বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে আয়োজিত ‘কালবৈশাখী' চিত্রপ্রদর্শনীটি কোথায় অনুষ্ঠিত হয়েছিল?
এ অধ্যায় পাঠ শেষে আমরা-
• তৎকালিন পূর্ব-পাকিস্তানের সাথে পশ্চিম-পাকিস্তানের সাংস্কৃতিক ভিন্নতা বর্ণনা করতে পারব।
• স্বাধীনতা যুদ্ধ ও পূর্ব-পাকিস্তানের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলনে চারুশিল্পীদের ভূমিকা বর্ণনা করতে পারব।
আমাদের ভাষা ও সংস্কৃতিতে চারু ও কারুশিল্পীদের অবদান ব্যাখ্যা করতে পারব
এক
বাংলাদেশের অভ্যুদয় হঠাৎ করে একদিনে শুরু হয়নি। ধারাবাহিকভাবে দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের মানুষ নিজেদের স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকার জন্য সংগ্রাম করে এসেছে। ব্রিটিশরা দুশো বছর এদেশ শাসনের পর ১৯৪৭ সালে সম্পূর্ণ ভারত বা ভারতবর্ষ ভাগ হয়ে দুটি দেশ হয়। মুসলমান-অধ্যুষিত বা ইসলাম ধর্মীয় মানুষদের জন্য পাকিস্তান- আরেকটি ভারত নামেই স্বাধীনতা লাভ করে ৷
পাকিস্তানের আবার দুটি অংশ পূর্ব-পাকিস্তান ও পশ্চিম-পাকিস্তান। ভারতবর্ষের মানচিত্র দেখলে পরিষ্কারভাবে বোঝা যাবে ভারতবর্ষের পশ্চিম কোণে অবস্থিত পশ্চিম-পাকিস্তান এবং প্রায় সর্ব পূর্বে পূর্ব- পাকিস্তান। দুই অঞ্চলের মধ্যে ছিল বিশাল দূরত্ব।
ভারতবিভাগের সেই সময় ধর্মের দোহাই দিয়ে মানুষের মূল্যহীনতার চরম বিপর্যয় ঘটেছিল যার নাম সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা। পূর্ব-পাকিস্তান থেকে চলে যেতে বাধ্য হলো হিন্দুরা। অহেতুক হত্যা, নির্যাতন, জ্বালাও পোড়াও করে লক্ষ লক্ষ নিরীহ হিন্দু-মুসলমানকে হত্যা করা হলো। এই দাঙ্গা ও নিরীহ মানবসন্তান হত্যা ভারত-পাকিস্তানের স্বাধীনতার ইতিহাসে এক কলঙ্কময় ঘটনা ।
পূর্ব-পাকিস্তান ও পশ্চিম-পাকিস্তান একই দেশ হলেও একমাত্র ধর্ম ছাড়া আর কোনোকিছুতেই দুই দেশের মধ্যে মিল ছিল না। পূর্ব-পাকিস্তানের বেশিরভাগ মানুষের ভাষা বাংলা। ৯৯ ভাগ মানুষই বাংলায় কথা বলে ৷ একমাত্র দেশভাগের সময় ও দাঙ্গায় যারা ভারতের অন্যান্য অঞ্চল থেকে চলে আসে তারা কথা বলত উর্দু ও হিন্দি ভাষায়। অল্প কয়েকদিনে তারাও বাংলা শিখে ফেলল। পোশাক, খাওয়াদাওয়া, জীবনযাপন, সংস্কৃতি সবকিছুই ভিন্ন। এমনকি জলবায়ু ও প্রাকৃতিক পরিবেশও পশ্চিম-পাকিস্তান থেকে ভিন্ন।
পশ্চিম-পাকিস্তান আয়তনে পূর্ব-পাকিস্তানের চেয়ে অনেক গুণ বড় হলেও সেখানে লোকসংখ্যা ছিল পাকিস্তানের মোট জনসংখ্যার ৪৫ ভাগ। পূর্ব-পাকিস্তানে ৫৫ ভাগ। পশ্চিম-পাকিস্তানের ৪টি প্রদেশে ছিল ভিন্ন ভিন্ন ভাষা। পাঞ্জাবি, সিন্ধি, বেলুচ, পশতু ও উপজাতীয়দের মিশ্রিত ভাষা। মাত্র ১৫ ভাগ মানুষ কথা বলে উর্দু ভাষায়। এমন একটি অবস্থায় পাকিস্তানের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম নেতা ও তৎকালীন গভর্নর জেনারেল মহম্মদ আলি জিন্নাহ ঢাকায় এসে ঘোষণা দিলেন পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে একমাত্র উর্দু। জোরালো প্রতিবাদ জানাল পূর্ব-পাকিস্তানের ছাত্র-জনতা— শুধু উর্দু হবে কেন? ৫৫ ভাগ মানুষ বাংলায় কথা বলে। বাংলাকেও উর্দুর পাশাপাশি রাষ্ট্রভাষা করা হোক ।
কিন্তু পাকিস্তানের শাসকেরা পূর্ব-পাকিস্তানের বাঙালিদের এই ন্যায্য অধিকারের কোনো গুরুত্ব দিল না। বরং অবহেলাই করল । ধীরে ধীরে দেখা গেল স্বাধীন দেশের মানুষদের সমান অধিকার থাকলেও শুধু ভাষার বিষয়েই নয়, সব ক্ষেত্রেই শাসকরা পূর্ব-পাকিস্তানের মানুষদের অবহেলা করছে। চাকরির ভালো ও উচ্চপদগুলো পশ্চিম-পাকিস্তানের মানুষদের দিচ্ছে। বাঙালিরা উপযুক্ত ও গুণী হলেও তাদের বঞ্চিত করে পশ্চিম- পাকিস্তানের অপেক্ষকৃত কম অভিজ্ঞদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে বসিয়ে বাঙালিদের অপমান করে যাচ্ছে। সেনাবাহিনী, পুলিশবাহিনীতে বেশিরভাগই পশ্চিম-পাকিস্তানের মানুষকে ঢোকানো হচ্ছে। কল-কারখানা, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান সর্বত্রই পশ্চিম-পাকিস্তানের মানুষদের একরকম জোর করে বসিয়ে দিয়ে তাদের মর্যাদা দিয়ে পূর্ব-পাকিস্তানের মানুষদের উপর শোষণ, আধিপত্য বিস্তারের ব্যবস্থা চলতে থাকে ৷
বাংলা ভাষাকে বিকৃত করার চেষ্টা করে নানাভাবে। বাংলা গান, রবীন্দ্রসংগীত এবং বাঙালির অন্যান্য সামাজিক ও সাংস্কৃতিক চর্চার উপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। শুধু তা নয়, অনেক সময় শাসকগোষ্ঠীর পেটোয়া বাহিনী এর জন্য অত্যাচার চালায় সাধারণ মানুষদের ওপর। শেষ পর্যন্ত ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষার দাবিতে রাজপথে বের হওয়া ছাত্র-জনতার মিছিলে পাকিস্তানি পুলিশ বাহিনীর গুলিতে শহিদ হন- সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিকসহ আরো অনেকে।
এভাবে ১৯৪৮, ১৯৫২, ১৯৫৪, ১৯৫৬, ১৯৫৮ এবং পুরো ষাটের দশক পূর্ব-পাকিস্তানের মানুষ তথা বর্তমান বাংলাদেশের মানুষ তাদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের জন্য বার বার প্রতিবাদ করেছে, আন্দোলন করেছে, সংগ্রাম করেছে। ফলে অনেক রাজনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ, সংস্কৃতিসেবী, ছাত্র-জনতা, পাকিস্তানের স্বৈরশাসকবর্গের দ্বারা বারে বারে নির্যাতিত হয়েছে, মিথ্যা অভিযোগ এনে জেলে পুরেছে, বহু নেতা ও সাধারণ মানুষকে গুলি করে ও নানাভাবে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করেছে। অনেক জনপদ আগুন জ্বালিয়ে ধ্বংস করে দিয়েছে। কিন্তু বাঙালিরা শত অত্যাচারেও কখনো পিছিয়ে যায়নি। ১৯৪৮ থেকে ১৯৭১ এই ২৩ বছর সংগ্রাম চালিয়ে শেষ পর্যন্ত ১৯৭১ সালে ৯ মাস অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ করে বাঙালিরা পূর্ব-পাকিস্তানকে স্বাধীন করেছে— নতুন দেশের নাম হয়েছে বাংলাদেশ । আর এই ধারাবাহিক সংগ্রাম ও শেষ পর্যন্ত স্বাধীনতা যুদ্ধে অনেক রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে যাঁর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে সম্ভব হয়েছিল— তিনি সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, যিনি বাঙালি জাতির পিতা ।
কাজ : পূর্ব এবং পশ্চিম-পাকিস্তানের সংস্কৃতির পার্থক্য দেখিয়ে ৫টি বাক্য লেখ । |
দুই
চারু ও কারুকলা ইনস্টিটিউট
পূর্ব-পাকিস্তান বা বাংলাদেশে ছবি আঁকার প্রতিষ্ঠান চারু ও কারুকলা ইনস্টিটিউট (বর্তমানে চারুকলা অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) প্রতিষ্ঠিত হয় ১৫ই নভেম্বর ১৯৪৮ সালে। প্রতিষ্ঠাতা শিল্পীদের মধ্যে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন ও কামরুল হাসানের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর হৃদ্যতার সম্পর্ক ছিল কলকাতা থেকেই। চারুকলার প্রতিষ্ঠাতা শিল্পী জয়নুল আবেদিন, কামরুল হাসান, শফিউদ্দিন আহমদ, খাজা শফিক আহমেদ, শফিকুল আমিন, মোহাম্মদ কিবরিয়া এঁরা সবাই চিন্তায় ও চেতনায় ছিলেন প্রগতিশীল, অসাম্প্রদায়িক এবং বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও সচেতন। তাঁরা শুধু ছবি আঁকা বিষয়টি হাতে-কলমে শিখবে সেজন্যে শিল্পী বানাবার জন্য চারুকলা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেননি। তাঁরা চেয়েছেন এই চারুকলা ইনস্টিটিউটকে কেন্দ্র করে ছবি আঁকা, ভাস্কর্য ও অন্যান্য শিল্পের মাধ্যমে নানারকম সংস্কৃতি ও ভাষার চর্চা ও সম্মান ইত্যাদিও প্রসারিত হবে। বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে বাঙালির নিজস্ব ঐতিহ্য সম্পর্কে সচেতনতা বাড়বে। চারুকলা চর্চার প্রথম দিক থেকেই যাঁরা ছাত্র হিসেবে ভর্তি হয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে অনেকেই প্রতিষ্ঠাতা শিল্পীদের চিন্তা ও চেতনাকে ধারণ করেই শিল্পচর্চা করেছেন।
তাই দেখা যায়, ১৯৪৮ থেকে ১৯৫২-র ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ থেকে ১৯৫৮ পর্যন্ত রাজনৈতিক পরিবর্তন, ষাটের দশকের শুরুতেই আইউব খানের মার্শাল ল-বিরোধী আন্দোলন ও চাপিয়ে দেওয়া হামিদুর রাহমান শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে আন্দোলন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ৬ দফা দাবি নিয়ে আন্দোলন, ১৯৬৮ ও ৬৯-এ বিশাল গণআন্দোলন করে স্বৈরাচারী আইউবের পতন ঘটানো ইত্যাদি সব সংগ্রামে দেশের ছাত্র-জনতার সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেছেন এদেশের চিত্রশিল্পীরা। ১৯৭০ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে তৎকালীন আওয়ামী লীগ তথা বাংলার মানুষ পাকিস্তানের নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়লাভ করে। তারপর বাঙালির হাতে পাকিস্তানের কর্তৃত্ব না দেওয়া ও পরবর্তী অসহযোগ আন্দোলন, এবং সবশেষে ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধ— সর্বত্রই চিত্রশিল্পীরা প্রত্যক্ষভাবে কখনো কখনো পরোক্ষভাবে অংশ নিয়েছে।
শিল্পগুরু জয়নুল আবেদিন, কামরুল হাসানসহ কাইয়ুম চৌধুরী, হাশেম খান, নিতুন কুণ্ডু, ইমদাদ হোসেন,
প্রাণেশ মণ্ডল, প্রফুল্লরায়, রফিকুন নবী, আনোয়ার হোসেন, গোলাম সারোয়ার, বিজয় সেন, মাহমুদুল হক,
নাসির বিশ্বাস, বীরেন সোম, মঞ্জুরুল হাই, আবুল বারক আলভী, রেজাউল করিম, সৈয়দ আবদুল্লাহ খালেদ, এম এ খালেদ, শাহাদত চৌধুরী, মাহবুবুল আমিন, স্বপন চৌধুরী, শাহাবুদ্দিন প্রমুখ শিল্পীরাই আন্দোলনে প্রত্যক্ষভাবে কাজ করেছেন। একদিকে তাঁরা তাঁদের তুলিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছেন আবার কোনো কোনো শিল্পী আগ্নেয়াস্ত্র নিয়েও সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। যুদ্ধকালীন প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রকাশিত শিল্পী কামরুল হাসানের আঁকা ‘এই জানোয়ারদের হত্যা করতে হবে', শিল্পী প্রাণেশ মণ্ডলের আঁকা বাংলার মায়েরা- মেয়েরা সকলেই মুক্তিযোদ্ধা' কিংবা শিল্পী দেবদাস চক্রবর্ত্তীর আঁকা ‘বাংলার হিন্দু, বাংলার বৌদ্ধ, বাংলার খ্রিষ্টান, বাংলার মুসলমান, আমরা সবাই বাঙালি' । এই পোস্টারগুলো মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল ও প্রেরণার অন্যতম উৎস হিসেবে কাজ করেছে।
কাজ : চারু ও কারুকলা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠায় শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের সাথে আর কোন কোন শিল্পী যুক্ত ছিলেন লেখ । |
তিন
শহিদমিনার ও ৬ দফা
১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে পটুয়া কামরুল হাসান এবং সেই সময়ে ছাত্র ও পরে শিল্পী মুর্তজা বশীর, ইমদাদ হোসেন, আবদুর রাজ্জাক, সিরাজী, কাজী আবদুর রউফ, আবদুর সবুর, আমিনুল ইসলাম প্রমুখের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। শিল্পী বিজন চৌধুরী ও মুর্তজা বশীর ভাষা আন্দোলন ও শাসকদের নির্যাতনের বিরুদ্ধে ড্রইং ও কাঠ খোদাই, লিনোকাট মাধ্যমে বেশ কিছু ছবি তৈরি করেছিলেন। স্বশিক্ষিত চিত্রশিল্পী কাজী আবুল কাশেম ‘দোঁপেয়াজা’ ছদ্মনামে ভাষা আন্দোলনবিষয়ক কার্টুন এঁকে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। শিল্পীদের এসব ছবি বাংলাদেশের ক্ষেত্রে, তথা নিজেদের অধিকার আদায়ে জনগণকে জাগিয়ে তোলার ক্ষেত্রে ইতিহাসের অংশ। শহিদমিনারের স্থপতিও একজন চিত্রশিল্পী। তিনি শিল্পী হামিদুর রহমান। তাঁকে সেই সময় সহযোগিতা করেছিলেন ভাস্কর নভেরা আহমেদ। ১৯৫৬ সালে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশের মানুষের অধিকার আদায়ের ক্ষেত্রে যেসব রাজনৈতিক দল আন্দোলন করে চলেছে— তাদের প্রচারে, পোস্টার আঁকা, কার্টুন আঁকা, প্রচারমূলক নানারকম ছবি আঁকা, ফেস্টুন ও ব্যানার তৈরি করা, বক্তৃতা ও আন্দোলনের মঞ্চসজ্জা, সবকিছুতে শিল্পীরা প্রত্যক্ষভাবে জড়িত থাকতেন। আওয়ামী লীগ, ন্যাপ, কমিউনিস্ট পার্টির মতো প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলসহ, ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়ন এবং সাংস্কৃতিক দল, ছায়ানট, উদীচী ও প্রগতিশীল নাট্যদলগুলোর সঙ্গে থেকে শিল্পীরা তাদের কাজে সহায়তা করতেন। শিশুসংগঠন খেলাঘর ও কচি-কাঁচার মেলার মাধ্যমে চিত্রশিল্পীরা শিশু চিত্রকলা ও অন্যান্য সংস্কৃতিচর্চার মাধ্যমে শিশুদের মধ্যে বাংলাদেশের অধিকার আদায় ও নিজেদের শিল্প, সাহিত্য ও ঐতিহ্য বিষয়ে আগ্রহী করে তুলেছিলেন।
বঙ্গবন্ধুর ৬ দফার লোগো, প্রচারের পোস্টার, মঞ্চসজ্জা করেছিলেন শিল্পী হাশেম খান। প্রতীকী মঞ্চসজ্জার নকশা প্রচ্ছদে ব্যবহার করে দৈনিক ইত্তেফাক ৬ দফার বিষয়ে বিশেষ সংখ্যা বের করে। ১৯৬৭ থেকে পরপর ৫ বছর ১৯৭১ পর্যন্ত। একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে চিত্রশিল্পীরা শহিদমিনারে বড় বড় ক্যানভাসে, পূর্ব- পাকিস্তান তথা বাংলাদেশের মানুষের অধিকার, শিক্ষা, বাণিজ্য, অর্থনীতি ও সংস্কৃতি ইত্যাদি ক্ষেত্রে পাক- শাসকগোষ্ঠীর বঞ্চনা ও বাঙালিদের ওপর নির্যাতনের বিষয়ে ছবি এঁকে প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করতেন। চিত্রপ্রদর্শনী শুধু গ্যালারিগৃহে নয়, জনতার জন্য গৃহের বাইরে যেমন— বিদ্রোহী স্বরবর্ণ, এই নামে ১৩টি স্বরবর্ণ, ছড়া ও ছবির একটি প্রদর্শনী জনগণের মধ্যে বিপুল সাড়া তুলেছিল। বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ক্ষেত্রে এই ধরনের চিত্রপ্রদর্শনী ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছিল।
দলীয় কাজ : বাংলাদেশের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে শিল্পীদের অবদান সম্পর্কে ১০টি বাক্যে তোমাদের মতামত তুলে ধর । |
চার
আলপনা
১৯৫৩ সাল থেকে প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে ভোরবেলা আলপনা আঁকা রাজপথে খালিপায়ে প্রভাতফেরি করে ভাষাশহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হতো। পাক-সরকার বাধার সৃষ্টি করল। আলপনা আঁকা ফর্মা-২, চারু ও কারুকলা- অষ্টম শ্রেণি
যাবে না। আলপনা হিন্দু ধর্মের বিষয়, মুসলমানদের জন্য আলপনা আঁকা নিষেধ ইত্যাদি। কিন্তু এসব ছিল পাক-শাসকগোষ্ঠীর ধর্মের দোহাই দিয়ে বাঙালিদের সংস্কৃতিচর্চায় বাধা দেওয়া। চিত্রশিল্পীরা পাক -- শাসকগোষ্ঠীর এসব মিথ্যা যুক্তি মানল না। নিষেধ থাকা সত্ত্বেও চিত্রশিল্পীরাই বিশেষ বিশেষ রাস্তায় আলপনা আঁকত। চিত্রশিল্পীরাই আলপনাকে যথাযথ গুরুত্ব দিয়েছে। আলপনা ব্যবহার বাঙালি সংস্কৃতির একটি বিশেষ বিষয়। সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও জাতীয় বিশেষ বিশেষ অনুষ্ঠানে বা যে-কোনো শুভ কাজে আলপনার ব্যবহার এখন স্বাভাবিক সংস্কৃতি। যেমন— বিজয়দিবসে, স্বাধীনতা দিবসে, ঈদ উৎসবে, বিয়ের অনুষ্ঠানে, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আনন্দ অনুষ্ঠানে, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে, জন্মদিনের অনুষ্ঠানে আলপনার ব্যবহার সুন্দর ও শুদ্ধভাবে কাজ করার অনুপ্রেরণা। বাংলাদেশের চিত্রশিল্পীরাই আলপনাকে বাঙালির সমাজজীবনে স্বাভাবিক সংস্কৃতিচর্চা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে যা বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
দলীয় কাজ : আমরা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আলপনা করি কেন? |
পাঁচ
নবান্ন ও বাংলা নববর্ষ
১৯৭০ সালের ১২ই ফেব্রুয়ারি। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের নেতৃত্বে ১০/১২ জন তরুণ চিত্রশিল্পী, কবি ও সাংবাদিকের উদ্যোগে শিল্পকলা একাডেমিতে বিশাল আকারে অনুষ্ঠিত হয় নবান্ন চিত্রপ্রদর্শনী।
ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশ । অগ্রহায়ণ মাসে কৃষক ফসল (ধান) কেটে ঘরে তোলে। সারা বছরের পরিশ্রম শেষে চাষির ঘরে-ঘরে আনন্দ। নতুন ধানের পিঠা, পায়েস খাওয়া, আনন্দ অনুষ্ঠান করা, যেমন— কবিগানের লড়াই, হাডুডু, দাড়িয়াবান্দা খেলা, যাত্রাপালার আয়োজন এবং কখনো কখনো মেলা। গ্রামের সেই নবান্ন উৎসবকে নতুনরূপে শহরে পালন করতে শুরু করে চিত্রশিল্পীরা। ছবি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বাংলা নববর্ষে ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা' এঁকে বিশাল প্রদর্শনী হলো। শিল্পাচার্য তাঁর বিখ্যাত নবান্ন শীর্ষক নামের দীর্ঘ স্কুল ছবিটি এই নবান্ন প্ৰদৰ্শনী উপলক্ষেই আঁকলেন, যার দৈর্ঘ্য ৬০ ফুট এবং প্রস্থ ৬ ফুট।
নবান্ন প্রদর্শনী জনগণের মধ্যে বিপুল সাড়া জাগিয়েছিল। শিল্পীরা তারপরই করলেন- বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে কালবৈশাখী নামে একটি চিত্রপ্রদর্শনী। বর্তমান চারুকলা অনুষদে এই প্রদর্শনীটিও মানুষের মন জয় করেছিল। শিল্পীরা যেসব ছবি এঁকেছিলেন তার বিষয় ছিল বাংলার মানুষের সুখ-দুঃখ, চিন্তা, স্বপ্ন, ষড়ঋতুতে প্রকৃতির ভিন্ন ভিন্ন রূপ ইত্যাদি। সেই প্রদর্শনী থেকেই পরবর্তীকালে কিছুটা পরিবর্তন হয়ে রূপ নেয় বর্তমান পহেলা বৈশাখ অনুষ্ঠান ও মেলা। বর্তমানে নিয়মিতভাবেই বাংলা নববর্ষ ও নবান্ন উৎসব চারুকলার চত্বরে বিপুল আগ্রহ ও উদ্দীপনা নিয়ে ঢাকাসহ সারা দেশের মানুষ পালন করে যাচ্ছে। তাই সহজেই বলা যায় চিত্রশিল্পীদের চিন্তা-চেতনা ও শিল্পকর্মের মাধ্যম হিসেবে নববর্ষ উৎসব ও নবান্ন বাংলার মানুষকে নিজের দেশের প্রতি, নিজ সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতি ভালোবাসায় স্নিগ্ধ হতে ও গর্ববোধ করতে উদ্বুদ্ধ করেছে এবং চর্চার মাধ্যমে সব সময়ই করে যাচ্ছে।
বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে সেই সময়ে নবান্ন চিত্রপ্রদর্শনী ছিল বিশাল ও বিপ্লবী পদক্ষেপ। যাঁরা এই প্রদর্শনীর উদ্যোগ নেন তাঁদের জন্য ছিল অনেক বাধা ও ভয়ভীতি। সেই সময়ের পাকিস্তানি সামরিক সরকার এই ধরনের উদ্যোগকে মনে করত পাকিস্তানের আদর্শবিরোধী। অন্যদিকে কিছু সংগঠন ও ব্যক্তি অপপ্রচার করে বলতে লাগল এই প্রদর্শনীর পেছনে শিল্পাচার্য জয়নুল ও উদ্যোক্তা শিল্পীদের অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে, ইত্যাদি। কিন্তু শিল্পীরা অশেষ চেষ্টায় সব শিল্পীকে দিয়ে ছবি আঁকিয়ে এমন একটি প্রদর্শনী করলেন যা দেখে মানুষ বিস্মিত ও বিমোহিত। প্রায় হারিয়ে যাওয়া নবান্ন উৎসবের আনন্দকে শহরের মানুষদের নতুন করে মনে করিয়ে দিলেন শিল্পীরা। প্রায় সব শিল্পীই এঁকেছেন বাংলার মানুষের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা ও প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকার নানারকম চিত্র। অন্য দিকে আছে মহাজনের শোষণ ও নানাভাবে বঞ্চিত হওয়ার ছবি। বাংলাদেশের নদী-নালা, মাঠ-ঘাট ও বিভিন্ন ঋতুতে প্রকৃতির রূপবৈচিত্র্যের ছবি। নবান্ন চিত্রপ্রদর্শনীর সবচেয়ে বড় অর্জন শিল্পাচার্যের ৬০ ফুট লম্বা ছবি ।
ছবিটি কালো কালিতে জোরালোভাবে তুলিতে ড্রইং করে এঁকেছেন। তারপর সামান্য জলরঙের প্রলেপ দিয়েছেন। ছবি কালো রঙে হলেও আঁকার গুণে মনে হয় রঙিন ছবিই দেখছি। এত দীর্ঘ আকারের ছবি বাংলাদেশের আর কোনো শিল্পী করেননি। ছবিটি একটু মোটা কাগজে আঁকা। তাই গোলাকার ভাঁজ করে রাখতে হয়। শুধু প্রদর্শনীর সময় মেলে ধরতে হয়। ‘নবান্ন' স্কুল চিত্রটি শিল্পকলা জগতের মূল্যবান সম্পদ।
নবান্ন প্রদর্শনীর প্রধান উদ্যোক্তা ও উপদেষ্টা ছিলেন শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন। অন্যান্য সদস্যরা হলেন— শিল্পী হাশেম খান, শিল্পী রফিকুন নবী, লেখক ও শিল্পী বুলবন ওসমান, শিল্পী মঞ্জুরুল হক, আবুল বারক আলভী, বীরেন সোম, মতলুব আলী, শিল্পী ও সম্পাদক শাহাদত চৌধুরী, কবি ও সাংবাদিক মো. আকতার (আলবদরদের দ্বারা ১৯৭১-এ শহিদ) প্রমুখ ।
নবান্ন প্রদর্শনী উপলক্ষে 'নবান্ন' নাম দিয়ে দেশের খ্যাতনামা ও নবীন কবিদের কবিতা ও ছড়াসহ একটি পুস্তিকাও প্রকাশিত হয়েছিল।
কাজ : নবান্ন ও বাংলা নববর্ষে যেসব ছবি আঁকা হয়েছে সেসব বিষয় সম্পর্কে পাঁচটি বাক্য লেখ। |
ছয়
স্বাধীনতা ও বিপ্লবী চিত্রের মিছিল
১৯৭০ সালে পাকিস্তানের দুই অংশ মিলিয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি ভোট পেল আওয়ামী লীগ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে পুরো পাকিস্তানের সরকার গঠন করবে আওয়ামী লীগ। কিন্তু বেঁকে বসলেন তৎকালীন সামরিক সরকারপ্রধান জেনারেল ইয়াহিয়া ও পশ্চিম পাকিস্তানের নেতা জুলফিকার আলি ভুট্টো। অযৌক্তিকভাবে বললেন শেখ মুজিব ও আওয়ামী লীগকে সরকার গঠন করতে দেবেন না। সহজ অর্থ হলো বাঙালিরা ভোটে জিতলেও বাঙালিদের হাতে পাকিস্তানের একচ্ছত্র ক্ষমতা দেবেন না। ক্ষমতার অংশীদার তারাও হবে। ফলে বিক্ষোভের দাবানল জ্বলে উঠল সারা পূর্ব-পাকিস্তানে অর্থাৎ বর্তমান বাংলাদেশে। নিয়ম ও আইনের মধ্য দিয়েই নির্বাচন হয়েছে এবং আওয়ামী লীগ বা বাঙালিরা সবচেয়ে বেশি আসনে জিতেছে। ভুট্টো ও ইয়াহিয়ার অন্যায় ঘোষণা বাঙালিরা কেউই মেনে নিতে পারল না । বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ২রা মার্চ অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিলেন ।
এ দেশ পাক সরকারের নির্দেশে চলবে না। পূর্ব-পাকিস্তানের মানুষ এখন থেকে শেখ মুজিবের নির্দেশে চলবে। আর এ নিয়ম চলবে যতদিন বাঙালির অধিকার প্রতিষ্ঠা না হয় ৷তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তানের চিত্রশিল্পীরা সবাই এক জোট হয়ে আলোচনায় বসলেন ছবি এঁকে, পোস্টার ও বড় বড় ব্যানার লিখে বাঙালির এই অসহযোগ আন্দোলনকে বেগবান করতে হবে । শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী ও মুর্তজা বশীরকে যুগ্ম আহ্বায়ক করে একটি বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করা হলো। ১০ দিন ধরে কয়েকশ ছবি ও পোস্টার এঁকে চিত্রশিল্পীরা ১৭ই মার্চ ১৯৭১-এ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের জন্মদিনে শহিদমিনার থেকে বিপ্লবী চিত্রের মিছিল বের করলেন, যা ছিল বিশাল এক অভিনব মিছিল। প্ৰত্যেক শিল্পীর হাতে একটি করে আঁকা চিত্র। আর এসব চিত্রের বিষয় হচ্ছে পূর্ব-পাকিস্তানের মানুষদের তথা বাঙালিদের বঞ্চনার ছবি, নির্যাতনের ছবি, বাঙালির সম্পদ লুট করে পশ্চিম-পাকিস্তানের উন্নয়নের ছবি, বাংলার ভাষা, সংস্কৃতির প্রতি আক্রমণ ও অবহেলার ছবি, সেইসঙ্গে পূর্ব-পাকিস্তানের মানুষের প্রতিবাদ ও সংগ্রামের ছবি ।
এই বিপ্লবী চিত্রের মিছিলের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল স্বাধীনতা। এই ৪টি অক্ষর বড় বড় করে সুন্দরভাবে লিখে ৪টি মেয়ের গলায় ঝুলিয়ে মিছিলের অগ্রভাগে থেকে হেঁটে যাওয়া। পাকিস্তানের সামরিক সরকার নানাভাবে ও নানান কৌশলে তখনও আশা দিয়ে যাচ্ছে যে শেখ মুজিবের সঙ্গে আলোচনায় বসে একটা মিমাংসায় যাওয়া যাবে। কিন্তু বাঙালির প্রিয় নেতা ৭ই মার্চ জাতিকে জানিয়ে দিয়েছেন এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম ও এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। তাই ঘরে-ঘরে দুর্গ গড়ে তুলতে হবে। পাকিস্তানের সৈন্যদের সঙ্গে আমাদের অস্ত্র দিয়েই যুদ্ধ করতে হবে। দেশকে স্বাধীন করতে হবে।
৭ই মার্চে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা বিষয়ে ঘোষণার পর পূর্ব-পাকিস্তানের ঘরে-ঘরে সাড়া পড়ে গেল। নানাভাবে ভবিষ্যৎ কর্মসূচির জন্য প্রস্তুতি চলতে লাগল। কিন্তু প্রকাশ্যে জোরেশোরে কেউ কিছু বলতে পারছে না। কারণ, তখনও মার্শাল ল বহাল রয়েছে।
চিত্রশিল্পীরা বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের বক্তৃতা থেকে মূল বিষয়টা বুঝে ফেললেন। তাঁরা অপেক্ষা করতে রাজি নয় ৷ তাই শিল্পীরা ছবি ও পোস্টারের মাধ্যমে প্রকাশ্যেই স্বাধীনতাকে বলিষ্ঠভাবে তুলে ধরলেন। মার্শাল ল এর আইন অনুযায়ী এটা রাষ্ট্রদ্রোহিতা। এর জন্য দেখামাত্র গুলি করতে পারে। চিত্রশিল্পীরা মৃত্যু হতে পারে জেনেই এই মিছিল বের করেছেন। যে চারটি মেয়ে এই চারটি অক্ষর ‘স্বাধীনতা’ বুকে ঝুলিয়ে মিছিলের সামনের দিকে ছিল এদের তিনজন চারুকলার ছাত্রী আর একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্রী। তাঁর নাম সুলতানা কামাল। বর্তমানে মানবাধিকার নেতা ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রাক্তন উপদেষ্টা। চারুকলার ছাত্রী সাঈদা কামাল ও ফেরদৌসি পিনুর পরিচিতি চিত্রশিল্পী এবং আরেকজন ছাত্রী সামিদা খাতুন ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ শহিদ হন। এই বিপ্লবী মিছিলের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন। সেদিন তিনিই ছিলেন শিল্পীদের সবচেয়ে বড় সাহস ও শক্তি। রাস্তার দুপাশে হাজার হাজার মানুষের ভিড় জমে গিয়েছিল এই চলমান প্রদর্শনী দেখার জন্যে। অনেকেই ছবি বহন করার জন্য শিল্পীদের পাশাপাশি হেঁটেছেন। খবর পেয়ে বেগম সুফিয়া কামাল মিছিলে যোগ দিয়েছিলেন। তিনি শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের পাশে থেকে মিছিলের শেষ পর্যন্ত গিয়েছিলেন। মিছিলটি শহিদমিনার থেকে সেগুন বাগিচার তোপখানা রোড হয়ে বর্তমান বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ হয়ে নবাবপুর রোড ধরে ভিকটোরিয়া পার্ক বা বর্তমান বাহাদুর শাহ পার্ক পর্যন্ত গিয়েছিল। পাকিস্তান সরকারের সেনাবাহিনী বা পুলিশবাহিনী মিছিলে বাধা দেওয়ার বা গুলি করার সাহস করেনি ।
দলীয় কাজ: অসহযোগ আন্দোলন সম্পর্কে আমাদের শিল্পীদের অবদানের চিত্রগুলো সংগ্রহ করে প্রদর্শন কর । |