ভারতবর্ষে মুঘল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার পর সম্রাটরা হিজরি পঞ্জিকা অনুসারে কৃষিপণ্যের খাজনা আদায় করতেন। কিন্তু হিজরি সন চাঁদের ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় তা কৃষি ফলনের সাথে মিলত না। এতে অসময়ে কৃষকদের খাজনা পরিশোধ করতে বাধ্য করা হতো। খাজনা আদায়ে সুষ্ঠুতা প্রণয়নের লক্ষ্যে মুঘল সম্রাট আকবর বাংলা সন প্রবর্তন করেন। তিনি মূলত প্রাচীন বর্ষপঞ্জিতে সংস্কার আনার নির্দেশ দেন। সম্রাটের আদেশ মতে তৎকালীন বাংলার বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও চিন্তাবিদ ফতেহ উল্লাহ সিরাজি সৌর সন এবং আরবি হিজরি সনের ওপর ভিত্তি করে নতুন বাংলা সনের নিয়ম বিনির্মাণ করেন। ১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দের ১০ মার্চ বা ১১ মার্চ থেকে বাংলা সন গণনা শুরু হয়। প্রথমে এই সনের নাম ছিল ফসলি সন। পরে বঙ্গাব্দ বা বাংলা বর্ষ নামে পরিচিত হয়।
উদ্দীপকটি 'পয়লা বৈশাখ' প্রবন্ধের বাংলা বর্ষের ইতিহাস বিষয়টির প্রতিনিধিত্ব করে।
বাংলা বর্ষ বাঙালির ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশে আছে। গ্রামবাংলার সাধারণ মানুষের কথা বলে বাংলা বর্ষ। এর রয়েছে সুপ্রাচীন ও ঘটনাবহুল ইতিহাস। এক দিনে বা একক সিদ্ধান্তে বাংলা বর্ষ গণনা শুরু হয়নি। অনেক তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণের পর বাংলা বর্ষ গণনা শুরু হয়।
উদ্দীপকে বাংলা বছরের শুরুর ইতিহাসের কথা বর্ণিত হয়েছে। কৃষিপ্রধান দেশের শাসকরা খাজনা আদায়ের সুবিধার্থে বাংলা বর্ষের সূচনা করেন। সম্রাট আকবরের শাসনামল থেকে বাংলা বর্ষ গণনা শুরু হয়। এই বিষয়টি 'পয়লা বৈশাখ' প্রবন্ধেও আলোচিত হয়েছে। প্রাবন্ধিক বাংলা বর্ষের ইতিহাসের কথা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন- বাংলা বর্ষের সঙ্গে সুদূর অতীতে কৃষি সমাজের যোগসূত্র ছিল অবিচ্ছেদ্য। বহু শত বর্ষ আগে থেকেই বাংলাদেশে বাংলা নববর্ষ উদ্যাপিত হয়ে আসছে। ঐতিহাসিক আবুল ফজলের 'আইন-ই-আকবরী' গ্রন্থে এর প্রমাণ মেলে। প্রবন্ধের এই দিকেরই উদ্দীপকটি প্রতিনিধিত্ব করে।