পঞ্চম শ্রেণি (প্রাথমিক) - হিন্দু ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা - NCTB BOOK

পৃথিবীর মানুষের মধ্যে নানা দিক থেকে মিল যেমন আছে, তেমনি আবার অনেক অমিল ও আছে।

মিলের দিক থেকে যদি দেখি, তাহলে দেখব, সবাই মানুষ। সকলের মধ্যে রয়েছে একই মনুষ্যত্ব।

আবার বেশভূষা, চাল-চলন, গায়ের রং, ভাষা প্রভৃতি দিক থেকে পার্থক্য রয়েছে।

ধর্মের দিক থেকেও পার্থক্য আছে। হিন্দুধর্মের পাশাপাশি, ইসলাম, বৌদ্ধ, খ্রিষ্ট প্ৰভৃতি ধর্মের অনুসারীরা রয়েছেন। বিভিন্ন ধর্মের মত ও পথের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। পার্থক্য রয়েছে উপাসনার পদ্ধতিতে।

হিন্দুরা সৃষ্টিকর্তাকে ঈশ্বর বলেন। মুসলমানেরা বলেন আল্লাহ, খ্রিষ্টানেরা বলেন গড। হিন্দুরা উপাসনালয়কে বলেন মন্দির, মুসলমানেরা বলেন মসজিদ, খ্রিষ্টানেরা বলেন গির্জা। কিন্তু সবাই একই সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করেন। তাই ধর্মমত ও উপাসনা পদ্ধতির মধ্যে পার্থক্য থাকলেও ঈশ্বর এক এবং অদ্বিতীয়। সকল ধর্মই নিজের মুক্তি এবং জীব ও জগতের মঙ্গল চায় ৷

শ্রীমদ্‌ভগবদ্‌গীতায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ পার্থকে (অর্জুন) বলেছেন,

যে যথা মাং প্রপদ্যন্তে তাংস্তথৈব ভজাম্যহম্ । 

মম বর্মানুবর্তন্তে মনুষ্যাঃ পাৰ্থ সৰ্বশঃ ৷৷ 

                                        (শ্রীমদ্ভগবদ্‌গীতা, ৪/১১)

অর্থাৎ যে আমাকে যেভাবে উপাসনা করে, আমি সেভাবেই তাকে সন্তুষ্ট করি। হে পার্থ (অর্জুন), মানুষ সকল প্রকারে আমার পথই অনুসরণ করে।

সুতরাং সাধনার পথ একটি নয়, বহু। এদিকে লক্ষ করে শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেব বলেছেন, ‘যত মত, তত পথ'। উপাসনার পথ বিভিন্ন হলেও উপাস্য এক এবং অদ্বিতীয়। 

নিচের ছকটি পূরণ করি :

১। উপাসনালয়কে হিন্দুরা বলেন 
২। উপাসনালয়কে খ্রিষ্টানেরা বলেন 
৩। যত মত 

মানুষে মানুষে কোনো পার্থক্য করা উচিত নয়। সকলকে -সকল মত ও পথের মানুষকে সমতার দৃষ্টিতে দেখা উচিত। একেই বলে ধর্মীয় সাম্য।

ধর্মীয় সাম্য বজায় রাখলে তার মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় সম্প্রীতি।

এ কথা মনে রেখে আমরা সকল ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা পোষণ করব। সকল মানুষের প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শন করব।

কে কোন ধর্মের, কোন জাতির, কোন বর্ণের আমরা তা বিচার করব না। আপদে-বিপদে, আনন্দ-উৎসবে আমরা সকলের সঙ্গে সম্প্রীতিপূর্ণ আচরণ করব। সকল ধর্মের মানুষকে আপন বলে ভাবব।

এভাবে ধর্মীয় সাম্য রক্ষা করে চলব। তাহলে সম্প্রীতির মধ্য দিয়ে আমরা সকলে শান্তিতে জীবনযাপন করতে পারব। তবেই মানুষে-মানুষে জেগে উঠবে মমত্ববোধ ।

ঈশ্বরের একত্ব ও ধর্মীয় সাম্যে গভীর বিশ্বাস রেখে আমরা বলব-

‘সবার উপরে মানুষ সত্য, 

তাহার উপরে নাই। '

আমরা বলব, সকল ধর্মের মানুষ একে অপরের ভাই।

হিন্দুধর্ম বিশ্বাস করে যে, সকল জীবের মধ্যে আত্মারূপে ঈশ্বর অবস্থান করেন। আর এ বিশ্বাস ধর্মীয় সাম্যবোধ জাগ্রত করার প্রধান সহায়ক।

এ কথা মেনে চললে পৃথিবী হবে শান্তিময়-আনন্দময় ।

Content added By

শূন্যস্থান পূরণ কর :

১। সকল মানুষের মধ্যে রয়েছে ___।

২। মুসলমান ধর্মাবলম্বীরা উপাসনালয়কে বলেন ___।

৩। ধর্মীয় সাম্য আমাদের ___ করে। 

৪। মানুষে-মানুষে কোনো ___ করা উচিত নয়। 

৫। ‘সবার উপরে ___ সত্য, তাহার উপরে নাই।’

 

ডান পাশ থেকে শব্দ এনে বাম পাশের শব্দের সঙ্গে মেলাও :

১। ধর্মে-ধর্মে একটি পার্থক্য রয়েছে

২। খ্রিষ্টানেরা ঈশ্বরকে বলেন

৩। ঈশ্বর এক এবং

৪। ধর্মে ধর্মে মত ও পথের বিভিন্নতা থাকলেও

৫। সকল মানুষের প্রতি

গড। 

অদ্বিতীয় । 

উপাসনা পদ্ধতিতে। 

ভালোবাসা প্রদর্শন করব। 

দল বেঁধে চলব। 

ঈশ্বর কিন্তু এক।

 

নিচের প্রশ্নগুলোর সংক্ষেপে উত্তর দাও :

১। পৃথিবীতে প্রচলিত চারটি প্রধান ধর্মের নাম কী ? 

২। যে আমাকে যেভাবে উপাসনা করে আমি তাকে সেভাবেই সন্তুষ্ট করি কথাটি কে একং কাকে বলেছিলেন ? 

৩। ধর্মীয় সাম্য রক্ষা করে চললে কী প্রতিষ্ঠিত হবে? 

৪। মানুষ মানুষকে কিসের দৃষ্টিতে দেখবে? 

৫। বিভিন্ন ধর্মের লোকেরা ঈশ্বরকে কী কী নামে ডাকে?

 

নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :

১। সকল ধর্মের মূল কথা কী ? 

২। ‘যে যথা মাং প্রপদ্যন্তে তাংস্তথৈব ভজাম্যহম। মম বর্মানুবর্তন্তে মনুষ্যাঃ পার্থ সৰ্বশঃ ৷৷’ ব্যাখ্যা কর। 

৩। আমরা অন্য ধর্মের লোকদের সঙ্গে কেমন আচরণ করব? 

৪। ধর্মীয় সাম্য রক্ষার প্রয়োজনীয়তা কী? 

৫। ‘সাধনার পথ বহু, কিন্তু ঈশ্বর এক।'— - কথাটি বুঝিয়ে লেখ।

Content added By