তোমার ফিল্ডট্রিপের/বিকল্প অভিজ্ঞতাটি লেখো।
|
** এই পৃষ্ঠায় জায়গা না হলে একটি আলাদা কাগজে লিখে কাগজটি বইয়ের পৃষ্ঠার এক পাশে আঠা দিয়ে যুক্ত করতে পারি/খাতায় লিখতে পারি।
কঠিন চীবর দান বৌদ্ধদের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসব। বৌদ্ধ বিশ্বে শ্রীলংকা, বার্মা, থাইল্যান্ড, ভারত ও বাংলাদেশসহ থেরোবাদী বৌদ্ধদেশসমুহে অত্যন্ত জাঁকজমকভাবে এই উৎসব প্রতিবছর উদ্যাপন করা হয়। কঠিন চীবর দান উপলক্ষ্য করে প্রতিটি গ্রামের বৌদ্ধ বিহারে আনন্দের সাড়া পড়ে যায়।
'কঠিন চীবর' শব্দটি 'কঠিন' ও 'চীবর' দুটি শব্দ নিয়ে গঠিত। এখানে চীবর হলো ভিক্ষুদের পরার কাপড় যার কয়েকটি অংশ রয়েছে। কিছু নির্দিষ্ট নীতিমালা অনুসরণ করে চীবরকে পরিশুদ্ধ করতে হয় বলে একে কঠিন চীবর নাম দেওয়া হয়েছে। তাই উপাসক-উপাসিকাবৃন্দ চীবর দান করলেও তা কঠিন হয় না। ভিক্ষুসংঘ 'কর্মবাচা' নামের একটি সূত্র পাঠের মাধ্যমে ধর্মীয় রীতিতে চীবরকে কঠিন চীবরে পরিণত করেন। কর্মবাচা পাঠ শেষে কঠিন চীবর বিহারের অধ্যক্ষ ভিক্ষুকে দেওয়া হয়। কঠিন চীবর গ্রহণকারী ভিক্ষু ফাল্গুনী পূর্ণিমা পর্যন্ত এই চীবর নিজের সঙ্গে রাখেন।
প্রতিবছর ভিক্ষুদের বর্ষাব্রত শেষে প্রবারণা পূর্ণিমার পর থেকে অর্থাৎ আশ্বিনী পূর্ণিমার পরের দিন থেকে কার্তিক পূর্ণিমা পর্যন্ত এক মাসের মধ্যে কঠিন চীবর দান উদ্যাপন করতে হয়। অন্য সময়ে এ উৎসব উদ্যাপনের বিধান নেই। প্রত্যেক বৌদ্ধ বিহারে বছরে একবারই কঠিন চীবর দান করা যায়। তবে যে বিহারে কোনো ভিক্ষু বর্ষাব্রত যাপন করেন না, সেই বিহারে কঠিন চীবর দান করা যায় না। কোনো ভিক্ষু বর্ষাব্রত অধিষ্ঠান করতে না পারলে তিনি কঠিন চীবর গ্রহণ করতে পারেন না। কেবল বর্ষাব্রত যাপনকারী ভিক্ষুই কঠিন চীবর গ্রহণ করতে পারেন।
বৌদ্ধ ভিক্ষুরা প্রধানত তিন অংশযুক্ত চীবর ব্যবহার করেন। সেগুলো হল ১. উত্তরাসঙ্ঘ বা একাজিক বহির্বাস, ২. সংঘাটি বা দোয়াজিক; ও ৩. অন্তর্বাস বা পরিধেয় বস্তু। এ তিনটি চীবরের মধ্য হতে যে কোনো একটি দিয়ে বর্ষাবাস পালনকারী ভিক্ষুর উদ্দেশে সংঘকে চীবর দান করা যায়।
তখন ভগবান বুদ্ধ শ্রাবস্তীর জেতবনে অনাথপিন্ডিক বিহারে বসবাস করছিলেন। ভগবান বুদ্ধের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার জন্য পাঠেয়বাসী (পশ্চিম দেশীয়) ত্রিশ জন ভিক্ষু শ্রাবস্তীর উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন। তাঁরা ছিলেন অরণ্যবাসী। ভিক্ষান্ন সংগ্রহ করে তাঁরা জীবনধারণ করেন। তাঁরা পাংশুকুলিক চীবর ও ত্রিচীবরধারী। যাওয়ার পথে ছয় যোজন দূরে থাকতে বর্ষা শুরু হয়ে গেল। তখন অন্য কোনো উপায় না থাকায় পথিমধ্যে সাকেত নগরীতে তাঁদের বর্ষাবাস শুরু করতে হয়েছিল।
বর্ষাব্রত শেষ হওয়ার পরপরই সেই পাঠেয়বাসী ত্রিশজন ভিক্ষু ভগবান বুদ্ধের সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য শ্রাবস্তীতে রওনা হলেন। জেতবন বিহারে উপস্থিত হয়ে তাঁরা ভগবান বুদ্ধের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন।
তিন মাস বর্ষাবাস শেষে প্রবারণা সম্পন্ন করে দীর্ঘ পথ হেঁটে কাদা পেরিয়ে ভেজা ও জীর্ণশীর্ণ চীবরে ভিক্ষুরা বুদ্ধের কাছে উপস্থিত হয়েছিলেন। ভিক্ষুদের জীর্ণশীর্ণ চীবর দেখে ভগবান বুদ্ধ কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠানের অনুজ্ঞা (নির্দেশ) দিয়েছিলেন। বুদ্ধের এই অনুজ্ঞার পর থেকে প্রতিবছর বর্ষাব্রত শেষে প্রবারণার পর থেকে এক - মাসব্যাপী কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠানের প্রচলন শুরু হয়। উল্লেখ্য, বুদ্ধের আমলে ভিক্ষুরা বিভিন্ন জায়গা যেমন - শ্মশান ও আবর্জনা স্তূপ থেকে ছেঁড়া কাপড় সংগ্রহ করে সেগুলো সেলাই করে চীবর বানাতেন। সেই আমলে তাঁরা সাধারণ গৃহীদের কাছ থেকে চীবর গ্রহণ করতেন না। ভিক্ষুদের ছেঁড়া কাপড় সংগ্রহ করে চীবর সেলাই - করা খুবই কঠিন ছিল। বুদ্ধ ভিক্ষুসংঘের মঙ্গলের কথা চিন্তা করে চীবর দানের অনুমতি দিয়েছিলেন।
আরও দেখুন...