জাতীয় জীবনধারা গঙ্গা-যমুনার মতোই দুই ধারায় প্রবাহিত। এক ধারার নাম আত্মরক্ষা বা স্বার্থপ্রসার, আরেক ধারার নাম আত্মপ্রকাশ বা পরমার্থ বৃদ্ধি । একদিকে যুদ্ধবিগ্রহ, মামলা-ফ্যাসাদ প্রভৃতি কদর্য দিক; অপরদিকে সাহিত্য, শিল্প, ধর্ম প্রভৃতি কল্যাণপ্রদ দিক। একদিকে শুধু কাজের জন্য কাজ অপরদিকে আনন্দের জন্য কাজ। একদিকে সংগ্রহ, আরেক দিকে সৃষ্টি। যে জাতি দ্বিতীয় দিকটির প্রতি উদাসীন থেকে শুধু প্রথম দিকটির সাধনা করে, সে জাতি কখনও উঁচু জীবনের অধিকারী হতে পারে না ।
উদ্দীপকে পরমার্থ বা পরম সত্য বৃদ্ধির প্রতি যে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে তা 'বই পড়া' প্রবন্ধের লেখকের মতকে সমর্থন করে। মন্তব্যটি যথার্থ।
শিক্ষা মানুষকে আত্মিক ও মানসিক বিকাশ সাধন করে কল্যাণকামী কর্মকান্ডে অনুপ্রাণিত করে। যে শিক্ষা তা করে না, তাকে প্রকৃত শিক্ষা বলা যায় না। আমাদের স্কুল-কলেজে রুটিন মেনে যে শিক্ষা দেওয়া হয়, তাতে প্রকৃত শিক্ষা লাভ হয় না। কারণ প্রকৃত শিক্ষা হচ্ছে স্বশিক্ষা, যা মানুষ স্বাচ্ছন্দ্যচিত্তে, স্বতঃস্ফূর্তভাবে অর্জন করে। আর তা অর্জনের প্রাণকেন্দ্র হচ্ছে লাইব্রেরি বা পাঠাগার।
'বই পড়া' প্রবন্ধে লেখক বই পড়ার উপযোগিতা ও পাঠকের মানসিকতা আলোচনা করেছেন। তিনি পাঠে অনীহার কারণ হিসেবে আমাদের মার্তমান শিক্ষাব্যবস্থাকে দায়ী করেছেন। প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা কীভাবে আমাদের অর্থ উপার্জন করতে শেখায়, কীভাবে আমাদের হৃদয়বৃত্তিকে প্রস্ফুটিত না করে নষ্ট করে দেয়, সেই বিষয়টি ব্যাখ্যা করেছেন। সেই ব্যাখ্যাটির সাথে উদ্দীপকের পরমার্থ বৃদ্ধির প্রতি গুরুত্ব দেওয়ার বিষয়টি সাদৃশ্যপূর্ণ।
উদ্দীপকে লেখক আত্মপ্রকাশ বা পরমার্থ বৃদ্ধির কথা বলেছেন। তিনি কল্যাণের দিকটিকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে জাতির উন্নতির দিকটি ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি মনে করেন, যে জাতি আত্মপ্রকাশের প্রতি উদাসীন থেকে শুধু আত্মরক্ষার দিকটির সাধনা করে, সেই জাতি উঁচু জীবনে প্রবেশ করতে পারে না। 'বই পড়া' প্রবন্ধেও লেখক বলেছেন যথার্থ শিক্ষিত হয়ে উঠতে হলে স্কুল-কলেজের বাইরে মানুষকে স্বশিক্ষায় নিজেকে পরিপূর্ণ করে তুলতে হবে। স্বশিক্ষা হচ্ছে প্রগতিশীল জীবন ও জগতের সাথে তাল মিলিয়ে চলার শিক্ষা। উদ্দীপকে লেখক জাতিকে উন্নত জীবন লাভে পরমার্থের সাধনার প্রতি গুরুত্ব দিয়েছেন যা 'বই পড়া' প্রবন্ধের লেখকের মতামতকে প্রতিফলিত করেছে।