প্রেক্ষাপট-১: রাকিব দৈনিক ফজর নামাজের পর অর্থসহ কুরআন অধ্যয়ন করেন। তার পিতা তাকে বলেন, আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কুরআনের পাশাপাশি এর সম্পূরক শিক্ষা হিসেবে বিবেচিত দ্বিতীয় উৎসও রীতিমত অধ্যয়ন করতে হবে। তবেই ইহকাল ও পরকালে কল্যাণ ও মুক্তি পাওয়া যাবে।
প্রেক্ষাপট-২: জনাব আবির কুরআন-হাদিস গবেষণা করে নিজের চিন্তা বিবেক-বুদ্ধি খাটিয়ে আধুনিক যুগের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানকল্পে একটি পাণ্ডুলিপি রচনা করেন এবং এর আলোকে নিজ জীবন পরিচালনা করেন।
কিয়াস ইসলামি শরিয়তের চতুর্থ উৎস হিসেবে কুরআন ও সুন্নাহ দ্বারা স্বীকৃত বলে এটি ছাড়া ইসলামকে সম্পূর্ণ জীবনব্যবস্থা বলা যায় না। কিয়াস ব্যতীত ইসলাম একটি গতিহীন ও সংকীর্ণ জীবনাদর্শে পরিণত হয়। ফলে সব দেশের ও সব কালের দাবি মেটানো অসম্ভব হয়ে পড়ে। কিয়াসই ইসলামকে সর্বকালীন ও সর্বজনীন জীবনাদর্শে পরিণত করে। এ কারণেই কিয়াসকে ইসলামি শরিয়তের উৎস হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে এবং এটি ইসলামকে পূর্ণতা দান করেছে।
১নং প্রেক্ষাপটে রাকিবের পিতার উপদেশে ইসলামের দ্বিতীয় উৎস তথা হাদিসের প্রতি ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। হাদিস অর্থ কথা বা বাণী। ইসলামি পরিভাষায়, হাদিস বলতে মহানবি (স)-এর বাণী, কর্ম ও মৌন সম্মতিকে বোঝায়। হাদিস হলো শরিয়তের দ্বিতীয় উৎস। এটি আল-কুরআনের মূলনীতিসমূহের বাস্তবরূপ ও ব্যাখ্যা। কুরআন মাজিদে আল্লাহ তায়ালা যে জীবনবিধান ও আদর্শ উপস্থাপন করেছেন সাধারণ মানুষের পক্ষে সব সময় তা বোঝা সম্ভব নয়। সেজন্য এথেকে তাদের উপকৃত হওয়া কষ্টকর। হাদিসে কুরআনের বক্তব্যসমূহকে সর্বসাধারণের উপযোগী করে পরিবেশন করা হয়েছে। হাদিসকে তাই কুরআনের ব্যাখ্যা গ্রন্থও বলা হয়। মূলত কুরআন ও হাদিস দুটি ভিন্ন ভিন্ন গ্রন্থ হলেও একটি অপরটির পরিপূরক। হাদিস ছাড়া যেমন কুরআন বোঝা সম্ভব নয় তেমনি কুরআন ছাড়াও হাদিসের নিজস্ব কোনো মান নেই।
১নং প্রেক্ষাপটে দেখা যায়, রাকিব ফজর নামাজের পর দৈনিক অর্থসহ কুরআন তেলাওয়াত করেন। এ প্রেক্ষিতে তার পিতা বলেন, আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কুরআনের পাশাপাশি এর সম্পূরক শিক্ষা হিসেবে দ্বিতীয় উৎসও রীতিমত অধ্যয়ন করতে হবে। অর্থাৎ তিনি এখানে কুরআনের পাশাপাশি শরিতের দ্বিতীয় উৎস হাদিস অধ্যয়নের কথা বলেছেন। সুতরাং বলা যায়, রাকিবের পিতার উপদেশে হাদিস অধ্যয়নের ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
২নং প্রেক্ষাপটে জনাব আবিরের কর্মটি হলো কিয়াস। যা কুরআন-সুন্নাহর দৃষ্টিতে সমর্থনযোগ্য। কিয়াস শব্দের অর্থ পরিমাপ, অনুমান বা তুলনা করা। কিয়াস হলো ইসলামি আইন প্রবর্তনের একটি পদ্ধতি। মানুষের গতিশীল জীবনে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন সমস্যার উদ্ভব ঘটে। এ সমস্যাগুলোর সমাধান সরাসরি কুরআন ও হাদিসে পাওয়া না গেলে সাদৃশ্যপূর্ণ বিধান দ্বারা নিজের বুদ্ধিকে কাজে লাগিয়ে সমস্যার সমাধান করাই হলো কিয়াস।
২নং প্রেক্ষাপটে জনাব আবির কুরআন-হাদিস গবেষণা করে নিজের চিন্তা বিবেক-বুদ্ধি খাটিয়ে আধুনিক যুগের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানকল্পে একটি পাণ্ডুলিপি রচনা করেন। এখানে কিয়াসের কথাই বলা হয়েছে। কিয়াস আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (স) এর নির্দেশিত ও নির্বাচিত বিষয়। মুসলিম জাতিকে আল্লাহ তায়ালা فَاعْتَبِرُوا يَا أُولِي الْأَبْصَارِ অথ ঃ 'অতএব, হে দৃষ্টিশক্তি সম্পন্ন মানুষেরা, তোমরা চিন্তা ও গবেষণা করো' (সুরা আল হাশর: ২)। আবার কিয়াস রাসুল (স) এর পছন্দনীয় পদ্ধতি। হযরত মুয়াজ বিন জাবাল (রা) কে ইয়েমেনের বিচারক হিসেবে প্রেরণ করার সময় কীভাবে বিচার ফয়সালা করবে? এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে মুয়াজ (রা) কুরআন-হাদিসের পর নিজের ব্যক্তিগত গবেষণার আলোকে বিচার ফয়সালা করার কথা বলেন। তাঁর এ জবাবে রাসুল (স) অত্যন্ত খুশি হন।
পরিশেষে বলা যায় যে, কিয়াসের বিধান কুরআন ও হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। তাই আবিরের কাজটি কুরআন-সুন্নাহর দৃষ্টিতে সমর্থনযোগ্য।
কিয়াস ইসলামি আইনের চতুর্থ উৎস। কুরআন-মাজিদে কিয়াসের স্বীকৃতি রয়েছে। ইসলামি আইনের উৎস হিসেবে কিয়াস কোনো নতুন সংযোজন নয়। রাসুল (স)- এর যুগে কিয়াসের উৎপত্তি ও বিকাশ ঘটে। তিনি নিজে কিয়াস করার জন্য সাহাবি (রা)-দের বিশেষ উৎসাহ দিয়েছেন। তাঁর ইন্তেকালের পর সাহাবিগণ কিয়াসের স্বাধীন প্রয়োগের মাধ্যমে একে ইসলামি আইনের চতুর্থ উৎস হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন-
উদ্দীপকের আব্দুর রহমান শরিয়তের চতুর্থ উৎস কিয়াসের কথা বলেছেন। কিয়াস হলো ইসলামি আইন প্রবর্তনের একটি পদ্ধতি। কুরআন ও সুন্নাহর আইন বা নীতির সাদৃশ্যের ভিত্তিতে বিচার-বুদ্ধি প্রয়োগ করে উদ্ভুত সমস্যার সমাধান দেওয়াকে কিয়াস বলে। উদ্দীপকে বর্ণিত আব্দুর রহমান বলল, শরিয়তের অপর একটি উৎস রয়েছে যার মাধ্যমে আল্লাহ মুসলমানদের চিন্তাশীল হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এ কথার মাধ্যমে তিনি কিয়াসের কথা বলেছেন। কারণ কিয়াস হলো শরিয়তের এমন একটি উৎস যেটাতে চিন্তা, বিচার ও বুদ্ধি প্রয়োগ করে উদ্ভূত সমস্যার সমাধান দেওয়া হয়। কিয়াসের ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা বলেন, 'হে চক্ষুষ্মানগণ! তোমরা শিক্ষা গ্রহণ কর' (সুরা আল হাশর-২)। এ আয়াতে আল্লাহ তায়ালা মুসলিমদের চিন্তা ও গবেষণা করে শিক্ষা গ্রহণ করার নির্দেশ দিয়েছেন। কিয়াস মূলত মুসলিম জ্ঞানীদের চিন্তা-ভাবনারই ফল। রাসুল (স) হযরত মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা) কে ইয়েমেনের বিচারক হিসেবে প্রেরণের পূর্বে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ব্যাপারে প্রশ্ন করলে, কুরআন হাদিসের পর নিজের বিবেক-বুদ্ধি প্রয়োগ করে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে তিনি জানান। রাসুল (স) তাঁর জবাবে সন্তুষ্ট হন। যা কিয়াস শরিয়তের উৎস হওয়ার অকাট্য দলিল। সুতরাং কিয়াস হলো মুসলিম জ্ঞানীদের চিন্তা- ভাবনারই ফল।