জনাব সৈকত একজন অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক। তার হাতে বর্তমানে ৫ লক্ষ টাকা রয়েছে। তিনি এ অর্থ ব্যাংকে জমা রাখতে ইচ্ছুক। তার বন্ধু রাজন তাকে এমন একটি হিসাব খুলতে অনুরোধ করেন, যার মুনাফার হার সর্বোচ্চ হবে এবং বার বার টাকা দেয়ার ঝামেলা নেই, তবে নির্দিষ্ট মেয়াদের পূর্বে জমাকৃত অর্থ উত্তোলন করা যাবে না। অবশেষে সৈকত সাহেব এমন একটি হিসাব খোলেন যেখান থেকে তিনি সপ্তাহে দুইবার পর্যন্ত নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ উত্তোলনের সুবিধা পান, এছাড়াও মুনাফা পাওয়া যায়।
প্রতি মাসে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা একটি মেয়াদ পর্যন্ত সঞ্চয়ের সুযোগ ও মেয়াদান্তে একযোগে বা চুক্তি অনুযায়ী তা উত্তোলনের সুযোগ দিয়ে যে বিশেষ ধরনের ব্যাংক হিসাব খোলা হয় তাকে DPS (Deposit Pension Scheme) বলা হয়।
নিরাপত্তার স্বার্থে ব্যাংক হিসাবে গোপনীয়তা রক্ষা করার প্রয়োজন হয়।
ব্যাংকে হিসাব খোলার ক্ষেত্রে নিরাপত্তা বা গোপনীয়তার বিষয়টি প্রত্যেক গ্রাহকই বিবেচনা করে থাকেন। কারণ, প্রত্যেক আমানতকারীই চান তার হিসাবের গোপনীয়তা বজায় থাকুক। আমানতকারী ব্যাংককে গোপনীয়তা রক্ষার উৎস হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন। এজন্য ব্যাংক কর্তৃপক্ষও গ্রাহকের হিসাব সংক্রান্ত' যাবতীয় তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষার বিষয়টিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়। তাই ব্যাংক হিসাবে গোপনীয়তা রক্ষা করা প্রয়োজন।
ব্যাংকিং লেনদেনের পাশাপাশি সঞ্চয়ের উদ্দেশ্যে এ হিসাব খোলা হয়। এ হিসাবে যতবার খুশি অর্থ জমা দেওয়া যায়। তবে সপ্তাহে দু'বার বা নিয়ম মেনে অর্থ উত্তোলন করতে হয়। সাধারণত ছাত্র বা নির্দিষ্ট আয়ের লোকদের জন্য এ হিসাব উপযোগী।
উদ্দীপকে সুমন অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। সে ঢাকার হোস্টেলে থেকে পড়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ব্যাংক হিসাব খোলার জন্য সে বাবার সাথে ব্যাংক যায়। 'এখানে সুমন ছাত্র হিসেবে পরিবার থেকে প্রতি মাসে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ পাবে। যা থেকে তাকে নিয়মিত কিছু খরচ সম্পাদন করতে হবে। এক্ষেত্রে সে ব্যাংকের এটিএম বা অন্যান্য অনলাইন সেবা গ্রহণ করতে পারবে। অব্যবহৃত অর্থ ব্যাংকে জমা রেখে সঞ্চয় সৃষ্টি করতে পারবে। আর এ সকল সুবিধা কেবলই সঞ্চয়ী হিসাবে বিদ্যমান। তাই জনাব সুমনের জন্য সঞ্চয়ী হিসাব খোলা উপযোগী।
উদ্দীপকে উল্লিখিত সুমনকে প্রদত্ত ফর্মটি হলো KYC ফর্ম।
এ ফর্মের মাধ্যমে ব্যাংক গ্রাহক সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করে। জালিয়াতি ও অবৈধ লেনদেন রোধে ব্যাংক বাধ্যতামূলকভাবে গ্রাহকের কাছ থেকে এ ফর্ম পূরণ করিয়ে নেয়। এ ফর্মে মূলত গ্রাহকের নাম, পেশা, ঠিকানা, কাজের ধরন, লেনদেনের ধরন ও অন্যান্য তথ্য থাকে। উদ্দীপকে সুমন ঢাকার হোস্টেলে থেকে পড়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ব্যাংক হিসাব খোলার জন্য সে বাবার সাথে ব্যাংকে যায়। ব্যাংক ম্যানেজার তাকে হিসাব খোলার মূল আবেদন ফর্ম সরবরাহ করেন। তবে সাথে একটি কার্ড ও অপর একটি ফর্ম পূরণ করতে বলেন যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখানে গুরুত্বপূর্ণ ফর্মটি, হলো KYC ফর্ম।
উদ্দীপকে KYC ফর্মের মাধ্যমে ব্যাংক সুমনের মতো গ্রাহকদের সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানতে পারে। ব্যাংক সহজেই গ্রাহকের পরিচয় শনাক্ত ও বিশ্লেষণ করতে পারে। ব্যাংকের পরিচিত অন্য গ্রাহকের মাধ্যমে উক্ত গ্রাহকের পরিচয়ের সত্যতা প্রমাণ করা যায়। গ্রাহক মুদ্রা পাচার বা অন্য কোনো অপরাধমূলক কাজের সাথে যুক্ত আছে কিনা তা জানতে পারে। সর্বোপরি সকল প্রকার ভূয়া গ্রাহক চিহ্নিতকরণ ও অবৈধ লেনদেন বন্ধ করতে পারবে। তাই বলা যায়, উল্লিখিত কারণেই সুমনকে প্রদত্ত KYC ফর্মটি গুরুত্বপূর্ণ।
যে হিসাবের মাধ্যমে আমানতকারী সঞ্চয়ী হিসাবের ও বিমার সুবিধা ভোগ করে তাকে বিমা সঞ্চয়ী হিসাব বলে।
এ হিসাবের বিপরীতে সঞ্চয়ী হিসাবের সব সুবিধা পাওয়া যায়। এ হিসাবের বিপরীতে ব্যাংক চুক্তির শর্ত অনুযায়ী আমানতকারীকে বিমার সুবিধাও প্রদান করে। তবে হিসাবগ্রহীতাকে সবসময় নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ তার হিসাবে জমা রাখতে হয়। বিমা সুবিধা প্রদান করা ব্যাংকের 'আয়ের অন্যতম উৎস।