সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকার সৌদি আরবে নারী শ্রমিক পাঠালে অধিকাংশ শ্রমিক অত্যাচারিত হয়ে দেশে ফিরে আসে। এ বিষয়ে টেলিভিশন টকশোতে তিনজন আলোচক অংশ নিয়ে প্রথম আলোচক বলল, সৌদি জনগণ এসব নারীদের দাসী হিসেবে ব্যবহার করেছে। এটি শরিয়তসম্মত। কেননা আলি (রা) দাসী ক্রয়-বিক্রয়কে বৈধতা দিয়েছিলেন। দ্বিতীয় আলোচক এর সাথে দ্বিমত পোষণ করেন। অনুষ্ঠানের তৃতীয় আলোচক বলেন, সমস্যা অন্য ক্ষেত্রে, সরকার যদি সব নাগরিকের কাছ থেকে যেকোনো মূল্যে জাকাত আদায় করত। তাহলে দেশেই এসব নাগরিকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা যেত।
কুরআন ও হাদিসের আলোকে শরিয়তের হুকুমে পরিবর্তন হতে পারে, যা না মানলে মানুষ গুনাহগার হবে- এই দৃষ্টিতে প্রথম আলোচকের ব্যাখ্যা ভুল বলে প্রতীয়মান হয়। ইসলামের প্রাথমিক যুগে দাস-দাসী ক্রয়-বিক্রয়ের প্রথা ছিল। ইসলামের আবির্ভাবের পরে এ প্রথা নিষিদ্ধ হয়ে যায়। কোনো কোনো মাজহাব অনুসারী মনে করেন হযরত আলি (রা) দাসী ক্রয়-বিক্রয়কে বৈধ বলেছেন। পরবর্তীতে মুজতাহিদগণ এ বিষয়ে কুরআন ও হাদিসের আলোকে গবেষণা করে দাস-দাসী ক্রয়- বিক্রয়কে অবৈধ হিসেবে মত দিয়েছেন। উদ্দীপকে প্রথম আলোচক এ বিষয়ে ভুল ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন।
প্রথম আলোচক দাস-দাসী ক্রয়-বিক্রয় সংক্রান্ত যে তথ্যটি তুলে ধরেছেন তা বর্তমান সময়ে গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা সময়ের প্রেক্ষাপটে ইজমাভিত্তিক সিদ্ধান্ত অনুসারে শরিয়তের হুকুমে পরিবর্তন এসেছে। বর্তমান সময়ে দাসী ক্রয় করলে ইজমা তথা কুরআন ও হাদিসের নির্দেশনাই অমান্য করা হবে। ইজমা বিষয়ে সমকালীন মুজতাহিদগণও সিদ্ধান্ত দিতে পারবেন। কিন্তু উদ্দীপকে প্রথম আলোচককে মুজতাহিদ বলা যায় না। কারণ তিনি পূর্বে মীমাংসিত একটি বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, যে বিষয়ে ইজমা প্রদান বৈধ নয়। তিনি একটি ভুল এবং অন্যায় কাজকে বৈধতা দিয়েছেন। এতে কুরআন, হাদিস ও ইজমা সম্পর্কে তার অজ্ঞতা প্রকাশ পেয়েছে। এতে সমাজের মানুষ বিভ্রান্ত হবে। অথচ ইজমার উদ্দেশ্য হলো সমাজ, রাষ্ট্র থেকে বিভ্রান্তি দূর করা।
ওপরের আলোচনা থেকে বলা যায় যে, শরিয়তের সঠিক ব্যাখ্যা না জেনে উদ্দীপকের প্রথম আলোচক ভুল ব্যাখ্যা দিয়েছেন, যা সঠিক নয়।