ভূমিকা
নিজের জীবিকা নিজের প্রচেষ্টাতে অর্জনের অভিপ্রায়ে যে প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হয়, তাই ব্যবসায় উদ্যোগ । একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য ব্যবসায় উদ্যোগ বিশেষ ভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ।
ব্যবসায় উদ্যোগ বিষয়টি অর্থনীতিবিদ ক্যানটিলন সর্বপ্রথম অর্থনীতিতে প্রচলন করেন। মানুষ জীবিকা অর্জনের জন্য কাজ করে । জীবিকার উপায় হিসেবে কর্মসংস্থান সকল কর্মক্ষম ব্যক্তির একান্ত কাম্য । উন্নয়নশীল দেশে দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি, অর্থনৈতিক অনগ্রসরতা, শিল্পে স্থবিরতার জন্য চাহিদার তুলনায় কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয় না। তাই বেকার সমস্যা মারাত্মক আকারে দেখা দিচ্ছে । নিজের জীবিকা নিজের প্রচেষ্টাতে অর্জনের উপায় হচ্ছে আত্মকর্মসংস্থান । বর্তমান বিশ্বে কর্মসংস্থানের বিকল্প উৎস হিসেবে আত্মকর্মসংস্থান পেশা হিসেবে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ।
নিজেকে কর্মে নিয়োজিত করাকে কর্মসংস্থান বলে। সাধারণ অর্থে নিজেই নিজের কর্মসংস্থান করাকে আত্মকর্মংস্থান বলা হয় ।
ব্যাপক অর্থে জীবিকা অর্জনের জন্য কোনো মানুষ অন্যের উপর নির্ভর না করে নিজের প্রচেষ্টায় কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করলে তাকে আত্মকর্মসংস্থান বা স্ব-কর্মসংস্থান বলা হয়। এ ক্ষেত্রে একজন ব্যক্তি কারও অধীনস্থ কর্মচারী হিসেবে কাজ না করে নিজের দক্ষতা অনুযায়ী সংস্থাপনের ব্যবস্থা করে প্রদান করে । ব্যবসা হচ্ছে মূলত আত্মকর্মসংস্থানের উপায় । উদাহরণস্বরূপ আমরা বলতে পারি, একজন জুতার কারিগর যখন একটি জুতা উৎপাদনকারী ফ্যাক্টরিতে কর্মচারী হিসেবে কাজ না করে নিজেই জুতা তৈরি ও বিক্রয় করে মুনাফা অর্জন করে জীবিকা নির্বাহ করে, তখন তার এ পেশাকে আত্মকর্মসংস্থান বলে । জীবিকা অর্জনের বিভিন্ন পেশার মধ্যে প্লাম্বার, ইলেকট্রিশিয়ান, কনস্ট্রাকশন টেকনিশিয়ান ইত্যাদি । আত্মকর্মসংস্থান ক্রমশ জনপ্রিয়তা অর্জন করছে। কারণ এ ধরনের পেশা উদ্যমী মানুষের জন্য দ্রুত সাফল্য এনে দেয়। বিভিন্ন অঞ্চলের যে সম্ভাবনা ও সম্পদ রয়েছে তার সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত হয়। সর্বোপরী আত্মকর্মসংস্থান পেশার মাধ্যমে স্থানীয় ভাবে বিপুল কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়।
১। ড. এ.এইচ.এম. হাবিবুর রহমান বলেন - এর মতে, 'আত্মকর্মসংস্থান পেশা বলতে বোঝায় যখন কোনো ব্যক্তি স্বীয় দক্ষতা ও গুণাবলির বলে সেবাদানের বিনিময়ে অর্থ উপার্জন করে জীবিকা চালায়।
আমাদের দেশে স্বল্প মূলধনের সাহায্যে বিভিন্ন পদ্ধতির ব্যবসা স্থাপন করে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির সম্ভাবনা খুবই উজ্জ্বল । এদেশে প্রকট বেকার সমস্যার প্রেক্ষাপটে তরুণদের ব্যবসাকে বিকল্প পেশা হিসেবে গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করে কর্মসংস্থান সৃষ্টির একটি সম্ভাবনাময় কৌশল হতে পারে। ব্যবসাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করলে একদিকে একজন তরুণ তার নিজের জন্য কর্মসংস্থানের উপায় খুঁজে পাবে, অন্যদিকে আরো কিছু তরুণের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে। এতে শ্রমবাজারের উপর চাপ কমে যাবে এবং দেশের সমগ্রিক বেকার সমস্যা থেকে উত্তরণের পথ খুঁজে পাবে ।
আবার কোনো কিছু করার ইচ্ছা বা আগ্রহ প্রকাশকে উদ্যোগ বলে । ব্যবসায় উদ্যোগ বলতে কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান স্থাপন ও পরিচালনা সংক্রান্ত কর্মোদ্যোগকে বোঝায় ।
ব্যাপক অর্থে মুনাফা অর্জনের আশায় লোকসানের সম্ভাবনা জেনেও ঝুঁকি নিয়ে কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান স্থাপনের জন্য দৃঢ়ভাবে এগিয়ে যাওয়াকে ব্যবসায় উদ্যোগ বলে। ব্যবসায় উদ্যোগ এমন কতগুলো গুণের সমষ্টি যা সমাজের অধিকাংশ লোকের মধ্যেই কম বেশি পরিলক্ষিত হয় ।
নিম্নে ব্যবসায় উদ্যোগের উল্লেখযোগ্য সংজ্ঞা প্রদত্ত হলো :
১। আর্থার কোল (Arther Kohl)-এর মতে, 'ব্যবসায় উদ্যোগ হলো এমন একটি উদ্দেশ্যমুখী কার্যক্রম, যেখানে সিদ্ধান্তগুলো পর্যায়ক্রমে মেনে চলা যায়' ।
২। বসু ও মৌলিকের মতে, 'ব্যবসায় উদ্যোগ হচ্ছে অর্থনৈতিক সুযোগকে বুঝে কাজে লাগানো প্রতিষ্ঠান স্থাপন এবং সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে 'প্রতিষ্ঠানকে লাভজনক করে তোলা' ।
৩। জোসেফ এ. সুমপিটার (Joseph A. Schumpeter)-এর মতে, 'ব্যবসায় উদ্যোগ হচ্ছে এমন এক কার্য যাতে নতুন পণ্য উৎপাদন, নতুন কৌশল উদ্ভাবন ও নতুন বাজার অনুসন্ধান, পণ্যের কাঁচামাল সরবরাহের উৎস অনুসন্ধান এবং প্রতিষ্ঠানকে চালিয়ে নেওয়া ও উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন সাধন করাকে বোঝায় ।
পরিশেষে, উপর্যুক্ত সংজ্ঞার আলোকে বলা যায় যে, ব্যবসায় উদ্যোগ এমন একটি কার্যক্রমকে নির্দেশ করে যার মাধ্যমে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গঠনের উদ্যোগ গ্রহণসহ উক্ত প্রতিষ্ঠান পরিচালনা, নিয়ন্ত্রণ, পণ্য ও সেবা উৎপাদন ও বিতরণ করে মুনাফা অর্জন করাকে বোঝায় ।
আর.আই রবিনসন (R.I. Rabinson)-এর মতে, 'ব্যবসায় উদ্যোক্তা হচ্ছেন এমন একজন ব্যক্তি যিনি নিজ প্রচেষ্টায় একটি প্রতিষ্ঠানের উদ্ভাবনী শক্তি এবং প্রেরণার মাধ্যমে সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে আসেন'।
উপর্যুক্ত সংজ্ঞাগুলো পর্যালোচনা করে একথা বলা যায় যে, ব্যবসায় উদ্যোক্তা হচ্ছেন এমন একজন ব্যক্তি যিনি স্বীয় উদ্যম, কর্মস্পৃহা, উদ্ভাবনী শক্তি ব্যবহার করে একটি নতুন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গঠন করে একে এবং সাফল্য অর্জনের লক্ষ্যে উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
ব্যবসায় উদ্যোক্তার বৈশিষ্ট্য
ব্যবসায় সাফল্য শুধু মূলধন ও অন্যান্য উপকরণের উপর নির্ভর করে না । সাফল্যের জন্য প্রয়োজন একজন সফল উদ্যোক্তা । কেননা একজন ব্যবসায় উদ্যোক্তার ব্যক্তিগত ও সাংগঠনিক যোগ্যতার উপর ব্যবসায়ের সাফল্য অথবা ব্যর্থতা অনেকাংশে নির্ভর করে। তাই একজন সফল ব্যবসায় উদ্যোক্তা হতে হলে তাকে কতকগুলো ব্যক্তিগত, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও মনস্তাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য থাকা উচিত। তাই অর্থনীতিবিদ, সমাজবিজ্ঞানী ও মনোবিজ্ঞানীগণ ব্যবসায় উদ্যোক্তার বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপে নিরূপণ করতে চেষ্টা করেছেন।
১। মনস্তাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য: মনস্তাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যের মধ্যে সাফল্য লাভের তীব্র আকাঙ্ক্ষা, ক্ষমতা, আত্মবিশ্বাস, স্বাধীনতা, স্বীকৃতি, ঝুঁকি গ্রহণের ক্ষমতা, মনোভাব, সৃজনশীল, উদ্ভাবনী শক্তি, চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করার সাহস, প্রতিশ্রুতি, অধ্যবসায়, বুদ্ধিমত্তা, দূরদৃষ্টি, জানার ইচ্ছা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য ।
২। অর্থনৈতিক বৈশিষ্ট্য : উদ্যোক্তার অর্থনৈতিক বৈশিষ্ট্যের মধ্যে পেশাগত অভিজ্ঞতা, মূলধনের জোগান ও ব্যবহার ক্ষমতা, প্রযুক্তিগত অভিজ্ঞতা, সুযোগ-সুবিধার ব্যবহার, অর্থনৈতিক বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান ইত্যাদি অন্যতম ।
৩। সামাজিক বৈশিষ্ট্য: উদ্যোক্তার সামাজিক বৈশিষ্ট্যের মধ্যে নেতৃত্বের যোগ্যতা পৈতৃক গুণাবলির প্রতিফলন, সামাজিক কার্যকলাপে উদ্যোগ গ্রহণ, বংশমর্যাদা ও পারিবারিক মর্যাদা অন্যতম ।
৪। সাধারণ বা ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্য : উদ্যোক্তার সাধারণ বা ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্যের মধ্যে শিক্ষা, বয়স, আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব, বিক্রয় করার গুণাবলি, কৌশল, সততা, অর্থের প্রতি আগ্রহ, ত্যাগী মনোভাব, পরিশ্রমী, আন্তরিকতা প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য ।
ব্যবসায় উদ্যোক্তার শ্রেণিবিন্যাস
উদ্যোক্তার বৈশিষ্ট্য, গুণাগুণ ও দক্ষতার ভিত্তিতে বিচার করলে শিল্পোদ্যোক্তাকে নিম্নবর্ণিত কয়েকটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায় ।
নিম্নে বিভিন্ন প্রকার ব্যবসায় উদ্যোক্তার সম্পর্কে আলোচনা করা হলো
১। কারিগরি দক্ষতাসম্পন্ন উদ্যোক্তা: এ ধরনের উদ্যোক্তাগণ যথেষ্ট কারিগরি জ্ঞান ও দক্ষতাসম্পন্ন হয়ে থাকেন । এ ধরনের শিল্পোদ্যোক্তাগণ করিৎকর্মা ও বাস্তবমুখী। এ ধরনের উদ্যোক্তাগণ ছোটখাটো প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে বেশি আগ্রহী । ব্যক্তিগত যোগ্যতার উপর ভিত্তি করে এরা প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী নিয়োগ করেন ।
২। সুযোগসন্ধানী উদ্যোক্তা: যে সকল শিল্পোদ্যোক্তা বাজারে বিদ্যমান সুযোগকে ব্যবহার করে প্রতিষ্ঠানের সফলতা আনয়নে চেষ্টা করেন, তাদেরকে সুযোগ সন্ধানী শিল্পোদ্যোক্তা বলে। এ ধরনের শিল্পোদ্যোক্তাগণ বিদ্যমান সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিবেশে নিজেকে খাপ খাইয়ে কাজ করে থাকেন। তারা বিদ্যমান ও নতুন পরিস্থিতিতে সুযোগ গ্রহণে প্রস্তুত থাকেন। এ ধরনের শিল্পোদ্যোক্তা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় যথেষ্ট শিক্ষিত হয়ে থাকেন। তারা নিজেদের কারিগরের চেয়ে একজন ব্যবস্থাপক হিসেবে গণ্য করতে আগ্রহী। এ ধরনের শিল্পোদ্যোক্তাগণ অধিক জনসংযোগে বিশ্বাসী ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন হয়ে থাকেন।
৩। উদ্ভাবনী ক্ষমতাসম্পন্ন উদ্যোক্তা (Innovative entrepreneur): এ ধরনের উদ্যোক্তাগণ যথেষ্ট উদ্ভাবনী ক্ষমতার অধিকারী হয়ে থাকেন। ব্যবসায়ের নিত্যনতুন ক্ষেত্র ও কলাকৌশল উদ্ভাবন, নতুন পণ্য আবিষ্কার ও বাজার সৃষ্টি, নতুন কৌশল উদ্ভাবন ইত্যাদি এ ধরনের শিল্পোদ্যোক্তার মৌলিক বৈশিষ্ট্য। তারা নিজের উদ্যোগে একটি শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহ করেন, উৎপাদনের উপকরণগুলোকে একত্রিত করে পণ্য উৎপাদন করেন এবং প্রতিষ্ঠানকে সচল রাখার চেষ্টা করেন। এ ধরনে শিল্পোদ্যোক্তারা উদ্ভাবন কার্য পরিচালনায় এবং উদ্ভাবনী কার্যসমূহকে শিল্পসম্মতভাবে ব্যবহারে আগ্রহী।
৪। অনুকরণপ্রিয় উদ্যোক্তা (Imitative entrepreneur): এ ধরনের শিল্পোদ্যোক্তাগণ নিজের সাফল্য অর্জনের লক্ষ্যে অন্যের মাধ্যমে উদ্ভাবিত, আবিষ্কৃত এবং প্রয়োগকৃত প্রযুক্তি ও কলা-কৌশল অনুকরণ করতে আগ্রহী । এদের প্রধান লক্ষ্য অন্যের উদ্ভাবনমূলক কাজকে অনুকরণ করে উৎপাদন ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি সাধন এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখা । অনুন্নত দেশসমূহে সাধারণত এ ধরনের শিল্পোদ্যোক্তা পরিলক্ষিত হয় । তারা উন্নত দেশের উৎপাদন কৌশল নিজের দেশে প্রয়োগ করে সফলতা আনার প্রয়াস চালান ।
৫। উদ্যমী, সাহসী ও পরিশ্রমী উদ্যোক্তা: (Dynamic, Brave and labourious) এ ধরনের উদ্যোক্তাদের প্রচণ্ড সাহস ও উদ্যম থাকে। এ ধরনের উদ্যোক্তাকে নানাবিধ ঝুঁকি ও সমস্যার মোকাবিলা করতে হয় । তাই উদ্যম সাহস নিয়ে উক্ত ঝুঁকি সামলাতে তাদেরকে যথেষ্ট পরিশ্রম করতে হয়। এরা উদ্যমী, সাহসী ও পরিশ্রমী হয় বলেই পূর্বনির্ধারিত লক্ষ্যে পৌছাতে সক্ষম হন । তারা নিজেরা যেমন উদ্যমী, সাহসী ও পরিশ্রমী, অন্যদেরকেও অনুরূপ হতে উৎসাহী করেন ।
মালিকানাভিত্তিক শিল্পোদ্যোক্তা
(ক) সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ: মালিকানা ভেদে শিল্পোদ্যোগকে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ হিসেবে ভাগ করা যায়। শিল্পোদ্যোগ সাধারণত একটি বেসরকারি কার্যকলাপ হলেও উন্নয়নশীল দেশগুলোতে অর্থনীতির সামগ্রিক উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকারি উদ্যোগ ও প্রসার লাভ করছে। যেসব দেশে বৈদেশিক মূলধনের অভাব এবং ব্যক্তিগত পর্যায়ে শিল্পোদ্যোক্তার স্বল্পতা রয়েছে সেসব দেশে । অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধাসহ শিল্পায়নে রাষ্ট্রের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পেয়েছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, বাংলাদেশে সেক্টর কর্পোরেশন এবং আরো কিছুসংখ্যক সরকারি প্রতিষ্ঠান বেসরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি শিল্প স্থাপন করে অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে ।
(খ) একক এবং ব্যাপকভিত্তিক শিল্পোদ্যোগ: শিল্পোদ্যোগকে আবার একক এবং ব্যাপকভিত্তিক শিল্পোদ্যোগ হিসেবে বিভক্ত করা যায়। পাকিস্তান আমলে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে দেশে পরিবারভিত্তিক শিল্পোদ্যোগ সৃষ্টি হয়েছিল। সরকারের সামগ্রিক পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে ওঠা পরিবারভিত্তিক একদল বাণিজ্য বা শিল্প প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নকে একক শিল্পোদ্যোগ বলা হয় । এভাবে সরকারি নীতির মাধ্যমে ভাগ্যবান শিল্পসমৃদ্ধ পরিবার সৃষ্টির ফলে একটি অনগ্রসর অর্থনীতিতে সামাজিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি হয় ।
যেসব দেশে উন্নয়নের ব্যাপক অংশজুড়ে উৎপাদনশীলতা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির বিষয়টি জড়িত, সেখানে ব্যাপকভিত্তিক শিল্পোদ্যোগ সৃষ্টির প্রয়োজন সর্বাধিক। এ ধরনের ব্যাপকভিত্তিক শিল্পোদ্যোগ কৌশল দেশের বিদ্যমান সম্পদের ব্যবহারের মাধ্যমে বেকার ও অর্ধবেকারদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে অর্থনৈতিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে পারে। বাংলাদেশের প্রকট বেকার সমস্যার প্রেক্ষাপটে ব্যাপকভিত্তিক শিল্পোদ্যোগ আবশ্যক ।
১। শিল্পোদ্যোক্তা (Industrial entrepreneur): যে সমস্ত উদ্যোক্তা রাষ্ট্রীয় সম্পদের রূপগত পরিবর্তনের মাধ্যমে মানুষের ব্যবহার উপযোগী করে তোলার উদ্দেশ্যে কারবার বা শিল্প প্রতিষ্ঠান গঠন পরিচালনা করে থাকে তাদেরকে শিল্পোদ্যোক্তা বলে। দেশে বৃহদায়তন কারবার গঠন ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে সব উদ্যোক্তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন ।
২। বাণিজ্যিক উদ্যোক্তা (Commercial entrepreneur): এ ধরনের উদ্যোক্তা শিল্প প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত পণ্যের বণ্টন প্রণালির প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করে। এরা উৎপাদকের কাছ থেকে ব্যাপক হারে পণ্য দ্রব্য ক্রয় করে ভোক্তাদের কাছে বিক্রয় করে। খুচরা বা পাইকারি ব্যবসায়ী এ শ্রেণির উদ্যোক্তার অন্তর্ভুক্ত।
৩। সেবা পরিবেশন উদ্যোক্তা (Entrepreneurship to serve the service): যে সকল উদ্যোক্তা মানুষের জনকল্যাণমূলক এবং অর্থ উপার্জনের উদ্দেশ্যে সেবাকর্মের সৃষ্টি ও সেগুলোর বিতরণের উদ্দেশে কারবার গঠন করেন তাকে সেবা পরিবেশক উদ্যোক্তা বলে । যথা-ব্যাংক, পরিবহন সংস্থা, বিজ্ঞাপনী সংস্থা ইত্যাদি ।
সংজ্ঞা ও পরিধি
ক্ষুদ্র ব্যবসা: অপেক্ষাকৃত কম পুঁজি বিনিয়োগ করে ক্ষুদ্র পরিসরে পণ্যদ্রব্য বা সেবা প্রদান অথবা পণ্যদ্রব্য ও সেবাসামগ্রী ক্রয় করে কাছে বিক্রয় কার্যে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানসমূহকে ক্ষুদ্র ব্যবসা বলে । বাংলাদেশে সরকারিভাবে স্বল্প পুঁজি থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৩ কোটি টাকা বিনিয়োগকৃত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে ক্ষুদ্র ব্যবসা বলে গণ্য করা হয়। ক্ষুদ্র ব্যবসার পরিধি ব্যক্তি পর্যায়েই সর্বাধিক বাস্তবায়িত হয় তবে রাষ্ট্রীয় নীতিমালার আলোকে ক্ষুদ্র বা ব্যক্তীকে কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া হয়।
ক্ষুদ্র ব্যবসার সুবিধাসমূহ ( Advantage of Small Business)
নিম্নে ক্ষুদ্র ব্যবসার সুবিধাগুলো আলোচনা করা হলো :
১। সহজ গঠনপ্রণালী: ক্ষুদ্র ব্যবসা গঠন করা খুব সহজ। যে কোনো লোক তার পছন্দ মতো ক্ষুদ্র ব্যবসা সংগঠিত করে ব্যবসায়িক কার্য পরিচালনা করতে পারে ।
২। মূলধন গঠনের সুবিধা: ক্ষুদ্র ব্যবসা স্বল্প পুঁজির প্রয়োজন হয়। ফলে এর মালিক সহজেই কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ মূলধনের সংস্থানের মাধ্যমে ব্যবসা গঠন করতে পারে।
৩। আইনের জটিলতামুক্ত: ক্ষুদ্র ব্যবসায় গঠন ও পরিচালনার জন্য আইনগত কোনো আনুষ্ঠানিকতা পালন করতে হয় না । তাই সহজে এরূপ ব্যবসা গঠন করা যায় ।
৪। দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ: ক্ষুদ্র ব্যবসায় সাধারণত এক মালিকানার ভিত্তিতে সংগঠিত হয়। মালিক নিজেই ব্যবসার সকল সম্পত্তির মালিক বিধায় এরূপ ব্যবসা যে কোনো বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যায় ।
৫। পরিবর্তনশীলঃ ভোক্তাদের রুচির সাথে তাল মিলিয়ে যে কোনো সময়ে ক্ষুদ্র ব্যবসায় প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করা সম্ভব । এতে ব্যবসায়ীর পক্ষে যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করা সহজ হয় ।
৬। তত্ত্বাবধান: ক্ষুদ্র ব্যবসায়ের মালিক নিজেই ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনায় অংশগ্রহণ করেন । এতে তার পক্ষে ব্যবসায়ের যাবতীয় বিষয় ব্যক্তিগতভাবে তত্ত্বাবধান করা সহজ হয় ।
৭। ভোক্তাদের সাথে প্রত্যক্ষ সম্পর্ক: ক্ষুদ্র ব্যবসায়ের অন্যতম প্রধান সুবিধা হলো এর মাধ্যমে ভোক্তাদের সাথে প্রত্যক্ষ যোগাযোগ স্থাপিত হয় । ফলে ভোক্তাদের চাহিদা ও রুচি অনুযায়ী পণ্য সরবরাহ করা যায়।
৮। ব্যক্তিগত দক্ষতার বিকাশ: ক্ষুদ্র ব্যবসার মালিককে ব্যবসায়িক বিভিন্ন কার্যক্রম নিজ দায়িত্বে সম্পন্ন করতে হয় । এতে ব্যবসাসংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে তার জ্ঞানের পরিধি বৃদ্ধি পায়, যা তার ব্যবসায়িক দক্ষতা পরিচায়ক ।
৯। ভোক্তাদের সুবিধা: ক্ষুদ্র ব্যবসা যে কোনো স্থানে গঠন করা যায়। এ ধরনের ব্যবসা ভোক্তাদের আবাসিক এলাকার আশপাশেই সাধারণত গড়ে ওঠে। এতে ভোক্তারা তাদের চাহিদামাফিক পণ্য ক্রয়ের সুযোগ পায় ।
১০। ব্যক্তিগত উদ্যোগ: ক্ষুদ্র ব্যবসার অর্জিত সুফল সবটুকুই মালিকের নিজের প্রাপ্য। তাই ব্যবসা পরিচালনার মাধ্যমে পর্যাপ্ত মুনাফা অর্জন ও সুনাম বৃদ্ধির জন্য মালিকের প্রচেষ্টার অভাব দেখা দেয় না ।
ক্ষুদ্র ব্যবসার অসুবিধাসমূহ (Disadvantages of Small Business)
ক্ষুদ্র ব্যবসা হতে অর্জিত সুবিধার পাশাপাশি কিছু অসুবিধাও রয়েছে । যা নিম্নে আলোচনা করা হলো :
১। মূলধনের অপর্যাপ্ততা: ক্ষুদ্র ব্যবসার মূলধনের স্বল্পতা একটি প্রধান অসুবিধা । মূলধনস্বল্পতার কারণে এটি অনেক সময় ব্যবসায়িক সুযোগ কাজে লাগাতে পারে না ।
২। স্থায়িত্বের অভাব: ক্ষুদ্র ব্যবসার অস্তিত্ব মালিকের অস্তিত্বের উপর নির্ভরশীল । যে কোনো কারণে মালিকের অস্তিত্ব বিলীন হলে ব্যবসারও বিলোপ ঘটে ।
৩। অসীম দায়: ক্ষুদ্র ব্যবসার মালিককে ব্যবসায়ের সমুদয় দায় বহন করতে হয়। কোনো কারণে ব্যবসায় দেনা হলে মালিকের ব্যক্তিগত সম্পত্তিও দায়বদ্ধ হয় ।
৪। আয়তনগত সীমাবদ্ধতা: স্বল্প মূলধন নিয়ে এ ধরনের ব্যবসা গঠিত হয় বিধায় সীমিত পরিসরে এর ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করতে হয়। ফলে এর মাধ্যমে কখনও বৃহদায়তন ব্যবসায়ের সুবিধা ভোগ করা যায় না।
৫। কর্মচারীদের অসুবিধা: ক্ষুদ্র ব্যবসার আয়তন ছোট হওয়ার দরুণ এ কারবারে নিযুক্ত কর্মচারীদের সুযোগ-সুবিধা যেমন পদোন্নতি দেওয়া সম্ভব হয় না এতে দক্ষ কর্মচারী অন্য প্রতিষ্ঠানে চলে যায় ।
৬। মালিকের খামখেয়ালিপনা: ক্ষুদ্র ব্যবসায়ের মালিকের খামখেয়ালিপনার জন্য কর্মচারীদের অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয় । অনেক সময় বিনা কারণে কর্মচারীদের বিদায় করে দেওয়া হয় ।
বাংলাদেশে আত্মকর্মসংস্থান ও ব্যবসায় উদ্যোগের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। বাংলাদেশ বিশ্বের একটি উন্নয়নশীল দেশ। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত ও বেকার সমস্যা সমাধানের জন্য আত্মকর্মসংস্থানের গুরুত্ব অপরিসীম ।
উদ্যোগের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করা হলো:
১। বেকারত্ব দূরীকরণ: বর্তমানে বেকারত্ব বাংলাদেশের প্রধান সমস্যাগুলোর অন্যতম। এ দেশের জনসংখ্যা অনুপাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ নেই বললেই চলে। সরকারের একার পক্ষে বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠীকে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা সম্ভব নয়। এ অবস্থার প্রেক্ষাপটে আত্মকর্মসংস্থান ছাড়া ব্যাপক জনগোষ্ঠীর বেকারত্ব মোকাবিলার আর কোনো পথ নেই। মোট কথা, আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমেই বিপুল বেকার জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান করা সম্ভব ।
২। দারিদ্র্য দূরীকরণঃ আত্মকর্মসংস্থানমূলক কর্মকাণ্ড বেকারত্ব দূরীকরণের মাধ্যমে জনগণকে উৎপাদনমুখী কর্মকাণ্ডের প্রসার ঘটিয়ে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের চাকা সচল করে দারিদ্র্য দূরীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে ।
৩। অর্থনৈতিক উন্নয়ন: আত্মকর্মসংস্থানমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে নতুন নতুন ব্যবসা ও শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করে। এছাড়াও আত্মকর্মসংস্থান মূলক কার্যক্রম ব্যক্তি পর্যায়ে সঞ্চয় ও মূলধন গঠনে সহায়তা করে
৪। জনশক্তির সদ্ব্যবহার: জনশক্তি একটি দেশের সম্পদ হিসেবে পরিগণিত হয় তখনই, যখন তাকে সঠিকভাবে কাজে লাগানো যায়। কিন্তু এ জনশক্তিকে কাজে লাগাতে না পারলে তা দেশ ও জাতির জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়ায় । যা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে ব্যাহত করে । উপযুক্ত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে জনশক্তির সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করতে আত্মকর্মসংস্থানের গুরুত্ব রয়েছে।
৫। সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধিঃ কর্মহীন বেকারদের কেউ পছন্দ করে না । আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে কর্ম কাজের সংস্থান হলে উদ্যোক্তার সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি পায় ।
৬। মানবসম্পদ উন্নয়ন: যুবসমাজকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আত্মকর্মসংস্থানমূলক কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত করা যায় । এ জন্য প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মানবসম্পদ উন্নয়নের ক্ষেত্রে আত্মকর্মসংস্থানের গুরুত্ব অপরিসীম ।
৭। জাতীয় আয় বৃদ্ধি: আত্মকর্মসংস্থানমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে দেশে ছোট ছোট শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে যার ফলে দেশের মোট জাতীয় আয় বৃদ্ধি পায় ।
৮। উদ্যোক্তা সৃষ্টি: আত্মকর্মসংস্থানের ক্ষেত্র হিসেবে ব্যবসায় নিয়োজিত হওয়ার মাধ্যমে মানুষ মুনাফা অর্জন করে । এতে করে দেশে নতুন উদ্যোক্তার সৃষ্টি হয়। উদ্যোক্তা সৃষ্টির সাথে সাথে সংস্থান বৃদ্ধি পায়।
৯। সামাজিক শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা : আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে সমাজের ব্যাপক বেকার লোককে স্বকর্মে নিযুক্ত করার মাধ্যমে সামাজিক শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা যায় ।
পরিশেষে এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশে আত্মকর্মসংস্থানের যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে এদেশে শুধু দারিদ্র্য ও বেকার সমস্যা দূরীভূত হবে তা নয় বরং সামাজিক শৃঙ্খলা, অর্থনৈতকি নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব হবে।
একজন উদ্যোক্তার উদ্যোগ সফল হওয়ার উপর শুধু উদ্যোক্তার নিজের উন্নয়ন নির্ভর করে না বরং দেশ ও দেশের উন্নতিও নির্ভর করে। উদ্যোক্তার উদ্যোগ সফল বা ব্যর্থ হওয়া অনেক বিষয়ের উপর নির্ভর করে । গবেষণায় দেখা গেছে, সুনির্দিষ্ট কিছু নীতিমালা অনুসরণ করে যারা ব্যবসা পরিচালনা করেন, তারাই কেবল সফল হন । নিম্নে ব্যবসায় সফল ও ব্যর্থ হওয়ার কারণগুলো আলোচনা করা হলো:
১। ব্যবসায় সঠিক পণ্য নির্ধারণ: সঠিক পণ্য নির্ধারণ ব্যবসায় সাফল্যের অন্যতম পূর্বশর্ত । একজন উদ্যোক্তা কোনো পণ্য নির্বাচনের ক্ষেত্রে সে পণ্যের বাজার চাহিদা কীরূপ, তা সঠিকভাবে নির্ধারণ করতে হবে । গবেষণার ফল থেকে জানা যায় যে বহুল ব্যবহৃত পণ্যের চেয়ে নতুন সম্ভাবনাময় পণ্য নির্বাচন করলে সাফল্য অনিবার্য ।
২। সঠিক পরিকল্পনা প্রণয়ন: সঠিক পরিকল্পনা প্রণয়নের উপর ব্যবসার সাফল্য অনেকাংশে নির্ভরশীল। ভবিষ্যতে কী, কখন এবং কীভাবে একটি কাজ করতে হবে তা অগ্রিম চিন্তাভাবনা করার নামই পরিকল্পনা । ব্যবসা-বাণিজ্য সফলভাবে পরিচালনার জন্য উদ্যোক্তাকে একটি সুষ্ঠু পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে । কারণ সঠিক পরিকল্পনার অভাব ব্যবসায় ব্যর্থতার অন্যতম কারণ ।
৩। পর্যাপ্ত মূলধন: ব্যবসায়ের জন্য প্রয়োজনীয় মূলধনের সংস্থান করা ব্যবসায় সফলতার অন্যতম শর্ত। সুতরাং ব্যবসার সাফল্যের জন্য দীর্ঘমেয়াদি এবং স্বল্পমেয়াদি উভয় ক্ষেত্রেই শিল্প প্রতিষ্ঠানে পর্যাপ্ত মূলধনের সংস্থান করা প্রয়োজন । পর্যাপ্ত মূলধনের অভাবে ব্যবসায় কার্য সঠিকভাবে পরিচালনা করা সম্ভব হয় না ।
৪। পণ্য বাজারজাতকরণ: বাজারজাতকরণের অর্থ হচ্ছে সঠিক মূল্যে যথাসময়ে বাজারে পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করা । পণ্য শুধু উৎপাদন করলেই হবে না, তা বিক্রির ব্যবস্থাও করতে হবে । এর জন্য ব্যাপকভাবে বিজ্ঞাপন ও প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে । প্রচার ব্যতীত কোনো পণ্যের নতুন বাজার সৃষ্টি করা সম্ভব নয় । সুপরিকল্পিতভাবে বাজারজাতকরণ প্রক্রিয়া ব্যবসায় সাফল্যের চাবিকাঠি।
৫। শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা: শিক্ষা গ্রহণ ও অভিজ্ঞতা অর্জন ব্যবসার সফলতার পূর্বশর্ত । ব্যবসায়ে অতীত অভিজ্ঞতা ও শিক্ষা থাকলে ব্যর্থতার চেয়ে সফলতার সম্ভাবনাই বেশি । গবেষণার ফলাফল থেকে দেখা যায় যে ব্যবসায় পূর্ব অভিজ্ঞতাসম্পন্ন উদ্যোক্তাগণ সবচেয়ে বেশি সফল হন ।
৬। দক্ষ ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনা: উদ্যোক্তাকে দক্ষ ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনার জ্ঞান অর্জন করতে হবে। ব্যবস্থাপ- না ও পরিচালনা জ্ঞান ছাড়া প্রতিষ্ঠানকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা সম্ভব নয়। ব্যবস্থাপনার মৌলিক কাজ যেমন- পরিকল্পনা, সংগঠন, প্রেষণা ও নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি সম্পর্কে ধারণা থাকা যে কোনো উদ্যোক্তার সফলতার জন্য অপরিহার্য। উদ্যোক্তার নিজস্ব নিয়মনীতি অনুযায়ী কাজ করলে ব্যর্থ হতে পারে।
৭। হিসাবরক্ষণ : সুষ্ঠু ও যথাযথ হিসাবরক্ষণের উপর ব্যবসার সফলতা অনেকাংশে নির্ভরশীল। যথাযথভাবে হিসাব না করলে ব্যবসা ব্যর্থ হতে পারে।
পরিশেষে বলা যায় যে, উপরোক্ত বিষয়গুলো ব্যবসায়ের সফলতার জন্য একান্ত আবশ্যক। যে উদ্যোক্তা উপরোক্তা বিষয়গুলো সঠিকভাবে অনুসরণ করেন তার ব্যবসায় সাফল্য আসবে এসব শর্ত লংঘন করলে ব্যবসায় বিপর্যয় আশংকা থাকে।
অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১. উদ্যোগ কী?
২. ব্যবসা উদ্যোক্তা কে?
৩. উদ্যোগ বিষয়টি অর্থনীতিতে কে প্রথম প্রচলন করেন ।
৪. আত্মকর্মসংস্থান কী ?
৫. আত্মকর্মসংস্থানকে প্রধানত কত শ্রেণিতে ভাগ করা যায়?
৬. আত্মকর্মসংস্থানকে কী কী শ্রেণিতে ভাগ করা হয় ।
৭. ব্যবসায় উদ্যোক্তার গুন অর্জন করতে হয়।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১. শিল্প উদ্যোগের সংজ্ঞা দাও ।
২. শিল্পোদ্যোক্তার সামাজিক বৈশিষ্ট্যসমূহ কী কী ?
৩. একজন উদ্যোক্তার হতে মনস্তাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য থাকা প্রয়োজন সমূহ কী কী ?
৪. উদ্ভাবনী ক্ষমতাসম্পন্ন উদ্যোক্তা কাকে বলে?
৫. আত্মকর্মসংস্থান বলতে কী বোঝায় ?
৬. মজুরি ও বেতনভিত্তিক চাকরি কাকে বলে?
৭. ক্ষুদ্র ব্যবসা কাকে বলে ?
৮. দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে উদ্যোক্তার ভূমিকা কী উল্লেখ কর ।
রচনামূলক প্রশ্ন
১. ব্যবসায় উদ্যোক্তার বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা কর ।
২. ক্ষুদ্র ব্যবসার সুবিধাগুলো আলোচনা কর ।
৩. একজন উদ্যোক্তার ব্যবসায় সাফল্য লাভ এবং ব্যর্থতার কারণগুলো আলোচনা কর ।
আরও দেখুন...