প্রিয় শিক্ষার্থী,
এই 'অঞ্জলি' চলাকালীন শিক্ষক তোমাকে ফিল্ড ট্রিপে নিয়ে যাবেন; ফিল্ড ট্রিপের অভিজ্ঞতার আলোকে পারস্পরিক ও দলগতভাবে আলোচনার সুযোগ পাবে; ফিল্ড ট্রিপে গিয়ে তোমরা নতুন কাজ ও বিষয়বস্তু জানারও সুযোগ পাবে। তুমি যীশুর যাতনাভোগ, ক্রুশীয় মৃত্যু, পুনরুত্থান, স্বর্গারোহণ ও পুনরাগমন সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা লাভ করবে। তুমি এই ঘটনাগুলোর চলচ্চিত্র/ভিডিও অথবা স্থিরচিত্র দেখবে। এছাড়াও অভিনয় করে, ছবি এঁকে এবং তথ্য সংগ্রহ করে বাইবেলের ঘটনা থেকে নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা, উপলব্ধি ও বিশ্বাস স্থাপন করতে পারবে। আর এভাবে তোমরা খ্রীষ্টধর্মের মূল বিষয়বস্তু সম্পর্কে জানবে। এ অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে তোমরা দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ও বিভ্রান্তি দূর করে নৈতিকভাবে দৃঢ় থাকতে পারবে।
|
এই 'অঞ্জলি'র অংশ হিসেবে শিক্ষক তোমার সহপাঠীদের সাথে তোমাকে নিয়ে শ্রেণিকক্ষের বাইরে কোথাও ফিল্ড ট্রিপে যেতে পারেন। ফিল্ড ট্রিপের স্থান, সময়, নিরাপত্তা এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের বিষয়ে শিক্ষকের কাছ থেকে আগেই ভালোভাবে বুঝে নিবে। শ্রেণিকক্ষের বাইরে ফিল্ড ট্রিপে যেতে তোমার মা-বাবা/ অভিভাবকের অনুমতি নিতে কিন্তু ভুলবে না।
ফিল্ড ট্রিপে গিয়ে তোমার বন্ধুদের সাথে ঘুরে ঘুরে চারপাশ এবং সব মানুষকে দেখবে। শিক্ষক যা নির্দেশনা দেন তা মনোযোগ দিয়ে শুনবে। শিক্ষক কোনো প্রশ্ন করলে তোমার উত্তর জানা থাকলে উত্তর দিতে পারো। আর তোমার মনে কোনো প্রশ্ন আসলে তুমি তা শিক্ষককে জিজ্ঞেস করতে পারো। পূর্বের শ্রেণিগুলোতেও তোমাদের এভাবে প্রশ্ন করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। তাই তোমার মনে কোনো প্রশ্ন থাকলে তুমি শিক্ষককে নিঃসংকোচে তা জিজ্ঞেস করতে পারো।
শিক্ষক যদি তোমাদের শ্রেণিকক্ষের বাইরে নিয়ে যান তবে নিজের এবং পাশের বন্ধুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চেষ্টা করো ও যত্ন নাও। তোমার উপর তোমার শিক্ষক, তোমার মা-বাবা/অভিভাবক এবং প্রিয় সকল মানুষের আস্থা আছে। যে কাজ তুমি জানো যে ভুল, তা করতে যেয়ো না। ফিল্ড ট্রিপ শেষে সরাসরি ঘরে ফিরে গিয়ে মা-বাবা/অভিভাবকের সাথে দেখা করবে যেন তারা দুশ্চিন্তামুক্ত হন।
ফিল্ড ট্রিপে তোমার প্রধান কাজ হলো চারপাশের সবাইকে মনোযোগ দিয়ে দেখার চেষ্টা করা, সেখানকার পরিবেশ, মানুষ, কর্তৃপক্ষ সকল কিছু ভালোমতো বোঝার চেষ্টা করা। মানুষের পরস্পর কথোপকথন তুমি মনোযোগসহকারে শুনতে চেষ্টা করো। স্থানীয়দের প্রশ্ন করে আরও বেশি কিছু জানার চেষ্টা করো। মনে রেখো, তোমার অনুভূতি, আচরণ ও অংশগ্রহণের উপর তোমার মূল্যায়ন হবে। পরিদর্শনকৃত প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ, শিক্ষক ও সহপাঠীদের প্রতি কৃতজ্ঞ হও।
অঞ্জলির এই অংশে ফিল্ড ট্রিপের অভিজ্ঞতার উপর তোমাদের দলগতভাবে আলোচনা করতে হবে। তোমাদের দল থেকে একজন প্রতিনিধি মনোনীত করবে। সে তোমাদের দলের আলোচনা সবার সামনে উপস্থাপন করবে। চেষ্টা করবে তুমি যেন সেই প্রতিনিধি হতে পারো। ভালো কাজের ফল বা পুরস্কারও কিন্তু তোমরা পেতে পারো।
দলগত কাজের নির্দেশনা শিক্ষকের কাছ থেকে মনোযোগসহকারে শুনবে। তিনি দলগতভাবে আলোচনা করে একটি তালিকা প্রস্তুত করতে বলবেন। সেই তালিকায় কী কী বিষয় থাকবে প্রশ্ন করে শিক্ষকের কাছ থেকে বুঝে নেবে। তালিকাটি দলের সকলের সাথে আলোচনা করে প্রস্তুত করবে। পরে দলের একজন সে তালিকাটি একটি পোস্টার পেপারে লিখবে এবং দলের প্রতিনিধি সেই পোস্টারটি শ্রেণিতে উপস্থাপন করবে।
উপস্থাপনার নিয়মগুলো ভালোভাবে জেনে নেবে। শিক্ষকের দেয়া নির্দেশনা অনুযায়ী তালিকা উপস্থাপন করবে। মনে রাখবে, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তোমার উপস্থাপনা শেষ করতে হবে। তাই স্পষ্ট ভাষায়, অল্প সময়ে, সঠিক তথ্য উপস্থাপন করার চেষ্টা করবে। খেয়াল রাখবে যে, তোমার কথা যারা শুনছে তারা যেনো তোমার কথা সঠিকভাবে বুঝতে পারে।
যদি একক উপস্থাপন হয়, মানে তুমি একা উপস্থাপন করবে এমন হয়, তবে তোমার নাম ঘোষণা পর্যন্ত অপেক্ষা করবে। আর দলগত উপস্থাপনের ক্ষেত্রে সহপাঠী বা বন্ধুদের সাথে মিলেমিশে উপস্থাপন করবে।
তোমার সহপাঠী বা বন্ধুদের উপস্থাপনাগুলোও মনোযোগসহকারে শুনবে। তাদের উপস্থাপনায় যে বিষয়গুলো নতুন মনে হবে বা তোমার ভালো লাগবে তা নিচে প্রদত্ত বক্সে লিখে রাখতে পারো।
শিক্ষক তোমাদের একটি খেলা খেলতে বলবেন। কার্ড দিয়ে খেলাটি খেলতে হবে। কার্ডে খেলার বিষয়বস্তু উল্লেখ করা থাকবে। কার্ডে উল্লেখিত বিষয়বস্তুটি শিক্ষকের নির্দেশনা অনুসারে তোমাকে একক বা দলে আলোচনা করতে হবে। পরে অভিনয়ের মাধ্যমে তোমার বিষয়টি শ্রেণিতে উপস্থাপন করতে হবে। শিক্ষকের নির্দেশনা মনোযোগ দিয়ে শোনো। তোমার বিষয়বস্তুটি উপস্থাপনার জন্যে আনন্দসহকারে খেলায় অংশগ্রহণ করো।
কার্ডের মাধ্যমে খেলার বিষয়বস্তু শিক্ষক তোমাকে শ্রেণিতে অভিনয়ের মাধ্যমে উপস্থাপন করতে বলবেন। একদিকে কার্ডের খেলা অন্যদিকে অভিনয়! কী সুন্দর আজকের বিষয়টি, তাই না? কার্ডে উল্লিখিত যে বিষয়বস্তুটি তোমাকে দেওয়া হয়েছে, একক অভিনয়ের বিষয় হলে তুমি নিজে প্রস্তুতি গ্রহণ করো। আর যদি অভিনয়টি দলগত হয় তবে তা নিয়ে দলে আলোচনা করো, একটু সময় নিয়ে প্রস্তুতি গ্রহণ করো এবং অভিনয়ের মাধ্যমে সবার সামনে উপস্থাপন করো।
তুমি কোন বিষয়ে এবং কোন চরিত্রে অভিনয় করবে তা ঠিক করে নেবে। তোমার চরিত্রটি অর্থপূর্ণভাবে ফুটিয়ে তুলতে তোমার কী কী করা দরকার মনে মনে সাজিয়ে নেবে।
যদি তুমি কোনো চরিত্রে অভিনয় করার দায়িত্ব পেয়ে থাকো, তবে তোমার চরিত্রের সংলাপগুলো আত্মস্থ করে নেবে। আর যদি নির্বাক চরিত্রে অভিনয়ের দায়িত্ব পেয়ে থাকো, তাহলে মঞ্চে তোমার অবস্থান, অঙ্গভঙ্গি এবং গতিবিধি দলে আলোচনা করে বুঝে নিবে। তোমার অভিনয়ের অনুভূতি বা আচরণের উপর কিন্তু একটি মূল্যায়ন হবে।
তোমরা অন্য সহপাঠীদের কার্ডের বিষয়বস্তুগুলো এবং অভিনয়ের আকর্ষণীয় দিকগুলো নিচে লিখে রাখতে পারো।
প্রিয় শিক্ষার্থী,
এখন চলো খ্রীষ্টধর্মের মৌলিক জ্ঞান ও আমাদের বিশ্বাসের ভিত্তি এবং মণ্ডলীর শিক্ষাসমূহ একটু জানা যাক। তোমাদের শিক্ষক এই বিষয়গুলো বাইবেল থেকে পাঠ ও ব্যাখ্যাসহ জানাবেন। কিছু এনিমেশন বা ভিডিও দেখাতে পারেন। একই সাথে কিছু প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে বিষয়গুলো স্পষ্ট করবেন। এই বইয়েও তোমরা বিষয়গুলো চাইলে পড়তে পারো। যখনই কোনো কিছু বুঝতে কষ্ট হবে তোমার মা-বাবা/অভিভাবক বা ভাই/ বোন বা শিক্ষককে জিজ্ঞেস করতে পারো। কোনো ছবি দেখে মনে প্রশ্ন আসলেও জিজ্ঞেস করতে সংকোচ করবে না।
তোমার বাসায় যদি কম্পিউটার বা স্মার্টফোন থাকে তাহলে তার মাধ্যমেও শিক্ষকের দেখানো ভিডিওগুলো তোমরা দেখতে পারো। এই সেশন দু'টোতে শিক্ষক তোমাদের কিছু প্রশ্নোত্তর ও ছবি অঙ্কন করার কাজ দিতে পারেন। কাজগুলো গুরুত্বের সাথে করার চেষ্টা করবে। মনে রাখবে এই কাজের উপর তোমাদের মূল্যায়ন হবে।
খ্রীষ্টধর্ম গ্রন্থ পবিত্র বাইবেল থেকে এবং পূর্ব জ্ঞান ও বিশ্বাস থেকে আমরা জানি যে আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্ট বহু যাতনাভোগ করেছেন। গেৎ শিমানী বাগানে তাঁর মর্ম বেদনা, গ্রেপ্তার, যুদাসের (যিহুদা) বিশ্বাসঘাতকতা, পিতরের অস্বীকার, প্রভু যীশুর বিচার, মৃতুদণ্ড এবং ক্রুশীয় মৃত্যুর উদ্দেশ্য ছিলো মানব জাতির পরিত্রাণ।
'সেখান থেকে বেরিয়ে আসার সময়ে তারা সামনে দেখতে পেল সাইরিনির একজন লোককে, যার নাম সিমোন। তাকে তারা যীশুর ক্রুশখানি বয়ে নিয়ে যেতে বাধ্য করলো। যখন তারা গলগথা অর্থাৎ খুলিতলা ব'লে পরিচিত একটি জায়গায় এসে পৌঁছল, তারা তখন যীশুকে পিত্তি-মেশানো দ্রাক্ষারস খেতে দিলো, কিন্তু একটু চেখে দেখার পর তিনি তা খেতে চাইলেন না। তারা এবার তাকে ক্রুশে গেঁথে দিল। তারপর দান চেলে তাঁর জামাকাপড় তারা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিল। তারপর সেখানে বসে তাঁকে পাহারা দিতে লাগলো। তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের লিপিফলকটি তাঁর মাথার ওপর টাঙিয়ে দেওয়া হল। তাতে লেখা ছিল: 'এই যে ইহুদীরাজ যীশু।' সেই সময় তাঁর সঙ্গে দু'জন দস্যুকেও ক্রুশে দেওয়া হল একজনকে তাঁর ডান পাশে আর একজনকে বাঁ পাশে।'
তোমাকে একটু সহজ করে বলি
শিক্ষার্থীরা, তোমরা পূর্বের শ্রেণিতে জেনেছো যে, যীশু খ্রীষ্ট পবিত্র ত্রিত্বের দ্বিতীয় ব্যক্তি। তিনি পুত্র ঈশ্বর। তিনি মানব জাতিকে পাপ থেকে উদ্ধারের জন্যে এ জগতে এসেছেন। কিন্তু মানুষ এত স্বার্থপর যে, তারা ঈশ্বরপুত্রকে চিনতে পারেনি বরং তাকে ক্রুশে দিয়েছে। তিনি যে বারোজন শিষ্য নিয়ে শিষ্যদল গঠন করেছিলেন তাদের মধ্যে একজন যার নাম 'যুদাস (যিহুদা)' তিনি যীশুকে গেৎশিমানি বাগানে ধরিয়ে দিয়েছিলো। আরেকজন শিষ্য, যার নাম 'পিতর' তিনি যীশুকে তিনবার অস্বীকার করেছিলেন। যে ইহুদীদের মাঝে যীশু এতো আশ্চর্য কাজ করেছেন, তারাই চিৎকার করে যীশুর ক্রুশ মৃত্যুর দাবি জানিয়েছিলো। যীশুর কাঁধে এক ভারি ক্রুশ চাপিয়ে দিয়ে সৈন্যরা তাকে চাবুক মারতে মারতে কালভেরিতে নিয়ে গিয়েছিল এবং 'খুলিতলা' নামক স্থানে দুইজন দস্যুর মাঝে ক্রুশে টাঙিয়েছিল। যন্ত্রণার এখানেই শেষ নয়, ক্রুশে টাঙিয়ে নিষ্ঠুর সৈন্যগণ তাকে জলের পরিবর্তে সিকা খেতে দিয়েছিলো, তার জামা-কাপড় সৈন্যরা দান চেলে ভাগ করে নিয়েছিলো। যীশুর কষ্ট হচ্ছে দেখে সাইরিনির 'সিমোন' নামে একজন যীশুভক্ত, যীশুর ক্রুশ বহনে সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছিলেন।
যীশুর শিষ্যগণ পালিয়ে গেলেও তার প্রতি গভীর বিশ্বাস ও ভালোবাসা থেকেই এই 'সিমোন' যীশুর ক্রুশের পথের সাথী হয়েছিলেন। তাঁর ক্রুশ বহন করার যে কষ্ট সেটার অভিজ্ঞতা অর্জন করেছিলেন। যীশুর মর্মবেদনার সমব্যথী হয়েছিলেন। সিমোনের এ উদাহরণ কি তোমাদের কোনো অনুপ্রেরণা দেয় না, সমাজের দুঃখী, দরিদ্র, অভাবী ও অসহায় মানুষের পাশে এভাবে দাঁড়াতে?
আমরা যেন আমাদের মুক্তিদাতাকে তিরস্কার, অবিশ্বাস বা অপমান না করি বরং আমরাও যেনো তার মতো পরিত্রাণকারী, দয়ালু, ক্ষমাশীল ও সেবার মানুষ হতে পারি। সিমোন যেভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন, আমরাও যেনো যন্ত্রণাক্লিষ্ট মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারি।
'যারা সেই পথ দিয়ে যাচ্ছিল, তারা তাঁকে যা-তা ব'লে অপমান করতে লাগলো; মাথা নাড়তে নাড়তে বলতে লাগল: "মহামন্দির ভেঙে ফেলে তুই নাকি তিন দিনের মধ্যেই আবার তা গড়ে তুলতে পারিস! বেশ তো, তুই যদি সত্যিই ঈশ্বরের পুত্র হোস, এখন তাহলে নিজেকে বাঁচা, ক্রুশ থেকে নেমে আয়।” প্রধান যাজকেরাও শাস্ত্রী ও প্রবীণদের সঙ্গে একইভাবে উপহাস করে বলছিলেন: "ও অপরকে বাঁচিয়েছে, অথচ নিজেকে বাঁচাতে পারছে না! ও নাকি ইস্রায়েলের রাজা! দেখি, ও এখন ক্রুশ থেকে নেমে আসুক, তাহলেই ওকে আমরা বিশ্বাস করব। ও তো ঈশ্বরের ওপর ভরসা রেখেছে! তা ঈশ্বর যদি সত্যিই ওর জন্যে ভাবেন, তাহলে তিনিই এখন ওকে উদ্ধার করুন। ও তো বলেছেই: 'আমি ঈশ্বরের পুত্র!'" এমন কি, যে দু'জন দস্যুকে তাঁর সঙ্গে ক্রুশে দেওয়া হয়েছিল, তারাও সেই একইভাবে তাঁকে বিশ্রী ভাষায় টিটকিরি দিচ্ছিল।'