১৯৬৭ সাল থেকে রমনার বটমূলে ‘ছায়ানট’নববর্ষের যে উৎসব শুরু করে স্বাধীন বাংলাদেশের বাধাহীন পরিবেশে এখন তা জনগণের বিপুল আগ্রহ-উদ্দীপনাময় অংশগ্রহণে দেশের সর্ববৃহৎ জাতীয় অনুষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। রাজধানী ঢাকার নববর্ষ উৎসবের দ্বিতীয় প্রধান আকর্ষণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ছাত্র-ছাত্রীদের বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা। এই শোভাযাত্রায় মুখোশ, কার্টুনসহ যে-সব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতীকধর্মী চিত্র বহন করা হয়, তাতে আবহমান বাঙালিত্বের পরিচয় এবং সমকালীন সমাজ-রাজনীতির সমালোচনাও থাকে ।
বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত (২০০৮) বাংলাদেশের উৎসব : নববর্ষ নামক গ্রন্থ থেকে রচনাটি সংকলিত হয়েছে। গ্রন্থটি সম্পাদনা করেছেন মোবারক হোসেন। বাংলা নববর্ষ পয়লা বৈশাখ বাঙালির সর্বশ্রেষ্ঠ সাংস্কৃতিক উৎসব। কৃষি-নির্ভর এদেশে ফসল উৎপাদনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রক্ষা করে প্রাচীনকাল থেকেই বাংলা নববর্ষ উদযাপনের ধারণা তৈরি হয়। এ উৎসব শুধু হিন্দুর বা মুসলমানদের কিংবা বৌদ্ধ-খ্রিষ্টানের নয়-এ উৎসব সমগ্র বাঙালির। এ উৎসব শুধু বিত্তবান, মধ্যবিত্ত বা দীন দরিদ্র কৃষকের নয়- এ উৎসব বাংলাভাষী এবং বাংলাদেশে বসবাসকারী সমস্ত মানুষের। ধর্মীয় সংকীর্ণতার বৃত্ত অতিক্রম করে বাংলা নববর্ষ উৎসব আজ আমাদের জাতীয় চৈতন্যের ধারক- এ অভিমত ব্যক্ত করে লেখক প্রবন্ধটিতে পয়লা বৈশাখের জয়গান গেয়েছেন। ‘পয়লা বৈশাখ' প্রবন্ধটি বাংলাদেশের উৎসব ও ঐতিহ্য সম্পর্কে ধারণা দেবার পাশাপাশি ধর্ম ও সম্প্রদায়-নিরপেক্ষ জাতীয় ঐক্যবোধে মিলিত হবার শিক্ষা দেয়।