ঈশ্বরের অদ্বিতীয় পুত্র যীশু খ্রীষ্ট (প্রথম অধ্যায়)

সপ্তম শ্রেণি (মাধ্যমিক ২০২৫) - খ্রীষ্টধর্ম শিক্ষা - | NCTB BOOK
35
35

পিতা ঈশ্বর জগৎকে এতই ভালোবেসেছেন যে তাঁর একমাত্র পুত্রকে এ জগতে প্রেরণ করেছেন। পিতার ইচ্ছা হলো পুত্র ঈশ্বরের মধ্য দিয়ে মানবজাতিকে পতনের হাত থেকে রক্ষা করা। যীশুই হলেন পিতার অভিষিক্ত জন, মুক্তিদাতা খ্রীষ্ট এবং সকল জাতির সকল মানুষের প্রভু। তাঁর মধ্য দিয়ে মানবজাতি পরিত্রাণ লাভকরেছে এবং পেয়েছে শাশ্বত জীবনের প্রতিশ্রুতি। তিনি প্রকৃত ঈশ্বর আবার প্রকৃত মানব। আমরা তাঁরই সম্পর্কে এই অধ্যায়ে জানতে চেষ্টা করব।

এ অধ্যায় শেষে আমরা-

  • ঈশ্বরের অদ্বিতীয় পুত্রের কথা বর্ণনা করতে পারব।
  • ঈশ্বরের পুত্র 'যীশু' নামের অর্থ ব্যাখ্যা করতে পারব।
  • ঈশ্বরপুত্রের উপাধি 'খ্রীষ্ট'- এর অর্থ ব্যাখ্যা করতে পারব।
  • ঈশ্বরপুত্রের উপাধি 'প্রভু'-র অর্থ ব্যাখ্যা করতে পারব।
  • ঈশ্বরপুত্র প্রকৃত ঈশ্বর ও প্রকৃত মানব, তা বর্ণনা করতে পারব।
  • যীশুকে নিজের প্রভু বলে গ্রহণ করব ও প্রভুর পথে চলতে অনুপ্রাণিত হব।
Content added By

ঈশ্বরের অদ্বিতীয় পুত্র যীশু খ্রীষ্ট (পাঠ ১)

21
21

পূর্বের শ্রেণিতে আমরা ঈশ্বর সম্বন্ধে জেনেছি। জগৎ সৃষ্টি ও মানবজাতির কল্যাণে তাঁর কর্মকীর্তির মাধ্যমে আমরা বিভিন্নভাবে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ মানবজাতির জন্য তাঁর মুক্তিপরিকল্পনার কথাও আমরা অবগত হয়েছি। ঈশ্বর আমাদের সৃষ্টি করেছেন যেন আমরা তাঁকে জানতে পারি, তাঁর প্রতি অনুগত থাকি, তাঁকে ভালোবাসি ও তাঁর গুণকীর্তন করি। তিনিই প্রথম আমাদের ভালোবেসেছেন যেন আমরা তাঁকে ভালোবাসতে পারি।

ঈশ্বরকে জানতে গিয়ে আমরা আরও দেখেছি যে, তিন ব্যক্তিতে এক ঈশ্বর। তিনি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে আমাদের কাছে নিজেকে প্রকাশ করেছেন: কখনো পিতারূপে, কখনো পুত্ররূপে, আবার কখনো পবিত্র আত্মরূপে। তিনি একসাথে নিজেকে সম্পূর্ণভাবে প্রকাশ করেননি। তাঁকে পরিপূর্ণভাবে বোঝার যোগ্যতা মানবজাতির নেই। তাঁর মহানুভবতা পরিপূর্ণভাবে প্রকাশ করার জন্য বিভিন্ন সময়ে তিনি আমাদের কাছে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। দয়াশীল ঈশ্বর তাঁর এই প্রতিশ্রুতির কথা কখনো ভুলে যাননি। তিনি আব্রাহাম ও তাঁর বংশধরদের কাছে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করেছেন। সময় হলে পর তিনি তাঁর একমাত্র পুত্রকে এ জগতে প্রেরণ করলেন।

মানবজাতি বারে বারে ঈশ্বরের কাছ থেকে দূরে সরে গিয়েছে। তারা ঈশ্বরের অবাধ্য হয়েছে। ভাই ভাইকে খুন করে ঈশ্বরের প্রতি অবিশ্বস্ত হয়েছে। এভাবে তাদের পতন হয়েছে। মহান ঈশ্বর মানুষকে পাপ থেকে উদ্ধার করতে এবং তার কাছে মানুষকে ফিরে যাওয়ার সুযোগ করে দিতে একটি মহাপরিকল্পনা করেছেন। তিনি এই পরিকল্পনা করেছেন যে, তিনি মানুষের কাছে আসবেন। তাই ঠিক করেছেন তাঁর একমাত্র পুত্রকে একটি নারীর মধ্য দিয়ে জগতে প্রেরণ করবেন।

রোম সাম্রাজ্যের সম্রাট অগাস্টাস সিজারের সময়ে এবং যুদেয়া দেশের রাজা হেরোদের শাসনামলে বেথলেহেমের একটি কুমারীর কাছে তিনি তাঁর দূতকে প্রেরণ করলেন। স্বর্গদূত গাব্রিয়েল মারীয়ার কাছে এসে ঈশ্বরের বার্তা প্রকাশ করলেন। মারীয়াকে প্রসাদে পূর্ণা বলে তিনি অবহিত করলেন এবং তাঁকে প্রণাম করলেন। তিনি মারীয়াকে জানালেন যে, ঈশ্বর তাঁর সহায় আছেন। তিনি গর্ভবতী হবেন এবং একটি পুত্রসন্তানের জন্ম দেবেন। তাঁর নাম হবে যীশু। তিনিই হবেন সমগ্র মানবজাতির মুক্তিদাতা।

মারীয়া একজন সহজ সরল যুবতী ছিলেন। তাঁর বাবার নাম যোয়াকিম এবং মায়ের নাম আন্না। তিনি যোসেফ নামে এক যুবকের সাথে বাগদত্তা হয়েছিলেন। প্রতিবেশী ও আত্মীয়দের সাথে মারীয়ার পরিবার ছোটো একটি গ্রামে বাস করতেন। স্বাভাবিকভাবেই তাঁদের জীবনযাপন চলছিল। মারীয়ার পিতামাতা ধার্মিক এবং ঈশ্বরের অনুগত ছিলেন। পিতামাতার স্নেহ ভালোবাসায় ও যত্নে মারীয়া বড় হন। পিতামাতার ন্যায় মারীয়াও খুব ঈশ্বরভক্ত ছিলেন। ঈশ্বর আগে থেকেই মারীয়াকে মনোনীত করে রেখেছিলেন তাঁর পুত্রের জননী হওয়ার জন্য। তাই তিনি মারীয়াকে জন্মের আগে থেকেই আলাদা করে রেখেছিলেন, যেন আদিপাপ তাঁকে স্পর্শ করতে না পারে। মারীয়া ছিলেন নিষ্কলঙ্কা ও আদিপাপ বর্জিতা। গাব্রিয়েল দূতের সম্বোধনে মারীয়া বিচলিত হলেন। দূতের বার্তা অসম্ভব ভেবে তিনি দূতকে প্রশ্ন করলেন, এ কী করে সম্ভব, কারণ তিনি যে কুমারী। দূত বললেন, ঈশ্বরের পক্ষে অসম্ভব বলে কিছুই নেই। কাজেই পবিত্র আত্মার প্রভাবে মারীয়া গর্ভবতী হবেন। কারণ যাঁর জন্ম হবে তিনি ঈশ্বরের সন্তান বলে পরিচিত হবেন। ঈশ্বরের প্রতি অগাধ বিশ্বাসের কারণে মারীয়া "হ্যাঁ" বলেছেন। আর এই "হ্যাঁ" বলার মধ্য দিয়ে ঈশ্বরের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সম্ভব হয়েছে।

মারীয়ার স্বামী যোসেফ একজন ধার্মিক, ঈশ্বরভীরু ও বিনয়ী মানুষ ছিলেন। পেশায় তিনি ছিলেন একজন কাঠমিস্ত্রি। তাঁরা একসঙ্গে মিলিত হওয়ার পূর্বেই মারীয়া গর্ভবতী হলেন। এই সংবাদ জানার পর তিনি তাঁকে গোপনে ত্যাগ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ঈশ্বর গাব্রিয়েল দূতকে যোসেফের কাছে প্রেরণ করলেন। ঈশ্বরের পরিকল্পনার কথা তাঁকে জানালেন। যোসেফকে তিনি সাহস দিলেন যেন মারীয়াকে তিনি স্ত্রীরূপে গ্রহণ করতে ভয় না পান। কারণ মারীয়া পবিত্র আত্মার প্রভাবে গর্ভবতী হয়েছেন। আর তাঁর যে সন্তান হবে তা ঈশ্বরের সন্তান বলে পরিচিত হবে। গাব্রিয়েল দূতের কথামতো যোসেফ সবকিছু করলেন। তিনি মারীয়াকে নিজের সত্রী ও যীশুকে নিজের সন্তান হিসেবে গ্রহণ করলেন। এভাবে মারীয়া ও যোসেফের পরিবারে ঈশ্বর তার একমাত্র পুত্রকে প্রেরণ করলেন। তিনি শাশ্বত ঈশ্বরের অদ্বিতীয় পুত্র, প্রভু যীশু খ্রীষ্ট। "আপনি সেই খ্রীষ্ট, জীবনময় ঈশ্বরের পুত্র” (মথি ১৬:১৬)-সাধু পিতরের মতো করে এই কথা বলে আমরা সবাই যীশুর ওপর বিশ্বাস স্থাপন করি। কারণ তাঁর আগমনে সমগ্র মানবজাতি পেয়েছে অনুগ্রহ আর পরিত্রাণ।

কাজ: মারীয়ার যে কোন ৩টি গুণ লিখ।
Content added By

'যীশু' নামের অর্থ (পাঠ ২)

29
29

আমাদের প্রত্যেকের এক বা একাধিক নাম আছে। প্রতিটি নাম খুব সুন্দর। আমরা এই নামেই অন্যের কাছে পরিচিত। সাধারণত বাপ্তিস্ম বা নামকরণ অনুষ্ঠানের সময় আমাদের নামকরণ করা হয়। একেক জনের নামে আমরা অনেক আক্ষরিক অর্থ কিংবা সমার্থক শব্দ খুঁজে পাই। আবার অনেক নামের কিছু ঐতিহাসিক কিংবা অন্তর্নিহিত অর্থ থাকে। এসব নামের ব্যাখ্যা করলে অনেক তাৎপর্য খুঁজে পাওয়া যায়।

পবিত্র বাইবেলে এমন অনেক নাম আছে যেগুলোর সাথে কোনো ঘটনা বা ঈশ্বরের কোনো বিশেষ পরিকল্পনার সাথে মিল পাওয়া যায়। উদাহরণস্বরূপ, 'মোশী' নামের অর্থ হলো জল থেকে টেনে তোলা। এই নাম ও এর অর্থ শুনলে সাথে সাথে আমাদের পবিত্র বাইবেলের একটি ঘটনার কথা মনে পড়ে। ঈশ্বরের মনোনীত ইস্রায়েল জাতি মিশরে ফারাও রাজার অধীনে দাসত্ব করেছিল। ইস্রায়েলীয়দের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় মিশররাজ ভয় পেয়েছিলেন। তাই রাজার আদেশে ইস্রায়েলীয়দের সমস্ত পুরুষ-সন্তানদের হত্যা করা হতো। মোশী ইস্রায়েল-সন্তান ছিলেন। তাঁর মা তাঁকে পানিতে ভাসিয়ে দিয়েছিলেন যেন সৈন্যরা তাঁকে হত্যা করতে না পারে। পরে ফারাও-কন্যা নদীতে স্নান করতে গিয়ে নদীর নলখাগড়ার আড়ালে একটি শিশুর কান্না শুনতে পান। শিশুটি অত্যন্ত সুন্দর ছিল। তাঁকে তিনি জল থেকে তুলে এনে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন। আর নাম দিয়েছিলেন মোশী। কারণ তাঁকে জল থেকে তুলে আনা হয়েছিল। এই মোশীই পরে তাঁর জাতিকে ফারাও রাজার দাসত্ব থেকে মুক্ত করেছিলেন। যাকে জল থেকে টেনে তোলা হয়েছিল তিনি তাঁর জাতিকে বিপদ থেকে উদ্ধার করেছিলেন।

মোশীর দ্বারা ফারাও/ফৌরাণ রাজার দাসত্ব থেকে মুক্তি পেলেও ঈশ্বরের মনোনীত জাতি পাপের দাসত্ব থেকে মুক্ত হতে পারেনি। ঈশ্বর বিভিন্ন রাজা, বিচারক, যাজক, প্রবীণ ও প্রবক্তাদের দ্বারা তাঁর মনোনীত জাতিকে গঠন ও পরিচালনা করতে চেয়েছিলেন। অকৃতজ্ঞ মানুষেরা ঈশ্বরকে ভুলে গিয়েছিল। তারা বারংবার ঈশ্বরের বিরুদ্ধে পাপ করেছিল। সমগ্র মানবজাতিকে পাপের কালিমা থেকে উদ্ধার করতে ঈশ্বর তাই নিজেই এসেছেন মানুষের সাথে বাস করতে, মানুষকে পথ দেখাতে ও স্বর্গের পথে নিয়ে যেতে।

মারীয়ার গর্ভে তাঁর প্রিয়তম পুত্রকে প্রেরণের সময় ঈশ্বর একটি নাম দিয়েছিলেন। গাব্রিয়েল দূত মারীয়াকে বলেছিলেন, এই যে সন্তান, এর নাম হবে 'যীশু'। এই নামের অর্থ হলো 'ঈশ্বর উদ্ধার করেন'। এই নামেই ঈশ্বর নিজেকে উদ্ধারকর্তা হিসেবে মানুষের কাছে প্রকাশ করেছেন। তিনিই ক্ষমাশীল ঈশ্বর, যিনি মানুষকে উদ্ধার করতে এ জগতে নেমে এসেছেন। পুত্রের মধ্য দিয়ে ঈশ্বর তাঁর উপস্থিতি মানুষের কাছে প্রকাশ করেছেন। এই নামে ঈশ্বরপুত্র পরিচিত হয়েছেন। এই নাম সকল নামের শ্রেষ্ঠ নাম। কারণ এই নামেই মানবজাতি পরিত্রাণ পেয়েছে। এই নামেই দৃষ্টি প্রতিবন্ধী, শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী, বাক প্রতিবন্ধী, কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত অনেকেই সুস্থ হয়েছে। এই নামেই অপদূত ভয়ে পালিয়েছে। এই নামেই মৃত জীবন পেয়েছে। আর এই নামের শক্তিতেই শিষ্যগণ যীশুর বাণী প্রচার করেছেন।

Content added By

খ্রীষ্ট নামের অর্থ (পাঠ ৩)

25
25

যীশুর ভাষা ছিল হিব্রু ও আরামায়িক। পবিত্র বাইবেল লেখা হয়েছে হিব্রু ও গ্রিক ভাষায়। পরে তা লাতিন, ইংরেজি ও অন্যান্য নিজ নিজ মাতৃভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে। তাই বাইবেলে উল্লিখিত কিছু কিছু নাম বা শব্দ বিশ্লেষণ করার প্রয়োজন আছে। সঠিক অর্থ খোঁজার জন্য এর উৎপত্তি আমাদের জানা প্রয়োজন।

'খ্রীষ্ট' একটি গ্রিক শব্দ। হিব্রু শব্দ 'মশীহ' থেকে এই শব্দটি অনুবাদ করা হয়েছে। মশীহ শব্দের অর্থ হলো "অভিষিক্ত”। তাই মশীহ বা খ্রীষ্ট শব্দের অর্থ হলো অভিষিক্ত। খ্রীষ্ট শব্দটি যীশুর নামের সাথে যুক্ত হয়েছে। কারণ তিনি পিতা কর্তৃক প্রেরিত ও অভিষিক্ত। তিনি খ্রীষ্ট হিসেবেই পরিচিত হয়েছেন। পিতার ইচ্ছা ও পরিকল্পনা তিনি পরিপূর্ণ করেছেন।

আমরা জানি যে, বিভিন্ন গোষ্ঠী, সমাজ বা জাতির মধ্যে কোনো বিশেষ ব্যক্তিকে বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরজন্য প্রথমে তাকে বেছে নেওয়া হয় ও মনোনীত করা হয়। কখনো কখনো কিছু সামাজিক আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে তাঁকে নির্দিষ্ট কাজের জন্য উৎসর্গ করা হয়।

ইস্রায়েল জাতির মধ্যেও এমন কিছু সামাজিক প্রথা ছিল। ইস্রায়েলীয়দের রাজা, যাজক বা প্রবক্তাদের এভাবে বেছে নেওয়া হতো। বিশেষভাবে ঈশ্বরের কাজের জন্য যারা উৎসর্গীকৃত তাদেরকে অভিষিক্ত করা হতো। পবিত্র বাইবেলে এরূপ অনেক ঘটনার বর্ণনা আছে। পিতার ইচ্ছা পূর্ণ করাই ছিল যীশুর জীবনের প্রধান উদ্দেশ্য। তিনি একাধারে রাজা, যাজক এবং প্রবক্তা ছিলেন। তিনি অন্য রাজাদের মতো নন। তাঁর রাজত্ব শাশ্বত ও চিরকালের।

যীশুর জন্মের পর স্বর্গদূতেরা রাখালদের কাছে ঘোষণা করেছিলেন "আজ দাউদ/দায়ুদ নগরীতে তোমাদের জন্য এক ত্রাণকর্তা জন্মেছেন, তিনি খ্রীষ্ট প্রভু।” জন্মের আগে থেকেই পিতা যীশুকে বাছাই ও মনোনীত করেছিলেন। তাঁর জন্ম হয়েছিল ঈশ্বরের ইচ্ছায় ও পবিত্র আত্মার প্রভাবে।

পিতা তাঁকে পবিত্র করেই এ জগতে প্রেরণ করেছেন। বাপ্তিস্মের সময় প্রকাশ্যে পিতা ঈশ্বর মানুষের সামনে যীশুকে অভিষিক্ত করেছেন আর প্রকাশ করেছেন, "তুমিই আমার একমাত্র পুত্র, তোমার ওপর আমি সন্তুষ্ট"। এরই ফলে ঈশ্বরপুত্র উৎসর্গীকৃত, পবিত্র ও মশীহ বা খ্রীষ্ট বলে পরিচিত হয়েছিলেন। আর কুশে উৎসর্গিকৃত হয়ে তিনি পিতার ইচ্ছা পরিপূর্ণ করেছেন।

Content added By

খ্রীষ্টই প্রভু (পাঠ ৪)

22
22

প্রভু ঈশ্বর সবকিছুর অধিপতি। তিনি সৃষ্টিকর্তা, জীবনদাতা, পালনকর্তা ও রক্ষাকর্তা। বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সবকিছুর, এমনকি মৃত্যুর ওপরও তাঁর আধিপত্য আছে। "প্রভু” শব্দের দ্বারা ঈশ্বরের ঈশ্বরত্বকে বোঝানো হয়। পুরাতন নিয়মে ঈশ্বর মোশীর কাছে নিজেকে "প্রভু” বলে পরিচয় দিয়েছেন। সেই থেকে ইস্রায়েলীয়রা ঈশ্বরকে প্রভু বলে সম্বোধন করত। প্রভু বলতে তাঁর সর্বময় ক্ষমতা ও কর্তৃত্বকে বোঝায়।

নতুন নিয়মে যীশুকে প্রভু বলে সম্বোধন করা হয়েছে। কারণ তিনি ঈশ্বরের একমাত্র পুত্র। তাঁর মধ্য দিয়ে ঈশ্বর নিজেকে প্রকাশ করেছেন। তিনি মানুষকে পাপের হাত থেকে মুক্ত করেছেন। নতুন নিয়মে যীশুকে ঈশ্বর বলে স্বীকার করা হয়েছে। কারণ তিনি স্বর্গের এবং মর্ত্যেরও প্রভু।

যীশু খ্রীষ্টই প্রভু। প্রচারকাজের বিভিন্ন সময় যীশু শিষ্যদের কাছে নিজেও এ কথা প্রকাশ করেছেন। অন্ধকে দৃষ্টি দান, খঞ্জকে চলার শক্তি, বোবাকে কথা বলার ক্ষমতা, অসুস্থকে সুস্থ করে তিনি তাঁর ঈশ্বরত্বকে প্রকাশ করেছেন। পাপীকে ক্ষমা করে এবং মৃতকে জীবন দিয়ে তাঁর ঐশ্বরিক শক্তির প্রকাশ করেছেন।

যীশুর প্রকাশ্য প্রচার জীবনে অনেকে নিরাময় লাভ করে তাঁকে প্রভু বলে সম্বোধন করেছে। যীশুকে প্রভু বলার মধ্য দিয়ে তাঁর প্রতি তাদের শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে। যীশুর পুনরুত্থানের পর মানুষের বিশ্বাস আরও গভীর হয়ে ওঠে। প্রেরিতশিষ্যেরা যীশুকে 'প্রভু আমার, ঈশ্বর আমার' বলে স্বীকার করেন এবং 'উনিই প্রভু' বলে প্রচার করেন।

আমরাও যীশুকে প্রভু বলে ডাকি। তাঁর নামে পিতার কাছে আমাদের প্রয়োজনের জন্য অনুনয় করি। কোনো কোনো প্রার্থনার শুরুতে তাঁকে 'হে প্রভু যীশু' বলে সম্বোধন করি। আবার সব প্রার্থনার শেষে 'প্রভু যীশুর নামে' বলে শেষ করি। কারণ তিনি মৃত্যুকে জয় করেছেন, তিনি পুনরুত্থিত হয়েছেন এবং পিতা তাঁকে সর্বময় ক্ষমতা দিয়েছেন। আমরা যীশুর ওপর পরিপূর্ণ আস্থা রাখতে পারি। তিনি মানবজাতিকে পরিত্রাণ এনে দিয়েছেন। তাঁর ক্ষমতা, সম্মান ও গৌরব মানুষ প্রত্যক্ষ করেছে।

কাজ: যীশু খ্রীষ্ট কীভাবে তাঁর ঐশরিক ক্ষমতা প্রকাশ করেছেন তার ২টি উদাহরণ লিখ।
Content added By

খ্রীষ্ট প্রকৃত ঈশ্বর ও প্রকৃত মানব (পাঠ ৫)

24
24

এই অধ্যায়ে আমরা প্রভু যীশু খ্রীষ্টকে ঈশ্বরের অদ্বিতীয় পুত্র হিসেবে জানতে পারব। ইতোমধ্যে আমরা জানতে পেরেছি যে, যীশু খ্রীষ্ট ঈশ্বর থেকে মানুষ হয়ে জন্মগ্রহণ করেছেন। তিনিই ঈশ্বর ও প্রভু। আমরা যীশু নামের অর্থ বুঝতে পেরেছি এবং খ্রীষ্ট হিসেবে তাঁর পরিচয় পেয়েছি। খ্রীষ্টের শিষ্য হিসেবে আমরা সবাই তা বিশ্বাস করি এবং স্বীকারও করি।

এই অধ্যায়ের দীর্ঘ আলোচনায় আমরা বুঝতে পেরেছি যে, যীশু ঈশ্বর, আবার তিনি মানুষ। যীশু ঈশ্বর থেকে মানুষ হয়েছেন। তিনি প্রকৃত ঈশ্বর ও প্রকৃত মানুষ। একজন মানুষের থাকে দেহ, মন ও আত্মা। দেহ-মন-আত্মর প্রকৃতি নিয়ে মানুষ জন্ম নেয় এবং পূর্ণাঙ্গ মানবীয় স্বভাবে বেড়ে ওঠে। মানুষকে ঈশ্বর সৃষ্টির অন্য সবকিছু থেকে আলাদা করে সৃষ্টি করেছেন। মানুষকে দিয়েছেন বুদ্ধি ও ইচ্ছাশক্তি, যা অন্য কোনো সৃষ্ট বস্তু বা প্রাণীর নেই। তাই মানুষ অন্যসব জীবজন্তু থেকে আলাদা।

নারীগর্ভে জন্ম নিয়ে যীশু দেহ-মন-আত্মার প্রকৃতি পেয়েছেন। তিনি পূর্ণাঙ্গ মানবীয় স্বভাবে বড়ো হয়েছেন। মানুষের হাসিকান্না, দুঃখবেদনা কিংবা আনন্দের সাথে তিনি একাত্ম হয়েছেন। তিনি আকারে- প্রকারে ও স্বভাবে সম্পূর্ণ মানুষ। যীশুর মানবীয় স্বভাব নিয়ে বিভিন্ন ভ্রান্ত মতভেদ ছিল। মণ্ডলীর পরিচালকগণ এবং পণ্ডিতগণ এই সত্য প্রকাশ করেছেন যে, যীশু ঈশ্বর থেকে আগত মানুষ।

যীশুর দুটি স্বভাব: মানবীয় ও ঐশ্বরিক। তিনি পূর্ণ ঈশ্বর ও পূর্ণমানুষ। মানবীয় দেহ, বুদ্ধি, ইচ্ছাশক্তি এবং তাঁর সকল কাজের জন্য তিনি প্রকৃত মানুষ। মানুষ হয়েও তিনি আলাদা। কারণ তিনি মানুষ ও ঈশ্বর। ঈশ্বরত্বে ও প্রভুত্বে তিনি সম্পূর্ণ ঈশ্বর। তিনি ক্রুশবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। তারপর কবর থেকে পুনরুত্থিত হয়ে তিনি মানবজাতির পরিত্রাণ এনেছেন। তাঁর মধ্য দিয়ে আমরা সকলে স্বর্গে যাবার সুযোগ পেয়েছি। যাঁরা বিশ্বাসের পথে চলে তাঁরা পায় নবজীবন। কারণ যীশুই পথ, সত্য ও জীবন।

Content added By

অনুশীলনী

28
28
শূন্যস্থান পূরণ করো।

১. ………………………. প্রসাদে পূর্ণ বলে তিনি অভিহিত করলেন।
২. ঈশ্বর তাঁর ……………………….. আছেন।
৩. তাঁর নাম হবে ……………………….. ।
৪. তিনিই হবেন সমগ্র মানবজাতির ………………………..।
৫. মোশী নামের অর্থ হলো ……………………….. থেকে টেনে তোলা।

বাম পাশের বাক্যাংশের সাথে ডান পাশের বাক্যাংশের মিল করো।

বাম পাশডান পাশ

১. তুমিই আমার

২. যীশু মৃত্যুকে

৩. যীশুই পথ

৪. তিনি প্রকৃত ঈশ্বর ও

৫. মানুষ হয়েও

  • জয় করেছেন
  • যীশু আলাদা
  • প্রকৃত মানুষ
  • একমাত্র পুত্র
  • সত্য ও জীবন

বহুনির্বাচনি প্রশ্ন

১. খ্রীষ্ট শব্দের অর্থ কী?
ক. মনোনীত
খ. প্রেরিত
গ. অভিষিক্ত
ঘ. উদ্ধারকর্তা

২. 'প্রভু' শব্দের দ্বারা যীশুর কী বোঝানো হয়েছে?
ক. অলৌকিক শক্তিকে
খ. ঐশ্বরিক শক্তিকে
গ. যাজকত্বকে
ঘ. রাজকীয় অধিকারকে

নিচের অনুচ্ছেদটি পড়ে ৩ ও ৪ নম্বর প্রশ্নের উত্তর দাও।
দ্বীপ একজন ধার্মিক ব্যক্তি সে বাণী প্রচারের জন্য 'ক' অঞ্চলে যায়। সেখানে গিয়ে দেখে সেখানকার লোকজন নেশা থেকে শুরু করে যাবতীয় অসামাজিক কাজে লিপ্ত ও শারীরিকভাবে অসুস্থ। দ্বীপ প্রার্থনা, সেবা ও বাণী প্রচারের মাধ্যমে তাদের শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ করে তোলে।

৩. দ্বীপ কার কাজে অনুপ্রাণিত হয়ে উক্ত কাজ করেছিল?
ক. পিতর
খ. যীশু
গ. পৌল
ঘ. যোহন

8. দ্বীপের কাজের মাধ্যমে 'ক' অঞ্চলের লোকেরা পেতে পারে
i. নতুন জীবন
ii. সেবা
iii. ভালোবাসা
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i
খ. ii
গ. i ও ii
ঘ. i, ii ও iii

সৃজনশীল প্রশ্ন

১. জুঁই ডেনির বাগদত্তা সত্রী। ডেনি গরিব হলেও ধার্মিক, ঈশ্বরভীরু ও বিনয়ী লোক ছিলেন। তিনি সামান্য বেতনে একটা কারখানায় কাজ করতেন। তিনি নিজেকে তার সত্রীর অযোগ্য পাত্র মনে করলেন। তাই তিনি গোপনে তার স্ত্রীকে ত্যাগ করতে চাইলেন। তিনি ফাদারের কাছে গিয়ে সব খুলে বললেন। কিন্তু ফাদার ডেনিকে জুঁই সম্পর্কে বললেন, 'জুঁই একজন সরল, বিনয়ী ও ঈশ্বরভক্ত মেয়ে। তুমি জুঁইকে গ্রহণ করতে ভয় পেও না।' ফাদারের কথামতো ডেনি সবকিছু করলেন।
ক. যুদেয়া দেশের রাজার নাম কী?
খ. ঈশ্বর মারীয়ার গর্ভে কেন প্রিয়তম পুত্রকে প্রেরণ করেছিলেন?
গ. যোসেফের কোন বৈশিষ্ট্য ডেনির মধ্যে প্রকাশিত হয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকটি যোসেফের ঘটনার সঙ্গে আংশিক মিল রয়েছে-এর স্বপক্ষে তোমার মতামত দাও।


২. প্রশান্ত নিজ এলাকার একজন সমাজসেবক। ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনে তিনি খুবই ধার্মিক। গ্রামের দীন দরিদ্রকে ঔষধ, কাপড় ও খাবার দিয়ে তিনি সাহায্য করে থাকেন। গ্রামবাসী প্রশান্তের মহৎ হৃদয়ের পরিচয় পেয়ে রোগীদের তার কাছে নিয়ে আসতে লাগল যাতে তিনি তাদের স্পর্শ করে সুস্থ করে তোলেন। তিনি লোকদের বললেন, 'আমার পক্ষে এ কাজ করা সম্ভব নয়। একমাত্র যীশুই পারেন এ কাজ করতে।'
ক. মোশীহ শব্দের অর্থ কী?
খ. যীশুকে কেন 'প্রভু' সম্বোধন করা হয়?
গ. প্রশান্তের মধ্যে যীশুর কী ধরনের গুণাবলি ফুটে উঠেছে বর্ণনা করো। -
ঘ. প্রশান্তের মধ্যে যীশুর সব গুণের সমাবেশ ঘটেছে বলে কি তুমি মনে করো? তোমার মতামত দাও।

সংক্ষিপ্ত উত্তর প্রশ্ন

১. কোন দূত মারীয়াকে সংবাদ দিয়েছিলেন?
২. মারীয়ার স্বামী কেমন লোক ছিলেন?
৩. মারীয়ার পুত্রের নাম কী রাখা হয়েছিল?

বর্ণনামূলক প্রশ্ন
১. যীশুকে কেন খ্রীষ্ট নামে অভিহিত করা হয়েছে? বিশ্লেষণ করো।
২. ঈশ্বরপুত্র কীভাবে প্রকৃত ঈশ্বর ও প্রকৃত মানব বর্ণনা করো।
৩. ঈশ্বরপুত্রের উপাধি কেন প্রভু দেওয়া হয়েছে? ব্যাখ্যা করো।

Content added || updated By
টপ রেটেড অ্যাপ

স্যাট অ্যাকাডেমী অ্যাপ

আমাদের অল-ইন-ওয়ান মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে সীমাহীন শেখার সুযোগ উপভোগ করুন।

ভিডিও
লাইভ ক্লাস
এক্সাম
ডাউনলোড করুন
Promotion