রানুর গল্প রানু স্কুলে যাবার সময় তার মা তাকে টিফিন খাবার জন্য প্রতিদিন ১০ টাকা দেন। সে সেই টাকা দিয়ে স্কুল গেট থেকে ঝাল-মুড়ি, জলপাই, আম-মাখা, সিঙারা ইত্যাদি কিনে খায়। সে তার টিফিনের পুরো টাকা খরচ করে না, কিছু টাকা জমিয়ে রাখে। এখন পর্যন্ত তার মোট ১১০ টাকা জমেছে। আজ তার ছোট ভাই রাতুলের জন্মদিন। সে তার জমানো টাকা থেকে রাতুলের জন্য ৭০ টাকা দিয়ে এক সেট রংপেন্সিল কিনল। বড় বোনের কাছ থেকে রংপেন্সিল পেয়ে রাতুল খুব খুশি হলো। রাতুলের খুশি দেখে রানুরও খুব ভালো লাগল। রাতুলের জন্মদিন উপলক্ষে তার মা একটা বড় কেক কিনে এনেছেন। কিন্তু তিনি রঙিন মোমবাতি ও ফল আনতে ভুলে গেছেন, তাই তিনি রানুকে নিয়ে আবার দোকানে গেলেন, সেখান থেকে রানুর পছন্দমতো এক সেট মোমবাতি তার পছন্দের ফল কিনলেন। তারা বাসায় ফিরে দেখলেন রাতুলের বন্ধুরা অনেকেই চলে এসেছে। তারা সবাই রাতুলকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাচ্ছে এবং রাতুলকে উপহার দিচ্ছে। রাতুল উপহার নিয়ে তাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছে । রাত ৯ টার দিকে তাদের বাসায় তার ছোট মামা এসে হাজির হলেন। তার হঠাৎ আগমনে বাসার সবাই খুব অবাক ও আনন্দিত হলো। পরদিন বিকেলে ছোট মামা রানু ও রাতুলকে শিশুপার্কে নিয়ে গেলেন। সেখানে তারা ট্রেন, নাগরদোলাসহ বিভিন্ন রাইডে চড়ল। তিনি দুজনকেই বেলুন কিনে দিলেন, রাতুলকে একটা খেলনা গাড়িও কিনে দিলেন। এরপর তাদেরকে তিনি একটা বড় শপিং মলে নিয়ে গেলেন, সেখান থেকে তিনি পরিবারের সবার জন্য বেশ কয়েকটি জামা কিনলেন। নতুন জামা পেয়ে রানু ও রাতুলের খুবই আনন্দ হচ্ছিল। |
দলগত কাজ রানুর গল্পটি পড়। গল্পে কত ধরনের লেনদেন রয়েছে ছকে তার তালিকা তৈরি করো। কোন কোন লেনদেনে অর্থের ব্যবহার হয়েছে তা বের করো। |
ছক ৪.১: লেনদেন
ক্রম | লেনদেনের বিবরণ | লেনদেনটিতে অর্থের ব্যবহার হলে 'হ্যাঁ' এবং অর্থের ব্যবহার না হলে ‘না’ লেখো |
---|---|---|
সামাজিক জীব হিসেবে মানুষ একে অপরের ওপর নির্ভরশীল। বেঁচে থাকার জন্য আমরা প্রতিনিয়তই একজন আরেকজনের কাছ থেকে সাহায্য ও সহযোগিতা গ্রহণ করি। আবার প্রতিদিনই আমরা নিজেদের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের পণ্য বা সেবা সামগ্রীর বিনিময় বা লেনদেন করি। আমরা যেসকল বিনিময় বা লেনদেন করি তার সবগুলো একই ধরনের নয়। কিছু বিনিময় বা লেনদেনের সঙ্গে অর্থের সম্পর্ক রয়েছে, আবার বিনিময়ে অর্থের সম্পর্ক নেই। যেমন আইসক্রিম কেনা একটি লেনদেন, এই লেনদেনটি সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে আমরা আইসক্রিম বিক্রেতার কাছ থেকে আইসক্রিম নিয়ে তার বিনিময়ে তাকে টাকা বা অর্থ দেই। আবার রিকশাওয়ালা আমাদেরকে এক স্থান হতে অন্যস্থানে নিয়ে যাবার মাধ্যমে সেবা প্রদান করেন, তার বিনিময়ে আমরা তাকে ভাড়া হিসেবে টাকা দেই, এটাও এক ধরনের বিনিময় বা লেনদেন। একইভাবে বই খাতা কেনা, শাকসবজি ক্রয়-বিক্রয় করা ইত্যাদি লেনদেনের সঙ্গে অর্থ বা টাকার সম্পর্ক রয়েছে বলে এগুলোকে আর্থিক লেনদেন বলা হয়। অন্যদিকে দুই বন্ধুর মধ্যে বই বিনিময় করার সময় আমরা একজন আরেকজনের কাছ থেকে বই নিই, কিন্তু এখানে আমরা কেউ কাউকে কোনো টাকা বা অর্থ প্রদান করি না। তাই এ ধরনের লেনদেনগুলোকে আর্থিক লেনদেন বলা যায় না। আর্থিক লেনদেনে সর্বদা দুই জন কিংবা দুটি পক্ষ অংশগ্রহণ করে, যারা একে অপরের সঙ্গে অর্থ বা সম্পদের বা সেবার আদান-প্রদান করে থাকে।
একক কাজ তোমরা নিশ্চয়ই, প্রথম অধ্যায়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, আর্থিক ডায়েরিতে প্রতি মাসের আয় ব্যয়ের হিসাব | নিয়মিত লিপিবদ্ধ করছ। শিক্ষকের নির্দেশনা মেনে, গত এক সপ্তাহের আর্থিক ডায়েরি রেকর্ড অনুযায়ী নিচের ছকটি পূরণ করো । |
ছক ৪.২: এক সপ্তাহের পারিবারিক লেনদেনের বিবরণ
লেনদেনের তারিখ | লেনদেনকারী | লেনদেনকৃত দ্রব্য বা সেবার বিবরণ | ক্ৰয় বা বিক্রয় | দ্রব্য বা সেবার পরিমাণ | প্রদত্ত প্রাপ্ত মূল্য (টাকা) |
---|---|---|---|---|---|
নিজে | খাতা | ক্ৰয় | ২টি | ৪0 | |
অভিভাবকের মতামত | |||||
শিক্ষকের মন্তব্য |
যৌক্তিকভাবে আর্থিক লেনদেন
লেনদেন আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। আমরা সাধারণত প্রয়োজন অনুযায়ী লেনদেন করে থাকি। তবে অনেক সময় এসব লেনদেন করতে গিয়ে বিপদেও পড়ি, কখনও ঠকে যাই, কখনও মনে হয় বেশ তো জিতে গিয়েছি! আমরা এখন লেনদেন নিয়ে একটা গল্প শুনব ।
রফিক ও রাজু দুই বন্ধু। তারা একই পাড়ায় থাকে এবং একসঙ্গে খেলাধুলা করে। আজ খেলা শেষে বাড়ি ফেরার সময় রফিক রাজুকে বলল, স্কুলের বিজ্ঞান মেলায় এবার সে পরিবেশবান্ধব বাড়ি তৈরির প্রজেক্ট নিয়ে অংশগ্রহণ করবে। রফিকের কথা শুনে রাজু খুবই আনন্দবোধ করলো এবং প্রজেক্ট সম্পর্কে জানতে চাইল। রফিক বলল, প্রজেক্টের জিনিস-পত্র এখনো কিছুই সংগ্রহ করা হয়নি। তবে ছোট চাচাকে বলেছি, চাচা বলেছে, আসছে শুক্রবার আমাকে মার্কেট থেকে প্রয়োজনীয় সকল উপাদান কিনে দিবেন।
পরের শুক্রবার বিজ্ঞান প্রজেক্ট এর প্রয়োজনীয় জিনিস কেনার জন্য রফিক তার ছোট চাচার সঙ্গে মার্কেটের উদ্দেশ্যে রওনা হলো। রাজুও তাদের সংগী হলো। মার্কেট তাদের বাসা হতে বেশ দূরে, রিকশায় বা বাসে যেতে হবে। ছোট চাচা প্রথমে রিকশায় যাবার চিন্তা করলেও শেষ পর্যন্ত তাদের নিয়ে বাসেই রওনা হলেন। রফিক চাচাকে বলল, ‘আমরা তো রিকশাতেই আসতে পারতাম, তুমি বাসে আসলে কেন?' তার কথা শুনে ছোট চাচা হেসে দিয়ে বললেন, ‘রিকশায় আসলে ভাড়া ও সময় দুটোই বেশি লাগত’। রফিকের কাছে তার চাচাকে কিছুটা কৃপণ মনে হলো। তবে সে এ বিষয়ে আর কোনো কথা বলল না।
মার্কেটে গিয়ে প্রজেক্টের কেনাকাটা করতে আসা অন্যান্য বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হলো। তারা প্রজেক্টের জন্য ট্রে, ছোট লাইট, রঙিন কাগজ, বেড়া ইত্যাদি কিনেছে। রফিক আগ্রহ নিয়ে কোনটার কত দাম তা জিজ্ঞেস করল। প্রজেক্টের প্রয়োজনীয় সকল জিনিসই পাওয়া গেল একটি বড় দোকানে। মোট দাম চাইলো ১৫০০ টাকা। দোকানদারকে চাচা দাম কমাতে অনুরোধ করলেন, কিন্তু দোকানি রাজি হলেন না। ছোট চাচা কথা না বাড়িয়ে তাদের নিয়ে দোকান থেকে বের হয়ে অন্য আরেকটি দোকানে ঢুকলেন। এই দোকানে প্রজেক্টের সব জিনিসই পাওয়া গেল, কিন্তু রফিকের চাচা এর মধ্য হতে ৭টি জিনিস পছন্দ করে দাম জিজ্ঞাসা করলেন। দোকানি সবমিলিয়ে দাম চাইলেন ৭০০ টাকা। তার চাওয়া দাম আগের দোকানের চেয়ে বেশ কম। দাম শোনার পর চাচা রফিককে বললেন, ভালো করে দেখতো আগের দোকানের জিনিসগুলোর সঙ্গে এই দোকানের জিনিসগুলোর কোনো পার্থক্য আছে কি না? রফিক খুব ভালো করে জিনিসগুলো পরীক্ষা করলো। কোনো পার্থক্য বুঝতে পারলো না, তাই সে রাজুকে দেখতে বলল। রাজুও কোনো পার্থক্য খুঁজে পেল না। এগুলো কেনার পর চাচা তাদেরকে নিয়ে আরেকটি দোকানে গেলেন, সেখান থেকে বাকি জিনিসগুলো কিনলেন। প্রজেক্টের জিনিস কেনা বাবদ তাদের মোট খরচ হলো ১১০০ টাকা। রফিক লক্ষ্য করল, মার্কেটের দোকানে অনেক সুন্দর সুন্দর স্কুল ব্যাগ রয়েছে। সেগুলোর মধ্য হতে একটি ব্যাগ তার খুব পছন্দ হলো। সে ব্যাগটা কেনার জন্য চাচার কাছে বায়না ধরলো। ছোট চাচা বললেন, তোমার তো স্কুল ব্যাগ আছে। সেই ব্যাগটা নষ্ট হলে নুতন ব্যাগ কিনে দেব। ব্যাগ না কিনলেও বিজ্ঞান প্রজেক্টের জিনিস পেয়ে রফিকের মন খুশিতে ভরে উঠলো। কিন্তু তার মাথায় একটা নতুন প্রশ্ন আসলো, দুই দোকানে জিনিস এক হলেও দাম এত কম বেশী চাইলো কেন?
ফেরার পথে চাচা রফিককে জিজ্ঞাসা করলেন, রফিক তুমি কি বুঝতে পেরেছ, কেন আগের দোকান থেকে কিনলাম না? উত্তরে রাজু বলল, ‘আমি বুঝতে পেরেছি, চাচা। আগের দোকানদার জিনিসের দাম বাড়িয়ে বলেছিল যা পরের দোকানদাররা করেননি। রফিক তখন বলে উঠল, আমার অন্য বন্ধুরাতো ঐ দোকান থেকেই কিনছিল!' রফিকের কথায় ছোট চাচা বললেন, “দেখ বাবা, প্রতিটি জিনিসের নির্দিষ্ট কিছু গুণ, মান ও ব্যবহারিক উপযোগিতার উপর ভিত্তি করেই তার দাম নির্ধারণ করা হয়। এখন যদি কোনো জিনিসের প্রকৃত দাম কম হয়, তাহলে আমরা কেন সেই জিনিসের জন্য বেশি দাম দেবো! তোমার অন্য বন্ধুরা বিষয়টি যাচাই না করে বেশি দামে জিনিস ক্রয় করেছে । তাছাড়া, তুমিতো নিজেই জিনিসগুলো পরীক্ষা করেছ, দুটো দোকানের জিনিসের মধ্যে কোনো পার্থক্য ছিল না। আমাদের উচিত একটি জিনিসের জন্য সঠিক দাম প্ৰদান করা। মনে রেখ, বেশি দাম দিয়ে জিনিস কিনলেই যেমন জিনিস ভালো হবার নিশ্চয়তা থাকে না। আবার কেউ যদি মনে করে, শুধু দাম কম হলেই জিনিস মন্দ বা খারাপ তাও সঠিক নয়। প্রতিটি জিনিসের ন্যায্য একটি দাম আছে, আমাদের সেই দামের কাছাকাছি দামে জিনিসটা কেনা উচিত।'
দলগত কাজ - গল্পে বর্ণিত লেনদেনগুলোর তালিকা তৈরি করো। - প্রতিটি লেনদেনের যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করো। - নিজের জীবনে অনুসরণ করার মতো কোনো শিক্ষা কি গল্পতে আছে? থাকলে তা কী? |
বর্তমান যুগে প্রায় সকল ক্ষেত্রে লেনদেনের প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু লেনদেনের ক্ষেত্রে আমি বা আমাদের পরিবার কি সব সময় যৌক্তিক আচরণ করি? যেকোনো লেনদেনের ক্ষেত্রে লক্ষণীয় ও অনুসরণীয় বিষয়গুলো হলো-
* যাচাই না করে আর্থিক লেনদেনের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত নয়।
* মূল্য বেশি হলেই জিনিস ভালো হবে এমন ভাবা সঠিক নয়।
* দাম নির্ধারণ (দরাদরি) করার ক্ষেত্রে জিনিসের গুণগতমান যাচাই করে নিতে হয়।
* একটি জিনিসের প্রকৃত দাম জানার জন্য বাজার দর যাচাই করতে হয়।
* আর্থিক লেনদেন করার সময় তাড়াহুড়ো করা উচিত নয়।
* প্রতিটি জিনিসেরই এমন একটি দাম রয়েছে যা তার ন্যায্য দাম হিসেবে পরিচিত। ন্যায্য দামেই জিনিস কেনা উচিত।
* অন্যের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে আর্থিক লেনদেন করা ঠিক নয়।
* দাম কম হলেই জিনিস কিনে বা আর্থিক লেনদেন করে সবসময় লাভবান হওয়া যায় না। তাই কমদামে জিনিস কেনার ক্ষেত্রে ভালোমন্দ যাচাই করে নিতে হয়।
* অপ্রয়োজনীয় বা প্রয়োজনের অতিরিক্ত জিনিস কেনা মানেই অপচয়। তাই এ ধরনের আর্থিক লেনদেন পরিহার করতে হয় ।
দলগত কাজ ঘটনাগুলো পড়ে দলগত আলোচনার মাধ্যমে পাশের বক্সের প্রশ্নগুলোর উত্তর তৈরি করো। |
দৃশ্যপট-১ সীমা তার মায়ের সঙ্গে কেনাকাটা করতে দোকানে গিয়েছে। তারা দোকানদারকে এক প্যাকেট নুডলস দিতে বলল। দোকানদার তাদের বললেন আপনারা যদি এক ডজন নুডলস নেন, তাহলে দুটো নুডুলস ফ্রি পাবেন। দোকানদারের এই কথায় তারা প্রভাবিত হয়ে এক ডজন নুডলস কিনে ফেললেন সঙ্গে ফ্রি দুইটি নুডলসও পেলেন। একসঙ্গে অনেক নুডলস কেনায় তা সময়মতো খাওয়া সম্ভব হলো না। ফলে বেশ কয়েক প্যাকেট নুডুলস নষ্ট হয়ে গেল। |
কেনাকাটার সময় দোকানীর কথায় প্রভাবিত হওয়া উচিত কিনা? উত্তর যদি ‘না’ হয়, তাহলে কেন প্রভাবিত হওয়া যাবে না ?
|
দৃশ্যপট-২ দেবাশিস তার ক্লাসের ক্যাপ্টেন। স্কুলের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা উপলক্ষে শ্রেণিশিক্ষক তাকে প্রতিযোগিতার জন্য প্রয়োজনীয় পেন্সিল, রং পেন্সিল, আর্ট পেপার এবং শ্রেণিকক্ষ সাজানোর জন্য কিছু রঙিন কাগজ কিনে আনতে বললেন। দেবাশিস দোকানে গিয়ে দেখল বিভিন্ন দামের রং পেন্সিল ও রঙিন কাগজ রয়েছে। সে অনেক চিন্তা করে ঠিক করলো খুব দামী না কিনে মোটামুটি মানের রং পেন্সিল ও সাধারণ মানের রঙিন কাগজ কিনবে। শিক্ষক তার যৌক্তিক ক্রয় আচরণে খুব খুশি হলেন। |
দেবাশিষ কেনাকাটার ক্ষেত্রে কোন যুক্তিকে বিবেচনায় নিয়েছে?
|
দৃশ্যপট-৩ শফিক ও রায়হান দুই বন্ধু দোকানে ক্রিকেট ব্যাট কিনতে গেল। রায়হান একটু ভালোমানের ব্যাট পছন্দ করলো। সে ব্যাটটি ২৭০ টাকায় ক্রয় করলো। অপরদিকে শফিক একটি সস্তা ব্যাট পছন্দ করলো। সে ১৩০ টাকা দিয়ে একটি ব্যাট কিনলো। কমদামে ব্যাট কিনতে পেরে শফিক বেশ খুশি। সে রায়হানকে বলল, ‘তুমি আসলে বোকা, তাই বেশি দাম দিয়ে ব্যাট কিনেছ!' এর কিছুদিন পর স্কুলে ক্রিকেট ম্যাচ শুরু হলো, সেদিন রায়হান তার ব্যাটটা নিয়ে স্কুলে গেল, কিন্তু শফিক কোনো ব্যাট আনলো না। স্যার জিজ্ঞেস করায় সে খুব মন খারাপ করে বললো, ‘এক সপ্তাহ আগেই কিনেছিলাম, কিন্তু ভেংগে গিয়েছে'। |
কী করলে শফিককে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হতো না?
|
দৃশ্যপট-৪ আসলাম সাহেব অফিস থেকে বাড়ি ফেরার সময় পাড়ার মুদিদোকানে খুব ভিড় দেখে এগিয়ে গেলেন। দোকানের লোকেরা বলাবলি করছে যে, ‘দেশে লবণের ঘাটতি হয়েছে, দুদিন পর লবণই পাওয়া যাবে না। এখনই লবণের দাম প্রায় দ্বিগুন হয়ে গেছে'। এসব শুনে তাড়াতাড়ি তিনি বাড়তি দামেই ১০ কেজি লবণ কিনে বাসায় ফিরলেন। তার হাতে এত লবণ দেখে তার স্ত্রী অবাক হয়ে বললেন, ‘এত লবণ দিয়ে কী করবো? হুজুগে এত লবণ কেনার কোনো দরকার ছিল না'। কয়েক দিন পরে দেখা গেল লবণ আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে। |
আসলাম সাহেবের আচরণ কেনাকাটার ক্ষেত্রে সঠিক নয় কেন?
|
দৃশ্যপট-৫ জামালের বাবা আরো কয়েকজনের সাথে বৈশাখি মেলায় খেলনার দোকান দিয়েছেন। মেলার শুরুতে তারা কিছু খেলনা অল্প লাভে বিক্রয় করেন। তাদের খেলনাগুলো অন্যদের তুলনায় ভিন্ন রকম হওয়ায় অনেকেই তাদের দোকানের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছিল। কিন্তু মেলার ভিড় যখন বাড়ছিল, তখন তারা বেশি মুনাফার উদ্দেশ্যে খেলনার দাম বেশ বাড়িয়ে দিলেন। বাড়তি দামেও কিছু খেলনা বিক্রি হলো বটে, কিন্তু বেশীরভাগ ক্রেতাই তাদের দোকান থেকে খেলনা না কিনে চলে গেলেন। শেষ পর্যন্ত তাদের দোকানের অনেক খেলনা অবিক্রিত থেকে গেল। মেলা থেকে তাদের লাভতো হলোই না, বড় ধরনের লোকসান হলো। অথচ তাদের কাছাকাছি অন্যান্য খেলনার দোকানগুলোর প্রায় সব পণ্যই বিক্রি হয়ে গেল। নিজেদের বোকামির জন্য জামালের বাবার মন খুব খারাপ হলো। |
আগামী বৈশাখী মেলায় তুমি যদি একটি খেলনার দোকান দাও তাহলে খেলনাগুলোর বিক্রয়মূল্য নির্ধারণে কী ধরনের কৌশল গ্রহণ করবে তা লেখো।
|
একক কাজ আগামী এক সপ্তাহে তোমার ও তোমার পরিবারের সদস্যদের আর্থিক লেনদেনগুলো লক্ষ্য করো। এ সকল লেনদেনের মধ্যে কোনটি/কোনগুলো তোমার কাছে যৌক্তিকভাবে সম্পন্ন করা হয়নি বলে মনে হয়েছে, তা ছকে লেখো। |
ছক ৪.৩ পারিবারিক লেনদেনে যৌক্তিকতা
ক্রম | লেনদেনের বিবরণ | ভুল মনে হবার কারণ | কী করা উচিত ছিল |
---|---|---|---|
অভিভাবকের স্বাক্ষর | |||
শিক্ষকের মন্তব্য |
আর্থিক লেনদেনে নৈতিকতা
রাজু লেখাপড়ার পাশাপাশি তার বাবার সঙ্গে নিজেদের চায়ের দোকানে কাজ করে। আজ সকালেও সে নিত্য দিনের মতো তার বাবার সঙ্গে চায়ের দোকানে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। এই ভীড়ের মধ্যেই কনডেন্স মিল্ক নিয়ে সরবরাহকারীও এসেছে। কিন্তু তাদের সঙ্গে কনডেন্স মিল্কের দাম নিয়ে একটা সমস্যা তৈরি হয়েছে। আগে যে দামে কেনা হতো আজকের দাম তার চেয়ে বেশী চাওয়া হচ্ছে। এ নিয়ে তার বাবা ও বিক্রেতার মধ্যে তর্ক চলছে। এক পর্যায়ে কনডেন্স মিল্ক বিক্রেতা জয়নাল বলল, ‘আপনি চাইলে আমি আপনাকে এর অর্ধেক দামে কনডেন্স মিল্ক দিতে পারি, নিলে কন, দিয়া যাই।' রাজুর বাবা না করে দিলেন।
বিকালে স্কুল থেকে ফিরে রাজু আবার দোকানে আসে। সকালে কম দামে দুধ না কেনার কারণ জিজ্ঞাসা করে বাবাকে। বাবা বললেন, জয়নাল যে কনডেন্স মিল্ক গুলো অর্ধেক দামে দিতে চেয়েছিল, সেগুলো মেয়াদোত্তীর্ণ। এ ধরনের মেয়াদোত্তীর্ণ দুধ দিয়ে চা বানানো ঠিক না। এর ফলে আমাদের চা বিক্রি করে লাভ বেশি হবে, কিন্তু তা হবে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করা। আমি তা করতে চাই না।'
পরদিন সকালে রাজুর বাবা বাড়ির কাজে ব্যস্ত থাকায়, সে একাই দোকান খুলল এবং প্রতিদিনের মতোই বিভিন্ন সরবরাহকারিদের নিকট থেকে পণ্য বুঝে নিল এবং দাম মিটিয়ে দিল। এরপর যখন সে পণ্যগুলো গুণে দেখার সময় পেল, তখন বুঝতে পারলো যে- আজকে পাউরুটিওয়ালা তাকে তিনটি পাউরুটি বেশি দিয়ে গেছে, যার মূল্য সে তাকে দেয়নি। তার বাবা দোকানে আসলে বিষয়টি তাকে জানালো। বাবা বললেন, ‘আগামীকাল যখন সে আসবে, তখন ওই পাউরুটির দাম দিয়ে দিব'।
দলগত কাজ দলে আলোচনা করে প্রশ্নগুলোর উত্তর লেখো । • কেন রাজুর বাবা অর্ধেক দামে কনডেন্স মিল্ক কিনতে রাজি হলো না? অতিরিক্ত তিনটি পাউরুটির দাম দেওয়ার যৌক্তিকতা কতটুকু? নিজের জীবনে অনুসরণ করার মতো কোনো শিক্ষা কি গল্পতে আছে? থাকলে তা কী? |
আর্থিক লেনদেন আমাদের জীবনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। আমরা আমাদের দৈনন্দিন ও ভবিষ্যত প্ৰয়োজন মেটানোর জন্য এসকল লেনদেন করে থাকি। আর্থিক লেনদেনে অংশগ্রহণকারী প্রতিটি পক্ষই তাদের নিজ নিজ প্রয়োজনকে গুরুত্ব দিয়ে থাকে। তাই আর্থিক লেনদেনের সময় সকল পক্ষকেই আন্তরিক ও শ্রদ্ধাশীল হতে হয়। আর্থিক লেনদেন করার সময় মানুষের বিবেক, বিবেচনা, বুদ্ধি ও মানবিক দিকসমূহ বজায় রাখা আমাদের অবশ্য কর্তব্য। এসকল বিষয়কে খেয়াল রেখে যদি আর্থিক লেনদেন করা হয়, তাহলে তা নৈতিকতার সঙ্গে সম্পাদিত আর্থিক লেনদেন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে নৈতিকতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নৈতিকতার সঙ্গে আর্থিক লেনদেন করলে যেকোনো মানুষ বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পায়। অপরদিকে, কেউ যদি আর্থিক লেনদেনের সময় প্রতারণার আশ্রয় নেয়, তাহলে তারা অন্যদের অবিশ্বস্ত হয়ে পড়ে। ফলে সবাই তাদের বর্জন করে। কেউ তাদের সঙ্গে আর্থিক লেনদেন করতে চায় না।
নৈতিকভাবে আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করতে আমরা সবাই নিচের নীতিগুলো মেনে চলব-
• লাভ হলেও ভেজাল জিনিস বেচা কেনা পরিহার করতে হবে।
• লাভ করতে গিয়ে অন্যের ক্ষতি করা যাবে না।
• তথ্য গোপন করে খারাপ পণ্য বিক্রয় করা যাবে না।
• মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য ক্রয় -বিক্রয় পরিহার করতে হবে।
• বেআইনি কোনো জিনিসের আর্থিক লেনদেনে অংশগ্রহণ পরিহার করতে হবে।
• প্রতারণা বা ঠকানোর উদ্দেশ্যে কারও সঙ্গে আর্থিক লেনদেন করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
• বর্তমান আর্থিক লাভের উদ্দেশ্যে ভবিষ্যৎ আর্থিক লাভের সম্ভাবনাকে ধ্বংস করা যাবে না।
• আর্থিক লেনদেনের সময় কোনো ভুল হয়ে থাকলে তা যথাসম্ভব দ্রুততার সঙ্গে সংশোধন করে ফেলতে হবে।
• আর্থিক লেনদেনের সময় মিথ্যার আশ্রয় নেওয়া যাবে না। বলপূর্বক আর্থিক লেনদেন করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
• আর্থিক লেনদেনের সময় কারো অক্ষমতা, অপারগতার বা অসহায়ত্বের সুযোগ নেওয়া যাবে না ।
দোকানে কেনাকাটা করতে গিয়ে আমরা প্রায়ই ঝামেলায় পড়ি। কোনো কোনো দোকানদার বৃদ্ধ ক্রেতা দেখলে পঁচা বা নষ্ট জিনিস কায়দা করে তাকে দিয়ে দেন। আমরাও মাঝে মাঝে দোকানে লিচু কিনতে গেলে প্রায়ই দেখি ১০০টা লিচুর টাকা দেওয়া হয়েছে, কিন্তু দিয়েছে ৮০টা লিচু ! আবার এমনও হতে দেখা যায়, কেউ হয়তো পাবলিক বাসে উঠেছে, বাসের কন্ডাকটর হয়তো ভাড়া চাইলেন; তিনি বললেন, ‘পরে দিচ্ছি'। কিন্তু পরে দেখা গেল, ভীড়ের মধ্যে ভাড়া না দিয়েই নেমে পড়লেন! একবারও ভেবে দেখি না যে, এই আচরণগুলো সমাজকে দূষিত করছে, এগুলো একেবারেই অনৈতিক কাজ; সাময়িক লাভের আশায় নিজের নীতিবোধকে আমরা বিসর্জন দিচ্ছি । তাই এসব আচরণ থেকে আমাদেরকে অবশ্যই বিরত থাকা উচিত।
দলগত কাজ এখানে কিছু ঘটনা দেওয়া আছে। দলের সদস্যরা মিলে ঘটনাটি ভূমিকাভিনয় করে দেখাও। ঘটনাগুলো পড়ে দলগত আলোচনার মাধ্যমে পাশের বক্সের প্রশ্নগুলোর উত্তর লেখো। |
একক কাজ আগামী এক মাসে তোমার নিজ, পরিবার বা চারপাশে ঘটে যাওয়া আর্থিক লেনদেনসমূহ লক্ষ্য কর। এ সকল লেনদেনের মধ্যে কোনোটি তোমার কাছে নৈতিকভাবে সঠিক মনে হয়নি তা ছকে লিখ। |
ছক ৪.৪ পারিবারিক লেনদেনে নৈতিকতা
ক্রমিক নং | লেনদেনের বিবরণ | ‘লেনদেনটি নৈতিকভাবে সম্পন্ন হয়নি' মনে হবার কারণ | কী করা উচিত ছিল তা লিখ |
---|---|---|---|
অভিভাবকের মতামত : | |||
শিক্ষকের মতামত : |
আমাদের ষড়ঋতুর এই দেশে শীতের সময় পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গা থেকে শীতের পাখিরা আসে। অনেক জলাশয়ের আশে পাশে তারা বিচরণ করে। এরা আমাদের কাছে অতিথি পাখি নামে পরিচিত। কিছু সুযোগ সন্ধানী মানুষ এদের ধরে এনে বাজারে বিক্রয় করে। আর আমরাও অনেকেই সেগুলো কিনে এনে বাড়িতে রান্না করে খাই। কাজটি দেশের আইনে দণ্ডনীয় অপরাধ। কারণ, এতে প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য নষ্ট হচ্ছে। নিরাপত্তার অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে অনেক অতিথি পাখি। কিন্তু তবুও আমরা প্রায়ই এই অন্যায় কাজটি করে থাকি, যা করা একেবারেই অনুচিত। আমরা যদি অতিথি পাখি না কিনি তাহলে অতিথি পাখি কেনাবেচার এই অনৈতিক কাজটিও বন্ধ হয়ে যাবে।
আমাদের জাতীয় মাছ ইলিশ। একটা নির্দিষ্ট সময়ে এরা বেড়ে উঠে। অথচ দেখা যায়, অসাধু কিছু ব্যবসায়ী ছোট থাকা (জাটকা) অবস্থায়ই এদের ধরে এনে কমদামে বিক্রয় করে। আমরাও লাভের আশায় হুমড়ি খেয়ে এসব মাছ কিনে উদর পূর্তি করে থাকি। এটা আমাদের দেশের আইনের লঙ্ঘন। একেকটা জাটকা বড় হলে স্বাদ ও গুণ বৃদ্ধি পায়। দেশের বাইরে ইলিশ রপ্তানী করে আমাদের বৈদেশিক আয়ও বৃদ্ধি পায়। তাই কেনাকাটায় আমাদের সবাইকেই অনেক বেশি সতর্ক থাকা প্রয়োজন। সব ধরনের কেনাকাটার ক্ষেত্রেই যৌক্তিকতা মেনে এবং নৈতিকতা বজায় রাখতে হবে। অন্যের ক্ষতি করা হলে একসময় সেটা নিজেরই উপর এসে পড়বে।
১। কেনাকাটা বা লেনদেন কার্যক্রমে কোন কোন বিষয়গুলো মেনে চলব?
২। এই অধ্যায়ে আমরা যা যা করেছি ...... (√ টিক চিহ্ন দাও)
কাজসমূহ | করতে পারিনি (১) | আংশিক করেছি (৩) | ভালোভাবে করেছি (৫) |
---|---|---|---|
প্রাত্যহিক জীবনে লেনদেন চিহ্নিত করতে পারা | |||
এক সপ্তাহের লেনদেনের হিসাব রাখা | |||
যৌক্তিকভাবে আর্থিক লেনদেন এর ব্যাখ্যা করতে পারা | |||
যৌক্তিকভাবে আর্থিক লেনদেন এর নীতিগুলো বুঝতে পারা | |||
বিভিন্ন ঘটনা যাচাই করে যৌক্তিকভাবে আর্থিক লেনদেন এর বিশ্লেষণ করা | |||
নিজেদের সাপ্তাহিক কেনাকাটায় যৌক্তিকভাবে আর্থিক লেনদেন করা হয়েছে কিনা তা যাচাই করা | |||
আর্থিক লেনদেনে নৈতিকতার নীতিগুলো বুঝতে পারা | |||
আর্থিক লেনদেনে নৈতিকতা বজায় রাখা হয়েছে কিনা তা যাচাই করা | |||
মোট স্কোর: ৪০ | আমার প্রাপ্ত স্কোর : | ||
আমার অভিভাবকের মন্তব্য : | |||
শিক্ষকের মন্তব্য: |
এই অধ্যায়ের যে বিষয়গুলো আমাকে আরও ভালোভাবে জানতে হবে তা লিখি-
|
যে কাজগুলোর নিয়মিত চর্চা আমাকে চালিয়ে যেতে হবে সেগুলো লিখি-
|
আরও দেখুন...