বাংলাদেশে স্কাউটিং ও গার্ল গাইডের কর্মসূচি শুরু হয় কত সালে?
স্কাউটিং ও গার্ল গাইডিং বিশ্বব্যাপী একটি অরাজনৈতিক সমাজসেবামূলক যুব আন্দোলন। পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই স্কাউটিং ও গার্ল গাইডের কার্যক্রম প্রচলিত। বৃটিশ সেনাবাহিনীর তৎকালীন লেফটেন্যান্ট জেনারেল রবার্ট স্টিফেনশন সি লর্ড ব্যাডেন পাওয়েল ১৯০৭ সালে স্কাউটিং এবং ১৯১০ সালে গার্ল গাইড প্রবর্তন করেন। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে বাংলাদেশে বয়েজ স্কাউট গঠিত হয়। বর্তমানে ছেলে মেয়ে উভয়ই অংশগ্রহণ করে সেজন্য এর নাম হয়েছে বাংলাদেশ স্কাউট সমিতি। এটি ১৯৭৪ সালে আন্তর্জাতিক স্কাউট সমিতির অনুমোদন পায়। রেড ক্রিসেন্ট আন্দোলন একটি আন্তর্জাতিক মানবতাবাদী আন্দোলন। যার মাধ্যমে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল কিছুর ঊর্ধ্বে থেকে মানুষের জীবন ও সুসাস্থ্য নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করছে। পূর্বের শ্রেণিতে স্কাউটিং ও গার্ল গাইডিং কী? এর ইতিহাস, মূলমন্ত্র, প্রতিজ্ঞা, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এবং এর কর্মসূচি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
এ অধ্যায় পাঠ শেষে আমরা-
• হাইকিং ও প্রজেক্টের নিয়মাবলি বর্ণনা করতে পারব;
• নেতৃত্বদান ও মানবসেবায় স্কাউটিং, গার্ল গাইডিং ও বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির গুরুত্ব ব্যাখ্যা করতে পারব;
• স্কাউটিং, গার্ল গাইডিং ও বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির মাধ্যমে অন্যের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের মনোভাৰ
অর্জন করতে পারব;
• প্রাথমিক প্রতিবিধান / চিকিৎসার প্রভাব বিশ্লেষণ করতে পারব;
• দৈনন্দিন জীবনে ছোটখাটো দুর্ঘটনার প্রাথমিক চিকিৎসা করতে পাৱৰ
পাঠ-১ : হাইকিং ও প্রজেক্ট তৈরি : হাইকিং শব্দের অর্থ উদ্দেশ্যমূলক ভ্রমণ। যেকোনো পথ নির্দেশিকা অনুসরণ করে নির্দিষ্ট গন্তব্যের উদ্দেশ্যে স্কাউট ও গার্ল গাইড পায়ে হেঁটে ভ্রমণ এবং ভ্রমণকালে পথিমধ্যে আশপাশের পরিবেশ ও প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ করবে। সাধারণত একাকী, দুইজন অথবা একটি উপদল হাইকিংয়ে অংশগ্রহণ করতে পারে। হাইকিংয়ে এক বা একাধিক রাত বাইরে কাটাতে হয়। হাইকিং এর মাঝে মাঝে প্রতিবন্ধকতা বা স্টেশন করে স্কাউট ও গার্ল গাইড প্রশিক্ষণ অনুশীলন করা যায়। হাইকিংয়ের মাধ্যমে বিশেষ করে প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ, মানচিত্র অংকন, অনুসরণ চিহ্ন, কম্পাস স্থাপন, ফিল্ডবুক তৈরি, কোড এন্ড সাইফার, সামাজিক জরিপ, রান্না ও অন্যান্য বিষয়সমূহ শিখানো বা অনুশীলন করা সম্প্র। নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছে তাঁবু খাটানো, রান্না করা, খাওয়া, সামাজিক জরিপ, তাঁবু জলসা (Campfire), নিদ্রা যাওয়া এবং হাইকিং শেষ করে আসার সময় জমির মালিক বা প্রতিষ্ঠান প্রধানের নিকট থেকে বিদায় নিয়ে ক্যাম্পে পৌঁছে রিপোর্ট করতে হয়। হাইকিং পরিশ্রমের এবং কষ্টের কাজ হলেও এটি যেমন আনন্দের, তেমনি শরীরের জন্যও উপকারী। এটি একটি উদ্দীপনাপূর্ণ চিত্তবিনোদন ও শিক্ষামূলক কর্মসূচি। এর মাধ্যমে স্কাউট ও গার্ল গাইডেরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দ্বারা তাদের মনকে উদার করে তোলে।
পাঠ-২ : কম্পাস : কম্পাস একটি দিক নির্ণয়কারী যন্ত্র। কম্পাসের মাঝে একটি কাঁটা থাকে। যন্ত্রটি যেদিকে ঘুরানো হোক না কেন কাঁটার মুখ উত্তর দিকে চলে আসবে। কোনো অচেনা যায়গায় গেলে বা রাতের অন্ধকারে দিক হারিয়ে ফেললে কম্পাসটি সঠিক দিকের নির্দেশনা দেয় ।
মানচিত্র : হাইকিং এর নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছাতে রাস্তার উভয়দিকে যে সমস্ত জিনিষ দেখা ও অতিক্রম করা হয় তার একটি চিত্র তুলে ধরাই হল হাইকিং এর মানচিত্র। রাস্তায় বসে ম্যাপ আকার দরকার হয়না। সংক্ষেপে খুটিনাটির বিবরণ যেমন— বিদ্যালয়, মসজিদ, হাটবাজার, বনজঙ্গল, পুকুর, পাকা রাস্তা, উঁচু জায়গা ইত্যাদির সংখ্যা ও দূরত্ব স্কাউট/গাইডদের ফিল্ডবুকে লিখে রাখবে। পরে ক্যাম্পে ফিরে কিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে মানচিত্র অংকন করবে।
পেট্রোল সিস্টেম এবং কর্মসূচি প্রণয়ন
পেট্রোল সিস্টেম ঃ পেট্রোল সিস্টেম লর্ড ব্যাডেন পাওয়েল প্রথমে ভারতে প্রচলন করেন। প্রথমে তিনি অল্প বয়স্ক সৈনিকদের মাঝে পেট্রোল সিস্টেমে স্কাউটিং এর শিক্ষাদান করেন। এরপর এই পদ্ধতি পৃথিবীর সব স্কাউট ও গাইড দলের মধ্যে প্রচলন করা হয়। ছোট ছোট উপদলে ভাগ হয়ে কাজ করাকে পেট্রোল সিস্টেম বলে।
পেট্রোল সিস্টেমের প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে মেয়েদেরকে নিজ দায়িত্ব সম্বন্ধে সচেতন করে তোলা। এই পদ্ধতির মাধ্যমে প্রতিটি স্কাউট বা গাইড কোম্পানি পর্যায়ে তার মতামত পৌঁছাতে পারে এবং তারা তাদের নিজ পেট্রোলে নিজেদের সুবিধা অনুযায়ী কোম্পানির কার্যক্রম পরিচালনা করে এবং পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে।
কর্মসূচি প্রণয়ন : হাইকিংয়ের মান সম্পূর্ণভাবে পরিকল্পনার উপর নির্ভর করে। উপদল (পেট্রোলের) মিটিংয়ের সিদ্ধান্ত অনুসারে হাইকিংয়ের আগের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে কর্মসূচি প্রণয়ন করা উচিত। উপদল (পেট্রোলের) নেতাকে পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুসারে গ্রুপ স্কাউট বা গাইড কাউন্সিলের সুপারিশক্রমে হাইকিংয়ের কর্মসূচি প্রণয়ন করতে হয়। সংশ্লিষ্ট থানা বা স্কাউট বা গাইড কমিশনারের অনুমতি অবশ্যই থাকতে হবে।
১. চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেওয়ার পূর্বে সকল কর্মসূচিকে একবার পর্যালোচনা বা যাচাই করে সংযোজন বা বিয়োজন করা আবশ্যক
২. স্থান নির্বাচনের ক্ষেত্রে ইউনিট লিডারকে দূরত্ব, সুগম পথ, গোসল ও খাওয়ার পানির সুব্যবস্থা, জায়গার অবস্থা, বাজারের নৈকট্য, ডাক্তারখানা, কর্মসূচি বাস্তবায়নের উপযোগী প্রাকৃতিক পরিবেশ, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় বিকল্প আশ্রয়স্থল ইত্যাদি সতর্কতার সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে
৩. . ইউনিট লিডারকে ট্রেনিং সিডিউল তৈরি করে প্রশিক্ষণের সরঞ্জাম যোগাড় করতে হবে।
৪. নির্বাচিত স্থানের মালিকের বা প্রতিষ্ঠান প্রধানের অনুমতি এবং স্কাউট বা গাইডদের অভিভাবকের সম্মতি নিতে হবে ।
৫. স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে দুর্বলদের বাদ দিতে হবে।
৬. কখন শুরু হবে, কত দিন থাকতে হবে এবং কখন শেষ হবে পূর্বেই তা নির্ধারণ করতে হবে ।
৭. কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য একটি বাজেট তৈরি করতে হবে। বাজেট তৈরিতে অবশ্যই মিতব্যয়িতার নীতি অবলম্বন করতে হবে।
৮. প্রয়োজনীয় সংখ্যক প্রশিক্ষক, কোয়াটার মাস্টার, প্রাথমিক প্রতিবিধানকারী ও স্যানিটারি পর্যবেক্ষণকারী
নিয়োগ করতে হবে ।
৯. শুকনো জ্বালানি কাঠ ও সুষম খাদ্য বাজেট অনুপাতে কিনতে হবে।
১০. পূর্বেই স্যানিটেশন ব্যবস্থা করে রাখতে হবে।
১১. পথ সংকেত, কম্পাস রিডিং, মানচিত্র অংকন ও পঠন, তাঁবু খাটানোর কৌশল, রান্না করা, সাঁতার, পাইওনিয়ারিং, প্রাথমিক প্রতিবিধান, উদ্ধারকাজ, রাস্তায় চলার নিয়ম ইত্যাদি সম্বন্ধে ধারণা দিতে হবে।
১২. সোজা হয়ে স্কাউট কদমে (২০ কদম হাঁটা ও ২০ কদম দৌড়ানো) হাঁটতে হবে। প্রতি দুই মাইলে ৫
মিনিট বিশ্রাম করতে হবে।
তাঁবুতে বসবাসের সময় নিজেদের মালপত্র গুছিয়ে রাখার জন্য গ্যাজেট তৈরি করতে হয়। বাঁশ, গাছের ডাল ও দড়ি দিয়ে এসব গ্যাজেট তৈরি করা হয়। দড়ির সাহায্যে বিভিন্ন গেরো বাঁধতে পারা এবং তা সঠিক ভাবে প্রদর্শন করতে পারার নাম পাইওনিয়ারিং। বর্তমান যুগ উন্নত প্রযুক্তির যুগ। এই উন্নত প্রযুক্তির যুগে প্রজেক্টরের মাধ্যমে হাইকিং ও পাইওনিয়ারিং প্রজেক্ট প্রদর্শন করে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করা যায়। এতে হাইকিং ও পাইওনিয়ারিং সম্পর্কে শিক্ষার্থীরা স্পষ্ট ধারণা লাভ করবে।
কাজ – ১ : হাইকিং ও প্রজেক্ট তৈরির কর্মসূচি লেখ । কাজ – ২ : শ্রেণিকক্ষে একজন গাইড বা স্কাউট দড়ির সঠিক গেরো ব্যবহার করে বাঁশ ও কাঠের টুকরা দিয়ে গ্যাজেট তৈরি করে দেখাও। |
পাঠ -৩ : নেতৃত্বদান ও মানবসেবায় স্কাউটিং ও গার্ল গাইডিং : মানুষ পৃথিবীর যেখানেই বাস করুক না কেন দলবদ্ধভাবে বাস করার চেষ্টা করে। এভাবেই গড়ে উঠে সমাজ। সমাজে বাস করাই হলো মানুষের বৈশিষ্ট্য। সে যে সমাজে বাস করে, সেই সমাজের মঙ্গলের জন্য চেষ্টা করে। সমাজ পাড়াভিত্তিক হতে পারে আবার গ্রামভিত্তিক হতে পারে। যে সমাজেই বসবাস করুক না কেন, সমাজের পরিবেশ সুন্দর করা সকলের দায়িত্ব। যেমন- একটি পুকুর পরিষ্কার আছে অথচ আরেকটি পুকুর কচুরিপানায় ভরা। অপরিষ্কার পুকুরটি কচুরিপানা পরিষ্কার না করায় যে মশা হয়, সে মশা সকলের জন্য ক্ষতিকর। যদি উদ্যোগ নিয়ে সকলের সহযোগিতায় ঐ পুকুরের কচুরিপানা পরিষ্কার করা যায়, তবে সেই পুকুরের পানি ভালো থাকবে, ভালোভাবে মাছ চাষ করা যাবে আবার মশার জন্ম বন্ধ হবে। একইভাবে বাজারে যাবার রাস্তাটি বর্ষা বা কোনো কারণে হয়তো নষ্ট হয়ে গেছে। সকলের সহযোগিতায় রাস্তাটি মেরামত করে চলাচলের উপযোগী করতে হবে। এভাবে সমাজে ছোট ছোট উন্নয়নমূলক কাজের মাধ্যমে নিজকে বড় কাজ করার জন্য তৈরি করা যায়। সমাজের কল্যাণের জন্য এ ধরনের অনেক কাজ করার আছে। এ ধরনের কাজকে সেবামূলক কাজ বলে।
স্কাউটিং এবং গার্ল গাইডের মূলমন্ত্রই হচ্ছে ‘সেবা'। এই সেবা হতে পারে আত্মসেবা, সমাজসেবা ও মানবসেবা। আত্মসেবার অর্থ একজন আত্মনির্ভরশীল মানুষ হিসাবে নিজেকে গড়ে তোলা । শ্ৰম, বুদ্ধিমত্তা ও চেষ্টায় নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠিত ও উপযুক্ত করে গড়ে তোলাই আত্মসেবার মূল লক্ষ্য। নিজে আত্মনির্ভরশীল না হতে পারলে অপরের সেবা বা কোনো বৃহত্তর কাজই করা সম্ভব নয়। অতএব নিজকে এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে, যাতে একজন স্কাউট ও গার্ল গাইড সমাজের সাধারণ মানুষের বৃহত্তর কল্যাণের জন্য আত্মনিয়োগ করতে পারে । প্রত্যেক স্কাউট ও গার্ল গাইড সমাজের সদস্য হিসাবে পরিবার ও সমাজের কথা চিন্তা করে। তাই নিজের পরিবারের- মা, বাবা, ভাই, বোনের প্রতি সব সময় তার করণীয় দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করে। তাছাড়া সমাজের বৃদ্ধ, পঙ্গু, প্রতিবন্ধী, নারী, শিশু, অসুস্থ ও অসহায় মানুষের সেবায় আত্মনিয়োগ করে থাকে। সমাজে সেবাধর্মী যতগুলো প্রতিষ্ঠান আছে, তার মধ্যে স্রষ্টার প্রতি আনুগত্য ও শ্রদ্ধায়, সৎ ও সত্যবাদিতায়, জীবের প্রতি দয়ায়, চিন্তা-চেতনা ও কর্তব্যপরায়ণতায় স্কাউট ও গার্ল গাইড আদর্শ প্রতিষ্ঠান। স্কাউট ও গার্ল গাইডের মূলমন্ত্র হচ্ছে ‘সদা প্রস্তুত'। প্রত্যেক স্কাউট ও গার্ল গাইড অপরের সেবার জন্য বা যেকোনো ভালো কাজ করার জন্য সব সময় প্রস্তুত থাকে। ‘সদা প্রস্তুত' –এর ইংরেজি হলো ‘Be Prepared' এর অর্থ হতে পারে ‘যেকোনো উদ্দেশ্য, অসম সাহসিকতা নিয়ে, দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়ে, সহিষ্ণুতার সাথে, বন্ধুর মতো করে, নিজেকে অন্যের প্রয়োজনে উৎসর্গ করা।' ‘প্রতিদিন কারো না কারো উপকার করা' -এটা হচ্ছে স্কাউট ও গার্ল গাইডদের স্লোগান । ইংরেজিতে বলা হয়, ‘Do a good turn daily'. এটা স্কাউট ও গার্ল গাইডদের একটি বৈশিষ্ট্যও বটে। এই স্লোগান স্কাউট ও গার্ল গাইডদের প্রতিজ্ঞার একটি অংশ হওয়ায় এর গুরুত্ব অনেক। প্রতিদিন বিভিন্নভাবে এই স্লোগানকে বাস্তবায়িত করা যায়। যেমন-
কারো চিঠি লিখে দেওয়া ।
কারো চিঠি পোস্ট করে দেওয়া ।
ডাকটিকেট কিনে এনে দেওয়া ।
স্কাউটকে বাজার করে দেওয়া।
কারো কিছু হারিয়ে গেলে খুঁজে দেওয়া।
অন্ধকে রাস্তা পার হতে সাহায্য করা ।
বুড়ো লোককে এগিয়ে দেওয়া ।
পথ থেকে ইট, পাথর, কাঁটা, কলার খোসা তুলে ফেলা ।
পথের গর্ত ভরে দেওয়া ।
শিশুকে রাস্তা পার হতে সাহায্য করা।
মুসল্লিদের ওযুর পানি এনে দেওয়া ৷
মসজিদ ধুয়ে দেওয়া ।
পথচারীকে পথ দেখিয়ে দেওয়া ।
কাউকে বাসা খুঁজে পেতে সাহায্য করা।
ঝগড়া-বিবাদ থামিয়ে দেওয়া ।
কেউ আহত হলে হাসপাতালে নেওয়া ।
লাশ দাফনে সাহায্য করা।
কাউকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া।
পশু-পাখিকে অত্যাচার থেকে বাঁচানো।
কাউকে গাড়িতে চড়তে সাহায্য করা ।
বন্যার সময় ত্রাণকাজে যোগদান করা ।
ঝড়-বিধ্বস্ত বা আগুন লাগা এলাকায় ত্রাণকার্যে অংশগ্রহণ করা।
এভাবে ছোট হোক, বড় হোক যেকোনো কাজ করে মানুষের সেবা করাই স্কাউট ও গার্ল গাইডের স্লোগানের মূল উদ্দেশ্য। এই কাজের মধ্য দিয়ে নেতৃত্বের গুণাবলি অর্জিত হয় ।
কাজ-১ : ২টি সেবামূলক কাজের বর্ণনা লেখ। কাজ-২: প্রতিদিন কী কী ভালো কাজ করা যায় তা পোস্টারে লিখে শ্রেণিকক্ষে টাঙ্গিয়ে রাখ ৷ |
পাঠ-৪ : রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্টের জন্ম ও ইতিহাস : ১৮৫৯ সালের ২৪শে জুন উত্তর ইতালির সলফেরিনো নামক স্থানে ফ্রান্স ও অস্ট্রিয়ার মধ্যে এক ভয়াবহ যুদ্ধ সংঘটিত হয়। মাত্র ১৬ ঘণ্টার এই যুদ্ধে প্রায় চল্লিশ হাজার সৈন্য হতাহত হয়। আহত সৈন্যরা বিনা চিকিৎসায় যুদ্ধক্ষেত্রেই উন্মুক্ত প্রান্তরে মৃত্যুযন্ত্রণায় ছটফট করছিল। সেই সময় সুইজারল্যান্ডের এক যুবক জিন হেনরি ডুনান্ট ব্যবসাসংক্রান্ত ব্যাপারে ফ্রান্সে তৃতীয় নেপোলিয়নের সাথে সাক্ষাৎ করতে যাচ্ছিলেন। যুদ্ধক্ষেত্রের এই মর্মান্তিক দৃশ্য দেখে তিনি ব্যথিত হন এবং তিনি আশেপাশের গ্রামবাসীকে ডেকে এনে আহতদের তাৎক্ষণিক সেবা ও প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাদের জীবনরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। এরাই রেড ক্রসের প্রথম স্বেচ্ছাসেবক, যাদের অধিকাংশই ছিলেন মহিলা। ডুনান্ট এই যুদ্ধের ভয়াবহ ও বিভীষিকাময় স্মৃতি ও তার প্রতিকারের জন্য ১৮৬২ সালে ‘এ মেমোরি অব সলফেরিনো' নামে একটি বই রচনা করেন। বইটির মূল কথা ছিল ‘আমরা কি পারিনা প্রতিটি দেশে এমন একটি সেবামূলক সংস্থা গঠন করতে, যারা শত্রু-মিত্র নির্বিশেষে আহতদের সেবা করবে।' ১৮৬৩ সালে ৯ ই ফেব্রুয়ারি জিন হেনরি ডুনান্ট চারজন জেনেভাবাসীকে নিয়ে একটি কমিটি গঠন করেন, যা ‘কমিটি অব ফাইভ’
নামে পরিচিত। পরবর্তীতে এই কমিটির নাম পরিবর্তিত হয়ে আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটি নামে পরিচিত হয়। একই বছর এই কমিটি ১৬টি দেশের প্রতিনিধিদের নিয়ে জেনেভায় আন্তর্জাতিক সম্মেলন আহ্বান করে। সম্মেলনে ডুনান্টের মহতি প্রস্তাবগুলো গৃহীত হয় এবং তারই পরিপ্রেক্ষিতে রেড ক্রস জন্মলাভ করে। জিন হেনরি ডুনান্ট ১৮২৮ সালের ৮ই মে সুইজারল্যান্ডের জেনেভা শহরে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯১০ সালের ৩০ শে অক্টোবর ৮২ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। ডুনান্টের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য ৮ই মে তার জন্মদিবস, এই দিনটি বিশ্ব রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট দিবস হিসাবে পালিত হয় ।
আন্তর্জাতিক রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট আন্দোলনের মূলনীতি : ১৯৬৫ সালে ভিয়েনায় অনুষ্ঠিত রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্টের ২০তম আন্তর্জাতিক সম্মেলনে নিম্নলিখিত সাতটি মৌলিক নীতি গৃহীত হয় ।
১। মানবতা— কোনো প্রকার ভেদাভেদ ছাড়া যুদ্ধক্ষেত্রে আহতদের সাহায্য করা ।
২। পক্ষপাতহীনতা— এই আন্দোলন জাতি, গোত্র, ধর্মীয় বিশ্বাস, শ্রেণি বা নিরপেক্ষতার ভিত্তিতে বিপদাপন্ন ব্যক্তিকে সাহায্য করে ।
৩। নিরপেক্ষতা— সকলের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জনের উদ্দেশ্যে এই আন্দোলন সংঘর্ষকালে কোনো পক্ষ
অবলম্বন করে না ।
৪। স্বাধীনতা— এই আন্দোলন স্বাধীন। মানবসেবামূলক কাজে নিজ নিজ দেশের আইনের অধীনে সরকারের সহায়ক হিসাবে কাজ করে।
৫। স্বেচ্ছামূলক সেবা— একটি স্বেচ্ছাসেবামূলক ত্রাণ সংগঠন হিসাবে এই আন্দোলন কোনো প্রকার স্বার্থ বা
লাভ অর্জনের উদ্দেশ্যে কাজ করে না ।
৬। একতা— কোনো দেশে কেবল একটিমাত্র রেড ক্রস বা রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি থাকবে। দেশের সর্বত্র এর মানবসেবামূলক কর্মকাণ্ড বিস্তৃত থাকবে ।
৭। সার্বজনীনতা— সমমর্যাদাসম্পন্ন এবং পরস্পরকে সাহায্যের জন্য সমান দায়িত্ব ও কর্তব্যের অধিকারী জাতীয় সোসাইটিসমূহকে নিয়ে গঠিত আন্তর্জাতিক রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট বিশ্বব্যাপী একটি সার্বজনীন আন্দোলন ।
বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি : ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হবার পর সরকারের সহযোগী ত্রাণ সংস্থা হিসাবে বাংলাদেশ রেড ক্রস সোসাইটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৭৩ সালের ৩১এ মার্চ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মহামান্য রাষ্ট্রপতির এক আদেশবলে ১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭১ সাল থেকে বাংলাদেশ রেড ক্রস সোসাইটিকে স্বীকৃতি প্রদান করে। ১৯৭৩ সালের ২০এ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ রেড ক্রস সোসাইটিকে ‘আন্তর্জাতিক কমিটি অব রেড ক্রস' স্বীকৃতি প্রদান করে। একই সময়ে সোসাইটি তৎকালীন লিগ অব রেড ক্রসের সদস্য পদ লাভ করে। পরবর্তীতে ১৯৮৮ সালে ৪ঠা এপ্রিল রাষ্ট্রপতির আদেশের সংশোধনীবলে বাংলাদেশ রেড ক্রস সোসাইটির নাম পরিবর্তন করে ‘রেড ক্রিসেন্ট ’ করা হয় ।
রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট আন্দোলনের প্রতীক : সেনাবাহিনীর মেডিকেল সার্ভিসসহ যুদ্ধক্ষেত্রে নিয়োজিত চিকিৎসা, ত্রাণকর্মী ও তাদের সরঞ্জামাদি চিহ্নিতকরণ ও নিরাপত্তা প্রদানের জন্য একটি নিরপেক্ষ ও পার্থক্যসূচক চিহ্ন হিসাবে রেড ক্রস প্রতীক গৃহীত হয়। রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট আন্দোলন প্রতিষ্ঠার অগ্রদূত ও যুদ্ধাহতদের সেবা প্রদানের অনন্য অবদানের জন্য সুইস নাগরিক হিসাবে হেনরি ডুনান্ট ও তার সহকর্মীবৃন্দ এবং সুইজারল্যান্ড রাষ্ট্রের প্রতি সম্মান প্রদর্শনপূর্বক সুইস পতাকার বিপরীতে সাদা জমিনের উপর লাল ক্রস প্রতীক হিসাবে নির্বাচিত করা হয়। বর্তমানে ফার্মেসি, অ্যাম্বুলেন্স, হাসপাতালসমূহে এবং চিকিৎসকদের জন্য নিম্নের প্রতীক ব্যবহারের লক্ষ্যে ব্যাপক গণসংযোগ পরিচালিত হচ্ছে।
রেড ক্রিসেন্ট পতাকার মাপ : সাদা জমিনের মধ্যবর্তী স্থানে ইংরেজি 'C' অক্ষর আকৃতির একটি লাল রংয়ের অর্ধ চন্দ্রখচিত রেড ক্রিসেন্ট পতাকার মাপ নিম্নরূপ :
১। সাদা জমিনের দৈর্ঘ্য ১০ একক, প্রস্থ ৬ একক অর্থাৎ দৈর্ঘ্য-প্রস্থের অনুপাত ১০ : ৬ (জাতীয় পতাকার
অনুরূপ)।
২। রেড ক্রিসেন্ট প্রতীকটি ১ একক = সাদা জমিনের প্রস্থের ২৪ ভাগের ১ অংশ হিসাবে অংকন করতে হবে।
৩। রেড ক্রিসেন্ট প্রতীকটি সাদা জমিনের ঠিক মধ্যবর্তী স্থানে স্থাপিত হবে।
৪ । লাল অর্ধ চন্দ্রের (রেড ক্রিসেন্ট) খোলা মুখ ফ্ল্যাগ পোলের বিপরীত দিকে থাকবে । মানবসেবায় বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির গুরুত্ব : বিশ্বের দুঃস্থ মানবতার সেবায় নিয়োজিত আন্তর্জাতিক সংস্থার নাম রেড ক্রস। বর্তমানে এ সংস্থাটি দুটি নামে বিভক্ত। মুসলিম বিশ্বে রেড ক্রিসেন্ট এবং অন্যান্য দেশে রেড ক্রস নামে পরিচিত। মুসলিম বিশ্বে এর প্রতীক অর্ধাকৃতি চাঁদ। যুদ্ধবন্দী, যুদ্ধাহত, বাস্তুহারা, রুগ্ণ ও যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিপর্যস্ত মানুষকে উদ্ধার ও সহযোগিতা করাই এর মুখ্য উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য। এ ছাড়া রয়েছে ব্লাড ব্যাংকের রক্ষণাবেক্ষণসহ পানির বিশুদ্ধতা রক্ষা এবং প্রাথমিক চিকিৎসা-সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ দান। এ সেবা সংস্থাটি ১৯৬৩ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার পায় ।
কাজ-১ : মানব সেবায় রেড ক্রিসেন্টের গুরুত্ব উপস্থাপন কর। কাজ-২ : রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির পতাকা বাড়ি থেকে অংকন করে আনবে। |
পাঠ-৫ : প্রাথমিক চিকিৎসা : শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বলতে সাধারণত হাত, পা, নাক, কান, চোখ, মাথা, গলা ইত্যাদিকে বোঝায়। শিক্ষার্থীদের এসব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের প্রাথমিক চিকিৎসা সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করা অতীব প্রয়োজন। প্রতিটি মানুষ জীবনে চলার পথে অনেক সময় দুর্ঘটনার মুখোমুখি হয়। এই দুর্ঘটনা মোকাবেলার জন্য প্রাথমিক চিকিৎসার ধারণা লাভ করা প্রত্যেকের কর্তব্য। প্রাথমিক চিকিৎসা জানা থাকলে ডাক্তার না আসা পর্যন্ত দুর্ঘটনার পর ক্ষতির পরিমাণ অনেকটা কমানো যায়। প্রাথমিক চিকিৎসার ইংরেজি হলো ফার্স্ট এইড (First Aid)। First অর্থ প্রথম আর Aid অর্থ সাহায্য। কোনো আহত ব্যক্তিকে সর্বপ্রথম যে সেবা শুশ্ৰুষা দেওয়া হয়, তাই প্রাথমিক চিকিৎসা। প্রাথমিক চিকিৎসা হচ্ছে বিজ্ঞানসম্মত সেই শিক্ষা, যা আয়ত্তে থাকলে আকস্মিক কোনো দুর্ঘটনায় সাহায্য করতে পারে, যাতে রোগীর জীবন রক্ষা পায়। প্রাথমিক চিকিৎসার স্রষ্টা হলেন ডা. ফ্রেডিক এজমার্ক। তিনি জার্মানির একজন বিশিষ্ট শল্য চিকিৎসক । তিনিই প্রথম চিন্তা করেন, যেকোনো দুর্ঘটনায় আহত রোগীকে ডাক্তারের নিকট নিয়ে যাওয়ার আগে রোগীর অবস্থার অবনতি যাতে না ঘটে সে ব্যবস্থা গ্রহণ করা। অতএব প্রাথমিক চিকিৎসা হচ্ছে, হঠাৎ দুর্ঘটনায় আহত রোগীকে ডাক্তার আসার পূর্বে প্রাথমিক সেবা শুশ্রুষা করা । প্রাথমিক চিকিৎসাকারীর কাজ প্রধানত তিনটি- ক) রোগ নির্ণয় করা খ) চিকিৎসা গ) স্থানান্তর ।
ক. রোগ নির্ণয় : কী কারণে অসুস্থতার সৃষ্টি হয়েছে তা খুঁজে বের করা ।
খ. চিকিৎসা : ডাক্তার আসার আগে রোগীর অবস্থার অবনতি যাতে না ঘটে সেজন্য প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া ।
গ. স্থানান্তর : দুর্ঘটনার গুরুত্ব অনুযায়ী রোগীকে নিরাপদ জায়গায় বা ডাক্তারের নিকট বা হাসপাতালে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব স্থানান্তর করা
ক্ষতস্থান : ছুরি, কাঁচি, ব্লেড, দা, বটি প্রভৃতিতে কেটে গিয়ে রক্তপাত হলে তাকে ক্ষত বলা হয়। হাতুড়ি, ইট, পাথরে থেঁতলে গিয়ে রক্তপাত হলে তাকেও ক্ষত বলা হয়। জীবজন্তুর কামড়ে রক্তপাত হলেও ক্ষতের সৃষ্টি হয় । এছাড়া উত্তপ্ত তেল বা পানি দ্বারা শরীর ঝলসে গিয়ে ত্বক বা মাংসপেশিতে ক্ষতের সৃষ্টি হতে পারে ।
প্রাথমিক চিকিৎসা
১। প্রথমেই নিজের হাত জীবাণুমুক্ত করতে হবে।
২। ক্ষতস্থানে বরফ দিয়ে অথবা অন্য কোনো উপায়ে রক্ত বন্ধ করার চেষ্টা করতে হবে।
৩। রোগীকে নিশ্চলভাবে শুইয়ে রাখতে হবে। এতে রক্তপাত কম হয় ।
৪। ক্ষতস্থানে কিছু থাকলে তা বের করতে হবে।
৫। ক্ষতস্থানে বড় কিছু ঢুকে গেলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ডাক্তারের নিকট নিয়ে যেতে হবে।
৬। ক্ষতস্থান জীবাণুনাশক ওষুধের সাহায্যে পরিষ্কার করে ড্রেসিং করতে হবে ।
ড্রেসিং : ক্ষতস্থানকে জীবাণুমুক্ত বা পরিষ্কার করার জন্য যে প্রক্রিয়া তাকে ড্রেসিং বলে। ডেসিং এর জন্য পরিষ্কার কাপড়, গজ, ব্যান্ডেজ, তুলা, সেভলন ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়।
ড্রেসিং করার পদ্ধতি : ড্রেসিং করার সময় কতকগুলো বিষয় সবসময় অনুসরণ করতে হয় ।
১। রোগীকে শুইয়ে ক্ষতস্থান সামনে তুলে ধরতে হবে।
২। আহত স্থানের নিচে পরিষ্কার কাপড় পেতে দিলে ভালো হয়।
৩। সেবাদানকারীকে তাঁর নিজের হাত দুটি পরিষ্কার করে নিতে হবে।
৪। জীবাণুমুক্ত তুলা দিয়ে ক্ষতস্থান পরিষ্কার করে নিতে হবে।
৫। ক্ষতের চারপাশ স্পিরিট বা ডেটল দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে।
৬। ক্ষতস্থান পরিষ্কার করার সময় কেন্দ্রের দিক থেকে পরিষ্কার করতে হবে। যাতে কোনো ময়লা ক্ষতস্থানে গড়িয়ে না আসে ।
৭। ক্ষতস্থানে কখনো হাত লাগাতে নেই ।
৮। অ্যান্টিসেপটিক পাউডার বা মলম জীবাণুমুক্ত তুলা বা গজে লাগিয়ে ক্ষতস্থানে চাপা দিলে ভালো হয় ।
৯। টিংচার আয়োডিন, স্পিরিট, পটাশ পারম্যাঙ্গানেট প্রভৃতি কোনো ক্ষতে ব্যবহার করা ঠিক নয়। এতে দেহের টিস্যুগুলোর ক্ষতি হয়। ক্ষতের চারপাশ পরিষ্কার করতে এগুলো কাজে লাগে ।
১০। প্রাথমিক চিকিৎসকের ব্যাগে সব সময় জীবাণুমুক্ত তুলা, গজ, ব্যান্ডেজ, ফাস্ট এইড বক্স, কাঁচি ও কিছু ওষুধ প্রভৃতি রাখা দরকার।
কাজ ১ : শ্রেণি কক্ষে যেকোনো একটি দুর্ঘটনার প্রাথমিক চিকিৎসা অভিনয় করে দেখাও ৷ |
পাঠ- ঠ-৬ : ব্যান্ডেজ : ড্রেসিংকে ঠিকমতো ধরে রাখার জন্য ক্ষতস্থানে ব্যান্ডেজ করা হয়। ব্যান্ডেজ করার সময়
সব সময় মনে রাখতে হবে-
১। ব্যান্ডেজ যেন পুরো ড্রেসিংটাকে ধরে রাখতে পারে ।
২। ব্যান্ডেজ যেন আলগা না হয় বা বেশি জোরে লাগানো না হয় ।
৩। আহত অঙ্গের তুলনায় ব্যান্ডেজের মাপ যেন বেশি চওড়া বা বেশি সরু না হয়। ব্যান্ডেজ বিভিন্ন মাপের
হয়। আহত অঙ্গ অনুযায়ী নির্দিষ্ট মাপের ব্যান্ডেজের ব্যবস্থা করতে হবে।
৪। সাধারণ ক্ষেত্রে শক্ত কাপড়ের ব্যান্ডেজই ব্যবহার করা ভালো।
৫। বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে ইলাস্টিক (Elastic) ক্রেপ ব্যান্ডেজ ব্যবহার করা হয়।
ব্যান্ডেজ তিন প্রকার
১। ট্রায়াঙ্গুলার বা ত্রিকোণাকৃতি ব্যান্ডেজ (Traiangular Bandage)
২। রোলার ব্যান্ডেজ (Rollar Bandage )
৩। বিশেষ ব্যান্ডেজ- যেমন মাল্টি টেইল (Multi tail) ব্যান্ডেজ।
ট্রায়াঙ্গুলার বা ত্রিকোণাকৃতি ব্যান্ডেজ (Triangular Bandage ) : প্রাথমিক চিকিৎসার ক্ষেত্রে এটি বিশেষভাবে ব্যবহার করা হয়। একটি চারকোনা কাপড়ের মাঝখান দিয়ে কোনাকুনিভাবে কেটে নিলে ত্রিভুজ ব্যান্ডেজ তৈরি হবে, যার মাপ হবে মোট ৪২ ইঞ্চির মতো। ১ মিটার মাপের কাপড় নিলেও চলবে।
রোলার ব্যান্ডেজ ( Rollar Bandage ) : সাধারণত হাসপাতালে বা অভিজ্ঞ প্রাথমিক চিকিৎসকেরা রোলার ব্যান্ডেজ ব্যবহার করে। রোলার ব্যান্ডেজ বিভিন্ন আকৃতির হয়। এটি এক ইঞ্চি চওড়া থেকে ছয় ইঞ্চি পর্যন্ত চওড়া হয়। খেলোয়াড়দের দেহে আঘাত লাগলে ক্রেপ রোলার ব্যান্ডেজ ব্যবহার করা হয়।
মাল্টি টেইল ব্যান্ডেজ (Multi tail Bandage) : অনেক লেজবিশিষ্ট ব্যান্ডেজকে মাল্টি টেইল বা বহু
প্রাপ্তিক ব্যান্ডেজ বলে, যা দেখতে "T" আকৃতির হয়।
হাভের ব্যাভেজ (Hand Bandage) : হাতের ক্ষতস্থানে ড্রেসিংয়ের উপর ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে রোলার ব্যান্ডেজ বাঁধতে হয়। ড্রেসিং ঢেকে গেলে ব্যান্ডেজ শেষ হবে এবং সেফটিপিন দিয়ে এঁটে দিতে হবে। ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ড্রেসিংয়ের উপরে কীভাবে ব্যান্ডেজ করা হচ্ছে তা দেখানো হলো-
মাথার ব্যাভেজ (Skull Bandage) : মাথার খুলিতে আঘাত লাগলে ক্ষতস্থানে রিং প্যাড দিয়ে ঢেকে একটা ত্রিকোণ ব্যান্ডেজ নিয়ে মাথার চারদিকে ঘুরিয়ে কপালের উপর বাঁধতে হবে।
১। মাথায় চওড়া ব্যান্ডেজ ব্যবহার করতে হয়।
২। কপালের ক্ষতস্থান থেকে ব্যান্ডেজ শুরু করতে হয়।
৩। ধীরে ধীরে ব্যান্ডেজ পেঁচিয়ে ড্রেসিং ঢেকে দিতে হবে।
৪। কপালের ব্যান্ডেজ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে বাঁধতে হবে।
চোয়ালের ব্যান্ডেজ (Jaw Bandage ) : T ব্যান্ডেজ একটি বিশেষ ধরনের ব্যান্ডেজ, যাতে দুটি প্রান্তের বদলে তিনটি প্রাপ্ত থাকে। বিশেষ করে চোয়ালে এ বাজে ব্যবহৃত হয়। এই ব্যান্ডেজ দ্বারা চোয়ালে ব্যান্ডেজ কীভাবে শুরু করা হয় এবং কীভাবে শেষ হবে চিত্রে দেখানো হলো।
কাজ-১ : ব্যান্ডেজ করার সময় কী কী জিনিস মনে রাখতে হবে তা লেখ । কাজ-২ : স্কাল ও জ ব্যান্ডেজ কীভাবে বাঁধতে হয় তা শ্রেণিকক্ষে অনুশীলন করে দেখাও। |
পাঠ-৭ : আর্ম সিং ও কলার এন্ড কাফ স্লিং : হাতের কোনো হাড় ভেঙে গেলে বা হাতে জোরে আঘাত লাগলে তাকে অনড় করে ঝুলিয়ে রাখা হয়। এই ঝুলিয়ে রাখার জন্য ব্যান্ডেজ দিয়ে যে বাঁধন দেওয়া হয় তাকে স্লিং বলে।
আর্ম স্লিং : সম্পূর্ণ বাহু বেঁধে ঝুলিয়ে রাখাকে স্মল আর্ম সিং বলে। বাহুর অগ্রভাগ আরামে ঝুলিয়ে রাখার জন্য আম স্লিংয়ের প্রয়োজন। একটি নির্ভাজ ত্রিকোণ ব্যান্ডেজ নিয়ে তার এক প্রান্ত কাঁধের উপর স্থাপন করতে হবে। গলার পিছন দিক দিয়ে ঘুরিয়ে আহত অংশের কাঁধের দিকে আনতে হবে এবং বুকের সম্মুখভাগে অন্য প্রান্তটি ঝুলিয়ে দিতে হবে।
অতঃপর ব্যান্ডেজের মধ্যস্থলে আহত বাহুখানি রেখে শীর্ষদিক কনুইয়ের পিছন দিকে নিয়ে যেতে হবে। এবার দ্বিতীয় প্রান্তটিকে প্রথমটির সাথে বেঁধে দিতে হবে। শীর্ষদিক কনুই পর্যন্ত ভাঁজ করে এনে দুটি সেফটিপিনের সাহায্যে ব্যান্ডেজের সম্মুখভাগ সংযুক্ত করে দিতে হবে।
কলার এন্ড কাফ স্লিং : হাতের কব্জি ঝুলিয়ে রাখার জন্য কলার এন্ড কাফ স্লিং ব্যবহার করা হয়। এই সিং ব্যবহার করতে হলে আঙ্গুলগুলো অপর কাঁধ স্পর্শ করতে পারে এমনভাবে কনুই বেঁধে হাতটি বুকের উপর রাখতে হবে। অতঃপর হাতের কব্জিতে ব্যান্ডেজ দিয়ে ক্লোভ হিচ গিট দিতে হবে। ব্যান্ডেজের শেষ প্রাপ্ত এর সাথে বেঁধে গলায় ঝুলিয়ে দিতে হবে। একটি সরু ব্যান্ডেজ দিয়ে ক্লোভ হিচ প্রস্তুত করতে হবে। দুটি লুপ তৈরি করে দ্বিতীয়টি প্রথমটির উপর রাখতে হবে। অতঃপর উপরের লুপটি প্রথমটির পিছন দিয়ে ক্লোভ হিচ প্রস্তুত করতে হবে। তারপর হাতের কব্জির ভিতর দিয়ে শক্ত করে গলার সাথে বেঁধে দিতে হবে।
কাজ-১ : আর্ম স্লিং ও কলার এন্ড কাফ স্লিং অনুশীলন করে দেখাও। কাজ-২: একে অপরকে আর্ম স্লিং ও কলার এন্ড কাফ স্লিং বেঁধে দেখাও । |