নবম-দশম শ্রেণি (দাখিল) - পদার্থ বিজ্ঞান - NCTB BOOK

ইলেকট্রিসিটি বা চলবিদ্যুৎ ছাড়া আজকাল এক মুহূর্তও আমাদের জীবন ঠিকভাবে চলতে পারে না। আমাদের চারপাশের সব ধরনের যন্ত্রপাতি বা সাজ সরঞ্জাম চালানোর জন্য আমাদের ইলেকট্রিসিটির দরকার হয়। আগের অধ্যায়ে আমরা যে স্থির বিদ্যুতের কথা বলেছি সেই স্থির বিদ্যুৎ বা চার্জগুলো যখন কোনো পরিবাহকের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয় আমরা সেটাকেই চলবিদ্যুৎ বা ইলেকট্রিসিটি বলি। এই অধ্যায়ে এই চলবিদ্যুৎকে ব্যাখ্যা করার জন্য প্রয়োজনীয় রাশিগুলো বর্ণনা করব এবং যে নিয়মে চলবিদ্যুৎ প্রবাহিত হয় সেগুলো জেনে নেব। এই নিয়মগুলো ব্যবহার করে কীভাবে একটা সার্কিটে বিদ্যুৎ প্রবাহ বা পটেনশিয়াল পরিমাপ করা যায় সেটিও এই অধ্যারে আলোচনা করা হবে। 

Content added By
Content updated By

আমরা আগের অধ্যায়ে দেখেছি যে যদি দুটো ভিন্ন বস্তুর পটেনশিয়াল বা বিভবের মাঝে পার্থক্য থাকে তাহলে যেটার বেশি পটেনশিয়াল সেখান থেকে যেটার পটেনশিয়াল কম সেখানে চার্জ বা আধান প্রবাহিত হয়। যতক্ষণ পর্যন্ত পটেনশিয়াল দুটো সমান না হচ্ছে চার্জের প্রবাহ হতেই থাকে। চার্জের এই প্রবাহ হচ্ছে তড়িৎ বা বিদ্যুতের প্রবাহ, আমরা যেটাকে সাধারণভাবে “ইলেকট্রিসিটি” বলি, যেটা দিয়ে লাইট জ্বলে, ফ্যান ঘুরে, মোবাইল টেলিফোন চার্জ দেওয়া হয়। 

Content added By
Content updated By

একটা বিষয় নিশ্চয়ই বুঝতে পারছ, পটেনশিয়াল বা বিভব পার্থক্য থাকলেই শুধু বিদ্যুৎ প্রবাহ হয়, তাই আমরা যদি বিদ্যুৎ প্রবাহ অবিচ্ছিন্ন রাখতে চাই তাহলে পটেনশিয়ালের পার্থক্যটাও বজায় রাখতে হবে, সেটাকে কমে সমান হয়ে যেতে দেওয়া যাবে না। যদি দুটো ধাতব গোলকের একটির মাঝে ধনাত্মক চার্জ দিয়ে সেখানে একটি পটেনশিয়াল তৈরি করে চার্জবিহীন অন্য গোলকটির সাথে একটা তার দিয়ে জুড়ে দিলে বিদ্যুতের প্রবাহ শুরু হবার সাথে সাথে পটেনশিয়াল বা বিভবের পার্থক্য কমতে থাকবে এবং মুহূর্তের মাঝে দুটি পটেনশিয়াল সমান হয়ে যাবে। ধারক বা ক্যাপাসিটরের দুটো সমান্তরাল ধাতব পাতের মাঝে আধান বা চার্জ জমা রেখে বিভবের পার্থক্য তৈরি করা সম্ভব। ধারকের সেই দুটো পাত একটা তার দিয়ে জুড়ে দিলেও মুহূর্তের মাঝে পুরো চার্জ প্রবাহিত হয়ে তাদের বিভব সমান হয়ে যাবে। কাজেই বুঝতেই পারছ আমরা যদি ব্যবহার করার মতো সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ চাই তাহলে অন্য কোনো পদ্ধতি দরকার যেটা এমন একটা পটেনশিয়াল বা বিভব পার্থক্য তৈরি করে দেবে যেন চার্জ প্রবাহিত হলেও তার পার্থক্য কমে না যায়। তোমরা সবাই সে রকম পদ্ধতি দেখেছ, এগুলো হচ্ছে ব্যাটারি সেল এবং জেনারেটর। ব্যাটারি সেলের ভেতর রাসায়নিক বিক্রিয়া করে পটেনশিয়ালের পার্থক্য তৈরি করা হয়, সেখান থেকে চার্জ প্রবাহ করা হলে রাসায়নিক দ্রব্যগুলো খরচ হতে থাকে, যখন রাসায়নিক দ্রব্যগুলো শেষ হয়ে যায় তখন ব্যাটারি সেল আর বিদ্যুৎ প্রবাহ করতে পারে না। আমরা সাধারণ যে ব্যাটারি সেলগুলো দেখি সেগুলোর বিভব পার্থক্য হচ্ছে 1.5 ভোল্ট। 

তোমাদের স্কুলে কিংবা বাসায় যে ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই আছে সেখানে তোমরা সবাই দেখেছ সেটি ব্যবহার করার জন্য সব সময় দুটো পয়েন্ট থাকে, তার একটাতে থাকে কম পটেনশিয়াল বা বিভৰ অন্যটাতে বেশি, এই পার্থক্যটা বজায় রাখে জেনারেটর, যেটি ক্রমাগত পটেনশিয়াল পার্থক্য তৈরি করতে থাকে। একটা ব্যাটারি সেল বা একটা জেনারেটরে ক্রমাগত বিদ্যুৎ প্রবাহের জন্য ক্রমাগত চার্জকে কম পটেনশিয়াল বা বিভব থেকে বেশি পটেনশিয়াল বা বিভাবে হাজির করে রাখতে হয় এবং এর জন্য শক্তির প্রয়োজন হয়। যদি কোনো ব্যাটারিতে Q চার্জকে কম পটেনশিয়াল থেকে বেশি পটেনশিয়াল আনতে w পরিমাণ কাজ করতে হয় তাহলে এই ব্যাটারি সেলের তড়িৎ চালক শক্তি বা ইএমএফ হচ্ছে: 

                                                                    EMF=WQ

ব্যাটারি সেল বা জেনারেটর, যেগুলো বিদ্যুৎ শক্তি সরবরাহ করে তার তড়িৎ চালক শন্তি বা ইএমএফ থাকে। যখন কোনো ব্যাটারি সেল বা জেনারেটরকে কোনো সার্কিটে লাগানো হয় তখন এই তড়িৎ চালক শক্তিই চার্জকে পুরো সার্কিটের ভেতর দিয়ে ঘুরিয়ে আনে। একটা ব্যাটারি যে পরিমাণ পটেনশিয়াল তৈরি করে সেটাই হচ্ছে তার তড়িৎ চালক শক্তি(Electromotive Force) বা ই এম এফ এটাকে বলা হচ্ছে ফোর্স বা "বল” বাংলায় বলছি “শক্তি”।কিন্তু প্রকৃত পক্ষে “ইএমএফ” বা “তড়িৎ চালক শক্তি" বলও নয় আবার শক্তিও নয়।তোমাদের আগে বলা হয়েছে পদার্থবিজ্ঞানে “বল” “শক্তি” এই বিষয়গুলো খুবই সুনির্দিষ্ট, ইচ্ছেযতো একটা শব্দের জায়গায় অন্য শব্দ ব্যবহার করা যাবে না। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে এখানে সেটি করা হয়ে গেছে।তোমাদের বিভ্রান্ত হওয়ার কোনো কারণ নেই কারণ  যেহেতু একটা ব্যাটারি সেল বা জেনারেটর যে পরিমাণ  পটেনশিয়াল তৈরি করে সেটাই হচ্ছে তার ইএমএফ তাই তৈরি করা সম্ভব।আমরা সেখান থেকেই শুরু করব, পটেনশিয়াল কথাটি দিয়েই সব কাজ করে ফেলব, দেখবে কোনো সমস্যা হবে না।আমরা আগেই বলেছি পটেনশিয়ালের মানটি পুরুত্বপূর্ণ নয়, তার পার্থক্যটুকু গুরুত্বপূর্ণ। তাই দেখবে অনেক সময় একটা ব্যাটারি সেলের এক মাথার পটেনশিয়ালের মান ভিন্ন করে ফেলা সম্ভব, কিন্তু পার্থক্যটা সব সময়ই সমান থাকবে। 

Content added By
Content updated By

পরিবাহী পদার্থ: আমরা যদি পদার্থের গঠনটা ভালো করে বুঝে থাকি তাহলে একটা বিষয় খুব ভালো করে জেনেছি। কঠিন পদার্থে তার অণু-পরমাণু শক্ত করে নিজের জায়গার বসে থাকে। তাপমাত্রা বাড়লে তারা নিজের জায়গায় কাঁপাকাঁপি করতে পারে কিন্তু সেখান থেকে সরে অন্য জায়গায় চলে যায় না। তোমাদের রসায়ন বইয়ে তোমরা যখন ধাতব বন্ধন পড়েছ সেখানে দেখেছ, ধাতব পরমাণুর কিছু ইলেকট্রন প্রায় যুক্ত অবস্থায় থাকে সেগুলো এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে পারে। সেজন্য আমরা সেগুলোকে বলি পরিবাহী পদার্থ। সোনা, রূপা, তামা, অ্যালুমিনিয়াম এগুলো সুপরিবাহী পদার্থ। পরিবাহী পদার্থ দিয়ে চার্জকে স্থানান্তর করা যায়, তবে সব সময় মনে রাখতে হবে এই স্থানান্তর হয় ইলেকট্রন দিয়ে, বিদ্যুতের প্রবাহ হয় ইলেকট্রন দিয়ে, নেগেটিভ চার্জের ইলেকট্রন। 

অপরিবাহী পদার্থ: যে পদার্থের ভেতর তড়িৎ বা বিদ্যুৎ পরিবহনের জন্য কোনো মুক্ত ইলেকট্রন নেই সেই পদার্থগুলো হচ্ছে বিদ্যুৎ অপরিবাহী বা অন্তরক পদার্থ। প্লাস্টিক, রাবার, কাঠ, কাচ এগুলো হচ্ছে অপরিবাহী পদার্থের উদাহরণ। মূলত অধাতুগুলো বিদ্যুৎ অপরিবাহী হয় । 

অর্ধপরিবাহী পদার্থ: কিছু কিছু পদার্থের বিদ্যুৎ পরিবহন ক্ষমতা সাধারণ তাপমাত্রায় পরিবাহী এবং অপরিবাহী পদার্থের মাঝামাঝি, তবে তাপমাত্রা বাড়ালে পরিবহন ক্ষমতা বেড়ে যায়। এই ধরনের পদার্থকে অর্ধপরিবাহী বা সেমিকন্ডাক্টর বলে। সিলিকন বা জার্মেনিয়াম সেমিকন্ডাক্টরের উদাহরণ। এই বইয়ের শেষ অধ্যায়ে সেমিকন্ডাক্টর নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। 

 

Content added By

আমরা দেখেছি দুটো ভিন্ন বিভবের বস্তুকে পরিবাহী দিয়ে সংযুক্ত করে দিলে আধানের প্রবাহ শুরু হয় এবং যতক্ষণ পর্যন্ত পটেনশিয়াল সমান না হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত আধানের প্রবাহ হয় এবং আমরা বলি তাদের মাঝে বিদ্যুৎ প্রবাহ হচ্ছে। তোমাদের কেউ কেউ নিশ্চয়ই এখন একটু ভাবনার মাঝে পড়েছ, কারণ আমরা যখন আধান বা চার্জের প্রবাহ দিয়ে দুটি ভিন্ন বিভবের মাঝে সমতা আনার কথা বলেছি তখন কিন্তু একবারও বলিনি এটা শুধু নেগেটিভ চার্জের জন্য সত্যি, কারণ শুধু নেগেটিভ চার্জের ইলেকট্রনই এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে পারে। পজিটিভ চার্জের বেলায় তাহলে কী হয়? পজিটিভ আয়ন তো খুবই শক্তভাবে নিজের জায়গায় আটকে থাকে, তাহলে কেমন করে পজিটিভ চার্জ এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যায়? 

তোমরা নিশ্চয়ই কী ঘটে সেটা অনুমান করে ফেলেছ, ইলেকট্রনের অভাব হচ্ছে পজিটিভ চার্জ। তাই ইলেকট্রনকে সরিয়ে অভাব আরো বাড়িয়ে দেওয়ার অর্থ হচ্ছে পজিটিভ চার্জ সরবরাহ করা। 

আধান বা চার্জের প্রবাহ হচ্ছে বিদ্যুৎ প্রবাহ বা তড়িৎ প্রবাহ। আমরা এতক্ষণ সাধারণভাবে এটা বোঝার চেষ্টা করেছি, এখন এটাকে আরো একটু নির্দিষ্ট করা যাক। বিদ্যুৎ বা তড়িৎ প্রবাহ বলতে আমরা সময়ের সাথে চার্জ প্রবাহের হারকে বোঝাই অর্থাৎ t সময়ে যদি Q চার্জ প্রবাহিত হয় তাহলে বিদ্যুৎ বা তড়িৎ প্রবাহ হচ্ছে: 

                                                                                    I=Qt

আধান বা চার্জের একক কুলম্ব C এবং সময়ের একক সেকেন্ড হলে বিদ্যুৎ প্রবাহের একক হচ্ছে অ্যাম্পিয়ার A। মজার ব্যাপার হচ্ছে, আমরা কিন্তু চার্জের একক বের করার জন্য বলেছিলাম এক সেকেন্ডে এক অ্যাম্পিয়ার বিদ্যুৎ প্রবাহ করতে যে পরিমাণ চার্জ প্রবাহিত হয় সেটাই হচ্ছে কুলম্ব। তড়িৎ বা বিদ্যুৎ প্রবাহ (কারেন্ট) হচ্ছে চার্জ প্রবাহের হার,একটি তারের এক প্রান্ত(A) থেকে অন্য প্রান্তে(B) যদি 1 অ্যাম্পিয়ার কারেন্ট প্রবাহিত হয় তার অর্থ 1 কুলম্ব পজিটিভ চার্জ  গিয়েছে। যার প্রকৃত অর্থ 1 কুলম্ব চার্জের সমপরিমাণ ইলেকট্রন B থেকে A তে গিয়েছে। কাজেই তোমরা দেখতে পাচ্ছ, বিদ্যুৎ প্রবাহের দিক হচ্ছে ইলেকট্রন প্রবাহের দিকের উল্টো। (ইলেকট্রনের চার্জকে পজিটিভ ধরে নিলেই সব সমস্যা মিটে যেত কিন্তু সেটার জন্য এখন দেরি হয়ে গেছে।) 

Content added || updated By

এবারে আমরা সত্যিকারের বর্তনী বা সার্কিটে সত্যিকারের বিদ্যুৎ প্রবাহ নিয়ে আলোচনা করব। আমরা অনেকবার বলেছি যে দুটি বিন্দুতে যদি পটেনশিয়াল বা বিভব পার্থক্য থাকে এবং আমরা যদি একটি পরিবাহী তার দিয়ে সেই দুটি বিন্দুকে জুড়ে দিই তাহলে বিন্দু দুটির ভেতরে বিদ্যুৎ প্রবাহ হবে, কিন্তু কতটুকু বিদ্যুৎ প্রবাহ হবে সেটি নিয়ে এখনো কিছু বলা হয়নি। শুধু তাই নয় একটা সোনার পরিবাহী তার দিয়ে জুড়ে দিলে যেটুকু বিদ্যুৎ প্রবাহিত হবে একটা লোহার তার জুড়ে দিলেও কি সমান পরিমাণ বিদ্যুৎ প্রবাহিত হবে? 

 

Content added By

পটেনশিয়াল বা বিভব পার্থক্য এবং তড়িৎ প্রবাহের মাঝে সম্পর্ক দেখার জন্য আমরা একটা এক্সপেরিমেন্ট করতে পারি। বিভব মাপার জন্য যে বক্সটি ব্যবহার করা হয় তার নাম ভোল্টমিটার, বিদ্যুৎ প্রবাহ বা কারেন্ট মাপার জন্য যে যন্ত্র ব্যবহার করা হয় সেটার নাম অ্যামিটার। (আসলে একই যন্ত্রের সুইচ ঘুরিয়ে এটাকে কখনো ভোল্টমিটার বা কখনো অ্যামিটার হিসেবে ব্যবহার করা যায়) আমরা কয়েকটা ব্যাটারি সেল নিতে পারি, একটা ব্যাটারি সেলের জন্য বিভব 1.5 v হলে দুটি ব্যাটারি সেলের জন্য 2 x 1.5= 3 V, তিনটির জন্য 3 x 1.5 = 4.5v এভাবে ভিন্ন ভিন্ন বিভব পার্থক্য প্রয়োগ করতে পারি। শুধু তাই নয়, আমরা ব্যাটারিগুলো উল্টে দিয়ে বিভব পার্থক্যের দিকও পরিবর্তন করে দিতে পারি। কাজেই আমরা যদি একটা তার বা অন্য কোনো পরিবাহীর দুই পাশে একটা বিভিন্ন পজিটিভ এবং নেগেটিভ বিভব পার্থক্য প্রয়োগ করে কতখানি বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয়েছে সেটা মাপার চেষ্টা করি তাহলে দেখব 

(a) যত বেশি বিভব পার্থক্য তত বেশি বিদ্যুৎ প্রবাহ

(b) বিভব পার্থক্য নেগেটিভ হলে বিদ্যুৎ প্রবাহও দিক পরিবর্তন করছে। 

 

অর্থাৎ                            IV

 

আমরা যদি অন্য কোনো উপাদানের তৈরি একটা তার দিয়ে একই পরীক্ষাটি করি তাহলে একই ধরনের ফলাফল পাব। তবে সরলরেখার ঢালটা হয়তো অন্য রকম হবে। এখন এই দুটি পরীক্ষার ফলাফল যদি বিশ্লেষণ করি তাহলে বুঝতে পারব প্রথমে একটা নির্দিষ্ট বিভব পার্থক্যে যতটুকু বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয়েছে দ্বিতীয় বস্তুর জন্য সেই একই বিভব পার্থক্যে বিদ্যুৎ প্রবাহ হচ্ছে কম। প্রথমটিতে যেন বিদ্যুৎ প্রবাহ তুলনামূলকভাবে সহজ, দ্বিতীয়টিতে যেন বিদ্যুৎ প্রবাহের বাধা একটু বেশি। বিষয়টা ব্যাখ্যা করার জন্য বিদ্যুৎ প্রবাহের বাধা (Resistance) বা সত্যি সত্যি রোধ নামের একটা রাশি তৈরি করা হয়েছে। আমরা দেখতে পারি বিভব পার্থক্য এবং বিদ্যুৎ প্রবাহের সম্পর্কটি একটা সূত্র হিসেবে লেখা যায় যেটি ও'মের সূত্র (Ohm's Law) হিসেবে পরিচিত। 

                                                                      I=VR

অর্থাৎ রোধ বেশি হলে বিদ্যুৎ প্রবাহ হবে কম। রোধ কম হলে বিদ্যুৎ প্রবাহ হবে বেশি। 

এই রোধ বা Resistance এর একক হচ্ছে Ohm । এটাকে গ্রিক অক্ষর Ω(সিগমা) দিয়ে প্রকাশ করা হয়। কোনো বৈদ্যুতিক সার্কিটে 1 v বিভব পার্থক্য দেওয়ার পর যদি দেখা যায় 1 A বিদ্যুৎ প্রবাহিত হচ্ছে তাহলে বুঝতে হবে সেই সার্কিটের রোধ 1Ω। 

Content added By
Content updated By

রোধ হচ্ছে বিদ্যুৎ প্রবাহের বাধা, তাই কোনো পদার্থের দৈর্ঘ্য (L) যত বেশি হবে তার বাধা তত বেশি হবে অর্থাৎ রোধও বেশি হবে। 

                                                            RL 

আবার সরু একটা পথ দিয়ে যত সহজে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হতে পারবে, চওড়া একটা পথ দিয়ে তার থেকে অনেক সহজে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হতে পারবে অর্থাৎ প্রস্থচ্ছেদ (A) যত বেশি হবে রোধ তত কম হবে। 

                                                        R1A

এই দুটি বিষয়কে আমরা যদি একসাথে আনুপাতিক না লিখে সমীকরণ হিসেবে লিখতে চাই তাহলে একটা ধ্রুবক p ব্যবহার করতে হবে। অর্থাৎ রোধ R হচ্ছে 

                                                  R=ρLA

যেখানে ধ্রুবক ρ হচ্ছে 

                                                 ρ=RAL

 

একটা নির্দিষ্ট পদার্থের জন্য ρ হচ্ছে আপেক্ষিক রোধ এবং তাই এর একক হচ্ছে Ωm.

টেবিল 11.01: পদার্থের আপেক্ষিক রোধ

 পদার্থ                                    আপেক্ষিক রোধ ( Ωm
রূপা1.59×10-8
তামা2.44×10-8
সোনা2.44×10-8
গ্রাফাইট2.50×10-6
হীরা1×1012
বাতাস1.30×1016

 

কোনো পদার্থ কতটুকু বিদ্যুৎ পরিবাহী সেটা বোঝানোর জন্য পরিবাহকত্ব বলে একটা রাশি σ তৈরি করা হয়েছে, যে পদার্থ যত বেশি বিদ্যুৎ পরিবাহী তার পরিবাহকত্ব তত বেশি, যেটা আপেক্ষিক রোধ ( টেবিল 11.01 ) এর ঠিক বিপরীত। 

                      σ=1ρ

পরিবাহকত্ব σ এর একক হচ্ছে  (Ωm)-1

এখানে একটা বিষয় মনে রাখতে হবে কোনো পদার্থের রোধ হচ্ছে ইলেকট্রন প্রবাহের বাধা, অণু- পরমাণুগুলো যত বেশি কাঁপাকাঁপি করে একটা ইলেকট্রন তাদের ভেতর দিয়ে যেতে তত বেশি বাধাগ্রস্ত হয়, কিংবা তার রোধ তত বেশি। ভাপমাত্রা বাড়িয়ে দিলে যেহেতু অণু-পরমাণুগুলো বেশি কাঁপাকাঁপি করে ভাই সব সময়ই তাপমাত্রা বাড়ালে পরিবাহী পদার্থের আপেক্ষিক রোধ বেড়ে যায়। সেজন্য যখন কোনো পদার্থের রোধ বা আপেক্ষিক রোধ প্রকাশ করতে হয় তখন তার জন্য তাপমাত্রাটা নির্দিষ্ট করে বলে দিতে হয়। 

স্থির মানের রোধ: বিভিন্ন বর্তনী বা সার্কিটে ব্যবহার করার জন্য নির্দিষ্ট মানের রোধ বা রেজিস্টর ব্যবহার করা হয়। এগুলো নানা আকারের এবং নানা ধরনের হতে পারে। ল্যাবরেটরিতে ব্যবহার করার জন্য যে রোধ ব্যবহার করা হয় সাধারণত তার উপরে বিভিন্ন রঙের ব্যান্ডের মাধ্যমে তার মান প্রকাশ করা হয়। একটি রোধের মান ছাড়াও সেটি কত বৈদ্যুতিক ক্ষমতা সহ্য করতে পারবে সেটিও নির্দিষ্ট করে দেওয়া থাকে। 

পরিবর্তী রোধ: মাঝে মাঝেই কোনো ইলেকট্রিক সার্কিটে একটি রোধের প্রয়োজন হয়, যেটির মান প্রয়োজনমতো পরিবর্তন করা যেতে পারে। যে ধরনের রোধের মান একটি নির্দিষ্ট সীমার ভেতরে পরিবর্তন করা যায় সেটিকে পরিবর্তী রোধ বা রিওস্টেট বলে। স্থির রোধের দুটি প্রাঙ্ক থাকে, পরিবর্তী রোখে দুই প্রান্ত ছাড়াও মাঝখানে আরেকটি প্রান্ত থাকে, যেখানে পরিবর্তন করা রোধের মানটুকু পাওয়া যায়। 

পরিবাহীতে তাপমাত্রা বাড়ালে রোধ বেড়ে যায় কিন্তু সেমিকন্ডাক্টরের বেলায় ঠিক তার উল্টো ব্যাপারটা ঘটে। সেমিকন্ডাক্টরে তাপমাত্রা বাড়ালে রোধ কমে যায়। তার কারণ কন্ডাক্টরে যেমন বিদ্যুৎ প্রবাহের জন্য মুক্ত ইলেকট্রন রয়েছে সেমিকন্ডাক্টরে তা নেই। সেখানে তাপমাত্রা বাড়ালেই শুধু কিছু ইলেকট্রন বিদ্যুৎ প্রবাহের জন্য পাওয়া যায়। তাই সেখানে তাপমাত্রা বাড়ালে রোধ কমে যায়। 

Content added By
Content updated By

আমরা যদি ও'মের সূত্র বুঝে থাকি তাহলে আমরা এখন সার্কিট বিশ্লেষণ করতে পারি। সেটা করার আগে সার্কিটে ব্যবহার করা হয় এ রকম কয়েকটি প্রতীকের সাথে আগে পরিচিত হয়ে নিই: (চিত্র 11.07)

                                         চিত্র 11.7; সার্কিট বা বর্তনীতে ব্যবহার করা হয় এ রকম কিছু প্রতীক

 

সব পদার্থেরই কিছু না কিছু রোধ আছে কিন্তু আমাদের দৈনন্দিন জীবনে সার্কিটে ব্যবহারের সময় বৈদ্যুতিক তারের রোধকে আমরা ধর্তব্যের মাঝে নিই না। যখন রোধ প্রয়োজন হয় তখন আমরা বিশেষভাবে তৈরি বিভিন্ন মানের রোধ ব্যবহার করি। কখনো কখনো বিশেষ প্রয়োজনে এমন রোধ ব্যবহার করা হয় যেখানে তার মানটি পরিবর্তনও করা যায়, এগুলোকে পরিবর্তনশীল রোধ বলে। 

কোনো সার্কিট বিশ্লেষণ করতে হলে নিচের কয়েকটা সোজা বিষয় মনে রাখাই যথেষ্ট; 

(a) বিদ্যুতের উৎসের (ব্যাটারি সেল, জেনারেটর যাই হোক) উঁচু পটেনশিয়াল থেকে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ বের হয় পুরো সার্কিটের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ঠিক সেই পরিমাণ বিদ্যুৎ কম পটেনশিয়ালে ফিরে আসে। 

(b) সার্কিটের যেকোনো জায়গার যেকোনো বিন্দুতে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ ঢোকে ঠিক সেই পরিমাণ বিদ্যুৎ বের হয়ে যায়, সার্কিটের ভেতরে বিদ্যুতের কোনো সৃষ্টি বা ধ্বংস নেই। 

(c) সার্কিটের ভেতরে যেকোনো অংশের দুই বিন্দুতে ওহমের সূত্র সব সময় সত্যি হবে, অর্থাৎ সেই দুই অংশের যে পরিমাণ বিভব পার্থক্য রয়েছে ডাকে সেই অংশের রোধ দিয়ে ভাগ দিলেই তার ভেতর দিয়ে প্রবাহিত বিদ্যুৎ বের হয়ে যাবে। 

আমরা এখন যেকোনো বর্তনী বা সার্কিট বিশ্লেষণ করতে প্রস্তুত। একটা সার্কিটের যেকোনো অংশ দিয়ে কতটুকু বিদ্যুৎ প্রবাহিত হচ্ছে এবং যেকোনো অংশের বিভব কত সেটা জানলেই আমরা ধরে নেব সার্কিটটা আমরা পুরোপুরি বুঝে গেছি। একটা সার্কিটে ব্যাটারি সেল, রোধ, ক্যাপাসিটর, ডায়োড, ট্রানজিস্টর অনেক কিছু থাকতে পারে। তবে আমরা আপাতত শুধু ব্যাটারি সেল আর রোধ দিয়ে তৈরি সার্কিট বিশ্লেষণ করব। সার্কিটে বিভিন্ন রোধ তামার তার দিয়ে সংযুক্ত করা হয়, যদিও আমরা দেখেছি তামারও একটি আপেক্ষিক রোধ আছে। কিন্তু বাস্তব জীবনে সার্কিটে যে রোধ ব্যবহার করা হয় তাদের তুলনায় এটি এত কম যে আমরা এটাকে ধর্তব্যের মাঝেই আনব না। ধরে নেব তারের রোধ নেই। কাজেই একটা তারের সব জায়গায় বিভব সমান। 

চিত্র 11.08: আক্রি ব্যাটারি সেল এবং একটি রোধ সংযুক্ত দুটি বর্তনী বা সার্কিট

এবারে 11.08a চিত্রে দেখানো একটা বর্তনী বিশ্লেষণ করা যাক, এখানে একটা রোধকে দুটো তার দিয়ে একটা ব্যাটারি সেলের দুই মাথায় লাগানো হয়েছে। যেহেতু CD অংশটুকু ভূমিসংলগ্ন করা হয়েছে তাই আমরা বলতে পারব ব্যাটারি সেলের নিচের প্রান্তটির বিভব হচ্ছে শূন্য। তাই ব্যাটারির উপরের প্রান্তের বিভব V এবং BC অংশে একটা রোধ, রোধের দুই পাশে বিভব পার্থক্য হচ্ছে 

                                                               V-0=V

কাজেই রোধ যদি R হয় তাহলে এর ভেতর দিয়ে যে বিদ্যুৎ I প্রবাহিত হচ্ছে তার মান 

                                                                 I=VR

কাজেই ব্যাটারির A থেকে I বিদ্যুৎ বের হয়ে B বিন্দুতে ঢুকে যাচ্ছে। আমরা এই সার্কিটের প্রত্যেকটা বিন্দুতে বিভব আর বিদ্যুৎ বের করে ফেলেছি। 

ধরা যাক হুবহু একই সার্কিটে আমরা যদি DC অংশ ভূমিসংলগ্ন না করে AB অংশ ভূমিসংলগ্ন করি (চিত্র 11.02b) তাহলে কী হবে? ব্যাটারি সেলটা যেহেতু V ভোল্টের তাই A এবং D এর পার্থক্য v থাকতেই হবে, যেহেতু A এর বিভব শূন্য তাই D এর বিভব নিশ্চয়ই -V. কাজেই B এবং C এর বিভব পার্থক্য 

                                                         0-(-V)=V

ভেতরকার রোধ R, কাজেই বিদ্যুৎ প্রবাহ: 

                                                                I=VR

অর্থাৎ ঠিক আগের মান, যেটাই হওয়ার কথা। লক্ষ করো পটেনশিয়ালের মান পরিবর্তন হয়েছে কিন্তু পার্থক্য পরিবর্তন হয়নি। 

 

Content added By
Content updated By

এবারে কোনো বর্তনীতে একাধিক রোধ থাকলে সেগুলোকে কীভাবে একটি ভুল্য রোধ হিসেবে বিবেচনা করা যায় আমরা সেই বিষয়টি দেখে নেই । 11.03 চিত্রের সার্কিটে দুটো রোধ লাগানো আছে, যেহেতু C ভূমিসংলগ্ন তাই তার বিভব শূন্য এবং A এর বিভব V। আমরা B এর বিভব কত জানি না, কিন্তু এটুকু জানি যে R1 এবংR2 দুটোর ভেতর দিয়েই সমান পরিমাণ বিদ্যুৎ I প্রবাহিত হচ্ছে। আমরা এমনিতেই বলে দিতে পারি যে দুটো রোধের যোগফলটি হবে মোট রোধ R এবং বিদ্যুৎ প্রবাহ হবে 1 = V/R কিন্তু সেভাবে না লিখে আমরা বরং এটা প্রমাণ করে ফেলি। 

                                                

                                                 চিত্র 11.11: একটি বর্তনী বা সার্কিটে দুটি রোধ পরপর                                                                                                                                           লাগানো।

 

যদি ধরে নিই B এর বিভব Vs তাহলে প্রথম রোধR1এর জন্য লিখতে পারি:

                                                                          I=V-VBR1

                                                                                                                  

আবার দ্বিতীয় রোধ R2 এর জন্য লিখতে পারি :

                                                                    I=VB-0R1=VBR2

কাজেই 

                                                                     

কাজেই

                                                                      I=VBR2=VR1+R2

আমরা R1এবং R2 এই দুটি রোধকে একটি রোধ R=R1+R2হিসেবে কল্পনা করতে পারিঃ

                                                                        I=VR

 

 চিত্র 11.12: অনেক গুলো পর্যায়ক্রম রোধকে একটি তুল্য রোধ হিসেবে কল্পনা করা যায়।

যদি এখানে দুটি না হয়ে তিন-চারটি বা আরো বেশি রোধ থাকত (চিত্র 11.12) তাহলেও আমরা দেখাতে পারতাম যে সেগুলোকে সম্মিলিতভাবে একটি রোধ R কল্পনা করতে পারি বেটি সবগুলো রোধের যোগফলের সমান। এটাকে তুল্য রোধ বলে। অর্থাৎ যখন কোনো সার্কিটে R1,R2,R3........ রকম অনেকগুলো রোধ পরপর থাকে (শ্রেণি বর্তনী} তখন তাদের তুল্য রোধ 

                                                 R=R1+R2+R3+.........+Rn 

 

Content added By
Content updated By

এবারে আমরা রোধগুলো পরপর না রেখে সমান্তরালভাবে রাখব (চিত্র 11.13)। এই সার্কিটে আমরা বিভিন্ন বিন্দুকে A, B, C, D, E এবং F নাম দিয়েছি। চিত্রটি দেখেই বোঝা যাচ্ছে D, E এবং F বিন্দু ভূমিসংলগ্ন হওয়ার এই বিন্দুগুলোর বিভব শূন্য। কাজেই A, B এবং C বিন্দুতে বিভব V. ব্যাটারি সেল থেকে । কারেন্ট বের হয়েছে।

                                           

                                            চিত্র 11.13: একটি সার্কিটে দুটি রোধ সমান্তরাল্ভাবে রাখা

এই বিদ্যুৎ B বিন্দুতে দুই ভাগে ভাগ হয়ে R1এবংR2রোধের ভেতর দিয়ে যথাক্রমে I1 এবং I2 হিসেবে প্রবাহিত হয়ে E বিন্দুতে একত্র হয়েI হিসেবে ব্যাটারি সেলে ফিরে যাচ্ছে। আমরা আগেই বলেছি সার্কিটে ব্যাটারি থেকে বিদ্যুৎ বের হয়, সার্কিটে ঘুরে আবার ব্যাটারি সেলে ফিরে যায়। পুরো সার্কিটে এর বাইরে কোনো বিদ্যুতের জন্ম হতে পারে না, আবার ক্ষয়ও হতে পারে না। তাই 

                                                                          I=I1+I2

এখন আমরা I1 এবং I2 কত হবে বের করতে পারি

                                                            

কাজেই

                                                           I=I1+I2=VR1+VR2=V1R1+1R2

 

অর্থাৎ এবারেও আমরা একটা তুল্য রোধ R সংজ্ঞায়িত করতে পারি যেখানে 

                                                                I=VR এবং 1R =1R1+1R2

চিত্র 11.14: অনেকগুলো সমান্তরাল রোধ বা রেজিস্ট্ররকে একটি তুল্য রোধ বা রেজিস্ট্রর  হিসেবে কল্পনা করা যায়।

এখানে যদি দুটো না হয়ে আরো বেশি রোধ থাকে (চিত্র 11.14) তাহলেও আমরা দেখতে পারি: তুল্য রোধ R হচ্ছে 

                                             1R=1R1+1R2+1R3+..............+1Rn

Content added By
Content updated By

আমরা যখন বিভব বা পটেনশিয়াল আলোচনা করছিলাম তখন দেখেছি পটেনশিয়াল প্রয়োগ করে চার্জকে সরানো হলে কাজ করা হয় বা শক্তি ক্ষয় হয়। তাই যদি একটা সার্কিটে V বিভব প্রয়োগ করে Q চার্জকে সরানো হয় তাহলে কাজের পরিমাণ বা শক্তি প্রয়োগের পরিমাণ 

                                                        W = VQ Joule 

ক্ষমতা P হচ্ছে প্রতি সেকেন্ডে কাজ করার ক্ষমতা, কাজেই যদি t সময়ে Q চার্জ সরানো হয়ে থাকে তাহলে 

                                           P=Wt=VQt=VI Watt

যদি একটা রোধ R এর ওপর এটা ব্যবহার করি তাহলে ও'মের সূত্র ব্যবহার করে লিখতে পারি 

যেহেতু 

                                                            

কিংবা

                                                         I=VR

কাজেই 

                                                 P=VR2R=V2R

একটি রোধের ভেতর যদি t সময় বিদ্যুৎ প্রবাহিত করা হয় তাহলে তার ভেতর Pt শক্তি দেওয়া হয়। এই শক্তিটি কোথায় যায়? তোমরা যখন সার্কিটে একটি রোধ ব্যবহার করবে তখন দেখবে তার ভেতর দিয়ে যথেষ্ট বিদ্যুৎ প্রবাহ করলে সব সময়ই সেটা উত্তপ্ত হয়ে ওঠে অর্থাৎ শক্তিটুকু তাপশক্তি হিসেবে বের হয়ে আসে। 

ফিলামেন্ট দেওয়া বাল্বগুলোর প্রচলন ধীরে ধীরে কমে আসছে, কারণ এটা দিয়ে আলো তৈরি করার জন্য ফিলামেন্টকে উত্তপ্ত করতে হয়, বিদ্যুৎ শক্তির বড় অংশ তাপ হিসেবে খরচ হয়ে যায় বলে এখানে শক্তির অপচয় হয়। এই ধরনের বাল্বগুলো হাত দিয়ে স্পর্শ করলেই দেখা যায় এখানে কী পরিমাণ তাপশক্তি তৈরি হয় এবং এই তাপপত্তি তৈরি হয় প্রতি সেকেন্ডে I2R কিংবা V2Rহিসেবে। 

বৈদ্যুতিক শক্তি শুধু যে একটি রোধে তাপশক্তি হিসেবে খরচ হয় তা নয়, সেটি ফ্যান, টেলিভিশন, কম্পিউটার, চার্জার ইত্যাদি নানা ধরনের যন্ত্রপাতিতে নানা ধরনের কাজ করার সময় শক্তি সরবরাহ করে থাকে। কোনো একটি বৈদ্যুতিক যন্ত্রে প্রতি সেকেন্ডে কী পরিমাণ বৈদ্যুতিক শক্তি খরচ হচ্ছে সেটি খুব সহজেই VI থেকে বের করতে পারব। প্রত্যেক বাসায় বিদ্যুৎ মিটার থাকে, সেটি কত পটেনশিয়ালে (V) কত বিদ্যুৎ প্রবাহ (I) করছে সেটি মাপতে থাকে, সেখান থেকে একটি বাসায় প্রতি সেকেন্ডে কী পরিমাণ বৈদ্যুতিক শক্তি (P=VI) সরবরাহ করছে সেটি জানতে পারে। এর সাথে মোট সময় গুণ করে ব্যবহৃত মোট বৈদ্যুতিক শক্তি বের করা হয়। বৈদ্যুতিক শক্তি ব্যয়ের প্রচলিত একক হচ্ছে কিলোওয়াট-ঘণ্টা (kw-h)। এই একককে বোর্ড অব ট্রেড (BOT) ইউনিট বা সংক্ষপে ইউনিট বলে। আমরা যে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করি তা এই এককেই হিসাব করা হয়। 

Content added By
Content updated By

যখন দেশের এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় বিদ্যুৎ পরিবহন করতে হয় তখন সেটি অনেক উচ্চ ভোল্টেজে নিয়ে যাওয়া হয়। বৈদ্যুতিক তারে বিদ্যুতের অপচয় কমানোর জন্য এটি করা হয়। তোমরা জানো তাপ হিসেবে প্রতি সেকেন্ডে যে পরিমাণ শক্তি ক্ষয় হয় সেটি হচ্ছে I2R কাজেই যদি বৈদ্যুতিক তারে কোনো রোধ R না থাকত তাহলে তাপ হিসেবে কোনো শক্তির অপচয় হতো না। কিন্তু সেটি বাস্তবসম্মত নয়, সব কিছুরই কিছু না কিছু রোধ থাকে। তাই কারেন্ট বা বিদ্যুৎ প্রবাহ কমাতে পারলে তাপ হিসেবে শক্তি ক্ষয় I2R এর মান কমানো সম্ভব। প্রতি সেকেন্ডে বৈদ্যুতিক শক্তি যেহেতু VI হিসেবে যায় তাই যদি পটেনশিয়াল দশ গুণ বাড়িয়ে দেওয়া হয় তাহলে দশ গুণ কম কারেন্টে সমান শক্তি প্রেরণ করা সম্ভব। দশ গুণ কম কারেন্ট প্রবাহিত হলে 100 গুণ কম তাপশক্তির অপচয় হবে। কারণ তারের রোধ R এর মান দুইবারই সমান। 

এখানে তোমাদের মনে হতে পারে তাপশক্তির অপচয়V2R হিসেবেও লেখা যায় তাই দশ গুণ বেশি ভোল্টেজ নেওয়া হলে 100 গুণ বেশি তাপশক্তির অপচয় কেন হবে না? মনে রাখতে হবে আমরা যখন প্রতি সেকেন্ডে তাপশক্তির অপচয় হিসেবেV2R বের করেছিলাম তখন V ছিল রোধের দুই পাশের বিভব R পার্থক্য। এখানে আমরা যখন V বলছি সেটি বৈদ্যুতিক তারের দুই পাশের বিভব পার্থক্য নয়। এটি বৈদ্যুতিক তারের বিভবের মান। বৈদ্যুতিক তারের দুই পাশে বিভব প্রায় একই সমান। সেই পার্থক্য ধর্তব্যের মধ্যে নয়। 

 

Content added By

আমরা জানি দেশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত পাওয়ার প্লান্টগুলোতে বিদ্যুৎ শক্তি উৎপাদন করে। এই বিদ্যুৎকে প্রয়োজন অনুসারে বিভিন্ন এলাকায় পাঠাতে হয়। বিদ্যুৎ বিতরণ করার জন্য প্রথমে বিভিন্ন এলাকার সাবস্টেশনে পাঠানো হয়। সাবস্টেশন থেকে বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা ব্যবহার করে বিদ্যুৎ শক্তিকে একেবারে গ্রাহক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়।বিদ্যুৎ শক্তিকে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় বিতরণ করার জন্য যে পরিবাহী তার ব্যবহার করা হয় কম হলেও তাদের এক ধরনের রোধ থাকে। একটা রোধের (R) ভেতর দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহ ( I ) হলে সব সময়ই (I2R) তাপ উৎপন্ন হয় এবং সেটি বিদ্যুৎ শক্তির লস বা ক্ষয়। এই লসকে বলা হয় সিস্টেম লস। তোমরা এর মাঝে জেনে গেছ যে একটা নির্দিষ্ট বিদ্যুৎ শক্তির জন্য যদি উচ্চ ভোল্টেজ বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয় তাহলে রোধজনিত তাপশক্তি হিসেবে লস কমে যায়। সে জন্য বিদ্যুৎ কেন্দ্রে যে বিদ্যুৎ শক্তি উৎপাদন করা হয় সেটিকে স্টেপ আপ ট্রান্সফর্মার দিয়ে উচ্চ ভোল্টেজে রূপান্তর করা হয়। গ্রাহকদের ব্যবহারের জন্য বিদ্যুৎ শক্তিকে বিতরণ করার আগে স্টেপ ডাউন ট্রান্সফর্মার ব্যবহার করে সেটিকে আবার ব্যবহারযোগ্য ভোল্টেজ নামিয়ে আনা হয়। 

 

Content added By

প্রত্যেকটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ বিদ্যুৎশক্তি উৎপাদন করে এবং সবগুলো বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ হয়। আগেই বলা হয়েছে এই বিদ্যুৎ স্থানীয় সাবস্টেশন (বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র) এর মাধ্যমে গ্রাহকদের মাঝে বিতরণ করা হয়। বিভিন্ন এলাকার চাহিদা অনুযায়ী জাতীয় গ্রিড বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। কোনো এলাকায় বিদ্যুতের চাহিদা যদি উৎপাদন থেকে বেশি হয় তাহলে স্বাভাবিকভাবেই সেখানে প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারে না। তখন সাবস্টেশনগুলো এক এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করার জন্য অন্য একটি এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়। এই প্রক্রিয়াটার নাম লোডশেডিং। সাবস্টেশন যখন আবার প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ সরবরাহ পায় তখন সেই এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করে। 

যদি একনাগাড়ে কয়েক ঘণ্টা লোডশেডিং করতে হয় তখন গ্রাহক পর্যায়ে লোডশেডিংকে সহনীয় করার জন্য কর্তৃপক্ষ চক্রাকারে বিভিন্ন জায়গা আলাদা আলাদা সময়ে লোডশেডিং করে থাকে। 

 

Content added By

বিদ্যুৎ ছাড়া আমরা এখন এক মুহূর্তও চিন্তা করতে পারি না। আমাদের ঘরে এটি আলো সরবরাহ করে, গরমের সময় ফ্যান চালিয়ে এটা আমাদের শীতল রাখে। এটা দিয়ে আমরা টেলিভিশন চালাই, কম্পিউটার চালাই। খাবার সংরক্ষণ করার জন্য এটা দিয়ে ফ্রিজ চালানো হয়। কাপড় ইস্ত্রি করার জন্য এটি ব্যবহার করা হয়। আমাদের মোবাইলের ব্যাটারি শেষ হয়ে গেলে আমরা এই বিদ্যুৎ দিয়ে ব্যাটারি চার্জ করি। বিলাসী মানুষ বিদ্যুৎ দিয়ে বাসায় এসি ব্যবহার করে, কাপড় ধোয়ার জন্য ওয়াশিং মেশিন ব্যবহার করে, ইলেকট্রিক হিটার দিয়ে রান্না করে। মাইক্রোওয়েভ ওভেনে খাবার গরম করে। 

বাসার বাইরে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, ক্ষেত-খামার, কারখানা, হাসপাতাল এসবের কথা বিবেচনা করলে আমরা বিদ্যুতের ব্যবহারের কথা বলে শেষ করতে পারব না। আমাদের দেশে সাধারণত বিদ্যুৎ 220 V (AC) হিসেবে সরবরাহ করা হয়, এই বিদ্যুতের ভোল্টেজের পরিমাণ মানুষকে ইলেকট্রিক শক দিতে পারে এমনকি সেই শকে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। তাই সকল বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি এমনভাবে তৈরি করা হয় যেন ভুলেও কখনো কেউ সরাসরি এর সংস্পর্শে চলে না আসে। 

সরাসরি হৃৎপিণ্ডের ভেতর দিয়ে বিদ্যুৎ চলে গেলে মাত্র 10 mA বিদ্যুতেই মানুষ মারা যেতে পারে। ব্যবহার করার জন্য আমরা যে বিদ্যুৎ ব্যবহার করি সেটি AC এবং AC বিদ্যুৎ DC বিদ্যুৎ থেকে প্রায় 5 গুণ বেশি ক্ষতিকর। শুকনো অবস্থায় মানুষের চামড়ার রোধ প্রায় 30,002 থেকে 50,000 52 হলেও ভেজা অবস্থায় সেটি হাজার গুণ কমে আসে। কাজেই ও'মের সূত্র ব্যবহার করে আমরা দেখাতে পারি আমাদের দেশের 220 V শরীরের ভেতর দিয়ে মানুষকে মেরে ফেলার মতো বিদ্যুৎ প্রবাহ করতে পারে। যখন কেউ ভেজা মাটিতে ভেজা পা নিয়ে দাঁড়ানো অবস্থায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয় সেটি হয় সবচেয়ে বিপজ্জনক। 

যখন কেউ হঠাৎ করে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয় তখন শরীরের ভেতর দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহের কারণে হাত-পা নাড়াতে পারে না, তাই বিপজ্জনক পরিস্থিতি থেকে নিজেকে সরিয়ে আনার কথা বুঝতে পারলেও সেখান থেকে সরে আসতে পারে না। 

আমরা যে বিদ্যুৎ ব্যবহার করি সেটি যথেষ্ট বিপজ্জনক হতে পারে কিন্তু সাধারণ সতর্কতা বজায় রাখলেই নিরাপদে বিদ্যুৎ ব্যবহার করা যায় এবং সারা পৃথিবীতে কোটি কোটি মানুষ প্রতি মুহূর্তে নিরাপদে বিদ্যুৎ ব্যবহার করছে। বিদ্যুতের নিরাপদ ব্যবহার করার জন্য নিচের কয়েকটা বিষয় জানা থাকা প্রয়োজন: 

(a) বিদ্যুৎ অপরিবাহক আস্তরণ: বিদ্যুতের খোলা তার বিপজ্জনক তাই সব সময়ই সেটা প্লাস্টিক বা অন্য কোনো ধরনের বিদ্যুৎ অপরিবাহী একটা আস্তরণ দিয়ে ঢাকা থাকে। যদি কোনো কারণে শর্ট সার্কিট হয় অর্থাৎ সরাসরি কোনো রোধ ছাড়াই পজিটিভ এবং নেগেটিভ স্পর্শ করে ফেলে তখন ও'মের সূত্র অনুযায়ী অনেক বেশি বিদ্যুৎ প্রবাহ হয়, তার গরম হয়ে যায়, প্লাস্টিক পুড়ে গিয়ে আগুন পর্যন্ত ধরে যায়। তাই সব সময়ই সতর্ক থাকতে হয় যেন বৈদ্যুতিক তারের ওপর অপরিবাহী আস্তরণটা অবিকৃত এবং অক্ষত থাকে। 

(b) ভালো সংযোগ: যখন কোনো বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করার সময় অনেক বিদ্যুৎ ব্যবহার হয় তখন বৈদ্যুতিক সংযোগগুলো খুব ভালো হতে হয়। বৈদ্যুতিক সংযোগ ভালো না হলে সেখানে বাড়তি রোধ তৈরি হয় এবং 12R হিসেবে সেটা উত্তপ্ত হয়ে যেতে পারে, উত্তপ্ত হয়ে অপরিবাহী আস্তরণ পুড়ে যেতে পারে, বৈদ্যুতিক সংযোগ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। 

(c) আর্দ্রতা: পানি বিদ্যুৎ পরিবাহী, কাজেই কোনো বৈদ্যুতিক সার্কিটে পানি ঢুকে গেলে সেখানে শর্ট সার্কিট হয়ে বিপজ্জনক অবস্থা হতে পারে। হেয়ার ড্রায়ার বা ইস্ত্রির মতো জিনিস পানির কাছাকাছি ব্যবহার করা খুব বিপজ্জনক, হঠাৎ করে পানিতে পড়ে গেলে এবং সেই পানি কেউ স্পর্শ করলে বৈদ্যুতিক শক খেয়ে অনেক বড় বিপদ হতে পারে। 

(d) সার্কিট ব্রেকার এবং ফিউজ: বিদ্যুতের বড় বড় দুর্ঘটনা হয় যখন হঠাৎ করে কোনো একটা ত্রুটির কারণে অনেক বেশি বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয়। হঠাৎ করে বিপজ্জনক বিদ্যুৎ প্রবাহ বন্ধ করার জন্য সার্কিট ব্রেকার কিংবা ফিউজ ব্যবহার করা হয়। সার্কিট ব্রেকার এমনভাবে তৈরি করা হয় যে এর ভেতর থেকে নিরাপদ সীমার বেশি বিদ্যুৎ প্রবাহিত হলেই সার্কিট ব্রেক (বিচ্ছিন্ন) করে দেয়। ফিউজ সে তুলনায় খুবই সরল একটা পদ্ধতি, একটি যন্ত্রে যে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয় সেটি যন্ত্রে ঢোকানোর আগে সরু একটা তারের ভেতর দিয়ে নেওয়া হয়। যদি কোনো কারণে বেশি বিদ্যুৎ যাওয়ার চেষ্টা করে ফিউজের সরু তার সেই (রোধ বেশি, কাজেই I2R বেশি অর্থাৎ তাপ বেশি) বিদ্যুতের কারণে উত্তক্ত হয়ে পুড়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে ফেলে। 

(e) সঠিক সংযোগ: বিদ্যুৎ সরবরাহে সব সময়ই দুটি তার থাকে, একটিতে উচ্চ বিভব (জীবন্ত বা Live) অন্যটি ভোল্টেজহীন নিরপেক্ষ (Neutral)। একটা যন্ত্র যখন ব্যবহার করা হয় তখন Live তার থেকে বিদ্যুৎকে যন্ত্রের ভেতর দিয়ে ঘুরিয়ে নিরপেক্ষ ভার দিয়ে তার উৎসে ফিরিয়ে নেওয়া হয়। ভোল্টেজহীন নিরপেক্ষ তারটি নিরাপদ কিন্তু উচ্চ বিভবের তারটিকে সতর্কভাবে ব্যবহার করতে হয়। কোনো যন্ত্রপাতিতে যখন একটা সুইচ দিয়ে বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়া হয় তখন সুইচটি উচ্চ ভোল্টেজের তার কিংবা নিরপেক্ষ তার দুটিতেই দেওয়া যায়। বুদ্ধিমানের কাজ হয় যখন সুইচটি লাগানো হয় উচ্চ ভোল্টেজের তারের সাথে তাহলে শুধু যখন যন্ত্রটি চালু করা হয় তখনই উচ্চ ভোল্টেজ যন্ত্রের ভেতর প্রবেশ করে। যখন যন্ত্রটি বন্ধ থাকে তখন যন্ত্রের ভেতর কোথাও উচ্চ ভোল্টেজ থাকে না। 

(f) গ্রাউন্ড: তোমরা যদি তোমাদের বাসায় স্কুলে কিংবা অন্য কোথাও বিদ্যুতের সংযোগ লক্ষ করে থাকো তাহলে দেখৰে সব সময় অন্তত দুটি সংযোগ থাকে, একটি উচ্চ ভোল্টেজ অন্যটি নিউট্রাল। কিন্তু সেই বিদ্যুতের সাথে যদি মূল্যবান কোনো যন্ত্র যুদ্ধ করা হয় (যেমন কম্পিউটার, ফ্রিজ) তাহলে দেখবে সেখানে উচ্চ বিভব আর নিউট্রাল ছাড়াও তৃতীয় একটা সংযোগ থাকে, যেটি হয়ে ভূমি সংযোগ বা ground. সাধারণত এটা যন্ত্রপাতির ঢাকনা বা কাঠামোতে লাগানো থাকে। যদি কোনো দুর্ঘটনায় যন্ত্রপাতিটি বিদ্যুতায়িত হয়ে যায় তাহলে ঢাকনা বা কাঠামোটি থেকে ভূমিতে সরাসরি বিদ্যুৎ প্রবাহ হয়ে যায়। বিদ্যুতের এই প্রবাহের কারণে সাধারণত ফিউজ পুড়ে যন্ত্রটি বিপদমুগ্ধ হয়ে যায়। কাজেই কেউ যদি ভুলে যন্ত্রটি স্পর্শ করে তার ইলেকট্রিক শক খাওয়ার আশঙ্কা থাকে না। 

Content added By
Content updated By

বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে সাপ্লাই ক্যাবল দিয়ে সেটি একটি বাসায় সরবরাহ করা হয়। এর মাঝে একটি লাইভ অন্যটি নিউট্রাল। লাইভ লাইনটির উচ্চ বিভব, নিউট্রালটি শূন্য বিভব। চিত্রে লাইভ লাইনটি লাল রং এবং নিউট্রাল লাইনটি নীল রং দিয়ে দেখানো হয়েছে। সেটি প্রথমে একটি বৈদ্যুতিক মিটারের ভেতরে দিয়ে যায়, বাসায় কতটুকু বিদ্যুৎ ব্যবহার হয়েছে সেটি এই মিটারে রেকর্ড করা হয়। মিটারের পর এটি কনজিউমার ইউনিটি দিয়ে বাসার ভেতরে বিতরণ করা হয়। 

Content added By
Content updated By