আথুই মারমা সাঁতারে খুব ভালো। বাবার ইচ্ছে সে ফুটবল খেলে নাম করুক, আর মা চায় আবৃত্তি করুক। কিন্তু আথুইয়ের সেসব করায় মন নেই। সে চায় সাঁতারে নিজেকে দক্ষ করে তুলতে। মায়ের সাথে আধুইয়ের বোঝাপড়াটা ভালো তাই সে নিজের ইচ্ছের কথা বলতে পারে। তবে বাবাকে কোনো কিছু বলতে তার খুব ভয় হয়। কিছুদিন ধরে সে খেয়াল করছে বন্ধুদের সাথে সে তার নিজের ইচ্ছের কথা সহজেই বলতে পারে। কিন্তু বড়দের মধ্যে অনেকের সাথে কথা বলতে গেলে তার ভয় লাগে, দুশ্চিন্তা হয়।
আমরা একটু ভেবে দেখি তো, আমাদের ক্ষেত্রেও এমন হয় কিনা। আমাদের সমবয়সীদের ও ছোটদের সাথে আমাদের অনুভূতি, মতামত, প্রয়োজন বা প্রত্যাশা যেভাবে প্রকাশ করতে পারি, মা বাবা অথবা পরিবারের অন্য সদস্য যারা বয়সে আমাদের চেয়ে বড় তাদের সাথে কি একইভাবে পারি? কিংবা শিক্ষকের সাথেও কি
একইভাবে পারি? তাদের কাছে আমাদের কত প্রত্যাশা তাই না? কত অনুভূতির কথা, প্রয়োজনের কথা বলতে ইচ্ছে হয়। কেউ কেউ হয়ত অনেক ক্ষেত্রে বলতে পারি, তবে অনেকেই পারি না। এই সমস্যা শুধু ছোটদের ক্ষেত্রেই হয় তা নয়, অনেক ক্ষেত্রে বড়দেরও হয়। আমরা কি জানি কেন এমন হয়? যদি তা জানতে পারি এবং এর পেছনে যে বিষয়গুলো ভূমিকা রাখে তা নিয়ে কাজ করে সমস্যাগুলো দূর করতে পারি তাহলে কতই না ভালো হয়!
ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে আমরা নিজের অনুভূতি ও প্রয়োজন প্রকাশের বিভিন্ন কৌশল শিখেছি। এবার আমরা বিশেষত বড়দের সাথে যোগাযোগ করে প্রয়োজনমত আমাদের অনুভূতি, মতামত, প্রয়োজন কিংবা প্রত্যাশা প্রকাশের কৌশল জানতে পারব। এই অভিজ্ঞতাটিতে বেশ কিছু কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে কাজটি করব। আর এর জন্য প্রথমে আমরা বিভিন্ন বিষয়কে কেন ভিন্ন ভিন্ন ভাবে দেখি, বিভিন্ন পরিস্থিতিতে আমাদের উপলব্ধি বা বিশ্বাস কিভাবে আলাদা আলাদা হয়, তা আমাদের যোগাযোগের উপর কীভাবে প্রভাব ফেলে এসব খুঁজে বের করব। এরপর আমাদের নিজেদের বিশ্বাস ও উপলব্ধি কীভাবে বড়দের সাথে যোগাযোগে ভূমিকা রাখছে তাও খুঁজে বের করব। সবশেষে কৌশল জেনে যে সব ক্ষেত্রে আমাদের বড়দের সাথে যোগাযোগে সমস্যা হয় এবং আমাদের অনুভূতি, মতামত, প্রয়োজন ও প্রত্যাশা প্রকাশে সমস্যা তৈরি করে তা দূর করতে কাজ করব। তাহলে শুরু করা যাক।
আমাদের মনে গভীরভাবে দাগ কেটেছে এমন একটা বিষয়ের ওপর ছবি এঁকেছি। ছবিটা সহপাঠীরা দেখে নিজেদের মতো করে ব্যাখ্যা করল। আমরা কি খেয়াল করেছি যে, ঐ একটা ছবিকে আমরা বিভিন্নজন বিভিন্নভাবে দেখছি? আমরা কি প্রথমে ভাবতে পেরেছিলাম নিজেদের আঁকা ছবিটার এতোগুলো ব্যাখ্যা হতে পারে? তাহলে কোথা থেকে এলো এতোগুলো ব্যাখ্যা?
এবার নিচের ছবিগুলো খেয়াল করি। একই ছবি ভিন্ন ভিন্ন ভাবে দেখা যায়।
আমরা কয়েকটি ছবি নিয়ে নিজেদের মত প্রকাশ করেছি এবং যাদের সাথে আমার মতের মিল হয়েছে তাদের সাথে মতবিনিময় করেছি। নিজেদের ও অন্য দলের ব্যাখ্যা উপস্থাপনের পরে আমরা সবাই মিলে ব্যাখ্যাগুলো বিশ্লেষণ করেছি। এর থেকে আমাদের যে উপলব্ধি হয়েছে তা দিয়ে 'আমার উপলব্ধি' ছকটি পূরণ করি।
যেহেতু আমাদের জীবনের অভিজ্ঞতাগুলো হুবহু একরকম নয়, তাই আমাদের পরস্পরের দৃষ্টিভঙ্গি ও ব্যাখ্যা আলাদা। একই ছবি একজন যেভাবে দেখছে অন্যজন সেভাবে নাও দেখতে পারে। তারা ভিন্নভাবে বা ভিন্নকিছু দেখছে তার মানে কিন্তু এইনা যে সে অথবা তার বন্ধু বা সহপাঠী ভুল ভাবছে।
আমরা মা বাবা, শিক্ষক, আত্মীয়, প্রতিবেশীদের মধ্যে ৩ জনকে তার ইতিবাচক কাজ যা আমার ভালো লাগে তা বলব। সাথে সাথে প্রয়োজন বা প্রত্যাশা অর্থাৎ যা আমি চাই এবং করলে আমার অনেক ভালো লাগবে তা শেয়ার করব। যেমন:
ইতিবাচক কাজ - 'স্যার আপনি ক্লাসে সবাই বুঝতে পেরেছে কি না সব সময় তা জানতে চান এবং কেউ বুঝতে না পারলে আবার বুঝিয়ে দেন- এটা আমার খুব ভালো লাগে। কোনো সমস্যা থাকলে বুঝতে পারি। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা স্যার।'
আমার প্রত্যাশা- 'আমি কখনও উপস্থিত বক্তৃতায় অংশগ্রহণ করিনি, এবার আমি অংশগ্রহণ করতে চাই। গতকাল অনুপস্থিত ছিলাম, তাই নাম লেখাতে পারিনি।'
আমার ভালোলাগা ও প্রত্যাশা প্রকাশের অভিজ্ঞতা
যাদের সাথে কথা বলেছি | অভিজ্ঞতা | অনুভূতি | চিন্তা |
| |||
| |||
|
আমরা 'আমার ভালোলাগা ও প্রত্যাশা প্রকাশের অভিজ্ঞতা' নিজেদের মধ্যে শেয়ার করেছি। কাজটি করার আগে ও পরে আমাদের মধ্যে যে অনুভূতি ও চিন্তা কাজ করেছে তা পর্যালোচনা করে উপস্থাপন করেছি।
আমাদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে আমাদের অনুভূতি, চিন্তা, বিশ্বাস, তৈরিতে আমাদের পরিবার ও পরিবেশ থেকে আমরা যে তথ্যগুলো পাই তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। জীবনযাপনের অভ্যস্ততা থেকেও আমাদের চিন্তা ও বিশ্বাস তৈরি হয়। এই তথ্যগুলোকে আবার আমরা নিজেদের বিশ্বাস ও দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে ব্যাখ্যা করি। এ কারণে আমাদের যোগাযোগের ক্ষেত্রে আমাদের অনুভূতি, চিন্তা, বিশ্বাস, অভ্যস্ততা, দৃষ্টিভঙ্গি ও মূল্যবোধের ভিন্নতা গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করে।
এবার তাহলে আমরা নিচের গল্পগুলো থেকে এই ভিন্নতার প্রভাব বিশ্লেষণের চেষ্টা করি।
গল্প ১ জামিল তার একমাত্র জ্যামিতি বক্সটি তার বন্ধুকে ধার দিয়েছে। কিন্তু ওর বন্ধু সেই জ্যামিতি বক্সটা ৭ দিনে ফেরত দেওয়ার কথা থাকলেও সেটা এখনও দেয়নি। জামিল বন্ধুর কাছে জ্যামিতি বক্সটা চাইতে লজ্জা পাচ্ছে, আবার সেটা নিয়ে কথা বলতে গেলেও তার অস্থির লাগছে। যদি সে রেগে যায়! মনে হয় তার বন্ধু যদি স্বার্থপর ভেবে তার সাথে বন্ধুত্ব না রাখে! এদিকে তারও জ্যামিতি বক্সের অভাবে অনুশীলন ব্যাহত হচ্ছে। সে নানাভাবে ঘুরিয়ে সেটা বন্ধুকে বলার চেষ্টা করেছে। কিন্তু বন্ধু সেটা এড়িয়ে গেছে। শিক্ষাবর্ষ |
গল্প ২ ক্লাসে পঙ্কজ রাহেলার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু। পঙ্কজ ও পাড়ার কয়েকজন মিলে একটি পিকনিক আয়োজন করেছে। রাহেলাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। এদিকে পিকনিকের পরের দিনে রাহেলার গণিত অলিম্পিয়াডের ওয়ার্কশপে যোগদান করার কথা। রাহেলা না করার পরেও পঙ্কজ রাহেলাকে পিকনিকে যাওয়ার ব্যাপারে নানাভাবে অনুরোধ করতে লাগলো। যেহেতু পঙ্কজ তার কাছের বন্ধু তাই দৃঢ়ভাবে না করতে বিব্রত বোধ করছিল। সে ভয় পাচ্ছিল যে 'না' করলে পঙ্কজ কষ্ট পেতে পারে, এবং তাতে করে তাদের মধ্যকার সম্পর্কের অবনতি হতে পারে। অন্যদিকে রাহেলা চাচ্ছিল গণিত অলিম্পিয়াডের ওয়ার্কশপ ক্যাম্পে যেতে। কারণ রাহেলা দেশের মধ্যে কৃতকার্য হয়ে আন্তর্জাতিক গনিত অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণের স্বপ্ন দেখে। পঙ্কজকে নিষেধ করতে গেলে রেগে যেতে পারে এই আশংকায় রাহেলা পিকনিকে গেল। সেদিন পিকনিক থেকে ফিরতে বেশ রাত হলো, স্বভাবতই সে ক্লান্ত ছিল। পরের দিন সকাল সাতটা থেকে ক্যাম্প শুরু হলো। রাহেলা ঠিকমতো মনোসংযোগ করতে পারল না। এই পরিস্থিতিতে তার মধ্যে প্রচুর অপরাধবোধ হতে লাগাল। সমস্ত পরিস্থিতির জন্য সে মনে মনে একবার পঙ্কজকে, একবার নিজেকে দোষারোপ করতে লাগল। |
গল্প ৩ মানালী অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে এবং খুব ভালো দাবা খেলে। বাবা চান দাবা খেলা ছেড়ে দিয়ে মানালী শুধু পড়াশুনা নিয়ে ব্যস্ত থাকুক। কিন্তু সে নিজে তা চায় না। তার মা ও ভাই খেলার ব্যাপারে উৎসাহ দেন। সে কয়েকবার আন্তঃস্কুল প্রতিযোগিতায় জেলা পর্যায়েও খেলেছে। তবে বাবা বলেন জাতীয় প্রতিযোগিতায় যারা খেলে মানালীর পক্ষে তাদের মত খেলা সম্ভব নয়। মানালী নিজের মত খেলতে চায় এবং প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে চায়। বাবা বলেন 'তোমার ভাইয়ের মতো মনোযোগ দিয়ে পড় যাতে ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হতে পার।' কিন্তু মানালী চায় দাবা খেলে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে। সে বাবাকে নিজের ইচ্ছের কথা বলতে চায়। কিন্তু ভয় পায় বাবা যদি রেগে যান? মাঝে মাঝে বাবার চেয়ে ভিন্ন রকম চাওয়ার জন্য অপরাধবোধ কাজ করে। কিন্তু নিজের ইচ্ছে পূরণ না হলেও সে খুব দুঃখ পাবে। |
গল্প ৪ সঞ্জয় ও আমেনা অষ্টম শ্রেণিতে ওদের সেকশনে ক্লাস ক্যাপ্টেন। ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে ওরা একসাথে পড়ছে। একই সাথে বয়ঃসন্ধিকালীন পরিবর্তন বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য 'স্বাস্থ্য সুরক্ষা' বিষয়ের সেশনগুলোর মাধ্যমে জেনেছে। ওদের যখন ঐ অভিজ্ঞতার সেশনগুলো করছিলো তখন খেয়াল করেছে পাঠ্যপুস্তক ছাড়া তথ্য সংগ্রহের জন্য অনেকেরই তেমন কোনো উৎস ব্যবহার করতে পারছে না। অনেকেরই ফোন ও ইন্টারনেট ব্যবহার করার সুযোগ নেই। সঞ্জয়, আমেনা ও ওদের ৩/৪ জন বন্ধু মিলে আলোচনা করেছিল স্কুলের পাঠাগারে অন্যান্য বইয়ের সাথে এ বিষয়ক কিছু বই থাকলেও ভালো হতো। এ বিষয়ে বইয়ের কথা বললে অনেকেই ভালোভাবে নেয় না, তামাশা করে। আবার সব বইতে নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়া যাবে তাও তো ঠিক নয়। |
গল্প ৪ সঞ্জয় ও আমেনা অষ্টম শ্রেণিতে ওদের সেকশনে ক্লাস ক্যাপ্টেন। ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে ওরা একসাথে পড়ছে। একই সাথে বয়ঃসন্ধিকালীন পরিবর্তন বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য 'স্বাস্থ্য সুরক্ষা' বিষয়ের সেশনগুলোর মাধ্যমে জেনেছে। ওদের যখন ঐ অভিজ্ঞতার সেশনগুলো করছিলো তখন খেয়াল করেছে পাঠ্যপুস্তক ছাড়া তথ্য সংগ্রহের জন্য অনেকেরই তেমন কোনো উৎস ব্যবহার করতে পারছে না। অনেকেরই ফোন ও ইন্টারনেট ব্যবহার করার সুযোগ নেই। সঞ্জয়, আমেনা ও ওদের ৩/৪ জন বন্ধু মিলে আলোচনা করেছিল স্কুলের পাঠাগারে অন্যান্য বইয়ের সাথে এ বিষয়ক কিছু বই থাকলেও ভালো হতো। এ বিষয়ে বইয়ের কথা বললে অনেকেই ভালোভাবে নেয় না, তামাশা করে। আবার সব বইতে নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়া যাবে তাও তো ঠিক নয়। . . . . . . . .. . .
গল্পগুলো পড়েছি এবং ছোট দলে আলোচনা করেছি। এরপর অপর পৃষ্ঠার এ সংশ্লিষ্ট ছকটি পূরণ করে শ্রেণিতে উপস্থাপন করেছি।
চরিত্র | প্রয়োজন প্রকাশ ও পূরণে কী কী চিন্তা/বিশ্বাস সাহায্য করেছে? | প্রয়োজন প্রকাশ ও পূরণে কী কী চিন্তা/বিশ্বাস কী কী বাধা তৈরি করেছে? | এমন পরিস্থিতিতে আমি কী করতাম? | |
গল্প-১ | ||||
গল্প-২ | ||||
গল্প-৩ | ||||
গল্প-৪ | ||||
আমরা চাই সে আমাকে সঠিক ও ইতিবাচকভাবে মূল্যায়ন করুক। আমরা নিজেদের জীবনে তাদের গুরুত্ব উপলব্ধি ও স্বীকার করি এবং আমরা চাই সে তা উপলব্ধি করুক, জানুক। আমরা তাকে সম্মান দেখাতে চাই। তবে তা করতে গিয়ে অনেক সময় নিজেদের অনুভূতি, প্রয়োজন, প্রত্যাশা ও প্রয়োজন অনুযায়ী তুলে ধরতে পারি না। এভাবে চলতে থাকলে প্রয়োজন ও প্রত্যাশা পূরণ না হতে থাকায় কষ্ট, রাগ, বিরক্তি, হতাশা ইত্যাদি অনুভূতি হতে থাকে। কখনও কখনও কারও কারও ক্ষেত্রে এই পরিস্থিতি মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা যেমন অতিরিক্ত রেগে যাওয়া বা আক্রমণাত্মক আচরণ, অতিরিক্ত উদ্বেগ ও অস্থিরতা বা মানসিক চাপ, বিষন্নতা দেখা দিতে পারে। অন্য দিকে পারস্পরিক সম্পর্কে ক্রমান্বয়ে যোগাযোগ ও সৌহার্দ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই নিজের অনুভূতি, প্রয়োজন, প্রত্যাশা ও প্রয়োজন দৃঢ়তা, সম্মান ও নমনীয়তার সাথে তুলে ধরা অত্যন্ত জরুরি। এধরনের যোগাযোগই হল আত্মপ্রত্যয়ী যোগাযোগ (assertive communication)
এবার তাহলে আমরা ঠিক করব কার সাথে এবং কোন পরিস্থিতিতে আমরা আত্মপ্রত্যয়ী যোগাযোগ (assertive communication) করতে সমস্যা বোধ করছি। তাহলে গত তিন সপ্তাহের মধ্যে বড়দের সাথে নিজের অনুভূতি, মতামত, প্রয়োজন বা প্রত্যাশার কথা প্রকাশ করতে পারিনি এমন অভিজ্ঞতা থেকে নিজেদের ৩টি পরিস্থিতি বেছে নিয়ে 'আমার প্রত্যাশা পূরণে আমার যোগাযোগ' ছকের ২য় কলামে লিখি। এবার একই কলামে 'আমার ভালোলাগা ও প্রত্যাশা প্রকাশের অভিজ্ঞতা' ছক থেকে বা অন্য পরিস্থিতি এমন আরও ২টি অভিজ্ঞতা লিখি।
আমার প্রত্যাশা পূরণে আমার যোগাযোগ
সম্পর্ক | সমস্যা/ অভিজ্ঞতা | যেভাবে আমি যোগাযোগ করতে চাই |
এবার নিজেদের এই পরিস্থিতিগুলোতে আত্মপ্রত্যয়ী যোগাযোগ (assertive communication) এর কৌশল ব্যবহার করার পালা। তার আগে আবার একটু মনে করার চেষ্টা করি:
অন্যের সাথে কথোপকথনের সময় খেয়াল রাখব যোগাযোগের মূল উদ্দেশ্য হলো আমি যা বলতে চাই সেটা কাউকে আঘাত না করে সুস্পষ্ট ভাবে তুলে ধরা। আর এর জন্য আমি করি ...... আমার ...... প্রয়োজন এবং তা আমাকে চাই, আমি মনে ভাবে সাহায্য করবে অর্থাৎ 'আমি' বিবৃতিসূচক বাক্য ব্যবহার করে যোগাযোগ করব। শুরু করার আগে নিচের প্রশ্নগুলোর জবাব জেনে নিই। উত্তর হ্যাঁবোধক হলে বাঁয়ে টিক চিহ্ন দিই।
সহপাঠীদের সাথে ভূমিকাভিনয়ের মাধ্যমে আত্মপ্রত্যয়ী যোগাযোগের (assertive Communication) অনুশীলন করে যোগাযোগের ভিন্ন ভিন্ন ধরন সম্পর্কে ধারণা পেলাম। আত্মপ্রত্যয়ী যোগাযোগের (assertive communication) উপাদান দৃঢ়তা, শ্রদ্ধা ও নমনীয়তা ব্যবহার করে বিভিন্ন ভাষা ব্যবহার করা যেতে পারে তার উদাহরণও দেখলাম।
আমরা অন্যদের অনুভূতি, ভিন্নমত, পছন্দ এবং অভিজ্ঞতার প্রতি সম্মান ও সহমর্মিতা বজায় রেখে নিজেদের মত ও যুক্তিকে দৃঢ়তা ও নমনীয়তার সাথে প্রকাশ করতে পারি। এ ভাবে দৃঢ়তা, শ্রদ্ধাবোধ ও নমনীয়তাকে একই সাথে ব্যবহার করে আত্মপ্রত্যয়ী যোগাযোগের (assertive communication) মাধ্যমে আমরা একাধারে নিজেদের ও অন্যদের অনুভূতি, চিন্তা, প্রয়োজন ও অধিকারকে সম্মান জানাতে পারি এবং নিজেদের প্রয়োজন পূরণে দায়িত্ব নিতে পারি। এতে করে আমাদের প্রয়োজন ও প্রত্যাশা পূরণ হওয়ার সাথে সাথে পারস্পরিক যোগাযোগ সাবলীল হয় এবং সম্পর্কে আন্তরিকতা ও সম্মানবোধ বাড়ে।
গল্পগুলো পর্যালোচনা করে আমরা সবাই মিলে ভূমিকাভিনয়ের মাধ্যমে ঐ পরিস্থিতিগুলোতে আত্ম-প্রত্যয়ী যো- গাযোগের (assertive communication) বিভিন্ন কৌশল অনুশীলন করেছি। এবার 'আমার প্রত্যাশা পূরণে আমার যোগাযোগ' ছকের তৃতীয় কলামটি পূরণ করি।
আমরা যোগাযোগ কৌশলসংক্রান্ত শেখা তথ্যগুলো দিয়ে ছন্দ মিলানোর বা স্লোগান তৈরি করার একটি মজার খেলা খেলেছি। আমরা এগুলো মনে রাখব এবং নিজেদের জীবনে আত্মপ্রত্যয়ী যোগাযোগ (assertive communication) চর্চা করব।
এই অভিজ্ঞতার কাজগুলোর মধ্য দিয়ে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে বড়দের কাছে নিজেদের প্রয়োজন ও প্রত্যাশা পূরণের জন্য আত্মপ্রত্যয়ী যোগাযোগের (assertive communication) বিভিন্ন কৌশলের ব্যবহার শিখেছি। আমরা নিজেদের প্রয়োজন অনুযায়ী তা ব্যবহারের পরিকল্পনাও করেছি। এখন চর্চা করার পালা। নিজেকে ভালো রাখতে এই পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজগুলো করব।
শিক্ষকের নির্দেশনা আগামী এক মাসের নিজেদের কাজ বা চর্চাগুলো পরের পৃষ্ঠায় 'দৈনন্দিন জীবনে আত্মপ্রত্যয়ী যোগাযোগের (assertive communication) চর্চা সংক্রান্ত আমার কাজ' ঘরে লিপিবদ্ধ করব। এরপর ফাঁকা জায়গা শেষ হয়ে গেলে এই বছরের বাকি সময় জুড়ে নিজেদের কাজ বা চর্চাগুলো ব্যক্তিগত ডায়েরিতে লিখে রাখব। নির্দিষ্ট সময় পরপর কাজের উপর প্রতিবেদন তৈরি করে শিক্ষককে দেখিয়ে নেবো। পাশাপাশি শিক্ষক নির্দিষ্ট সময় পর পর আমাদের সাথে শ্রেণিতে এই বিষয়ে আলোচনা করবেন। এভাবে চর্চা এবং মতবিনিময় সারা বছর ধরে চলবে।
জার্নাল লেখার সময় নিচের প্রশ্নগুলোর আলোকে লিখব:
দৈনন্দিন জীবনে আত্মপ্রত্যয়ী যোগাযোগের (assertive communication) চর্চা এবং উদ্বুদ্ধকরণ সংক্রান্ত আমার কাজ
আমার অগ্রগতি, আমার অর্জন
অপর পৃষ্ঠার ছকটি আমার অভিভাবক ও শিক্ষক পূরণ করবেন। আমি নিজেও পূরণ করব। এর মাধ্যমে আমি আমার অগ্রগতি সম্পর্কে জানব, কোথায় আরও ভালো করার সুযোগ আছে তা খুঁজে বের করব। দলগত কাজের অভিজ্ঞতা থেকে আমার অংশগ্রহণের বিষয়ে সহপাঠীদের মতামত জেনে নিয়ে আমি সংশ্লিষ্ট অংশে লিখে নেবো। আমার অভিভাবক বইয়ে সম্পাদিত কাজ দেখে মন্তব্য লিখবেন। সমস্ত কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে শিক্ষক আমাকে স্বীকৃতি দিবেন। কী ভালো করেছি, কীভাবে আরও ভালো করতে পারি, সে উপায় জানাবেন।
মূল্যায়ন ছক ১: আমার অংশগ্রহণ ও পাঠ্যপুস্তকে করা কাজ
নিজের মন্তব্য | সহপাঠীর মন্তব্য | অভিভাবকের মন্তব্য | শিক্ষকের মন্তব্য | |
স্বতঃস্ফূর্ত উদ্যোগ গ্রহণ
| ||||
শ্রদ্ধাশীল আচরণ
| ||||
সহযোগিতামূলক মনোভাব
| ||||
পাঠ্যপুস্তকে সম্পাদিত কাজের মান
|
মূল্যায়ন ছক ২: ভূমিকাভিনয়ের মূল্যায়নের মাধ্যমে অভিজ্ঞতার মূল ধারণাগুলোর অর্জন মূল্যায়ন
ভূমিকাভিনয়ের পরপর অভিনয়কারী দল নিজেদের স্ক্রিপ্ট, বিষয়বস্তু, অভিনয় ইত্যাদির ওপর প্রতিফলন করবে। পুরো প্রক্রিয়াটি তাদের কেমন লেগেছে, কতটা উপভোগ করেছে, ভবিষ্যতে অন্যভাবে কিছু করবে কিনা তা শেয়ার করবে। এভাবে অনানুষ্ঠানিক স্বমূল্যায়ন হবে। অন্য সহপাঠীরাও তারা কেমন উপভোগ করেছে এবং বিষয়বস্তু ও প্রক্রিয়ার ওপর তাদের কোনো মতামত আছে কিনা শেয়ার করবে। এভাবে অনানুষ্ঠানিক সহপাঠী মূল্যায়ন হবে। শিক্ষক নিজেও শিক্ষার্থীদের কাজের প্রক্রিয়া, অংশগ্রহণ, ধারণার ওপর মূল্যায়ন করবেন ও ফিডব্যাক দিবেন।
ভূমিকাভিনয় দল | ভূমিকাভিনয় পরিকল্পনায় নেতিবাচক, অকার্যকর চিন্তা ও বিশ্বাসকে চিহ্নিত করতে পেরেছে | ভূমিকাভিনয় থেকে যে কৌশলগুলো শিখেছে তা পরিস্থিতি অনুযায়ী নিজের পরিকল্পনায় ব্যবহার করতে পেরেছে | ভূমিকাভিনয়ে আত্ম-প্রত্যয়ী যোগাযোগের (assertive communication) কৌশলসংক্রান্ত ধারণাগুলোর সঠিকভাবে ব্যবহার করেছে |
সহপাঠী
| |||
শিক্ষক
|
মূল্যায়ন ছক ৩: আত্মপ্রত্যয়ী যোগাযোগের (assertive communication) চর্চাগুলোর মূল্যায়- নের মাধ্যমে অর্জিত জ্ঞানগুলো জীবনে প্রয়োগের মূল্যায়ন
শিক্ষার্থীর নাম: | আত্মপ্রত্যয়ী যোগাযো- গের (assertive communication) চর্চাসংক্রান্ত ব্যক্তিগত পরিকল্পনার যথার্থতা | পরিকল্পনার আলোকে করা চর্চাসংক্রান্ত কাজগুলো জার্নালে লিপিবদ্ধ করা | ডায়েরি/খাতা/জার্নালে লিপিবদ্ধ করা কাজগুলোতে আত্মপ্রত্যয়ী যোগাযোগের (assertive communication) ধারণাগুলোর সঠিক প্রতিফলন |
বর্ণনামূলক ফিডব্যাক
|
আরও দেখুন...