বাংলাদেশে জিডিপি গণনার দায়িত্বে নিয়োজিত সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো পরিসংখ্যান ব্যুরো প্রতি বছর চলতি বাজার মূল্য ও স্থির মূল্যে দ্রব্য ও সেবার মূল্য পরিমাপ করে জিডিপি গণনা করে থাকে । এসব হিসাব করতে প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করে থাকে ।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো উৎপাদন পদ্ধতি ও ব্যয় পদ্ধতি ব্যবহার করে জিডিপি ও জিএনআই গণনা করে । উৎপাদন পদ্ধতিতে মোট দেশজ উৎপাদন (GDP) পরিমাপের জন্য অর্থনীতিকে মোট ১৫টি প্রধান খাতে বিভক্ত করা হয় । খাতসমূহ হচ্ছে—
১. কৃষি ও বনজ সম্পদ : কৃষি দেশজ উৎপাদনের একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত। এ খাত ধরাবাঁধাভাবে হিসাব করা কঠিন । বাংলাদেশে GDP গণনা করতে এ খাতকে তিনটি উপখাতে বিভক্ত করা হয় ।
শস্য ও শাকসবজি : এখাতে দেশজ উৎপাদনের পরিমাণ চলতি পাইকারি বাজারমূল্যের পরিপ্রেক্ষিতে হিসাব করা হয় । যেমন- ২০১৪-১৫ সালে ছিল ১,২৬,১২১ কোটি টাকা এবং ২০১৫-১৬ সালে ১৩৪৩২২ কোটি টাকা ।
(খ) প্রাণিসম্পদ : এ খাতের হিসাবও চলতি বাজার মূল্যের পরিপ্রেক্ষিতে দেশজ উৎপাদনের পরিমাণ হিসাব করা হয় । প্রাণি সম্পদ উপখাতে ২০১৪-১৫ সালে দেশজ উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ২৯,৮৮৫ কোটি টাকা এবং ২০১৫-১৬ সালে ৩৩, ১৬৫ কোটি টাকা ।
(গ) বনজ সম্পদ : বন খাতের উপকরণের তথ্যের অভাবে মোট উৎপাদন হতে ৩% মূল্য বাদ দিয়ে যা থাকে, তাকে মূল্য সংযুক্তি হিসেবে বিবেচনা করে GDP বের করা হয় । ২০১২-১৩ সালে দেশজ উৎপাদন ছিল ১৬,৬০৫ কোটি টাকা এবং ২০১৪-১৫ সালে ২০,৪৯৪ কোটি টাকা । ২০১৫-১৬ সালে ২২,৮২৭ কোটি টাকা ।
২.মৎস্য সম্পদ : অভ্যন্তরীণ ও সামুদ্রিক উৎস থেকে মোট মৎস্য আহরণের প্রেক্ষিতে মোট দেশজ উৎপাদনের হিসাব করা হয়। এখাতে ২০১২-১৩ সালে মোট দেশজ উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৩৬,৯৯৫ কোটি টাকা এবং ২০১৪-১৫ সালে ৪৭,৫৮১ কোটি টাকা। ২০১৫-১৬ সালে ৫৩,০৭৬ কোটি টাকা ৷
৩.খনিজ ও খনন : শিল্প খাতের মধ্যে খনিজ ও খননকে আলাদা খাত হিসাবে চিহ্নিত করা হয় । এ খাতে (ক) প্রাকৃতিক গ্যাস ও অপরিশোধিত তেল এবং (খ) অন্যান্য খনিজ সম্পদ ও খনন বিষয়ের উৎপাদিত পণ্যের বাজারমূল্যের হিসাব করা হয় । এসব খাতের হিসাব দেশজ উৎপাদনের দিক থেকে গণনা করা হয় । ২০১২-১৩ সালে এ খাতে আয় হয় ১৯,৪৬১ কোটি টাকা এবং ২০১৪-১৫ সালে হিসাব করা হয়েছিল ২৩,৮৭৬ কোটি টাকা। ২০১৫-১৬ সালে ২৮,৫৭৮ কোটি টাকা ।
8. শিল্প (ম্যানুফেকচারিং): বাংলাদেশে মোট দেশজ উৎপাদন গণনার ক্ষেত্রে সকল শিল্পের উৎপাদিত পণ্যের বর্তমান বাজারমূল্য হিসাব করে মোট দেশজ উৎপাদন বের করা হয় । বাংলাদেশে শিল্প উৎপাদনের পরিমাণ ২০১৪-১৫ সালে শিল্প উৎপাদন বৃহৎ ও মাঝারি শিল্প উৎপাদন এবং ক্ষুদ্র শিল্প উৎপাদন যথাক্রমে ২,৫৪,৪৮৩ কোটি টাকা; ২,০৫,৯৯২ কোটি টাকা এবং ৪৮,৪৯১ কোটি টাকা । ২০১৫-১৬ সালে শিল্প উৎপাদন বৃহৎ ও মাঝারি শিল্প উৎপাদন এবং ক্ষুদ্র শিল্প উৎপাদন যথাক্রমে ২৯৫১১১ কোটি টাকা, ২৪০১৬৪ কোটি টাকা, ৫৪৯৪৭ কোটি টাকা ।
৫. পাইকারি ও খুচরা বিপণন : এ হিসাবে পণ্যের পাইকারি মূল্য হিসাবের মাধ্যমে মোট দেশজ উৎপাদনের পরিমাণ গণনা করা হয়। ২০১২-১৩ সালে ১,৫৪,৫৭৯ কোটি টাকা এবং ২০১৪-১৫ সালে ১,৯২,৫৮৫ কোটি টাকা হিসাব করা হয় । ২০১৫-১৬ সালে ২,২৪,২৫৭ কোটি টাকা।
৬. বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানিসম্পদ : এ খাতে সেবা সরবরাহ মূল্যের পরিপ্রেক্ষিতে মোট দেশজ উৎপাদন মূল্য হিসাব করা হয় । বাংলাদেশের জন্য এই খাত খুবই গুরুত্বপূর্ণ । সরকারের পাশাপাশি এ খাতসমূহ বেসরকারিভাবেও ছেড়ে দেয়া হয়েছে। ২০১২-১৩ সালে মোট দেশজ উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ১৬৩৮১ কোটি টাকা । এর মধ্যে (ক) বিদ্যুৎ উপখাতে ১২১৬৮ কোটি টাকা । (খ) গ্যাস উপখাতে ৩৪৪৮ কোটি টাকা এবং (গ) পানি উপখাতে ৭৬৬ কোটি টাকা আয় হয় । ২০১৪-১৫ সালে এ তিনটি খাতের সমষ্টি ১৯,৮৬৮ কোটি টাকা। ২০১৫-১৬ সালে ২৩,৮২৯ কোটি টাকা ৷
৭. নির্মাণ : নির্মাণ খাত থেকে মোট দেশজ উৎপাদনের পরিমাণ হিসাব করা হয় ব্যক্তি, নির্মাণ প্রতিষ্ঠান, ভোক্তা এবং সরকারের প্রাপ্ত তথ্য থেকে । বাস্তবে এ খাত থেকে যে পরিমাণ আয় হিসাব হওয়ার কথা তার তুলনায় কম হয় । কারণ চলতি বাজারমূল্য সরকার প্রদত্ত বেঁধে দেয়া মূল্য থেকে বেশি ।অথচ সরকারি বেঁধে দেয়া মূল্যের পরিপ্রেক্ষিতে মোট দেশজ উৎপাদনের পরিমাণ হিসাব করা হয় । ২০১২-১৩ সালে এ খাত থেকে আয় হয় ৮২৪৩২ কোটি টাকা এবং ২০১৪-১৫ সালে ১০৮৪৮৪ কোটি টাকা । ২০১৫-১৬ সালে ১,২৬,৩৫৩ কোটি টাকা ।
৭.হোটেল ও রেস্তোরাঁ : এই খাতের মোট দেশজ উৎপাদনের বিষয়টি উৎপন্ন দ্রব্যের ও সেবার বিক্রয় মূল্যের প্রেক্ষিতে হিসাব করা হয়। ২০১২-১৩ সালে এ খাত থেকে আয় হয় ১১২৬৩ কোটি টাকা এবং ২০১৪-১৫ সময়ে ১৪,৯২৮ কোটি টাকা। ২০১৫-১৬ সালে ১৭,০৫৮ কোটি টাকা ৷
৯. পরিবহণ, সংরক্ষণ ও যোগাযোগ : এ খাত দেশজ আয় গণনার একটি বড় খাত। এ খাতটির বড় অংশ বেসরকারি হাতে ন্যাস্ত আছে। তারপরও ২০১২-১৩ সালে স্থুল আয় হয়েছিল মোট ১,২৪,২৮১ কোটি টাকা যার মধ্যে- (ক) স্থল পথ পরিবহন উপখাতে ৯২১৮৩ কোটি টাকা, (খ) পানি পথ পরিবহন উপখাতে ৭৬৪৯ কোটি টাকা, (গ) আকাশ পথ পরিবহন উপখাতে ১০৪৭ কোটি টাকা, (ঘ) সহযোগী পরিবহন সেবা ও সংরক্ষণ উপখাতে ৬০০১ কোটি টাকা এবং (ঙ) ডাক ও তার যোগাযোগ খাতে ১৭৪০০ কোটি টাকা। ২০১৪-১৫ সময়ে পরিবহন, সংরক্ষণ ও যোগাযোগ খাতে মোট আয় হয় ১,৫০,০২৫ কোটি টাকা । ২০১৫-১৬ সালে ১,৬৯,১৬৫কোটি টাকা ।
১০. আর্থিক প্রাতিষ্ঠানিক সেবা : এ খাতের হিসাব করা হয় সেবা থেকে প্রাপ্ত মূল্যের ভিত্তিতে । ২০১২-১৩ সময়ে এ খাত থেকে দেশজ উৎপাদন মূল্যের পরিমাণ ছিল ৪২২৩৭ কোটি টাকা, যার মধ্যে- (ক) ব্যাংক উপখাতে ৩৪৭২৭ কোটি টাকা; (খ) বিমা উপখাতে ৪৯২০ কোটি টাকা এবং (গ) অন্যান্য খাত থেকে আয় হয় ২৫৯০ কোটি টাকা। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে মোট ৫৫,৭৬১ কোটি টাকা আয় হয় । উপখাত অনুযায়ী এ আয় যথাক্রমে ৪৬৬৪৪, ৫৯৩৮ ও ৩১৮০ কোটি টাকা । ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৬৩,৬০১ কোটি টাকা এবং উপখাতে যথাক্রমে ৫৩৭৮৯, ৬৩২৭ ও ৩৪৮৫ কোটি টাকা ।
১১. রিয়েল এস্টেট, ভাড়া ও অন্যান্য ব্যবসা : এ খাত থেকে দেশজ উৎপাদনের পরিমাণ হিসাব করা হয় সেবা থেকে প্রাপ্ত আয়ের পরিমাপের ভিত্তিতে। ২০১২-১৩ সালে এ খাত হতে প্রাপ্ত দেশজ আয় ছিল ৭৮৮২০ কোটি টাকা এবং ২০১৪-১৫ সময়ে ১০,০৬০ কোটি টাকা । ২০১৫-১৬ সালে ১২৩৭৪০ কোটি টাকা।
১২. লোকপ্রশাসন ও প্রতিরক্ষা : এ খাত থেকে প্রাপ্ত দেশজ আয়ের হিসাব করা হয় মূলত ব্যয়ের দিক থেকে । ২০১২-১৩ সালে দেশজ উৎপাদণ ছিল ৩৭৬৭৮ কোটি টাকা এবং ২০১৪-১৫ সালে ৫০,৬৭৪ কোটি টাকা । যা ২০১৫-১৬ সালে ৬৬৭১১ কোটি টাকা ।
১৩. শিক্ষা : বাংলাদেশের শিক্ষা খাতে মোট দেশজ উৎপাদন হিসাব করা হয় ব্যয়ের দিক থেকে। ২০১২-১৩ সালে এ খাতে দেশজ উৎপাদন ছিল ২৮৪২৯ কোটি টাকা এবং ২০১৪-১৫ সালে ৩৭, ৬২৪ কোটি টাকা । ২০১৫-১৬ সালে ৪৬৫১২ কোটি।
১৪. স্বাস্থ্য ও সামাজিক সেবা : স্বাস্থ্য ও সেবা খাতের বিষয়টি হিসাব করা হয় ব্যয় পদ্ধতিতে। এক্ষেত্রে মোট দেশজ উৎপাদন ব্যয় ২০১২-১৩ সময়ে হয়েছিল ২৩৮৬৮ কোটি টাকা এবং ২০১৪-১৫ সময়ে ব্যয় ৩০,১৩৫ কোটি টাকা। ২০১৫-১৬ সালে ৩৪৭৫৮ কোটি টাকা।
১৫. কমিউনিটি, সামাজিক ও ব্যক্তিগত সেবা : এ খাতে ব্যয়ের দিক থেকে মোট দেশজ উৎপাদণ গণনা করা হয় । ২০১২-১৩ সালে এ খাত থেকে ১৩৮৯৫২ কোটি টাকা ব্যয় গণনা করা হয় এবং ২০১৪-১৫ বছরে ১,৭৬,৪০২ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছিল । ২০১৫-১৬ সালে ১,৯৪,২৪৮কোটি টাকা।
[ এই অধ্যায়ের প্রদত্ত যাবতীয় তথ্যের উৎস: বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা- ২০১৭]