কোন শিল্পী কবিতার মাঝে শব্দ কেটে কেটে বিচিত্র সব জীবজयूর ছবি এঁকেছেন? 

Created: 1 year ago | Updated: 1 year ago
Updated: 1 year ago
শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের আঁকা সাঁওতাল দম্পতি

এ অধ্যায় পাঠ শেষে আমরা-

• জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অর্পনের কয়েকজন বিখ্যাত শিল্পীর নাম বলতে পারব।

• কয়েকজন বিখ্যাত শিল্পীর সংক্ষিত পরিচয় দিতে পারব এবং তাঁদের কয়েকটি শিল্পকর্মের নাম উল্লেখ করতে পারব ।

পাঠ : ১

যামিনী রায়
(১৮৮৭-১৯৭২)

শিল্পী যামিনী রায়

বাংলার লোকজ ধারার অন্যতম খ্যাতিমান শিল্পী যামিনী রায়। পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া জেলার বেলিয়াতোড় নামক গ্রামে ১৮৮৭ সালে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। খুব ছোটবেলা থেকে যামিনী রায়ের মাঝে ছবি আঁকার প্রতি গভীর আকর্ষণ ছিল। ঘরের দেয়াল, মেঝে থেকে শুরু করে হাতের কাছে যা পেতেন তার ওপরই ইচ্ছেমতো হাতি, ঘোড়া, পাখি, বিড়াল, পুতুল যা মনে আসত তা এঁকে আপন মনে রং করতেন।

যামিনী রায় ছবি আঁকার প্রয়োজনীয় রং নানাভাবে নিজেই তৈরি করতেন। নানা বর্ণের মাটি আর পাছপাছালি থেকেও রং আহরণ করতেন।

শিল্পী যামিনী রায়ের ছবি

যামিনী রায় প্রচুর ছবি এঁকেছেন। অল্প বয়সে দেশ-বিদেশে তাঁর নাম ছড়িয়ে পড়েছিল। নিজ দেশের বাইরে আমেরিকা, লন্ডন, প্যারিস এবং আরও অনেক দেশে তাঁর চিত্রের প্রদর্শনী হয়েছিল। তাঁর অতুলনীয় কাজের মধ্যে মা ও শিশু, কৃষ্ণলীলা, সাঁওতাল, গণেশ, জননী, কীর্তন, দুই নারী ইত্যাদি ছবিগুলো অপূর্ব সৃষ্টি। ৮৫ বছর বয়সে ১৯৭২ সালের ২৪শে এপ্রিল এই মহান শিল্পী পরলোকগমন করেন।

                                                                                             পাঠ : २ 

                                                                                             পাবলো পিকাসো 

                                                                                                 (১৮৮১-১৯৭০)

শিল্পী পাবলো পিকাসো

২৫শে অক্টোবর ১৮৮১ সালে স্পেনের মালাপা শহরে পিকাসোর জন্ম। শিশুকালেই ছবি আঁকার হাতেখড়ি তাঁর বাবার কাছ থেকেই। পিকাসোর মধ্যে ছিল ছবির প্রতি গভীর অনুরাগ। তিনি যখন তিন বছরের শিশু, হাতের কাছে পেনসিল কিংবা কাঠকয়লা পেলে কাগজ অথবা মেঝের ওপরেই ছবি আঁকতে আরদ্ধ করে দিতেন। তাঁর বিখ্যাত কাজের মধ্যে রয়েছে গুয়ের্নিকা, তিন নর্তকী, দি প্রসেস, একারেডিওনিস্ট, পার্ল বিফোর মিরর, ইয়ং রেডিজ অভ অভিনন এবং আরও অনেক। তিনি ভাস্কর্য, কারুশিল্প, মঞ্চসজ্জা, গোলাক পরিকল্পনা, পোস্টার, এচিং, লিথোগ্রাফ, বই-এর অলংকরণ প্রতিটি ক্ষেত্রে ছিলেন অসাধারণ। পিকাসো শুধু শিল্পীই নন কবিও ছিলেন ।

পিকাসোর আঁকা 'পুজের্নিকা”

১৯৭৩ সালে ৮ই এপ্রিল, ফ্রান্সে পিকাসোর শিল্পজীবনের চিরসমাপ্তি ঘটল। প্রকৃতপক্ষে পিকাসোর জীবনটাই ছিল এক বিরাট শিল্প। মৃত্যুতেও যে- শিল্পের শেষ হয় না। 

                                                                                                            পাঠ : ৩
                                                                                                              ভিনসেন্ট ভ্যানগগ
                                                                                                                 (১৮৫৩-১৮৯০)

শিল্পী ভিনসেন্ট ভ্যানগগ-এর আঁকা নিজের ছবি

১৮৫৩ সালের ৩০শে মার্চ হল্যান্ডের ছোট্ট একটি গ্রামে ভ্যানগগ জন্মগ্রহণ করেন। পিতা ছিলেন গ্রাম্য দরিদ্র পাদরি ।
সাতাশ বছর বয়সে ভ্যানগগ চিত্রশিল্পীর জীবন গ্রহণ স্থির করে তাঁর ছোট ভাই থিওকে প্যারিসে চিঠি লেখেন। এর পর থেকে ছোট ভাই-এর সাহায্য-সহযোগিতায় ভ্যানগগ অনেক ছবি আঁকলেন । কিন্তু জীবদ্দশায় তিনি মাত্র দুখানি ছবি বিক্রি করেছিলেন। ভ্যানগগ মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতেন একদিন তাঁর ছবির সমাদর হবে। তাঁর সে ধারণা সত্যি হয়েছে। তাঁর মৃত্যুর পর আজ কোটি কোটি ডলারে ছবি বিক্রি হচ্ছে। তাঁর বিখ্যাত ছবিগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য  দিনমজুর, আত্মপ্রতিকৃতি, পোস্টম্যান, তাঁতি, একটি গাছ, আলোর দৃশ্য, বাতির রেননদী, সূর্যমুখী ফুল প্রভৃতি। নিজের কুৎসিত মুখশ্রী ও জীবনের প্রতি তীব্র হতাশা তাঁকে ক্রমশ উন্মাদ করে তোলে। মাত্র সাঁইত্রিশ বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন ।

                                                                                                           নন্দলাল বসু
                                                                                                                    (১৮৮২-১৯৬৬)

শিল্পাচার্য নন্দলাল বসু 

শিল্পাচার্য নন্দলাল বসুর জন্ম ১৮৮২ সালে মুঙ্গের খড়গপুরে। তাঁর বাবার নাম পূর্ণচন্দ্র বসু। ছেলেবেলা থেকেই চিত্রকলার প্রতি আকর্ষণ ছিল প্রবল। মাটি দিয়ে দেবদেবীর মূর্তিসহ পুতুল তৈরি করতেন। পরবর্তীকালে তিনি অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাহায্যে কলকাতা আর্ট স্কুলে ভর্তির সুযোগ পান। ১৯০২ সালে ছাত্রাবস্থার শেষ দিকে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আহ্বানে১৯১৬ সালে জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে বিচিত্রা সংঘ প্রতিষ্ঠা করেন। নন্দলাল বসু সেখানে শিল্পকলার শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন  নন্দলাল বসু আর্ট স্কুল ছেড়ে তাঁর সঙ্গে যোগ দেন। সেই সময় তাঁর বোন নিবেদিতার ‘হিন্দু-বৌদ্ধ পুরাকাহিনী' বইটির অঙ্গসজ্জা করেন। 

                                                                                                         পাঠ : ৪
                                                                                                          অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর
                                                                                                              (১৮৭১-১৯৫১)

শিল্পী অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর

কলকাতার বিখ্যাত জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ছেলেবেলা থেকেই ছবি আঁকার প্রতি শিল্পী অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আকর্ষণ ছিল। পিতা গুণেন্দ্রনাথ একসময় আর্ট স্কুলের ছাত্র ছিলেন। পারিবারিক লৌখিন পরিবেশ ও ঘরের দেয়ালে টানানো নানা চিত্রকর্ম পট তাঁর মনকে করেছিল সৃজনশীল ও কল্পনাপ্রবণ।
কলকাতা আর্ট স্কুলের তৎকালীন অধ্যক্ষ হ্যান্ডেলের চেষ্টায় তিনি সহকারী অধ্যক্ষের পদে যোগ দেন ১৮৯৮ সালে। তারপর ভারতীয় শিল্প আরও ভালোভাবে অনুশীলন করে ১৯০৫ সালে তিনি শিক্ষশুরুরূপে জীবন শুরু করেন। তাঁর প্রভাবে জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি একটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়।

অবনীন্দ্রনাথের থাকা 'ক্ষীরের পুতুল' বই এর ছবি

শুধু শিল্পসৃষ্টিই নয়, সাহিত্যেও তাঁর একটা नিষ দৃষ্টি ছিল। তাঁর সাহিত্যকে শিল্পসৃষ্টির পরিপুরক বলে মনে করা হয়। শিশু ও কিশোরদের জন্য তিনি প্রচুর বই রচনা করেছেন, যেমন- ক্ষীরের পুতুল, ভূত-পেতনীর দেশ, বুড়ো আংলা, ঘুম পাড়ানি দাসী প্রভৃতি। আর উল্লেখযোগ্য চিত্রকর্মের মধ্যে রয়েছে- বুদ্ধ ও সুজাতা, পদ্ম হাতে রাজকুমারী। ১৯৫১ খ্রিষ্টাব্দে এই মহান শিল্পী মৃত্যুবরণ করেন।

                                                                                                চিত্রশিল্পী রবীন্দ্রনাথ 

                                                                                                                (১৮৬১-১৯৪১)

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

রবীন্দ্রনাথকে এতদিন আমরা কবিপুরু হিসেবে জেনে এসেছি। আজ আমরা জানব চিত্রশিল্পী রবীন্দ্রনাথকে। কথাটা অনেকটা এভাবে বলা যায়- প্ৰবীণ বয়সে এসে একজন শিল্পীর মতোই ছবি আঁকতে থাকেন। রবীন্দ্রনাথের ছবি আঁকার পূর্বকথা ও ইতিহাস কোনো আকস্মিক ঘটনা নয়। আঁকার বাসনা ত দীর্ঘদিনের। তা ছাড়া ঠাকুরবাড়িতে বড় ভাই জ্যোতিরিন্দ্রনাথ, ভ্রাতুষ্পুত্র অবনীন্দ্রনাথ ও গগনেন্দ্রনাথ অনেকেই সে-সময় ছবি এঁকেছেন। ঠাকুরবাড়ির ভেতরে-বাইরে বিচিত্রা সভা ও অন্যান্য সংগঠনের সুবাদে রবীন্দ্রনাথ নিজেও চিত্রচর্চার কাজে খবরদারি করেছেন। তাঁর আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ জীবনস্মৃতি 

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আঁকা "নিজের মুখ"

থেকে জানা যায় দুপুরবেলা জাজিম- বিছানো কোশের পরে ছবি আঁকার খাতা নিয়ে রবীন্দ্রনাথ আঁকাজোকা করেছেন। তিনি বলেছেন যা চোখের সামনে আছে বা প্রতিদিন আমরা দেখছি তা-ই যথেষ্ট নয়- শিল্পীকে দেখতে হবে একটা বিশেষ কিছু যা তাঁকে সৃষ্টিশীল করবে। শেষ দশ বছরে রবীন্দ্রনাথ অনেক ছবি এঁকেছেন। 

সাহিত্যকর্ম করতে গিয়ে কখনো কখনো তিনি শিল্পকর্মের মধ্যে প্রবেশ করেছেন তার প্রমাণ হিসেবে আমরা দেখতে পাই অনেক কবিতার মাঝে শব্দ কেটে কেটে বিচিত্র সব জীবজন্তুর ছবি এঁকে ফেলেছেন।

রবীন্দ্রনাথের প্রথম চিত্রপ্রদর্শনী হয় ১৯৩০ সালে জার্মানিসহ ইউরোপের কয়েকটি দেশে। তাঁর কয়েকটি ছবির নাম- নিসর্গ, প্রতিকৃতি, মা ও ছেলে, যুগল, আদিম প্রাণী, নৃত্যরত রমণী, অবসর ইত্যাদি। প্রকৃতিরই বহুচেনা রূপ আমরা দেখি নতুন করে ভিন্নমাত্রায় চিত্রশিল্পী রবীন্দ্রনাথের কল্যাণে।

                                                                                                         পাঠ : ৫
                                                                                               শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন
                                                                                                           (১৯১৪-১৯৭৬)

শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন

শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন ১৯১৪ সালের ২৯ ডিসেম্বর কিশোরগঞ্জ জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। বাবার নাম তমিজউদ্দিন আহমেদ, মায়ের নাম জয়নাবুন্নেছা। স্কুলের লেখাপড়া শেষ করে ভর্তি হন কলকাতা আর্ট স্কুলে। ভালো ছাত্র হিসেবে অল্প দিনের মধ্যেই সুনাম অর্জন করেন। এবং আর্ট স্কুলের শিক্ষা শেষে সেখানেই শিক্ষকতার নিয়োগ পান। তরুণ বয়সেই ছবি আঁকার প্রচুর খ্যাতি অর্জন করেন রসুল আবেদিন। ১৩৫০ সালে বাংলার প্রচণ্ড দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। তৎকালীন ব্রিটিশ শাসকদের অবহেলা ও অমানবিকতার কারণেই সাধারণ মানুধের খাবারের অভাব হয়েছিল। কলকাতার রাস্তায় হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু ও অসহায় অবস্থা তরুণ শিল্পী জয়নুলের মনকে পীড়া দিয়েছিল। ব্রিটিশ শাসকদের প্রতি তাঁর ঘৃণা জন্মালো। মনে মনে ক্ষুদ্ধ হয়ে মানুষের মৃত্যু ও দুর্বিসহ অবস্থাকে বিষয় করে আঁকলেন কালো রেখার অনেক ছবি। যা পরবর্তীকালে দুর্ভিক্ষের চিত্র নামে পরিচিতি হলো। গোটা ভারতসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে শিল্পী জয়নুলের দুর্ভিক্ষের চিত্র নিয়ে নামকরা ব্যক্তিরা পত্র-পত্রিকায় তাঁর প্রশংসা করে লিখলেন ।
১৩৫০ সালে বাংলার প্রচণ্ড দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। তৎকালীন ব্রিটিশ শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন
জয়নুল আবেদিন বাংলার মাটিকে ভালোবাসতেন, ভালোবাসতেন বাংলার মানুষকে, এ কারণে তাঁর শিল্পকর্মে শ্রমজীবী মানুষের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, তাদের জীবন ও যন্ত্রণা, সমাজের বিত্তবানদের দ্বারা লাঞ্ছনা-গঞ্জনা, অত্যাচার-অবিচার ইত্যাদির বাস্তব রূপায়ণ ঘটেছে। বিশেষ করে শ্রমজীবী মানুষের কর্মময় জীবন ও তাদের সংগ্রাম ছিল তাঁর ছবির বিষয়বস্তু। এ দেশে শিক্ষা চর্চার জন্য প্রথম যে প্রতি এবং ছিলেন শিল্পাচার্য আবেদিন। তিনি বাংলাদেশের নামকরা অনেক শিল্পীকে হাতে ধরে ছবি আঁকা শিখিয়েছেন। জন্য কর্মক্ষেত্র তৈরি করেছেন। সমাজকে সুন্দরভাবে চালিত করতে যে শিল্পীর প্রয়োজন, তা বুঝে পেরেছেন, তাই শিশু-কিশেল গড়েছেন। শিল্পকলার ক্ষেত্রে এমন সব অবদানের জন্য বাংলাদেশের মানু জানিয়ে, তাকে ভালোবেসে নাম দিয়েছে শিল্পাচার্য ।
শিল্পাচার্যের শ্রেষ্ঠ শিল্পকর্মগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য দুর্ভিক্ষের চিত্র ১৯৪৩, সংগ্রাম, পর গাড়ি, গুনটানা, ी, প্রসাধন, নবান্ন, মনপুরা-৭০ ইত্যাদি। তাঁর এই অমূল্য চিত্রগুলো সংরক্ষিত রয়েছে ঢাকার জাতীয় জানুষরে এবং মরমনসিংহের পর সগ্রহশালা।
১৯৭৬ সালের ২৮শে মে এই মহান শিল্পী ৬২ বছর বয়সে পরলো ।

                                                                                                      পাঠঃ ৬

                                                                                                           কামরুল হাসান 

                                                                                                          (১৯২১-১৯৮৮)

শিল্পী কামরুল হাসান 

শিল্প কान হাসান ১৯২১ সালে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার গ্রহণ করেন। চিত্রায় শিক্ষাণ করেন কলকাতায়। ১৯৪৭ পরবর্তীকালে তিনি বাংলাদেশে শিল্পাচার্য ময়নুল আবেদিনের সাথে ১৯৪৮ সালে ঢাকার সরকারি চারুকলা মহাবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন এবং এ মহাবিদ্যালয়ে তিনি প্র শিক্ষকতা করেন। বাংলাদেশের ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প কর্পোরেশনের (বিসিক) নকশা কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা শিল্পী কামরুল হাসান। তরুন বয়সের ব্রভচাঅ্যান্ড আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়লে । ১৯৩৯ থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত এই আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। ব্রতচারী আন্দোলনে বাঁটি বাধ্বনি বিসেবে গড়ে তোলার জন্য মুকুল ফৌজ গড়ে তোলেন। তিনি ছিলেন মুকুল ফৌজের সর্বাধীনায়ক । 

শিল্পী কামরুল হাসানের আঁকা ‘;ছবি’ 

কামরুল হাসানের সবচেয়ে উল্লেক্ষযোগ্য কার স্বাধীনতা যুদ্ধের আঁকা ছবি'  - জানোয়ারের মতো মুখ। এটি একটি পোস্টার চি, যার মধ্যে লেখা ছিল 'এই রোদের হত্যা করতে হবে"। তার এই পোস্টারটি মুক্তিবাদের জন্য ছিল উৎসাহ ও প্রেরণার এ य । মन যালান বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা এব বাংলাদেশের রাষ্ট্রীর প্রमণ করেন। বাংলাদেশ সরকার তাঁকে একুশে পদকে ভূষিত করেন। তিনি অনেক উল্লেখযোগ্য কাজ করেছেন, তাঁর বিখ্যাত ছবিগুলো হলো, নবান্ন, তিনকন্যা, উঁকি, বাংলার রূপ, জেলে, পেঁচা, গণহত্যার আগে ও পরে ইত্যাদি। ঢাকার জাতীয় জাদুঘরে তাঁর অনেক ছবি সংরক্ষিত আছে। ১৯৮৮ সালের ২রা ফেব্রুয়ারি কবিদের এক প্রতিবাদী কবিতা সভায় হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্তে সেই কবিতা মঞ্চে জীবনের শেষ স্কেচ করেছেন, যার শিরোনাম ছিল 'দেশ আজ বিশ্ব বেহায়ার খপ্পরে'।

                                                                                            এস.এম সুলতান
                                                                                                       (১৯২৩-১৯৯৪)

শিল্পী এস.এম সুলতান

শেখ মোহাম্মদ সুলতান (যিনি এস. এম সুলতান নামে পরিচিত) ) ১৯২৩ সালে তৎকালীন যশোর জেলার নড়াইলের (বর্তমান নড়াইল জেলা) মাছিমদিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর ছেলেবেলা কাটে গ্রামে। মা-বাবা তাঁকে লাল মিয়া বলে ডাকতেন। গ্রামের লোকেরা তাঁকে এই নামেই ডাকতেন। লেখাপড়ার প্রতি ছিল তাঁর দারুণ অনীহা। আর এ কারণেই তিনি লেখাপড়া থেকে পালিয়ে বাঁচার জন্য কিছু সময় ছবি আঁকা শেখেন কলকাতা আর্ট স্কুলে, তারপর বের হয়ে পড়েন-ঘুরে বেড়ান দেশে-বিদেশে। একজন খেয়ালী মানুষ ও বৈশিষ্ট্যময় চিত্রশিল্পী হিসেবে তিনি খ্যাতি অর্জন করেন। তাঁর ছবির বিষয় ছিল বাংলাদেশের গ্রাম্যজীবন, চাষবাস, কৃষক, জেলে, খেটে খাওয়া মানুষ। তাঁর ছবির মানুষেরা বলিষ্ঠ দেহ ও শক্তিশালী। কৃষককুল জমি কর্ষণ করে ফসল ফলায়, খাদ্য জোগায়। তারাই আসলে দেশের শক্তি, তাদের ভেতরের শক্তিশালী রূপটা তিনি তুলে ধরেছেন।

শিল্পী এস.এম সুলতানের আঁকা 'হালচাষ'

শিশুদের শিক্ষার জন্য বিশেষ ধরনের স্কুল করেন। নাম শিশুস্বর্গ, শিশুরা লেখাপড়া করবে, ছবি আঁকবে, গান গাইবে, প্রকৃতি, গাছপালা, জীব-জন্তুর সাথে আপন হয়ে মিশে যাবে। মনের আনন্দে সব শিখবে। জোর করে নয় । শিল্পী সুলতান অনেক পশু-পাখি পালতেন। নিজের সন্তানের মতো সেসব পশু-পাখিকে যত্ন করতেন। শেষ বয়সে নড়াইলে নিজের জন্মস্থানে বসবাস করেন। ১৯৯৪ সালের ১০ই অক্টোবর একাত্তর বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর বিখ্যাত অনেক শিল্পকর্ম দেশ-বিদেশের চিত্রশালায় সংরক্ষিত আছে, শিল্পকলার ক্ষেত্রে তাঁর অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাঁকে রেসিডেন্ট আর্টিস্টের সম্মান প্রদান করেন। তিনি স্বাধীনতা ও একুশে পদক লাভ করেন।

 

Content added || updated By
Promotion