মুক্তি বেশিরভাগই কেনা পোশাক পরে এবং বরাবরই কেনা পোশাকে নানাবিধ সমস্যা ধরা পরে। এতে সে খুবই বিরক্ত হয়। বান্ধবীর পরামর্শে এবার সে দর্জির তৈরি পোশাক পরে। পোশাকটি পরে সে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে।
মুক্তির ক্রয়কৃত পোশাকে কোনটি বজায় থাকে না?
পরিবারের পোশাকের চাহিদা মেটানোর জন্য সদস্যদের সংখ্যা, চাহিদার ধরন, উপলক্ষ, আবহাওয়া, আরাম ও
সৌন্দর্য, যত্নের সুবিধা ইত্যাদি নানা বিষয় বিবেচনা করে পোশাক ক্রয়ের পরিকল্পনা করা হয়। বাজারে বিভিন্ন
সাইজের, বিভিন্ন ডিজাইনের ও বিভিন্ন মূল্যের তৈরি পোশাক আজকাল পাওয়া যায়। যখন পোশাকের চাহিদা
যেটাতে তৈরি পোশাক ক্রয় করা হয় তখন কয়েকটি বিষয় না দেখে ক্রয় করলে পোশাক পরিধানকারীর আরাম
ও সৌন্দর্য বাধাপ্রাপ্ত হয়। সেগুলো হলো-
পোশাকের স্টিচিং অর্থাৎ সেলাই
ফিটিং অর্থাৎ দেহাকৃতির সাথে মানানসই কিনা
ফিনিশিং অর্থাৎ পোশাকের সামগ্রিক সৌন্দর্য।
মূল্য অর্থাৎ যে দামে ক্রয় করা হচ্ছে
পোশাকের স্টিচিং-
স্টিচিং বলতে ক্রয় করা পোশাকটির সেলাইয়ের মান ও প্রকৃতির ধরন বোঝানো হয়েছে। স্টিচিং-এর উপর
পোশাকের স্থায়িত্ব নির্ভর করে। উন্নত স্টিচিং-এর বৈশিষ্ট্য হচ্ছে-
-সেলাইয়ের সুতা মজবুত হবে।
-সুতার রং পাকা হবে।
-পোশাকের রঙের সাথে সুতার রং মানানসই হবে।
-সেলাই পরিচ্ছন্ন হবে অর্থাৎ জট বাধা কিংবা ভাঙা ভাঙা হবে না।
-পোশাকের যেসব স্থানে চাপ পড়ে সেসব স্থানে দুইবার সেলাই থাকবে।
-সেলাইয়ের বাইরের অংশে ওভার লকিং সেলাই থাকবে। এর ফলে পোশাকের প্রাপ্তধার থেকে সুতা
উঠতে পারে না।
-ওড়নার ধারে হেম অথবা মেশিনে সেলাই করা থাকবে।
সেলাইয়ের ধারে কমপক্ষে ১.৩ সে. মি. বা ০.৫ ইঞ্চি কাপড় থাকতে হবে। তা না হলে পরিধানের
পর চাপে সেলাই ফেসে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
ফিটিং-
তৈরি পোশাক কেনার সময় পরিধানকারীর দেহাকৃতির সাথে মানানসই নকশা, আকার ও আনুসঙ্গিক বিষয়
বিবেচনা করতে হয়। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে এবং পরিধানকারীর বয়স, পেশা, দেহাকৃতির ধরন ইত্যাদির
সমন্বয় সাধন করে পোশাক ক্রয় করা উচিত। পোশাকের ফিটিং এমন হওয়া বাঞ্ছনীয় যাতে উঠা-বসা,
হাঁটা-চলা ইত্যাদি নৈমিত্তিক কাজে অসুবিধা না হয়। এজন্য পরিধানকারীর দেহের প্রকৃত মাপের সাথে কিছু
বাড়তি মাপ যোগ করা হয়। যেমন- বুকের প্রকৃত মাপ ৩২ ইঞ্চি বা ৮১.২৮ সে.মি. হলে, তার সাথে সেলাই-এর
জন্য ১ ইঞ্চি বা ২.৫৪ সে.মি. এবং আরামদায়কতার জন্য ২ ইঞ্চি বা ৫.০৮ সে.মি. যোগ দেওয়া যেতে পারে।
এছাড়া পোশাক ক্রয়ের সময় দেখতে হবে পোশাকের কোথাও যেন কোনো কৃষ্ণন টান বা ঢিলা না থাকে।
তৈরি পোশাকের ক্ষেত্রে ফিনিশিং বলতে পোশাকটির সেলাইয়ের মান, নকশার উপযুক্ততা, ফিটিং ইত্যাদির
সমন্বিত অবস্থাকে বোঝায়। ফিনিশিং মূল্যায়নের জন্য তৈরি পোশাকে সংযোজিত লেবেল অনেকভাবে
পর্যবেক্ষণ করতে হয়। লেবেলের মাধ্যমে মূল্য, সাইজ, যত্নের উপায় ইত্যাদি বিষয়ে তথ্য জানা যায়।
মূল্য-
পরিবারের কর বা পোশাক ক্রয়ের জন্য মোট খরচের নির্দিষ্ট পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়। এর ফলে পারিবারিক
বাজেটের নির্ধারিত অংকের টাকার মধ্যেই পোশাক ক্রয়ের চেষ্টা করতে হয়। নির্দিষ্ট বাজেটের উপর ভিত্তি
করে পোশাক ক্রয় করা হলে তা পরিবারের অর্থ ব্যবস্থাপনার উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে না।
বর্তমানে তৈরি পোশাকে যুগান্তকারী পরিবর্তন ও উৎকর্ষ সাধিত হয়েছে। এর ফলে পছন্দসই তৈরি পোশাকটি
বেশ চিন্তাভাবনা করে ক্রয় করতে হয়। দোকানে যখন কম ভিড় থাকে তখন হাতে সময় নিয়ে অনেক দোকান
ঘুরে মূল্য যাচাই করে দেখতে হয়। প্রয়োজনে অভিজ্ঞজনের সাথে তথ্য যাচাই করে নেওয়া যায়। এতে ঠকার
সম্ভাবনা থাকে না।
আমাদের দেশে Fixed Price অর্থাৎ নির্ধারিত মূল্যের দোকান তুলনামূলকভাবে কম। তাই ক্রয়ের সময়
দরদাম করতে হয়। পরিচিত দোকান এবং সুনাম আছে এমন সব দোকান থেকে কেনা ভালো। এতে
একদিকে যেমন ঠকার ভয় থাকে না, অপর দিকে কাপড় ও পোশাকের মানও ভালো হয়। এছাড়া বড় বড়
দোকানে বছরে ২-১ বার মূল্যহ্রাসে তৈরি পোশাক বিক্রয় করা হয়। ঐ সময় ভালোভাবে দেখে কিনতে পারলে
মূল্যের সাশ্রয় হয়।
কাজ পোশাক ক্রয়ের বিবেচ্য বিষয়গুলো বর্ণনা কর।
অনুশীলনী
বহুনির্বাচনি প্রশ্ন
১। পোশাকের স্থায়িত্ব কিসের উপর নির্ভর করে?
(খ) সৌন্দর্য
(ক) রং
(খ) স্টিচিং
(গ) মূল্য
২। বক্সের গুণাগুণ সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বিবরণ কোথায় থাকে?
(খ) রঙে
(ক) সুতায়
(খ) জমিনে
(গ) লেবেলে
নিচের অনুচ্ছেদটি পড় এবং ৩ ও ৪ নং প্রশ্নের উত্তর দাও
মুক্তি বেশির ভাগই কেনা পোশাক পরে এবং বারবারই কেনা পোশাকে নানাবিধ সমস্যা ধরা পড়ে। এতে
সে খুবই বিরক্ত হয়। বাঘবীর পরামর্শে এবার সে দর্জির তৈরি পোশাক পরে। পোশাকটি পরে সে
স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে।
৩। মুক্তির ক্রয়কৃত পোশাকে কোনটি বজায় থাকে না?
(ক) মূল্য
(খ) আধুনিকতা
(গ) পোশাকের আরাম
(ঘ) ডিজাইন
৪। মুক্তির দর্জির পোশাক ও ক্রয়কৃত পোশাকের পার্থক্য হলো-
(i) স্টিচিং
(ii) ফিটিং
(iii) ফিনিশিং
নিচের কোনটি সঠিক?
(*) iii
(গ) ii ও iii
(খ) i ও iii
(ঘ) i, ii ও iii
সৃজনশীল প্রশ্ন
১। তন্বী ঈদের সময় তাড়াহুড়া করে বেশি দাম দিয়ে তৈরি পোশাক কেনে। খেতে বসে তরকারির ঝোল পড়ে
কাপড়টি নষ্ট হয়। ধোয়ার পর সে দেখতে পেল কাপড়টির সেলাইগুলো খুলে খুলে গেছে। সুতারও রং
উঠে গেছে। তার পুরা অর্থটাই বিফলে যায়।
পোশাকের স্থায়িত্ব কিসের উপর নির্ভর করে?
(খ) স্টিচিং বলতে কী বোঝায়?
(গ) তন্বীর কেনা পোশাকের ত্রুটিটি ব্যাখ্যা কর।
(ঘ) বাজারদর যাচাই করে পোশাক ক্রয় করলে তরীকে উদ্দীপকে উল্লিখিত পরিস্থিতিতে পড়তে হতো
না-তুমি কি একমত? উত্তরের স্বপক্ষে যুক্তি দাও।
২। সায়মা প্রতিবারই পোশাক কিনে সমস্যায় পড়ে। সেদিন ক্রয়কৃত জামাটি কেনার পর দেখে গায়ে ওটা বেশ
চাপা। কাঁধগুলো বড়, উঠা-বসা করতে কষ্ট হয়। এছাড়াও পোশাকটির বাহ্যিক অমসৃণতা ধরা পড়ে।
পোশাক বদলাতে গিয়ে দেখতে পায় পোশাকের রং গায়ে লেগেছে। ওর খালা পোশাকের লেবেল দেখে
পোশাক ক্রয় করার পরমর্শ দেন। পোশাক ক্রয়ে স্টিচিং, ফিটিং ও লেবেল খুবই গুরুত্বপূর্ণ জিনিস।
(ক) তৈরি পোশাক শিল্পে ফিনিশিং কী?
(খ) পরিধানকারীর মাপের সাথে বাড়তি মাপ যোগ করা হয় কেন?
(গ) পোশাক ক্রয়ে সায়মার দৈহিক ফিটিং-এর জন্য লক্ষণীয় বিষয়-ব্যাখ্যা কর।
(ঘ) খালার পরামর্শটি পোশাক ক্রয়ে গুরুত্বপূর্ণ— উদ্দীপকের আলোকে বিশ্লেষণ কর।