, এক সময় পূর্ণবয়স্ক মানুষে পরিণত হবে। কিন্তু কখনও কি ভেবে দেখেছ, কীভাবে একটা ছোট্ট মানুষ কিংবা ছোট্ট গাছের চারা আস্তে আস্তে বড়ো হয়ে ওঠে? তোমরা সপ্তম শ্রেণিতে দেহের কোষ সম্পর্কে জেনেছ, উদ্ভিদ ও প্রাণিকোষের গঠন, সাদৃস্য-বৈসাদৃশ্য সবই জেনেছ। এখন দেখার পালা, এই কোষগুলো কীভাবে তোমার দেহের বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে।
তোমাদের অনুসন্ধানী পাঠ বই থেকে কোষ বিভাজন ও তার রকমভেদ অধ্যায়টি বের করো। দেহের বৃদ্ধি সম্পর্কে জানার আগে, কোষ সম্পর্কে আরেকটু জেনে নেয়া জরুরি। ছোটো ৫/৬ জনের দলে ভাগ হয়ে যাও। দলে বসে কোষ বিভাজনের গুরুত্ব ও কোষের গঠন সম্পর্কে পড়ে নাও। পড়ার পর শিক্ষকের সহযোগিতায় ক্লাসের বাকিদের সঙ্গে আলোচনা করে বোঝার চেষ্টা করো কোষের অভ্যন্তরে নিউক্লিয়াসের ভেতরে ক্রোমোজোমগুলো কীভাবে বিন্যস্ত থাকে।
এবার কোষ কীভাবে বিভাজিত হয় এবং জীবদেহের বৃদ্ধি ও বংশবৃদ্ধির প্রক্রিয়া চলমান রাখে তা জেনে নেয়া যাক। অ্যামাইটোসিস, মাইটোসিস ও মিয়োসিস এই তিনটি প্রক্রিয়া সম্পর্কে তোমরা একে একে জানবে। প্রথমে অ্যামাইটোসিস প্রক্রিয়া সম্পর্কে জেনে নাও।
তোমার বা তোমার সবুজ বন্ধুর দেহকোষে কি অ্যামাইটোসিস প্রক্রিয়ায় কোষ বিভাজন ঘটে? একটু ভেবে নিয়ে দলে আলোচনা করে দেখো। যুক্তিসহ তোমাদের উত্তর নিচে লিখে রাখো।
এবার মাইটোসিস কোষ বিভাজন সম্পর্কে জানা যাক। মাইটোসিস কোষ বিভাজন মূলত বহুকোষী জীবের দেহের বৃদ্ধি ঘটায়। মাইটোসিস কোষ বিভাজনের পুরো প্রক্রিয়াটি পড়ে নিয়ে দলে আলোচনা করো। মাইটোসিস কোষ বিভাজনের গুরুত্ব সম্পর্কেও জেনে নিও।
এবার ধাপগুলোর মডেল তৈরি করে দেখা যায়, তাতে সবার ধারণা অনেক বেশি স্পষ্ট হবে। সবাইকে পুরো প্রক্রিয়ার সবগুলো ধাপের মডেল বানাতে হবে এমন কিন্তু নয়। বরং প্রত্যেক দল লটারির মাধ্যমে এক একটি ধাপ নির্বাচন করে নাও, যার মডেল তৈরির মাধ্যমে বাকিদের সেই ধাপটি সম্পর্কে বুঝিয়ে বলতে পারবে।
মডেল তৈরিতে কী কী ব্যবহার করবে দলে আলোচনা করো। মনে রেখো, পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর, কিংবা খরচসাপেক্ষ উপকরণ যত কম ব্যবহার করা যায় তত ভালো। বরং পরিত্যক্ত বা আগে ব্যবহৃত জিনিস দিয়ে মডেল বানানো যায় কি না দেখো। দলে আলোচনা করে কী কী উপকরণ ব্যবহার করবে তার একটা তালিকা তৈরি করে ফেলো। পরের সেশনে শ্রেণিকক্ষে বসেই মডেলটা তৈরি করবে।
পঞ্চম সেশন
এই সেশনে মডেল তৈরির পালা। দলে কে কোন অংশে কাজ করবে তা প্রথমেই ঠিক করে নাও। প্রত্যেকে নিজেদের ভূমিকা ঠিকঠাক পালন করলে কাজটা দ্রুত হবে। উপকরণ নিশ্চয়ই আগেই সংগ্রহ করা শেষ? সেগুলো কাজে লাগিয়ে আজকে সবাই মিলে দলের মডেলটা তৈরি করে নাও।
এবার প্রতিটি দল নিজ নিজ দলের বানানো মাইটোসিস কোষ বিভাজনের বিভিন্ন ধাপের মডেল প্রদর্শন করবে। এখন একটা মজার কাজ করা যায়। নিজেদের মডেল তো কতই উপস্থাপন করেছ, অন্য দলের বানানো মডেল তোমরা উপস্থাপন করলে কেমন হয়?
লটারির মাধ্যমে আবার যে কোনো একটি ধাপ বেছে নাও। এই ধাপ নিয়ে যারা কাজ করেছে এমন কোনো গ্রুপের বানানো মডেল উপস্থাপন করো। একইভাবে প্রত্যেক দলই তার নিজের কাজ বাদে অন্য কোনো দলের বানানো মডেল উপস্থাপন করবে, অন্য শিক্ষার্থীরা তাদের কথা শুনবে, প্রশ্ন করবে।
ষষ্ঠ সেশন
গত কিছুদিনে তোমাদের গাছটা কতখানি বেড়ে উঠল? একটা আলাদা ডায়রিতে এক সপ্তাহ অন্তর অন্তর গাছটি কতটুকু বড়ো হচ্ছে তা নোট করে রাখো। আর গাছটির যত্ন নিতে তুমি কী কী ব্যবহার করেছ, তাও লিখে রেখো।
মাইটোসিস কোষ বিভাজনের মাধ্যমে কীভাবে তুমি বা তোমার সবুজ বন্ধু কীভাবে বেড়ে ওঠে তা তো জানলে। শরীরের ক্ষুদ্র কোষের ক্ষুদ্রতর নিউক্লিয়াসের ভেতরে কি নিয়ন্ত্রিত, সুশৃঙ্খলভাবে এই কোষ বিভাজনের প্রক্রিয়া চলতে থাকে ভেবে দেখেছ? আচ্ছা, কখনো যদি এই প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়? সেই বিশৃঙ্খলার মধ্যে কী ঘটবে? অনুসন্ধানী পাঠ বই থেকে জেনে নাও।
দেহের বৃদ্ধি কী করে হয় তা তো জেনেছ। এখন একবার ভেবে দেখো, তোমার এই দেহটি এক সময় কিন্তু ছিল না। মানুষের বা অন্য বহুকোষী জীবের জন্ম, বংশবৃদ্ধির সময়ে আরেক ধরনের কোষ বিভাজন ঘটে, তাকে বলে মিয়োসিস। এবার এই কোষ বিভাজন সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক চলো।
আগের মতোই দলে ভাগ হয়ে মিয়োসিস কোষ বিভাজন সম্পর্কে পড়ে নাও। ক্লাসে সবার সঙ্গে মিয়োসিস কোষ বিভাজনের পুরো প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করো।
মাইটোসিস ও মিয়োসিস কোষ বিভাজনের মধ্যে মূল পার্থক্যটা কী বলতে পারো?
সপ্তম ও অষ্টম সেশন
তোমাদের সবুজ বন্ধু কেমন আছে? এবার তাদের অর্থাৎ উদ্ভিদদের সম্পর্কে আরেকটু খুঁটিয়ে জেনে নেয়া যাক চলো। তোমার নিজের রোপণ করা গাছটিকে নিশ্চয়ই তুমি ভালোভাবেই লক্ষ করেছ? ওর দেহে কী কী অঙ্গ রয়েছে সেগুলো কি বলতে পারো? পরের পৃষ্ঠার ছকে লিখে রাখো,
তোমার উদ্ভিদের নাম
উদ্ভিদটির বিভিন্ন অঙ্গ
উদ্ভিদের কোষ সম্পর্কে তোমরা ইতোমধ্যে জেনেছ। তোমার দেহের কার্যকরী একক যেমন- কোষ, উদ্ভিদেরও তাই। এর আগে তোমরা জেনেছ যে, মানবদেহের গঠন ও কাজ বুঝতে বিজ্ঞানীরা কোন ধাপগুলো অনুসরণ করেন। সেগুলো হলো,
কোষ > টিস্যু বা কলা > অঙ্গ > তন্ত্র
এখন উদ্ভিদের দেহের গঠন ও কাজ বুঝতেও আমাদের কাছাকাছি একটা ধারাবাহিকতায় আলোচনা এগিয়ে নিয়ে যাওয়া দরকার। উদ্ভিদ কোষ সম্পর্কে তোমরা ইতোমধ্যে জানো। মানবদেহের মতোই উদ্ভিদদেহের নির্দিষ্ট কোনো কাজ সমাধা করার জন্য একাধিক কোষ মিলে নির্দিষ্ট রকমের টিস্যু বা কলা তৈরি করে, সেই টিস্যুগুলো আবার সেই সুনির্দিষ্ট কাজগুলো করার জন্য নির্দিষ্ট অঙ্গ গঠন করে। এখন টিস্যু কতরকম হয়, সেগুলো কীভাবে কাজ করে তা বোঝার জন্য অনুসন্ধানী পাঠ বই থেকে উদ্ভিদের বিভিন্ন প্রকার টিস্যুর ধরন সম্পর্কে জেনে নাও।
এর আগে তোমার উদ্ভিদের বিভিন্ন অঙ্গ তো শনাক্ত করেছ, এবার তোমাদের অনুসন্ধানী পাঠ বইয়ে দেয়া উদ্ভিদের অঙ্গগুলোর সঙ্গে তোমার তালিকাটি মিলিয়ে নাও। এমন কোনো অঙ্গের কথা কি আছে যেটি তোমার উদ্ভিদের দেহে দেখা যায় না? থাকলে সেটি নিচে টুকে রাখো।
এবার ভেবে দেখো তোমার শনাক্ত করা অঙ্গসমূহের কথা। উদ্ভিদের বিভিন্ন অঙ্গের কী কী কাজ তা তো ইতোমধ্যেই জানলে, এবার কোন অঙ্গ কোন কোন ধরনের টিস্যু দিয়ে গঠিত অনুমান করার চেষ্টা করো তো?
তোমার উদ্ভিদের নাম
উদ্ভিদটির বিভিন্ন অঙ্গ
কোন কোন ধরনের টিস্যু দিয়ে পঠিত
নবম ও দশম সেশন
তোমাদের গাছগুলো বাড়িতে কেমন বেড়ে উঠছে? আর শ্রেণিকক্ষে রাখা তোমাদের শিক্ষকদের গাছটি? এই যে বেশ তরতাজা গাছটি দেখছ, এই গাছটিকে ভালো রাখতে সর্বক্ষণ তার শরীরে বেশ কিছু প্রক্রিয়া চলমান। সুস্থ ও ভালো থাকতে তোমার শরীরের যেমন- শ্বাসপ্রশ্বাস, খাওয়া-দাওয়া, রেচন ও বর্জ্য নিষ্কাশনসহ নানা শারীরবৃত্তীয় কর্মকাণ্ড চালু রাখতে হয়, গাছেরও তো তাই। গাছের এই প্রক্রিয়াগুলো কেমন? শ্বাসপ্রশ্বাস বা সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে খাদ্য তৈরির কথা তোমরা ইতোমধ্যেই জানো। কিন্তু উদ্ভিদের কোষ এবং টিস্যুসমূহ কীভাবে এদের বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ায় চলো জেনে নেয়া যাক।
অনুসন্ধানী পাঠ বই থেকে উদ্ভিদের শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া যেমন-ব্যাপন ও প্রস্বেদন সম্পর্কে জেনে নাও। উদ্ভিদের পরিবহণ ব্যবস্থা সম্পর্কে পড়ে নিয়ে দলে আলোচনা করো। এই পুরো আলোচনায় কয়েকটি নতুন প্রক্রিয়ার সঙ্গে তোমরা পরিচিত হলে,
ব্যাপন
প্রস্বেদন
অভিস্রবণ
এই প্রক্রিয়াগুলোর কোনটি উদ্ভিদের খাদ্য তৈরি ও গ্রহণ, শ্বাসপ্রশ্বাসে কীভাবে সাহায্য করে বলতে পারো? দলে আলোচনা করে তোমার উত্তর নিচে লিখে রাখো।
একাদশ সেশন
উদ্ভিদ নিয়ে অনেক আলোচনা হলো। তোমার রোপণ করা গাছটি ভালো আছে কি না খেয়াল করছ তো? বেশ খানিকটা নিশ্চয়ই বেড়ে উঠেছে এর মধ্যে?
তোমাদের সহপাঠীরা তো নানা ধরনের গাছ রোপণ করেছ, কিন্তু কোনটা কোন ধরনের গাছ? তুমিসহ তোমার দলের সদস্যদের গাছের নামগুলো নিচে লিখে রাখো।
দলের সদস্যদের নাম
কী গাছ রোপণ করেছে?
এবার ভেবে দেখো, এদের মধ্যে কোন কোন গাছের মিল বেশি? কোন কোন গাছ দেখতে কিছুটা একই রকম? কিংবা কোন কোন গাছের ফুল, ফল বা পাতার ধরনে সাদৃশ্য বেশি? দলে আলাপ করে শনাক্ত করো।
এই যে তোমরা সাদৃশ্য-বৈসাদৃশ্যের উপর ভিত্তি করে উদ্ভিদগুলোর বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করলে, উদ্ভিদবিজ্ঞানীরাও বিভিন্নভাবে গাছদের সাদৃশ্য-বৈসাদৃশ্য নিয়ে আলোচনা করেছেন, বিশ্লেষণ করেছেন। এই গবেষণার উপর ভিত্তি করে গোটা উদ্ভিদজগৎকে তারা বিভিন্নভাবে শ্রেণিবিন্যাস করেছেন।
অনুসন্ধানী পাঠ বই থেকে জীবের শ্রেণিবিন্যাস অধ্যায়ের উদ্ভিদের শ্রেণিবিন্যাস অংশটুকু পড়ে নাও। দলে আলোচনা করো। তোমাদের শিক্ষকের উদ্ভিদটি কোন শ্রেণির মধ্যে পড়ে? ক্লাসের সবাই আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নাও।
এবার তোমাদের কাজ হলো তোমাদের দলের প্রত্যেকের বন্ধু গাছটি কোন শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত তা শনাক্ত করা। বিভিন্ন শ্রেণির বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে মিলিয়ে দেখে সিদ্ধান্ত নাও। দলে আলোচনা করে নিচের ছকে নোট নাও। (উদাহরণ হিসেবে একটি উদ্ভিদের নাম ও তার শ্রেণিবিন্যাস নিচে দেয়া হলো।)
অনেক আলোচনা হলো। তোমাদের সবার সবুজ বন্ধুদের সম্পর্কেও অনেক জানা শোনা হলো। পরের সেশনে সবাই মিলে একটা মেলার আয়োজন করতে পারো, যেখানে তোমরা সবাই তার নিজের উদ্ভিদ সম্পর্কে অন্যদের জানানোর চেষ্টা করবে। নিজের সবুজ বন্ধু সম্পর্কে কীভাবে জানাতে চাও তা তুমি ঠিক করে নাও। তোমার গাছটি কীভাবে বেড়ে উঠছে, কীরকমভাবে তুমি তার যত্ন করছ, এই গাছে ফুল বা ফল ধরেছে কি না, গাছটির সঙ্গে তোমার অভিজ্ঞতা, মজার কোনো গল্প-এ সবকিছু নিয়েই আলাপ করতে পারো; কিংবা অন্য যে কোনো কিছু। টবে লাগানো ছোটো গাছ হলে সঙ্গে করে নিয়েও আসতে পারো, আর সেটা সম্ভব না হলে ছবি এঁকে আনতে পারো। ওইদিন তোমার উপস্থাপনা কেমন হবে তা তুমিই ঠিক করে নাও।
জগদীশচন্দ্র বসু বলেছিলেন, ভালোবাসলে গাছপালার মনের কথাও বুঝতে পারা যায়। তুমি কি এখন তোমার সবুজ বন্ধুটির কথা বুঝতে পারো?
দ্বাদশ সেশন
আজকের মেলায় তোমার যত্নে গড়ে তোলা গাছ, তোমার সবুজ বন্ধুকে নিয়ে সবাইকে জানার সুযোগ করে দাও। অন্যদের গাছ সম্পর্কেও জানার চেষ্টা করো।
এই পুরো শিখন অভিজ্ঞতা শেষে মানুষের সঙ্গে গাছের কী কী মিল খুঁজে পেলে? নিচে লিখে রাখো।