জসীমউদ্দীনের কবিতায় দেখা যায়—
i. পল্লির প্রকৃতির বর্ণনা
ii. পল্লির মানুষের বর্ণনা
iii. শহুরে জীবনের বর্ণনা
নিচের কোনটি সঠিক?
এই গাঁয়ের এক চাষার ছেলে লম্বা মাথার চুল,
কালো মুখেই কালো ভ্রমর, কিসের রঙিন ফুল!
কাঁচা ধানের পাতার মতো কচি-মুখের মায়া,
তার সাথে কে মাখিয়ে দেছে নবীন তৃণের ছায়া।
জালি লাউয়ের ডগার মতো বাহু দুখান সরু,
গা খানি তার শাওন মাসের যেমন তমাল তরু।
বাদল-ধোয়া মেঘে কে গো মাখিয়ে দেছে তেল,
বিজলি মেয়ে পিছলে পড়ে ছড়িয়ে আলোর খেল।
কচি ধানের তুলতে চারা হয়তো কোনো চাষি,
মুখে তাহার জড়িয়ে গেছে কতকটা তার হাসি।
কালো চোখের তারা দিয়েই সকল ধরা দেখি,
কালো দতের কালি দিয়েই কেতাব কোরান লেখি।
জনম কালো, মরণ কালো, কালো ভুবনময়;
চাষিদের ওই কালো ছেলে সব করেছে জয়।
সোনায় যে-জন সোনা বানায়, কিসের গরব তার
রং পেলে ভাই গড়তে পারি রামধনুকের হার।
কালোয় যে-জন আলো বানায়, ভুলায় সবার মন,
তারির পদ-রজের লাগি লুটায় বৃন্দাবন।
সোনা নহে, পিতল নহে, নহে সোনার মুখ
কালো-বরন চাষির ছেলে জুড়ায় যেন বুক।
যে কালো তার মাঠের ধান, যে কালো তার গাঁও!
সেই কালোতে সিনান করি উজল তাহার গাও।
আখড়াতে তার বাঁশের লাঠি অনেক মানে মানী,
খেলার দলে তারে নিয়েই সবার টানাটানি।
জারির গানে তাহার গলা উঠে সবার আগে,
শাল-সুন্দি-বেত' যেন ও, সকল কাজেই লাগে।
বুড়োরা কয়, ছেলে নয় ও, পাগাল লোহা যেন,
রূপাই যেমন বাপের বেটা কেউ দেখেছ হেন?
যদিও রূপা নয়কো রুপাই, রূপার চেয়ে দামি,
এক কালেতে ওরই নামে সব গাঁ হবে নামি।