বাংলা নববর্ষ বাঙালির গুরুত্বপূর্ণ উৎসব। বাংলা সন কে কবে প্রচলন করেছিলেন এ নিয়ে মতান্তর থাকলেও ধরে নেওয়া হয় সম্রাট আকবরের সময় এই সনের গণনা আরম্ভ হয়। নববর্ষে হালখাতা, বৈশাখী মেলা, ঘোড়দৌড়, বিভিন্ন লোকমেলার আয়োজন করে সাধারণ মানুষ এই উৎসবকে প্রাণে ধারণ করেছে। আজকের বাংলাদেশ যে স্বাধীন হতে পেরেছে, তার পেছনেও নববর্ষের সক্রিয় প্রেরণা কাজ করে। কারণ, পাকিস্তানিরা বাঙালির এই প্রাণের উৎসবকে নস্যাৎ করার জন্য তীব্র ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছিল। এর প্রতিবাদে রুখে দাঁড়িয়েছিল বাঙালিরা।
"উদ্দীপকে উল্লিখিত বাঙালি জাতীয়তায় নববর্ষের সক্রিয় প্রেরণাটি 'পয়লা বৈশাখ' প্রবন্ধের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে।"- মন্তব্যটির যুক্তিপূর্ণ মূল্যায়ন কর।
(উচ্চতর দক্ষতা)"উদ্দীপকে উল্লিখিত বাঙালি জাতীয়তায় নববর্ষের সক্রিয় প্রেরণাটি 'পয়লা বৈশাখ' প্রবন্ধের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে।"- মন্তব্যটি যথার্থ।
বাংলা নববর্ষের ঐতিহ্য সুপ্রাচীন ও গৌরবমণ্ডিত। কালের পথপরিক্রমায় এবং উদযাপনের রীতির পরিবর্তন ধারায় বাংলা নববর্ষ উৎসব বর্তমানে বহুমাত্রিকতা লাভ করেছে। কৃষিনির্ভর এদেশের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রাচীনকাল থেকেই বাংলা নববর্ষ উদ্যাপন করা হয়। বাংলা নববর্ষ বাঙালির জাতীয়তাবাদী চেতনা ও স্বাদেশিকতারও ধারক।
উদ্দীপকে বাংলা নববর্ষ উৎসবের বর্তমান ও অতীত অবস্থা নির্দেশ করে এই উৎসবের বিরোধিতাকারীদের বিরুদ্ধে বাঙালিদের অবস্থান তুলে ধরা হয়েছে। এখানে বাংলা নববর্ষ উদযাপনের আয়োজন কীভাবে ধীরে ধীরে পূর্ববাংলায় বাঙালি জাতীয়তাবাদ এবং বাঙালি জাতিসত্তা গঠনের প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে তা তুলে ধরা হয়েছে। উদ্দীপকের চেতনা 'পয়লা বৈশাখ' প্রবন্ধে প্রতিফলিত চেতনার সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। আলোচ্য প্রবন্ধে নববর্ষ উদ্যাপনে যে পালাবদলের কথা বলা হয়েছে, তা উদ্দীপকে বাংলা নববর্ষ পালনের বর্তমান অবস্থাকে নির্দেশ করে। বিশ শতকের প্রথমার্ধে বাংলা নববর্ষ উদযাপনকে কেন্দ্র করে জাতীয়তাবাদী অনুষঙ্গের সঙ্গে সাম্রাজ্যবাদবিরোধী চেতনা যুক্ত হয়েছিল। তখন এই অঞ্চলের শিক্ষিত মানুষ ধর্ম ও সম্প্রদায় নিরপেক্ষভাবে একটি প্রতিবাদী মনোভাব নিয়ে পরম উৎসাহে এই উৎসব পালন করে।
'পয়লা বৈশাখ' প্রবন্ধে লেখক বাংলা নববর্ষে ধর্ম-বর্ণ-গোত্রের বাইরে এসে মানুষ হিসেবে বাঙালিদের মধ্যে সবার সঙ্গে সবার বন্ধনের দিকটি তুলে ধরেছেন। এই বিষয়টি উদ্দীপকেও প্রতিফলিত হয়েছে। নববর্ষ উদ্যাপনের রীতিটি বাঙালির একান্ত নিজস্ব রীতি এবং তা ঐতিহ্যবাহী ও গৌরমণ্ডিত। এই উৎসব পালনে বাঙালি ধর্মনিরপেক্ষতার পরিচয় দেয়। শোভাযাত্রা, মেলা, হালখাতা, সংগীতানুষ্ঠানসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও এসব বৈশিষ্ট্যের পরিচয় পাওয়া যায়। এসব দিক বিচারে তাই বলা যায়, প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।